৩০ এপ্রিল ২০২২

Hhjk

LOVE

Bvjk

LOVE

মমতা রায় চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬৬






উপন্যাস 

টানাপোড়েন  ১৬৬

মন কেমন করা বিশেষ দিন

মমতা রায় চৌধুরী



আজ তো সেই বিশেষ দিন। রেখার কাছে বিশেষ দিনটির বিশেষ করে তোলার মতো কেউ নেই। আসলে বরাবরই সে তাকে কখনো হাইলাইট করার চেষ্টা করে নি। মা থাকলে একটু পায়েস রান্না করে খাইয়ে দিত। মা ,কাকিমা ,জেঠিমা জ্যাঠা, বাবা ,কাকা সবাই মিলে বাড়িতে সেদিন একটু অন্যরকম খাওয়া-দাওয়া হত  বড়দের আশীর্বাদ নেয়া হতো ,প্রণাম করা হতো, এই চলত। গিফট হিসেবে কি পাওনা হত । অনেক কিছু। সবথেকে বড় প্রাপ্তি।মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ ,কখনো বা কোন গল্পের বই ,কবিতার বই ,আসলে এই বিশেষ দিনগুলোতে সেই গল্পের বই গুলো, কবিতার বই, উপন্যাস। মনে হতো যেকোনো নতুন  রাইটারের বই এনে দিলেই খুশি । আজ সবই নস্টালজিক ।পাশের বাড়ির নীলদাও ওই দিনটার কথা জানতো না  কিন্তু একদিন হঠাৎ করে বাড়িতে এসে দেখছে বড়রা সবাই আশীর্বাদ করছে। পায়েশ খাওয়াচ্ছে ।তখন এসে পড়াতেnঅবাক হয়ে গেছিল জিজ্ঞাসা করেছিল 'কাকিমা আজকে কি ননীর জন্মদিন?'
 কাকিমা বলেছিল'মেয়েদের আবার জন্মদিন।' আমরা ওকেওই দিন আশীর্বাদ করি, সুস্থ থাকুক ভালো থাকুক। আর প্রকৃত মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক ।এই টুকুই বাবা আমাদের
 কাছে ।জন্মদিন অন্যভাবে সেলিব্রেট করা হয় না কখনো।'
আজ দিন বদলেছে মা নেই, বাবা নেই ,কাকিমা প্রতিবার সেই দিনটা আসলেই আগে বলতেন 'ননী মা,তুমি আমার আশীর্বাদ নিও।'
" এবার ও কাকিমা দিনটার কথা মনে করিয়ে দেয় '।নইলে তো দিনটা কেমন একটা পানসেপারা , আবছা, অস্পষ্ট তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও আজকের এই ঝাপসা হয়ে যাওয়া তপ্ত মনে স্নেহের উত্তাপ বড্ড কাছে টানে।রেখা ভাবে ওই দিনটা আসা মানেই তো একটা করে বসন্ত পার হওয়া ,জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক একটা রঙিন দিন। এইসব ভাবতে ভাবতে  স্কুলে গেছে ।হঠাৎ করে প্রথম  ক্লাস করে আসার পর, যখন ফোন বাজে ফোনটা রিসিভ করতেই পার্থ বলে ' শুভ জন্মদিন
 বৌদি । তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো, সুস্থ থেকো । নীরোগ থেকো।'
পার্থর ফোনটা পেয়ে একটু অবাক হয়ে 
গেছে । বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলে।
পার্থ বলে 'আপনি এতদিন এসব কথা বলেন নি কেন?'
রেখা বলে 'এত বছর হয়ে গেছে কখনো তো এভাবে সেলিব্রেশন হয়নি। এ জন্য জানানো হয়নি।ম এই দিনটিকে ঘিরে একটা মজার  ব্যাপার আছে। আসলে এই জন্মদিন আর সার্টিফিকেট এর জন্মদিন আলাদা। তাই হয়তো সেই ভাবে হাইলাইট হয়নি ।এ বছরটা যেন একটা অন্যরকম মাত্রা পেল  এ বছরটা খুবই ভালো লাগছে ।প্রতিবছর আরও দুজন ছাত্রী উইশ 
করে lওরা জানতে পেরেছিল কথায় কথায় দিনটাকে মনে রেখেছে। এদের জন্য বুকের ভিতর মনের চোরা কুঠুরিতে কোথায় যেন একটা ভালোবাসার জায়গা তৈরী হয়ে গেছে আর এই বিশেষ দিনে ওদের সেই শুভেচ্ছা বার্তা পেয়ে রেখার ভীষণ ভালো লাগে। তাই একটু কথা বলতে দেরি হয় তারপর বলে "ও থ্যাঙ্ক ইউ।
এতগুলো বছর বৌদি তুমি আমাদের ফাঁকি দিয়েছে এবার কিন্তু জন্মদিনে আমাদের খাওয়াতে হবে।
রেখা বলে আমার জন্মদিন তো সেভাবে আমরা পালন করি না ,পার্থ, জানবে কি করে বলো,?
এবার তো আমরা জানতে পেরেছি ।এবার কিন্তু খাওয়াতে হবে বৌদি ।'
রেখা বলে" ঠিক আছে খাবে ।খাওয়ার জন্য তোমাকে জন্মদিনেই খেতে হবে ,এমনকি কেউ দিব্যি দিয়েছে?
কারণ আছে বল তোমাকে তো কতবার বলেছি তুমি কি না এক কাপ চা খাওয়ার তোমার সময় থাকে না। ঠিক আছে তাই হবে।
"থ্যাংক ইউ বৌদি।'
"ইউ মোস্ট ওয়েলকাম।'
ফোনটা রাখতে না রাখতেই আবার ফোন
এবার রেখা দেখছে রিম্পা দি ফোন করেছে।
'হ্যালো।'
শুভ জন্মদিন রেখা খুব খুব ভালো থাকিস তুই সারাটা জীবন এভাবে আনন্দে কাটাস সুস্থ থাকিস।
রেখা অবাক হয়ে গেল বলল' কি বলছো তুমি?'
"কি বলবো অবাক হচ্ছিস?'
'তুমি কি করে জানলে?'
"এতদিন একসঙ্গে কাটিয়ে আসলাম। কখনো তোর জন্মদিনের কথা বলিস নি।"
হ্যাঁ আমি কখনো চাইনি আমার জন্মদিন হাইলাইট "হোক।'
'এখন তো সেটা হাইলাইট হয়ে গেল।'
'তুমি কি করে জানলে?'
'আরে ফেসবুক দেখিস নি?"
"না তো সময় পাইনি।"
"কেন কে দিয়েছে?"
" পার্থ ছেড়েছে তার সাথে মনোজ আরো কাকে কাকে যেন ট্যাগ করেছে।"
"কি বলছ?"
'আমি কি করে জানব বল? তুইতো কখনও আমাকে আপন ভাবিস নি ,বলিস নি।'
"তুমি জানো যে তুমি আমার কাছে কতটা ।তুমি আমার সারাটা আকাশ জুড়ে।'
শেষ পর্যন্ত রিম্পা দি বলে "আমাকে ফেসবুকে দিয়ে দিল।"
"তো কি হয়েছে ভালোই তো হয়েছে?
দেখ কত কমেন্টস করেছে।
তোর  বাড়তি পাওনা লেখিকা হিসেবে।
শোন তোর গিফট পাওনা থাকল  এখন আমি রাখছি কেমন?"
"তোমার ক্লাস আছে?'
"হ্যাঁ রে। নইলে এত তাড়াতাড়ি ফোন ছাড়তাম?"
"ঠিক আছে। পরে কথা হবে।"
এরমধ্যে বড়দি ডেকে পাঠালেন।
পঞ্চমী দি এসে বলল 'রেখাদি বড়দি আপনাকে ডাকছেন।'
"হ্যাঁ যাচ্ছি।'
বড়দি আ সব?'
মিষ্টি হাসি হেসে বললেন 'আরে রেখা এসো, এসো, এসো।''
"শুভ জন্মদিন রেখা, খুব খুব ভালো 
থেকো ,সবসময় হাসিখুশিতে থেকো, সুস্থ থেকো।:
রেখা বলল থ্যাংক ইউ বড়দি।"
তারপরে রেখা গিয়ে বড়দিকে প্রণাম করলো।
বড়দি বলেন" এসো তুমি আমার বুকে এসো।'
বড়দি একটা সুন্দর গোলাপের বুফে আর একটা কবিতার বই উপহার দিলেন।"
রেখার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে । বড়দি বললেন রেখা তুমি কাঁদছো আজকের দিনে।"
"আমার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বড়দি। আমার মায়ের কথা ,বাবার কথা, আমার যৌথ পরিবারের সকলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আর এই কবিতার বই এটা আমার খুব পছন্দের ছোটবেলায় খুব ভয় পেতাম বড়দি।"
সেই ছোটবেলার দিনটা ফেরত পেলাম।
আজকের এই কান্না আমার আনন্দের কান্না।
বড়দি বললেন' এতদিন তো আমরা জানতাম না তোমার সার্টিফিকেটের যেটা সেটাই জানতাম কিন্তু কখনো তো তুমি সেলিব্রেট করো নি তাই ভাবলাম হয়তো জন্মদিনকে ঘিরে গেছে ।তোমাদের বাড়িতে আছে অনেকে তো মেয়েদের জন্মদিন সেলিব্রেট করে না ,এরকম কিছু আছে তাই ভেবেছি।'একদম ঠিক ভেবেছেন বড়দি আমাদের বাড়িতে মেয়েদের জন্মদিন সেলিব্রেট হয় না শুধু পায়েস রান্না করে মা দিতেন।
বড়দি বলেন 'কিন্তু দেখো, কি অদ্ভুত আমাদের বাড়িতে কখনও মেয়েদের জন্মদিন সেলিব্রেট করা হতো না শুধু মা পায়েস রান্না করে কোনরকমে দিতেন।
বড়দি বললেন অথচ দেখো এত বছর পর আবার সেই দিনটা সকলের সামনে প্রকাশ্যে আসলো।

"তোমার আজকে তুই টিফিনের পড়ে ক্লাস নেই তুমি আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেও।
রেখা বলল "থ্যাংক ইউ বড়দি।"
তাহলে বড়দি আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।
 ঠিক আছে এসো সাবধানে।
রেখা তাড়াতাড়ি স্টাফ রুমে এসে খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে অন্যদের কে বলল আসছি।
বাকিরা সবাই বলল এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছ। রেখা বলল" আমার একটু দরকার আছে তাই।'

বেড়াতে যাবে ঠিক তখনই অনিন্দিতা ঢুকলো ঢুকেই প্রথমে রেখার কাছে গিয়ে বলল শুভ জন্মদিন রেখাদি। খুব খুব ভালো থেকো।"
অনিন্দিতার গেছে পরে কথা বলল রেখার আকাশে অনেক তারা গিরে যে অন্ধকার ছিল আজকে যেন অনেকটাই কেটে গেল।
তোদের ডাক্তার দেখানো হয়েছে?
না গো এখনো কয়েকদিন বাকি আছে?
এখন কি বুঝ ?
এখন কেমন বুঝছিস?
আগের থেকে অনেক ভালো।
যা"ক বাবা যে যেভাবে পারে ভালো থাকুক
তোকে একটা কথা বলি তুই এখন তোর বাচ্চার দিকে ধ্যান দে।
হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছিস।
অনিন্দিতা বলে আমার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে তো ?
রেখা বলে "কেন ঠিক হবে না।"
'আমি তোমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি রেখা দি। আজ তার ফল ভোগ করছি।"
রেখা বলে "না ,না এভাবে কেন বলছিস।
প্রত্যেকের জীবনেই কিছু খারাপ সময় আসে আবার ভালো সময় আসে।
খারাপ সময়ে আমরা একটু ভেঙে পড়ি।
এই অন্ধকার চিরদিন থাকবে না রে।"
অনিন্দিতা বলে "তোমরা সবাই আশীর্বাদ করো আমি যেন আমার ছেলেটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারি।'

"সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না।আমি এখন আসি রে।'
"তুমি এখন চলে যাচ্ছ?"
"হ্যাঁ রে'
অনিন্দিতা হেসে বলল" দাদা কোথায় স্পেশাল কিছু সেলিব্রেশন করার জন্য ভাবছে। রেখা এক গাল হেসে বেরিয়ে গেল।
রেখা মনে মনে ভাবতে লাগল মন কেমন করা এই বিশেষ দিন। এটা যেন বিশেষ হয়েই থাকে। আজ রেখার ইচ্ছেগুলোকে নীল খামে ভাসিয়ে দিল।

Nhgvb

LOVE

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা "খুশির ঈদ"





খুশির ঈদ
সেলিম সেখ 


ঈদ মানে বছর ঘুরে
আসে যে খুশির দিন,
তাই তো দেখি অবুঝ শিশু
করছে তা ধিন ধিন।

ঈদের খুশি সকল কোণে
ছড়িয়ে পড়ুক আজ,
সকলে সেজেছে নতুন রঙে
পেয়ে নতুন সাজ।

ঈদের দিনের খাবারের গন্ধে 
মন মেতেছে আবার, 
বছর ঘুরে খুশির দিন
হয় না দেখা সবার। 

আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলে
চলেছে ঈদগাহের দিকে, 
আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে
চলে সে ধিকে ধিকে।

ঈদের দিনের নামাজ শেষে
করি শুরু সবে খাওয়া, 
শান্ত বিকেলে অধীর মনে
 হয় শুরু দূরে যাওয়া। 

 মুক্ত আকাশে মুক্ত বাতাসে
ওড়ে সকলের মন, 
চায়না সে কভু থামতে
চলতে চায় সারাক্ষণ। 

পবিত্র এই খুশির ঈদ
কাটুক সবার ভালো, 
সকলের মনে জ্বলে উঠুক
ভাতৃত্ববোধের আলো।

২৯ এপ্রিল ২০২২

কবি মনোয়ারুল ইসলাম "কালের অমানিশা"




কালের অমানিশা
মনোয়ারুল ইসলাম




দৃষ্টি দূর বিবর্ণ কুয়াশাচ্ছন্ন
ভেজা ভেজা জলের স্পর্শ 
অনূভুতির বিস্তীর্ণ দিগন্তে ....

শেষ বিকেলে মায়াবী আলোয়
ফেলে আসা ছেলে বেলা
গায়ের মেঠোপথ, ভরা নদী, কিশোরী ভালোবাসা, আলেয়া ....

এখন কংক্রিট লোহালক্কর যান্ত্রিক জীবন
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় 
বিকল যান ....

প্রিয় মাটি মিশে যাই, কালের অমানিশা ....

কবি শেখ রাসেল এর কবিতা "সুযোগ খুঁজি "




সুযোগ খুঁজি 
শেখ রাসেল 



সুযোগ খুঁজি আমরা সবে
একটু পেলে ছুতো,
ওমনি ধরে দেই-যে মেরে
দস্যি ষাঁড়ের গুঁতো।

আজব দেখি ঘটলে কিছু হোকনা কোন দেশে,
গুজব নিয়ে তাল পাকাবে
চোর সাধুরি বেশে।

কাজের বেলা নয়-তো কাজি
চোরের সুতা টানি,
লাগাম ছেড়ে বলছো মুখে
মিথ্যা হাজার বাণী।

আমরা কি-ভাই হালের গরু
দিচ্ছো পিঠে কষে,
পকেট খানি করছো ভারী
দিন মজুরী চুষে।

আকাশ সমান উর্ধ্ব গতি
বাড়ছে সবি দাম,
গরীব খেটে মরছে দেখো
রক্ত পানির ঘাম।

শাসন নামের শোষণ নিয়ে
যাচ্ছি করে বাস,
সোনার দেশে করছি কি তাই
বর্গী নামের চাষ?

কবি জাহাঙ্গীর আলম জীবন এর কবিতা "বিবর্ণ স্বপ্ন"





বিবর্ণ স্বপ্ন
জাহাঙ্গীর আলম জীবন 



আমরা  বেশীর ভাগ মানুষই
জীবনের টানাপোড়নে আবদ্ধ 
কখনও এটা আবার কখনও ওঠা 
সমস্যাত লেগেই আছে ; থাকবে। 

সংসার, বিয়ে, অসুস্থতা আর ব্যস্ততার চিন্তা করতে গিয়ে নিজের 
কথাই ভুলতে হয়। তার পরেও অনেকের মন ভরে না! 

কখনও মনে হয় ;সাংসারিক দায়িত্ব আর জীবনের অশুভ অধ্যায়গুলো যদি না থাকতো 
তাহলে দিব্যি একটানা পড়ে যেতাম..

একটি জীবনে কত চাওয়া 
স্বপ্ন হাজার। সময়ের স্রোতে 
স্বপ্ন ভেঙ্গে বিবর্ণ হয়ে যায়
তবুও স্বপ্ন; স্বপ্নই দেখে যায়।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬৫





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৬৫
কুসংস্কারের বেড়াজালে
মমতা রায়চৌধুরী 




রাত্রে শুয়ে শুয়ে চৈতির মার কথাগুলো ভেবে যাচ্ছিল রেখা।' সত্যিই যদি এরকম কিছু 
হয় ,সত্যিই যদি চৈতির শ্বশুর বাড়িটা ভোলা ঠাকুরের জন্য ঠিক হয়ে থাকে। তাহলে কি একবার রেখা চেষ্টা করবে? আবার মনে মনে ভাবছে এসব কুসংস্কার ।একজন শিক্ষিতা মেয়ে এসব বিশ্বাস করে কি করে? "আসলে মনের ভেতরে ভয় থেকে সৃষ্টি হয় এসব। কিংবা দীর্ঘদিন পরিশ্রম প্রচেষ্টার ফলে যখন কিছু না মেলে তখন বোধহয় ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হয় এবং যে যা বলে সেটাকেই তখন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। এসব ভাবছে  রেখা।মনোজ  ওঘরে খেলা দেখছে আজকে  টিভির কাছ ওকে  থেকে নড়ানো যাবে না। কে কে আর  খেলা।
হঠাৎই কতগুলো মেসেজ ঢোকার আওয়াজ হলো ।মনের ভাবনায় ছন্দ পতন ঘটল। ফোনটা টেবিলের উপর ছিল রেখা তাড়াতাড়ি উঠে ফোনটা চেক করলো। 
"ওমা একি একটা মেসেজ ফরওয়ার্ড করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে তারাপীঠ মন্দিরের পূজারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন। তিনি বলেছেন সকলকে গীতা পাঠ আর প্রার্থনা করতে এবং এই মেসেজ যে 30 জনকে পাঠাবে তার মনের আশা পূরণ হবে, আর যে অবহেলা করবে তার পাঁচ বছর খারাপ সময় যাবে।
রেখার ব্যাপারটাতে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো ।আজকে হচ্ছেটা কি ?ঠাকুরের কথা ,সেটাও একটা মনের ভেতরে করবে কি করবে না। একেবারে করবে না বলে ঝেড়ে মুছে ফেলতে পারছে না আবার করবে বলেও মনে থেকে সঠিক সায় পাচ্ছে না।
ম্যাসেজটা পড়ার পর রেখার মনের ভেতরে একটা টানাপোড়েন মেসেজটা পাঠাবে কি ,পাঠাবে না ।বেশ কয়েকবার নিজের মনকে প্রশ্ন করল তারপর ভাবল 30 জনকে না পাঠানোর ই  বা কি
 আছে ?পাঠালে তো ক্ষতি হচ্ছে না। যদি ভালো কিছু হয়। আশায় এই প্রত্যাশায় আমরা সকলে বাঁচি। কতক্ষণ সময় লাগবে 30 জনকে মেসেজটা ফরোয়ার্ড করতে  ,করেই ফেলি।'
রেখা ওর পরিচিত সার্কেল এর মধ্যে মেসেজটা ফরওয়ার্ড করেছে। একজন কমবয়সী ভাই ছিল সে সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ করেছে 'দিদি,' এটা ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছু নয়'  
প্রথমদিকে মেসেজটা ওই ভাইটার কাছ থেকে পাওয়ার পর রেখে একটু লজ্জিত হয়ে 
গেছিল ।সত্যিই তো ,একজন শিক্ষিত মেয়ে কি করে মেসেজগুলো ফরওয়ার্ড করে। তারপর মনের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হল ।
বলল" কেন এত কিছুর পরেও তো একটা অদৃশ্য শক্তি আছে ,সেই শক্তি হচ্ছে ঐশ্বরিক শক্তি।
 তাই রেখা লিখল 'ভাই আমরা প্রত্যেকেই ধর্মভীরু আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের মঙ্গল চাই নিজের মরে যাওয়া স্বপ্ন আশাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।'
পরক্ষণেই ভাইটি মেসেজ করল
"তাহলেও দিদিভাই…।"
রেখা লিখল" কিছু ইচ্ছেগুলোকে না হয় খাম বন্দি করে রাখি আর কিছু ইচ্ছেগুলোকে না হয় নীল খামে মুক্তি দিই। ধরে নাও সেরকমই কিছু।""
এবার সেই ভাই হাসির চিহ্ন দিয়ে পাঠাল।
রেখাও হাসির আর ভালবাসার চিহ্ন পাঠালো।

এর পরবর্তীতে আর একটি ম্যাসেজ ঢুকলো একজন লিখেছে আমার কোনো আশা নেই।'
রেখা লিখল আশা নেই এ কথা কেন বলছো আশার জন্যই তো আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের খোঁজখবর নিই। কেমন আছো ?স্বপ্ন দেখাই ।তোমাকে আমি ভাল করে চিনি। তুমি নিজে একটি স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছ। তাহলে তোমার আশা যদি না থাকবে তাহলে তুমি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থেকে এতগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা করতে না?'
'সেও তখন হাসি চিহ্ন দিয়ে পাঠালো।'
আর একজন পাঠালো সত্যিই কি আমরা এগুলোতে বিশ্বাস করি? এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়।'
রেখা বলল' হ্যাঁ ,তার মনেও সেটাই আছে কুসংস্কার তবু আমরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারিনা ।ধরে নাও আমি আমার সেই ইশ্বরের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে এই মেসেজটা ফরোয়ার্ড করেছি ।তোমাদের ইচ্ছে হলে তোমরা কাউকে মেসেজ ফরোয়ার্ড করতে পারো, না পারবে সেটা তোমাদের ব্যাপার আমি কিন্তু আমার ঐশ্বরিক শক্তি কে স্বাগত জানিয়েছি এবং আমি এই পৃথিবীর রূপ রস গন্ধে আরও কিছু দিন কাটিয়ে যেতে চাই ।আমার মনের সুপ্ত বাসনাগুলো আছে,যে স্বপ্ন গুলো আছে সেই স্বপ্নগুলো কে পুনরুজ্জীবিত দেখতে চাই । যদি হয় এ,ই প্রত্যাশায় ভালো থাকা।
সে তখন টেক্সট করে ভালোবাসার হাসির চিহ্ন দিয়ে পাঠায়।
আসলে রেখা যার কাছ থেকে মেসেজটি পেয়েছে তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব।তবে তিনি স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব বলেই যে তার কথা বিশ্বাস করতে হবে ,সেই বিশ্বাস থেকেকিন্তু রেখা করেনি রেখার মনে হয়েছে মনের ভেতরে কোথাও না কোথাও একটা জায়গা আমাদের দুর্বল আছে ।সেই দুর্বল জায়গা থেকেই তৈরি হয় আমাদের খিদে আর সেই খিদের নিবৃত্ত করার জন্য আমরা অনেক কিছু অবলম্বন করে থাকি।
আরেকজন মেসেজ লিখেছেন ম্যাডাম আমরা কম্পিউটার ইন্টারনেটের যুগে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে দাঁড়িয়ে আপনার কাছ থেকে এই রকম একটা মেসেজ প্রত্যাশা করি নি।
এসএমএস পাঠায় জানি। আপনার মনে প্রশ্ন উদয় হাওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু একটা কথা বলি কুসংস্কারে মানুষের আস্থা প্রদর্শনের নানা কারণ রয়েছে কিন্তু?
ভদ্রলোক মেসেজ করেছেন যেমন।
যেমন ধরুন না বিজ্ঞানের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এটা আপনি মানেন তো?'
'সেটা তো রয়েছেই।'
রেখা বলল তাহলে আমি কিছু উদাহরণ দিই যেমন ধরুন চাষী,বিজ্ঞানের কাছ থেকে আগাম কিছু জানতে পারেনা ,কোন বছর ফসল কেমন হবে?
ভদ্রলোক বললেন একদম সঠিক।
 যেমন ধরুন খেলা হচ্ছে সেই খেলায় বিজ্ঞান কখনো বলে দিতে পারে না যে কোন দল জয়ী হবে?"
"এটাও সঠিক।"
তাছাড়া দেখুন বিজ্ঞান কখনো ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ,এটা মানেন তো?'
'হ্যাঁ,সেটাও ঠিক।'
রেখা বললতাহলে দেখুন এই অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে কিন্তু বিজ্ঞানের আপাতত পরাজয়। এখান থেকেই সূত্রপাত হয় দৈব বিশ্বাস তথা দৈব নির্ভরতা।এটা মানেন তো?হ্যাঁ সেটাও ঠিক।
আমরা প্রত্যেকেই জানি যে মানব সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে  কুসংস্কারের ধারা বয়ে চলেছে কুসংস্কার কিন্তু এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞানের সঙ্গে সমান্তরালে পথ ধরে।
'হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক।'
আর এই কারনেই এই কুসংস্কার কিন্তু কখনই দেখা যায় যে বিজ্ঞানের হাত ধরে সমাজের বুকে প্রগতি এসেছে কিন্তু সেই প্রগতির পথে কিন্তু কখনোই কুসংস্কার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না এই কুসংস্কার বলতে পারেন ব্যক্তির কাছে একটা  প্রশান্তি স্বরূপ।
এই ধরুন না আপনার বাড়িতে বা আমার বাড়িতে যদি কেউ কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় আমরা ডাক্তারের পরামর্শ নেই ঠিকই কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কি করি?
লোক বললেন আমরা ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি মাথা ঠুকে রোগমুক্তির জন্য।
রেখা বললো দেখুন আপনি কিন্তু তাহলে এদিক থেকে আবার কুসংস্কারে আবদ্ধ হয়ে গেলেন।
আসলে কুসংস্কার কিন্তু কখনোই বিজ্ঞানের পথচলাকে থামিয়ে দেয় না।
তবে কিন্তু দাদা আমি কখনোই বলছি না যে আপনি  কুসংস্কারকে প্রাধান্য দিন। আসলে আমাদের মনের ভেতরে একটা দুর্বল জায়গা রয়ে গেছে এই দুর্বল জায়গাটা কেই আমাদের সরাতে হবে। সেটা একমাত্র পূর্ণ বিজ্ঞানচেতনা আর এই বিজ্ঞান চেতনার যত প্রসার ঘটানো যাবে কুসংস্কারের দুষ্টু শনির থেকে আমরা মুক্তি পাব।
ভদ্রলোক বললেন 'আমি তো সেটাই বলছি।"
আমিও সেটাই বলছি মানুষের অজ্ঞতা ও শিক্ষাকে কুসংস্কার হাতিয়ার করে।
ম্যাডাম আপনিতো শিক্ষিতা আপনাকে কি করে গ্রাস করল।
রেখা বললো আমরা প্রত্যেকেই না আসলে এই দুষ্টু ক্ষতের জালে আটকে আছি এতটাই ভেতরে ঘা করে দিয়েছে ,সেই ঘা শুকাতে আমাদের সময় লাগবে ।তবে আমি কখনো এটা বলব না যে কুসংস্কার সমাজের বুকে অক্ষত 
থাকুক ।আমাদের এই কুসংস্কারকে সমাজ থেকে নিজের মন থেকে দূর করতে হবে। তাহলেই এক সুস্থ প্রগতিশীল সমাজের জন্ম হবে।
স্বামী বিবেকানন্দের মতে "প্রকৃত শিক্ষাইপারে মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশ সাধন করতে আর এই প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে জীবন পথে চলতে সাহস আর আত্মবিশ্বাস জোগাবে।"
তাহলে আপনি কি বলছেন আপনার ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব?
দাদা আগেই বললাম ভেতরে অনেকটা ক্ষত তৈরি হয়ে গেছে সেটা হারাতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে আমার যে ব্যথা যন্ত্রণা  এই কথাটা বিজ্ঞান যদি পূরণ করে দিতে পারতো তাহলে বোধহয় খুব তাড়াতাড়ি এই কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতাম।
একটা কথা বিশ্বাস করি আমি কিন্তু ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি ।ঈশ্বরকে দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না উপলব্ধি করতে হয়। আমি সেই জায়গা থেকেই এটাকে সাপোর্ট করেছি কিন্তু আমি কাউকে জোর করে বলব না ,কেউ সেটাকে সাপোর্ট 
করুক ।সেটা নিজের নিজের মনের ব্যাপার।
তাই আমি কথাটা বারবারই কিন্তু বলছি "superstition is the religion of feeble mind'
বিভিন্ন প্রকার ভয় থেকেই এই কুসংস্কারের সৃষ্টি। আর এই ভয়টা কেই আমাদের জয় করতে হবে।
নইলে কুসংস্কারের বেড়াজালে  আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাব।

কবি মোঃসেলিম মিয়া "ঈদ বোনাস"






ঈদ বোনাস 
মোঃসেলিম মিয়া 




মুসলিম দের ধর্মীয় উৎসব বড় দুটি ঈদ,
ঈদুল ফিতর ঈদুল আজহা ত্যাগের মহিমায় গায় গীত! 
গরীব দুঃখীর কষ্ট অনুধাবণে সিয়াম সাধনে রত---
পূর্ণ দিবস অভূক্ত থেকে ক্ষুধা তৃষ্ণায় কত!
ধনী গরিব নেই ভেদাভেদ এটাই মর্ম বাণী ---
ইসলামের শশীতলে আসল ঠাঁই মানি।
সত্যিকারের ইসলাম ভাই  সাম্যের কথা বলে,
যাকাত ফিতর উৎসব বোনাসে
সঠিক নিয়ম কি মানে?
গরীবের হক বিলিয়ে দিতে 
বিধিনিষেধ  জারি, 
যুগে যুগে নবীর আদেশ শ্রষ্ঠার দেওয়া বাণী! 
মানব কুল  চলছে মেনে নিস্তার পেতে সকল ভুল,
ঈদ ভাতা উৎসব বোনাস সম্প্রীতিতে সামাজিক রুল।
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ঈদ বোনাসে বৈষম্য কতো রীতি, 
ঈদের সময় ঘনিয়ে এলে মাথায় খেলে ভীতি! 
শিল্পপতি আছেন যারা ভীষণ মনে কষ্ট, 
ব্যবসায় শুধু লস আর লস কিসের বোনাস প্রাপ্য?
অজুহাতের তিনহাত খোঁজে 
পাশ কেটে তাই  চলে,
গরীবের সিঁদ কেটে ভাই রাজ প্রাসাদটি গড়ে!
ইসলাম কি এটাই বলে বোনাস ছলাকলা? 
 ঈদ আনন্দে ভাগ বসাতে বোনাসে কেণ ধাওয়া!!!

২৭ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায় চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৬৪





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৬৪
আকাঙ্ক্ষিত বস্তুর জন্য
মমতা রায় চৌধুরী





আজ স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেই ফ্রেশ হয়ে গোপালের ভোগ চাপিয়ে, গোপালকে শয়ন দিয়ে
তাড়াতাড়ি চা বানাল। চা খেতে খেতে পেপারটা উল্টাতে লাগলো ।আজকাল পেপার পড়ার সময়ই পাওয়া যায়  না। পেপারের সম্পাদকীয় কলম টা খুব সুন্দর লিখেছেন। মন ভরে গেলো। অনেকদিন পরে একটা সুন্দর লেখা পেল। এরপর পাতা উল্টাতে উল্টাতে কবিতা। কবিতা পড়তে গিয়ে কবির নামই দেখা হয়নি। কবির নাম দেখে পছন্দ হবার নয়। একটি সত্যিকারের নাম ,না ছদ্মনাম? কে জানে?  তবে নামে কি এসে যায়, গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক তার সুগন্ধ তো ছড়াবেই।
এই কবির কবিতা প্রথম পড়ল রেখা।
মনে পড়ে গেল রেখার ও  কতলেখা   বাকি রয়ে গেছে, লেখা পাঠাতে হবে ।এদিকে অন্য আরেকটি পত্রিকার সম্পাদক পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নতুন বছরের কবিতা লিখতে বলেছেন। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় লেখা পাঠানোর আছে।তাই কালবিলম্ব না করে লিখতে বসে গেল। রেখা যখন লিখতে বসে,তখন কোথা থেকে যে শব্দগুচ্ছ মনের ভেতরে তৈরী হতে থাকে নিজেও জানেনা ।কলম আপন তালে এগিয়ে চলে, কবিতার ক্যানভাসে ছবি আঁকে।
এভাবে দুটো পত্রিকার জন্য রেখা লেখা কমপ্লিট করে ফেলে। আর নিজের লেখা নিজেই পড়ে অবাক হয়ে যায়। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ "ওম জয় লক্ষী মাতা…।"
রেখা জানে নিশ্চয় মনোজ এসেছে।
খুব উৎসাহ নিয়ে দরজা খোলো।
কিন্তু না মনোজ নয়। চৈতির মা।
সত্যি কথা বলতে কি রেখা মোটেও এইসময় চৈতি র  মাকে এক্সপেক্ট করেনি আর আসাতে খুশিও হয় নি ।কারণ চৈতির মা আসা মানেই বেশ কিছুক্ষণ সময় নষ্ট হবে আর রেখার একচুলও সময় নষ্ট করার মত সময় তার কাছে নেই। তো কিছু করার নেই , সৌজন্য তো দেখাতেই হবে।
রেখা বলল আরে দিদি আপনি?
চৈতি মা এক গাল হেসে বলল একটু বিরক্ত করতে আসলাম না দিদি?
রেখা বলল কি যে বলেন না ।মানুষ মানুষের বাড়ি যায় কি বিরক্ত করতে ।নিশ্চয়ই আপনার কোন দরকার আছে নইলে আপনি তো আজকাল এদিকে আসেন না।
আর তা অবশ্য ঠিকই।
কতদিন পর আসলেন ।ভীষণ ভালো লাগছে।
কথাটা রেখা বলল বটে কিন্তু মন থেকে মোটেও সায় দেয়নি কথাটা বলার জন্য।
"ভেতরে এসে কথা বলুন।"
চৈতির মা বলল "অনেকদিন থেকেই ভাবছি 
যাব ।আশা আর হয়ে ওঠে না। আজকে একটু সময় পেলাম, তাই ভাবলাম যাই একটু গল্প করে আসি।"
"তা বেশ করেছেন পাড়া-প্রতিবেশী না আসলে কি যোগাযোগ থাকে?
চৈতির মা বললো 'আপনিতো কখনোই যান না।"
রেখা মনে মনে ভাবল লোকের বাড়ি জ্বালাতে যাওয়া সময়ে-অসময়ের জ্ঞান নেই ।কোন মুখে এসব কথা বলে। তবুওএক গাল হেসে বলল "আসলে সময় পাই না তো?'
ড্রইং রুমে নিয়ে বসাল  তারপর বললো " দিদি চা করে আনি।'
চৈতির মা বলল "আবার চা করতে যাবেন?"
আমি বাড়ি থেকে চা খেয়ে এসেছি।
রেখা বলল লোকের বাড়িতে গেলে তাকে অন্তত চা দিয়ে হলেও আপ্যায়ন করা উচিত।
চৈতির মা হেসে উঠলো।
"জানেন দিদি কি হয়েছে পাড়ায়?
রেখা মনে মনে ভাবল এবিপি আনন্দ ।সব খবর এর কাছে । যার যা  তথ্য লাগবে পাওয়া যাবে।
"কি করে জানবো দিদি, আমি তো পাড়াতে কারো বাড়িতে যাই না,?'
এমন ভাবে বললো চৈতির মা হাসিমুখটা মুহুর্তের মধ্যে পানসে হয়ে গেল।
পরমুহূর্তেই আবার হাসিটা ফিরিয়ে এনে বলল "আসলে দিদি ,আমরা একটু যাই এবাড়ি ওবাড়ি কথা বলি আমাদের তো আর বাইরে বেরোনোর জায়গা নেই।"
রেখা মনে মনে ভাবল তবে কি চৈতির  মার মনে কষ্ট দিয়ে ফেললো কথাটা বলে।"
রেখা এই কথাটা বলতে চায় নি ,যাতে চৈতির মার মনে আঘাত লাগে।
চৈতির মা একগাল হাসি নিয়ে বললো' জানেন দিদি আরে যার বউটা মারা গেল সুইসাইড করে।'
রেখা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল" হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।"
"কেন কি হয়েছে?'
"কি হয়নি বলুন?''ok'
রেখা অবাক হয়ে বলল 'মানে?'
"আরে ওই ছেলের তো নিজের  বৌদির সাথেই লটর পটর।"
রেখা বললো' কি যে বলেন না!"
আমি জানি বিশ্বাস করবেন না কিন্তু খোঁজ নিলেই জানা যাবে।
রেখা মনে মনে ভাবে খেয়ে কাজ নেই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।
চৈতির মা আরো বললো' আরে সেই ব্যাপারটা জেনে ফেলে ছিল বলেই তো বউটা সহ্য করতে পারে নি।'
রেখা বলে 'কি সাংঘাতিক,!'
"হ্যাঁ দিদি, তাছাড়া  আর বলছি কি?'
ছেলেটাকে দেখে তো সেরকম চালাকচতুর ই মনে হয় না।
"তাহলেই বুঝুন পেটে পেটে কত বুদ্ধি।"
আর ভালো লাগছে না এসব কথা শুনতে অথচ কত লেখা বাকি রয়েছে লিখতে হবে।"
'বলতেও পারছে না।'
রেখাও মুখে হাসি নিয়ে "দিদি, একটু বসুন আমি চা করে আনছি।'
''চা  করবেন? আচ্ছা আনুন।'"
রেখা চা করতে গেলে চৈতির মা বলল "এবার সেল থেকে কিছু কেনাকাটা করেন নি দিদি?'
'না সময় পায়নি।'
আরে আমাদের কল্যাণীতে দেখুন কত সেল বসেছে  নাকি কাঁচরাপাড়া থেকে করেন?"
"আমি তো বরাবর কাঁচরাপাড়া থেকেই করি।"
চৈতির কি খবর দিদি?
"ও দিদি চৈতির মনে হচ্ছে একটা ভালো খবর দিতে পারব?"
"তাই নাকি? বাহ বেশ ভালো খবর।"
এখনো সে রকম কিছু হয়নি তবে ডাক্তার বলেছেন যে খুব শিগগিরই ভালো খবর দিতে পারবে।
মনে মনে ভাবি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
'এমন ভাবে বললেন যেন মনে হচ্ছে সুখবর হয়েই গেছে।'
'এই তো সামনের সপ্তাহে আসবে এখানে ডাক্তার দেখাতে।'
রেখা চা করে এনে চৈতির মার হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিলো সঙ্গে কিছু স্নাক্স।
দেখুনতো দিদি শুধু শুধু চা করতে হলো। কষ্ট দিলাম এসে।"
"রেখা মুখে মিষ্টতা নিয়ে বলল' কি যে বলেন না দিদি। চা খাওয়াতে পারব না?"
তবে মনে মনে একটু বিরক্তই হয়েছে।
চৈতির মা একগাল হাসি নিয়ে বললো" সে তো আমি জানি দিদি।'
আপনাদের বাড়িতে আসলে কমা? আপ্যায়ন তো করেন না।"
"এখন কেমন আছে চৈতি,? বাড়িতে সমস্যা মিটেছে?"
কানের কাছে একটু ফিসফিস করে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল" মিটবে না কেন আমি তো ঠাকুরবাড়ি করেছি।'
একটু অবাক হয়ে বললো 'মানে?'
"মানে আমি মদনপুরে ভোলা ঠাকুরের বাড়ি গিয়েছিলাম । ওনকে সব কিছু বলেছি  উনি তো তাবিজ কবজ করে দিয়েছেন?:
রেখা মনে মনে ভাবছে কোন যুগে বাস করি এখনো আমরা তাবিজ-কবজ এইসবের বিশ্বাস থেকে নিজেকে কাটিয়ে উঠতে পারছি
না  কুসংস্কারের বলি।'
'তা কি মনে হচ্ছে  ভোলা ঠাকুরের দেয়া তাবিজ-কবজে এই চৈতি এখন ভালো আছে?"
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল তো কি ?শান্তি হয়েছে ওর শাশুড়ি দর্জাল এখন দেখুঙ্গা মাটির মানুষ হয়ে গেছেন পুরো।
'ওমা তাই নাকি?'
রেখা আবার পরক্ষনেই মনে মনে ভাবল "তাহলে কি সত্যি সত্যি কাজ হয় ?তাহলে একবার কি পরীক্ষা করে দেখবে তার শাশুড়ি মা তার সাথে কেন এরকম ব্যবহার করে ?চৈতির মাকে কি ব্যাপারটা খুলে বলবে ?তবে শিক্ষিত মনে বাসা যে  কুসংস্কারকে টেনে নিয়ে আসছে এটা কি ঠিক ?'
চৈতির মা কিছুটা আঁচ করে বল" দিদি কিছু সমস্যা আছে নাকি ?আমায় বলুন আমি তাহলে নিয়ে যাবো আপনাকে ভোলা ঠাকুরের কাছে।"
"সেরকম সমস্যা হলে পরে বলব,"
কেন শুনেছি তো আপনার শাশুড়ি মা সেরকম  সুচারু   একবার দেখবে নাকি গিয়ে ?এটা কিন্তু সত্যি কথাই হান্ড্রেড পার্সেন্ট কাজ করে।'
রেখাও কেমন একটু অন্য মনস্ক হয়ে গেল। সত্যি সত্যি তাই মনের ভেতরে একরাশ ভালোবাসার সমুদ্র অপেক্ষা করছে ।শাশুড়ি মার স্নেহ পাবার জন্য কত চেষ্টাই করেছে কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি  রেখার মা মারা যাবার পর ভেবেছিল শাশুড়ি মাকে মায়ের মত আপন করে নেবে ।চেষ্টাও করেছে রেখা আপন  হতে। পারে
 নি ।"একবার চেষ্টা করে দেখবে কিনা 'কিন্তু এই কথা যদি মনোজ জানতে পারে তাহলে তো আর রক্ষে নেই ।কী করবে ?সে নিজেই জানে না। আজ কি সত্যি সত্যি শিবরাম চক্রবর্তী দেবতার জন্ম গল্পটি পড়েছিল ।সেই গল্প পথের ধারে পড়ে থাকা পাথরটি একসময় কিভাবে শিবলিঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে ।তাই নাকি পাতাল ফুঁড়ে শয়ন মহেশ্বর বেরিয়ে এসেছে ।তার কাছেই মাথা নত করতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত মানুষ কখনো কখনো সত্যিই এমন দুর্বল হয়ে যায় ,যখন সেই শিক্ষিত মনটাকেও গিয়ে মাথা নোয়াতে হয়।
"ও দিদি আজ আর বসবো না  অন্যদিন আসব অনেক সময় নষ্ট করলাম আসছি।'
রেখা যেন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল বলল.ঠিক আছে দিদি আসুন আর যাবার সময় আবার বলে গেল দিদি আমাকে বলবেন কিন্তু ।আমি বলছি আমার মেয়েকে দিয়ে উপকার পেয়েছি।"
রেখার মন কেমন হয়ে গেল ।সেও চায় তারও কোলজুড়ে একটা বাচ্চা আসুক ।তার সংসারে শান্তি বিরাজ হোক ।তবে কিছুতেই ভোলা ঠাকুরের কাছে যাবে কত ডাক্তার বুদ্ধি করেছে ডাক্তার তো কখনো বলেনি সে মা হতে পারবে 
না ।তাহলে কি সত্যি সত্যি ঠাকুরের এমন ম্যাজিক আছে যার জন্য সে পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ ডাক শুনতে পাবে ।তার নারীসত্তা পরিপূর্ণতা পাবে।" জীবনে তো কম টানাপোড়েন চলেনি। তাই সেও তার ক্ষতবিক্ষত হৃদয়টাকে শান্ত রেখে
কখন যেন অজান্তেই গোপালকে স্মরণ করে ভোলা ঠাকুরের উদ্দেশ্যে দুই হাত তুলে নমস্কার করল আর মনে মনে চাইলো তার সেই আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটি।

কবি আইরিন মনীষা এর কবিতা "বেদনার বালুচরে"





বেদনার বালুচরে
আইরিন মনীষা 

বেদনার বালুচরে আছি একাকী 
বেঁচে থাকা দায়
ভালো থাকার আয়োজনেb নেই
আর  কোনো সায়।

ভাঙা মনে নেই আজ
আর কোনো শান্তি
ফেলে আসা দিন যেনো
শুধুই এক ভ্রান্তি।

সুখ পাখি রয়ে গেলো
এখনো সেই অধরা
ক্লান্ত শ্রান্ত মনে  তাই
নেই শান্তির  পসরা

দিন যায় রাত আসে
চোখে নেই ঘুম
ফেলে আসা দিনে যেনো 
স্মৃতি কথার ধুম।

আশা নেই তবু দেখি
স্বপ্নের এক ভোর
খুলে যদি কভু আবার
খুশি মাখা দোর।

কবি শাহীন সুলতানা এর কবিতা "কখনো সমুদ্র কখনো পাহাড়"





কখনো সমুদ্র কখনো পাহাড়
শাহীন সুলতানা 




কখনো কখনো তোমাকে জলের মতো পড়ে ফেলি... 
যেন...শান্ত, স্থির, কমনীয় শিশিরের মতো স্নিগ্ধ তুমি। 
আবার কখনো বিশাল অচলান্ত পর্বতের মতোন 
আবিষ্কার করি। জানি, পর্বত ও সমুদ্র ধারণ করে; 
তবুও সে কাঠিন্য ভেদ করে জলের সন্ধান করা
দুঃসাধ্য বটে !

হয়তো আমারই ক্ষুদ্রতা !  মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে.. 
কোনো এক জ্যোৎস্নার রাতে তোমাকে ভেঙেচুরে 
চুরমার করে একেবারে ঢুকে পড়ি বুকের গহীনে... যেখানটিতে তুমি নীল পদ্মের গাছ লাগিয়েছিলে... ওখানটাতে একটা গোলাপের চারা লাগিয়ে দিই।

কবি এম, এইচ রহমান এর কবিতা "শাব্দিক ফুল"





শাব্দিক ফুল
এম, এইচ রহমান



হঠাৎ পথের দ্বারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম- সেদিন,সাদা কাগজের মাঝে সাদামাটা-
হাতের লেখা কয়েক টুকরো শাব্দিক ফুল।

সযত্নে একত্রিত করে শব্দের মালা গেঁথে-
খুঁজে পাই নির্ভুল একটি বাক্যের মূল।

মৃত্যুপথযাত্রী কেউ লিখেছিলো-
এই নশ্বর ধরাধামের বুকে খুঁজে না পেয়ে- তোমায়,বেলা শেষে অনশ্বর ধরাধামেই পাড়ি জমালাম-

স্বর্গীয় উদ্যানে দাঁড়িয়ে থেকো তুমি-
হাতে নিয়ে কোন স্বর্গীয় ফুলের মুকুল"

Hffvn

LOVE

২৬ এপ্রিল ২০২২

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক পর্ব একশত তম সম্পন্ন হয়ে শেষ হল।





(কবি ও লেখক শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক পর্ব একশত তম সম্পন্ন হয়ে শেষ হল।  লেখিকাকে সম্মান জানাই স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে । আপনার আগামীদিন কুশল কামনা করি । অজস্ৰ পাঠক আপনার লেখার অনুগ্রাহী হয়ে উঠুক । 
আবারও স্বপ্নসিঁড়ি পত্রিকা আপনার লেখার আশায় রইলো । 
ভালোবাসাসহ সম্পাদক দেবব্রত সরকার ।)




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
( শেষ পর্ব ) 

শামীমা আহমেদ 




শায়লাকে তার বাইকে নিয়ে শিহাব  ঝিগাতলার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেও কিছুদূর গিয়ে সে তার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনলো। সে একটু নিজের বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলো। বাইকের পেছনে বসা শায়লার কাছে শিহাব আজ এক নতুন পৃথিবী হয়ে ধরা দিলো। শায়লা তার মনের ভাবনায় রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইল। সে বারবার শিহাবের পিঠের উপর আলতো করে নিজেকে ছুঁয়ে দিচ্ছিল আর ডান হাত দিয়ে বেশ শক্ত করে শিহাবকে জড়িয়ে ধরে তার সাথে বেঁধে রাখলো। শায়লার মনে হলো, যেন সে আকাশে সাদা মেঘের মত হালকা হয়ে উড়ছে। শিহাব উত্তরা থেকে  বেরুনোর আগেই সিদ্ধান্ত পালটে নিয়ে বাইক ঘুরিয়ে তার বাসার দিকে এগুলো। শায়লা অবাক হলো! শিহাবের মাথায় হেলমেট থাকায় কথা বলাও সম্ভব হচ্ছিল না। শায়লা শিহাবের কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।বাইক শিহাবের বাসার গেটে থামতেই শায়লা বুঝতে পারলো শিহাব হয়তো কোন বিশেষ  প্রয়োজনে বাসায় এসেছে। শিহাব উচ্চরবে হর্ণ দিতেই কেয়ারটেকার বিল্লাল মেইন গেট খুলে দিলো। বিল্লাল বেশ অবাক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইল। এই ভর দুপুরে তার স্যার কোথা থেকে এলো, গত রাতে যেভাবে বেরিয়ে গিয়েছিল ! সেতো ভেবেছিল কোন খারাপ খবর কিন্তু এখন দেখছে পিছনে লাল শাড়িতে একজন মহিলা আবার স্যার চকচকা নতুন পাঞ্জাবি পরা। নিশ্চয়ই কোন ঘটনা ঘটেছে।সে শিহাবের কাছ থেকে কথা শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে রইল। শিহাব বাইকের স্টার্ট থামাতেই শায়লা নেমে তার পাশে দাঁড়ালো। শিহাব বিল্লালের চোখ দেখে বেশ বুঝতে পারছে তার মনের ভেতর অনেক জিজ্ঞাসা। সে তার কৌতুহল নিবৃত্ত করতে স্পষ্ট করে  জানালো,বিল্লাল, এ হচ্ছে তোমার ম্যাডাম, মানে আমার বিয়ে করা বউ। গতকাল আমাদের বিয়ে হয়েছে। বিল্লাল হয়তো রিশতিনার সাথে মিলাতে চাইছে কিন্তু তার খটকা লাগছে। তার কাছে এবার বিষয়টি পরিষ্কার হলো। তাহলে এই ম্যাডামের  জন্যই বিদেশী ম্যাডামকে স্যার ফিরায়া দিছে। বিল্লাল দুয়ে দুয়ে চার মিলে যাওয়াতে এবার শান্ত হলো। সে শায়লাকে সালাম দিয়ে তার হাতে শিহাবের ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে বললো,তাইলে এখন থাইকা এই চাবি আপনার কাছেই থাকবো নয়া ম্যাডাম।শায়লাকে সে লিফটের দিকে এগিয়ে নিলো। শিহাবও এগিয়ে গেলো। বিল্লাল আশ্চর্যান্বিত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ওরা দুজনে লিফটে উঠে, শিহাব বাটন চার'এ প্রেস করলো।দুজনে খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। শিহাব শায়লাকে হাতের বাঁধনে জড়িয়ে নিলো।লিফটের ভেতরের আয়নায় দুজন দুজনকে দেখছিল। শায়লা শিহাবের কাঁধে মাথা রাখলো।  শিহাবের মুখে হাসির ঝিলিক ভেসে উঠলো!  সে শায়লাকে মৃদু টানে আরো শক্ত করে বেঁধে নিলো। এবার দুজনে হাতের বাঁধনে দুজনকে স্পর্শ করে নিলো। কিছুটা ক্ষণের এই স্পর্শ  যেন আরো গভীরের বন্ধনে বেঁধে নিলো। কত পাওয়া না পাওয়ার দ্বিধা দ্বন্দ্বের  আজ অবসান হলো।দুজনে দুজনকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নিলো। চার তলায় লিফট থামতেই দুজন বেরিয়ে  এলো। শিহাব শায়লাকে ইশারায়  তার  নিজের হাতে ঘরের চাবি দিয়ে শিহাবের ফ্ল্যাটের দরজার তালা খোলার জন্য বুঝালো। শায়লা ভেতরে এক  অভাবনীয়  আনন্দে শিহাবের বুকে মুখ লুকালো। শিহাব শায়লার  মুখ তুলে চোখের ভাষায়  এই ঘরের অধিকার বুঝিয়ে দিলো। শায়লা চাবি  দিয়ে লক খুলতে লাগলো। শিহাব বিষয়টি খুব আনন্দ নিয়ে দেখছিল।শায়লা আজ তার নিজের হাতে ফ্ল্যাটের তালা খুলছে! শিহাবের কাছে তা যেন এক অনন্য প্রাপ্তি। কোনদিন এই ব্যাপারটি  আসলেই সত্য হবে শিহাব তা কল্পনাও  করতে পারেনি, তা শুধু স্বপ্নই দেখেছে। শায়লা দরজা খুলে শিহাবকে ভেতরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতেই শিহাব  মুখে হাসি ছড়িয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করলো। অনেক দিনের চেনা ঘরে আজ তার অন্যরূপে প্রবেশ ! আজ আর  ঘরে সে  একাকী  নয়।আজ সাথে শায়লা আছে। আর সে  আজীবনের জন্য থাকবে। শিহাব ঘরে ঢুকতেই শায়লা দরজা লাগিয়ে ফিরলো। শিহাব ড্রইংরুম পেরিয়ে বেড রুমে ঢুকে শায়লাকে ভেতরে ডাকলো। শায়লা শিহাবের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, শিহাব শায়লার দিকে তাকিয়ে বললো, শায়লা তুমি জানোনা গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি কি এক অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটেছে। সব শেষে  তোমাকে পাওয়া আমার জীবনের সব দুঃখকে ভুলিয়ে দিয়েছে। আমি তোমাকে পেয়ে ভীষণ সুখী হতে চাই,ভীষণ। আমাদের বাকি জীবনে থাকবে শুধু হাসি আনন্দের ছড়াছড়ি। আমাদের মাঝে থাকবে না কোন দুঃখবোধ আর ভুল বুঝাবুঝি। শায়লা শিহাবকে আশ্বস্ত করলো,তুমি নিশ্চিন্ত থাকো শিহাব, আমি তোমার বাকী জীবন সুখ আর ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিবো। শিহাব শায়লাকে কাছে টেনে নিতেই শায়লা বলে উঠলো, তবে আরেকটা খুবই জরুরি কথা ভুলে গেলে চলবে না শিহাব। শিহাবের চোখে জিজ্ঞাস্য ভেসে উঠলো! জরুরি  কি কথা ? আমার কোন ভুল হলো ? শায়লা এবার শিহাবের দিকে রাগত চোখে তাকালো।
কেন ? আরাফের কথা। আরাফকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে। সে কথা ভুলে গেলে ? 
শিহাব একেবারে থমকে গেলো। আরাফের প্রতি বরাবরই শায়লার এমন মায়াভরা ভালোবাসা শিহাবকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত করে। শায়লা আবার বলে উঠলো, জানো শিহাব, আরাফকে আমার ভীষণ কাছে পেতে ইচ্ছে করে।কেমন মায়াকাড়া মুখটা ! আরাফের কথায় শিহাবের ভেতরে চঞ্চলতা খেলে গেলো। সে শায়লাকে বললো, আরে নাহ,তা ভুলবো কেন ? তাহলে চলো,আজই আরাফকে নিয়ে আসি। শায়লা মাথা ঝুঁকিয়ে তাতে সায় দিলো। কিন্তু আরাফের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে। আরাফের জন্য আমি নিজে হাতে ঘর সাজাবো। শায়লার কথায় শিহাবের ভেতরে শায়লার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ অনুভুত হলো।
তবে এখন একটা আব্দার আছে !  
শায়লা চমকে উঠলো !  এখন আবার কি আবদার ? শিহাবের চোখের দৃষ্টিতে দুষ্টুমির আভাস। এবার শায়লা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইছে। শিহাব তাকে বেশ শক্ত করে ধরে বললো,আরে, অন্য কি ভাবছো তুমি! এখন ওসব কিছু চাই না, সেটা আজ রাতের জন্য তোলা থাকবে। আমার নিজের ঘরে তোমার আমার প্রথম বাসর, সেটা কি এমন বর্ণহীন হবে। সেটার জন্য অন্যরকম প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন আপাতত আমি তোমার হাতের ছোঁয়ায় এক কাপ চায়ের স্বাদ নিতে চাইছি। আর বাকীটা তোলা থাকবে রাতের জন্য।
উহ ! এই কথা ! শায়লা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তক্ষুনি তার মনের অর্ধেক অংশ রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেলো। মেয়েরা বোধহয় এমনি হয়।স্বামীর কোন চাওয়া পুরণ করতে এক নিমেষে জাদু করে তা হাজির করতে চায়।
শায়লা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো।  শিহাব উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
দরজায় কেয়ারটেকার দারোয়ান দাঁড়িয়ে হাতে একটা পোস্টাল প্যাকেট। শিহাবকে দেখিয়ে বললো, স্যার এইমাত্র এইটা আসলো।আপনি বাসায় আছেন তাই নিয়া আসলাম। শিহাব প্যাকেটটি গ্রহন করলেও  বিল্লালের কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকায় শিহাব  তার হাতে একটা একশত টাকার নোট  দিলো। কিছু কিনে খেয়ো, বলতেই বিল্লালের মুখে বিশাল এক হাসি খেলে গেলো ! তবে শিহাব বেশ চিন্তিত মুখে প্যাকেটটি হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখতে লাগলো। দ্রুতই তা খুলে ফেললো। ভেতরের  কাগজ খুলতেই শিহাব ভীষণ চমকে উঠলো !  
রিশতিনা শিহাবকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে।এবং লিখেছে খুবই আরজেন্ট ! তবে কি গতরাতে রোমেলের কলের কথাগুলো সত্য ছিলো।রিশতিনা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে তারপর সুইসাইড  করেছে ? যদিও শিহাবও এমনটিই ভাবছিলো। কাল পরশুর মধ্যেই রিশতিনাকে ডিভোর্স দেয়ার প্রসেস শুরু করবে। ভালোই  হলো রিশতিনাই  তা করে দিলো। হঠাৎই  প্যাকেট টি থেকে একটা পোস্টাল কার্ড বেরিয়ে এলো। শিহাব দেখলো সেখানে টেমস নদীও নদী তীরের সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য।  শিহাব  অপরদিকে তা উল্টাতেই রিশতিনার বাংলা হাতের লেখায় কিছু লেখা দেখতে পেলো। শিহাব ড্রইং রুমের সোফায়  বসলো। কার্ডটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো, কার্ডটিতে আজ থেকে পাঁচদিন আগের তারিখ দেয়া। তবে কি শায়লা এখনো দেশে ? এখানে থেকে ডিভোর্স প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ! সম্ভবত রোমেল তাকে সব্রকম সহায়তা করছে। শিহাব কার্ডটি পড়তে লাগলো, শিহাব,তোমাদের নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন জানাই।তুমি তোমার মনের মত কাউকে খুঁজে পেয়ে তাকে জীবন সঙ্গী করতে যাচ্ছো এতে আমি যত কষ্টই পাইনা কেনো তবুও আমি আনন্দিত। তোমাকে আমি সুখী করতে পারিনি কিন্তু অন্য কারো মাঝে তুমি সুখ খুঁজে পেয়েছো, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। শুধু অনুরোধ আমার সন্তান, আমার রিয়াজকে তোমরা বাবামায়ের পূর্ণ স্নেহ দিয়ে বড় করবে। আমি দূর থেকে এতেই পূর্ণ হবো।
ডিভোর্স পেপারে দ্রুতই সাইন করে দিও। এরপর আমার ভিন্ন জীবনের শুরু,আর তা হতে পারে নতুন অন্য কারো সাথে অথবা অনন্ত জীবনে মহাকালের দিকে। তোমরা ভালো থেকো।রিশতিনা।
শিহাব বেশ কয়েকবার লেখাগুলো পড়লো।রিশতিনার জন্য মনটা কেঁদে উঠলো। তবে সে নিরুপায়।আর পিছনে গিরতে চায় না সে।তবে হ্যাঁ,রিশতিনার রিয়াজ,শিহাবের আরাফ আজ শায়লার সবচেয়ে আগ্রহের একজন। সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। শিহাব কার্ডটি প্যাকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বেড রুমে চলে এলো। সে ওয়ারড্রোবের উপরে তা রেখে বারান্দায় গিয়ে বসলো। শিহাব গভীর ভাবনায় রিশতিনার অতীত স্মৃতিতে হারিয়ে গেলো। 
শিহাবের রান্নাঘরের বিশাল জানালাটি শায়লার ভীষণ পছন্দের। সেদিকে তাকিয়ে আকাশে মেঘের ওড়াওড়ি দেখতে দেখতে শায়লা উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।শায়লার তার মায়ের কথা খুব মনে পড়তে লাগলো। শায়লার চোখ অজান্তেই জলে ভরে উঠলো। 
সে ভাবলো, কল করে মায়ের সাথে  কথা বলবে।নিশ্চয়ই তার জন্য খুব  কান্নাকাটি করছে। শায়লা নিজেকে সামলে নিলো।সে   চা বানানোর জন্য  চুলার দিকে এগিয়ে গেলো।কেটলিতে চায়ের পানি বসিয়ে ট্রেতে দুটো চায়ের কাপ সাজয়ে নিলো। ফুটন্ত পানিতে সামান্য  চিনি দিয়ে শায়লা টিব্যাগ পাশেই দেখতে পেলো। দুই কাপে দুটো টি ব্যাগ রেখে শায়লা গুড়া দুধের খোঁজে কিচেন ক্যাবিনেট খুলতেই তা সামনেই পেয়ে গেলো। শায়লা  তা নামিয়ে নিয়ে একটা চায়ের চামচ হাতে নিলো।  ফুতন্ত পানি টিব্যাগের কাপে ঢেলে নিয়ে শায়লা গুড়া দুধের কৌটা খুলতেই বেশ চমকে গেলো !  একটা গোলাপী রঙের কাগজ সেখানে ভাজ করে রাখা। শায়লা ভীষণ অবাক হলো ! সে কাগজটি দ্রুতই বের করে ভাঁজ খুলে নিলো। ভেতরে বেশ সুন্দর হাতের লেখায় একটা চিরকুট!  এবং তা শায়লাকে সম্বোধন করেই লেখা ! শায়লার চোখ বিস্ময়ে বিস্ফারিত হলো। সে গোগ্রাসে লেখাটি
পড়তে লাগলো। শায়লা, আমি রিশতিনা। লেখাটি পেয়ে হয়তো অবাক হচ্ছেন।এখানে এইভাবে পেয়ে। আপনাকে পেতে আমি আর কোন পথ খুঁজে পেলাম না।তাই এভাবে। আর শিহাবে চা খুব পছন্দের, আমি জানি, আপনাকে যখন চা বানাতে বলবে তখন এটা দেখতে পাবেন। সেদিন  জিগাতলার বাসায় আপনার উপস্থিতি আমি বুঝতে পেরেছি আর রোমেল ভাইয়ার কাছ থেকে আপনার নামটি জেনেছি। আপনাকে পেয়ে শিহাবের মন থেকে আমার নামটা মুছে গেছে,সে আমাকে ভুলে গেছে, আর এতেই আমি বুঝে নিয়েছি আপনার ভালোবাসার শক্তি আমার চেয়েও বেশী।তাই তো আমি নিশ্চিন্ত হলাম।তবে আপনাদের কাছে আমার রিয়াজ, মানে আপনাদের আরাফকে রেখে গেলাম।শুধু অনুরোধ রইল, রিয়াজকে মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসায় বড় করবেন। আমি যেখানেই থাকি আমি এতেই সুখ খুঁজে পাবো।আপনাদের নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন রইল।
শায়লা চিঠিটা পড়ে কিচ্ছুক্ষণ  একেবারে নীরব,নিথর  নির্বাক হয়ে রইল। নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলো।আরাফকে তার মায়ের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত করলো। পরক্ষণেই সে ভাবলো, কিন্তু সেওতো আরাফকে ভালোবাসে।আরাফের কথা মনে পড়তেই তার শিহাবের কথা মনে পড়লো !  তার চায়ের কথা খেয়াল হলো। শায়লা চিঠিটি ক্যাবিনেটের ড্রয়ারের ভিতর রেখে চায়ের ট্রে নিয়ে  ঘরে গিয়ে শিহাবকে খুঁজতে লাগলো। শিহাবকে ঘরে না পেয়ে সে বারান্দায় এগিয়ে যেতেই দেখলো,শিহাব বেশ বিষন্ন মুখে বারান্দায় বসে আছে। শায়লা চায়ের ট্রে টেবিলে রেখে, শিহাবের কাছে জানতে চাইলো,তার কিছু হয়েছে কিনা ? 
শিহাব গভীর ভাবনা থেকে এ জগতে ফিরে এলো। শায়লা তার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিতেই  শিহাব শায়লার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল।যেন বোবা কান্নায় ভেতরে কিছু একটা বয়ে যাচ্ছে। শায়লা বুঝতে পারছে না, তার ভেতরেও কেন এমন একই অনুভুতি বয়ে যাচ্ছে। সে শিহাবের মাথায় হাত বুলিয়ে অস্ফুট স্বরে জানতে চাইলো, তোমার কি হয়েছে ?  আমাকে কি বলা যায় ? তুমি কিছু একটা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছো। এবার শিহাব শায়লার কাছে তার মনের আবেগের কথাকতা যেন উগড়ে দিলো। শায়লা,  রিশতিনা অনুরোধ করেছে আমরা দুজন যেন আরাফকে বাবা মায়ের আদরে বড় করে তুলি। তাতেই সে সুখী হবে।
শায়লা বেশ অবাক হলো ! এ কথা শিহাব কিভাবে জানলো ? তবে কি শিহাব তার চিঠির কথা জানে ? তবুও শায়লা শিহাবের কাছে জানতে চাইলো, এ কথা কখন বলেছে ? সে কি এখন কল করেছিলো ? 
না, সে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে আর তোমার আমার নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে। 
শায়লা শিহাবের খুব  ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো।শিহাবের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করলো। তুমি ভেবোনা, আরাফ আমার কাছে  সন্তান হয়েই থাকবে। চা খেয়ে চলো, স্মরা আরাফকে আজই আমাদের কাছে নিয়ে আসি। আজ আমরা রাতে একসাথে বাইরে খাবো।আরাফকে নিয়ে সারাদিন ঘিরে বেড়াবো। আরাফকে অনেক খেলনা কিনে দিবো। নতুন পোশাক কিনে দিবো। শায়লার কথাগুলোতে শিহাব যেন প্রাণ ফিরে পেলো।তার চোখ সুখ স্বপ্নে চকচক কতে উঠলো!  সে শায়লার বুকের মাঝে নিজেকে  আড়াল করে নিলো।আরাফের মত সেও একজন শিশু হয়ে শায়লার মাঝে আশ্রয় খুঁজছে।
শায়লা চায়ের ট্রে রান্নাঘরে রেখে ক্যাবিনেটের ড্র‍্যার খুলে চিরকুটটিকে বলে এলো, রিশতিনা তোমার রিয়াজ, আজ থেকে আমারও রিয়াজ হয়ে, এক মূল্যবান  মানিক রতনের আদরে থাকবে। 
শিহাব নবশক্তি নিয়ে বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকতেই ওয়ারড্রোবের উপরে রাখা প্যাকেটটির দিকে তাকিয়ে, মনে গভীরে ভেবে নিলো, রিশতিনা আরাফকে নিয়ে তুমি একেবারেই ভেবোনা। শায়লা ওর জন্য চিরকাল মা হয়েই থাকবে। 
রান্নাঘর থেকে শায়লা বেরিয়ে এসে শিহাবকে ওয়ারড্রোবের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিহাবকে স্বাভাবিক কর‍্যে বলে উঠলো, তুমি কিন্তু এখন সেই মেরুন রঙের শার্টটি পড়বে।
শিহাবও নিজেকে ভাবনা থেকে সরিয়ে এনে বললো, আমরা এখন আর বাইক নিয়ে বেরুচ্ছি না। আমরা উবারে যাবো। আসার সময় আরাফ থাকবে আমাদের সাথে।তার কত জিনিসপত্র আনতে হবে।
শায়লা শিহাবের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরতেই শিহাব এক টানে শায়লাকে তার বুকের মাঝে মিশিয়ে নিলো।





                                            (সমাপ্ত)
                                            ধন্যবাদ

মমতা রায় চৌধুরী ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬৩




LOVE

কবি আমির হাসান মিলন এর কবিতা "নীল ইচ্ছে"




নীল ইচ্ছে

আমির হাসান মিলন 


কোন আলো কি এসেছিলো এখানে 
বিষণ্ণতার কুৎসিত অন্ধকার মাড়িয়ে ? 

জানি উত্তর পাবো না , 
হয়তো ইচ্ছে করেই বলবে না! 

চোখে আমার লাল রক্তের উদ্ভাস, 
আজ বুকের ভিতর অহরহ ভাঙ্গনের আওয়াজ   
যা কিছু বাঁচার প্রেরণা যোগাতো আমায় , 
সব কিছু বিলুপ্ত হবার পথে 
গলে গলে যাচ্ছে  নর্দমার দিকে। 

আজ নয়তো কাল মৃত্যু ধীরে ধীরে পাথরের মতো 
পর্বতের উঁচু শৃঙ্গ হতে গড়িয়ে পড়বে নিচে  
নৈশব্দের যাঁতাকলে মিশে যাবে জীবনের সব কোলাহল। 

তুমি জানলে না নীলাঞ্জনা , 
ওরাই কেঁদে-সেধে এই পরিণতি চেয়েছিলো।

কবি নাহিদা আক্তার রুনা এর কবিতা  "আমাকে পেয়েছিলো কেউ"





আমাকে পেয়েছিলো কেউ
নাহিদা আক্তার রুনা 



আমাকে পেয়েছিলো কেউ 
খুব করে পেয়েছিল বহুদিন, 
তোমার মতোই বলেছিল কেউ
রাতের পেঁচার ডাকে 
জ্বলে উঠা তারার সাক্ষীতে,
হাত দুটো ধরেছিলো কেউ।
ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠা ক্ষণ
সাক্ষী ছিলো ঝরাপাতার বন,
সাক্ষী ছিলো পৌষালী চাঁদের মায়া 
ঝাউগাছের পা ছোঁয়া ছায়া,
খুব করে উড়েছিলো আলো
ঝিঁঝি পোকারা গান গেয়ে গেলে
বুকের সেতার বাজে এলোমেলো,
সবুজ ঘাসের বিছানো গালিচায়
আমাকে পেয়েছিলো কেউ।
খুব করে পেয়েছিলো বহুরাত
তোমার মতোই ভাঙা সুরে, 
ঢেউয়ের মতোন পা চুমে দিয়ে
সমুদ্রের বুকে ডেকেছিলো কেউ।
অতঃপর দিগন্তের ওপার থেকে
কে নিলো তারে ডেকে,
পড়ে রইলো পৌষালি চাঁদ 
আর ভাঙা কিছু রাত,
পড়ে রইলো ঝরা পাতা ঝিঁঝিঁর ডাক
ট্রেনের সেই হুইসেল,বুকের সেতার।
তোমারই মতো বলেছিল কেউ 
আমৃত্যু আকাশের বুকে নীলের মতো
ধরে রাখার প্রতিজ্ঞা যতো,
প্রতিজ্ঞারা উড়ে গেছে পাখি হয়ে 
সুরভিত ক্ষণ পেরিয়ে।
সে কথা তুমি বলোনা আর 
এখনো চোখে সমুদ্রের ঢেউ,
আমাকে পেয়েছিলো কেউ
বহুদিন বহুরাত।

কবি রাজেশ কবিরাজ এর কবিতা "দুঃখও "




দুঃখও
রাজেশ কবিরাজ

আমি সব সময় দুঃখকে আপন ভেবেই 
ঠাঁই দিয়ে রেখেছি মনের আসনে,
এখন দেখি দুঃখ ও আমাকে পর ভেবে 
ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে অনেক দূরে !
আমি সেই একা আগের মতই -
নিজের সাথে কথা বলি আপন মনে ।
আসলেই আমার তো আপন বলে
কোন প্রিয় মানুষ ছিল না কোনদিন,
যে তারা দুঃখ দেবে আমাকে অতি যত্নে !
আমার বিপদে ছুটে আসবে তারা,
আমাকে বলবে কি হয়েছে তোমার ?
ভালোবেসে আমাকে নেবে বুকে টেনে !
আমার একটা পরিপূর্ণ দিন কাটে বোবার মত,
নিঃশব্দে  রাত পার হয়, হৃদয়ে 
জমে থাকা হাজার কষ্ট বরফের মতো বুকের ক্ষত ;
প্রকাশ করতে পারিনা সবার সামনে ।
সেই সহজ অধিকার আমার নেই ,  তাই 
তাকে অতি যত্নে লুকিয়ে রেখেছি খুব গোপনে ।

২৫ এপ্রিল ২০২২

কবি বিশ্বজিৎ রায় এর কবিতা "রহস্য"




রহস্য 

বিশ্বজিৎ রায় 



বৃষ্টিকে আড়াল করে একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে 
সারা সন্ধ্যা খুব গল্প করল সে, গান করল,
খুনশুটি করল, 
সবুজ পাতায় রঙিন খাবার সাজিয়ে
আপ্যায়ন করল আমাকে.... 



অন্য সুখের গল্প বলতে বলতে কখন যে আমাকে
ঘুম পাড়িয়ে দিল বুঝতেই পারিনি ---
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতে দেখলাম,
 চারপাশে থইথই জল, তার মাঝখানে 
 একটা ডোঙায় শুয়ে ভেসে আছি আমি....

কবি গাজী আনিস এর কবিতা "ভালবাসা পল্লবিত বৃক্ষের মতন..."




ভালবাসা পল্লবিত বৃক্ষের মতন...

গাজী আনিস



যখন মৃত্তিকা- 
ঘাস কিংবা ঘাসফুলের সাথে কথা বলি, 
হঠাৎ মনের অজান্তে তোমার নামই উচ্চারণ করি।

জানালার বাইরে- 
তাকিয়ে যখন বলতে চাই,হে পৃথিবী, 
তখন তোমার নাম বেজে ওঠে আমার কন্ঠস্বরে।

যখন টেবিলে
ঝুঁকে লিখি,বই পড়ি কিংবা শুয়ে থাকি, 
তখন তন্ময় হয়ে বারবার তোমাকেই আবৃত্তি করি।

যখন নিঃসঙ্গ
পথ হাঁটি কিংবা চা'খানায় দেই আড্ডা,
হঠাৎ হাওয়ায় সুতীব্র জেগে ওঠে তোমার মুখচ্ছবি। 

মনে হয় গোপনে
কিছু বলবে আমাকেই,তাইতো হই উৎকর্ণ,
অকস্মাৎ চকিতে চাতক হয় আমার প্রতিটি রোমকুপ।

কখনো গাছের
পাশে গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি নিভৃতে একাকী, 
অমাবস্যায়-পুর্ণিমার ঝকঝকে আবির মাখি দু'চোখে।

কবিতার কিছু
পঙক্তি নীরবে আউড়িয়ে শান্তি পেতে চাইলে,
কেবল প্রীতি নামই উচ্চারিত হয় হৃৎপিণ্ডের গভীরে। 

কি অসীম
তৃষ্ণায় হৃদয় ফেটে যায় তুমি বুঝবে না,
বুকের তলায় অহর্নিশ জ্বলছে প্রেম-নিয়ন বাতির মতো। 

নিঁভাজ চোখে
নির্ঘুম রাত্তিরে কিছু প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করে, 
তখন স্বপ্ন-ঘোরে জিজ্ঞেস করি-প্রীতি কেমন আছো ?

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬২




উপন্যাস 


টানাপোড়েন  ১৬২

আবার ভ্যাকসিন

মমতা রায়চৌধুরী




"অ্যাই শুভ্রা'
বড়দিকে হঠাৎ  স্টাফ রুমে চলে 
এসেছেন ।অনেকে বলাবলি করছে ।
নীলা বললো
', বড়দি কিছু বলবেন?'
'রেখাকে খুঁজছিলাম ।রেখা কোথায় জানো?'
'রেখা তো ক্লাসে গেল?'
'ও আচ্ছা।'
বড়দি যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললেন 'ক্লাস থেকে আসলে আমার সঙ্গে দেখা করতে ব"ল তো?'
'ঠিক আছে বড়দি।'
এর মধ্যে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল বড়দি চলে যাওয়ার সঙ্গে 
সঙ্গে । শুরু হয়ে গেল পিএনপিসি।বাববা "রেখাকে যেন চোখে হারান বড়দি।"
কথা বলতে বলতেই রেখা ক্লাস করে  ঢুকল স্টাফরুমে। তারপর হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিজে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো 'বাপরে কি গরম পড়েছে ।তার মধ্যে আজকে উপরের রুমে কোন ফ্যান ঘুরছে না ।মেয়েরা অস্থির হয়ে পড়ছে।'
এরমধ্যে নীলাদি বলল ', হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছ  আমার দিকটাও  বোধহয় গন্ডগোল হয়েছে। ফ্যান চলছিল না।'
এরমধ্যে শুভ্রা বললো 'রেখা তোমাকে বড়দি ডেকেছেন।'
"যাই একটু পরে  ।কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে গরমে।'
রেখা নিজের চেয়ারটায় বসলো ,বোতল থেকে ঢকঢক করে জল খেলো।
এরমধ্যে পঞ্চমী দি  এসে খবর দিল'রেখা দি বড়দি আপনাকে ডেকেছেন।'
"হ্যাঁ তুমি বল ,যাচ্ছি একটু পরে।"
"আচ্ছা।"
প্রজেক্ট খাতাগুলো দেখতে হবে ।এডুকেশন এর প্রজেক্ট খাতা পড়ে রয়েছে।
এরমধ্যে সন্ধ্যা দি আবার আসলো 'রেখাদি বড়দি আপনাকে ডেকেছেন।'
"বাপরে বাপ ,বললাম একটু পরে যাচ্ছি। তো আর সহ্য হচ্ছে না ।ঠিক আছে , চলো ,যাচ্ছি।'
"আচ্ছা বলেই সন্ধ্যাদি চলে গেল ।সন্ধ্যাদি চলে যাওয়ার সময় বেশ লম্বা চুলের বেণী দুলিয়ে দুলকি চালে চলে গেল।
রেখা উঠে বড়দির ঘরের কাছে গেল।
তারপর বলল" আসবো বড়দি দিদি?"
"এই রেখা তোমাকে আমার খুব দরকার।"
রেখা একগাল হেসে বলল "আমাকে দরকার?"
বড়দি হেসে বললেন "তোমাকে কখন থেকে খুঁজছি জানো! তোমাকে ভীষণ দরকার।"
"হ্যাঁ বলুন।"
রেখাকে খুব করে অনুরোধ করলেন।
জানি তুমি পরপর ভ্যাকসিন এর কাজগুলো করেছো ,তবুও তোমাকেই বলছি অনিন্দিতার কাজটা একটু করে দেবে?'
রেখা বড়দি কিছু বললে , না করতে পারে না। তাই বলল কেউ যদি করার না থাকে তাহলে তো করতেই হবে।'
বড়দি একগাল হেসে বললেন' আমি জানি তুমি না করবে না  কিন্তু দেখো আমি এবার তোমাকে বলতাম ই  না ।উপায় নেই,  তাই বললাম।'
"ঠিক আছে ,বড়দি চিন্তা করবেন না।"
বড়দি হেসে আবার বললেন' না ,না ,তুমি যেখানে বলেছে চিন্তা করবেন না ,সেখানে আমার চিন্তা কেন থাকবে ?আমি তো তোমার উপর অনেক ভরসা করি।"
'আপনি ভরসা করেন , বিশ্বাস করেন আমি যেন সেই ভরসার মর্যাদা রাখতে পারি দিদি।'
"তুমি এভাবে কথা ব'লো না ,তুমি নিশ্চয়ই পারবে।'
রেখা  বললো '' ঠিক আছে দিদি ,করে দেবো।'
'আচ্ছা রেখা তোমাকে একটা কথা বলি, তোমাকে সব কাজ করতে হবে না  যা কুপন রেডি করা ,নাম রেজিস্টার করা আজকেই শুভ্রা আর নীলা করে রাখবে ।কালকে শুধু তুমি এসে মেয়েদের নাম গুলো এন্ট্রি করে নেবে কোন মেয়েরা ভ্যাকসিন নিলোনা সেইগুলোকে নোট করবে, আর তাদের কে ফোন করে জানবে কেমন?'
'Ok দিদি। কিন্তু…?'
'আবার কিন্তু কেন রেখা, কিছু বলবে?'
বড়দি উৎসুকভরে  তাকিয়ে রইলেন রেখার দিকে' কিছু শুনবেন বলে। 
'মানে নীলাদি আর শুভ্রাকে এ কথাটা কে বলবে?'
', না, না তোমাকে কিছু বলতে হবে না ।আমি এক্ষুনি ডেকে বলে দিচ্ছি।'
বড়দি সঙ্গে সঙ্গে কলিং বেল বাজিয়ে সন্ধ্যাদিকে ডাকলেন।
সন্ধ্যাদি তার সেই দুলকি চালে বেণী দুলিয়ে এসে হাজির বড়দির কাছে।
'শোনো সন্ধ্যা, তুমি এক্ষুনি নীলা আর শুভ্রা কে ডেকে দাও।'
'আচ্ছা দিদি।'
'রেখা যাও তুমি গিয়ে বস স্টাফ রুমে।'
সন্ধ্যা দি স্টাফ রুমে এসে নীলাকে বলল 'দিদি আপনাদের দুজনকে বড়দি ডাকছেন। এক্ষুনি আসবেন।'
নীলা, শুভ্রা দুজনে একসঙ্গে বলল 'ঠিক আছে যাচ্ছি, তুমি যাও।'
নীলা ,শুভ্রা দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল ।এর মধ্যে রেখা এসে নিজের জায়গায় বসল।
যারা সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী রেখা তাই
 যাবার সময় রেখাকে টিপ্পনীকেটে দিয়ে বেরিয়ে গেল।' চল যাই, আবার আমাদের কি জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন দেখি। সবার তো রাজ ভাগ্য হয় না।'
কথাগুলো ব্যঙ্গ করে বলে দিয়ে দুজনে হাত ধরাধরি করে বড়দির ঘরের দিকে এগুলো।
'আসবো দিদি?'
বড়দি শুভ্রা ,নীলার দিকে তাকিয়ে বললেন' 'এসো।'
"আমাদেরকে ডেকেছেন?"
বড়দি ফাইলে মুখ গুঁজে রেখে বললেন' হ্যাঁ ডেকেছি। আগামীকাল ভ্যাকসিন আছে, তোমরা জানো। আর অনিন্দিতা এবসেন্ট থাকবে তাই অনিন্দিতার কাজগুলো তোমাদের দুজনকে করে দিতে হবে ।আজকের মধ্যেই কমপ্লিট করতে হবে।'
শুভ্রা আর নীলা দুজনেই একসঙ্গে বললো' কি কাজ দিদি।"
"তেমন কিছু নয় শুভ্রা যে ক্লাসের ক্লাস টিচার, সেই মেয়েদের নামগুলো সব তুলে নেবে আলাদা একটা খাতায় ।তারপর আর একজন কুপন কাটবে ।যাও যাও কুইক কাজ করো।'
নীলা আর শুভ্রা বড়দির ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্টাফ রুমে এসে কি গজ গজ করতে 
লাগল ।রেখাকে শুনিয়ে বলতে লাগলো' বললাম না ,আমাদের এত রাজ ভাগ্য নয়।'
'একদম ঠিক বলেছ নীলা দি।'
অনিন্দিতা মুখে যে কথাগুলো বলে ,খারাপ বলে না।
আসলে ওর মুখের সামনে বলে দেয় তো, তাই সহ্য হয় না।'
'তার মানে কাউকে  কাজটা করার জন্য বলেছিলেন বড়দি ,সে অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়েছে ।আমরা তো সেটা পারি না।'
শুভ্র বলল 'একদম ঠিক বলেছ।'
রেখা সব শুনে হজম করতে লাগল ।আসলে রেখার কিছু জবাব দিতে ইচ্ছে করলো 
না ।জবাবদিহি করলে নানা কথা উঠে আসবে সারাটা দিন মেজাজ বিগড়ে থাকবে। তারচেয়ে ওরা যা পারে বলে যাক। কিছু কিছু সময় চুপ করে থাকাই যুদ্ধে রণনীতি জেতার একটা কৌশল।
নীলা বললো 'শুভ্রা চল  অ্যাটেনডেন্স খাতাটা খুঁজি।"
"আমরা কেন খুঁজবো?'
নীলাদিঅবাক হয়ে বলল,' তাহলে?'
'সপ্তমীদিকে ডেকে খাতাটা খোঁজার কথা বলি।'

নীলা দি  বলল 'একদম ঠিক বলেছিস শুভ্রা।'
শুভ্রা উঠে গিয়ে সন্ধ্যা দিকে খোঁজ করতে গেল। দেখলো মিড ডে মিলের ঘরে। শুভ্রা সেখানে গিয়ে বলল' সন্ধ্যা দি ,ক্লাস এইট এর অ্যাটেনডেন্স খাতাটা খুঁজে আমাদেরকে দাও এক্ষুনি। আমরা লিখব।'
সন্ধ্যা দি বলে' ঠিক আছে আপনারা যান। আমি খুঁজে নিয়ে  আপনাদের কাছে দিয়ে আসছি।"
শুভ্রা আরবললো সোনার সঙ্গে চটি খাতা দেবে আর কিছু লুজ শিট ও দেবে।'

"আচ্ছা আচ্ছা দিয়ে আসব।"
শুভ্রা এসে নিজের জায়গায় বসল।
নীলাদি বলল কিরে পেলি খাতা,?"
"বলেছি।'
কথা শেষ না হতেই সন্ধ্যা দি এসে বলল খাতাগুলো দিয়ে এইযে দিদি খাতা রইল আর এই যে কয়েকটা লুজ শিট "
নীলা বলল 'তুই কি করবি কুপন কাটাবি, না নাম লিখবি?'
শুভ্রা বললো "যেটা বল।"
নীলা বললো'তাহলে তুই নাম লেখ।'
শুভ্রা বললো 'ওকে।'
নীলা বলল" কার কাজ কে করে?'
শুভ্রা বললো আমরা হচ্ছি শ্রমজীবী মানুষ খাটতে তো হবেই।'
"যারা অভিজাত্ত তাদেরকে তারা এসব কাজ করতে হবে না।"
রেখার মাথাটা ধরেছে তাই মাথা নিচু করে টেবিলে মাথা রেখে বসে আছে আর সব শুনছে ।
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো।
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল' হ্যালো।'
'হ্যাঁ ম্যাডাম,' আশা 'পত্রিকা থেকে বলছিলাম।'
"হ্যাঁ ,হ্যাঁ বলুন।'
আমরা আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই কালকে কি একবার সময় হবে?
রেখা বলল' না না কালকে একদমই সময় হবে না।'
ঠিক আছে তাহলে আপনি একটা আমাদের সময় দিন।
 "আপনারা রবিবার আসুন '।
ওকে।
ফোনটা কেটে দিয়ে রেখা ভাবতে লাগলো আশা পত্রিকার থেকে আসবে, রবিবারে কি কি অ্যারেঞ্জ করবে?"
"ঠিক আছে বাড়ি যাই। এ ব্যাপারে মনোজের সাথে কথা বলতে হবে।'
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এখনো সময় আছে কিছুক্ষণ লেখা যাবে।
বরং রেখা  লেখাটা লিখতে থাকুক….।
"বন্ধুত্ব বেঁচে থাক গভীর শ্রদ্ধায় পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ততায় আর  ভালোবাসায়।*"

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৯৯





ধারাবাহিক উপন্যাস 

শায়লা শিহাব কথন 

অলিখিত শর্ত (পর্ব ৯৯)

শামীমা আহমেদ 




এক ম্যারাথন সময় পেরিয়ে শায়লা ও শিহাবের মধুময় রাত কাটলো। সূর্যের আলোর টানে শায়লার আগে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে জেগেই সে চারপাশে তাকিয়ে এখন বেলা ঠিক কয়টা বাজছে তা  বুঝতে চেষ্টা করলো। মনে হচ্ছে অজানা কোন দ্বীপে রাত্রিযাপন শেষে তার ঘুম ভাঙলো। শায়লার চোখ পড়লো,দেখলো, এখনো বেডসাইড টেবিলে ল্যাম্পটি জ্বলছে। শায়লা তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামতে চাইলো।কিন্তু কিছু একটায় সে আটকে গেলো। শায়লা দেখলো ঘুমন্ত শিহাব তার দু'বাহুতে শায়লাকে বেঁধে রেখেছে। সেদিকে তাকাতেই তার শিহাবের কথা মনে হলো! 
তাইতো ! শিহাবতো গতকাল রাতে এই বাসাতেই ছিল।শায়লার একে একে গতরাতের সবকিছু মনে পড়তে লাগলো। শিহাব তখনো অতল ঘুমে একেবারে কাদা হয়ে আছে । শায়লা খুব আলতো করে একে একে  শিহাবের দুবাহুর বন্ধন ছাড়িয়ে  বিছানা থেকে নেমে এলো।নিজের পরনের পোশাক গুছিয়ে নিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দিনের সময়টা বুঝতে চেষ্টা করলো।বাইরে বেশ উজ্জ্বল সূর্যালোকে সবদিক একেবারে ঝকঝকে স্বচ্ছতায় ফুটে আছে। মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে শায়লা বুঝে নিলো বেশ অনেক আগেই সকাল হয়েছে। সে ল্যাম্পটি নিভিয়ে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দেয়াল ঘড়িতে দৃষ্টি দিতেই একেবারে চমকে উঠলো!  দুপুর বারোটার ঘন্টার কাঁটা একটার দিকে চলমান। শায়লা দ্রুত ওয়াশরুমের প্রস্তুতি নিলো।ফিরে এসেই সে শিহাবকে জাগাবে। বেচারা আরেকটু ঘুমিয়ে নিক।শিহাবের কথা মনে হতেই শায়লা বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। ঘি রঙা পাঞ্জাবিতে ঘুমন্ত শিহাবের মায়াভরা মুখটার দিকে শায়লা অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। মনে হলো অনেক প্রচন্ড এক যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে রাজ্যবীর জয়ের আনন্দে গভীর ঘুমে ডুবে আছে। শায়লার মনে পড়ে গেলো শিহাবের সাথে পরিচয়ের   প্রথমদিনের ক্ষণটি।নেভি ব্লু জিন্স শার্টে একখন্ড সাদা মেঘের মত চাঁদ মুখের উঁকি! বাইক থেকে নেমে আসতে প্রতি পদধাপে সেদিন শায়লা ভীষণ ভালোলাগায়
আছন্ন হয়ে গিয়েছিলো।দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে শায়লাকে তা পূর্ণ গ্রাস করে নেয়। তার অমায়িক ব্যবহার আর শায়লার প্রতি অমন সুন্দর ভদ্রতা বজায় রেখে চলা শায়লাকে তার প্রতি এক দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়েছিল। একটু একটু করে তাতে  ভালোবাসার জন্ম নেয়। আজ সেই শিহাব তার এতটা কাছে এতটা আপন হয়ে  ধর দিয়েছে।শায়লা নিজেকে একজন সুখী মানুষ ভেবে নিলো। আস্তে আস্তে খুব সন্তর্পণে  সে শিহাবের মুখের দিকে এগিয়ে গিয়ে কপালে আলতো করে তার ঠোঁট ছুয়ে দিল। এক অপার্থিব ভালো লাগা তার অন্তরের গভীরে গিয়ে জায়গা করে নিলো। শায়লা শিহাবকে না জাগিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতে হঠাৎ করে শিহাব চোখ মেলে তাকালো। শায়লা ভীষণ লজ্জা পেয়ে  গেলো। শিহাবের দুষ্ট চোখ শায়লাকে আরো কাছে চাইলে তাতে শায়লার সম্মতি না মেলায় শিহাব চট করে এক গাঢ় চুম্বনে শায়লাকে দখল করে নেয়।শায়লা শিকারীরজালে আটকে যাওয়া নিরীহ এক শশ শাবকের ন্যায় আত্মসমর্পণ করে নিলো। সময়ের বয়ে চলায় শিহাব স্বেচ্ছায় তার বাঁধন ছুটিয়ে শায়লাকে মুক্ত করলে তবেই শায়লা নিজের অবস্থানে ফিরে এলো। শায়লা  আর পিছনে না তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। সে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ারের জলধারার নিচে দাঁড়িয়ে রইল।পানির ঝর্ণাধারায় তার সারা দেহে  শিহাবের স্পর্শের শিহরন বয়ে গেলো।  অনেকটাক্ষণ সে চোখ  বন্ধ করে তা অবগাহনের সুখ শুষে নিলো।এক অনন্য সুখানুভূতিতে ডুবে বুঝে নিলো ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষণগুলো জীবনের সময়ের তুলনায় খুবই ক্ষনিকের। কেন তা সারাটা জীবনের প্রতিটি ক্ষন জুড়ে থাকে না ? কেন জীবনের সব অপ্রাপ্তিকে সরিয়ে বারবার একই আনন্দে বিভোর হওয়া যায় না। শায়লার দীর্ঘ সময় ওয়াশরুমে থাকায় শিহাবের খুব একা একা বোধ হতে লাগলো। সে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দরজায় নক করতেই শায়লার খেয়াল হলো অনেক সময় ধরেই সে নানান ভাবনায় ডুবে আছে।শিহাবকে একা রেখে এসে।সে সব গুছিয়ে দ্রুতই বেরিয়ে এলো।বাইরে শিহাব তার মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রিং হচ্ছে। শায়লা তাকিয়ে দেখলো,বুবলীর কল। সে কল রিসিভ করতেই শিহাব ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। বুবলীর  আক্রমণাত্মক  কথায় শায়লা একেবারে কুপোকাত হয়ে গেলো।শায়লা বুঝতে পারে না কখন বুবলী এতটা দক্ষ একজন বক্তা হয়ে উঠলো। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী এরা। যেমন স্পষ্টভাষী তেমনি প্রতিবাদী।
তোমাদের আজ কি ঘুম ভাঙবে ? নাকি একসাথে দুইদিন ঘুমাবে ? 
বুবলীর এমন প্রশ্নে শায়লা কি উত্তর দিবে কিছুই খুঁজে পেলো না।আসলে শায়লার তো খুব অল্প বয়সেই  জীবন সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। মন খুলে কথা বলা বা নিজের অধিকার আদায়ের কথা বলার মত সুযোগ তার হয়ে উঠেনি।তাইতো বুবলীকে পরাস্ত করা হয়ে উঠে না। এইতো,এখুনি বেরুচ্ছি,শায়লা শুধু এটুকুই বলতে পারলো।
শিহাব ভাইয়া কোথায় ? তার জন্য কি নাস্তা হবে জানিও। তোমরা দ্রুত এসে নাস্তা করো।একটু পরতো লাঞ্চের সময় হয়ে যাবে। আপু, তোমার জন্য ঐ কেনাকাটার মাঝে নতুন শাড়ি আছে সেটা পরে নিও। আপাতত শিহাব ভাইয়ার জন্য কিছু নতুন পোশাক আনা হয়েছে। রাহাত ভাইয়া কেনাকাটা করে এনেছে। দরজা খোল আমি নিয়ে আসছি। 
কথাগুলো বলেই  বুবলী কল রেখে দিলো।শায়লা তার শাড়িটি খুজতে লাগলো।শিহাব ওয়াশরুম থেকে টাওয়েল চাইতেই শায়লা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সে এখন কি করবে ? শিহাব মুখ বাড়িয়ে বললো,শায়লা তোমার চুলে বাধা টাওয়েলই আমার চলবে ওতে যে তোমার চুলের ঘ্রাণ আছে সেটাই মেখে নিবো। শায়লা ভেবে পায়না শিহাব কবে এত রোমান্টিক কথা শিখল ? কই আগেতো এমনটি শুনিনি। শায়লা এগিয়ে গিয়ে টাওয়েল দিতেই সে ফিসফিস করে বললো, শায়লা তোমাকে পেয়ে আমার নিজেকে খুব সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।তুমি কখনোই আমাকে ছেড়ে যেওনা। শায়লার চোখ জলে ভরে উঠলো। শায়লার প্রতি বারবার শিহাবের এই একই আকুতি। আমায় ছেড়ে যেওনা। আমায় ছেড়ে যেওনা।তার জীবন থেকে আচমকা  রিশতিনার চলে যাওয়া শিহাবের মনে হারানোর ভয় ঢুকে গেছে। বুবলী দরজায় নক করে  ভিতরে না ঢুকেই সে শিহাবের পোশাক, টাওয়েল দিয়ে গেলো। শায়লার  ভেজা চুল থেকে তখনো পানি ঝরছে। আর তাতে  বুবলীর মুচকি হাসি যেন শায়লার ভেতরে ভীষণ  এক টিপ্পনী কেটে গেলো! উফ! মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না।শীঘ্রই এটাকে জামাই বাড়ি পাঠাতে হবে। শিহাব বেরিয়ে এসে তার নতুন পোশাক  দেখে অবাক হলো! শায়লা জানালো,রাহাত সকালে কিনে এনেছে । গাঢ় সবুজ রংয়ের সিল্কের পাঞ্জাবী আর আদ্দি কাপড়ের চোস্ত পায়জামা আর নতুন চটি স্যান্ডেলে নতুন জামাই সাজে শিহাবকে দারুণ লাগছে। শায়লা মুগ্ধ হয়ে তা দেখছিলো। শিহাব আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো।বাহ! রাহাততো ঠিক মাপেই সব কিনেছে। শিহাব মনে মনে ভেবে নিলো, এখন তার উপরেও কিছু দ্বায়িত্ব বর্তে গেলো। শায়লা ইট রঙা কমলা শাড়ি খুব পরিপাটি করে পরে নিলো। সাথে হালকা জুয়েলারী। দরজায় বুবলীর ক্রমাগত কড়া নাড়ার শব্দে শায়লা  শিহাব বুঝে নিলো তাদের দ্রুত বেরুতে হবে। নিশ্চয়ই  সবাই অপেক্ষায়।  
দুজন বেরিয়ে আসতেই বুবলী এগিয়ে এলো। রাহাত ও বুবলী দুজনকে ড্রইং রুমে নিয়ে বাসালো। সেখানে কাজী সাহেবকে বিয়ে পড়ানোর জন্য আগে থেকেই বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে শায়লার মা, নিচ তলার রুহি খালার স্বামী আর বাড়ির অন্যান্য মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে শায়লা ও শিহাবের বিয়ে পড়ানো হলো।  সবাই মিষ্টি মুখ করে নব দম্পতির জন্য দোয়া করতেই শায়লার মা লায়লা খানম কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শিহাব শায়লার মায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে তাকে বিনীতভাবে জানালো, মা আপনি কাঁদবেন না। শায়লা  আর আমার জীবনে সবকিছু একটু অন্যভাবে ঘটলো। কারো কারো জীবনের চলা এভাবেই লেখা থাকে। সবকিছু প্রথাগত নিয়মে হয় না। আপনি দুঃখ করবেন না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। শায়লাকে আপনারা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন,আমার জীবনের সঙ্গী করেছেন, আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।কেননা শায়লার মত একজন মেয়েকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।আর শায়লার কাছে থেকে আমার ছোট্ট আরাফ তার মায়ের  আদর পাবে এর চেয়ে স্বর্গীয় সুখ আর কিছু নেই।  শিহাব শায়লার মাকে সালাম করলো,মা শিহাবের মাথায় হাত দিয়ে তাকে আশীর্বাদ জানালো।
শিহাবের ছেলে আরাফের কথা শুনে আত্মীয় স্বজনের  মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়লো ! ও তাহলে এই ছেলে আগে থেকে বিবাহিত ছিল আবার ছেলেও আছে ! সবার কোথায় যেন আনন্দ আবেগের ছন্দ পতন হলো। রাহাত আর বুবলী বিষয়টি টের পেয়ে শায়লা আর শিহাবকে সেখান থেকে সরিয়ে ডাইনিং এ নিয়ে এলো। ওরা চারজন একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো।  নাস্তা শেষে  শিহাব শায়লার মায়ের কাছে শায়লাকে তাদের ঝিগাতলার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলো। আর আজই সে আরাফকে সেখান থেকে নিয়ে আসবে আর ওরা তিনজন  আজ থেকেই শিহাবের বাসায় থাকবে।তাদের নতুন জীবনের জন্য শিহাব সবার কাছে দোয়া চাইল। শিহাব সবার কাছে কিছুই লুকাবে না। সে কখনোই আরাফকে বাদ দিয়ে তার জীবন ভাববে না। শিহাব চাইছে শায়লার  স্বজনেরা আজই আরাফের কথা জানবে এবং আরাফ এই বাড়িতে যাতায়াতের জন্য সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। আর সবকিছুই যে শায়লার সম্মতিতে হয়েছে শায়লাও সেটা স্বজনদের কাছে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলো। 
বাড়ির মুরুব্বিরা আরাফের ব্যাপারে  শায়লা আর শিহাবের এমন দৃঢ় মনোভাবে আর কিছু বলবার সাহস পেলো না।  সবার জীবন সহজ সরল গতিতে চলে না,কারো কারো জীবনের গতিপথ নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তবেই মোহনার ঠিকানা খুঁজে পায়,এমনি কথা বলে শিহাব সবাইকে এটাই বুঝিয়ে তাদের মনে জমা হওয়া প্রশ্নের সমাধান করে দিলো। শিহাবের অমায়িক ব্যবহার আর সশ্রদ্ধ আচরণে আত্মীয় স্বজনেরা বিমুগ্ধ হয়ে তাদের আশীর্বাদ জানাতে লাগলো। সবকিছু দেখে রুহি খালা লজ্জায় যেন নিজেকে লুকাতে চাইছে। বিষয়টি শায়লার দৃষ্টি এড়ায়নি। শায়লা নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে রুহি খালাকে সালাম করে তার দোয়া চাইতেই রুহি খালা তার ভুলের জন্য কান্না করে দিলেন।কিন্তু শায়লা ভেবে নিলো শত হলেও তিনি  তাদের পরিবারের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।

কবি আছিয়া হক এর কবিতা "তীব্র শীতের একটা রাত কিনতে চাই "






তীব্র শীতের একটা রাত কিনতে চাই 

আছিয়া হক  
(তিথি)


আমি কুয়াশায় মুড়ানো তীব্র শীতের একটা রাত
চড়া দামে কিনতে চাই পৌষ মাঘের কাছ হতে,
নবান্নের সুখ ঢোলে পড়ে হৃদয়ে স্বপ্ন উদিত হয়
বিষাদের স্বপ্ন ঢেউ তোলে বুকে তোমাকে পেতে।

কামনার দৃষ্টি ভরা দহন গুলো কান পেতে শুনি
তোমার কণ্ঠের সুর ভোরের পাখিদের গানে গানে,
সুরের তালে মাতাল করে দেয় জুড়ায় মন প্রাণ
নুড়ে পড়ি স্বপ্নের প্রান্তরে পাওয়া আত্মভিমানে।

বাসনা গুলো হারিয়ে গেছে সীমানার দুর দিগন্তে
অদৃশ্য মায়াজাল প্রেম জাগায় আঁখি মিলনে,
আলোর জ্যোতি খোঁজে জোসনা ছড়ানো চাঁদ
মেঘের রঙের পাগলামি দেখে কাঁদে নির্জনে।

প্রেমের আবেদন জানায় সন্ধাকাশের উজ্জ্বল তারা 
অকাল মৃত্যু হয়েছে যে প্রেমের ঝরা ফুলো তলে,
প্রথম প্রেম আলোড়ন সৃষ্টি করে নবযৌবনা সুখে
ঘন কুয়াশার শিশির কণা ঝরে দু- চোখের জলে।

অনন্ত প্রেম অন্তহীন অবিরাম কেন মনে জাগে
তীব্র শীতের স্নিগ্ধতায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে কাঁদে দুখে,
কুয়াশাচ্ছন্ন আঁধারে ছেয়ে আছে মোর আঙিনা
অবেলায় অবহেলায় গল্পকথা হয়ে মনের সুখে।

সৃজন করি সুপ্ত বাসনা পূর্ণতায় নিজেকে বিলাই
অবসরে বেদনারা কড়া নাড়ে মনের জানালায়,
ভোরের কলাফুলের শিশির মেখে উঠবো ফুটে
স্বপ্নচারিনী হয়ে তোমার মনের বনের মোহনায়।

জীবনের সঞ্চিত সমস্ত জমানো সুখ দুঃখ গুলো
হিসেব করিনি, কি পেলাম কি হারালাম এই আমি,
প্রতিদানে দিতে পারিনি তোমার পবিত্র প্রেমের মূল্য
পারবে কি ক্ষমা করে দিতে আমাকে ওগো তুমি।

ইসলাম রবির গদ্য




কবির গান
ইসলাম রবি 

যারা ভিতরের ভাষা প্রকাশ করে না ,,বা ঘটে যাওয়া ঘটনাকে সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে লুকিয়ে রেখে অন্য ভাষা , বিষয় প্রকাশ করে আমার মনে হয় তাঁরাই প্রকৃত কবির পথে আছে !

নামের আগে কবি টাইটেল দিলেই কবি হয় না ,,
লাইক কমেন্ট বেশি থাকলেই কবি হয় না ,,
লেখার সাথে আপেল ও গোল আলু  মার্কা  ছবি দিলেই কবি হওয়া যায় না ,, তখন উল্টা ঘটে লেখা বাদ দিয়ে মানুষ আপনার রুপের ওজন করে ... আর সেই বিখ্যাত উক্তি গুলো দেয় .. কপালের টিঁপ সুন্দর , হাতের ছুড়ি সুন্দর ,, শাড়িটা নতুন কিনলেন ? জায়গাটা ভীষণ সুন্দর... তাঁর চেয়ে বেশি সুন্দর আপনি আপু ব্রা ব্রা... ইত্যাদি !
আমার জানা মতে কবিদের লিষ্ট হল গরু ক্ষেত্র এখানে কোন বেদাবেদ বাদে সব রকমের সব বয়সের মানুষ থাকে আর সেই মানুষটা যদি হয় মেয়ে তাহলে আর কোন কথা নেই পুরুষ কবিরা চোখ বন্ধ করে রিকু গ্রহণ করে কারণ এক গবেষণায় দেখা গেছে নারী পুরুষ কবিরা বড় লুইচ্ছা এরা জাত বেদ মানে না এরা বয়সের তোয়াক্কা করে না !
এদের প্রায় সকলের নিজেদের একটা একটা গ্রুপ থাকবেই আর সে কারণেই এরা গ্রুপে মহা বীর মহারানী আর নিজেদের দেয়ালে রাস্তার ফকির ! 
আর হ্যা ফেইজবুকের অধিক নারী পুরুষ কবিরা জানেনা কোন লেখায় লাইক দেওয়া যায় কোন লেখায় কমেন্ট করা যায় ও আর এদের মেসেঞ্জারেও একটা করে গ্রুপ প্যানেল থাকবেই আর দিন নাই রাত নাই এদের বকর বকর চলতেই থাকবে কে কার প্রেমে পড়ছে কে কার ছেড়ে দিয়েছে আর শুভ সকাল রাত হাই হ্যালো ভুলেও কখনো বাদ যাবে না ..কথা সত্য আমরা এদেরকেই কবি বলে জানি আর গ্রুপ থেকে প্রতি সপ্তাহে একখানা কবিতার জন্য মেডেল ও সনদ থাকে বর্তমানে এরাই আমাদের এক শ্রেনীর কবি বড় বড় লেখদের সাথে একখানা ছবি তুললেই আপনিও বড় কবির সনদ পেয়ে গেলেন কবি ..! 
আরও একটা কথা না বললেই নয় অনেক আগে থেকেই খেয়াল করছি পুরুষ থেকে মহিলারা এখন বেশি হচ্ছে কারণ কি জানেন ? কারণ প্রকাশনা পুরুষদের লাইন নাই টাকার জন্য অথচ মহিলাদের কোন টাকা লাগে না বই বের করতে তাই বলতেই হয় প্রকাশানারা নারীর পূজারী ! এই জাতী ভাল লেখা দেখে না নারীর শরীর দেখে যা খুবি লজ্জা জনক !






(লেখকের ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা ! স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য  পত্রিকা প্রকাশক । প্রতিটি লেখকের লেখার আইনানুগভাবে দায়িত্ব নিতে দায়বদ্ধ নয় ।)

২৪ এপ্রিল ২০২২

কবি ডালিয়া মুখার্জী এর কবিতা "ইচ্ছে গুলো এলোমেলো"




ইচ্ছে গুলো এলোমেলো 
ডালিয়া মুখার্জী


আজ আবার কবিতা লিখতে ইচ্ছে হয়,
ইচ্ছে হয় নতুন করে বাঁচতে, 
ইচ্ছে হয় আবার মেঘ পাহাড়ের ঘন কুয়াশা তে মিশে যেতে,
ইচ্ছে হয় পৃথিবীর গন্ধটা বুক ভরে নিতে,
ইচ্ছে হয় শিমুল বনের রাঙা রাস্তা ধরে হাঁটতে,
ইচ্ছে হয় বৃষ্টির প্রতিটি ফোটতে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে
ইচ্ছে হয় পাহাড়ের সূর্যাস্ত দেখতে,
শেষ বিকেলে ঘরে ফিরে যাওয়া পাখিদের কলকলানি শুনতে,
ইচ্ছে হয় একভাবে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর গান শুনতে
ইচ্ছে হয় নীল আকাশে রাতের ধ্রুব তারা দেখতে,
বসন্তের হাতছানিতে নিজেকে খুজে নিতে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬১




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৬১
অনিন্দিতার বাচ্চা
মমতা রায়চৌধুরী

ও বাপরে বাপ আমি কিছুতেই পারছিনা।
কি হলো? হলো টা কি? আর আমার মান্থলি টিকিট কার্ড পাচ্ছি না।
দেখ ওখানে আছে তোমার যে ভুলোমন।
তুমি কি ব্যাক চেঞ্জ করেছিলে?
'হ্যাঁ করেছিলাম। তাতেও নেই।'
নেই মানে টা কি ?
মনোজ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে ড্রয়ার টা খুলল। ভালো করে জিনিসপত্র সরিয়ে সরিয়ে দেখলো, তারপর বললো "এই দেখো ,বলেই কার্ডটা রেখার  কাছে নিয়ে গিয়ে দেখালো।'
রেখা বলল 'আশ্চর্য আমি তো ড্রয়ার টাও খুঁজলাম।'
"ঠিক আছে, চলো ট্রেন পাবে না কিন্তু
 এর পর ।আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।'
"তোমার লেট হয়ে যাবে না।"
"না,না, আমার পরের  ট্রেনে গেলেও হবে আজকে।"
Ok
"ঠিক আছে তুমি গাড়িটা বের করো আমি দরজা লাগিয়ে আসছি।"
মনোজ গাড়ি বের করতে করতে চিৎকার করে বলল" আসার সময় বিস্কিট নিয়ে এসো, না হলে কিন্তু ছাড়া পাবে না ওদের কাছ থেকে।". 
রেখা হাতে করে বিস্কিট এনে আগে বাচ্চাগুলোকে দিল, মিলিকেও দিল।"
তারপর মনোজ রেখাকে  নিয়ে গাড়ি করে স্টেশন এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির খবর হয়ে গেল রেখা তাড়াতাড়ি ওভারব্রিজ অতিক্রম করে ট্রেন ধরার জন্য ছুটলো।
মনোজ বললো 'সাবধানে।'
রেখা বললো' তুমিও সাবধানে যেও।'
ওভারব্রিজ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেন ঢুকে গেল। রেখা  ট্রেনে উঠে বসলো। সে ভেবেই নিল
জায়গা পেলে ঘুমোতে ঘুমোতে একেবারে কৃষ্ণনগর জংশন।
অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে জায়গা না পেলেও কিছু দুরে গিয়ে জায়গা পেল। রেখা সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজলো।
গাড়ি কৃষ্ণনগর জংশন এর পৌঁছালে ঘুম ভাঙলো তারপর রেখা টোটো ধরে স্কুলে পৌঁছালো।
অ্যাটেনডেন্স  দিতে গিয়ে রেখা দেখল "বড়দি মুচকি মুচকি হাসছেন।"
রেখা ভাবল "তার ড্রেসে কি কিছু অবিন্যস্ত ভাব ধরা পড়েছে ?"
বড়দি সেটা বুঝতে পেরে বললেন' না ,না ,আমি হাসছি ।তুমি দেখছি নির্দিষ্ট টাইমেই এসে পৌঁছে গেছে এইজন্য।"
রেখা বলল "ও আচ্ছা ।না ,দিদি কি করবো খামোকা লেট করে ।আমার যদি সত্যিই খুব অসুবিধে থাকতো, তাহলে নয় ঠিক ছিল।
ইচ্ছে করে শুধু সুবিধা নেব বোলে দেরি করে আসব, সেই মানসিকতা আমার নেই।'
বড়দি বললেন "আমি জানি তা হলেও যেহেতু কালকে অত রাত্রে ফিরেছো তো ,তাই তোমাকে বলেছিলাম।এজন্যই তো তোমাকে এত ভালো লাগে।'
রেখা বলল' আপনি আমাকে স্নেহ করেন তাই।"
এরপর বড়দি একটু চিন্তার মধ্যে ঢুকে গেলেন।
রেখা বলল 'ও বড়দি কিছু সমস্যা?'
বড়দি রেখার দিকে তাকিয়ে বললেন' কিছু বলছো?'
'না মানে আপনি চুপ করে গেলেন তো তাই।"
বড়দি বললেন "ভাবছি কাল থেকে আবার ভ্যাকসিন শুরু হয়ে যাচ্ছে।'
"এবার কাদের বড়দি?'
"ওই যে 12 থেকে 15 বছর বয়সের মধ্যে।"
"ও আচ্ছা, আচ্ছা।'
"কিন্তু দেখো অনিন্দিতা তো ক্লাস এইট এর ক্লাস টিচার । ও তো আসছেই না।
"ওকে তো অ্যাটেনডেন্স শিট তৈরি করতে হবে। কুপন তৈরি করতে হবে।এই কাজগুলো তো করতে হবে।"
"ওর ছেলের খবর কি দিদি?"
ওই তো ফোন করেছিল বলল" দিদি, আমরা এসএসকেএম হসপিটাল এ নিওনেটোলজি বিভাগে দেখাচ্ছি।"
"ও আচ্ছা তারমানে কতগুলো  টেস্ট হবে তো?'
'হ্যাঁ ,সেরকমই তো বললো।"
"প্রথম দিন নাকি জেনারেল স্টাডিজ হয়েছে বাচ্চার ।অবশ্য বাবা -মার ও কাউন্সেলিং হচ্ছে।
গতকাল নাকি বাচ্চার সেন্স এর উপর ও টেস্ট হয়েছে।'
"ও বাবা তাই?"
এখনো ও কে  কিছুদিন বাড়িতে থাকতে হবে। ও সিসিএল এর জন্য অ্যাপ্লিকেশনও দিয়েছে।
ও তাই বুঝি?"
"এখন বাচ্চার কি কিছু ইমপ্রুভ বুঝতে পারছে?"
"ওই তো ,ও যেটা বলেছে যে ,এটা আপনাদের দোষ । এরকম হয়েছে আপনাদের জন্যই। বাচ্চা এমনি সুস্থ স্বাভাবিক আছে কিন্তু কথা বলার শুরুতে যে কোশ্চেনগুলো বাচ্চার ভেতরে লক্ষ্য করা যায় সেগুলো ও করেছিল কিনা ?"
"তখন ওরা নাকি বলেছে মানে?'
*মানে বাচ্চা কোন কিছুর মধ্যে ইনভলভ হয়ে ইন্টারেকশন করতে চেয়েছে কিনা মা-বাবার সঙ্গে?"
তখন অনিন্দিতা আর ওর বর নাকি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।
তারপর বলেছিল যে ওর একটা ভিডিও করে রেখেছে এসবের।
বাবুরা নাকি একটু কৌতূহলী হয়েছিলেন। অনীনদিতা বলেছে ও যে ভিডিও করে রেখেছিল 
সেগুলো ফোনের থেকে দেখায়। বাচ্চা কোন বয়সে ও ঝাঁটা নিয়ে ঝাঁট দিতে গেছে। মানে ও সময় বাচ্চা ইন্টারেকশন করতে 
চেয়েছে বাবা-মায়ের সাথে ।কিন্তু সে সময় মা-বাবা তাকে গুরুত্ব দেয় নি ।'
মা-বাবা ও কর্ম ব্যস্ত মানুষ ছেলের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি শুধু খাওয়ানো ,ঘুমপাড়ানো ছাড়া।'
ডাক্তারবাবুরা বলছেন তাই হেলদি হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাচ্চার এই গ্রোথ টা ঠিক হয়নি।
তখন নাকি অনিন্দিতা এরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।
তখন ডাক্তার বাবু বলেছেন চিন্তার কোন কারণ নেই একটু দেরি হয়েছে কিন্তু খুব দেরি হয়নি এখন ধৈর্য ধরে বাচ্চার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।
ডাক্তারবাবুরা যেগুলো বলছে সেগুলো ভালো করে ফলো করতে হবে।
কিরকম দিদি?
আরো জিজ্ঞেস করেছেন ডাক্তারবাবুরা যে "মোবাইল নিয়ে বসে থাকে কিনা বাচ্চা?
'অনিন্দিতা বলেছে "হ্যাঁ মোবাইল ছাড়া খাবে না তাছাড়া মোবাইলটা ইচ্ছে করে বাচ্চাকে এক সময় ওরাই দিয়েছে কাজের সুবিধার্থে।'
ডাক্তারবাবুরা বলেছেন মোবাইলে একদম দেয়া যাবেনা বাচ্চাকে তাতে সে যতই কান্নাকাটি করুক বা খাবার দেওয়া না খাক।
রেখা বলল 'কী সাংঘাতিক?'
তারপর ডাক্তারবাবুরা বলেছেন ও আগে যে খেলনা গুলো দিয়ে খেলত সেগুলো একটাও দেয়া যাবে না ।ডাক্তারবাবুরা যে সমস্ত খেলনার কথা বলবেন শুধু সেইগুলোকে কিনে দেয়া হবে আর ওর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কথা বলতে হবে ।মানে নিজেরাই কথা বলতে হবে নিজেরাই উত্তর দিতে হবে এবং ওটা দেখে দেখেই  ও শিখবে।'
কি অদ্ভুত ব্যাপার হলো দিদি দেখুন যে বাচ্চার স্বাভাবিক ছন্দে সমস্ত কিছু শিখতে চেষ্টা করছিল সেটা কে ওরা গুরুত্বই দেয় নি।
বড়দি বললেন 'আসলে সত্যি সত্যিই মা বাবারাই কিন্তু বাচ্চার ভালো করতে গিয়ে কখন যে খারাপ করে ফেলেন সেটা বুঝতেও পারেন না।
একেবারে স্লো পয়জন' এর মত কাজ করে।
যাই হোক ওর বাচ্চা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনাই করি।
ঠিক বলেছ রেখা।

সেজন্য একটু চিন্তিত আছি ওর কাজগুলো কাউকে না তো কাউকে করতেই হবে।
আপনি এত চিন্তা করছেন কেন আমি তো আছি তো?
সে আমি জানি রেখা কিন্তু তবুও ভাবছি আবার sযদি ওয়ার্কশপ হয় তাতেও তো তোমাকেই যেতে চলো রেখার লাইনের জন্য ধার করা সবাইকে চলো রেখার লাইনের জন্য মেয়েদের সঠিক ভাবে দাঁড় করিয়ে দাও হবে।

তাই এই ক্ষেত্রে আমি তোমাকে একটু ছাড় দিতে চাইছি।
আর কোন টিচার ফাঁকা পাওয়া যায়।
গান তুই যদি না পাওয়া যায় তখন তো তোমাকে পাঠাতেই হবে।
আর অনিন্দিতাকে যেহেতু কিছুদিন বাচ্চার টেক কেয়ার করতে হবে তাই ভাবছি ওঁকে কিছুদিন সি সি এল দিয়ে দিতে হবে।
দেখো পেয়ার লাইনের ঘন্টা পড়তে চলেছে কজন টিচার পেয়ার লাইনে দাঁড়ায়।
"এজন্যই কঠোর নিয়ম জারি করতে 
 রেখা বলল ঠিক তাই একজন দুজনের জন্যে বাকি সবার উপর করতে এসে পড়ে।
 মেয়েদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে সবার কাছে গিয়ে দেখতে হবে স্কুল ইউনিফর্ম পড়েছে কিনা?
ওকে দিদি।
"আর দেখো না আজকে টিচার লেট করে আসলে লেট মার্ক খাইয়ে দেবো আমি।"
মেয়েরা সব জাতীয় সঙ্গীত শুরু করো।
তারপর যে যার রুমে চলে যাও
রেখার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ অনিন্দিতা আর ওর বাচ্চার কথাই ঘুরপাক খেতে লাগল।
লেখার একটা প্রিয় গান মনে পড়ে গেল
"যার কথা ভাসে মেঘলা বাতাসে ,তবু সে দূরে থাক ,সে কথা মানে না…। "গানটা বার বার মনে পড়ছে রেখার। অনিন্দিতা সঙ্গে মনের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে কিন্তু তবুও অনিন্দিতা আর ওর বাচ্চার ভালো হোক সেটাই চায় বরাবর।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৯৮





ধারাবাহিক উপন্যাস

 
শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৯৮)
শামীমা আহমেদ 



শিহাব খুবই ঠান্ডা মাথায় একমনে রোমেলের কথাগুলো  শুনে নিলো। সে বুঝতে পারছে না এর মাঝে কতটা সত্যতা আছে বা আদৌ তা সত্য কিনা। বেশ কিছুদিন যাবৎ রোমেল শিহাবকে ভীষণভাবে  অনুসরণ করছে আর রিশতিনারকে নানান বুদ্ধি পরামর্শ  দিয়ে যাচ্ছে।  সে খুবই চেষ্টায় ছিল তার আর রিশতিনার দুরত্বটা মিটিয়ে দিতে  কিন্তু শিহাব আর রিশতিনার মাঝে যে বোঝাপড়া হয়েছে
তাতো  রোমেলের অজানা ।  রিশতিনা বিনা আপত্তিতেই  চলে গেছে। হ্যাঁ,সে স্বেচ্ছায় এসেছিল কিন্তু নানান পারিপার্শ্বিক কারণে শিহাবের তাকে গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। আজ যদি সে  কোন সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা সে তার নিজ দ্বায়িত্বেই নিবে। এব্যাপারে শিহাব মোটেই উদ্বিগ্ন হলো না। আর হয়েও কোন লাভ হবে না। শায়লার কথা রিশতিনা জেনেছেও। খুব দ্রুতই শিহাব রিশতিনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়ে শায়লার সাথে বিয়েটা সেরে নিবে। শায়লাকে নিয়ে আজ সে যতদূর এসেছে সেখান থেকে সে আর ফিরে যাবে না। আর এজন্য যা ফেইস করতে হয় নির্বিঘ্নে তা করবে। আর শায়লার  প্রতি তার ভরসাও আছে। সে তাকে কোনদিনই ভুল বুঝবে না।রাহাত আর বুবলী শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো বা ফোনে কি খবর এলো,এই নিয়ে দুজনেই ভীত দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে। শিহাব নিজের মাঝে ফিরে এলো। সে হঠাৎ  অনুভব করলো শায়লা তার হাত ধরে আছে। শিহাব শায়লার দিকে তাকাতেই শায়লা তার চোখের ভাষায় শিহাবের মনে সাহস সঞ্চার করলো। শিহাব দেখলো, হলুদ শাড়ি আর কাঁচা ফুলের গহনায় শায়লাকে অপূর্ব লাগছে। কাঁচা ফুলের সৌরভের মাদকতায় শিহাব একেবারে বুঁদ হয়ে গেলো। সে শায়লার আরো কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো। শায়লা টের পেলেও নিশ্চুপ রইল।
শিহাব উপরে যাওয়ার জন্য এগুতেই রাহাত আর বুবলীর যেন সকল শংকা কেটে গেলো।
ওরা ফোনের কথা কিছু আর জানতে চাইলো না। শায়লা আর শিহাবকে দুইপাশে দুজন সংগী করে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো। শায়লার চলায় বারবার শিহাবের স্পর্শ শায়লার ভেতরে রক্তের এক উন্মাদনা খেলে গেলো। দুজনে ধীর পায়ে  সিঁড়ি পেরুতে লাগলো। শিহাব বেশ শক্ত করে শায়লার হাত ধরে আছে।এমন অচেনা যায়গায় অচেনা পরিবেশে শুধু শায়লাই ভরসা।
দুজনকে ছাদে নিয়ে স্টেজে বসানো হতেই
শিশু কিশোরদের আনন্দ যেন আর ধরে না। মুরুব্বিরা এমন নায়কের মত জামাইকে দেখে যারপর নাই অত্যাশ্চর্য হয়ে যায়! নিজের মেয়ের বিয়ের জন্য মনে মনে এমন একটা পাত্র পেতেই হবে মনে মনে তা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। শায়লার মা অসুস্থ বোধ করায় তিনি নিজের ঘরেই রইলেন। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী  রুহি খালা যত্নের কোন ত্রুটি করছেন না। নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত করছেন। একে একে মুরব্বীরা তাদের হলুদ ছুইয়ে দোয়া করে দিলেন। বুবলী আর রাহাত সবাইকে আপ্যায়নে ব্যস্ত হলেন। রাহাত বাবুর্চিদের আজ আর যেতে দেয়নি।এত রাতেও তাদের রান্না প্রস্তুত। এমন মধ্যরাতে এমন একটি আনন্দক্ষণ তাদের জন্য অপেক্ষা  করছে সেটা কেউই জানতো না। সবাই তাই এই আচমকা আনন্দটা একেবারে লুফে নিতে চাইছে। শায়লা আর শিহাবের হলুদ ছুঁইয়ে বুবলী দুজনের মুখে কিছু খাবার তুলে দিলো। শিহাবের মনেই পড়ছে না শেষ কখন সে খাবার খেয়েছে। শায়লারও সারাদিন নানান ঘাত প্রতিঘাতে  একেবারেই খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলেছিল। বুবলী দেখলো রাহাত স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার অশ্রুসিক্ত চোখ।অবশেষে  সে, আপু আর শিহাব ভাইয়াকে এক করতে পারলো।এতদিন সে ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছিল।আজ সব উৎকন্ঠার অবসান হলো।
বেশ অনেক রাত হয়েছে।আনন্দপর্ব আর খানাপিনার পর কেউ আর জেগে  থাকতে চাইছে না। শিশুরাও হুড়োহুড়ি করে বেশ ক্লান্ত। একে একে সবাই নিচে নেমে গেলো। রাহাত এই সুন্দর মূহুর্তের কিছু ছবি তুলে রাখলো।রাহাত দেখলো, ঘি রঙা পাঞ্জাবীতে শিহাবের আরো যেন আভিজাত্য ফুটে উঠেছে। শায়লা আর শিহাবকে  স্টেজ  থেকে নামিয়ে বুবলী তাদের নিচে নিয়ে যেতে চাইলো। 
কিন্তু শিহাব এই খোলা ছাদে শায়লাকে নিয়ে আরো কিছুক্ষন থাকতে চাইলো। তাদের সম্মতি জানাতেই বোনের জন্য রাহাতের কান্না যেন বুক ফেটে বেরিয়ে এলো।  শায়লাও আবেগ আপ্লুত হয়ে ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। রাহাত শুধু একটা কথাই বলছে,আপু,তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আজ শায়লা রাহাতের সবকিছু ভুলে স্নেহের পরশে জড়িয়ে নিলো। ভাই বোনের এমন মিলন মূহুর্তে রাহাতকে নিয়ে  শিহাবের মনের সব কষ্ট  অভিমান মুছে গেলো। শিহাব শায়লাকে আর রাহাতকে সান্ত্বনা দিয়ে  ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে খুব শক্ত করে শায়লার হাত ধরে নিলো। রাহাত ভেবে নিলো, কাল সকালেই কাজী ডেকে আপু আর শিহাব ভাইয়ার বিয়েটা সেরে নিবে। 
রাহাত আর বুবলী নিচে নেমে  গেলো। সিঁড়িতে বুবলী পিছন থেকে রাহাতের হাত ধরতেই রাহাত বিস্মিত হয়ে চমকে উঠলো!  বুবলীর চোখ জলে ভরা,সে তার হাতের আংটিটা দেখিয়ে রাহাতকে বললো, রাহাত ভাইয়া আমার আঙুলের এই আংটিটা তোমার আমার মাঝে যোজন যোজন ফারাক করে দিলো। রাহাত একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে, কেউ দেখে ফেলবার ভয়ে এক ঝটকায় বুবলীর হাত ছাড়িয়ে দ্রুত তার নিজের ঘরে ঢুকে গেলো। বুবলী সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একা একা নীরবে চোখের জল ফেললো। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে নিচে নেমে এলো।
 ছাদে শিহাব এবার যেন বাধ ভাঙা ভালোবাসায় শায়লাকে জড়িয়ে ধরলো। শায়লাও যেন নিজেকে বিগলিত করে শিহাবের বিশাল বুকে মুখ গুজে দিলো। কাঁচা ফুলের ঘ্রাণ আর নারী দেহের তীব্র টানে বহুদিনের অপ্রাপ্তির চাওয়া যেন সবটা গ্রাস করতে চাইছে। কতটা ক্ষণ এভাবেই রইল। ক্রমশ শিহাবের ভেতর শায়লাকে একান্তে পাওয়ার বাসনা উঁকি দিচ্ছিল। দুজনে এভাবেই মনের যত কষ্ট  হতাশা ছিল সব যেন ধুয়ে মুছে নিলো। শিহাব  বিড়বিড় করে বলে চললো,আজ সারাটা দিন তোমাকে হারানোর আশংকায় প্রতিটা ক্ষণ কি যে এক অস্থিরতায়  কেটেছে।যেন তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি এমন দূর্ভাবনা গ্রাস করছিলো। শায়লা এবার মুখ তুলে বললো,না শিহাব,আমি তোমায় রেখে  থেকে কোথাও হারাবো না।আমি আজীবনের জন্য তোমার। 
এভাবেই দুজনে কিছুটা সময় পার করতেই শিহাবের ফোন বেজে উঠলো !  শায়লা  ভীত হয়ে গেলো। আবার কি সেই অনাকাংখিত কল ? শায়লা শিহাবকে এবার খাঁমচে ধরলো। শিহাব পকেট থেকে মোবাইল বের করে  হাতে নিলো। সে স্ক্রিনে  তাকাতেই দেখতে পেল রাহাতের কল।শিহাব দ্রুত রিসিভ করে হ্যালো  বলতেই ওপ্রান্তে নারী কন্ঠ ভেসে এলো। বুবলীর উপদেশ ভেসে এলো। শিহাব ভাইয়া,এতরাতে আপনাদের দুজনের ছাদে থাকা ঠিক হচ্ছে না।আপনাদের গায়ে হলুদ লেগেছে।আপনারা এখন বিয়ের বর কনে। এখন নিজেদের ঘরে চলে আসাই ভালো। শিহাব ভাবলো, মাঝে মাঝে ছোটদের এমন শাসন ভালোই লাগে।
শায়লা  জিজ্ঞাসু চোখের প্রশ্নে শিহাব জানালো, বুবলী আমাদের নিচে নিজেদের রুমে যেতে বলছে।এবার শায়লা লজ্জায় রাঙা  হয়ে গেলো। সিঁড়িতে বুবলীর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যেতেই শায়লা শিহাবের থেকে নিজেকে  ছাড়িয়ে নিলো। বুবলী বলে উঠলো, চলো,দুজন নিচে চলো। তোমাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে আমি একটু ঘুমাবো।উফ! সারাদিন দুজনে যা দেখালে না! সিনেমাকেও হার মানায়।বাপরে! এমন কঠিন প্রেম! চলো চলো, আর কোন টেনশন না। চলো,নিচে চলো, আর কতদিন এইভাবে খোলা যায়গায় লুকাছাপা প্রেম করবে ? বলেই বুবলী শায়লাকে একরকম টেনে নিচে নিয়ে  যেতে চাইছে।কিন্তু শায়লার  আড়ষ্টতা যেন কাটছে না। তবে শিহাব একেবারেই যথা আজ্ঞা রুপে দণ্ডায়মান হয়ে রইল যেন, বুবলীর সবকিছু সে একবাক্যে মেনে নিতে রাজী আছে। এবার বুবলীর চোখ গেলো শিহাবের দিকে, সে ঝনঝন করে বলে উঠলো, শিহাব ভাইয়া,আপনাকে দেখে আমার ভীষণ হিংসা হচ্ছে।কেন আপনার সাথে আমার আগে দেখা হলো না।ইস! গ্রেট মিস! কি আর করা! এখন দুলাভাই ডেকে মনকে সান্ত্বনা দিতে হবে। শায়লা লাজুকতায় নুইয়ে যাচ্ছে যেন।
শিহাব  বললো, তাতে কি ? দুঃখ করোনা।তোমরা দুই বোন আমাকে ভাগাভাগি করে নিতে পারো। বুবলী রীতিমতো মাথা চাপড়ে বললো,মাত্থা খারাপ।শায়লা আপু আমাকে মেরেই ফেলবে।না বাবা, যার অধিকার,শুধু সেই থাকুক।আমি এমনিতেই ভালো আছি।
শিহাবের এখন মনটা খুবই ভালো লাগছে।
বুবলী তার হাতের আংটি দেখিয়ে বললো, এই যে একজন বুকিং দিয়ে রেখেছে।আপনি চাইলেও নো ভ্যাকেন্সি,বলেই বুবলী খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।  বুবলীর দুষ্টুমিটা শিহাব বেশ উপভোগ  করছে। 
এবার শায়লা  একপ্রকার হ্যাচকা টানে দুজনকে নিচে নিয়ে এলো। শায়লার ঘরের সামনে এসে বুবলী শায়লার উদ্দেশ্য বললো,কই শায়লা আপু,তোমার অতিথিকে তুমি নিজেই ঘরে নাও। আমি আর তোমাদের মাঝে থাকতে চাইছি না। বুবলী দরজা খুলে দিতেই শায়লা ঘরে ঢুকলো।  এই ঘরে শায়লা শিহাবকে মনে মনে অনেকদিন কাছে চেয়েছে। আজ তা সত্য হলো।শায়লার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না স্বপ্ন এভাবে সত্যি হতে পারে!  শায়লা দেখলো তার পুরো খাট কাঁচা ফুল দিয়ে ঢেকে রাখা।যেন একটা ফুলের ঘর বানিয়ে রাখা।এরই মাঝে তবে বুবলী আর রাহাত এই কাজ করিয়েছে।শায়লার অনেক পুরনো অভ্যাস ঘরে ঢুকেই দেয়াল ঘড়িতে চোখ রাখা।সে অবাক হলো,রাত চারটা বাজছে" ভোর হতে আর বেশ্য দেরি নেই। সে  শিহাবকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে বিছানায় এনে বসালো। শায়লার আজ নিজের ঘর নিজেরই অচেনা লাগছে। ঘর ভরা বিয়ের কেনাকাটা, শায়লার বিয়ের শাড়ি, নতুন জামাইয়ের জন্য শেরওয়ানী,পাগড়ি,নাগরা, সব পরিপাটি করে গোছানো।  শিহাব এক টানে শায়লাকে কাছে টেনে নিলো। শায়লা দেখলো,বুবলী টেবিলে অনেক খাবার রেখে গেছে। এত্তটুকু মেয়ে কিভাবে যে এত সব গুছিয়ে করছে ! আজ বুবলী না হলে,এত সুন্দর একটা স্বর্গীয় আয়োজন রাহাতের পক্ষে একা কোনদিনই সম্ভব হতো না। ভাবতেই হঠাৎ  দরজায় নক করা শব্দে দুজনে বিছিন্ন হয়ে গেলো। বাইরে থেকে বুবলী বলে উঠলো, এই তোমরাতো ঘরের দরজা লাগাতেই ভুলে গেছো। বলেই তার সেকি খিলখিলিয়ে হাসি! এবার শায়লা  বড় বোনের রূপে এগিয়ে এলো,দুষ্ট কোথাকার! বাইরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে! বুবলীর দুষ্টুমি ভরা প্রতি উত্তরে বলে উঠলো, আমার বয়েই গেছে! তোমরা দরজা খোলা রাখছো,আমি তা দেখিয়ে দিলাম,আর আমি পারছি না।এবার গেলাম।এ কথা বলে চলে যেতেই শায়লা এগিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।  এবার আর শিহাব নিজেকে শান্ত খোকা বাবু করে ধরে রাখলো না। চট করে উঠে  এসে শায়লাকে একটানে বিছানায় নিয়ে এলো। শায়লা আর নিজেকে শাসনে না রেখে শিহাবের কাছে নিজেকে সঁপে দিলো। টেবিল ল্যাম্পের আলো আঁধারিতে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি হলো।খাটের চারদিকে গোলাপ বেস্টিত আবরণে  চমৎকার সুঘ্রাণে দুজনে ডুবে রইলো। অনন্তকালের তৃষ্ণার  আজ পিপাসা মিটবে। কাল সকালের এক নতুন ভোরে হবে আগামীর  স্বপ্ন বুনন।পিছনে পড়ে থাকবে দুজনে দুজনাকে  পাওয়া না পাওয়ার সেই দোলাচলে ডুবে থাকার ইতিহাস। আজ  শিহাব তার নিজেরই আরোপিত অলিখিত শর্ত নিজেই ভেঙে চিরদিনের জন্য শায়লাকে আপন করে পেলো।


চলবে...