২৫ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬২




উপন্যাস 


টানাপোড়েন  ১৬২

আবার ভ্যাকসিন

মমতা রায়চৌধুরী




"অ্যাই শুভ্রা'
বড়দিকে হঠাৎ  স্টাফ রুমে চলে 
এসেছেন ।অনেকে বলাবলি করছে ।
নীলা বললো
', বড়দি কিছু বলবেন?'
'রেখাকে খুঁজছিলাম ।রেখা কোথায় জানো?'
'রেখা তো ক্লাসে গেল?'
'ও আচ্ছা।'
বড়দি যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললেন 'ক্লাস থেকে আসলে আমার সঙ্গে দেখা করতে ব"ল তো?'
'ঠিক আছে বড়দি।'
এর মধ্যে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল বড়দি চলে যাওয়ার সঙ্গে 
সঙ্গে । শুরু হয়ে গেল পিএনপিসি।বাববা "রেখাকে যেন চোখে হারান বড়দি।"
কথা বলতে বলতেই রেখা ক্লাস করে  ঢুকল স্টাফরুমে। তারপর হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিজে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো 'বাপরে কি গরম পড়েছে ।তার মধ্যে আজকে উপরের রুমে কোন ফ্যান ঘুরছে না ।মেয়েরা অস্থির হয়ে পড়ছে।'
এরমধ্যে নীলাদি বলল ', হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছ  আমার দিকটাও  বোধহয় গন্ডগোল হয়েছে। ফ্যান চলছিল না।'
এরমধ্যে শুভ্রা বললো 'রেখা তোমাকে বড়দি ডেকেছেন।'
"যাই একটু পরে  ।কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে গরমে।'
রেখা নিজের চেয়ারটায় বসলো ,বোতল থেকে ঢকঢক করে জল খেলো।
এরমধ্যে পঞ্চমী দি  এসে খবর দিল'রেখা দি বড়দি আপনাকে ডেকেছেন।'
"হ্যাঁ তুমি বল ,যাচ্ছি একটু পরে।"
"আচ্ছা।"
প্রজেক্ট খাতাগুলো দেখতে হবে ।এডুকেশন এর প্রজেক্ট খাতা পড়ে রয়েছে।
এরমধ্যে সন্ধ্যা দি আবার আসলো 'রেখাদি বড়দি আপনাকে ডেকেছেন।'
"বাপরে বাপ ,বললাম একটু পরে যাচ্ছি। তো আর সহ্য হচ্ছে না ।ঠিক আছে , চলো ,যাচ্ছি।'
"আচ্ছা বলেই সন্ধ্যাদি চলে গেল ।সন্ধ্যাদি চলে যাওয়ার সময় বেশ লম্বা চুলের বেণী দুলিয়ে দুলকি চালে চলে গেল।
রেখা উঠে বড়দির ঘরের কাছে গেল।
তারপর বলল" আসবো বড়দি দিদি?"
"এই রেখা তোমাকে আমার খুব দরকার।"
রেখা একগাল হেসে বলল "আমাকে দরকার?"
বড়দি হেসে বললেন "তোমাকে কখন থেকে খুঁজছি জানো! তোমাকে ভীষণ দরকার।"
"হ্যাঁ বলুন।"
রেখাকে খুব করে অনুরোধ করলেন।
জানি তুমি পরপর ভ্যাকসিন এর কাজগুলো করেছো ,তবুও তোমাকেই বলছি অনিন্দিতার কাজটা একটু করে দেবে?'
রেখা বড়দি কিছু বললে , না করতে পারে না। তাই বলল কেউ যদি করার না থাকে তাহলে তো করতেই হবে।'
বড়দি একগাল হেসে বললেন' আমি জানি তুমি না করবে না  কিন্তু দেখো আমি এবার তোমাকে বলতাম ই  না ।উপায় নেই,  তাই বললাম।'
"ঠিক আছে ,বড়দি চিন্তা করবেন না।"
বড়দি হেসে আবার বললেন' না ,না ,তুমি যেখানে বলেছে চিন্তা করবেন না ,সেখানে আমার চিন্তা কেন থাকবে ?আমি তো তোমার উপর অনেক ভরসা করি।"
'আপনি ভরসা করেন , বিশ্বাস করেন আমি যেন সেই ভরসার মর্যাদা রাখতে পারি দিদি।'
"তুমি এভাবে কথা ব'লো না ,তুমি নিশ্চয়ই পারবে।'
রেখা  বললো '' ঠিক আছে দিদি ,করে দেবো।'
'আচ্ছা রেখা তোমাকে একটা কথা বলি, তোমাকে সব কাজ করতে হবে না  যা কুপন রেডি করা ,নাম রেজিস্টার করা আজকেই শুভ্রা আর নীলা করে রাখবে ।কালকে শুধু তুমি এসে মেয়েদের নাম গুলো এন্ট্রি করে নেবে কোন মেয়েরা ভ্যাকসিন নিলোনা সেইগুলোকে নোট করবে, আর তাদের কে ফোন করে জানবে কেমন?'
'Ok দিদি। কিন্তু…?'
'আবার কিন্তু কেন রেখা, কিছু বলবে?'
বড়দি উৎসুকভরে  তাকিয়ে রইলেন রেখার দিকে' কিছু শুনবেন বলে। 
'মানে নীলাদি আর শুভ্রাকে এ কথাটা কে বলবে?'
', না, না তোমাকে কিছু বলতে হবে না ।আমি এক্ষুনি ডেকে বলে দিচ্ছি।'
বড়দি সঙ্গে সঙ্গে কলিং বেল বাজিয়ে সন্ধ্যাদিকে ডাকলেন।
সন্ধ্যাদি তার সেই দুলকি চালে বেণী দুলিয়ে এসে হাজির বড়দির কাছে।
'শোনো সন্ধ্যা, তুমি এক্ষুনি নীলা আর শুভ্রা কে ডেকে দাও।'
'আচ্ছা দিদি।'
'রেখা যাও তুমি গিয়ে বস স্টাফ রুমে।'
সন্ধ্যা দি স্টাফ রুমে এসে নীলাকে বলল 'দিদি আপনাদের দুজনকে বড়দি ডাকছেন। এক্ষুনি আসবেন।'
নীলা, শুভ্রা দুজনে একসঙ্গে বলল 'ঠিক আছে যাচ্ছি, তুমি যাও।'
নীলা ,শুভ্রা দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল ।এর মধ্যে রেখা এসে নিজের জায়গায় বসল।
যারা সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী রেখা তাই
 যাবার সময় রেখাকে টিপ্পনীকেটে দিয়ে বেরিয়ে গেল।' চল যাই, আবার আমাদের কি জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন দেখি। সবার তো রাজ ভাগ্য হয় না।'
কথাগুলো ব্যঙ্গ করে বলে দিয়ে দুজনে হাত ধরাধরি করে বড়দির ঘরের দিকে এগুলো।
'আসবো দিদি?'
বড়দি শুভ্রা ,নীলার দিকে তাকিয়ে বললেন' 'এসো।'
"আমাদেরকে ডেকেছেন?"
বড়দি ফাইলে মুখ গুঁজে রেখে বললেন' হ্যাঁ ডেকেছি। আগামীকাল ভ্যাকসিন আছে, তোমরা জানো। আর অনিন্দিতা এবসেন্ট থাকবে তাই অনিন্দিতার কাজগুলো তোমাদের দুজনকে করে দিতে হবে ।আজকের মধ্যেই কমপ্লিট করতে হবে।'
শুভ্রা আর নীলা দুজনেই একসঙ্গে বললো' কি কাজ দিদি।"
"তেমন কিছু নয় শুভ্রা যে ক্লাসের ক্লাস টিচার, সেই মেয়েদের নামগুলো সব তুলে নেবে আলাদা একটা খাতায় ।তারপর আর একজন কুপন কাটবে ।যাও যাও কুইক কাজ করো।'
নীলা আর শুভ্রা বড়দির ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্টাফ রুমে এসে কি গজ গজ করতে 
লাগল ।রেখাকে শুনিয়ে বলতে লাগলো' বললাম না ,আমাদের এত রাজ ভাগ্য নয়।'
'একদম ঠিক বলেছ নীলা দি।'
অনিন্দিতা মুখে যে কথাগুলো বলে ,খারাপ বলে না।
আসলে ওর মুখের সামনে বলে দেয় তো, তাই সহ্য হয় না।'
'তার মানে কাউকে  কাজটা করার জন্য বলেছিলেন বড়দি ,সে অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়েছে ।আমরা তো সেটা পারি না।'
শুভ্র বলল 'একদম ঠিক বলেছ।'
রেখা সব শুনে হজম করতে লাগল ।আসলে রেখার কিছু জবাব দিতে ইচ্ছে করলো 
না ।জবাবদিহি করলে নানা কথা উঠে আসবে সারাটা দিন মেজাজ বিগড়ে থাকবে। তারচেয়ে ওরা যা পারে বলে যাক। কিছু কিছু সময় চুপ করে থাকাই যুদ্ধে রণনীতি জেতার একটা কৌশল।
নীলা বললো 'শুভ্রা চল  অ্যাটেনডেন্স খাতাটা খুঁজি।"
"আমরা কেন খুঁজবো?'
নীলাদিঅবাক হয়ে বলল,' তাহলে?'
'সপ্তমীদিকে ডেকে খাতাটা খোঁজার কথা বলি।'

নীলা দি  বলল 'একদম ঠিক বলেছিস শুভ্রা।'
শুভ্রা উঠে গিয়ে সন্ধ্যা দিকে খোঁজ করতে গেল। দেখলো মিড ডে মিলের ঘরে। শুভ্রা সেখানে গিয়ে বলল' সন্ধ্যা দি ,ক্লাস এইট এর অ্যাটেনডেন্স খাতাটা খুঁজে আমাদেরকে দাও এক্ষুনি। আমরা লিখব।'
সন্ধ্যা দি বলে' ঠিক আছে আপনারা যান। আমি খুঁজে নিয়ে  আপনাদের কাছে দিয়ে আসছি।"
শুভ্রা আরবললো সোনার সঙ্গে চটি খাতা দেবে আর কিছু লুজ শিট ও দেবে।'

"আচ্ছা আচ্ছা দিয়ে আসব।"
শুভ্রা এসে নিজের জায়গায় বসল।
নীলাদি বলল কিরে পেলি খাতা,?"
"বলেছি।'
কথা শেষ না হতেই সন্ধ্যা দি এসে বলল খাতাগুলো দিয়ে এইযে দিদি খাতা রইল আর এই যে কয়েকটা লুজ শিট "
নীলা বলল 'তুই কি করবি কুপন কাটাবি, না নাম লিখবি?'
শুভ্রা বললো "যেটা বল।"
নীলা বললো'তাহলে তুই নাম লেখ।'
শুভ্রা বললো 'ওকে।'
নীলা বলল" কার কাজ কে করে?'
শুভ্রা বললো আমরা হচ্ছি শ্রমজীবী মানুষ খাটতে তো হবেই।'
"যারা অভিজাত্ত তাদেরকে তারা এসব কাজ করতে হবে না।"
রেখার মাথাটা ধরেছে তাই মাথা নিচু করে টেবিলে মাথা রেখে বসে আছে আর সব শুনছে ।
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো।
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল' হ্যালো।'
'হ্যাঁ ম্যাডাম,' আশা 'পত্রিকা থেকে বলছিলাম।'
"হ্যাঁ ,হ্যাঁ বলুন।'
আমরা আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই কালকে কি একবার সময় হবে?
রেখা বলল' না না কালকে একদমই সময় হবে না।'
ঠিক আছে তাহলে আপনি একটা আমাদের সময় দিন।
 "আপনারা রবিবার আসুন '।
ওকে।
ফোনটা কেটে দিয়ে রেখা ভাবতে লাগলো আশা পত্রিকার থেকে আসবে, রবিবারে কি কি অ্যারেঞ্জ করবে?"
"ঠিক আছে বাড়ি যাই। এ ব্যাপারে মনোজের সাথে কথা বলতে হবে।'
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এখনো সময় আছে কিছুক্ষণ লেখা যাবে।
বরং রেখা  লেখাটা লিখতে থাকুক….।
"বন্ধুত্ব বেঁচে থাক গভীর শ্রদ্ধায় পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ততায় আর  ভালোবাসায়।*"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much