৩১ মার্চ ২০২২

কবি শর্মিষ্ঠা দাস এর কবিতা "হিসেব"




হিসেব 
শর্মিষ্ঠা দাস

হিসেব মিলছে না
কিছুতেই না
উত্তরের জায়গাগুলো দুর্বোধ্য কিছু কালির আঁচড়ে ভর্তি
ঘুনপোকারা কাটছে সময় ...
পাতার গায়ে লেগে থাকা শেষ জলের বিন্দুর খসে পড়া,
মনে করিয়ে দেয় 
আঁকড়ে ধরার চেষ্টা শুধুই বাহ্যিক 
কবরে শোয়ানো ফুল আজ অনেকদিন হল রঙ হারিয়েছে
জীবিতরাও আজ কফিনবন্দী করেছে সব সূক্ষ্ম অনুভূতি গুলোকে 
জীবন বড় ক্লান্ত 
মৃত্যুর শীতলতা তাই বড়ই কাছের
আশ্লেষে একটা চুম্বন এনে দিক সেই পরমপ্রাপ্তি ।।
  
                                                          
             

কবি আতিয়ার এর কবিতা অগ্রপথিক




অগ্রপথিক
আতিয়ার রহমান 

ছলনার সাথে রাখি বন্ধনে
হারিয়ে স্বর্গকুল
সৃষ্টির সাথী হয়ে এলে নারী 
ফোটাতে মানব ফুল।

অধর ওষ্ঠে মধুর পেয়ালা
বক্ষে দোদুল দিশ
মোহ-ঝর্ণনার প্রেমের জোয়ারে 
ভাসাও অহর্নিশ। 

মমতা শ্রেষ্ঠা স্বপ্নের ভোর 
রোদ্র করোজ্জল
রাতের আঁধারে চন্দ্রকলায়
স্নিগ্ধ নীলোৎপল। 
 
উসর মরুতে ঝরা নির্ঝর,
করুণা নিধির ছায়া
জননী জায়ার বহুরূপী রূপ
শ্যামল মাটির মায়া।

নর-বিদ্বেষী নও নারীবাদী 
নও বিপনন প্রতীক 
তোমার শুভ্র আঁচল তলায়
ঘুমায় অগ্রপথিক।

৩০ মার্চ ২০২২

আইরিন মনীষা'র কবিতা "রিক্তের বেদন"




রিক্তের বেদন
আইরিন মনীষা 

বড়  অভিমানী মেয়ে আমি
অল্প শোকে কাতর
হারানো প্রেমের বিরহে আজি
হয়েছি আমি পাথর।

হাজারো স্বপ্নের পসরা নিয়ে
করেছিনু বুনন কাব্য
সেই কাব্যটির প্রতিটি পাতায়
আমার দুঃখের নাট্য। 

বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা
ছিলোনা কিছুই চাওয়া
সুখে দুঃখে থাকবো দুজন
হলোনা তাও পাওয়া। 

বিনা দোষে ছাড়লে আমায়
বাঁধলে অন্যে ঘর,
আমার যতো আবেগ অনুভুতি
করলে তুমি পর। 

সময় যেন ঘনিয়ে এলো 
ডাকছে আমার রব
মরণের পরে মাটির ঘরে
ফিরবো হয়ে শব।

নাসিমা মিশু এর কবিতা "কুর্নিশ"




কুর্নিশ 
নাসিমা মিশু

কুর্নিশ মহাশয়- বাপ জী,ভাই, দাদা গুরুজন, 
বড় বড় শিক্ষিত, অধিপতি, কর্তা ব্যক্তিগন
আপনাদের কুর্নিশ ।
ছোট আমি ,অতি ছোট্ট দীন হীন, 
জরাজীর্ণ সব হীন; 
কেনো ই বা এই দুর্দশা! 
কুর্নিশে হাত জোড় ঠিক ; 
মাথা মোর ণত নহে, দেখো দুচোখ বাড়িয়ে ।
চেয়ে দেখো ভালো করে, মোর আঁখির তীব্রতা 
প্রখর দীপ্তিময় নয় কী ?
মোর দু'নয়নে উপছে উঠেছে তোমাদের কীর্তি ।
দুর্নীতি, ঘুষ, সুদ, দৌড়াত্ব,দাপট... 
ডুবে গেছো তোমরা ।
টাকা আর টাকা  হায়!কেড়ে নিয়েছে তোমাদের বোধ ।
শুধু কী তাই ?
দেখছি পড়ছি শুনছি পবিত্র সংসদ কলুষিত হলো হায়
মানব পাচার ঘৃণ্য মানুষ নামের দানবের পদচারণায় ।

এক মা পারে কী ! এমন লোভী দানবদের থাবা থেকে আমাদের রক্ষা করতে... 

আমি, আমরা বলি থামো এবার ;হাত যবে উঠিয়েছি,
কুর্নিশটা দাও করতে ভক্তি ভরে বিনম্র বিশ্বাসে ।
একটু হলেও দাও পরিচয় তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বের ।
শিক্ষা, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে পরিবার সব তো করেছো কলুষিত! 
এবার থামাও তোমাদের নির্লজ্জতা, 
কুর্নিশটা নাও সৎ, সত্য ও সততার সাথে ।
আর কত চাও?
শুনছি, পড়ছি বিদেশে ব্যাংক নাকি পেট ফুলে ফেঁপে হয়ে উঠেছে কলাগাছ তোমাদের টাকায় ।
পত্র পত্রিকায় বড় বড় হরফে একজনের বাণীতে চোখ মোর কপালে- 
বেতন দিতে হলে ছয় মাস পড়ে ছাপাতে হতে হবে টাকা 
বেসামাল মদ খোর যতটা না বেসামাল মদ্যপ পানে,
তারচেয়ে ও অধিক বেসামাল লজ্জার মাথা খাওয়া তোমাদের কর্ম ।
এখনও আছে সময়- 
কুর্নিশ কুর্নিশে বলছি দয়া করো, আমাদের বাঁচতে দাও।
তোমাদের ধৃষ্টতা, আমাদের অক্ষম অপারগতার একদিন হবে শেষ- 
একথা জেনো নিশ্চিত ।
এপার ওপার কোনো পাড়ে না হলেও, হবে হবে পরপারে হবে।
কুর্নিশ বাপজী ভাই জী, আবার ও বলছি- 
শোনো শোনো দেশ জননীর কথা- 
জননীর সাথে সততার দৃষ্টান্তে হাত মিলিয়ে দেশটাকে করো রক্ষা ।
শোনো শোনো বলি-
মরে গেলে পচে যাবে 
মাটির সাথে মিশে যাবে মাটি তৈরি দেহ 
থেকে যাবে কর্ম কীর্তি, কর্মের দায়।

কুর্নিশ কুর্নিশ তোমাদের কুর্নিশ বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে ।

ভালো থেকো তোমরা, ভালো থাকতে দিও আমাদেরকে এই মিনতি আর্জিত কুর্নিশে তোমাদের কাছে মোর ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৮০




ধারাবাহিক উপন্যাস 


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৮০)
শামীমা আহমেদ 

শায়লা এবার উঠতে হবে,চলো। দুপুরের খাবারের সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।সাড়ে তিনটা বাজতে চলেছে।চলো,কোথাও কিছু খেয়ে নেই। শিহাব শায়লাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেও শায়লা যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। শিহাবের কথায় স্বাভাবিকে এলো। অস্ফুট স্বরে বললো,হ্যাঁ, চলো, তবে খাওয়ার জন্য অন্য কোথাও নয়।এখানে কিছু খাবারের দোকান আছে, সেখানে বসে কিছু খেয়ে নেই। শিহাব একমত হলো।দুজনেই উঠে দাঁড়ালো।শিহাব চোখের ভাষায় যেন শায়লাকে আবার সব কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। আর তাতে শায়লার অকপটে উত্তর,তুমি ভেবোনা। আজ আর আমি বাসায় ফিরছিনা। জীবন আজ থেকে অন্যরকম হবে।
দুজনে এখানেই একটা রেস্টুরেন্টে বিফ বার্গার আর কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিলো। শিহাব শায়লাকে নিয়ে ভাবছে। এখন কি তবে শায়লাকে অফিসে নিয়ে যাবে নাকি ওর নিজের ফ্ল্যাটে  রেখে আসবে?কিন্তু বাসায় শায়লা একা একা কি করবে ? শিহাবের আজ অফিসে বেশ কিছু জরুরী কাজ আছে।অফিস থেকে বেরুতে  রাত হয়ে যাবে।এতক্ষন শায়লাকে অফিসে বসিয়ে রাখাও খুব একটা ভালো দেখাবে না। কি করা যায় ? ভাবতেই শায়লা শিহাবের মুখভঙ্গি যেন পড়ে নিলো।শিহাব কি নিয়ে চিন্তিত জানতে চাইলো। 
তুমি কি আমাকে নিয়ে বিব্রত বোধ করছো শিহাব ? 
একেবারেই না, তুমি আমার সাথে চলো, আমরা একসাথেই থাকবো। কাজ শেষ করে একসাথেই বাসায় ফিরবো।
কথাটা বলেই শিহাবের মন আনন্দে নেচে উঠলো!  শায়লাকে আজ সে আপন করে পেতে যাচ্ছে। শিহাবের সেই রবীন্দ্র সংগীতটির কথা মনে পড়ছে... ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে জানিনে শুধু তোমারে জানি, তোমারে জানি,ওগো নন্দিনী। 
শায়লা হাত বাড়িয়ে দিলো। শিহাব হাত এগিয়ে শায়লাকে ধরলো। শিহাব দেখলো শায়লার হাতে তার দেয়া সেই ব্রেসলেটটা ! শিহাব খুবই পুলকিত হলো! দুজনে দ্রুত হেঁটে  বাইকের দিকে এগিয়ে গেলো। শিহাব বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো, শায়লা আজ আমার বাসায় গেলে ওর জন্যতো কিছু পোশাক প্রয়োজন। কিন্তু কখন যে বেরুবো ? 
শায়লা শিহাবের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, কি ভাবছো ?
এইতো,ভাবছি তোমার জন্য কিছু পোশাক কেনা দরকার কিন্তু,,, 
শিহাবকে থামিয়ে শায়লা বললো, কোন কিছু প্রয়োজন নেই। আমি তোমার টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে থাকবো। শিহাব যেন একটা উপায় খুঁজে পেয়ে স্বস্তি পেলো।
শিহাব বাইক স্টার্ট দিলো।শায়লা পিছনে বসতেই আর এক মূহুর্তও দেরি না, শিহাবের পংখীরাজ বাইক যেন উড়ে চললো। 
শিহাবের অফিসে ঢুকতে প্রায় পাঁচটা হয়ে গেলো। শিহাব শায়লাকে তার অফিস রুমে রাখা ঐপাশের সোফায় বসতে বললো। শায়লা শিহাবের কথামতো সোফায় চুপটি করে বসে রইল। সে বুঝতে পারছে, বাসায় এখন কি পরিস্থিতি হতে পারে। 
শায়লা এখনো বাসায় ফেরেনি। বিষয়টি রুহি খালা খুব একটা ভালো ভাবে নিচ্ছে না। সে শায়লার মাকে নানান আক্রমনাত্মক কথা শোনাচ্ছেন। আজ আর বড় বোনের মত সম্মান করে কোন কথা বলছে না। সে একেবারে হিংস্র বাঘিনীর মত ক্ষেপে আছে। সে  রাহাতকে কল করে শায়লার বাসায় না ফেরার কথা জানালো, শায়লা এখনো বাসায় ফেরেনি রাহাত। আজ ওকে একা বাইরে যেতে দেওয়া ঠিক হয়নি।
রাহাত ভীষণ অবাক হলো! ঘড়িতে সময় বিকেল পাঁচটা।সেই দুপুর বারোটায় বেরিয়েছে।  রাহাত শায়লাকে কল দিলো। শিহাবের অফিস রুমে সোফায় ক্লান্তিতে  শায়লার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাহাতের কলে সে জাগলো। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রাহাতের কল দেখে কিভাবে তা মোকাবেলা করবে একটু ভেবে নিলো।
ওপ্রান্তে রাহাতের উৎকন্ঠিত জিজ্ঞাসা, 
আপু তুমি এখনো বাসায় ফেরোনি, অনেক বেলা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাসায় এসো।
শায়লা রাহাতকে জানালো, আজ আমি আর বাসায় ফিরে যাচ্ছিনা রাহাত। আমি শিহাবের সাথে আছি। বাকী জীবন শিহাবের সাথেই কাটিয়ে দিবো।
শায়লার এমন কথায় রাহাত ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।সাথে মান সম্মানের কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লো। তবু্ও শায়লাকে মানাতে
সে বললো, না আপু এটাতো কথা ছিল না।তুমি কাজের জন্য বাইরে গিয়েছো। কাজ শেষ করে তোমাকে বাসায় ফিরে আসতে হবে।
না, আমি ফিরবো না। আমি শিহাবের সাথেই থাকবো। আর যদি পারো,নোমান সাহেবকে দেশে আসতে নিষেধ করে দাও।আমি তার সাথে কোথাও যাবো না।
শায়লার এমন কথা শুনে রাহাতের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো। এমন কথা রুহি খালা বলেছিল, সে শোনেনি। সে বুঝতে পারেনি, আপু যে এভাবে বদলে যাবে ! রাহাত তাকে যতই বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছে, শায়লা ততটাই  শক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেন শিহাবের কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে। রাহাত আর কোন দিক বুঝতে না পেরে কল কেটে দিলো।নিজের বোকামির খেসারত নিজেকেই দিতে হচ্ছে।
ওপাশ থেকে শিহাব সবই শুনছিল।শায়লা বেশ দৃঢ়ভাবেই রাহাতকে ফিরিয়ে দিলো।
তাহলে শায়লাকে নিয়ে তার বাসাতেই ফিরতে হবে। শিহাব জানালো, শায়লা আমার কাজ গুছাতে রাত আটটা বেজে যাবে। তুমি অপেক্ষা করতে পারবে না ? শায়লা বললো,খুব পারবো। বাসার কথা মনে হতেই বাসার  চাবির কথা মনে হলো। সে কেয়ারটেকার বিল্লালকে কল দিয়ে বাসার কথা জানতে চাইলো, বিল্লাল আমার ফ্ল্যাটের চাবি তোমার কাছে নিয়েছো ?
না ছার, ঘরে তো সেই বিদেশি ম্যাডাম। এইতো অর্ডার দিয়া পিজা নাস্তা আনাইলো।আমি উপরে গিয়া দিয়া আসলাম ।ম্যাডাম আমারে বখশিশ দিলো। আমি নিতে চাই নাই ছার,কিন্তু  জোর কইরা দিলো।
উফ! বিল্লালের মুখ যেন রেলগাড়ির মত চলছে। শিহাব তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো। 
শিহাব বুঝতে পারছে না, রিশতিনা কেনো এখনো যায়নি। সে তাকে সেই সকালেই চলে যাওয়ার কথা বলে এসেছিলো। কেন সে যায়নি ? সে কি বুঝতে পারছে না, তার সাথে আমি আর জীবন এগিয়ে নিতে চাইছি না।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। একটু পরে রাত হয়ে যাবে। এখন তাকে  যেতে বলা মানে অন্য বিপদ ডেকে আনা। শিহাব কি করবে তা গভীর ভাবে ভেবে  নিলো।শায়লাকে নিয়ে তবে আজ রাতে কোন হোটেলেই উঠতে হবে।কাল সকালে বন্ধু রোমেলকে ডেকে রিশতিনাকে বিদায় জানাতে হবে। 
শায়লা শিহাবের জন্য অপেক্ষায় সোফায় একেবারে ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে।যেন সবকিছু তার শিহাবের উপরে ছেড়ে দেয়া। আজ শিহাব যেখানে নিয়ে যাবে শায়লা নির্দ্বিধায়  সেখানেই যাবে। শিহাব সোফায় এসে শায়লার পাশে বসলো। শায়লার হাত ধরে বললো, শায়লা আমার একেবারেই বিশ্বাস হচ্ছে না, তুমি যে পুরোপুরি আমার হয়ে গেছো।
তোমাকে আপন করে পেতে যাচ্ছি। তুমি আজীবন আমার হয়েই থেকো।
শায়লা শিহাবের কাঁধে মাথা রেখে বললো, শিহাব আমি সারাজীবন শুধু দিয়েই গেছি।তুমি আমাকে আমার নিজের করে নিযের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষকে কেমন করে কাছে নিতে হয় সেটা শিখিয়েছো। শিহাব আমি তোমার মাঝেই সব নির্ভরতা খুঁজি।তোমার কাছেই সবটুকুর আবদার যাচি। তোমাতেই বিলীন হওয়ার জন্য নিজেকে উজার করে দিতে জানি। শিহাব তুমি আমায় গ্রহন করো। আমার আমিটাকে তোমার করে নাও আর তোমাকে পাওয়ার পূর্ণ সুখে আমাকে ভরিয়ে নিতে দাও।
ঠিক আছে শায়লা, তোমার চাওয়াই আমার কাছে শিরোধার্য। তবে আমার বাসায় এখনো রিশতিনা আছে।তাকে বলেছিলাম চলে যেতে কিন্তু সে এখনো আছে। আমি চাইনা তোমরা দুজন মুখোমুখি হও।এতে আরো ঝামেলা বাড়বে।তাই আমরা আজ উত্তরায় আমার এক কাজিনের হোটেলে থাকবো। যদি  তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
শায়লার স্পষ্ট উত্তর,আপত্তির কিছু নেই। তুমি সাথে থাকলে এই পুরো পৃথিবীটাই আমার।
ঠিক আছে উঠো।গুছিয়ে নাও। চলো বের হবো।শিহাব সব গুছিয়ে কবিরকে অফিস লক করে দিতে বললো।
শায়লা আর শিহাব সবদিক ভেবে নিয়ে, সব কিছুকে উপেক্ষা করে নতুন জীবনের সন্ধানে একটা নতুন স্বপ্ন নিয়ে পদধাপে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। দুজনার মুখে বিজয়ীর হাসি।
হঠাৎই শায়লার মোবাইল মেজেজ রিং বেজে উঠলো। শায়লা হাতে ধরা মোবাইল মেসেজে চোখ রাখতেই ভীষণ অবাক হলো! ছোট বোন নায়লার  ম্যাসেজ।
আপু, মা বাসায় স্ট্রোক করেছে। রুহি খালা আমাকে জানালো। রাহাত ভাইয়া অফিসে।মাকে দ্রুত হসপিটালে নিতে হবে। আমি এম্বুলেন্স কল করেছি।তুমি আমাদের মাকে বাঁচাও আপু, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাও।
শায়লার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না!"


চলবে....

মমতা রায় চৌধুরী ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৪




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৪৪
পাল তুলেছে খুশির হাওয়া
মমতা রায় চৌধুরী



মনোজ চোখ বুঝে আছে কিন্তু মন বোঝেনি। আজকে অফিস যেতে ভালো লাগছে না। সকাল থেকেই মেজাজটা কেমন খাটটা হয়ে গেছে। রেখার উপর অকারনে চিৎকার ,চেঁচামেচি করলো। সারাদিন এর রেশ থেকে যাবে। রেখার হিম শীতল উত্তরটা অনেকটা ট্রেনে অন্যমনস্ক যাত্রী বসে থাকলে হঠাৎ করে হুইসেল বেজে গেলে যেরকম হয়, ঠিক সে রকম জোরে ধাক্কা দেয়ার মত।
এদিকে সুরোদের বাড়িতে সত্যিই যাওয়ার দরকার যা ক্ষেপে আছে রেখা। সত্যিই তো, ওর তো কোন দোষ ছিল না।। আমার যে মাথাটা কেন মাঝে মাঝে এরকম হয় নিজেই বুঝে উঠতে পারছি না। এক্ষুনি স্কুলে বেরিয়ে যাবে ।একবার বলব গিয়ে।
রেখা তখন স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছে ।
মনোজ দরজায় নক করল। রেখা শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে আড় চোখে  তাকিয়ে দেখল মনোজ কিছু বলল না। তারপর পিনাপটা ঠিকঠাক করে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুলটা আচড়ে ক্লেচার লাগিয়ে নিল, সিঁদুর পরে নিল।
 তখন ও মনোজ দাঁড়িয়ে দরজার কাছে ।মনোজ একটু হালকা কেশে নিল মনোজের অস্তিত্বটাকে বোঝানোর জন্য ।
রেখা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে।
মনোজ খেয়াল করল রেখা মোটামুটি রেডি হয়ে গেছে ।এখন ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বেরোনোর চিন্তা ঠিক তখনই মনোজ বলল' রেখা সকালে তোমার সঙ্গে ওই রকম ব্যবহার করাটা আমার ঠিক হয়নি। তার জন্য সরি।'
রেখা কোন সাড়া দিচ্ছে না। এবার রেখা ব্যাগে র চেনটা বন্ধ করে চশমাটা পরে নিল। এবার বেরোতে যাবে দরজা আগলে দাঁড়ালো 
মনোজ । হচ্ছেটা কি ?কি হল? তুমি সাড়া দিচ্ছ না ?
তখনও রেখা কিছু বলছে না।
 মনোজ বলল' তুমি উত্তর না দিয়ে কোথাও যেতে পারবে না ।
'তখন রেখা বলল 'আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি। তুমি বলেছ আমি শুনে নিলাম। তুমি সরি বললে আমি শুনে নিলাম'।
তুমি কিছু বলবে না?
' কি বলবো বলব? আমার কথা তুমি শোনো ?না বোঝো বোঝার চেষ্টা করো?
 ঠিক আছে সরো বেরোতে হবে, স্কুলে যেতে না হলে দেরি হয়ে যাবে ট্রেন পাব না।'
'আজকে তোমার স্কুলে যাওয়া হবে না বলে হাত দুটো ধরল রেখার।'
'কি করছো তুমি? আমি রেডি হয়ে গেছি স্কুলে যাব না তাই কখনো হয় নাকি?'
কোন কাজ বাকি আছে কি?'
'তোমার সঙ্গে আমার কতগুলো কথা আছে।'
রেখা মনে মনে ভাবলে এই জন্যই মনে হচ্ছে রেখার ঘরে এসেছে।
'কি কথা?'
'আগে বলো রাগ করোনি?'
'আজকাল আমার না কোন কিছুতে কিছু এসে যায় না ।আমি জানি রাগ করে তো কোন লাভ নেই। কার ওপর রাগ করবো বলো তো? যে রাগের গুরুত্ব বোঝেনা ।মান অভিমানের গুরুত্ব বোঝেনা ।তার সঙ্গে ?আমি এই বেশ ভালো আছি জানো তো?'
 মনোজ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
'ঠিক আছে তুমি এবারকার মত আমাকে ক্ষমা করে দাও।'
'আমি তো তোমার প্রতি রাগই করি নি। ক্ষমা করার প্রশ্নটা কোথা থেকে আসছে?'
Ok
তাহলে এস এখানে বসো। হাত দুটো ধরে রেখাকে   সোফাতে  বসালো। মনোজও তার পাশে বসলো।
তারপর রেখাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে আসলো।
রেখা যেন কেমন হয়ে গেল ।সবকিছু যেন ভুলে গেল ।ও যেন একটা নিশ্চিত আশ্রয় খুঁজছিল নিজের ভেতরের যে ক্লান্তি কষ্ট সেগুলোকে ঝেড়ে মুছে ফেলে দেবার জন্য।
মনোজ  বলল' রাগ কমেছে?'
রেখা মনে মনে ভাবছে আসলে মেয়েরা এরকমই স্বামীর একটু ভালোবাসা আদর পেলে সবকিছু গলে যায়।
রেখা বলল 'দরজা খোলা আছে।'
'আমি কি পর নারীর সঙ্গে পরকীয়া করছি নাকি?
'আমার নিজের বউয়ের সাথে প্রেম করছি।'
'বাপরে বীরপুরুষ?'
'ওই দেখো মা?'
বলতেই মনো জ   রেখাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিল।
রেখা খিল খিল করে হেসে উঠলো
'ও তুমি আমার সাথে দুষ্টু দুষ্টু করলে?'
এইবার রেখা কে পুরো জাপটে ধরে মনোজের ঠোটটা স্পর্শ করালো রেখার ঠোঁটে।  ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে লাগলো ।রেখা ও যেন কেমন পাগলের মতো হয়ে যেতে লাগলো।
এরকম চলেছে কতক্ষণ নিজেদের হিসেব নেই তারপর হঠাৎ শান্ত স্নিগ্ধতায় ভরে গিয়ে রেখা বলল' সত্যিই আজকে স্কুলে যাওয়া হলো না। তুমি যে কি করো না মাঝে মাঝে।'
'আমি কি করেছি গো?'
মনোজের বুকে দুই  চার দুমদুম করে কিল দিয়ে বলল 'আমি জানি না।'
"এবার জরুরী কথা শোনো?"
"স্কুলে যখন যাওয়া হলই না, বলো শুনি?'
মনোজের কাঁধে মাথা রেখে বলল।
'বলছি সুরোদের বাড়িতে যেতে হবে তো  নাকি?'
রেখা বললো 'এই যা ,হ্যাঁ, কবে যেন?
' আরে কালকে বিয়ে তো?'
'কবে যেতে চাইছ?'
'আজকে যাবে?'
রেখা বলল' কিন্তু বাচ্চা গুলো?'
'সে আমি চৈতির মা কে বা সেন্টুদাকে বলে 
দেব ।
'আর মাসি আসবে তো?'
'মাসিকে  তাহলে ফোন করতে হবে?'
এক্ষুনি ফোন করে কনফার্ম হয়ে নাও।'
রেখা বলল ''ok
রেখা সঙ্গে সঙ্গে ফোন লাগালো ।রিং হতে না হতেই মাসির বৌমা ফোন ধরল।
বলল "হ্যালো'।
'বলছি মাসির শরীর কেমন আছে গো?'
'আগের থেকে ভালো আছে।'
'বলছি কালকে কাজে আসতে পারবে কিনা একটু বলতে পারবে?'
মাসির বৌমা ,মাসিকে ফোনটা দিল তারপর বলল "তোমার শরীর কেমন?'
ওই আছি।
'কি হয়েছে বৌমা?'
"ও বৌমা।'
 ফোন করেছি কাজে আসতে পারবে কিনা…?

"তুমি কি বলছ কালকে আসতে পারবে?'
দেখি?
'ও মাসি দেখি বললে হবে না। কালকে থাকবো না ।তুমি আসলে আমার খুব উপকার হয়। বাচ্চা গুলোর ভাতগুলো করে দিতে পারতে। ওরা কি খাবে না হলে বলো সারাদিন?'
'ঠিক আছে যাবো।'
'তোমাকে ডাক্তার কি বলেছেন?'
'পেশার লো ছিল বৌমা?
আর কি কি যেন বলল?
"যাক ওষুধ দিয়েছেন তো?'
"হ্যাঁ ,বৌমা দিয়েছে।"
'আচ্ছা মাসি তুমি রেস্ট নাও  
তাহলে ।কালকে এসো ।আসলে আমার খুব সুবিধে হয়। আসলে ওরই বন্ধুর বোনের বিয়ে তো যেতে হবে। আজকেই বেরোবো। আজকে আমি রান্নাবান্না করে রেখেই যাবো। কালকে বিয়ে বাড়ি আছে।'
'কালকে তোমরা ফিরতে পারবে?'
'ধরে রাখো ফিরতে পারবো না।'
'আচ্ছা ঠিক আছে বৌমা, চিন্তা করো
 না। তোমার যে দুদিন মনে হয় তুমি কাটাও । বাচ্চা গুলোকে নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি খাইয়ে দাইয়ে  ঠিকই  দেবো।'
'তুমি তো জানো কোথায় কি থাকে ওদের মাংস রাখা থাকবে তুমি ভাত মাংস ওদের করে দিও আর তুমি তোমার খাবারগুলো করে নিও এখান থেকে। পারলে থেকে যেয়ো।'
'আমি থাকবো !তোমার শাশুড়ি মা…?
শাশুড়ি মায়েদের ও তো নেমন্তন্ন ।গেলে ভালো, যদি না যায় তাতে কি হয়েছে তোমার তো থাকার ঘর আলাদা আছে মাসি। তোমার অসুবিধা কি তোমাদের ছেলে সব বলে দিয়ে যাবে মাকে ।তোমার কোন অসুবিধা হবে না।।
'আচ্ছা বৌমা।'
মনোজ আনন্দে উল্লাসে বলে' উঠলো হুর রে.রে ।
'ঠিক আছে শান্তি এবার।'
মনোজ হাত দুটো নিয়ে নিজের গালে আলতো করে স্পর্শ করছে ।
 তারপর বলল 'বুকে হাত দিয়ে দেখো শান্তি।'
'দেখো কতদিন আমাদের যাওয়া হয় না কোথাও চলো একটু মজা করেই আসি নাকি?
'যাও দেখো মা দিদিরা যাবে কিনা বল ওদের।'
'তুমি গুছিয়ে নাও তাহলে আজকে আমরা সন্ধ্যার ট্রেনটা ধরছি।'
Ok
'সন্ধ্যার ট্রেন ধরবে কেন তার আগেই চল না? "
"হ্যাঁ তার আগে বলে চলে যাব ।দেখি এবার মা দিদিরা কি আবার বলে?'
'আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী…।'গান গাইতে গাইতে মনোজ চলে গেল রেখার শাশুড়ি মায়ের ঘরে।
রেখা সব গোছ-গাছ করে নিতে থাকলো।
ওয়ারড্রব টা খুলে শাড়ি সিলেট করতে থাকলো কোনটা পড়বে ।মনোজের ব্লেজার টা নিয়ে নিল ওর ব্লেজারের কালারটা হচ্ছে পিংক ।তাহলে রেখা কি  ভাইলেট কালারের ওপালাটা পরবে নাকি চাঁদনী বেনারসি টা পড়বে? রেখা
এই ভাবছে। 
'অন্যদিকে মনোজ তার মাকে বললো মা তাড়াতাড়ি গোছগাছ করে নাও ।দিদি গোছগাছ করে নাও। বিয়ে বাড়িতে যাব।'
মা দিদি দুজনে সমস্বরে  বলে উঠল 'কার বিয়েতে?'
'কেন সেদিন বলল না? সুরোর বোনের বিয়ে, শিখা ।তুমি ভুলে গেলে?'
 মনোজের মা মেয়ের দিকে তাকালো।
মনামী  বলল 'কিন্তু আমি কি করে  যাই  ভাই ?আমি তো ভালো শাড়িই আনি নি।'
'শাড়ির সমস্যা হলে তুই রেখার শাড়ি পরবি?'
'রেখার শাড়ি পড়বো?'বলেই কেমন একটু বাঁকা হাসি হাসলো।
"কেন না পড়ার কি আছে?"
', না না আমি ওর শাড়ি পরবো না।'
"তাহলে কি করবি যাবি না তো?'
'না আমি যাব না।।"
মনোজের মায়ের যাবার ইচ্ছে ছিল মেয়ের না যাওয়ার জন্য বলল "তাহলে আমি কি করে যাব বল?'
তোমার না যাবার কি আছে মা?
দিদি বাড়ি থাকবে।'
'নারে ও একা থাকবে। থাক, তোরাই ঘুরে আয় আমরা দুজন বাড়ি থাকি।'
'দেখো যেটা ভালো বোঝো ।আমি আর কি বলবো।'
মনামী বলল'কুকুরের বাচ্চা ওদেরকে কে খেতে দেবে?'
'প্রথমে দিদি তোকে একটা কথা বলি কুকুর বলে সম্বোধন করিস না। ওদেরকে কিন্তু আমরা কন্যাস্নেহে  লালন পালন করছি। ওদের তো নাম আছে। নাম বললেই তো যথেষ্ট।'
মনামী একটু ভেঞ্চি কেটে বলল' বাববা এত গায়ে লাগছে কুকুরকে কুকুর বলবো না?'
কুকুরকে কুকুর বলবি না কেন কিন্তু যেখানে আমরা ওদের নাম রেখেছি ওই নামে ডাকলে কি অসুবিধা আছে
 দিদি ?সব সময় এত নেগেটিভ কথা বলিস কেন?'
'ওই নিয়ে তোদের ভাবতে হবে না সে ব্যবস্থা আমরা করেই যাব। মাসি 
থাকবে ।মাসি রান্নাবান্না করবে খাওয়াবে দাওয়াবে।'
মনামী বলল 'ও আচ্ছা'।
আর একটা কথা বলি মা দিদি তোমাদের দুজনকেই। মাসির সঙ্গে কিন্তু খিট খিট করবে না ।মাসি কিন্তু খুবই ভালো মনের মানুষ। দেখো কোন ঝগড়া টগরা বাঁধিয়ে দিও না।'
মনামী বলল 'কেন রে ভাই ,আমরা কি ঝগড়া করি?'
'আমি সে কথা বলছি না।'
'কথায় কথা বাড়বে তোদেরকে যেটুকু বলার ছিল বললাম।'
'মাসিও কিন্তু এখানেই খাবে।'।
'ও মা মাসির রান্না কে করবে রে ভাই?'
এটা তোদের করতে হবে না তোদেরটা তোরা রান্না করে খাস ।মাসিকে বলা আছে মাসি নিজে করে নেবে।'
মনোযের মা আর দিদি দুজনেই পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
মনোজ কথাগুলো বলেই ঘরে গেল সব জিনিস গোছগাছ ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখতে ।
কেমন যেন একটা উন্মত্ত ফূর্তি কাজ করছে ।প্রচন্ড একটা সেলিব্রেশন করার মোক্ষম উপায় পেয়েছে ।সেই সেলিব্রেশনটা হবে শিখার বিয়েকে উপলক্ষ করে ।অনেকদিন পর রেখা আর মনোজ যেন আবার পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি হতে চলেছে। এই ভাবেই বোধহয় মানুষের জীবনে কোন পালা পার্বণকে কেন্দ্র করে একত্রিত হবার একটা প্রচেষ্টা চলে ।কত ঝড় বয়ে গেছে ওদের দুজনের মধ্যে । আজ যেন প্রবল ভাবে ভালোলাগার জোর নাড়া দিতে লাগলো। এত দিনের যে তীব্র বিষ ফুল ঝরে পড়েছিল মনোজের হৃদয়ে আজকে সেই গন্ধটাকা ক্রমশ অসহ্য মনে হচ্ছে। সেই বিষ ফুলের ছেয়ে যাওয়া অস্তিত্বকে তার গন্ধটা কে নাকে রুমাল চাপা দেবার মত একটা প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতেই কি সেই গন্ধ বিলুপ্ত হবে? এইসব ভাবনায় যেতে চায় না মনোজ আজ হৃদয়ে খুশির পাল
 তুলেছে তাই হারিয়ে যেতে চায় অনেক দূরে।।।

শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা "মদের   জগৎ"






মদের   জগৎ
শিবনাথ মণ্ডল



ধন‍্য,ধন‍্য মদ তুমি
তোমার কেন বদনাম
চিরকাল মাতালের
বাঁচাও তুমি প্রাণ।
মদ খায়না এ জগতে
ক'জন মানুষ আছে
মদ খাওয়ার কত গুণ
মাতাল শুধু বোঝে।
পূজোবাড়ি বিয়েবাড়ি 
মদের সম্মান কত
দেশিমদ বিলাতিমদ
নাম আছে যত।
রাস্তা দিয়ে কত মাতাল
টলতে টলতে চলে
মুখে আসা কথা গুলো
আপন মনে বলে।
মদের মধ‍্যে কি'যে যাদু
ধরলে ছাড়েনা
সংসারে অশান্তি বাড়ায়
শান্তি থাকেনা।
ছেলে বুড়ো সবাই এখন
মদকে ভালোবাসে 
বারোমাসে তেরপাব্বন
আছে প্রতিমাসে।।

Yhg6

LOVE

২৯ মার্চ ২০২২

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক



ধারাবাহিক উপন্যাস 

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭৯)
শামীমা আহমেদ 

শিহাবের অফিস এসিস্ট্যান্ট কবির অফিস রুমের বাইরেই ছিল। শিহাব কবিরকে ডেকে জানিয়ে দিলো, আমি আর শায়লা  ম্যাডাম একটু বাইরে যাচ্ছি। আমি আবার অফিসে ফিরবো। তুমি লাঞ্চ করে রেস্ট  নিয়ে নিও।
কবির সব নির্দেশনা মন দিয়ে শুনে নিলো। শিহাব শায়লাকে নিয়ে বেরুতে যেতেই শায়লা কিছু একটা বলতে উদ্যত হলো। শিহাব তা শুনবার জন্য থামলো।শায়লার কাছে জানতে চাইলো,শায়লা কিছু বলবে ?
শায়লা হ্যাঁ সূচক অভিব্যক্তি দিয়ে জানালো,  একটু রাহাতকে জানিয়ে যেতে হবে।আসলে আমি খুব অল্প সময়ের  কথা বলে বাইরে এসেছি।রাহাতের সাথে একটু কথা বলতে হবে।
শিহাব  তৎক্ষণাৎ তা মেনে নিলো এবং বললো, অবশ্যই, এখুনি কল করে জানিয়ে দাও।
কিন্তু শায়লা চাইছে শিহাব নিজেই যেন তা জানায়। শিহাব খুব সহজেই তা মেনে নিলো। নিজের মোবাইল বের করে রাহাতকে কল করলো। 
হয়তো  রাহাত বিজি ছিলো। দুবার কল করাতে রাহাত তা রিসিভ করলো। ভেতরে ভেতরে রাহাত একটু ভয়ই পেলো। কি জানি কি শুনবে! কেন শিহাবের কল !
শিহাব বেশ স্পষ্ট করেই বললো, রাহাত, তোমার আপুকে নিয়ে আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।আমাদের কিছু জরুরী কথা আছে।
তোমার আপুর ফিরতে একটু সময় লাগবে।
রাহাতের আর কিছুই বলার থাকলো না।শিহাবকে রাহাত এমনিতেই খুব পছন্দ করে।কিন্তু সিচুয়েশন আজ অন্যরকম হওয়াতে আপুর এই সম্পর্কটা মেনে নেয়া গেলো  না। এর জন্য রাহাতের মনে ও যথেষ্ট খারাপ লাগে। কিন্তু সবার সামনে তা প্রকাশ করা যায় না।
শায়লা শিহাব লিফটে নিচে নেমে এলো।আশেপাশের অফিস থেকে সবার উৎসুক দৃষ্টি। শিহাবের সাথে শায়লাকে দেখে তারা বুঝে নিলো কিছু ক্ষন আগে আসা মেয়েটি তাহলে কার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। 
শায়লা বাইকে উঠে বসতেই শিহাব বাইক স্টার্ট দিলো।ফ্রন্ট মিররে শায়লাকে এক ঝলক দেখে নিতেই দুজনার চোখ পড়লো। শায়লার অনুমতি নিয়ে শিহাব বেশ জোরে হর্ণ তুলে জনবহুল  মার্কেট এরিয়া ছেড়ে গেলো। 
শিহাব এক টানে বাইক চালিয়ে 
দিয়াবাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। একটা খোলামেলা জায়গায় বাইক থামালো। বাইক একপাশে  পার্ক করে একটা গাছের ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গায় দুজনে বসলো। সামনে পিছনে মানুষের চলাচল স্বাভাবিকভাবে হলেও  এই ভরদুপুরে তুলনামূলক লোকজন কমই দেখা যাচ্ছে।
শিহাব কথা বলতে শুরু করলো।
শায়লা আমি রিশতিনার ব্যাপারে কিছু বলার জন্য এখানে আসতে চাইলাম।কিন্তু তুমি ইতিমধ্যেই  জেনেছো যে রিশতিনা এখন আমার ফ্ল্যাটে আছে। তবে আমি তাকে আজ চলে যেতে বলেছি। ক'দিন  আগে তার বাবা মারা গেছে। এখন শুধু তার মা আছে।যদিও  সে বলছে সে মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমার কাছে একেবারে চলে এসেছে।কিন্তু আমি নিশ্চিত, কদিন পরই ওর মা লোক পাঠিয়ে আবার মেয়েকে  নিয়ে যাবে। আমি তাই নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চাইছি। তোমার মনে নানান ভাবনা আসতে পারে।শিহাব শায়লার হাত ধরে জানালো, তুমি নিশ্চিত থেকো রিশতিনাকে নিয়ে আমি আর আগাতে চাই না। আইন আদালত পুলিশ র‍্যাব ওদের হাতের মুঠোয়। ওর পরিবার আমাকে নানানভাবে বিরক্ত করবে।আমি সেসব ঝামেলায় আর যেতে চাইনা। রিশতিনার বয়স কম। সে চাইলে আবার নতুন করে তার জীবন সাজাতে পারে। তাদের মত উন্নত জীবনের কাউকে সে বেছে নিতে পারে। সে উন্নত জীবনে অভ্যস্ত। আমাকে  ঝোঁকের মাথায় বিয়ে করা। আর এই বিয়ে পরবর্তীতে আমাদের সন্তানের জন্ম আর ঐটুকু দুধের শিশুকে মা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের কাছে তাচ্ছিল্য ভরে ছুড়ে দেয়া।অন্তত এই কারণটিতে আমি আর কোনদিন ঐ পরিবারের সাথে যুক্ত হবো না। রিশতিনাকে নিয়ে বারবার আমার পরিবারের কাছে আমি বিব্রত হয়েছি। কিন্তু আমি এবার স্বস্তি চাই। আমি এবার শান্তি চাই। আমার সন্তান যেন সুস্থ পরিবেশে বড় হতে পারে।
শায়লার দিকে তাকিয়ে শিহাব  আরো বলেই চলেছে, শায়লা আমি তোমাকে আমার বাকী জীবনে সঙ্গী করে পেতে চাই।তোমাকে পেয়ে আমার আবার নতুন করে বাঁচবার, সংসার সাজাবার ইচ্ছে জেগেছে। আরাফ তোমাকে আপন করে নিয়েছে। তুমি, আমি আর আরাফ একসাথে থাকবো। আমাকে ভালোবেসে তুমি 
কি আমার সাথে থেকে যেতে পারোনা ? খুব শক্ত করে শায়লার হাত ধরে শিহাব শায়লাকে এ দেশে থেকে যেতে অনুরোধ করে যাচ্ছে। একজন অচেনা মানুষের সাথে তুমি তোমার জীবন শুরু করতে পারো না। শায়লা  শুধু অধিকার দিয়ে কেউ কাউকে গ্রহন করতে পারে না যদিনা তাতে ভালবাসা থাকে।তুমি  এতদিনেও যাকে ভালবাসতে পারোনি তার সাথে কিভাবে বসবাস করবে ? শায়লা আমার নিঃসঙ্গ জীবনে তোমায় আমি সঙ্গী করে নিতে চাইছি। শিহাবের ভেতরে যে এত আবেগী অনুনয় জমে আছে শায়লা তা ভেবে অবাক হচ্ছে।
শিহাবের কথায় শায়লা নীরব শ্রোতা হয়ে সব শুনছিলো। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে? কিভাবে সে শিহাবকে বুঝাবে তাকে ছেড়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই তার নেই।একেবারেই সে অনিচ্ছুক হয়ে পারিবারিক সব  আয়োজনকে মেনে নিচ্ছে। শায়লা শিহাবের কাঁধে মাথা রাখলো। চলাচল করা লোকজন আড়চোখে ওদের দেখে নিচ্ছে।
যদিও এতে দুজন  ভ্রুক্ষেপহীন হয়েই কথা চালিয়ে যাচ্ছে।দুজন দুজনার মাঝে যেন তন্ময় হয়ে আছে। 
শিহাব শায়লার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাইছে। শায়লার ভেতরে অনেক কথা জমলেও তা বলা হচ্ছে না।  সে বলতে পারছে না, শিহাব তোমার মত একই ভাবনা চাওয়া আমার মনেও। মনে মনে  শায়লা আজ আর ঘরে ফিরে যেতে চাইছে না। আর মাত্র একদিন  পরেই কানাডা থেকে নোমান সাহেব আসবেন আর শায়লা আজ বাসায় ফিরে গেলে আর কোনোদিন শিহাবের কাছে ফেরা হবে না। কিন্তু শিহাবতো তার সম্পূর্ণ অন্তর আর স্বত্বা জুড়ে।শায়লা শিহাবের শার্ট আকড়ে ধরলো।ফিসফিস করে বললো, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না শিহাব। আমি কানাডা যাবো না। আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই।বলেই শায়লা ঝরঝর করে কেঁদে দিলো।শিহাব কথাগুলো খুব স্পষ্টই শুনতে পেলো। শিহাবের যেন শায়লার প্রতি আস্থা ফিরে পেলো। সে শায়লাকে এক ঝাঁকুনি দিয়ে বললো, তবে আজ তুমি আমার সাথে চলো। আজ আর তোমার বাসায় ফিরে যেও না!
শায়লা মনস্থির করে নিলো আজ আর সে বাসায় ফিরে যাবে না। আজকে সাহসী সিদ্ধান্ত না নিলে সারাজীবন এর জন্য পস্তাতে হবে। যার সাথে মনের কোন বন্ধন নেই শুধু তার সন্তান প্রতিপালনের জন্য এখন শায়লাকে কানাডায় নিয়ে যেতে চাইছে, সেখানে তো তাহলে কোন সংসার হবে না। শুধুই দ্বায়িত্ব পালন করা। শায়লার মনের ভেতর বিদ্রোহ করে উঠলো। সে শিহাবকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো। শিহাবের শরীর থেকে অপূর্ব মিষ্টি পারফিউমের ঘ্রাণে শায়লা বিমোহিত হয়ে গেলো! সে চোখ বন্ধ করে শিহাবের সবটা ঘ্রাণ শুষে নিলো।


চলবে....

কবি মনি জামান এর কবিতা "মুক্তির আহবান "




মুক্তির আহবান 
মনি জামান

একটা কষ্ট সদ্য ফোটা মেয়েটার
শরীরটা আবৃত্ত করে,
থমকে দাঁড়ায় সময় বোঝে না পুরুষ 
প্রেম কি।
কখনো জানতে চাইনা বুঝতে চাইনা
মেয়েটার মন,
শকুন চোখ গুরু দক্ষীণা দাও।
চঞ্চল ঝর্ণাকলম মেয়েটার 
সংসার ভাঙ্গে,
নিরব অভিমানে ভঙ্গুর সূর্যটা হয় 
আলোহীন।
ফুঁসে ওঠে ঘৃণা কম্পিত বুক, 
হৃদপিণ্ডে ফোঁটে বঞ্চনার রক্ত 
গোলাপ,
জীবন হিসেব চুকায় বিবাহ নির্যাতনে,
নিরবে ঝরে নারী মুক্তির আহ্বান!!

কবি শাহীন রহমান এর কবিতা "শত জনমের সাধ"




শত জনমের সাধ
শাহীন রহমান

"সজল নয়ন ভিজিলো সখা,তোমার প্রণয় পরশ পেয়ে, 
দূরের বনে হাজারো পাপিয়া,মধুর সুরে উঠিলো গেয়ে। 
প্রিয়তমোহে তব ছোঁয়াতে,ভরিয়া উঠিলো ফুলের বীথি,
বিরহীনি বঁধু কাঁকই টানিয়া,বাঁধিয়া নিলো আপন সিথী।

বাসরে দোসর হও হে সখা,দোঁহে মিলিবো একই সাথে, 
উঠোনে পাতা কুসুম মাদুর,মেঘলা মেদুর শাওন রাতে। 
হিমেল চাদরে আদর মাখিয়ে,গাহিব দুজন প্রণয় গীতি
হংসমিথুন আদরে সোহাগে,যেমন করিয়া জানাই প্রীতি। 
 
শত জনমের বাসনা টুকু,বাসরে সাজুক ফুলের সাজে,
বেনারসিতে ঘোমটা জড়িয়ে,থাকিব বসে গভীর লাজে।
হারানো সাথী খুঁজে ফেরে জোড়,হারিয়েছে কোন বাঁকে, 
বিরহীনি কোন বেজোড় পাখি,গান গাইবে কদম শাখে।

শত জনমের কামনা আমার, পুরোন হবে গো জানি, 
বনে ফুটিবে কদম,হাসিবে কেয়া,সাজাবে বাসর খানি।
দূরে লক্ষীপ্যাঁচার ডাক শুনে আজ শিহরিত হবো প্রিয়, 
ভালোবেসে স্বামী গভীর আবেশে, বক্ষে টানিয়া নিও।

২৭ মার্চ ২০২২

কবি শহিদ মিয়া বাহার এর কবিতা "কবির কারাদন্ড"




কবির কারাদন্ড
শহিদ মিয়া বাহার

আপনি কবি ?
কবিতা লিখেন ? 
তাহলে আপনি কিছুই করেন না
না উৎপাদন, না উন্নয়ন
 রাত্রি খনন করে কেবল কবিতার শৈল-তরঙ্গে ডুবিয়ে রাখেন শব্দকূপের জল , তীব্র বোধের প্রনালীতে
কোন উলম্ব ভুমিকা নেই আপনার জিডিপির ডাটা শিট জুড়ে;
স্বত:সিদ্ধ অথবা প্রামানিক
কোন শহর কিংবা রাষ্ট্রের !
এক শুন‍্য থেকে অন‍্য এক শুন‍্যের গোলকে 
আটকে আছে আপনার নিজস্ব জিডিপি !

স্ফিত লিষ্ট নিয়ে আপনি বাজারে যান
ওখানে আগুনের ভস্ম ওড়ে
ওড়ে পরিশ্রম, বাষ্পীভূত  ঘামের সাথে !
ফিরে আসেন অর্ধভরাট থলের নমিত হাহাকার নিয়ে  
বগলের পেশিতে গোঙ্গানো অবসাদ
আপনার যে যুবক সন্তান একদিন জড়োয়া দু:খগুলো ছুঁড়ে দেয়েছিল কর্ণফুলির ঘাটে  
তার খোঁচা খোঁচা দাড়ির ভাঁজে এখন পুড়ছে
শুকিয়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসের মাঠ !
কারন আপনি কবি
আপনি কবিতা লেখেন!

কবি-আপনি খুনি
কলমের ট্রিগার টিপে টিপে  রাত ভর খুন করেন স্ত্রীর চন্দ্রতোয়া আফ্রোদিতি আকাশ
দিবালোকে পুরনো আলমিরার জমানো অলংকার,   
কাঁঠালিচাপার ঘ্রাণ
আর লাউডুগির মত বেড়ে ওঠা ফ্রেমবাধা তেল-নুনের পাললিক সংসার !
আপনার কারাদন্ড আপনিই লিখেন কবি
যাবতজ্জ্বীবন কবিতার শেলে শেলে নিমগ্ন কারাগার 
কারন আপনি কবি !

দেয়ালের পলেস্তরায় পারমানেন্ট উপহাস সিলিংফ‍্যানের মত ঝুলে আছে 
এবং ঝুলে আছে আপনার জামার আস্তিনে
তবু আপনি কবিতা লেখেন
কারন আপনি কবি  
কবিদের উপহাস মানতে নেই!

ধূলোর স্তর থেকে নেমে আসে শিশার প্রলেপ 
রাতের নিকোটিনে ঝলসে গ‍্যাছে ফুসফুস,
ধমণীতে রক্তের বাঁধ, হৃদপিন্ডের বিদ্রোহ, আড়শোলা খেয়ে নিচ্ছে থ‍্যালাসেমিয়া শরীর, ধ‍্যানিত মগজ!
কোন এয়ার এম্বুলেন্স নেই অবশিষ্ট  আপনার প্রতীক্ষায় 
সবগুলো রানওয়ে ভিআইপিদের দখলে
কোন হাসপাতাল নেই, ডাক্তার নেই, ব‍্যাস্ত বৈমানিক নেই,কারো দায়ভার নেই আপনাকে সারাবার
কারন আপনি কবি !

কষ্টের পাহাড়ে পাথর চেপে আপনি মরে যাচ্ছেন কবি !
মরে যান---
কবিদের এভাবেই মরে যেতে হয়--
কারন আপনি কবিতা লিখেন 
আর কিছুই করেন না
না উৎপাদন,না উন্নয়ন
 কিছুই না
কিচ্ছু না!

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৩




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৪৩
ব্যস্ততা
মমতা রায় চৌধুরী ১৪৩
১৬.৩.২২ রাত্রি ৯.৩৫

মাধুর কাজের চাপে নাজেহাল অবস্থা। ফুল পিসি তো চেঁচিয়ে মাথা খারাপ করে দিল।
'আরে শিখার আইবুড়ো কখন হবে কোথায় হবে আইবুড়োভাত?'
'এজন্যই বলেছিলাম আমাদের বাড়িতে যেতে, সেও গেল না মেয়ে।'
ও মাধু, মাধু উ .উ .উ
মাধু, আজকে খাওয়াবে কে ওকে?'
'ওদিকে সুরঞ্জন ডাকছে, আরে পার্লারের লোক কখন আসতে বলব,ওরা জানতে চাইছে? মাধু , মাধু .উ.উ.উ'
' তুমি আবার চিৎকার করছো কেন?'
ওদিক থেকে বৃষ্টি বলছে
'মাম মাম পিমনি ডাকছে।'
তবু একগাল মিষ্টি হাসি হেসে বলল' হ্যাঁ যাই।'
এ বাড়িতে মাধুরী ছাড়া সবকিছুই অচল।
সুরঞ্জনের কাছে যেতেই ওদিক থেকে আবার শিখা ডাকছে' বৌদিভাই ,বৌদিভাই, বৌদি ভাই।
'হ্যাঁ ,বল শুনছি।'
'দোতালার ব্যালকনি থেকে  শিখা, ভুরু কুঁচকে বলল' তুমি কাছে আসলে তবেই বলবো। জোরে চেঁচিয়ে বলবো না।'
মাধু হেসে বলল' এখনও গোপন কথা আমার সঙ্গে?'
এখন তো বোঝাপড়ার লোক হয়েছে ।'
 পা মেঝেতে ঘষতে ঘষতে শিখা বলল 'বৌদি ভাই তুমি তো জানো আমি কতটা তোমার উপর ডিপেন্ডেন্ট। কিছু জিনিস আছে তোমাকে ছাড়া কাউকে শেয়ার করতে পারব না বৌদি ভাই।'
'তা বেশ আসছি '।
মাধুরী ছুটলো দোতলার দিকে ।তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে ।
অন্যদিকে ফুল পিসিমা বলছে, 'বললি না বউ কটার সময় হচ্ছে আইবুড়ো ভাত কার বাড়িতে খাবে ও,.'।
মাধু আবার নেমে এসে ফুল পিসিমার কাছে এসে বলল
'ওই তো ঠাকুরপুকুর মেজো মাসির বাড়িতে।'
'ও আচ্ছা।'
'এখনো তো মেজদি আসলো না।'
'সবাই আসবে ফুলপিসি। চিন্তা ক'রো না।'
ওদিকে সুরঞ্জন ফোন করল মনোজকে।
ফোন বেজে চলেছে।
তখন রেখার সাথে মনোজের চলছে তর্ক।
উত্তপ্ত পরিবেশ।
রেখা বলছে' আমি কি এমন করলাম যে তুমি সাত সকালে আমার সঙ্গে এরকম কথা বলছ।'

'কি এমন করলে মানে? তুমি নিজে জানো না?'
'না ,সত্যিই আমি জানি না। তাহলে আমাকে তো বুঝিয়ে দিতে হবে আমার ভুলটা কোথায়?'
'ও তাহলে তোমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে তাই তো?'
'আমার ছোটলোকের মতো ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না। তোমার যা বলার তুমি বলে 
যাও ।আমি আর কিছু বলতে পারছি না।'
'কি আমার কথাগুলো তোমার ছোটলোকের মতো শোনাচ্ছে?'
রেখা কোন কথা বলে না ।আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। ওদিকে স্কুলে যেতে হবে ।খামোখা ঝগড়া করে সময় নষ্ট করে কোন লাভ নেই।এমনিতেই সময়ের বড্ড অভাব। খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে লাগলো।
ওদিকে রেখার শাশুড়ি মা আর ননদ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দুজনে খুব হাসাহাসি করছে। রেখা, এক পলক তাকিয়ে দেখে ননদ শাশুড়ি মাকে রেখার দিকে হাত তুলে দেখিয়ে বলছে
' ঠিক হয়েছে ,ঠিক হয়েছে ।এতদিনে ভাই মুখের ওপর সঠিক কথা বলেছে। খুব তেজ চাকরি করে বলে।'
রেখা বুঝে পায় না যে কি আর চায় 
ওরা ?আজকে অন্য সংসারে বিয়ে হলে  এই পরিণতি হতো কিনা জানি না ।কপালটা  তো আর ফেলে দেয়া যায় না ।নইলে সারাক্ষণ রেখা চেষ্টা করে সংসারের যতটুকু কাজকর্ম করা যায়,  স্কুল করছে। তারপর আর কি চায়? ভেবেই পায় না এদের সন্তুষ্টি কিসে?

'আজকে মাসি কাজে আসলো না কেন? আজকেও মাসিকে ছুটি দিয়েছো?'
রেখা কোন জবাব দেয় না।।
'মা দিদিকে দেখেছো বলে   ছুটি দিয়েছ?'
মাঝে মাঝে মনোজ এমন খোঁচা দিয়ে কথা বলে না গা টা পুরো রি  রি রি করে জ্বলতে থাকে।
রেখা বলল 'মা দিদিকে দেখেছি মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?'
'যা বলতে চাইছি ,তুমি ঠিক শুনেছো। বলতে চাইছি মা দিদিকে দিয়ে কাজ করাতে চাইছে?'
রেখা মনোজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় এ   কোন মনোজকে দেখছে।
'তুমি ঠিকই যদি বুঝে থাকো । তাহলে কাজগুলো কে করে তুমি দেখতে পাও না?'
'হ্যাঁ ,দেখতে পাই তো।সকালে যেটুকু কাজ করে রেখে   যাও । বাকি সারাদিনের কাজগুলো কে করে?'
'সারাদিনে কি কাজ থাকে আর?'
'স্কুল থেকে এসে আমি বাসন মাজছি, সারাদিনের খাবার বাসরগুলো তো জমিয়ে রেখে দেয়া হয়। আমার জন্য।'
'আর রান্না?'
'আমার যেটুকু সামর্থ্য আমি সেটুকু করে যাচ্ছি তার বাইরে তো আমি আর করতে পারবো 
না ।তাহলে তো আমাকে স্কুল বাদ দিয়ে  ঘরে বসে থাকতে হয়।
আর আমি সেটা কিছুতেই পারব না।'
'মাসির খুব শরীর খারাপ। শরীর খারাপ নিয়ে মাসিকে আমি কাজে আসতে বলবো ?তোমাদের দরকার হয় গিয়ে বলে আসো ,যাও ।আমি পারবো না বলতে।'
মনোজ চুপ করে যায় । মনোজ জানে রেখা তো এরকম করার মেয়ে নয়। শুধু শুধু মা দিদির কথার উস্কানিতে এতগুলো কথা রেখাকে 
বলল ।বলা বোধহয় ঠিক হলো না।।'
রেখা ঝটপট কাজ করে নিয়ে জলখাবার বানিয়ে ফেললো, দুটো তরকারিও করে ফেলল। তারপর মিলি তার বাচ্চাদের খাবার দিয়ে আর বাইরে রাস্তার কালী ও তার (বাচ্চাকুকুরগুলোকে)ও খাবার দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
মনোজ যেন কথাগুলো বলে কেমন যেন একটা আত্মগ্লানিতে  ভুগতে লাগলো। রেখাকে কথাগুলো বলাটা ঠিক হলো না।।
এরমধ্যে ফোন বেজেই যাচ্ছে, এতক্ষণ দুজনের মধ্যে এত তর্ক হচ্ছিল যে ফোনের প্রতি ধ্যান দিতে পারেনি। এখন ফোনটা রিসিভ করল মনোজ বললো 'হ্যালো।'
'আমি সুরো বলছি হাঁদা।'
"হ্যাঁ বল।'
'বল মানে ?তোরা এখনো বসে আছিস? তোরা আসবি না, নাকি শিখার বিয়েতে?'
"হ্যাঁ যাবো তো।'
মনোজ ভাবছে 'বলে তো ফেললাম সুরোকে কিন্তু
'কি বলবে সুরঞ্জনকে? একটু আগে রেখার সাথে যা উত্তপ্ত কথাবার্তা হলো, তাতে রেখা কি রাজি হবে যাওয়ার জন্য?'
"আর রেখা কোথায় বলতো ?রেখাকে দে না ফোনটা?'
"ওতো বাথরুম আছে।'
মনোজের কথায় কেমন যেন একটা , নিরুৎসাহ ভাব প্রকাশ পেল ।সুরঞ্জন ভাবতে লাগলো "কিছু কি হয়েছে?'
'তা তোরা কখন বের হচ্ছিস?'

"আজকে মনে হয় হবে না ।বিয়ের দিন যাব।'
"মানে কি বলছিস ?বিয়ের দিন আসবি?"
'রাগ করিস না বন্ধু, জানিস তো আমাদের কতগুলো বাচ্চা আছে ওদেরকে খাওয়ানো দাওয়ানো এসব তো করাতে হয় ।দুদিন আগে গিয়ে কোন লাভ নেই ,এতে ওদেরই অসুবিধা হবে।"
সুরঞ্জন বলল' তোরা না আসলে বিয়ে বাড়ির আড্ডাটা কি করে জমবে বলতো?'
"যা ভালো বুঝিস কর আমার আর কিছু বলার নেই।"
এরপর ফোনটা কেটে দিলো।
ফোনটা কাটার পর মাধুরী লক্ষ্য করল সুরঞ্জনকে কেমন নিরুৎসাহ দেখাচ্ছে।
মাধু আর  ঘাঁটালো না সুরঞ্জনকে ।প্রচুর কাজ পড়ে রয়েছে।
ওদিকে ডিজাইনার ব্লাউজ বানাতে 
দিয়েছিল ।শিখার ও আছে। অন্যদিকে মাধুরও আছে, তা দিতে এসেছে। তারা ডাকাডাকি করছে।
ফুল পিসি চিৎকার করছে ও মাধু কে ডাকছে দেখো।
"হ্যাঁ যাই ।যাই পিসিমা।'
ওদিকে ক্যাটারিং এর ছেলেরা ডাকছে, জলখাবার হয়ে গেছে।
মাধু গেটের কাছে যেতে যেতে বলল' ফুল পিসিমা, আপনারা সবাই আসুন জলখাবারটা খেয়ে নিন।'
'রানী বৌদিরা কোথায় গেল ওনাদের কেউ একটু জানিয়ে দিন না পিসিমা।'
গেটের কাছে যেতেই দেখা হয়ে গেল  মেজ পিসিদের সঙ্গে।
"ও মাধু ,বাপরে বাপ কি ট্রেনে ভিড় !কি ট্রেনে ভিড় !তোমায় কি বলি?'
পিসিমা আপনারা যান উপরে ।নিজে নিজে রুমে গিয়ে লাগেজ গুলো রাখুন আমি মনা কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
'মনা মনা, মেজ পিসিরা এসেছে ওনাদের লাগেজ গুলো একটু উপরে নিয়ে যাও।'
'হ্যাঁ ,যাই বৌদি।'
'ও বাবা তিনুটা কত বড় হয়েছে  পিসি?'
জবা ভালো আছো তোমরা? জিবেশ কোথায়? ''ওই তো দাদার সঙ্গে কথা বলছে।''
'যাও যাও তোমরা রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নাও তারপর ফ্রেশ হয়ে জলখাবারটা খেয়ে নাও।'
'তোমরা এসেছো কি ভালো যে লাগছে।'
জবা বললো 'তোমার বাবার বাড়ির লোক আসেনি?'
'না ,না । ও জানো না শিখার তো আমার দাদা শালার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। ওরা তো ওখানে ব্যস্ত।'
'ও তাই বুঝি?'
এতসব লোকজনের মাঝে শিখা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা ঘেটু ঘেটু করে ওরা শ্লোক আওড়াছে আর পয়সা আদায় করছে।।
শৈশবের স্মৃতিগুলো বড় বেদনাদায়ক সেই শৈশবকে হাজারো বার ফিরে পেতে চাইলেও পাওয়া যায় না। তবুও সেই শৈশবটা বেঁচে থাকে এই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মধ্যে কিছু পালা পার্বণের মধ্যে।শিখা মনে মনে এটা ভাবল। আর ওরা সেই ঘেটু গান করতে করতে চলে যাচ্ছে। ওটা উপর থেকে দেখতে লাগলো। একবার মনে হলো শিখা ডাকে। গেট পেরিয়ে যখন যাচ্ছে তখন ডেকেই ফেলল 'এই শোন, শোন ,তোরা এদিক আয়।'
বাচ্চারা এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ ওপরের দিকে তাকাল । তখন শিখা ওদেরকে ইশারায় ডাকলো ওরা খুব খুশি হল। 
বলল' আমাদের কিছু দেবে?'
"হ্যাঁ ,দেবো তো  ।আয়।'
আসলে আজকে তোমাদের বাড়ি কি আছে? বিয়ে নাকি গো? তোমার বিয়ে?'
'তোরা আয় না।'
বাচ্চারা খুশি হয়ে এসে উঠোনে দাঁড়ালো। শিখা তর তর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে ,সেই সময় ফুল পিসিমার চোখে পড়াতে বলল
' আরে তুই কোথায় যাচ্ছিস ?এই অবস্থাতে কোথাও যাবি না একা একা।'
একটু থমকে দাঁড়ালো 
শিখা বললো 'সামনে গেটের কাছে যাচ্ছি।।
কোথাও যাওয়া হবে না ।'
।এ কিরে কি অবাধ্য মেয়ে তুই কথা শুনবি না
এবার কি করে বাচ্চাগুলো গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, কত আশা করে ডেকেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।।'
মাধুরী ভাড়ার ঘরের দিকে যাচ্ছিল। তখন বলল 'ও বৌদি ভাই ও বৌদি ভাই শোনো না?'
'এখন না শিখা, একটু পরে আমার অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।।
'না তুমি এখনই আসো, খুব দরকার।'
"বায়না করিস না শিখা হেসে বলল।'
'আমি তো যেতে পারছি না তাই তো তোমাকে ডাকছি। ওদিকে থানার বড়বাবু বসে আছে।'(ফুল পিসিমা)।
মাধু বলল' কি যে বলিস না মাঝে মাঝে?
বল কি হয়েছে?
ঘেটু গান করতে করতে যাচ্ছিল ওদেরকে ডেকেছি আমি ওপর থেকে ওদেরকে কিছু টাকা দিতে হবে আমি যাচ্ছিলাম ফুল পিসিমা আমাকে বারণ করল।।
গাল ফুলিয়ে শিখা বলল।
ও আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিয়ে দিচ্ছি মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মাধুরী শিখার।

মাধুরী গিয়ে ছেলেগুলোকে একশটা টাকা ধরিয়ে দিল।
ছেলেগুলো এত খুশি হল মাধুকে প্রণাম করতে আসলো, বললো না বাবা ,তোমরা ঘেটু নিয়ে আছো, থাক তোমরা এসো।
বাচ্চারা বলল 'তোমরা খুব ভালো, কাকিমা।'
মাধু বাচ্চাগুলোকে কাছে টেনে একটু আদর করে গালটা টিপে দিল।
শিখা সব উপর থেকে দেখতে পেল আর বলল মনে মনে এজন্যই আমার বৌদি ভাই সব থেকে ভালো।'
'তোমাদেরকে খুব মিস করবো 
বৌদি ভাই ।বিশেষত মা মারা যাবার পর থেকে তুমি যেভাবে আমাদেরকে আগলে রেখেছো 
তুমি ।ভালো থেকো বৌদি ভাই সব সময়। আর চোখের কোনে জল এসে জমা হলো।'
বৃষ্টি এসে বলল' পি মনি তুমি কাঁদছো?'
'কাঁদছো কেন পি মনি?'
বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে আরো কেঁদে উঠলো শিখা।
অন্যদিকে মাধু বৌদি সকলকে নির্দেশ দিতে থাকলো ।সব আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ।'যাও ফুল পিসি ,মেজ পিসি বাকি যারা যারা আছেন সকলকে ডেকে নিয়ে আসো নাস্তা করে নিক। তারপর তুমিও খেয়ে নিও কেমন ?তারপর যেমন যেমন বলেছি লাগেজ গুলো সব সাজিয়ে রেখেছো তো মনা সব?
 ঘাড় নেড়ে বলল 'হ্যাঁ সব ঠিকঠাক করে রাখছি'।
মেজ পিসি, ফুল পিসি সকলে গল্প করছে সেই হাসির ছটাও বেরিয়ে আসছে থেকে থেকে ।শুধু শিখাই পারছে না আনন্দ করতে ।কেন ?কি জানি মনটা কিসে ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে সে নিজেই বলতে পারবে না।'
বিয়ে বাড়ির এত ব্যস্ততায় তার বৌদি ভাইয়ের যে কতটা কষ্ট হচ্ছে একার উপরে এত চাপ বৌদি ভাই ছাড়া এ সংসারটা সত্যিই অচল।
অন্যদিকে থেকে থেকে সানাইয়ের শব্দ কানে ভেসে আসছে।

কবি তাহের মাহমুদ এর কবিতা "আহা !সমাজ"




আহা! সমাজ 
তাহের মাহমুদ

সমাজ বড় কঠিন জায়গা
নষ্টরাই দামী
মারহাবা মারহাবা বলে
ডাকে বেনামী 

অপসংস্কৃতির অপকর্মে
সমাজ রসাতলে
সংস্কৃতির চর্চা চলে
অর্থ-পেশীর বলে

মানের জায়গা ধনে খাইলো
সমাজপতির ঠাটে
পুথিবিদ্যার মানুষগুলো
মূর্খের পা চাটে

জ্ঞানী বিকায় অল্প টাকায়
গুণের কদর নাই
মানের বিচার অর্থের কাছে
মনের নাই যাচাই

চড়া সুদের অর্থে মরে
গরীব অসহায়
বিনা সুদে ঠক কারবারি
ধনী বনে যায়

মানবতায় মান নাই আর
ধনের হুকুমবাজি
নষ্টামিতে ভ্রষ্টাচারী
লেবাসধারী কাজী 

মানুষ মরে মানুষ মারে
খুনে খুনে ক্ষয়
চারিদিকে লাশের মিছিল
বোধের অবক্ষয় 

নেতার ভিড়ে সমাজ ঘিরে
দলকানাদের দল
পাড়ায় পাড়ায় পাতি নেতায়
হট্ট কোলাহল

কলি যুগের নষ্ট সমাজ
পথভ্রষ্ট পথিক
ভুলের মাশুল গুনতে গিয়ে
কষ্ট বাড়ে অধিক!

শামীমা আহমেদ  এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৭৮




ধারাবাহিক উপন্যাস 
শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭৮)
শামীমা আহমেদ 

রাহাতের অনুমতি নিয়ে শায়লা শিহাবের অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুনোর জন্য প্রস্তুতি শেষ করলো। শায়লা আজ বাসন্তী আর মেরুন রঙের একটি শাড়ি  পরলো। হাতে শিহাবের দেয়া ব্রেসলেটটি পরে নিলো। 
যদিও পার্লারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু রুহি খালার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে শায়লা আসলে কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।তাইতো শায়লা বেরুনোর আগে ছোট্ট করে সাবধান বাণী শায়লার কানে ঢেলে দিল।
যেখানে যাচ্ছ যাও, তবে মনে রেখো তুমি বিবাহিতা, দুইদিন পর তোমার স্বামী নোমান বাবাজি দেশে আসতেছে। তার মান সম্মানটা রেখো। 

শায়লা কথা কয়টি শুনে নীরবে বেরিয়ে গেলো। শিহাব অপেক্ষায় আছে, শায়লা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেইন গেট পেরিয়ে  একটা রিকশা ডাক দিলো। সাত নম্বর সেক্টর থেকে কুশল সেন্টার খুব একটা দূরে নয়। শায়লা দশ মিনিটেই পৌঁছে গেলো। রিকশা থেকে নেমে শায়লা শিহাবকে কল দিলো।শিহাব জানালো,লিফটের আট প্রেস করে চলে আসো।আমি এখানেই আছি। 
অফিস পাড়ায় কোন মহিলার আগমনে লোকজন উৎসুক হয়ে উঠে। চারদিকে সবার নানারকম দৃষ্টি। শায়লা সবকিছু উপেক্ষা করে লিফটে উঠলো। নিজের গা বাঁচিয়ে লিফটে দাঁড়ালো। 
আটতলায় আসতেই, এক্সকিউজ মি বলে সে বেরিয়ে এলো। লিফটের বাইরে শিহাব দাঁড়িয়ে ছিল। দুজন দুজনকে দেখতে পেয়ে হাস্য বিনিময়ে কাছে গেলো। শিহাব হুট করেই শায়লার হাত ধরে ফেললো আর বললো, চলো,ঐতো আমার অফিস। শিহাবের অফিসে ঢুকতেই কবিরের সাথে শায়লার পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো,
ওর নাম কবির, আমার অফিস এসিস্ট্যান্ট। 
আর, ও শায়লা, আমার খুবই আপন একজন। একথা বলেই শিহাব কবিরকে ফাস্ট ফুড শপ থেকে দুটো কফি আনতে পাঠিয়ে দিলো। অফিস ঘরে তখন শুধু দুজনেই রইল। কিছুটা সময় দুজন দুজনের দিকে দৃষ্টিতে আটকে গেলো। হঠাৎই 
শিহাব একঝটকায় শায়লাকে তার বুকে টেনে নিলো আর শায়লাও যেন ভীত পাখির ছানার মত হয়ে শিহাবের বুকে নিজেকে গুজে দিলো। আজ সকালে রিশতিনার সাথের কথাগুলো  আর শিহাবের ব্যস্ততায় শায়লা ভীষণ ভীত হয়ে পড়েছিল। শিহাবকে হারানোর আশংকায় ভীষণ মুষড়ে পড়েছিল। সব জল্পনা কল্পনা আর উৎকন্ঠার যেন অবসান হলো।শিহাবকে হারিয়ে ফেলার নিরাপত্তাহীনতা এখন প্রাপ্তির আনন্দে ভরিয়ে দিলো। 
শিহাব শায়লাকে বললো, তোমাকে আমি সারাজীবন এভাবেই বুকের মাঝে শক্ত করে বেঁধে রাখবো, কোত্থাও যেতে দেবো না। এমন কথায় শায়লা নিজেকে আরো সমর্পিত করলো। ফিসফিস করে বললো, আমিও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
কবির কফি নিয়ে এলো। শায়লা শিহাবের অফিস টেবিলের সামনে, দুজনে মুখোমুখি বসলো, শিহাব বললো, দুঃখিত শায়লা, আজ তোমাকে অফিসে  ডেকে আনলাম। আজ খুবই জরুরি কিছু মেইল আসবে।তাই বেরুতে পারলাম না। তবে, ঠিকআছে, বসো, যদি কাজ শেষ করতে পারি দুজনে ঘুরতে যাবো।
শায়লা যদিও জানে কতটুকু সময়ের জন্য সে বেরিয়েছে। বাসায় দ্রুত ফিরতে হবে। তবুও শিহাবের কথায় মনের পরিবর্তন করে ফেললো। শিহাব ল্যাপটপ স্ক্রিনে চোখ রাখল আর শায়লা চোখ রাখলো শিহাবের দিকে। শায়লা মুগ্ধ হয়ে দেখছিল,কালো শার্টে শিহাবকে খুবই সুন্দর লাগছে। দুজনে কফি খেতে খেতে আলাপচারিতায় মেতে উঠলো। 
শিহাব যতটা ফুরফুরে মেজাজে আছে কিন্তু শায়লার মনের ভেতর রিশতিনাকে নিয়ে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।শায়লা  কিভাবে তা জানতে চাইবে বুঝতে পারছে না।শিহাব নিজে থেকে রিশতিনার কোন প্রসঙ্গ তুলছে না।অথচ রিশতিনা তার বাসায় অবস্থান করছে। দুজনে একই ঘরে রাত কাটাচ্ছে ? তবে কি শিহাব তার সাথে অভিনয় করছে? আজ সকালে শিহাবের মোবাইলে রিশতিনার সাথে কথা হলো।শিহাব কি  কল লিস্টে সেটাও দেখেনি ? শিহাবের প্রতি এত জিজ্ঞাস্য তবুও শায়লা তাকে এতটুকু অবিশ্বাস করছে না। কারণ শিহাব রিশতিনার ব্যাপারে সবসময়ই স্বচ্ছ থেকেছে।শায়লার যে কোন কিছু জানতে চাওয়াকে শিহাব সহজভাবেই উত্তর দিয়েছে।

বেশ কিছুক্ষন দুজনে নীরব থেকে শায়লা তার কৌতুহল মেটাতে শিহাবের কাছে জানতে চাইলো, আচ্ছা শিহাব তোমার বাসায় কি কোন অতিথি এসেছে ?
শায়লার প্রশ্নটি শুনে শিহাব ভীষণ চমকে গেলো! ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে মুখ ঘুরিয়ে শায়লার দিকে তাকালো, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন ? 
না এমনিতেই, না মানে আজ সকালে আমি তোমাকে কল দিয়েছিলাম। একজন নারী কন্ঠ কলটা রিসিভ করেছিল।
শিহাব এক ঝটকায় একেবারেই তার চেয়ার ঘুরিয়ে শায়লার মুখোমুখি হয়ে বসলো। শিহাব  এখন বুঝে নিলো,কেন শায়লা  সকাল থেকে তার সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো। কেন তাকে বারংবার কল দিচ্ছিল। শিহাব শায়লাকে আশ্বস্ত করতে জানালো,
সে কথা খুলে বলার জন্যই আমি তোমাকে  ডেকেছি।ভেবেছিলাম বাইরে কোথাও খোলা 
জায়গায়  দুজনে বসে এ ব্যাপারে কথা বলবো। তা তুমি যখন জানতে চাইছো, তবে তোমায় আর দ্বিধায় না রেখে এখুনি বলছি, হ্যাঁ, গতকাল সকালে আমার অনুপস্থিতিতে 
রিশতিনা আমার ফ্ল্যাটে চলে আসে।ঘরে বুয়া কাজ করছিল, সে নক করে পরিচয়  দিয়ে ফ্ল্যাটে  ঢুকে যায়। আর আমি রাতে গাজীপুর থেকে ফিরে ভীষণভাবে অবাক হয়ে যাই। আমি অনেক ক্লান্ত ছিলাম।তোমার সাথে কথা বলার পরপরই আমি ড্রইং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে পড়ি। শায়লা শুনছিল বটে তবে তার চোখে মুখে একটাই জিজ্ঞাসা, তবে কি তোমরা এক হতে চাইছো ? শায়লার সে প্রশ্নটা করা হয়না।
শিহাবই একের পর এক সব কিছু বলে চললো,অফিসের জন্য বেরিয়ে আসার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। শায়লা জানে শিহাব তার থেকে কিছুই লুকাবে না, তবে সে কেন তার ফোন কলের কথা জানলো না ? 
শায়লার ফোন কলের ব্যাপারটা শিহাবের খুব অবাক লাগছে। কই,কল লগে তো শায়লার কোন সেন্ডিং কল ছিল না,তবে শায়লা কিভাবে রিশতিনার কথা জানতে পারলো। শিহাব আবার তার মোবাইল খুলে সব চেক করলো। নাহ! শায়লার কোন কল নেই। এ ব্যাপারে শিহাব শায়লার কাছে জানতে চাইল, তোমাদের দুজনের মাঝে কি কথা হয়েছে ? 
শায়লা সব কথা শিহাবকে জানালো। এবার শিহাব বুঝে নিলো, কথা বলে,রিশতিনা তা ডিলিট করেছে। তাইতো শিহাবের  তা অজানা  রয়েছে।শিহাব রিশতিনার প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও পরক্ষনেই সে বুঝে নিলো, তার প্রতি রিশতিনার ভালোবাসা এখনো পর্যন্ত সেই আগের মতই আছে। তাইতো বারবার সে শিহাবের দরজায় কড়া নাড়ছে। বারবার নিজ  পরিবারকে উপেক্ষা করে তার কাছে ছুটে  আসছে।কিন্তু তার এই ফেরা অনেক দেরি হয়ে গেছে।শিহাব  আর পিছনে ফিরতে চায় না। তার সামনে, বর্তমানে মুখোমুখি বসা শায়লা, শায়লাই এখন তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। শিহাবের কাজে আর মন বসছে না। শায়লাকে অনুরোধ করলো, চলো, এ বেলাটা একটু কোথাও ঘুরে আসি।
শায়লা মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। শিহাব সব কিছু ক্লোজ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।  হাতে বাইকের চাবি, সানগ্লাস নিয়ে শায়লার কাছে এসে থামলো। দু'হাতে শায়লাকে জড়িয়ে খুব কাছে টেনে নিয়ে শায়লার চুল সরিয়ে গলায় একটি গাঢ় চুম্বনে শায়লাকে নিমিষেই আবেশিত করে দিলো।

চলবে.....

Hvk

LOVE

Hgj

LOVE

Nnn

LOVE

২৬ মার্চ ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধরাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪২




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৪২
আনমনে বিয়ে বাড়ি
মমতা রায়চৌধুরী


ঘরটা কেমন গুমোট লাগছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে কল্যাণের কল্যাণের। খোলা জায়গায় যেতে পারলে খুব ভালো হতো, এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না ।সানাইয়ের সুরে আনন্দের বন্যায় ভেসে যাওয়ার কথা ছিল। এই দিনটার জন্যই  চির আকাঙ্খিত ছিল মন প্রাণ । যে দিনটার প্রত্যাশায় এতগুলো দিন গুনেছে। অথচ কেমন যেন একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে ভেতরে ভেতরে। কল্যান ভাবছে 'তবে কি  শিখাকে চায় নি?
এখনও কি মনে মনে   প্রভাকেই চায়।
এরপর  পাগল হয়ে যাবে। অথচ প্রভা ও তার জীবনটাকে নিয়ে খেলেছে ।বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে নি। যে দুরন্ত ঝরনার বেগে এসেছিল। সেই গতিতে কল্যান ও ভেসে গেছিল।
আজকে কেন এসব কথা মনে করছে, এটা তো একদমই ঠিক হচ্ছে না। বিয়ের পরপরই যেতে হবে চেন্নাই ।ফ্লাইট এর টিকিট কাটা হয়ে গেছে। গলাটার কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে।
ঘরেতে মন টিকছে না।
বিকেল বেলায় ছাদে পায়চারি করে আসি। সারা বাড়ীতে লোকজন ভর্তি কোথাও একটু একা থাকার উপায় নেই ।আজকে বড্ড একা থাকতে ইচ্ছে করছে। এই কথা ভাবতে ভাবতে কল্যাণ তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে এমন সময় সরজু বলল"আরে এই সময় কোথায় যাচ্ছিস?"
একা কোথাও যাবিনা।'
'ওহ,দিদি, আমি তো একটু ওপরে যাচ্ছি।'
'তাহলেই বা তুই একা কেন যাবি? তোর জাইবু কোথায় গেল?
এই লোকটাকে নিয়ে আর পারা যাবে না, কতবার বলেছি এই সময় কল্যাণের কাছে কাছে থাকবে আমার কোন কথা শোনে?'
কল্যান মনে মনে ভাবছে 'একটু একা থাকতে চাইছে। ,দিদি ,আবার কি যে করতে চাইছে না একদম ভালো লাগে না।'
'ঠিক আছে সন্ধ্যার আগে নেমে আসবি।'
'তোর জাইবুর কপালে ভীষণ কষ্ট আছে, দেখ না?'
', জাইবু ,দিদি হেব্বি ক্ষেপে আছে। আজ তোমার কপালে চরম কষ্ট। সত্যি বাবা, বিয়ে করা মানে একটা ঝুঁকি আর অধিকার ফলানো ,ওহো।'
ছাড়া পেয়ে কল্যান উপরে চলে আসলো ।ছাদে দাঁড়িয়ে দিগন্তবিস্তৃত আকাশটাকে দেখল।
একদল পাখি উড়ে যাচ্ছে বেলা শেষে তারা নিজেদের ঠিকানায়।
কল্যান উদাস দৃষ্টিতে যতদূর দেখা যায় তাদের ততদূর পর্যন্ত দেখল।
তারপর ভাবল প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে স্থান আছে। কল্যাণের ও ছিল ।কল্যান চাইতো এরকম একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থান থাকুক যেখানে তারা পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে ।ভালোবাসার ,বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে। সারাদিন ক্লান্তি শেষে নিশ্চিন্ত একটা আশ্রয় যেখানে আলতো করে ভালোবাসার ছোঁয়া ঝরে পড়বে চোখে মুখে।
শিখা কি সেই জায়গাটা তৈরি করতে পারবে?শিখা খারাপ মেয়ে নয়। যতদূর তাকে দেখেছে, তাতে মনে হয়েছে পরিবারের প্রতি সঠিক দায়িত্বই পালন করবে এ তার বিশ্বাস।'
কিন্তু…?
'সিগারেট খাওয়া বারণ আছে কিন্তু বিকেলের এই মুহূর্তে যে সিগারেটের নেশাতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে আরো নস্টালজিক হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।'
'প্রভা যত তোমাকে সরিয়ে দিতে চাইছি, প্রভা ততই আমার সারা শরীরে দ্যুতি ছড়াচ্ছ'।
মনে পড়ে একদিন সেই রাতের কথা। প্রভার কথা। বলা যায় অনেকটা জোরজবস্তি করেই প্রভা কল্যানের ফ্ল্যাট দেখতে এসেছিল। সেটাও বেশ খানিকটা রাত্রে। ওর ভেতরে যে কি ছিলো  কিছুতেই না করতে পারতাম না। ওর চোখের দিকে তাকালেই যেন সবকিছু এলোমলো হয়ে যেত।
কত সন্তর্পণে সেদিন  আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছিলাম।
রুমে ঢুকতেই প্রভা বুকের কাছে আছড়এ পড়েছিল ।কল্যাণের ভেতরেও রক্ত ক্রমশ গরম হয়ে উঠছিল কেমন যেন একটা নাচন ধরে গেছিল। প্রভা কল্যাণকে আরো পাগলের মতো আঁকড়ে ধরে ছিল ,ঠোঁটের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছিল সারা অঙ্গে ।কল্যান কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না ।সত্যি ভেবে উঠতে পারছিল না কি করা উচিত? কল্যাণের ভেতরেও তখন কালবৈশাখী ঝড় সবকিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে পারে বাধা , রীতিনীতির আড়ষ্ঠতা,সংযম। কিছু একটা বিপর্যয় যখন তখন ঘটে যেতে পারে এমন সময় বেজে উঠল ফোন দুজনাই ছিটকে গেল পরস্পরের কাছ থেকে। সত্যি সেই সময় যদি ফোনটা না আসতো তাহলে যে কি ঘটত ঈশ্বর ও বোধহয় জানেন না। তারপর অনেকক্ষণ পরস্পর পরস্পরের দিকে তারা তাকিয়ে ছিল হাতে হাত রেখে ।প্রভা যেন তার চোখের হাসিতে অনেক কিছু বোঝাতে চেয়েছিল কিন্তু কল্যাণ আর বুঝতে চায় নি ।কারণ কল্যান জানে এটা কখনো সম্ভব নয়। সেদিন রাতের বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছে দুজনে ই ।হয়তো ঈশ্বর সেটা চেয়েছিলেন নইলে আজকে কি  নিজেকে  ক্ষমা করতে 
পারত ? যদিও সেদিনের বিপর্যয় ছিলনা কোন ভন্ডামী ।ছিল না কোন ভেতরের কলুষতা। দুটি মন দুটি হৃদয় এক সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছিল। পাগল পাগল লাগছে প্রভা ।আমি আজও তোমাকে ভুলতে পারিনা ।তোমার সেই আঁকড়ে ধরা তোমার সেই ভালোবাসায় একে দেওয়ার টিকা। আমি পারি না ।ভুলতে পারিনা। আমি জানি না কি করে আমি সংসারী হব। হয়তো সংসারী হব কিন্তু মনের ভেতরে হয়তো তুমি থেকেই যাবে। কেন এরকম করলে তুমি আমার সাথে ?প্রভা আমি তো কখনো তোমাকে ধোঁকা দিতে চাই নি ।অথচ তুমি আমার সাথে কেন জীবনটা  নিয়ে খেললে ?আমি তোমাকে তো ভীষণ ভালবেসেছিলাম প্রভা। আজও হয়তো ভালোবাসি ,নইলে তোমার কথা কেন বারবার আমার মনটাকে নাড়া দিয়ে 
যায় ।বসন্ত আসলে বাসন্তিক  নানা রঙ যেন আমার মন প্রাণ গ্রাস করে। পলাশ শিমুল আমাকে পাগল করে দেয় প্রভা ।তুমি যে জীবনটা বেছে নিয়েছ তাতে কি তুমি সুখে আছো ?অথচ আমরা তো চেয়েছিলাম ছোট্ট একটা ভালোবাসার নীড় গড়ে তুলবো পরস্পর পরস্পরে। কেন করলে তুমি এসব?
কল্যাণের চোখে তখন জল ।বুকটা যেন ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় ছাদে আসার কারোর আওয়াজ পেল 'হ্যাঁ ঠিক  তাই জাইবু কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে উপরে উঠে আসছে।'
'কিরে তোদের কি খবর? তোরা এখনো আসলি না কবে আসবি?
বিয়ে পেরিয়ে যাক তারপর আসিস। ফাঁকা মাঠে গোল দিস।'
অপরপ্রান্ত থেকে কি বলছে বুঝতে পারছে না। তবে অনুমান করতে পারছে কল্যান ।যাই হোক কাউকে বিয়েতে আসার জন্য বলছে।'
"আরে নিশা কে নিয়ে তুই আসবি কিনা আগে
 বল ?বাসর রাতে কিন্তু নিশার গান শুনবো মাথায় রাখিস ।আমি কোন কথা শুনতে চাই না জমিয়ে আড্ডা দেব কালকে আসবি তো?
'দেখি না ,তোদের আগেই বলেছিলাম এক সপ্তাহ আগে আসতে আর  বিয়েএসে গেল তবু তোদের পাত্তা নেই।'
ধুত্তোর রাখ তো তোদের কাজ। সারা জীবনই কাজ থাকবে।,, লোক ,-লৌকিকতা ও  তো রাখবি নাকি?
'ঠিক আছে ,ছাড়ছি  যদি না আসবি আর তোদের সাথে কোন কথা নেই।'
কল্যাণ ভাবছে জাইবু তো রীতিমতো একদম রাশিয়া-ইউক্রেন এর মতো একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে।
ফোন ছেড়ে দিয়ে কল্যাণের দিকে তাকিয়ে বলল "ভাইয়া আজকে তোমার দিদির কাছে যা ঝাড় খেয়েছি জীবনেও ভুলতে পারবো না ।বাপরে বাপ।'
"দিদি তোমাকে বকেছে জাইবু ?"
"হ্যাঁগো ভাইয়া, দাঁড়াও তুমিও ফাঁসির দড়ি পড়তে চলেছ। তখন এত হাসা বেরিয়ে যাবে আজ আমাকে দেখ হাসছো তো  'ঘুটে পোড়ে গোবর হাসে।'
শিখা ,আসুক তারপর তোমার হবে।
থাক তোমাকে আর বেশি কথা বলতে হবে না তোমার তোমার গলার অবস্থা।'
"এবার ভাইয়া বলতো হঠাৎ চুপি চুপি ছাদে কেন আসলে? কল্যাণ মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল এমনি।
না না কিছু তো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। তাই তো তুমি বাবা ছাদে এসেছিল  কাউকে আবিষ্কার করতে?'
কল্যান মনে মনে ভাবছে 'একি জাইবুর চোখে ধরা পড়ে গেল?'
চলো, চলো, চলো, নিচে চলো ।তোমার দিদি কিন্তু রেগে লাল হয়ে যাবে ?'
'তোমায় তো কিছু বলবে না? যা কিছু আমার জন্যই তোলা আছে ।'
কল্যান  বলল'জাইবু তুমি কি দিদি কে ভয় পাও,,?
কি বলছিস ?
'ওই অবলা নারীকে
এমন সময়  দিদি এসে বললো'তোমরা চা নাস্তা চা নাস্তা খাবে তো?
আরে ভাই তুই কি খাবি?
দিদি, ধমকের সুরে জাইবু কে বলল,, কি হল তুমি উঠলে না। ফোনটা একটু রাখো না কাজের কথা বলছি তো?
গজ গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে 
গেল । এমন সময় হইহই করে ঢুকলো ঢুকলো ছোটো পিসি।
কই রে সরজু,কল্যাণ সব কোথায় তোরা?
ওরে বাবা ছোটো পিসি এসে গেছে।
যাই  না হলে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেবে।
এই তো পিসি যাই।
 সরজু গিয়ে ছোট পিসি কে প্রণাম করলো।
বেঁচে থাক মা ,কল্যাণ হোক।
কল্যান টা কোথায় গেল রে? নাকি ওর বিয়ে বলে খুব পা ভারী হয়েছে।'
'না গো পিসি ওর গলাটা তো ভালো নেই ,সেজন্য একটু মুষড়ে আছে।'
বিয়ে তো অতটা উচ্ছ্বাস নেই।'
"সে কিরে গলায় কি হয়েছে ?কিছু জানাসনি তো?"
"গলার একটা কড গেছে একদম।
অপারেশন করাতে হবে।'"
বিয়েটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম।যাই হোক শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হচ্ছে ।না বাবা ,এখনও বলবো না কারণ যতক্ষণ না হয়।'
"না ,মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল রে ।ডাক্তার দেখিয়েছিস তো ?যাইহোক ডাক্তার যেভাবে বলেছেন সেভাবে চলতে হবে।'
"লাগেজ গুলো কোথায় রাখবো?"
"ঐতো পাশের ঘরটায় রাখো। "শোন,আমি যখন এসে গেছি। বিয়ে হবেই, হবে ।এখন বিয়ের যাবতীয় সব প্রস্তুতির জন্য যা করার দরকার সেগুলো তো এখন কোমর বেঁধে লেগে পড়ি।
তত্ত্ব সাজানো অনেক কাজ বাকি আছে।"
তোমরা এসেছ এটাই ভরসার কথা। চলো আগে ফ্রেস হও , নাস্তা পানি খাও।তার পরে গুছিয়ে নিও।"
"ছোট পিসি অমিত দা আসলো না।"
 ছুটি পায়নি?'
'না রে ছুটি পায় নি ।তাই তোর পিসেমশাই আর অমি আসবে বিয়ের দিন।' 
মেহেন্দি লাগাকে রাখনা…, ডো লি সাজাকে রাখনা…।'
গান করতে করতে পিসি বাথরুমের দিকে 
গেল ।
'পিসি সেই আগের মতই  স্প্রিট ধরে রেখেছে পিসি না আসলে যেন বিয়েবাড়ির আড্ডাটাই জমে না।

কবি ইকবাল বাহার সুহেল এর কবিতা "ইলাময় প্রমের ডায়েরি থেকে" 




ইলাময় প্রমের ডায়েরি থেকে 
ইকবাল বাহার সুহেল 
( ইংল্যান্ড ) 

‘চন্দ্র কথা’ কি জানি 
হঠাৎই কাল রাতে জানি না
কেনো নিজের ছায়া পড়লো চাঁদের উপর 
বিগলিত তুমি রাতের গভীরে আমন্ত্রণ জানালে
‘চন্দ্র কথা’ তোমার জোস্না পাণে কেনো জানি ,জানি না
‘শরাবী হলাম’ বললে পাণিগ্রহণ করে যেনও হাত রাখি বুকে  
জড়িয়ে গেলে মাতাল করে চুষে চুষে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলে ,
‘চন্দ্র কথা’ নদীতে জল ছিল অনেক তবুও আবদার করলে জল ঢেলে ভরিয়ে দিতে
তাই হলো ঝরণার জল নদীতে মিশে কখন যে সাগরে মিশে গেলো বলতে পারি না !

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা "মা"




মা 
মোঃ ইসমাঈল 

মা শব্দটির মধ্যে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর সকল সুখ
জীবনের সকল ঝড় -ঝামেলা যায় যে ভুলে দেখলে মায়ের মুখ। 
মা মানেই সন্তানদের জন্য বিশাল এক বটবৃক্ষ যেখানে আছে প্রশান্তির ছায়া, 
মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমালে চলে যায় সারাদিনের ক্লান্তি। 

মা মানেই নতুন স্বপ্নের আশা
বিধাতার কি বন্ধন মা-সন্তানের ভালোবাসা।
যে সম্পর্কে নেই কোনো চাওয়া- পাওয়া। 


দশ মাস আর দশ দিন কতনা কষ্ট সহ্য করে রেখেছিলেন গর্ভে,
কি আছে প্রাপ্তি আর কি আছে অর্জন, এত বেদনা সহ্য করার ? 
প্রাপ্তি যে শুধুই ঐ টুকু সন্তানের মুখ থেকে ডাকটা শোনার। 

কতনা কষ্টে লালন করে বড় করে সন্তানদের
জীবনকে উৎসর্গ করে দেন সন্তানদের জন্য নিজেদের।
নিজে সয়ে যান সকল বেদনা, লাঞ্চনা, দুঃখ, কষ্ট সন্তানদের জন্য
সন্তানের কিছু হলে হোন দিশেহারা। 

নিজে না খেয়ে খাওয়ায় সন্তানদের
সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে গড়ে তুলেন সুন্দর জীবন আমাদের।
মা প্রত্যেক সন্তানের কাছেই মহান
মায়েদের দোয়ায় প্রত্যেক সন্তান মহীতে আজ মহীয়ান।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা ""বদেহ





শবদেহ
সেলিম সেখ

বাতাসে মিশে গেছে
পোড়া লাশের গন্ধ,
বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেনো
হয়েছে কি তারা অন্ধ?

চারিদিকে খুনোখুনির রাজ 
চলছে বাংলার বুকে,
শান্তির এই বাংলায়
অশান্তি গেছে ঢুকে।

বাংলার মানুষ দেখল
অগ্নিদগ্ধ কত শব,
চোখেতে অশ্রু মোর
জমেছে অনেক ক্ষোভ।

ঘৃণ্য রাজনীতির বলি
তরতাজা কত প্রাণ,
এমন দৃশ্য দেখল দেশ
থাকল কি রাজ্যের মান।

রাজনীতির করালগ্রাস
আনছে ডেকে মরণ,
একে অন্যের নিচ্ছে প্রাণ
এটাই কি রাজনীতি ধরন? 

কত যন্ত্রণায় গিয়েছে প্রাণ
ভাবলে কষ্ট হয়,
করছে যারা এমন কাজ
তারা কি মানুষ নয়!

মানব হয়ে মানব হত্যা
কত যে ঘৃণ্য কাজ,
বুঝলে এমন পাপে 
লিপ্ত হত না আজ। 

রাজনীতি হোক শান্তি প্রিয়
ঝরুক শান্তিধারা, 
জাগ্রত হোক মানবপ্রেম
কেউ যাবেনা মারা।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৭৭




ধারাবাহিক উপন্যাস 

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭৭)
শামীমা আহমেদ 

অফিসে নিজ রুমে পৌঁছাতে  শিহাবের প্রায় সকাল এগারোটা বেজে গেলো। শিহাব দ্রুতই তার মেইল চেক করতে বসে গেলো। গতকাল বেশ কিছু বায়ার ফ্যাক্টরী পরিদর্শন শেষে  মেইলে তাদের মতামত জানাবে বলে বিদায় নিয়েছে।আর এর সাথে শিহাবের ফ্যাক্টরির  জন্য অনেক অর্ডার প্লেস হওয়াও জড়িত। শিহাবের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল তাদের স্যাটিসফাই করার। দেখা যাক,তাদের কেমন রেস্পন্স আসে। তবে এখনো কোন মেইল ইন করেনি। শিহাব অপেক্ষায় রইল। কবির এসে নাস্তার কথা জেনে গেলো।
শিহাব নান রুটি আর বুটের ডাল আনতে বলে একটু রিল্যাক্স ভঙ্গিতে  চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। শিহাব নিজের জীবনের সবকিছু খুব গভীরভাবে ভাবছে। শায়লা  আর রিশতিনা, অতীত আর বর্তমানের মাঝে শিহাব নিজেকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে। এই একার জীবনের অবসান ঘটাতে চাইছে। নাস্তা আনার আগে কবিরকে এক কাপ কফি দিয়ে যেতে বললো। কবির কফি রেডি করে সামনে দিতেই শিহাব জানতে চাইলো, আচ্ছা কবির তুমি কি আমাকে বলবে জীবনটা কি সহজ না জটিল ? মাঝে মাঝেই শিহাব কবিরের কাছে এমন ভাবনার কথাগুলোর মতামত নেয়। শিহাব জানে,যারা স্বল্প আয়ের মানুষ  তাদের কাছে জীবনের অর্থ খুবই সহজভাবে ধরা দেয়।খুব বেশি চাওয়া পাওয়া তাদের থাকে না।কবির বুঝতে পারলো,স্যারের মনটা আজ বোধহয় ভালো না।কবির জানালো, স্যার জীবনটারে সহজভাবে দেখলেই জীবন সহজ আর জটিলতারেও সহজভাবে নিয়ে সমাধান করলে পেরেশানি কম হয়।কথাগুলো বলে কবির নাস্তা আনতে বেরিয়ে গেলো।  
শায়লাকে একটা  কল করতে হবে। বেশ কয়েকদিন হলো, শায়লার সাথে ঠিকমত কথা হচ্ছে না। শিহাব মোবাইল হাতে নিতেই মেইলের নোটিফিকেশন এলো।শিহাব হাত থেকে মোবাইল নামিয়ে রেখে ল্যাপটপ স্ক্রিনে  চোখ দিতেই মোবাইল বেজে উঠলো।  শিহাব আড়চোখে দেখে নিলো।শায়লার কল।কিন্তু মেইলটা দেখা জরুরি। শিহাব কলটি কেটে দিয়ে কাজে মনযোগী হলো। 
ওপ্রান্তে শায়লা ভীষণভাবে বিব্রত হলো। আজ এতদিনের পরিচয়ে শিহাবতো কখনো তার কল কাটেনি।ব্যস্ততায় রিসিভ করতে না পারলে পরে কল দিয়েছে।শায়লা বুঝতে পারছে না কেন শিহাব এমন করছে ? কেন তাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে ?  তবে কি সে রিশতিনার প্রতি কোন সিদ্ধান্তে এসেছে ? শায়লার ভেতরে ক্রমাগত নানান প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে। শিহাবকে না পাওয়ার আশংকায় ভীষণ উৎকন্ঠা হচ্ছে। কিন্তু  যা-ই হউক না কেন, এ ব্যাপারে শিহাবের সাথে তার কথা হতেই হবে। তার কাছ থেকে সরাসরি শুনতে হবে সে কি চাইছে ? সে তার নিজের পরিবারের মান সম্মানের দিকে না তাকিয়ে শিহাবের জন্য কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে। আর শিহাব  ঘরে রিশতিনাকে  নিয়ে তার সংসার জীবন যাপন করছে ? শায়লা অস্থিরতায় ঘরের এপাশ ওপাশ করছে। শায়লা আবার শিহাবকে কল দিলো। তিনবার রিং হওয়াতেই শিহাব কল রিসিভ করলো। আর হ্যালো বলেই শায়লার উত্তরের
অপেক্ষা না করেই বললো, শায়লা আমি একটু বিজি।একটা টেলি কনফারেন্স চলছে। শেষ হলেই আমি কল দিচ্ছি। বলেই সে কল কেটে দিল।রাগে দুঃখে অপমানে শায়লা ঝরঝর করে কেঁদে দিলো।শিহাব যে একরাতেই এমন করে বদলে যাবে শায়লা তা ভাবতে পারছে না। 
তাদের বাড়িতে তার বিয়ের আয়োজন চলছে। তার জন্য গোটা বাড়ি উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। যেখানে শায়লার মন পেতে নোমান সাহেব বারংবার শত কাকুতি মিনতিতে শায়লার কান ভারী করে তুলছে আর সেখানে শিহাবের এমন অবজ্ঞা ভরা আচরণ, শায়লাকে ভীষণ অবাক করে দিচ্ছে।  
দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ মিনিটের টেলিকনফারেন্স শেষ করে বিভিন্ন দিকে শিহাব তার প্রয়োজনীয় মেইল পাঠালো। ঘড়ির কাটা তখন দুপুর বারোটা পার হয়ে গেছে।টেবিলে নাস্তা পড়ে আছে। শিহাব ওয়াশরুম থেকে  ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তায় হাত লাগাতেই শায়লার কলের কথা মনে পড়লো।শিহাব ভাবলো, একেকদিন যে কেমন ব্যস্ততা যায় ! 
সে নাস্তা খেতে খেতেই শায়লাকে কল করলো। 
এই ফোন কলটি শায়লার ভীষণ রকম কাঙ্খিত  হলেও, শিহাবের প্রতি প্রচন্ড অভিমানে শায়লার চোখের  জল উপচে পড়লো।একবার সম্পূর্ণ কল হয়ে যাবার পর দ্বিতীয় কলে শায়লা রিসিভ করলো।কিন্তু নীরবতায় মনের কষ্ট বুঝাতে চাইলো যেন!
শিহাবই প্রশ্ন করলো, শায়লা আমি দুঃখিত তখন তোমার কলটি ধরতে পারিনি।দেখো, অনেক ব্যস্ততা ছিল। তাইতো এই এখন সকালের নাস্তা করছি। শায়লা ভীষণ অবাক হলো। দুপুরের খাবারের সময় হয়ে এলো,আর শিহাব কিনা এখন নাস্তা করছে ! তাহলে শিহাব তাকে এড়িয়ে যায়নি, সত্যিই ব্যস্ততা ছিল। আর সে কিনা শিহাবকে নিয়ে কতকিছুই ভাবলো। 
কেমন আছো তুমি শায়লা ? 
আমি ভালো আছি কিন্তু আমার মনে হয় তুমি আমার চেয়ে আরো বেশি ভালো আছো !
কেন এমন কথা শায়লা? তোমাকে দূরে রেখে তোমার চেয়ে কেমন করে ভালো থাকবো ? 
কেন? আমাকে ছাড়াওতো ভালো থাকা যায়, আর সেটা দোষেরও কিছু না। শায়লার কণ্ঠে অভিমান ঝরে পড়লো।
শিহাব বুঝতে পারছে না কেন শায়লা তার সাথে আজ এভাবে কথা বলছে?কিন্তু বরাবরই শিহাব শায়লার সাথে সব ব্যাপারে  স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলছে।তার বুঝতেই হবে আজ কেন শায়লা তার সাথে এতটা বৈরী আচরণ করছে ? তবে কি সে তার কাছ থেকে সরে যেতে চাইছে ? শিহাবের জানা মতে শায়লার স্বামী শীঘ্রই দেশে আসছে।তবে কি শায়লা তার সিদ্ধান্তে কোন পরিবর্তন এনেছে? নাহ! শায়লার সাথে এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলা প্রয়োজন। শিহাব কথাটি ভাবতেই শায়লার দিক থেকেই প্রস্তাব এলো,শিহাব তুমি আমার সাথে আজ একটু দেখা করতে পারবে।শায়লা দেখলো, শিহাব খুব সুচারুভাবেই রিশতিনার প্রসংঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছে।
শিহাব বললো, অবশ্যই, তবে এখুনি বেরুতে পারবো  না।আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট আরো কিছু মেইল আসবে।তুমি চাইলে আমার অফিসে চলে আসতে পারো।চলে আসো। আমার অফিসটা দেখে যাও।একসাথে দুজনে কফি খাই। 
শায়লা শিহাবের কথায় অবাক হলো। শিহাব যদি তাকে এড়াতেই চাইতো তবে তো তাকে অফিসে যেতে বলতো না! মূহুর্তেই শায়লার মনে শিহাবকে নিয়ে সব দ্বন্দ্ব ঘুচে গেলো,তবে রিশতিনার বিষয়টি আড়ালেই রইল।
শিহাব পুনরায় শায়লাকে তার অফিসে আসতে অনুরোধ করলো। শায়লা রাজী হয়ে শিহাবের কাছে প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়ে নিলো। কারণ  এখন বাড়ির  বাইরে যেতে হলে বাড়ির লোকজনকে ম্যানেজ করতে হবে। যেভাবে রুহি খালা তাকে নজরবন্দি করে রেখেছে। শায়লা বাইরে যাওয়ার অনুমতি পেতে  রাহাতকে কল করলো।

রাহাত অফিসেই ছিল।শায়লার এমন আব্দারের কল পেয়ে রাহাত বেশ চিন্তিত  হলো। আবার কোন অঘটন ঘটে যাচ্ছে নাতো ? পরক্ষণেই শায়লার উপর তার আস্থা এলো। আপু যদি এমন কিছু করবেতো আর বাইরে যেতে তার অনুমতি চাইতো না। তাছাড়া শিহাব ভাইয়াও খুবই ভাল মানুষ  নিশ্চয়ই তিনি ব্যাপারটা বুঝবেন।ভাল লাগা ভালবাসা হঠাৎই  হতে পারে কিন্তু আমরাতো কেউ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নই।ফোন কলের জবাবে রাহাত শুধু এটুকুই বললো, আপু আমাদের পরিবারের মান সম্মান এখন তোমার হাতে আর দুদিন পরেই নোমান ভাইয়া আসছেন।বাড়িতে অনেজ লোকজন আত্মীয়স্বজন।
শায়লা রাহাতকে আশ্বস্ত করলো, এমন কিছুই ঘটবে না যা পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন করবে। শিহাবের সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।আমি দ্রুতই  ফিরবো। মনে রেখো, আমি চিরকাল নিজের  সুখের চেয়ে তোমাদের জন্যই বেশি ভেবেছি।
কথাটা শতভাগ সত্য বলে রাহাত একমত হয়ে নিশ্চুপ রইল।
শায়লা রাহাতকে অনুরোধ করলো, ঠিক আছে, মাকে  আর রুহি খালাকে কল করে জানিয়ে দিও যেন আমাকে বাধা না দেয়।আমি পার্লারে যাচ্ছি বলে বেরুবো। 
শিহাব ভাইয়া আর শায়লা আপুর জন্য রাহাতের মনটা কেঁদে উঠলো। রাহাত বেশ বুঝতে পারছে, শুধু তার একটু সহযোগিতা থাকলে আপু আর শিহাব ভাইয়াকে এক হওয়া থেকে কেউ ফেরাতে পারতো না। সবকিছু ভেবে রাহাত নিজেকেই দোষী ভেবে নিলো।
ফোন কল শেষ করে শায়লা তৈরি হওয়ায় ব্যস্ত হলো। ট্রুং করে মোবাইলে ম্যাসেজ এলো। শায়লা মোবাইল মেসেঞ্জার  ওপেন করেতেই মূহুর্তেই তার মনটা আনন্দে উছ্বসিত হয়ে উঠলো!
অফিস এড্রেসের সাথে  দারুণ এক সেল্ফি পাঠিয়েছে শিহাব ! পরনে কালো শার্ট, সামনে কয়েকটি বোতায় খোলা,আহ !  শিহাবকে মনে হচ্ছে যেন কোন মুভির হিরো ! তার অফিসের চেয়ারে বসে তোলা। শায়লা স্থির দৃষ্টিতে ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল।যেন শিহাবের চোখ কথা বলছে,...তাড়াতাড়ি চলে আসো শায়লা। আমি তোমার অপেক্ষায় আছি।


চলবে....

কবি নাসিমা মিশু এর কবিতা "ভালোবাসি"




ভালবাসি
নাসিমা মিশু

ভালবাসি-
তোমার তুমির তুমিকে।
ভালবাসি-
তব না দেখা বিস্মৃতির অতলের তলে 
ডুবে থাকা তোমাকে দেখব বলে ।

ভালোবাসি- 
তব জীবন ধারায় অন্য সুরের মূর্ছনা এসে 
সুখ সুধায় তোমাকে জড়িয়ে নিবে তাতে নয়ন 
জুড়িয়ে নিব বলে ।

ভালোবাসি- 
তোমার তুমিকে নিয়ে দারাপরিবার সহ সুখ বাসরে 
স্থুত তা দেখে তৃপ্ত হবো বলে ।

ভালোবাসি- 
তব সকল আনন্দ ধারায়  আনন্দে তুষ্ট হবো বলে ।

ভালোবাসি- 
তব জীবনীশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে পৃথিবী আলোকিত 
হবে তার দিপ্তী দেখব বলে ।

ভালোবাসি- 
তোমার তুমি তোমরা সুখী গৃহবাসী তার বিচ্ছুরিত বিকশিত বিকিরণ দেখব বলে। 

ভালোবাসি- 
তব ভালো লাগায় ভালোবাসাসম মানস সৌন্দর্যের 
পরিপূর্ণতার পরিস্ফুটন দেখব বলে ।

ভালোবাসি- 
তব অন্ত গহীন হৃদয়ের অব্যক্ত যে আবেগ তার দরদী 
গভীরতায় কতটা গভীর তা অনুভব করব বলে ।

ভালোবাসি- 
তব দেখার যে মমতা মাখা দৃষ্টি আমার তাতে শুধু 
ভালোবাসার অনুভবই অনুভূত হবে বলে ।

এ নয় বাড়াবাড়ি, 
এ পরিশুদ্ধ পরিচ্ছন্ন স্বচ্ছ এক আবেগ ।
এক অস্তগামী অদৃশ্য মানবের আকুতি ।

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা





অথচ রৌদ্রের ঘ্রাণ 

আমিনা তাবাসসুম 

খুবলে খুবলে স্বপ্ন খাও তুমি
বাতাসের চিৎকার
ফুলের চিৎকার
হরিণীর চিৎকার
আগুনের আঁচে চেটেপুটে রোদ শুষে  রোজ

এখানে রূপের রহস্য রাঙা কই মাছ
এবং সমস্ত পৃথিবীর প্রাণে
         সেসবের ঘ্রাণ লেগে থাকে

রাত কেঁদে ওঠলে ঈশ্বর ভুলে যান
ইরা এবং ইরকের কথা

তখনও আমার চোখে অশ্রু থাকে
আর এখনও সেসব
         মিশে আছে চোখের চুমুকে

২৫ মার্চ ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪১




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৪১
অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন
মমতা রায়চৌধুরী

সাতসকালে কলিং বেল বাজছে ''জয় রাধা মাধব জয় রাধা মাধব।" রেখা বাথরুমে থেকে কলিংবেলের আওয়াজ পাচ্ছে কিন্তু বের হতে পারছে না ,বেরোনোর কন্ডিশন নেই। আবার বাজছে' জয় রাধা মাধব, জয় রাধা মাধব ,জয় রাধা মাধব।'
রেখা ল্যাট্রিনের কলটা ফ্ল্যাশ করার পর তাড়াতাড়ি হাত পা ভালো করে ধুয়ে ছুটল দরজা খোলার জন্য।
রেখা মনে মনে বলল যেন যমরাজ নিতে  আসলেও এ সংসারে কাজের জন্য আবার ফেরত আসতে হবে।
দরজা খুলেই তো রেখা অবাক 
'একি মাসি ,তুমি ভোর পাঁচটায় এসে হাজির।'
মাসির চোখ মুখ শুকনো লাগছে, কিছু কি 
হয়েছে ?মনে মনে ভাবছে রেখা।
'আর বোলো না বৌমা ,আমার ছাগলটা বাচ্চা দিতে গিয়ে কি কষ্ট পাচ্ছে বাচ্চা বের করতে পারছি না।'
মাসির চোখ দুটো জলে ভিজে গেল কথা বলতে বলতে।
সেকি মাসি?
তাই একটু তাড়াতাড়ি আসলাম কাজগুলো  করে দিয়ে চলে যাব।
'তুমি ডাক্তারের কাছে যাও ।তোমাকে আজকে কাজ করতে হবে না।'
' মাসি কেমন অবাক হয়ে রেখার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর আর যেন চোখের জল  বাগ  মানলো না।
'কি বলছো বৌমা ,কাজ না করে চলে যাব?'
'আমি তো তোমাকে বলছি তুমি চলে যাও। তোমার কাজের থেকে ওর যে প্রাণ বাঁচানো অনেক বেশি জরুরী মাসি।
অনেক কষ্ট পাচ্ছে তুমি তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যাও।'
রেখা বুঝল মাসির পৃথিবীটা ওদেরকে নিয়েই ওদের ভালো থাকা, মাসির ভালো থাকা।
'কিন্তু..?'
'কোন কিন্তু নয়।
তুমি বরং একটু বসো ,চা খেয়ে যাও।'
তুমি যে বলেছ এতেই আমার শান্তি কিন্তু তোমার শাশুড়ি মা যদি  অশান্তি করে।'
'করুক অশান্তি।তুমি তো চেন উনাকে? ওনার কথা অতো ধ'রো না মাসি ।বয়স হয়েছে তো।'

'কত বাড়িতে কাজ করেছি ,তোমার মত করে কেউ কথা বলে না বৌমা। সবাই তাদের কাজটাই বুঝে নিতে চায়।
আসি তাহলে বৌমা?'
যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলে
'আমি কি বিকেলে এসে  করে দেবো বৌমা কিছু?'
'তোমাকে বিকেলে আসতে হবে না।'
সারাদিন কি হ্যাপা পোহাতে হবে, কি হবে কে জানে ?ভগবান করুক সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাক।'
ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা একটু ক'রো  বৌমা,আমার এই পোষ্যর জন্য।'
'হ্যাঁ মাসি, সে কথা আর বলতে।
তুমি কোন চিন্তা ক'রো না ।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যাও।'
'আচ্ছা বৌমা, আসি তাহলে। তোমার খুব কষ্ট হবে আমি জানি।'
'তুমি সব জানো ।একদিন নয় আমার কষ্ট হবে, কি হবে তো?'
মাসি চলে যাবার পর দরজাটা লাগাতে গিয়ে দেখে ওই দিকের কালী আর তার বাচ্চা এসে হাজির রেখার আওয়াজ পেয়ে ।
আসলে ওই দিকের বাচ্চাগুলো তো রেখা খাবার দিতে যায়। কোন কারনে হয়তো যাচ্ছিল।
লেজ নাড়তে নাড়তে গেটের কাছে আসলো।
রেখা বলল'দাঁড়া, বিস্কিট নিয়ে আসি।
 আট-দশটা ব্রিটানিয়া বিস্কুট নিয়ে এল। রেখাকে দেখে বাচ্চাটা যেন হামলে পরল ।তখন রেখা আদর করে বিস্কিট গুলো খাওয়ালো ।
যা এবার খাওয়া হয়ে গেছে ।তোদের পাড়ায় যা। মিলি ওর বাচ্চা দেখলে কিন্তু চেঁচাবে।'
কি বুঝলো ,কে জানে? সত্যি সত্যি কালী তার বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে গেল। রেখা দরজা বন্ধ করে এসে ভাবতে লাগলো কোন কাজটা আগে করবে।
রেখা একটা ছক করে নিল কারণ স্কুলে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি কাজে হাত লাগাবে।
ইতিমধ্যে রেখা বসার ঘরগুলো ঝাট দিতে শুরু করলো ।কোন কারণে  মনোজ টয়লেট যাবে বলে উঠেছে ।রেখাকে কাজ করতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল 
'তুমি উঠে কাজ করছ?কি ব্যাপার, মাসি আসবে না নাকি?'
'আজকে মাসি কাজে আসবে না। বলছিল ওর পোষা ছাগলটি নাকি বাচ্চা দেবে .তা ওর খুব সিরিয়াস অবস্থা ।বাচ্চার একটা পা বাইরে বেরিয়ে আছে ,বাকিটুকু সব ভেতরে অনেক টানাটানি করার পরও বাচ্চা বের করতে পারে নি। আহা রে গরিব মানুষ দুটো এসব পশু পুষে গরিবের টানাটানির সংসারে একটু আয়ের চেষ্টা।'
"কাজে এসেছিল মাসি?'
'হ্যাঁ এসেছিল।
আমি মাসিকে বাড়ি যেতে বললাম।'
"ঠিকই করেছ।
 না না চলে যাও ডাক্তার ডাক।'
মনোজ টয়লেট কোরে যাবার পথে একটা বড় হাই তুলে বলল 
"চা করেছ?'
তারপর কি মনে হল বসার ঘর টাতে টিভিটা চালিয়ে দিল।
নিউজ চ্যানেলে দেখাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন এর যুদ্ধ। কী ভয়ঙ্কর!
রেখাও তাকিয়ে থাকে। রেখার গা শিউরে ওঠে।
ছিন্নভিন্ন লাশ এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
রেখা হঠাৎ করেই কবিতা আবৃত্তি করে
কবি মৃদুল দাশগুপ্তের কবিতা'
"ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
এখন যদি না থাকি
কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া
কেন তবে আঁকাআঁকি?

নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে 
না -ই যদি হয় ক্রোধ
কেন ভালোবাসা, কেন বা সমাজ
কিসের মূল্যবোধ!"

মনোজ বলল' কবি মৃদুল দাশগুপ্তের কবিতা আওরাচ্ছ ঠিক আছে।
 কিন্তু তুমিও তো  লেখিকা ।তুমি ও সমসাময়িক বিষয়  তোমার লেখায় স্থান দাও।"
রেখা কেমন অবাক হয়ে গেল। মনোজ রেখার লেখা নিয়ে ভাবছে ।
' ওকে বুঝেই উঠতেই পারে না রেখা ।আসলে কখন যে কি বলে?
মনোজ বলল 'চা দেবে?
 দিদি, মায়েরা তো ওঠেনি।'
ঠিক আছে চা করে আনছি বসো একটু।"
রেখা রান্নাঘরে গেল চা করতে ।এদিকে মাথার মধ্যে ঘুরছে  রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের ভয়ঙ্কর দৃশ্য।
রেখার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে

'নিহত সব দেহের ওপর দাঁড়িয়ে
কিসের এত উল্লাস?
কত মা তার সন্তান  হারিয়ে
অন্ধ হলো চোখের জলে। 
কত পত্নী স্বামী হারালো
প্রেমিকা   প্রেমিককে।
আর..
 অগণিত সাধারণ মানুষ
প্রাণ দিল অকারণে। 
তবুও  হয় না জাগ্রত বিবেক
নির্লজ্জ অমানুষদের।
জিহ্বা তাদের লকলক করে
ক্ষমতার লোভে বলিয়ান হয়ে।
চালায় অসংখ্য গোলাবারুদ
তাজা প্রাণ ঝরায় অকাতরে।
একবার যদি তাকিয়ে দেখত
 ওই প্রেমিকার  দুটি চোখ
দেখ তো কত ভালোবাসা র
 বীজ লুকিয়ে আছে
সৃষ্টি হতো শত শত।
সৃষ্টির চেয়ে  মহৎ আর
কিছু নেই যে ভবে।
ধ্বংসলীলায় মত্ত হয়ে
কষ্ট শুধু বাড়ে
এই বোধ এই চেতনা যেদিন
আসবে ঘুরে মনে।
তখন..
পৃথিবীটাই অন্যরকম হবে।'

মনোজ বলল' বাহ কি অসাধারণ বললে গো।'
কবিতাটার একটা নাম দিয়ে তুমি পত্রিকায় দিয়ে দাও না।
দূর লিখছি এখন উপন্যাস ।এখন আবার কবিতা?
অনেকদিন পর দুজনে চা খেতে খেতে গল্প করছে।
ভয়ঙ্কর কোনো পরিস্থিতি মানুষকে কাছে এনে দেয় যুদ্ধের এই ভয়ঙ্কর খবরটা শুনে বোধহয় একটা আলাদা রকম রেখার মনোজের জীবনে মাত্রা এনে দিল।
এমন সময় রেখার ননদ শাশুড়ি মা ঘুম থেকে উঠে একই ঘরে দুজনকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন কিন্তু মুখে কিছু প্রথমে বললেন না।
মনোজ বলল' দিদি মা এসো চা খাবে?'
 মনোজের দিদি বলল ' না আমাদের ঘরে চা দিতে বল?'
ঠিক আছে।
"রেখা ওই ঘরে গিয়ে চা টা দিয়ে আসো।
মা শোনো আজকে মাসি কাজে আসবে না।
আর  রেখা তো  স্কুলে যাবে। সব রান্না করে উঠতে পারবে না। তোমরা হাতে হাতে করে নিও।'
 রেখা কেমন অবাক হয়ে গেলো 
রেখা ঝটপট চা দিয়ে কাজগুলো গুছিয়ে নিল।
মিলিদের খাবার টা আগেই করেছিল,ওদের খাবারটাও দিয়ে আসলো।
বেসিনে গাদাগুচ্ছ বাসন  জমানো আছে। চটপট হাত লাগাল।
এদিকে জলখাবার করতে হবে।
বাসন মাজার আগে একদিকে পেশার কুকারে ডাল অন্যদিকে আলু চচ্চড়ি বসিয়ে দিলো।
বাসন মাজা হয়ে গেলে পরোটা করে ফেলল।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন টাইম হয়ে যাচ্ছে আর কিছু করতে পারবে না রেখা।
তবে ডাল সাতলে নেবার আগে বেগুন ভাজা করে নিল।

এবার রেখা স্নান করতে গেল। স্নান সেরে এসে ঝটপট পুজোর ঘরে গেল। শাশুড়ি মা তো বলেই খালাস পুজো করবেন। একদিনও পুজো করতে ঢোকেন না।
তাই ওনার ভরসায় না রাখাই ভালো ।বাড়িতে গোপাল আছে।

পুজো সেরে এসে মনোজ কে  বললো 
'তোমার জলখাবার কি এখন দিয়ে দেব?'
'হ্যাঁ দিয়ে দাও।
মা, দিদি তোমরা এখন খাবে নাস্তা?'
', এখন খাব না।'
'ঠিক আছে। রেখা ,তাহলে তুমি খেয়ে নাও।'
 খেয়ে তুমি স্কুলে চলে যাও।'
রেখা অবাক হয়ে যাচ্ছে এই টুকুই তো শুধু চেয়েছে ? অথচ রেখাকে টানাপোড়েনের মধ্যে রাখতেই হবে।কেন যে মাঝে মাঝে মনোজ এরকম করে ওর সাথে ? রোদ্দুর ভরা আকাশে  মাঝে মাঝে মেঘ ঘনিয়ে আসে। বুঝে উঠতে পারে
 না ।সেই মেঘটা যদি সাময়িক হয় ,তাও হয় ।তার স্থায়িত্ব টা অনেক বেশি থেকে যায় ,চারিদিক তখন শুধু মনে হয় অন্ধকার আর অন্ধকার। দিশেহারা রেখা আলোর পথ হাতড়ে বেড়ায়।
সব সময় একটা মানসিক যুদ্ধ মাঝে মাঝে ঠেলে দেয় অন্য জগতে অথচ রেখা চেয়েছে মনোজকে নিয়ে একটা সুন্দর পৃথিবী গড়তে ।সেই পৃথিবীতে শুধু থাকবে চিরশান্তি।