২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

কবি নীল গৌরব মামুন এর কবিতা "আযাব"




আযাব

নীল গৌরব মামুন


সেইদিন সব নক্ষত্র নিষ্প্রভ হয়ে ঝরে পড়বে
ধুলোয় লুটোবে উৎসব শেষের রাঙতার মত।
বাতাস ভুলে যাবে বইতে
যাবতীয় স্রোত হবে স্তব্ধ। 
সেইদিন কাঁদতেও ভুলে যাবে সকলে
অন্ধকার আরও নিকষ হবে ক্রমশ।
যেদিন তুমি আর তাকাবেনা আমার চোখের দিকে
যেদিন তুমি আর ঘরে ফিরিয়ে দেবার জন্যে আগলাবেনা মানস চৌকাঠ 
যেদিন তুমি আর মায়া ডাকে মোছাবেনা অন্ধকার 
প্রিয়তম নারী সেইদিনই আযাব।

১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

Poetry of poet Suparna Chatterjee




It's only my mind

Suparna Chatterjee



Nothing is mine,
Nobody is mine,
Nothing can keep me in Mind. 
Except my beloved one 
Who is my beloved Mind.

Anyone can make me cry,
But only my mind can make it
stop.
Anyone can tell me a lie,
But my mind always try to fly
To reach my imaginary lane.
Anyone can give me pain
To hurt me again and again.
 But if it is seen by my Mind,
Make me try to understand, And give me strength to bear.
Bcz only my mind loves me
And I am only his dear.
If I want to laugh with all my heart,
Only my mind can help me to start.
Where there is anyone to love,
No matter without his choice my mind can love.
Whatever I want to imagine
My mind helps me to win.
Still it's my pleasure 
To say everything.
  

১৫ আগস্ট ২০২২

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা "স্বাধীনতা"




স্বাধীনতা
 
আমিনা তাবাসসুম


আমরা প্রতিদিন এগিয়ে চলেছি
অন্ধকার থেকে আলোর উৎসে
নাকি আলো থেকে অন্ধকারে

জল খাবার অপরাধে যে শিশু
মৃত্যুশয্যায়
সে দলিত
আমরা স্বাধীনতার 75তম বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন করি
ঠোঁটে এবং চোখের ইশারায়
নিরাসক্ত অন্ধকার নয়
উচ্চ মর্যাদা আমাদের শিরায় শিরায় 

পেছনে পড়ে থাকে চাপ রক্ত, শহীদের বীরত্ব

বুকে জড়িয়ে রাখি পতাকার ভেতর আগুন
বুকের ভেতরে থাকে জাতিভেদের অস্পৃশ্যতা
আমি ক্ষুধার্ত, তুমি গান গাও
জয় হিন্দ আর বন্দে মাতরম

যে নারীর হৃদয় খুঁড়ে ছিঁড়ে খায় ধর্ষক
আর দেশের নেতা মানবতা রাখে লুকিয়ে
আদর্শ সেখানে ছুটে ছুটে যায় বাইরে
স্বপ্ন কাঁদে চার দেওয়াল থেকে শূন্যে
স্বাধীনতা বিলাস কী তবে!

মনের ভেতর অস্থির এক উন্মাদ
যে পতাকা বিপ্লবীর রঙে সুন্দর
আজ দেখি সেই মুখোশের এক রক্ষিতা

কবি মমতা রায় চৌধুরীর কবিতা " সূর্যমুখী ভোরের স্বাধীনতা"




সূর্যমুখী ভোরের স্বাধীনতা

মমতা রায় চৌধুরী



আজ ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস
কত মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার
 শত বিপ্লবীর রক্তে রাঙানো  মহার্ঘ দিন।
 দিকে দিকে তেরাঙ্গা পতাকা 
আর বন্দে মাতরম ধ্বনিতে 
 সরগরম গোটা দেশ।
তবুও  স্বাধীনতা অপ্রাপ্তির

এক দুঃসহ যন্ত্রণা  রয়েছে 
 সমাজের প্রতিটি কোণে।
নিরক্ষরতা, অশিক্ষা,,বেকারত্ব, পণপ্রথা
যৌন নিগ্রহ , শিশুধর্ষণ ,নারী পাচার,
সমাজে বাসা বাঁধছে নিরন্ত র।
শিক্ষা স্বাস্থ্য নিয়েও   অসাধু ব্যবসা,
হাজারো শিশুর স্বপ্ন কাড়ে রাজনৈতিক নেতা।
তখনই প্রশ্ন ওঠে এ কেমন স্বাধীনতা?
তবে কি..
স্বাধীনতা প্রাপ্তি রাত্রের সেই ক্ষত 
এখন আরো  দগদগে।
ধর্মান্ধতা, জাতিভেদ  ,
বিচ্ছিন্নতাবাদ ,অস্পৃশ্যতা 
জাতির  আজও রন্ধে রন্ধ্রে।
 স্বাধীনতার ছিয়াত্তর বছরে 
এখনো  শিশু  খাটে চায়ের দোকানে।
নয়তো  শিশু মনিবের বাড়িতে
 মায়ের সঙ্গে ঝিয়ের কাজে।
এ কোন বিষে আজ জর্জরিত দেশ?
তাই ,
প্রশ্ন জাগে এই কি স্বাধীনতা?
ছিয়াত্তর বছরে এই আমাদের প্রাপ্তি?
এই স্বাধীনতাই কি চেয়েছিল 
মৃত্যুঞ্জয়ী  বীর বিপ্লবী?
এ প্রশ্ন সকলের কাছে।
এ যন্ত্রনা সকলের যন্ত্রণা।
এর থেকে কি তবে মুক্তি নেই?
আছে…
ছিয়াত্তর বছর স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাসে 
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা না ভেবে, 
জাগরণ হোক  যুব সম্প্রদাযয়ের।
 রাজনৈতিক নেতারে দিকে না তাকিয়ে 
হাল ধরুক নিজের দেশে র।
সকল যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে
সেদিন আসবে প্রতিটি ঘরে 
এক সুন্দর সূর্যমুখী ভোরের স্বাধীনত।

১৩ আগস্ট ২০২২

কবি সানি সরকার এর কবিতা "ড্যানিয়েল"




ড্যানিয়েল 
সানি সরকার 


পাথরটির দিকে লক্ষ্য করো ড্যানিয়েল 
অতঃপর নিজের দিকে আরেকবার 

রাত্রির কলকাতায় আলো
এবং গাড়ির হর্ণ ব্যতীত কোনও শব্দ নেই 
এত দ্রুত তুমি ঘুমিয়ে পড়বে না 
অবশ্য তেমন কথাও নেই 

এখন ঠিক সামনের পাখিটিকে লক্ষ্য করো 
ছবির ওপর বসে যে মোহ ছড়িয়ে দিচ্ছে 
ভালো করে লক্ষ্য করে দ্যাখো, ওঁর  পা'য়ে 
ঘুঙুর পরানো, বাইরে চাকচিক্য, কাচের মতন, আর ধোঁয়া 

হরিণেরও খিদে পায় একথা সত্যি- 
প্রতিটি মুহূর্তে দলদল হরিণ 
তৃণের খোঁজে অরণ্যাঞ্চল তোলপাড় করে তছনছ করে 

পাখিটি ঘুঙুরের শব্দ তোলে পায়ে 
তখন তৃণ নয়, হরিণের দল 
আরও ক্ষুদার্ত, দৌড়য় ঘুঙুরের শব্দের দিকে 

এমনি নির্মম... 

ড্যানিয়েল, তাই বলে তুমি কী পাখিটির পা'য়ের ঘুঙুর 
কেড়ে নেবে 
না... 

সময় তো এমনি, সময় হলেই বলে 
ওটা সাদা, ওটা কালো, ওটা সবুজ, ওটা পীতবর্ণ... 

ড্যানিয়েল, দেখতে থাকো ও এবং হাসো

১২ আগস্ট ২০২২

কবি কাব্য রাসেল এর কবিতা "সেই এলোকেশ! ""




সেই এলোকেশ! 


কাব্য রাসেল 


তুমি হেঁটে যাও ফুটপাত মাড়িয়ে আমার দুরন্ত দৃষ্টি 
চেয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথের মতো। আর নজরুলের মতো
আমার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের উচ্চারণগুলো তোমার এলোকেশী গন্ধের মাদকতায় আরও বেশি স্বতঃস্ফূর্ত 
হয়ে ওঠে।  আমার কন্ঠ আরও ঝাঁঝালো, আরও বিমূর্ত হয়ে ওঠে স্লোগান। তোমার এলোকেশী বৈশাখী ঝড়ের মতো আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর করে আমাকে শীতল আরও শীতল করে দেয়।  আমার চারপাশে সঙ্গতিপূর্ণ সমস্ত অসঙ্গতিই   আমাকে শৃঙ্খলিত করে রাখে,আর শৃঙ্খল ভেঙে ভেঙে আমিও এক ঐন্দ্রজালিক অলৌকিক অদৃশ্য মোহনীয়তায় বেরিয়ে আসি তোমার এলোকেশী দীর্ঘ কালো চুলের অসামান্য অরণ্যে।


কবি শাকিল সারোয়ার এর কবিতা "ক্রশবিদ্ধ একটি সময়"






ক্রশবিদ্ধ একটি সময়

 শাকিল সারোয়ার 



তোমাকে ছুঁলেই বিবর্তনের জল 
গড়িয়ে গড়িয়ে বরফ-বাস্প 
বিশ্বাসের দর্পণে সমর্পণের প্রতিবিম্ব 
একটি সময় ক্রুশবিদ্ধ চোখে ... 
স্মরণে মরণে পূর্ণাভা
রাত্রীর আলো

তোমাকে ছুঁলেই আবর্তনে ষোলকলা 
নির্জলা ছুঁই ছুঁই তৃষ্ণা, 
দাহ 
দাউ দাউ 
দগ্ধ দরিয়া...

কবি নীলা রহমান এর কবিতা "শান্তি বালা"




শান্তি বালা

নীলা রহমান



বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো?
মেঘ ছিঁড়ে একরাশ বিদুৎ খড় কুটো শুষ্ক ঘরে 
মাটির  পাঁচিলে পড়ে সব দগ্ধিত ছেঁড়া খেতা। 
বৃষ্টি হয়নি সেদিন। সাত কোটি জনতার স্তব্ধ নয়নে অস্থির ভাষায় স্পষ্ট ছিলো 
স্বাধীনতার তৃপ্ত স্বাদ।

বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো?
দগ্ধ ভিটে মাটির অন্তরে দাঁড়িয়ে দূর নীলিমায় লাল সবুজ পাখির হলুদ ঠোঁটে শুভ্র শিসে শুনতে পেরেছো বিজয় ইমন সুর। ঐ দেখো ভৈরবী সুরে পুষ্পিত স্বাধীন চন্দ্র ফুল।।

বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো? 
দগ্ধ অন্ত চাঁদোয়ার ভ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিন্দু বিন্দু নীল কুয়াশায় সিক্ত মনে জানান দেয় বীরাঙ্গনার নির্মম চিৎকার।  তবুও  ছিদ্র শুষ্ক মনে স্মরণ করিয়ে দেয় লাখো  শহীদের আত্মত্যাগ।। 

বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো? 
দগ্ধ কুটিরে অন্ত ভিটেই এখনো হায়ানার তীব্র থাবা একটু একটু করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।
তবুও লাল সবুজ নিঃশ্বাসে ঘ্রাণ পায় জয়োৎসব ।। 

বলতে পারো শান্তি বালা,  
তুমি কেমন...... আছো....?

১১ আগস্ট ২০২২

কবি বন্ধু তুহিন এর কবিতা"চুলচেরা হিসাব"





চুলচেরা হিসাব

বন্ধু তুহিন



তোমাদের চুলচেরা বিচারে অর্ধেকটা সময় অধিবাস্তব পংক্তি,
বাকি অধের্কের পিচ ঢালা রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
থক থকে নাভিশ্বাসের পালাবদলে হাতবদল নর্দমা,
ব্রহ্মতালুর পাশ ঘেঁষে  বিচারক, উল্টো পথে।

লোভের চারপাশে যখন অনবদ্য গ্লানি কাজ করে,
তখন সুসময়ের হিসেব কসে একে একে ধসে পরে দেয়াল।

স্বপ্ন দেখতে দেখতে চোয়ালের ভেতর চোয়াল, হারের ভেতর মাংস;
শুকিয়ে যায় শুটকির গন্ধ, বুকের ভেতর এখনও নোনা জল।
উড়তে উড়তে পরতে থাকা নিছক যুবকের লোমকূপ লজ্জিত
রেটিনায় ভাগ্যের গণনা, নাকের ভেতর সুড়সুড়ি, পেটে ক্ষুধা।

ওহে সনাতন, বোঝ এখন কি করে মানুষ বেঁচে যায়; 
 কাপড়,আতর,বিজ্ঞাপনে অবিন্যস্ত  ঢেকে যায় শহর রাস্তা।

ছায়ার ঘুরন্ত বৃত্ত বড় হতে হতে ব্ল্যাক হোল হবে একদিন,
তখন আধভাঙ্গা সড়কে ফ্লাইওভার কিংবা কংক্রিটে তেতে উঠা অস্তিত্বে
 আমি ঢেলে দেব মৌন মন ...

০৪ আগস্ট ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০৪





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ২০৪

প্রতীক্ষার মূল্যদান

মমতা রায় চৌধুরী



প্রত্যেক মানুষই প্রতীক্ষা করে জীবনের যত ব্যর্থতা আছে সেগুলো কে সার্থক করে তুলবার আশায়।
তাইতো মনের ভেতরে আগুন ওঠে আগুনের তাপে ব্যর্থতা যন্ত্রণা জ্বালা সবকিছু পুড়িয়ে পরিণত করতে। তারপর আস্তে আস্তে হয়ত সে আগুন নিভে যায় সেও বছরের পর বছর প্রতীক্ষারত অবস্থায় জীর্ণ মলিন হয়ে যায় সংসারের ধুলোয়। প্রতীক্ষা তো আর সার্থক হয় না সার্থক হয়নি বিপাশার প্রতীক্ষা সার্থক হয়নি রেখার প্রতীক্ষা ,সার্থক হয়নি মনোজের প্রতীক্ষা , সার্থক হয়নি শিখার প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি কল্যাণের প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি তিথির প্রতীক্ষা, সুমিতার প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি নদীর প্রতীক্ষা, মীনাক্ষী দেবী প্রতীক্ষা আরো এরকম কতজনের প্রতীক্ষা সার্থক হয়নি। সব প্রতীক্ষাগুলো যেন পথহীন অরণ্যে সকলের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। আলাদা হওয়াটা পুরো টাই অদৃষ্ট বা নিয়তির লিখন হয়েছে তা নয় ,কিছুটা নিজেদেরও হাত  থাকে।
প্রতিটা চরিত্র অনুযায়ী প্রত্যেকের প্রতীক্ষায় একটা আলাদা মাত্রা আছে ,একটা আলাদা ধরন আছে। প্রত্যেককে এক ধাঁচে ফেললে চলবে না।

নইলে কে জানতো  নীল  রেখার জীবনটা আলাদা হয়ে যাবে। গ্রামের সহজ সরল দুটি ছেলে মেয়ে যখন পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল শৈশবের এতগুলো দিন তারা একসঙ্গে অতিবাহিত করেছিল, স্বপ্ন দেখেছিল হাজারো তর তখন সেই স্বপ্নগুলো যেন প্রজাপতির ডানা মেলে উড়ছিল। ঘোষেদের জোড়া পুকুর ,বটগাছ, আর গ্রামের পথ ঘাট , বিস্তীর্ণ প্রান্তর ,নদী সবকিছুই যেন ছবি এঁকে দিয়েছিল অত্যন্ত পারিপাট্যের সঙ্গে। কেরালা উঁকি দিয়ে গেছে কত না স্মৃতিমধুর খন আজ সবই রেখার কাছে ক্লান্ত ঔদাসীন্যের মত লাগে শুধু যারা একটা ঘুমন্ত নিষ্প্রাণ আত্মা রয়েছে সদা পাহারায়।
ব্যালকনিতে বসে সেইসবগুলি প্রতিচ্ছবি ছবি হয়ে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে।

রেখা গল্প লিখতে বসে হঠাৎ জীবনের গল্প গুলোই কেন তার লেখনীর ক্যানভাসে আঁচড় কাটতে শুরু করল সেটাই বুঝতে পারছে না 
আজ সেই সব যন্ত্রণা ব্যাথা গুলো আছে বলে হয়তো এখনো হৃদয় নামক পাম্পে জল ওঠে।
দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আজ ভাবনাও আবেগের উদ্বেল সাগর হঠাৎ করে জেগে উঠলেও তা আস্তে আস্তে শান্তনি তার হয়ে যাচ্ছে সেসব দিন গোধূলি বেলার মত অস্পষ্ট হতে শুরু করেছে স্মৃতির সে সমস্ত পাতাগুলো যেন আস্তে আস্তে তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে জীবনের একটা বাধা সুখে থাকতে গিয়ে সবকিছুই যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
এসব ভাবনার মাঝে চেয়ে ঘটায় সিঁড়ি পত্রিকার সম্পাদকের ফোন। ফোন বেজে চলে অকাতরে রেখার ইচ্ছে করছে না ফোনটা তুলতে। অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়  রেখাকেও তাই করতে হলো। এতবার ফোনের আওয়াজ শেষ পর্যন্ত নিচের থেকে বাকিরা ছুটে আসত। হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।
হয়তো মনোজই উঠে আসতো বলতো"কিগো ফোনে যাচ্ছে ফোন ধরছো না?
রেখাকে তখনই বানিয়ে বলতে হতো 'শুনতে পাই বা একটা লেখা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।"
তাই মিথ্যা বলার চেয়ে ফোনটা রিসিভ করা অনেক বেশি শ্রেয়।
হ্যালো
 ম্যাম
হ্যাঁ নমস্কার।
চিনতে পারছেন?
না চিনে উপায় আছে ফোন নম্বরটা যে সেভ করা আছে।
বলেই দু'পক্ষ ও হো হো করে হাসতে শুরু করল।
তারপর ম্যাম মৌচাকের কতদূর খবর?
চলছে ঠিকঠাকই
হ্যাঁ দেখবেন মৌচাকে যেন তাড়াতাড়ি ঢিলটা না কেউ ছুঁড়ে দেয়।

কি করবো দাদা পুরোটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
ভাগ্যের অদৃষ্টের কথা বারবার বলবেন না।
আপনি লেখিকা সৃষ্টি করাই আপনার ধর্ম।
রেখা হেসে বলে আপনি কি যে বলেন না?
কেন ম্যাম  আমি কি খারাপ কিছু বললাম?
রেখা বলল না না বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি নিয়ন্ত্রণে এনে তাতে জলসিঞ্চন করেন।
রেখা এসব কথা বলছে  এরমধ্যেই রেখার  জা।তীব্র চিৎকারে যেন আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ হচ্ছে।
রেখা কানটা খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল অন্যদিকে ফোনে অনর্গল বুকে চলেছেন সম্পাদক মহাশয়।
রেখা বলল ঠিক আছে দাদা। মৌচাক নিয়ে ভাববেন না। ওখানে ঠিক মধু তৈরি হবে।
সম্পাদক মহাশয় বললেন'অসংখ্য ধন্যবাদ।'
রেখা ফোনটা নামিয়ে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে আসে এসে পুরোটাই জলের মত পরিস্কার হয়ে যায় সেই চিৎকার এর প্রধান উৎস কি।
আসলে তুতু পাইলট ওরা খেলছিল। উঠোনটা জানো মনে হচ্ছে পুরোটাই ওরা কিনে নিয়েছে। বাচ্চাগুলো খেলা করছে সেটাও সহ্য হচ্ছে না।
আজকের এই কান্ড দেখে রেখার মাথাটা গরম হয়ে গেল।
বলেই ফেলল কি হয়েছে কি করেছে ওরা?
সঙ্গে সঙ্গে রেখার জা বলল এদেরকে মেরে পিটিয়ে শেষ না করলে শান্তি নেই।
রেখা তখন বলল"এত যে  ধর্ম কর্ম করো সহিষ্ণুতা শেখায় না।"
সেটা তোমায় দেখতে হবে না।
 প্রয়োজনে শিখতে হয়।
যত অজাত কুজাতকে বাড়ি ঢুকিয়েছে এই জন্যই তো আজ বাড়িতে এই হাল।
দিদিভাই মুখ সামলে কথা বল অদ্ভুত মানে কি বলতে চাইছো?
বলছি ওই কুকুরের বাচ্চা গুলো যেন আমাদের সীমানায় না আসে।
আমাদের সীমানা মানে এটা তো যৌথ বাড়ি এখনো তো ভাগ হয়নি?
আর তাছাড়া ওরা অবলা জাত ওদের কি শেখানো যায় মানুষকে শেখানো যায় না যদি তাই হত তাহলে এরকম কথাবাত্রা শুনতে হতো?
তুমি আমাকে ইঙ্গিত করে কথা বললে না?
যাক বাবা তাহলে বুঝতে পেরেছ।
সারাদিন ঠাকুর নিয়ে পড়ে রইলাম আর মনে মনে অন্যের ক্ষতি চাইলাম আর ভাবলাম কখন ওই অবলা জীব গুলো একটু বেচাল কিছু করবে তখন হাজারো তর কথা শোনাবো।
এত চিৎকার চেঁচামেচিতে বাচ্চাগুলো যেন একটু হতভম্ব হয়ে গেছে ওরা রেখার কাজটা তে এসে সব একা একা বসে পড়ল তারপর রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
রেখা তখন ওদেরকে আদর করে বলছে তোমরা কি দুষ্টু দুষ্টু করছিলে?
এরকম দুষ্টু দুষ্টু কাজ করবে না ।দেখছ না দুষ্টু লোকেরা না হলে কিন্তু বকবে।
রেখার যায় এবার নিজের শ্বাশুড়ীকে ডেকে নাও সোনার চেয়ে দেখুন দেখুন আমরা কি দুষ্টু লোক।
রেখা কথা বাড়ায় না এদের সাথে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই এতে মন-মেজাজ দুটোই বিগরে  যায়।
রেখা ওদের কে নিয়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে পরল তখনো রেখা শুনতে পারছে ওর যা চিৎকার করে যাচ্ছে কোথা থেকে এক ছোটলোকের মেয়ে নিয়ে এসেছে বাড়িতে এই জন্য এইসব ছোট রকমই কাজকর্ম চলছে বাড়িঘর যেন কুকুরের বাড়িঘর হয়ে যাচ্ছে।

রেখা শুধু ভাবে আর কতদিন প্রতীক্ষা চলবে এদের শুভ বুদ্ধির জাগরণের কবে এরা নিজেদের আত্মসমালোচনা করবে? আর শুধু অহংকার ঐশ্বর্য নিয়ে আত্ম অহংকার ভুগবে? 
ভগবানের কাছে শুধু প্রার্থনা করল রেখা ভগবান এদের শুভ বুদ্ধির জাগরণ হোক শুধু সেই দিনটার প্রতীক্ষায় আছি ।
তারপর মনে মনে ভাবল এই সমস্ত ক্যারেক্টারগুলোকে তার মৌচাকের উপন্যাসের ভেতরে টেনে নিয়ে আসতে হবে তবে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে নীলাঞ্জন তার প্রতিদান আজ তার প্রতীক্ষার পথগুলো সব এঁকে বেঁকে  গেছে হয়ে গেছে সেখানে সবকিছুই অস্পষ্ট কোন রেখাপাত নেই।
এক্ষেত্রে রেখা আশাবাদী আগুন জ্বলে উঠবে যে আগুনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে যত হিংসা অহংকার আত্মগরিমা আর প্রকৃত শুদ্ধ আত্ম জগরণ ঘটবে।
সেদিন রেখা মলিন আর  ক্লান্ত থাকবে না। সেটা হবে শেষ পরীক্ষা নতুন জীবনের প্রথম মূল্য দান।
এরমধ্যে রেখা খেয়াল করল বাচ্চাগুলো যেন বুঝতে পেরেছে ওরা যেটা কাজটা করেছে ভুল করেছে ওরা যেন রেখার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না রেখা ওদের অঙ্গভঙ্গিতে সবকিছু বুঝতে পারল। ওদেরকে কাছে ডেকে এনে খুব করে আদর করলো আর বলল তোরা কচু হয়ে যেটা বুঝিস মানুষ এটা বোঝে না রে। মানুষগুলোর ভেতরে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে মে

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০৩




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ২০৩

রেখার স্বপ্নের পরমায়ু

মমতা রায় চৌধুরী




রেখা আজ বেশ কয়েকটা লেখা কমপ্লিট করল পত্রিকায় দেবার জন্য।'সিড়ি' পত্রিকার সম্পাদকের তাড়া আছে। গতকালকেই ফোন করে রিমাইন্ডার দিয়েছেন। ওই পত্রিকার লেখাটা কমপ্লিট করতে না পারলে সত্যিই রেখা মুখ দেখাতে পারবে না।
অলরেডি দুটো উপন্যাস ওনার পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ।" বার্তা" পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে গল্প। ওই পত্রিকার সম্পাদক অলরেডি ফোন করে জানিয়েছেন আরেকটি গল্প রেডি করতে দর্শকরা নাকি খুব খাচ্ছেন  ।ফলে রেখার চাপ আছে। লেখা কমপ্লিট করে রেখা দাঁড়াল জানলার কাছে। আকাশটার যে মাঝে মাঝে কি হয় মানুষের মতো কখনো মুখ ভার কখনোবা প্রসন্ন হাসির উজ্জ্বল ছটা । রাতের নিস্তব্ধতা রেখাকে মাঝে মাঝে টানে।সে নিস্তব্ধতা রেখার দুচোখে যেন মায়া কাজল পরিয়ে দেয়। হঠাৎই এই নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিল বিদ্যুতের ঝলকানি। রেখা দেখল না আর জেগে থাকলে হবে না ।এবার দু'চোখের পাতা এক করতে ই হবে। কালকে আবার যেতে হবে কলেজের মেয়েদের পুরস্কার নেওয়ার আছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই রেখা এবার বিছানায় নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দিল
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ,রেখা নিজেও জানেনা ।ঘুম ভাঙলো বৃষ্টির শব্দে ।রেখা এবার জানলার কাছে গেল জানলা দুটোকে বন্ধ করতে। হঠাৎই নজরে পড়লো তুতু,মিলি, পাইলট কিরকম থ্রি ইডিয়েট এর মত রেখাদের বাড়ির দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে একসা হয়ে গেছে। রেখা উদগ্রীব হয়ে উঠলো ।রাতে কি শাটার টা খুলে দেয়া হয়নি? খুব রাগ হল রেখার মনোজের ওপর।এবার নিজেই দরজা খুলে নিচে গেল। রেখা  অবাক হয়ে গেল সত্যিই তো খোলা নেই মনোজের এই কান্ডজ্ঞানহীনতার জন্য আরো একবার খুব রাগ হলো।


 সামনে একটা বস্তা ছিল ওটাকে চেপে ধরে রেখা ওদের গা মুছিয়ে দিলো।। রেখা তুতুকে বললো" কি ব্যাপার রে ,হঠাৎ রাত্রে বাইরে আসলি?'
তুতু ওর লেজ নাড়িয়ে কাছে আসলো রেখা একটু আদর করে দিলো ।তারপর কলাপসিবল গেট লাগিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো।
এবার রেখা ঘুমোতে গেল অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেল । কালকে অনুষ্ঠান শেষ কখন  হবে , তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই । লেখাগুলো মোটামুটি রেডি,একটু ফ্রেশ করে নিয়ে পাঠিয়ে দিলেই হলো। এটা সবথেকে বড় চাপের ব্যাপার ছিল , সেটাতে সে চাপ মুক্ত
রেখা তাই নিশ্চিন্তে বিছানায় শরীরটাকে ফেলতে ফেলতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল 
রেখা দেখছে ওর কাজ কত
 বাকি ?এখনো লেখা বাকি। এদিকে কাজের মাসি আসে নি ।আজকে ওর একটা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যাবার কথা স্কুল থেকে মেয়েদের নিয়ে ।কি হবে এখন? রেখা ভীষণ রেগে গেল ।,যে মাসিকে এত ভালবাসে সেই মাসিও রেখাকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে।
না এদের জন্য কিছু করা যাবে না।
কলিং বেলের আওয়াজ দরজা খুলতেই দেখতে পেলে চৈতির মা

 একেতে কাজ কর্ম নিয়ে নাজেহাল অবস্থা সেই সময় এসেছে চৈতির মা। চৈতির মার আলুথালু বেশ,চোখের দু'কোনে কালি। চৈতির মা কে জিজ্ঞেস করল
" কি ব্যাপার দিদি হঠাৎ এ সময় আপনি?"
"না আসলাম  ।
আমাকে আসতেই হতো।'
আপনি তো লেখিকা সমাজের বাস্তবতা নিয়ে আপনার লেখার রূপ দেন ।গল্পে বা উপন্যাসের আমাকে একটু জায়গা দেবেন আমাদের তো নশ্বর দেহ ওখানে আমাদের জায়গাটা চিরস্থায়ী থাকবে ।

চৈতির মার কথাগুলো যেন কেমন হতাশার মতো শোনাচ্ছিল "কেন, কি হয়েছে?'
 বসুন বসুন প্রথমে এক গ্লাস ঠান্ডা জল আর দুটো মিষ্টি দিল। "রোদে তেতে পুড়ে এসেছেন। 
আগে একটু বিশ্রাম নিন তারপরে কথা শুনবো।'
"আমার অত সময় নেই গো আমার কথাগুলো আপনি শুনুন।
আমার  জামাই আমাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করছে এই বাড়িটা
ওদেরকে লিখে দিতে হবে শুধু তাই নয় আপনার দাদার ট্রিটমেন্ট ভালো  করে করানোর
  দিকে ওদের কোন নজর নেই।"
এরমধ্যে রেখা দেখতে পেল চৈতির মার  দুই চোখ জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
"এ কথাগুলো আমি কাকে বলব দিদি,  উপরে থুতু ছিটালে নিজের গায়ে লাগে।
এত জ্বালাচ্ছে এত জ্বালাচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে 
না ।মেয়েটা তো এখন পোয়াতি ওকে কি দোষ দেব ?ওকে তো শ্বশুর বাড়ি ঘর করতে হবে জামাই এর কথা শুনে চলতেই হবে।"
"দাদার শরীর অবস্থা এখন কেমন?"
"ভালো নেই।"
কালকেই পার্থকে জিজ্ঞেস করছিলাম  দিদি, কবে বাড়িতে আসবেন, তুমি জানতে পারলে আমাকে একটু জানিও ।তারপর ভেবেছিলাম আমি করব তা আর পেরে উঠি নি। এত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম , কিছু মনে করবেন না দিদি।'
"আমি বুঝি আপনার সংসারের কাজ রয়েছে ,তারপর স্কুলে নানা কাজ নিয়ে আপনি ব্যস্ত এর ওপরে রয়েছে আপনার লেখালেখি।"
হঠাৎই রেখার হাত দুটো ধরে বলল *আপনার লেখায় আমি যেন থাকি ।"
রেখা তার জীবনে এই প্রথম কোনো বাস্তব চরিত্র তার কাছে আকুতি মিনতি করছে তার লেখায় স্থান দেবার জন্য।'
'দিদি আপনি খুব করে লিখবেন দোষ,গুণ ,ব্যর্থতা সার্থক জীবনের কথা আপনার সাহিত্যে রূপায়িত করবেন।'
রেখা মনে মনে ভাবছে কোন কোন গল্পের লেখক এর এর ভেতরে  কোন চরিত্রের আবেদন শুনতে পেয়েছে।
সাক্ষাৎ রেখার গল্প বা উপন্যাসের বাস্তব চরিত্র এভাবে আকুতি জানাবে এটা ভাবতে "পারেনি।
হয়তো তাই হবে তার জীবনের লেখক এর সাহিত্যের পাতায় এরকম কত চরিত্র আসবে আকুতি জানাবে। এক হিসেবে ভালো। কল্পনা করে চরিত্র অঙ্কন না করে হাতের কাছে চরিত্র যখন তার কাহিনী নিয়ে হাজির হয়। তখন লেখকের অত ভাবনা চিন্তা করতে হয় না।'
মনে পড়ে যায় লেখক সন্তোষ কুমার ঘোষ এর" পরমায়ু' গল্পের কথা।
লেখক সুরপতি চৌধুরী র প্রথমদিকে বেশকিছু গল্প ছাপা হয়েছিল  ।কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখা গেছে লেখক এর নামই ভুলতে বসেছে,  এমন কি যে প্রকাশক তার বইটাকে প্রকাশ করেছেন সেখানে গেলেও দেখা যায় য 
লেখক যখন নতুন করে বই ছাপানোর কথা বলেছেন প্রকাশক ক। তখন তার যুক্তি এখন সবই নতুন নাম নতুন বই তার মাঝে সুরপতি চৌধুরী মুছে যেতে বসেছে।
মনে পড়ে তার কাতর উক্তি"ভুল,সব ভুল।কত অবুঝ ওরা, সাধারণ মানুষ। লেখক এর কাছে অমরত্ব চায়, কিন্তু লেখক কের নিজের আয়ু ক' দিনের….।"
তাহলে কি রেখার এরকম অবস্থা হবে আজ রেখার লেখায় কত চাহিদা কত সম্পাদক তার কাছে লেখা চেয়ে পাঠান, কাতর অনুরোধ করেন
আজ তাঁর লেখা নাকি খুব খাচ্ছে সম্পাদকদের কথা অনুযায়ী ভবিষ্যতে কি এরকমই থাকবে নাকি! উইপোকা খাওয়া বাসা যেমন ঝুরঝুর করে পরে ঠিক তেমন অবস্থা হবে রেখার। ভাবতে ভাবতে ও যেন কেমন অস্থির হয়ে উঠল ।তারপর ভাবলো না না এটা কখনো হতে পারে না, কখনো হতে পারে না ।লেখকরা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকে সেই সৃষ্টি  মানুষের ভেতরে অনেক দূর পর্যন্ত শিকর গেড়ে বসে।
এসব ভাবছে আর কেমন যেন রেখা ঘেমে স্নান করে উঠছে।
আপন মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে ঠিক তখনই মনোজের ঘুমটা ভেঙে যায় মনোজ দেখছে "রেখা যেন কেমন বিছানায় শুয়ে পাগলের প্রলাপ বকছে যেন মনে হচ্ছে। আর হাত-পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে  তখন মনোজ রেখা কে ধাক্কা দেয় কি হয়েছে ?তোমার কি হয়েছে?
তখন বড় বড় করে মঞ্চের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে আমার কি হয়েছে?
তুমিতো আপন মনে বিড়বিড় করে কি যেন বলছিলে কি হয়েছে তোমার ?শরীর খারাপ লাগছে?"
এক গ্লাস জল এনে রেখা দিলো 'এই নাও জল খাও ।'
রেখা ঢকঢক করে জল খেলো তারপর বলল
"কই নাতো শরীর তো ঠিকই আছে।"
ও বুঝেছি তাহলে তুমি স্বপ্ন দেখছিলে?
রেখা  ভাবল "হ্যাঁ সত্যিই স্বপ্নই দেখছিল।

"খুব কি খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে?"
রেখা লজ্জা পেয়ে বলল, না ঠিক তা নয়। তারপর মনে মনে ভাবল এটা তার স্বপ্ন কিন্তু কতটা পরমায়ু। আচ্ছা বল তো এখন কটা বাজে ?।
পাঁচটা বাজে। এখন একটু ঘুমিয়ে নাও তোমাকে ডেকে তুলব।'
আর যদি মাসি না আসে আমি যদি ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে কি করে হবে?  আমার কলেজে যাবার কথা আছে।'
"না ,না ঠিক মাসি আসবে   মাসি ওরকম নয় আর সেরকম হলে আমি তোমাকে ডেকে দেবো।'
রেখা হো হো করে হেসে উঠলো বলল "বাবা তোমার ভরসায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি তারপর তুমি আর তোমার যা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে 
না ।তারপরে আমার কি অবস্থা হবে বলো ।দেখা গেল কপাল এমন খারাপ মাসিও কাজে আসলো না ,আর কখনোই কাজ সেরে নির্দিষ্ট টাইম এর ট্রেন না পেলে একটা  প্রোগ্রামের যাবার ব্যাপার রয়েছে। তাহলে আমার কি অবস্থা হবে ভাবো।"

"আচ্ছা তুমি সব সময় এত নেগেটিভ ভাবো কেন রেখা।"
"তাহলে কি করবেএখন উঠে তুমি কাজ করবে?'
রেখা মনে মনে ভাবল তাও তো ঠিক ।
"এক কাজ কর  আমি ঘুমাচ্ছি ,তুমি এলার্ম দাও মাসি যে টাইমে কাজে আসে ,সেই টাইম এর মধ্যেই । মাসি আসলেও ভালো না আসলেও ভালো।"
মনোজ বলে' এটা তুমি ভালো বুদ্ধি বাতলেছ, এটা করে দিই। এতে কারোর কোন টেনশন থাকবে
 না ।না আমার ,না তোমার ।কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারবে না।'
মনোজ এলার্ম দিল তারপর বলল আচ্ছা" আজকে তুতু কোথায় ?"
"তুমি আর ওসব কথা ব'লো না ।আজকে তুতু তো বাইরেই ছিলো। তুমি তো শেষে দরজা বন্ধ 
করেছ ।পরে যখন আমি ডাকতে গেলাম আসলো না ।তারপর তো বৃষ্টি হলো ।বৃষ্টির মধ্যে ভিজছে দেখে আবার আমি গিয়ে দরজা খুলে  দিয়ে।আবার সাটার টাও বন্ধ করে রেখেছো , সেটা খুলে ওদের ঢুকিয়ে দিলাম।"
"তা বেশ ।নাও তোমার জিৎ ',আমার হার। এবার ঘুমাও তো।"
মনোজ রেখার চুলে বিলি কাটতে কাটতে ঘুম পাড়িয়ে দিতে লাগল তারপর কখন যে দু জনা একে অপরের কাছাকাছি একটি বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে জানেই না। ঘুমিয়ে ভেঙেছে মাসির  কলিং বেলের আওয়াজে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০২





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০২

 পিসিমার কষ্ট

মমতা রায়চৌধুরী


মাধু ঘুম থেকে উঠে টুকিটাকি বাসি কাজ করে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছে। সবেমাত্র ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে দু "হাত জড়ো করে
"হে ভগবান ,সবাইকে ভালো রেখো ।আমার স্বামীকেও ভালো রেখো। ইদানিং ওর যেন কি হয়েছে ,কিছু বলছে না । মনটা ভাল নেই। ভগবান ওর মনের কষ্ট ,দুঃখ যাই হোক না কেন? সব লাঘব ক'রো।'
হঠাৎই মাধু একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় "মাধু ও মাধু ও মাধু মরে গেলাম গো ,এসো গো ,আমাকে বাঁচাও গো?"এ ধরনের আওয়াজ শুনে।
কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কোন দিক থেকে আওয়াজ  আসছে।

"হ্যাঁ ,এতো পিসিমার আ ওয়াজ।"
মাধু কোনরকমে ঠাকুরকে ভোগ  নিবেদন করে
আওয়াজের উৎসের দিকে ছুটল।
তখনো ডেকে যাচ্ছে 'ও মাধু ,ও সুরো আয়রে আমাকে  বাঁচা রে ,আমার কি হলো?"
মাধুর মাথার উপর দিয়ে তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে" নে বাবা ,কি হলো? কালকে রাত্রে তো দিব্যি খাবার-দাবার খেলেন ।আজকে সকালের মধ্যে কি হলো পিসিমার ?'ভাবতে ভাবতে ছুটল পিসিমার ঘরের দিকে।
 "পিসি মা তো ঘরে নেই ।তাহলে কোথায়?
 পিসিমা কি তাহলে কোথাও গিয়ে পড়ে গেলে ন।"
মাধু ডাকতে লাগলেন "পিসিমা, পিসিমা ,পিসিমা আপনি কোথায়?"
"ও মাধু আমি বাথরুমে।"
বাথরুমে ?কি হয়েছে? পড়ে গেছেন?"
"আর বোলো না আমি এখন কি করবো?"
"দরজা খুলেছেন?"
"হ্যাঁ ,কোন রকমে খুলেছি।"
মাধু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।
দেখছে পিসিমা বিবস্ত্র অবস্থায়, কমোডে বসে।
কি হয়েছে আপনার।"
এই অবস্থায়  নিজেরই লজ্জা লাগছে।
আর লজ্জা পেতে হবে না আমি তো আপনার মেয়ের মতোই।লজ্জার কি আছে?'
"আমি কত চেষ্টা করছি আমার পটি পরিষ্কার হচ্ছে না কালকেও তোমাদের বলিনি?'
"পরিষ্কার হচ্ছে না মানে কি?"
"মানে পায়খানার বেগ পাচ্ছে কিন্তু আমি পটি করতে পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।"
"আমার গুহ্যদ্বারে অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে।'
"আপনার কি কনস্টিপেশন আছে?"
"সে তো আছে একটু।"
"তাহলে কালকে  থেকে হচ্ছে বলেন নি কেন?'
*"ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে।"
"গ্যাস হয়েছিল? "
"হ্যাঁ"
"এগুলো কেউ চেপে রাখে পিসিমা ।এখন আপনি কত কষ্ট পাচ্ছেন ।বয়স তো হচ্ছে নাকি?'
"আর কত জ্বালাবে আমি তোমাদের?"
"তাতে কি কোন কিছু সুরাহা হলো?"
"ও বৌমা ,আমার কি কষ্ট হচ্ছে আমি বাঁচতে পারব না।"
"এই দেখো বেগ পাচ্ছে আমি আমি পটি করতে পারছিনা।"
করলো পিসিমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পটি করার সত্যিই পারছেন না।'
মাধু একটু সামনে গিয়ে  দেখে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
 উঠুন পিসিমা ,উঠু ন।"
"আপনার তো মলদ্বারে ওখানে চিরে গেছে মনে হচ্ছে?"
"হ্যাঁ।"
*খুব যন্ত্রণা হচ্ছে?"
"হ্যাঁ গো।'
"ঘেমে স্নান করে উঠেছেন।"
"হঠাৎ করে এরকম হলো কেনো?"
"আসলে ইসুবগুল খেতাম। সেটা শেষ হয়ে গেছে।"
"তাহলে বলতে হতো।"
"এখন কি করবেন?'
*আবার কি পটি  করার জন্য কোমটে বসবেন?"
"আমার লজ্জা ঘেন্না কোথায় গেল?"
"কি করবেন শরীর ঠিক না থাকলে এসব নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই।'
ইতিমধ্যে দরজার বাইরে সুরো এসে বললো "কি করছো তোমরা বাথরুমে ?আর পিসি এত চেঁচাচ্ছিল কেন?'
"ঠিক আছে, তুমি ঘরে যাও আমি পিসিমাকে দেখছি।"
"ভয়ের কিছু নেই তো? ডাক্তার কি খবর দিতে হবে?"
"ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ,ওষুধ নিতে হবে।"
"ঠিক আছে। তাহলে কি হয়েছে পিসিমার?"
পিসিমার  পটি শক্ত হয়ে গেছে, পটি করতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে, রক্ত পড়ছে।"
"সেকি?"
পিসিমা আবার বললেন আবার আমার বেগ পাচ্ছে, আমার ভয় লাগছে ।এবার আমি হার্ট ফেল করব।আমি এই কষ্ট করতে পারছিনা।'
"ঠিক আছে আপনি যান আস্তে আস্তে দেখুন পটিটা করতে পারেন কিনা?'
"পটি খুব শক্ত হয়ে গেছে বেরোচ্ছে না।"
"একটা কথা বলব  পিসিমা, কিছু মনে করবেন না। লজ্জা পাবেন ,আমি বাইরে যাচ্ছি  একটা পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি  দেখুন তো ওটা কাজে লাগিয়ে ,কিছু সুরাহা হয় কিনা?"
মাধুর কথাতে  যেন আশার আলো দেখতে পেলেন বেশ কৌতুহলী হয়ে বললেন " বলো বৌমা, বলো।"
পিসিমাকে দেখে  তখন মনে হচ্ছিল'এই অবস্থায় যদি কেউ বিষ পান করতেও বলেন, তাহলে বোধহয় করে ফেলবেন।"
মাধু বললো "একবার আঙ্গুল দিয়ে বের করার চেষ্টা করুন।"
"বলছো?"
"হ্যাঁ"
 যে শক্তটুকু আছে ওটা যদি বেরিয়ে যায়। তাহলে  এত কষ্ট হবে না। তখন বাকি মল স্মুথলি  বেরিয়ে আসবে।"
"ঠিক আছে সেটা একবার চেষ্টা করে দেখি।"
মাধু দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।
এরকম একটা সমস্যায় পড়েছিল মাধু শিখার বিয়ের সময়, তখন রেখা তাকে এই উপায় বাতলে ছিল।
পিসিমার এই কষ্ট দেখে যতদূর  সম্ভব রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গোপাল ভাঁড়ের সেই গল্পটার কথাই মনে পড়ে গেল।

পৃথিবীর বোধ হয় সেরা শান্তি পটিতেই আছে।
মাধু বাইরে থেকে বলল" পিসিমা  হয়েছে?'
পিসিমা বলল' হ্যাঁ সেই শক্ত মতো পটিটা হঠাৎ করে বেরিয়ে আসলো ,আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেবার পর।"
পিসিমা বললেন' কি শান্তি পেলাম গো বৌমা?'
"আপনি এখন একা বের হতে পারবেন তো?'
"হ্যাঁ পারবো ।আমি হাঁপিয়ে গেছি বৌমা।'
"ঠিক আছে আপনি আস্তে আস্তে শৌচ কর্ম করে বাইরে বেরিয়ে আসুন।
"আমি কি চলে যাবো? চায়ের জল বসাই গিয়ে।'
"আচ্ছা যাও।"
মাধু রান্নাঘরের দিকে যেতে  যেতে ভাবল কি রাশভারী মহিলা নিজের অহংকার ,ঐতিহ্য নিয়ে কত গর্ব করেছেন।
আজ সত্যিই সবকিছুই কালের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। সেই ঐশ্বর্যের অহংকার আজ আর নেই। আজ ছেলে বৌমা ঘাড়ের থেকে নামিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে ।তাইতো ছেলে বউ  খবর নেয় না।
কালেভদ্রে ছেলে কখনো কখনো ফোন করে কিন্তু কখনো বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে না।
কি দিনকাল পরলো?
আর এই পিসিমাই কি  মাধুকে কম কথা শুনিয়েছেন?"
এমন সময় ফোন বেজে উঠল। মাধু তখন ছাকনিতে চা ছাঁকছে। এ সময় আবার কে ফোন করল। ফোন বেজে রিং হয়ে কেটে গেলো।
আবার রিং হল। সুরঞ্জন বাথরুম থেকে চেঁচিয়ে বলল "কে ফোন করেছে একটু ধরো না?"
মাধু বলল" হ্যাঁ ,এই তো ধরছি ।হাতে একটু কাজ ছিল তাই ধরতে পারছিলাম না। এক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পিসিমার ঘরের দিকে যাবে সেই সুযোগে ফোনটা ধরে নিল।
"হ্যালো'
"কে !"
'আমি রেখা বলছি ।মাধু বৌদি?"
"আরে সকাল সকাল লেখিকার গলার আওয়াজ  কি সৌভাগ্য ,কি সৌভাগ্য!"
"সবাই ভালো আছ?"
"হ্যাঁ ভালো আছি কিন্তু আজ সাতসকালেই তোমার একটা টোটকা  দেয়া ওষুধটা পিসিমার ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করেছি।"
*আমার দেয়া টোটকা কি গো বৌদি?'
"আর বোলো না পিসিমার তো হেভি কনস্টিপেশন হয়ে গেছে। সেই পটি করতে গিয়ে পটি আটকে গেছে।"
রেখা বলল "ও হো, খুব কষ্ট পেয়েছেন তাহলে উনি ,।বুঝতে পেরেছি কি টোটকার কথা  
বলছো ।ওষুধ খাইয়েছো কিছু?"
"তোমার দাদাকে বলেছি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে।"
"আচ্ছা উনার কি গ্যাস ফর্ম করে?'
"হ্যাঁ সে তো করেই।"
 মাধু ফোনটাতে কথা বলতে বলতে চা এর কাপটা হাতে নিয়ে পিসিমার ঘরের দিকে গেল।
তাহলে এই ওষুধটা খাইয়ে দেখতে পারো mom plus suspension '
"প্রথম ওষুধ টা কি কাজ করেছে?"
হ্যাঁগো কিছুটা হলেও করেছে কিন্তু বয়স হয়েছে তো পিসিমার অবস্থা দেখে আমার একদমই তখন ভালো লাগেনি।,,""
খুব কষ্ট পেতে হলো,।' দেখো এই ওষুধ টা খাইয়ে না হলে পরে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিও।"
*দেখো সারা সারাক্ষণ প্রয়োজনের কথাই বলে গেলাম  তোমাদের কথা জিজ্ঞেস করা হলো না।তোমরা সবাই ভালো তো?'
"এইতো চলে যাচ্ছে বৌদি ,।ভালো থাকার চেষ্টা করা ছাড়া তো আর কিছু করতে পারি না আমরা।'
"সে তো ঠিক কথাই।'
"হ্যাঁ, যে কারণে ফোন করেছিলাম  বলছি বৌদি শিখার ফোন নম্বরটা একটু আমাকে দিতে পারবে?"
এভাবে কেন বলছো শিখার ফোন নম্বর তোমাকে দেব না ।আচ্ছা একটু হোল্ড করো। আমি পিসিমাকে চায়ের কাপটা দিয়ে তোমাকে নম্বরটা বলছি।"
"এখন কেমন আছেন?"
পিসি,মা, তো বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছেন তারপর বলল "ওই আছি বৌমা ।খুব যন্ত্রণা হচ্ছে গো।"
'ঠিক আছে চা খেয়ে নিন।"
শুনুন যেহেতু সকাল বেলাটা আপনি চা খান তাই দিলাম। বেশি চাপ দেবো না ।শরীর কসে যাচ্ছে এবার একটু করে শরবত দেবো ।গরম পড়েছে ঠিক আছে কিছু মনে করলেন না তো?'
একটু মলিন হেসে বললেন "না '।মাথা নেড়ে।
"কালকে লুচি খাওয়াটা ঠিক হয়নি?
কিছু মনে করলেন না তো? যখন আগের দিন থেকে বুঝতেই পারছিলেন যে পটিটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমাকে একটু বলতে পারতেন আপনাকে আমি ওটস দিতাম।'
রেখা সব কথাগুলো শুনছে তারপর বললো "বৌদি ভাই ,তাহলে তোমরা কথা বলে নাও আমি পরে তোমাকে ফোন নম্বরটা নেব।"
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে পরে ফোন করে দিয়ে দেবো নম্বর। কিছু মনে করলে
 না তো ভাই?"
"কি যে বলো না মনে করবো কেন গো?"
আচ্ছা তাহলে  ব্রেকফাস্টে আপনাকে ওটস দিই।'
"পিসিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।'
"ঠিক আছে একটু বিশ্রাম নিন ।আমি পরে আসবো ।ও বাথরুম থেকে বের হচ্ছে ,ওকেও চা দেবো ।জলখাবার  বানাবো ।এখনো তো কাজের মেয়েটা কাজ কাজে আসেনি। জানি না আসবে কিনা ?রাজ্যের কাজ পড়ে  রয়েছে।"
পিসিমা বললেন  হ্যাঁ জানি বৌমা ,তোমাকে একা হাতে সবকিছু করতে হয় আর আমিও একটা বাড়তি বোঝা হয়ে গেছি মে কি করি বলো তো?'
পিসিমা সবসময় এরকম কথা বলেন
কেন ,,?এটাতো নিজেরও বাড়ি নাকি? আমি কি কখনো কিছু বলেছি আপনাকে,। কিছু মনে করবেন না ।আপনার এই কষ্টটা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে  চেপে রাখলেন কতটা কষ্ট পেতে হলো বলুন তো?"
শুধু কষ্ট বলে কষ্ট বৌমা। এখন তো আমার ভয়ই লাগছে পটি পেলে আমি কি করবো?"
এবার পটি যাতে নরম হয় সেই ব্যবস্থা করছি  দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে ।এবার চাটা খেয়ে নিন। "মাধু পিসীমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বেড়িয়ে আসল।
পিসিমা যে কষ্ট টা পেয়েছেন তার মধ্যে হঠাৎ করে একটুখানি যেন রিলাক্স মনে হচ্ছে।একটু শান্তি পাচ্ছে। যতই হোক নিজের ছেলে, ছেলে বউ তো নয় ,সব কথা তো বলা যায় না। তবুও মাধু যেভাবে পিসিমার সাথে কথা বলে ,সে ওর কথাতেই যেন একটা আলাদা মানসিক শান্তি পেল শুধুই যন্ত্রনা যদি সেরে যায় । পটি টা যদি একটু পাতলা হয় তাহলেই শান্তি এই ভেবে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখল সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে পিসিমার বিছানার ওপর । গত রাত্রেও যে হারে বৃষ্টি হয়েছে , ভাবতেই পারে নি যে আজকে রোদ উঠবে ।তাই দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা চিরস্থায়ী নয় ।
এসব কথা ভেবেই পিসিমা মনে মনে খুশি হলেন।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস টানাপোড়েন ২০১





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০১
নানা চিন্তা
মমতা রায়চৌধুরী

মনোজ অফিসে বেরোনোর পর রেখা ক্লান্ত মন নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছিল ,যেন বিছানা চাইছিল রেখার শরীরটা। কি আশ্চর্য ব্যাপার ঘুম এসে 
গেছিল ।হঠাৎই তুতুর কিউ কিউ আওয়াজে ঘুম ভাঙলো ।ঘুম থেকে উঠে দেখছে তুতু রেখার বালিশের কাছে এসে হাত দিয়ে ডাকছে আর আওয়াজ করছে ।সত্যি একটা অবলা জীব কথা বলতে পারে না কিন্তু কি সুন্দর অনুভূতি ।রেখা তাকাতেই এমনভাবে তাকাল তারপর উসখুস করতে লাগল ।তখন রেখা বুঝতে পারল 'ও বাইরে বেরোবে' ।
রেখা বললো "আহা মা ,আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সরি ,সরি ।চলো, চলো, চলো গেট খুলে দিচ্ছি।
গেট খুলতেই তুতু দ্রুত ছুটে গেল বাইরে তারপরে ও বাথরুম করতে লাগল ।শুধু তাই নয় রেখা খেয়াল করলো বাথরুম শেষে ও কিছুটা দূরে গেল যেখানে  ও পটি করে।  রেখা বুঝল তার জন্য এত জোরে আওয়াজ করছিল  অন্যদিকে পাইলট ,মিলি সকলে রেখার কাছে এসে দাঁড়ালো।
পাইলটের মুখটা তো একদম ইনোসেন্ট এত সুন্দর মায়াবী চোখ ঝোলা ঝোলা  কান ।ও যখন তাকায় রেখা যেন ওর মায়াবী চোখে বাঁধা পড়ে যায় কিছুতেই ওর চাউনিকে উপেক্ষা করতে পারে না রেখা বললো কটা বাজে ।ঘর এর ভেতরে এসে দেখল ও বাবা সাড়ে তিনটে বেজে গেছে । তবে তো খিদে পাবেই। তাড়াতাড়ি রেখা ভেতরে গিয়ে ওদের খাবার নিয়ে আসলো ।প্রত্যেককে  ভাগ করে খাবার দিল । রেখা যখন দাঁড়িয়ে রইলো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখল চৈতিদের বাড়ি সে যেন মনে হচ্ছে একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তির মত একটা কালো রঙের চাদরে মোড়া ।চাদরটা যেন মাথার উপরে ঘোমটার আকারে তুলে দেয়া ।কেউ যেন এই বাড়িটার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি যেন মনে 
হচ্ছে ।কেন এরকম মনে হচ্ছে ?আগে বাড়িটা তো কখনো এরকম মনে হয় নি। চৈতিরা কতদিন নেই বাড়িতে কি একটা কুৎসিত  অদ্ভুত
 দূরদৃষ্টি ।রেখার ভয় হতে লাগলো ।দিনের বেলা তেই ভয়।
আপন মনে এসব ভাবছে ভাবনায় ছেদ ঘটালে" ও বৌদি "ও বৌদি"ডাকে।
রেখা অবাক হয়ে তাকালো।
পার্থ সাইকেল থেকে নেমে রেখার মুখের সামনে গিয়ে হাত নাড়তে লাগলো ,তারপর বলল" কি হল বৌদি ,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিবা স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
নাকি দাদার কথা ভাবছিলে? না তোমার উপন্যাসের কোন চরিত্র ,ঘটনার কথা ভাবছিলে?"
রেখা হেসে বলল"ও পার্থ   তুমি?"
"ও বাবা তুমি কি আমার চেহারা ভুলে গেলে নাকি?"
"আরে তা নয় গো। আসলে আমি ঘুম থেকে উঠেই ওদেরকে খেতে দিতে এসেছি। তারপর ওদের খাওয়া দেখছি আর ওইদিকে চৈতি দের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি । ওদের বাড়িটার দিকে তাকিয়েই ভাবছিলাম নানা রকম কথা।
পার্থ এসে বলল "তাও ভাল।"
"আচ্ছা পার্থ চৈতির বাবার কী খবর গো?"
"ভালো নয় বৌদি।"
"বৌদি কি এর মধ্যে বাড়িতে আসবে?'
"আজকে আসার কথা ছিল এখন আসবে কিনা আর ফোন করে জানা হয়নি, জানো?"
"তা তুমি যদি ফোন করো যদি আসে আমাকে জানিও তাহলে আমি বৌদির সঙ্গে একটু দেখা করব আর যদি আমি পারি আমি ফোন করে নেব।'
" ঠিক আছে।"
"মাসিমা কেমন আছে গো?'
"ওইযে বাতের ব্যথা।"
কিন্তু কে কার শুনে বলো। একটু সুস্থ থাকলে বসে থাকবে ?জল ঘাটতে থাকবে ঘাটতেই 
থাকবে ।জলের যেন পোকা।
" আসলে আগেকার দিনের মানুষ তো একটু পরিষ্কার পরিষ্কার বাতিক আছে না ?এদের সমস্যাটা তো এটাই।"
"কি বলবো রোজই কাজের মেয়ের সাথে এই নিয়ে অশান্তি  । বলে ভাল পরিষ্কার হয়নি কাজ আচ্ছা বৌদি, বলো নিজে যখন পারবো না অত কিছু করতে তাহলে সেটাই তো মেনে নিতে হবে।"
"জানি ভাই ,কিন্তু যারা পারে না চিরকাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে এসেছে তারাও নোংরা কাজ পছন্দ করবে না। আমার মাকে তো দেখেছি কাকিমাকে তো দেখি ।কাকিমা এখনো নিজেই করে নেয় কাজের লোক থাকলেও। দেখবে কাজের লোক বসে গল্প করছে ,আর কাকিমা কাজ করছে ,এরকম ও দেখা যায় ,ভাবো পার্থ।'

"হ্যাঁ দেখা যায়  এই গ্রহে তুমি দে।খতে পাবে ,মঙ্গল গ্রহে দেখতে পাবে কিনা জানি না।' বলেই দুজনা  হো হো হো করে হাসতে শুরু করল।
রেখা বলল' পার্থ ,তুমি পারোও বটে। আমি মাসিমাকে বলছি ছেলের দুষ্টুমির কথা।'
"ভালোই হলো তুমি তো আমাদের বাড়ির পথ ভুলে গেছো এই সুযোগে যদি একটু জানাশোনা হয়ে যায় '
রেখা বলল" না গো জানো তো কতটা চাপে থাকি হ্যাঁ সেতো জানি  তবে এখন একটু ছুটি যেতে পারো না  বৌদি?"
 ",যাবো যাবো এ কদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম ছুটি হলে কি হবে আমাকে তো বিভিন্ন কাজে স্কুলে ডেকে পাঠায় না ।এই দেখো না কালকেই আছে আবার যেতে হবে কলেজে ।এর আগে একবার কলেজে গেলাম এবার একটা কলেজে যাব আবার সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পুরস্কার নেওয়ার জন্য আমাকে যেতে হবে।'
"কেন যেতে হবে না তুমি এত কষ্ট করে মেয়েদেরকে রেডি করালে ,বড়দি ঠিক লোককে নির্বাচন করেছেন। না বৌদি, আমরা তো জানি আমরা তো কাছে থাকি তুমি কি ?নিন্দুকেরা যে . যা। বলে বলুক এই বৌদি কবে আছে কাকিমা?
আগামী সপ্তাহে উঠবেন । নাতনির জন্মদিন আছে বলতে পারবো না আমাকে তো বলে না ভাই কি করে জানবো বলো। সত্যি বিচিত্র এই পরিবার কি নেই তোমার মধ্যে বলতো ?বৌদি একটা মেয়ে এরমধ্যে চাকরি করছে সংসারের কাজ করছে তার মধ্যে এত সুন্দর সৃজনশীলতার প্রতিভা রয়েছে ।পার্থ থাক, আর বলো না আমার সম্পর্কে এত প্রশংসা আমি নিতে পারছি না চুপ করো তো ?বৌদি আমাকে বলতে দাও এগুলো কেন? কাকিমা কেন এগুলো মেনে নিতে পারেন না। জানিনা একটা ছেলের বউ সেখানে তোমাকে মাথায় করে রাখা উচিত একদিন নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে দেখো বৌদি বললাম তুমি এই নিয়ে মনে কোন কষ্ট রেখনা নাগো পার্থ আগে না প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হতো জানোতো এখন এসব ভাবি না কেন বলতো বল ওইটা ভাব আর কোন সময় নেই এখন নানা কাজে থাকি না পার্থ বলল তাহলে কোন একটা সময়ে তোমার মনা মনের চোরাবালিতে কখনো তো উঁকি দেয় দেয় না বৌদি তুমি বেশ ভালো কথা বলতো তোমার মতো গুছিয়ে বলতে পারিনা বৌদি তুমি একজন লেখিকা তার সামনে আমি কথা বলছি তুমি আমাকে এত সুন্দর একটা কমপ্লিমেন্ট দিলে তার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।
তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাবে না ভেতরে আসবে? এস চা খেয়ে যাও।
না বৌদি চা খেলে হবেনা যাচ্ছি আর তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো কেমন?
Ok
বৌদি ওই দেখো তোমার তুতু  কি করে বুঝলো তুমি এখন ভেতরে ঢুকবে ,এতক্ষণ  তো বেশ বসে ছিল ।দেখেছো, এখনো আগে আগে দরজার কাছে চলে গেছে। আবার পিছন থেকে দেখছি তুমি আসছো কিনা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা।
রেখা তাকিয়ে বলল'তুমি চলো তুতু মা 
 আমি যাচ্ছি ।"
 করো তো বৌদি ।আমাকে বলতে দাও ।এগুলো কেন কাকিমা  এগুলো মেনে নিতে পারেন না জানিনা ।একটা ছেলের বউ সেখানে তোমাকে মাথায় করে রাখা উচিত। একদিন নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে দেখো বৌদি, বললাম দেখে নিও।তুমি এই নিয়ে মনে কোন কষ্ট রেখ না।"
 "না গো পার্থ ,আগে না প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হতো জানো তো  এখন এসব ভাবি না । কেন বল তো? বল ওইটা ভাবার কোন সময় নেই এখন নানা কাজে থাকি না ?'
পার্থ বলল" তাহলেও কোন একটা সময়ে তোমার  মনের চোরাবালিতে কখনো তো উঁকি দেয় ।দেয় না বৌদি ? সত্যি করে বলো,,!
"তুমি বেশ ভালো কথা বল.তো ?"
"তোমার মতো গুছিয়ে বলতে পারিনা বৌদি তুমি একজন লেখিকা ,তার সামনে আমি কথা বলছি তুমি আমাকে এত সুন্দর একটা কমপ্লিমেন্ট দিলে তার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।
তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাবে ,না ভেতরে আসবে? এসো চা খেয়ে যাও।"
"না বৌদি, চা খেলে হবে না যাচ্ছি। আর তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো কেমন?"
'Ok'
"বৌদি ওই দেখো ,তোমার তুতু   কি করে বুঝলো তুমি এখন ভেতরে ঢুকবে ,এতক্ষণ  তো বেশ বসে ছিল ।দেখেছো, এখন আগে আগে দরজার কাছে চলে গেছে। আবার পিছন থেকে দেখছে তুমি আসছো কিনা। আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা।"
রেখা তাকিয়ে বলল'তুমি চলো তুতু মা 
 আমি যাচ্ছি ।"
রেখা বললো "ঠিকআছে ,পার্থ আস ছি।"
"এই যা পার্থকে তো বলা হলো না  সঞ্জীবনী তে
রোগীর ভিড় কেমন আছে?"
রেখা তাড়াতাড়ি সিঙ্ক এ   বাসন টা রেখে হাত ধুয়ে পিন্টুকে ফোন লাগালো। চারটের সময় যাবার কথা চারটে তো বেজে গেল।
ফোন করলে আবার দেরি হবে দরকার নেই রেডি হয়ে বেরিয়ে চলে যাই রিপোর্টটা নিয়ে ডাক্তারবাবুর কে দেখিয়ে আসি ।'বলেই তাড়াতাড়ি করে সালোয়ার কামিজ পড়ে ফেললো আর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে তুতুকে ঘরের ভেতরে রেখে দিয়ে বাইরে শুধু কলাপসিবল গেট টা তালা লাগিয়ে দিয়ে গেল।
সঞ্জীবনী পৌঁছাতে ই এখনো কত রোগী ভর্তি।
অনেকেই রেখাকে জিজ্ঞেস করল 'আপনার টোকেন নম্বর কত?'
বলল-আমাকে তো টোকেন নম্বর দেয়নি তবে বলেছিল এই টাইমে আসতে কারণ আমি এর আগেই নাম লিখে রেখেছি ।"
আমরাও তো অনেক আগে এসেছি অনেকেই আপত্তি জানাল।
"ঠিক আছে আপনাদের হওয়ার পরেই নাই আমি যাব তার আগে আমি যাদের সাথে কথা বলেছি তারা কি বলে ,দেখি আগে কথাটা শুনে।"রেখা
মেডিকেল শপ এর দিকে এগিয়ে গেল পিন্টু কে বলল "এই পিন্টু কখন আমার সময় দেখানোর?"
"
এইতো এক্ষুনি।'
"কিন্তু এক্ষুনি বললে তো  হবে না ।আমাকে কি  ঢুকতে দেবে ?'
রেখাকে টোকেন  নম্বর 56 দিল।এখন চলছে 51 নম্বর।"
রেখার তাড়া এই কারণে তুতুকে ঘরে বন্দি করে এসেছে।
"কি করছে কে জানে?"
নানবিধ চিন্তা এসে মাথায় চাপলো।
এরমধ্যে পিন্টু এসে বলল" আজকে বৌদি দেখানো হবে না?"
"কেন কি হয়েছে?"
"আর্জেন্ট কল এসেছে ডাক্তারবাবুকে যেতে হবে।
ও বাবা তাহলে কি হবে?"
'দেখে নিই আগামী সপ্তাহে রাখতে পারবো । ?"*ডাক্তারবাবু আসতে পারবেন কিনা তোমাকে জানিয়ে দেবো।"
 
কিন্তু আমাদের কাছ থেকে যে এডভান্স টাকা নেয়া হয়েছে সেগুলো?
সেগুলো ফেরত দিয়ে দেবো।
এমনিতেই ভয় লাগছে।
এযেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া মত টনটন করছে।

২৯ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯০




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০০

রেখার মনের গলিগুপচি

মমতা রায় চৌধুরী


সারারাত ঘুম আসছে না বলে রেখা ভাবল কত কত লেখা জমে রয়েছে, পত্রিকার জন্য পাঠাতে হবে ।বসে বসে বরং তাতে কিছু কথাকে গল্পের পাতাতে রূপ দান করলে কাজে দেবে। আচ্ছা সুমিতাকে নিয়ে   লিখলে কেমন হয় ।আপন মনেই উত্তর পেয়ে গেল ভেরি গুড ।তা বেশ সুমিতা আজ রেখার মনের গলি গুপচির আজকের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ওযে ভেতরে ভেতরে কতটা ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত তাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবে।
টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে মোবাইল স্কিনে  dox ফাইল বের করে টাইপ করে যেতে লাগলো।
লিখতে লিখতে ভোর হয়ে গেল। এবার চোখটা জড়িয়ে আসছে। মাথা রেখে কখন টেবিলের উপরে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।
ঘুম ভেঙেছে কলিং বেলের আওয়াজে।
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে সাড়ে ছয়টা বাজে। বাপরে কত বেলা হয়ে গেছে ।বড়ো করে একটা হাই তুলল রেখা। মনোজ কি সুন্দর অকাতরে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। তুতু ও ঘুমিয়ে আছে।
তবে তুতু রেখার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে 
আছে ।রেখা তুতুকে একটু আদর করে দিল। তারপর দরজা খুলতে গেল ।দরজা খুলতেই দেখলো কোন ফাঁকে আবার তুতুও উঠে পড়েছে?/
তুতু  সোজা গেট খুলতেই বাইরে বেরিয়ে গেল তারপর হিসু করতে শুরু করলো।
মাসি জিজ্ঞেস করল" কি বৌমা রাত্রে তোমার ঘুম হয়নি?"
"না গো মাসি।তবে ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ।তোমার  কলিং বেল টেপার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো।"
কথা বলতে বলতে মাসি ভেতরে ঢুকলো।
তারপর বলল "আমাদের কি আর ঘুম আছে গো বস্তিতেও আমাদের কারোর চোখে ঘুম ছিল না।"
"সুমিতাকে কি ধরে নিয়ে গেছে ?"
" হ্যাঁ সেজন্যই তো।"
"সুমিতা কত মিনতি করল যে ওর বাচ্চা আছে ওর কোন দোষ ছিল না । লোকটাই জোরজবস্তি করে ওর ঘরে ঢুকেছিল, নিজেকে বাঁচানোর জন্যই সে এরকম কাজ করেছে।"
একজন পুলিশ অফিসার তো বেশ টিপ্পনি কেটেই বললো "মরদ ঘরে ঢুকিয়েছিস ,পোষায় নি তখন তাকে আঘাত করেছিস, এখন বড় বড় কথা না?চল, চল থানায় চল  কোর্ট এ চালান করে দেবো, বিচার হবে ,তখন যা বলার বলিস?"
সুমিতা কেঁদে ককিয়ে বলল 'স্যার আমাকে বাঁচান।বাচ্চার  জ্বর না  সারা পর্যন্ত আমাকে একটু সময় দিন।"
"কেন তখন তোর মনে ছিল না?"বলেই
মহিলা কনস্টেবল কি নির্দেশ দিল ওকে চুল ধরে পুলিশ ভ্যানে তুল তে।
রেখা বলল "সে কি গো?"
অন্যদিকে বনোয়ারিলালের লাশটাকেও পুলিশের ভ্যানে করে চাপিয়ে নিয়ে গেল ময়নাতদন্তের পাঠানোর জন্য।"
"সে , বৌমা সুমিতার যদি কান্না দেখতে তোমারও বুক চাপড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করতো।'
মাসি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো "সত্যি কথা বলতে কি বৌমা ,ও কোঠি ঘরে জীবন কাটিয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের বস্তিতে ওকে আমরা খারাপ কোন কিছু দেখি নি  মিথ্যে কেন বলবো বলো ?"
রেখা যে কি বলবে কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না।
মাসি আপন মনে বলে যেতে লাগলো' মানুষ কি চায় আর কি পায় বল ?সবই ভবিতব্য নিয়তির লেখা কেউ খন্ডাতে পারে না।
নইলে ও তো চেয়েছিল স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সমাজ ব্যবস্থা কি সেটা হতে দিল?"
রেখা বলল' মাসি তুমি হাতের কাজ একটু গুছিয়ে নাও ,আমি ও একটু ফ্রেশ হয়ে গোপালকে ভোগ চাপিয়ে আসছি ,তারপরে তোমার কাছ থেকে অন্য কথা শুনবো।"
মাসি বললো "আজকে আমার কোন কাজই করতে ইচ্ছে করছে না বৌমা, শুধুই মনে মনে চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য।"
সেইতো  রেখা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশ রুমে গেল তারপর ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে আসলো গোপালকে ভোগ চাপা ল । গোপালের কাছে রেখা প্রার্থনা করলো সুমিতা যেন শান্তি 
পায়।"গোপালকে ভোগ চাপিয়ে এসে রেখা রান্নাঘরে চা এর জল  বসাল।"
মাসি তখন কলতলাতে ছিল । কৌটো থেকে কতগুলো বিস্কিট নিয়ে তুতু মিলি ,পাইলটদের খেতে দিল।
এর মধ্যেই মাসি বাসনগুলো মেজে ধুয়ে রেখার সামনে এসে দাঁড়ালো। রেখা মাসির দিকে তাকিয়ে দেখে মাসির চোখ দুটো ছল ছল করছে  ।
 রেখা বলল ও মাসি ও মাসি তোমার জল খাবার টা দি ই?'
"কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না বৌমা।"
"অন্য আমিও কিছু বানায়নি তোমাকে মুড়িই দেবো খেয়ে নাও।"
রেখা ,মাসি না করার আগেই মুড়ির বাটিটাতে কিছুটা চানাচুর ,আর এক কাপ  এনে মাসিকে দিল স,ঙ্গে দুটো রসগোল্লা।
মাসি বললো " এতকিছু কেন দিলে বৌমা?"
'কোথায় এত কিছু ,?খেয়ে নাও ।তারপর বলো পরের ঘটনা।'
"ও যখন  কাঁদছিল  বৌমা, ওর শক্তি ও যেনো খানিকটা মরে গেছিল শেষের দিকে কান্নাটা ওর মনে হচ্ছিল যেন পাতালের অন্ধকার ঘরের থেকে উঠে আসছে।'
শুধু যাবার সময় বারবার আমাদেরকে বলল 'আমি কি দোষ করেছি আমার বাচ্চাটা কি দোষ করেছে ।আমি তো ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম ,কেন আমার সাথে এরকম হলো? তার জলভরা চোখ দুটো যেন মনে হচ্ছিল বিদ্যুতের শিখা ,তার চোখ-মুখ একেবারে মনিহারা সাপের মত অবস্থা হয়েছিল, এতটাই অসহায় লাগছিল যে আমরাও ওকে সান্তনা দেবার মত কোন ভাষা খোঁজে পাচ্ছিলাম না।"
রেখা বললো "সবই বুঝতে পারছি?"
"জানো বৌমা, ও সংসারটাকে এতটাই ভালবেসে ছিল ,জীবনকে এতটাই ভালবেসেছিল  যদি ইচ্ছা করত আরেকটু সুখ-স্বাচ্ছন্দ পেতে পারত । কিন্তু সেটাও করে নি দেখতে সুন্দর ছিল গায়ের রং ফর্সা টুকটুকে , রোগা পাতলা গড়ন। লোকের বাড়ি কাজ করত, তবুও ওর গায়ের রং থেকে একটা যেন আলাদা দ্যুতি বেরোতো।কত মরদ ওর জন্য পাগল ছিল কিন্তু পাত্তা দেয়নি কাউকে  আমরা তো বস্তিবাসী আমরা জানি।"
"সবই ভবিতব্য মাসি, নিয়তি।"
মাসি একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল "আসি বৌমা"।
রেখা বলল  "এসো।
"আর তুমিও সাবধানে যেও। তুমি তো টলছ দেখছি ।তোমার আবার প্রেসার ট্রেসার ফল করে নি তো? ওষুধ খেয়েছো প্রেসারের ।"রেখা দরজা কাছে গিয়ে বলল।
"ওই দেখো বৌমা একদম ভুলে গেছি।'
"চোখ-মুখ কথা বলছে তোমাকে দেখে আমার মোটেই ভালো লাগছে না।
" তুমি কি একটু বসে যাবে? যেতে পারবে বাড়ি?"
"হ্যাঁ ,পারব যেতে।"
"তুমি কি হেঁটে যাবে ?"
"দুবেলা টোটো করে যাওয়া জন্য কোথায় টাকা পাবো বৌমা?'
"থাক তোমাকে আর কথা বলতে হবে না। তুমি এখানে দাঁড়াও ।হেঁটে যেতে হবে না।'
ইতিমধ্যে একটা টোটো পাস করছে।
রেখা জোরে ডাকলো" অ্যাই টোটো, অ্যাই টোটো,'
টোটো দাঁড়ালো।
 'যাবেন?'
স্টেশনের দিকে যে বস্তি আছে ওখানে?
"হ্যাঁ যাবো।'
"মাসি ওঠো ।"
মাসিকে ধরে টোটেতে চাপিয়ে দিল তারপরে টোটো ওয়ালা কে বলল " দেখবেন ওনাকে একটু সাবধানে নানিয়ে দেবেন কেমন?'
 টোটোওয়ালা ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখন রেখা বললো "দাঁড়ান ,দাঁড়ান, দাঁড়ান।"
রেখা দশটা টাকা টোটোওয়ালকে দিল।

রেখা বলল "মাসি ,যদি শরীর ঠিক থাকে তবেই কালকে কাজে এসো ,আর যদি না আসতে পারো অবশ্যই আমাকে জানিও।'
মাসিকে বিদায় জানিয়ে রেখা দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নটা বাজে।
রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি বসাল। কি রান্না করবে পাঁচমিশেলি একটা সবজির তরকারি সে বসালো  মনোজ কখন গেছে বাজারে এখনো ফিরল না। আর একটা দিকে  চাল দিয়ে ভাতের হাঁড়ি বসিয়ে দিল।
রেখাও একটু মুড়ি চিবোতে লাগলো। এর মধ্যেই কলিংবেলে র কলতান বেজে উঠলো।
রেখা গিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখল মনোজের দুই হাতে দুটি ব্যাগ ।
"এত বাজার করেছো ?এই জন্যই তোমার দেরি হচ্ছিল।ঘামে স্নান করে গেছ ।"
 ব্যাগ দুটো নামাতে নামাতে বললো "এক সপ্তাহের বাজার আছে লাগবে না?"
"কি মাছ  এনেছ?"
"ভেটকি পেয়েছি। কুচো চিংড়ি নিয়েছি লাউ দিয়ে করার জন্য।"
"ভালো ।এখন তোমাকে কি করে দেবো ভেটকি পাতুরি করা তো এখন সম্ভব নয়।"
"তাহলে  একটু করে দাও  ঝোল টোল।"
মনোজ বাথরুমে ঢুকলো রেখা এদিকে সবজিগুলো ব্যাগ থেকে নামিয়ে ফ্রিজের থেকে বাজার রাখার ব্যাগ গুলো বের করে সবজি ভরে রাখলো।
মনোজ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সরাসরি ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো 'ব্রেকফাস্ট কি বানিয়েছো? দেরি হয়ে গেছে আমার।'
রেখা বলল আজকে ব্রেকফাস্ট সেভাবে কিছু বানাইনি তুমি কি খাবে বলো আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
তাহলে বাটার টোস্ট বানিয়ে দাও। আর ডিম সেদ্ধ করে দাও।'
Ok
আর লাঞ্চ টিফিন ক্যারিয়ারে দিয়ে দাও।
মনোজ খেতে খেতে বলল "আজকে সঞ্জীবনী 'তে কিন্তু ডাক্তার সুধাংশু শেখর ঘোষ বসবেন তুমি রিপোর্টটা দেখে নিও।"
" তাহলে তো নাম লেখাতে হবে।"
"আমি পিন্টুকে বলে রেখেছি।'
Ok।
"রিপোর্টে কি বলবে কে জানে?"
মনোজ  বলল;"ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন ?আগে রিপোর্ট টা দেখুক না ডাক্তারবাবু ।তারপর তো ডিসিশান নিতে হবে।"
তবুও রেখার ভিতর যেন একটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ওদের স্কুলে যা খারাপ অবস্থা যাচ্ছে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু টেস্ট করলে খারাপ কিছু বেরোচ্ছে। রেখার মনে র আঙিনার গলিগুপচিতে তারই ছায়া দেখতে পাচ্ছে।

কবি দেবব্রত সরকার এর কবিতা "অপার্থ"






অপার্থ
দেবব্রত সরকার

বেকার মেরে মোহের ঘরে দেদার টাকা ঢালছে
আজকে সে যে প্রাক্তন তিনি মন্ত্রী ছিলেন কালকে
যে অর্পিতা নয় সর্পিতা নয় গরিব পার্থ একলা
অপার ঘরে টাকার চূড়া তাকিয়ে রাজ্য দেখ্লা

উনীই হল মশাই মুন্ত্রী উন্নয়নের বক্তা 
আছেন দিদি সামলে নেবে এটাই যেনে পক্তা 
আসল খেলা গরিব মেরে দলের ভোটে ঢালছে
আজকে সে যে প্রাক্তন তিনি মন্ত্রী ছিলেন কাল যে 

ভাঙছে জেলা নিজের স্বার্থে সিলমোহরে ডাকলে
জানেন তিনি আফ্রিকা নয় শুনতে পাবে  হাঁকলে
বোঝায় কাকে বলুন দেখি একার মতে সবটা
চালান করে খরচা পাতি লিখেছে বই কয়টা

অনেক প্রশ্ন দালাল বলে রাজনীতিতে ধর্ম
চেয়ার দেব বছর ঘুরে দেখাও দেখি কর্ম 
আসল কথা জলের মত মানুষ মেরে কুর্শি
মারছে তুলে মাছের মতো ধর্ম নামক বর্শী

একাই তিনি সামাল দেন বিশেষ কিছু দপ্তর
এটাই তিনি পারদর্শী অবাক করে সত্ত্বর
সে সব কোথা পড়ছে ঢোলে নজর রাখে এফ  রে
আজকে সে যে প্রাক্তন তিনি মন্ত্রী ছিলেন কাল রে।

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা "আত্মা জন্ম"




আত্মা থেকে
রুকসানা রহমান

আমি যখন ভ্রমণ করি তোমার ভিতরে
তখন আমার আত্মা থেকে জন্ম হয়
এক- একটি অনবদ্য কবিতার।
তখন  আরো বেশি কমনীয় হয়ে উঠি এই- আমি
 তোমারই ভিতর।

২৮ জুলাই ২০২২

কবি বানীব্রত এর কবিতা "ভরা থাক স্মৃতি শুধায় "





ভরা থাক স্মৃতি শুধায় 
বানীব্রত 

সেদিন সূর্য ঢলে পড়েছিল পশ্চিমাকাশে
গোধুলির আলো পড়েছে মোহরকুঞ্জে
নিয়নের আলো জ্বলেছে নন্দন চত্বরে 
সেই আলো বিদির্ন করে তোমার আগমন। 

সামনে ঘোষকের সুরেলা কন্ঠ
সুবোধ বাবুর মঞ্চে আনাগোনা
সাহিত্যের ভাষনে হাততালির কলতান
সেল্ফির বহর চলে চার দিকে।

শুধু দৃষ্টি বিনিময় ঠোঁটের কোনে হাসি
সময় বয়ে চলে রাত গাঢ় হতে থাকে
ঘরের ফেরার পালা সবার,
তারই মাঝে বিদায়ী করমর্দন। 

এরপর কফি হাউসের নিরালা বিকেলে
কল কোলাহলের মাঝে ছুঁয়ে দেখা
কফি কাপ হাতে  ঘন্টার পর ঘন্টা
শুধু দুজনে কুজনে সুজনে। 

কোনো এক তাপিত দুপুরের হাতছানিতে
দুটি মনের আকুল আর্তি
নিরালায় কাছে পাওয়া 
সুখের চাদরে মুহূর্তে ডুবে যাওয়া।

ভালোবাসার ছোঁয়ার স্পর্শ 
ওষ্ঠের উষ্ণ অভ্যর্থনা 
কতো ভালো লাগা
নিবিড়  বাধনে বাঁধা।

তবুও হয়ে গেল ভুল
মনের দ্বিচারিতায় অনিচ্ছাকৃত
পেলে কষ্ট  ভাষা হারালো 
ভালোবাসার কাছে। 

আজও আছে মনের অতলে
কষ্টের চাদরের নিচে,
অনুতাপের অনলে 
ক্ষমা করো তারে অন্তর হতে।।।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৯




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৯

বোবা কান্না

মমতা রায়চৌধুরী


রেখা তৈরি হচ্ছিল প্রোগ্রামে যাবার জন্য ভেতরে ভেতরে যে টানটান উত্তেজনা আর আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছিল মনের চোরাস্রোতে সেটা অনেকটাই থমকে যায় মাসির কাছে সুমিতার কথা শুনে ।তবুও রেডি হয়ে বেরুতে যাবে ঠিক তখনই তুতু দেখছে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।আসলে রেখা যখনি কোথাও বের হয় বা পোশাক-আশাক পরতে দেখলেই তুতু বুঝতে পারে যে কোথাও বেরোচ্ছে  রেখা তুতুকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করল বলল 
"আমি তো বেরোচ্ছি এক জায়গায় ,তুমি লক্ষী সোনা হয়ে থাকবে কেমন। দুষ্টু দুষ্টু করবে না যেন।"
তারপর রেখা ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে ঢং ঢং করে ছটা বাজলো।   মাসি অলরেডি কাজ করে চলে গেছে।
এখন ছটা বাজে সাড়ে ছয়টা থেকে প্রোগ্রাম শুরু এখনই বেরোতে হবে ।তার আগে ভাবলো একবা র পার্থকে ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়ে রাখবে ।যদি আসতে দেরি হয় তাহলে পার্থ তো ওদের খাবারগুলো দিয়ে দিতে পারবে। সেন্টুদা
 কে তো আর রাত্রিবেলায় পাওয়া যাবে না। পার্থকে ফোন লাগাল পার্থর ফোন রিং হয়ে গেল ধরল না।"
মনোজকেই ফোনটা করলো ও ভেবেছিল মনোজ অফিসে আছে ওকে বিরক্ত করবে না কিন্তু উপায় নেই কি আশ্চর্য একবার রিং হতেই মনোজ ফোনটা তুলে বলে' হ্যালো'
রেখা বলল "তুমি কখন ফিরবে?'
"আর বোলো না আজ একটু দেরি হবে গো ,তুমি বের হচ্ছ?"
"হ্যাঁ।"
"তোমার প্রোগ্রাম শেষ হবে ক'টাতে?"
"সাড়ে নটা টা থেকে দশটা।"
"আমারও মনে হচ্ছে আজকে নটা দশটা বেজে যাবে।
যদি আমি আগে পৌঁছে যাই তাহলে তো আমি ব্যবস্থা করে দেব।"
"রাখছি সাবধানে এসো।"
রেখা ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে কতগুলো বিস্কিট নিয়ে  বাইরে বেরোলো "তুতু  এসো, এসো ,বাইরে এসো "।
কলাপসিবল গেট লাগাতেই পাইলট এসে দাঁড়াল রেখার কাছে ।রেখা বিস্কিট হাতে ধরে ওদের দেখাতেই পাইলট ঈগলের মত ধা করে নিয়ে চলে গেল ।
তারপর রেখা টোটো ধরে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছালো কনফারেন্স হল টা খুঁজে বের করল ,সেখানে গিয়ে পৌঁছাতেই দেখা গেল অতিথিদের আসন আলাদা করে রাখা আছে। রেখা অতিথির আসন অলংকৃত করল ।অতিথিদের পরিচয় সঙ্গীতশিল্পীদের পরিচয় করানো হলো পরিচয় পর্ব শেষে অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথমে লোকাল কিছু শিল্পীর অনুষ্ঠান দিয়ে শুভ সূচনা হলো ।তারপরেই চমক থাকলো নৃত্যমোদি দর্শকদের জন্য।
"ভারতনাট্যম" এর বিখ্যাত শিল্পীUttiya Barua এবং তার স্টুডেন্টদের শুরু হল চমকপ্রদ নৃত্য প্রদর্শনী। সরস্বতী বন্দনা শৈব বন্দনা এবং শেষে শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার দুষ্টুমি চিত্র অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুললেন  তাদের অনবদ্য নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে  কি অসাধারন অভিব্যক্তি তা ভোলার নয়।
এর পরবর্তীতে ছিল" কুচিপুডি "এর বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীBiraj Roy এবং সন্দীপ Kundu নৃত্য প্রদর্শন। এখানেও তাদের স্টুডেন্টরা ছিল যারা অনেকে কুচবিহার থেকে এসেছিল, এসেছিল ভুবনেশ্বর থেকে।
এদের নৃত্য শৈলী ও  ছিল অতুলনীয়। অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শন চোখ জুড়িয়ে গেল।
এছাড়া ঢাকা থেকে এসেছিলেন  ওডিসি নৃত্য শিল্পী ।পরবর্তীতে শেষ লগ্নে গিয়ে তাদের নিবেদন ছিল ওডিসির বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীReebdhita Barua অসাধারণ নৃত্যকলা  প্রদর্শন ।পৌরাণিক কাহিনী রামায়ণের উপর ভিত্তি করে তৈরি ছিল তাঁর নৃত্য প্রদর্শন ।তাতে কি ছিল না ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকেও কিভাবে ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হয়েছে। একদিকে ষড়যন্ত্র ,অন্যদিকে বিশ্বাস ভালোবাসা ,ভাতৃত্ববোধ , প্রজা বাৎসল্য, বনবাস যাত্রা ইত্যাদি ইত্যাদি। সর্বোপরি একটা টান টান উত্তেজনা তাঁর নৃত্য প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছিল। কি অসাধারন অভিব্যক্তি ভুলবার নয়। রেখা আপ্লুত হয়ে গেছে।তার জীবন ধন্য।
সব শেষে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে এবং অতিথিদের ভাষণ ।রেখাকে যখন অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলো ।তখন রেখা শুধু একটা কথাই বলেছিল যে এত সুন্দর ধ্রুপদী নৃত্য শৈলী শহরের মানুষের মনটাকে নাড়া দিতে পারে নি ,তাই যদি হতো তাহলে সমস্ত কনফারেন্স হলটাই পরিপূর্ণ হয়ে যেত ।অন্যদিকে রেখা একথাও বলেছে তবে এটাই বাস্তব সবাইতো এই রস সাগরে ভেসে যেতে পারে না, হয়তো সব জায়গার অবস্থা এক ই রকম ।তবুও আশা রাখি ভবিষ্যতে এই সমস্ত ধ্রুপদী নৃত্য অনুষ্ঠান এবং শিল্পীরা তাদের সমাগমে এই শহর ধন্য হোক আগাম শুভেচ্ছা শুভকামনা জানাল আর রইল তাদের চলার পথে  সমৃদ্ধি কামনা।
সমস্ত রাস্তা টোটো তে আসার সময় রেখা বেশ উপলব্ধি করতে পারছে  রেখার হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে চলেছে অসাধারণ নৃত্য শৈলীর সুর মূর্ছনা। রেখা বাড়ি ফিরে এসে  দেখে মনোজ তার আগেই পৌঁছে গেছে। তুতু ,মিলি ,পাইলটদের খাবার দেয়া হয়ে গেছে মনোজ ড্রইংরুমে বসিয়ে নিউজ চ্যানেল চালিয়ে নিউ শুনছে রেখা এসে দাঁড়ালে রেখার দিকে একটু তাকালো আর হাসলো ।
রেখা বললো "কখন আসলে?"
"এইতো তুমি আসার মিনিট কুড়ি আগে।"
"তোমাদের অনুষ্ঠান কেমন হলো?"
*এক অনবদ্য নৃতশৈলী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যিই আমি ধন্য।"
"যাক তুমি তো এসব ভালোই বাসো ,তোমার মনটাও তাহলে ভাল হয়ে গেছে কি বলো?
সে আর বলতে। তবে ভেতরে ভেতরে সংগীতার জন্য চিন্তা হচ্ছিল কিন্তু মানুষকে সেটা বুঝতে দিল না।
ফ্রেশ হয়ে আসি।"
রেখা ফ্রেস হতে চলে গেল ওয়াশরুমে ।এই সময় হঠাৎই মনোজ রেখা রেখা রেখা আ. আ. আ বলে চিৎকার শুরু করল রেখা দরজাটা খুলে গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো কি কারনে এত গলাবাজি করছ। আরে সুমিতাকে খবরে দেখাচ্ছে?
*"কি দেখাচ্ছে?"
"জানিনা তবে সাংঘাতিক কিছু করেছে।"
রেখা দরজাটা বন্ধ করে সাওয়ারের কল টা খুলে দিয়ে আচ্ছা করে গা ঠান্ডা করছে।
রেখা মনে মনে ভাবচ্ছে আসলে মনোজের সবকিছু অজানা   তো 
তাই অবাক হয়ে যাচ্ছে। রেখা বাথরুম থেকে বেরোনোর সময়  টাওয়ালটা জড়িয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল সেখানে গিয়ে হাউসকোট পরে নিল।
রেখা বলল "তোমাকে খাবার দিয়ে দিই?"
"কি আছে আজকে?"
"ঐতো চিকেন রেজালা আর রুটি।"
"বেশ তাহলে দাও তাড়াতাড়ি ।"
"রেখা মনোজকে চারটে রুটি আর চিকেন রেজালা দিল।"
" নিজেও নিয়ে নিল।"
"খাওয়া-দাওয়া মিটতে মিটতেই 12:30।"
মনোজ একবার জিজ্ঞেস করল" কি হয়েছে ?কে বলেছে তোমাকে?"
"ঐতো সকালে যখন মাসি কাজে এসেছিল তখনই তো মাসির মুখেই শুনলাম।'
*তাহলে একটু বলো'",.
রেখা বলল "আজ আর নয় এমনি ক্লান্ত লাগছে শরীর।"
মনোজ বলল "ওকে।"
মনোজ উঠে চলে গেল।

রেখা যখন সব কমপ্লিট করে উঠলো তারপর নিজের রুমে গিয়ে দেখলো মনোজ ঘুমোচ্ছে নাক ডেকে।
রেখা মনে মনে ভাবল আজ বিছানায় যেতে না যেতেই ঘুমে ঢলে পড়বে।কিন্তু
একি কাণ্ড। রেখার ঘুম আসছে না বারবার শুধু এপাশ ওপাশ করছে। আসলে রেখার মনের চোরাবালিতে বারবার উঁকি দিচ্ছে সুমিতার ভবিতব্যের কথা ভেবে।
ঘুম আসছে না ভেবে রেখা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ঢং ঢং করে ঘড়িতে দুটো বাজলো । রেখার উপলব্ধি করলো শেষ রাতের স্তব্ধতা ।সারা শহর যেন ঘুমের দেশে চলে গেছে ।শুধু জেগে আছে যেন তার পোষ্য পালিত কন্যা ও তার ছেলে মেয়েরা। শুধু তাই নয় জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল সেই গুলুমলু কান ঝোলা কুকুরটা।শেষ রাতের ভৌতিক মুহূর্ত যেন মনে হলো এই পাথর আর কংক্রিটের তৈরি শহরটাকে দেখল। তার সঙ্গে এও দেখতে পেলো একটা কুকুর অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
রেখা ভাবতে লাগলো নিস্তরঙ্গ মহা সমুদ্রের মতো পৃথিবীটাকে যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন শান্ত হয়ে আছে। অথচ এই পৃথিবীর দিবালোকে কত কোলাহল .প্রবঞ্চনা দুঃখ-বেদনার ইতিহাস লুকিয়ে আছে
সুমিতা এখন খুনি। তার পেটের জ্বালা মনের জ্বালা, সমস্ত জ্বালার মধ্যে দিয়েই তার ভেতরে যেন একটা হিংস্র ঝড় উঠেছিল ,নইলে এরকম একটা কাজ কি কেউ করে?"
 সুমিতার ভিতর যেন একটা বোবা কান্না নিংড়ে নিংড়ে বেরোচ্ছে। অথচ ওকে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই।যে সুমিতা নতুন জীবন পেতে সংসার পেতে ছিল ,সেই সংসারও তার টিকলো না। উপরন্তু খুনের দায়ে তাকে জীবনের শেষ পরিনতি কাঁধে তুলে নিতে হলো।

২৭ জুলাই ২০২২

কবি মামুন তালুকদার এর কবিতা "তোমাকে মনে পড়ে"






তোমাকে মনে পড়ে
 মামুন তালুকদার 

অলস দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে
তোমাকে মনে পড়ে,
মুষল ধারে বৃষ্টিতে একলা ছাতা মাথায় দিয়ে 
তোমাকে মনে পড়ে। 
কারণে-অকারণে মনে পড়ে,
যখন তখন একশো বার মনে পড়ে। 
ক্লান্তিময় কর্তব্য শেষে পথের মোড়ে মোড়ে
তোমাকে মনে পড়ে। 
রবি ঠাকুরের শেষের কবিতায় 
তোমাকে মনে পড়ে। 
পিচ ভেজা রাস্তায়
হুড খোলা রিকশায়,
তোমাকে মনে পড়ে। 
পূর্ণিমার জ্যোসনায়
রাজহংসী নৌকায়
তোমাকে মনে পড়ে। 

সমুদ্র কল্লোলে কেমন হাহাকার জাগানিয়া শব্দে
তোমাকে মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে।
গোধুলির স্নিগ্ধতায় চুল ওড়া বাতাসে
তোমাকে মনে পড়ে, 
উদাসীন বিকেলে ঢেউ তোলা চায়ের কাপে 
তোমাকে মনে পড়ে। 
পাহাড় চুড়ায় মেঘের ছোঁয়ায়
তোমাকে মনে পড়ে।
জোনাক জ্বলা পাহাড়ী রাতে 
তোমাকে মনে পড়ে, ভীষণ মনে পড়ে। 
কথার খইয়ে তুরি মেরে উড়িয়ে দেয়া
বিরক্তিকর যানযটেও তোমাকে মনে পড়ে। 
অকারণে একশো বার যখন তখন মনে পড়ে,
তোমাকে মনে পড়ে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৮




টানাপোড়েন ১৯৮

সুমিতার হঠকারিতা

মমতা রায় চৌধুরী


রেখা আজ স্কুল থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে।বড়দিকে আগেই বলেছিল। বড়দিও ছেড়ে দিয়েছেন। আর দেবেনই না কেন?রেখাকে যখন যে অবস্থাতে যে কাজ করতে বলেছেন যেখানে যেতে বলেছেন ,সে ছুটে গেছে ।কাজেই একটা কৃতজ্ঞতাবোধ বলেও তো কাজ করে.। আজ একটি ক্লাসিক্যাল ডান্স প্রোগ্রাম সিডিউল ছিল অর্থাৎ"Inauguration of festival,6.30 p m
এটা রেখার কাছে ছিল একটা লোভনীয় প্রোগ্রাম কারণ  ওর ক্লাসিক প্রোগ্রামগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে আর সেখানে যদি সে আমন্ত্রিত হয়ে যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই। ভারতনাট্যম প্রেজেন্টেশন বাই দা ওয়ার্কসপ এটেন্ডেস এন্ড স্টুডেন্ট অফ নিত্য তরঙ্গিনী। ভারতনাট্যম বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীUTtiya Barua., Odissi  Reebdhita barua এবং kuchipudi  বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী Biraj Roy এবংSandip Kundu 
ভিতরে ভিতরে একটা উত্তেজনা কাজ করছিল কতক্ষণে সেই প্রোগ্রামের যেতে পারবে কতক্ষণে সেই আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যেতে পারবে এসব ভেবেই রেখা কেমন রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ল।
বাড়িতে এসেই ঝটপট ফ্রেশ হতে যাবে ঠিক করছে ঠিক তখনই তুতু ,মিলি পাইলটরা চেঁচিয়ে উঠলো । রেখা ভাবল" কি হলো ?"এজন্য বাইরে বেরিয়ে আসলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না । আবার যখন ভাবল যে এবার ফ্রেশ হবে ওয়াশ রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক তখন আবার
 চেঁচালো । রেখা আবার বাইরে বেরিয়ে আসলো তখন দেখতে পেল একদল ছেলে অকারণে লাঠি হাতে একবার এপাশ একবার ওপাশ করছে। রেখা  বললো ", তোমরা এই দিক দিয়ে লাঠি হাতে যাচ্ছ কেন?"
ছেলেগুলো বলল" আমাদেরকে তাড়া করছে '
রেখা  বলল
" অকারণে  ওরা কাউকে তাড়া করে না, কেউ বদমাইশি করে থাকলে তবেই কিন্তু তাড়া করে "
 আর তোমাদের বাড়ি কোথায় তোমরা এত  ঘোরাঘুরি করছো কেনো ?"
ছেলেগুলো কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।
রেখা গেটটা লাগাতে যাচ্ছে ঠিক তখনই তুতু পেছন থেকে কিউ কিউ করে উঠলো ।
 রেখা বললো "ওরে আমার সোনা বাচ্চা,। আমি তো তোমাকে খেয়ালই করি নি ।চলো ,চলো, চলো তুমি তো ভেতরে ছাড়া থাকবে না ।"তুতু সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকে এলো।
রেখা ফ্রেশ হতে গেল। ওয়াশরুমে ঢুকে বারবার মনে করছে যে ,মাসি কাজে আসবে তো ?আর একদিকে রয়েছে সেই অনুষ্ঠানে যাবার টানটান উত্তেজনা  চলছে ভেতরে ভেতরে । অন্যদিকে একটা টানাপোড়েন। 
 রেখা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো  একটু নাস্তা করবে বলে ফ্রিজে খুলে দেখল কি খাবার 
 আছে ।সেরকম কোন খাবার চোখে পড়ল
 না ।তবে চিকেন রেজালা টা ছিল তাই দিয়ে  ভাবলো যে ঠিক আছে একটু রুটি করে নিয়ে   চিকেন রেজালা দিয়ে খেয়ে নেবে।
 রুটি করতে করতে ই কলিংবেলের আওয়াজ তখন ভাবল নির্ঘাত মাসি এসেছে । রেখা ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখা গেল মাসি ই  বটে কিন্তু মুখটা যেন থমথমে কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকলো ।
" কি হল মাসী ,তোমার কি কিছু হয়েছে ?"
"আমাদের বস্তিতে তো এখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।"
" কেন কি হয়েছে ?পুলিশ এসেছে ।পুলিশ
 কেন ?কেউ কি চুরি করেছে ,না ডাকাতি করেছে যে পুলিশ এসেছে? নাকি সুইসাইড কেস?"
মাসি বলে" একটু জল খাওয়াবে বৌমা ।রেখা তো হ্যাঁ, বলে এক গ্লাস জল দিলো।
 তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে  মাসি বললো" কি বলবো তোমায় ,সুইসাইড ঠিক নয় ।তবে এতক্ষণ
বোধ হয় মারা গেছে।"
"কে মারা গেছে?"
" আরে তোমাদের বাড়িতে কাজ করত 
না ?,"
"কে কাজ করত ।বেশ কয়েকজন কাজ করে গেছে । কার  কথা বলছো তুমি?"
বিরক্ত স্বরে মাসি  বলল' তোমাদের বাড়িতে কাজ করে গেছে আমি আসার আগে।"
" সুমিতার কথা বলছো ?"
""হ্যাঁ গো ,হ্যাঁ।"
" কেন ওর আবার কি হয়েছে?"
"কেন ও মারা গেছে?"
মাসি বললো" মারা যায়নি তবে ও এবার মরবে।"
"ভনিতা করা ছাড়ো তো ,কি হয়েছে সেটা খুলে বলবে প্লিজ ,আর আমারও তাড়া আছে 
কিন্তু ।"
" হ্যাঁ সেই জন্যই তো ,কাজে আসলো ।না হলে কি আজকে বেরোতাম। আজ আমাদের পাড়ায় গিয়ে দেখ কি অবস্থা।"
" কি হয়েছে?"
" আরে সুমিতার সম্পর্কে তো তোমরা কিছুই জানো না। সুমিতা তো ওই খারাপ পাড়ার মেয়ে ছিল  ওকে তবু  বিয়ে করে এনেছিল
 জীবন নতুন জীবন দেবে বলে। কিন্তু জীবন দু'বছর পর চলে যায় ওকে রেখে।"
রেখা আশ্চর্য হয়ে বলে "সে কিগো?"
" তবে মেয়েটা এমনি ঠিকই ছিল ও সংসার করছিল ।দেখ বৌমা কেউ তো আর স্বভাবদোষে ওখানে যায় না ।নিশ্চয়ই কোন সমস্যা 
ছিল ।জানিনা অতটা ইতিহাস ।"
 "তারপরে বলো কি হয়েছে ?"
"ও মেয়ে তো নতুন জীবন পেয়ে খুশি ছিল কেনই বা খুশি হবে না বলো কোঠি ঘরের জীবন কি ভালো?"
রেখা ভাবতে লাগল মনে মনে সত্যিই সুমিতা কেন যে মাঝে মাঝে এরকম ব্যবহার করত এবার বুঝতে পারছে।
মাসি আপন মনে বকেই যেতে লাগলো।
রেখার দিকে তাকিয়ে দেখল রেখা আপন মনে যেন কি ভেবে যাচ্ছে তখন বলল "ও বৌমা শুনতে পাচ্ছ,?"
রেখা বলে" হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।"
" বাচ্চাকে রেখে জীবন চলে গেল রেখাকে অথৈ জলের মধ্যে ফেলে দিয়ে।"
রেখা বলল" ব লো কি গো?"
এবার তো ওর খাওয়া জোটে না ঠিক করে ।তারপরে তো বাড়ি বাড়ি কাজ ধরিয়ে দিল , আমাদের পাড়ারই একটি কাজের মেয়ে।*
"আমার বাড়ি, তেও  তো করতো।
তবে কাজ ওর পরিষ্কার ছিল না গো মাসি আর এত মিথ্যা কথা বলতো।"
মাসি বললো," কেন যে মিথ্যা কথা বলতো আমরাও জানি না ।তবে কিন্তু মেয়েটা এমনি খারাপ ছিল না। নাটক এর মধ্যেই কুশীলব হিসেবে ঢুকে পড়ে  বনোয়ারিলাল বলে একজন লোক  । প্রতিদিন ওর বাড়ি আসতে লাগলো ।ওর আনাগোনা নিয়ে যখন পাড়া-প্রতিবেশী প্রশ্ন তুলল  তখন সুমিতা বলেছিল ওর বর   পাঠিয়েছে, উনার হাতে টাকা পাঠানোর জন্য, দেখভাল করার জন্য। ওই লোক নাকি ওর  বরের বন্ধু।"
'এখন তো কালকের ঘটনার পর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আসলে ঐ লোকটার  কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল ওর বর। আর কিছু টাকা সুমিতাকে দিতে বলেছিল । অথচ দেখো এই লোক প্রথমে বলেছিল দুর্দিনের বন্ধু হিসেবে এসেছে আর সে এখন গলার ফাঁস লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল  "।
"মানে কি গো?'
"কি বলবো বৌমা, এই তো গত রাত্রের ঝড়জলের সময় সুমিতা দরজা বন্ধ করে ছিল ।দরজা বন্ধ করে দিয়ে থাকার কথাই ব টে । থাকেনা কেউ তার উপর বৃষ্টি। এই দুর্যোগ ।সেই সময় দরজায় বারবার ধাক্কা দেয় ।"
"বলো কি মাসি,?'
 সুমিতা তখন বলেছে যে এত রাত্রে কী করতে তখন বলেছিল যে দরকার আছে দরজাটা একটু খুলতে জীবনদা পাঠিয়েছে।'
সুমিতার সাদা মনে কোন কাদা নেই মাঝে মাঝে সাহায্য করে টাকা পয়সা দিয়ে ওর নিশ্চয়ই কিছু আবার টাকা পয়সা হয়তো পাঠিয়েছে স্বামীর কথা  বললে কে না দরজা খুলবে বলো? এদিকে মেয়েটার জ্বর কিছু খাওয়াতে পারছে না ,নানা দিক থেকে দিশাহারা ছিল।
এই অবস্থাতেই সেই সাংঘাতিক  ঘটনা।
রেখার মনে আরও কৌতুহল জন্মায় তখন সে বলে কি ঘটনা?"
গতরাত্রে ওকে জোরজবস্তি ভোগ করতে চাইছিল আর সুমিতা সেটা বাধা দিতে গিয়ে যখন পেরে উঠছিল  না তখন হাতের কাছে বটি ছিল হঠকারিতার সঙ্গে কোপ বসিয়ে দিয়েছে।"
রেখা তো আশ্চর্য হয়ে চক্ষু একদম চড়ক গাছ বলে 'হ্যাঁ সুমিতা করেছে?"
"হ্যাঁ গো ,তাছাড়া তো কোনো উপায় ও ছিল 
না।"
রেখামনে মনে ভাবল" হ্যাঁ তা ই তো ।ঠিক সুমিতা আত্মরক্ষার জন্যই করেছে  এতে তো খারাপ  কিছু দেখতে পাচ্ছে না ।"
মাসি বললো" বলো এতে কি খারাপ অভিসন্ধি ছিল? কপাল খারাপ  হলে যা হয়।"
"সুমিতার তাহলে চলবে কি করে গো?"
মিথ্যে  বলব না বৌমা। এতকিছুর মধ্যেও কিন্তু ও খারাপ রাস্তা বেছে নেয় নি বরং বাড়ি বাড়ি কাজ করে যেটুকু হতো ওই দিয়েই সংসার চালানোর চেষ্টা করত। তবু যেন ওর মুখে  হাসিতুকু লেগে থাকত।
রেখার মনে মনে আফসোস হতে লাগলো ছি :ছি :ছি : সুমিতার কাজ থেকে ছাড়ান ঠিক হয়নি তারপর আবার ভাবল কি করবে এত কামাই করত ।এত কামাই হলেও তো রেখার চলে না।
 সে তো অনেক সময় দিয়েছিল যাতে শুধরে যায় যাইহোক রেখা যেন মনে মনে সুমিতার ভাগ্য খারাপ এর পেছনে নিজেকেও একটু দায়ী মনে করল।
মাসি বলল "আমিও গেছিলাম দেখতে । যদিও সুমিতা  নিজেই এসেছিল ,মানে হাতে তখন রক্তের দাগ ।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম বললাম কি করে হয়েছে ?তখন ও হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিল এবং ঘটনাটি পুরোটা বলাতে তখন আমরা বলি এবার বডি  সরাতে পারবে না  জানাজানি হয়ে যাবেই । পুলিশকে তো খবর দিতেই হবে।
সুমিতা বলল এছাড়া  কোনো উপায় ছিল না  মাসি বললো য"খন এই কথাটা বলল ওর চোখ দিয়ে তখন জল পরছে ,।মনে মনে ভাবলো  যে মেয়েটা নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলো সে কি আদৌ   পারবে ?
' একটা যন্ত্রণার কাজ করছে যেন তো ওর ভেতরে রয়েছে যন্ত্রনা রয়েছে ।ওর যন্ত্রণা ।
মাসি বলল" আমাদেরও কষ্ট লাগছে তাই দেখি একটু দেখে তাড়াতাড়ি কাজ গুছিয়ে চলে যাব ওর কাছে।
রেখাও কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল ওর ভেতরে আজকে যে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে যাবে কিন্তু মনে যে টানটান উত্তেজনা ছিল ,ভালোলাগার বিষয়টা ছিল ।"
কিন্তু এই ঘটনা যেন অনেকটাই বিষণ্ণতায় ভরিয়ে দিল তারপর বললো "মাসি তুমি কাজ করো ।আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হই কেমন?"
মাসি বললো 'ওকে দেখে যা মনে হচ্ছিল যেন মনে হচ্ছিল  ডিমে সেদ্ধ হলে যে রকম অবস্থা হয়
সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন জানানো হয়েছে। বড়দিও এক কথায় ছেড়ে দিয়েছেন।
আর ছাড়বেন ই  ইবা না কেন বরদি যখন যেটা বলেন কোনো সারা না করে হাসি মুখে রেখে খুলে দেন সকালবেলায় কারণ এই কাজগুলো

কবি মাহাবুব টুটুল এর কবিতা "না দুঃখ না প্রেম"





না দুঃখ না প্রেম
মাহাবুব টুটুল 

অনুভূতি জড়ানো দুহাতে হাত রেখে 
সকাল কিনতাম ইচ্ছের দামে,
অবারিত সময়ের পরাগ মেখে 
মেলে ধরতাম ভাবনার আকাশ ।
নির্লিপ্ত মেঘের চোখে দেখেছি
অনন্ত পিপাসার শিহরণ ।
পাহাড় ধসের মত সময় ঢলে পড়ে
পশ্চিম দিগন্তের শেষপান্ত বিন্দুতে 
তবু আকাংখা প্রজাপতির প্রলেপ মাখায় 
মনের সংগোপনে।
বিকেলের পরাগ রেণু ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
বন্ধনকে দৃঢ় করে কংক্রিটের আবরণে 
জিঘাংসার পায়রা উড়তেই সন্ধ্যা নেমে আসে ।
রাত্রিতে ভাবনায় জড়ানো জিঘাংসার প্রতিধ্বনি 
আন্দোলিত করে প্রতি মুহুর্তে,
কিন্তু না দুঃখ, না কান্না, না প্রেম নাকি অন্য কিছু 
বুঝে ওঠার ছলে মেঘের ভূকটি মেলে ধরি
প্রাণের জড়িত শিহরণে
তখন,দুচোখ ভরে ভালবাসার নির্যাসে।

মো: আবদুল্লাহ আল মামুন রুনু এর প্রবন্ধ "ব্বইয়ের অনুভূতি"




প্রবন্ধ 

নব্বইয়ের অনুভূতি

মো: আবদুল্লাহ আল মামুন রুনু



লোকে বলে প্রথম সবকিছুই স্পেশাল। আমার জীবনে অনেকগুলো প্রথম আছে  নব্বই দশকে।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত গণ্ডির বাইরেও যে কারো জন্য বুকের ভেতরটা জ্বালা করে সেই প্রথম উপলব্ধি করা।
নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অস্তিত্ব সম্পর্কেও প্রথম অবগত হওয়া।
জীবনে প্রথমবার রিল লাইফের কারো জন্য চরম কষ্টে চিৎকার করে কাঁদা (কোথাও কেউ নেই'তে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি)।
জীবনে প্রথম রিল লাইফের কারো আনন্দে অভিভূত হয়ে খুশির কান্না (দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে'র শেষ দৃশ্য)।
প্রথম প্রেমপত্র লেখা!

আসলে তখনকার সবকিছুর মধ্যে আমি মিশে আছি। সত্যিকার আমি তাই ঘুরে ফিরে শুধু সেই সময়েই ফিরে যাই। কবি হলে বলতাম "আমি বারবার নিজেরে হারায়ে খুঁজি সেথায়""!
নব্বই দশকে ‘সেরাম’, ‘প্যারা’, ‘বিএফ’, ‘ব্রেক আপ’, ‘ক্রাশ খাওয়া’ এসব শব্দ ব্যবহৃত হতো না। তবু হৃদয়ের কথা সুন্দর করে বলা হতো।
সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না কিন্তু সম্পর্কগুলোতে অন্য ধরনের গভীরতা ছিল।
সেলফি তোলা হতো না অথচ ক্যামেরার ওই ৩৬টি ছবি হাতে পাওয়ার আনন্দ অপরিসীম মনে হতো।
পকেটে বা ব্যাগে আইফোন ছিল না তারপরেও মনে সুখ ছিল।
সেই সময়ের মানুষগুলোর মানসিকতা, আচার–আচরণ, জীবন–যাপন পদ্ধতি, হাসি–আনন্দ, দুঃখ–কষ্ট সবকিছুই বড় বেশি আপন। তখনকার নাটক–সিনেমা, নায়ক–নায়িকা, গল্প–কবিতা, গান–নাচ সবকিছু বড় বেশি সুন্দর, বড় বেশি প্রিয়। তখন গান শুনে গায়ে কাঁটা দিত। সিনেমা দেখে বই পড়ে অঝোরে চোখের পানি পড়ত।
এখন আর কোনো কিছুতেই সেই মুগ্ধতা কাজ করে না। সেই আবেগ আসে না। সবার মধ্যে অদ্ভুত এক অস্থিরতা। সবকিছু অতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। অনুভূতিগুলো যান্ত্রিক হয়ে গেছে।
সময়ের প্রলেপ মুছে দিয়েছে বহু কিছু। শুধু রয়ে গেছে সেই সময়ের অসাধারণ কিছু স্মৃতি। আজো প্রাণকে আলোড়িত করে তারা। করে হৃদয়কে আলোকিত। এক অসাধারণ মহিমায়, এক মায়াবী মাধুর্যে।
আহা নব্বই দশক, আহা ভালোবাসা!

২৫ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৭





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৭

সুমিতার জীবন

মমতা রায় চৌধুরী


এমনটা কখনো ভেবেছিল কি সুমিতা ,জীবনটা সেই কোঠীঘরের মতোই আবার হয়ে যাবে?
সেই জীবনের দগদগে ঘা শুকানোর আগেই একি হয়ে গেল। আজ মাটির ঘরে বসে বসে সেটাই ভাবছে। আজ সমস্ত মুখখানা যেন সিদ্ধ করা ডিমের মতোন ফ্যাকাশে। কি ভেবেছিল আর কি হলো ?বিয়ের দু'বছরের মধ্যেই তার জীবনের সমস্ত রস নিংড়ে ছোবড়া করে দিয়ে চলে গেছিল জীবন।
অন্য কোন মাধবি লতা বা সুমিতার খোঁজে। তাকে রেখে গেছিল অন্ধকারে। তাতে আর সুখ নেই ,স্বাদ নেই ,তার সবকিছুতেই যেন অরুচি ধরে গেছে।
 হঠাৎ করেই একদিন ফাগুনের রাত ।সেই রাত তার কাছে অনেক মধুর মিষ্টি রসে টইটুম্বুর হওয়ার কথা ছিল।  কিন্তু না, তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু'মাসের মধ্যে ফিরে আসার কথা বলে সেই  যে গেছে ,তার আর কোন পাত্তা 
নেই। ঠিক দুমাস পরে বনোয়ারি তার জীবনে এসেছে ।এর মধ্যে দু বছরে তার সন্তানও হয়েছে। বনোয়ারিলাল এর কাছে শোনা যায় যে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সে এক মরদ বটে তার কো ঠী ঘরেও এরকম মরদ জোটেনি।
প্রথম প্রথম বুঝতে পারেনি  বনোয়ারিলাল এর মতলব। সকালে বাসি উঠোনটা ঝাঁট দিচ্ছে তার আগেই মেয়েটাকে সাবু ফুটিয়ে  খাইয়েছে ,এক ফোঁটা দুধও দিতে পারছে না  মেয়েটির মুখে ।সেই সময়ে কাজ ধরেছে লোকের বাড়ি ,ঘর ঝাঁট দেওয়া ,বাসন মাজা ইত্যাদি ইত্যাদি। রেখার বাড়িতে সেই সূত্রেই কাজে যাওয়া। ঝাড় দিতে দিতে সে ভাবছে তার আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে মানুষটা যে সেই গেল আর কোনো খোঁজ খবর নিল না ।সে ভাবতেও পারেনি যে তার জীবনে একটা পাজি ন চ্ছার লোক 
জুটেছিল ।মাঝে মাঝে তার মনে পড়ে তাদের সোনালী দিনের কথা। অর্থাৎবিয়ের সীলমোহর যখন দিল কালী মন্দিরে শাঁখা ,সিঁদুর, ঢাকাই শাড়ি পরে। বুঝেছিল এই শাঁখা ,স্বামীর সিঁদুর আসলে সীলমোহর হিসেবেএকটা মেয়েমানুষ রেখেছিল। তার ঘৃণ্য জীবনে ভেবেছিল 'জীবন 'তার আশার আলো । তাকে নতুন জীবন দান করবে। হ্যাঁ নতুন জীবনই তাকে দান করেছিল। সন্তানকে নিয়ে যখন সে দিশেহারা স্বামীর খোঁজ মিলছে না ,তখন বনোয়ারিলাল এসে তাকে হঠাৎ করে হাজার খানেক টাকা ধরিয়ে দেয় বলে তার স্বামী জীবন পাঠিয়েছে সেই সূত্রেই বনোয়ারিলাল মাঝে মাঝে সুমিতার বাড়িতে আসত কিন্তু লোকটার চাহনি বুনো বুনো ছিলো ।মোটেই ভাল লাগেনি ।কেমন যেন একটা উগ্র খিদে দাও দাও করে যেন জ্বলছে ।চোখ মুখের ভেতর দিয়ে ফুটে বের হচ্ছে যেন এক্ষুনি গোগ্রাসে গিলে 
ফেলবে মাঝে মাঝে মনে  হত সুমিতার ।কিন্তু হাসি মুখে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে তার সাথে কথা বলতো ।সুমিতা যখন জিজ্ঞেস করত যে কবে ফিরে আসবে 'জীবন ?'তখন সে একটু  তাচ্ছিল্যভরে হেসে নিতো তারপর বলতো" সময় হলেই আসবে না হলে তো আমি আছি দেখভালের জন্য।"
এর অর্থ সেদিন সুমিতা বুঝ তে পারে নি। বুঝতে পারেনি তার জীবনে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে ।অন্ধকার তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 
সেদিনটা বিকেল থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। মাটির ঘর জবজবে ভিজে গেছে। মেয়েকে খাইয়ে শুয়ে দিয়ে সে ঘরে বসে তার রঙ চটা তোবড়ানো বাক্সটা খুলে সেই জিনিস গুলো সে দেখতে দেখছিল আর জীবনের কথা ভাবছিল ।তার মধ্যে ছিল তার সেই বিয়ের ঢাকাই শাড়ি। এটা খুব সাধ করে ঢাকাই চেয়েছিল সুমিতা। এনে ও দিয়েছিল। বাক্সের ভেতর থেকে এক এক করে খুলে দেখছিল, রাখা ছিল ঝুটো মুক্তোর মালা ছিল সিটি গোল্ডের হাতের চুরি, ক'টা মাথার কাঁটা। এগুলো হাতে নিয়ে বসে বসে ভাবছিল আর জীবনের মুখটাকে চিন্তা করছিল।
সেই রাত্রেই আচমকা দরজায় ঘা পড়ে। সুমিতার চমক ভাঙ্গে তার শব্দে।
ঘর থেকে জিজ্ঞেস করে 'কে?'
ঘরের এক পাশে পাটকাঠির ওপর বস্তা রাখা ছিল তার ওপর একটা কালো ছিট কাটা বিড়াল মুখ গুঁজরে ঘুমাচ্ছিল।
সেই শব্দের যেন ঘুম ভেঙে গেল।
না পাওয়াতে আবার জিজ্ঞেস করে গলা জড়িয়ে কে?"
তখন উত্তর দেয় আমি' বনোয়ারী।"
সুমিতা ভেবে পায় না এত রাত্রে কি করতে আগমন ।কথা শুনে তো মনে হচ্ছে নেশাগ্রস্ত।
কি করবে কি করবে ভাবতে না ভাবতেই আবার দরজা পেটানোর আওয়াজ।
 সুমিতা দরজা খোলার সাথে সাথেই বনোয়ারি ঘরে ঢুকে পড়ে।
সুমিতা বলে 'বৃষ্টি জলের রাত্রে আপনি?'
"আমি ছাড়া আর তোমার কি খোঁজখবর রাখে তাই একটু খোঁজ নিতে আসলাম।,"
তখনও মুখ থেকে মদের গন্ধে সারা ঘর ভরে গেছে ,চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে।
কেমন কদর্য চাহনি তবুও সুমিতা বলে "আপনি চলে যান সকালে আসবেন রাত হয়ে গেছে তো?
আমার মেয়েটার বিকেল থেকে জ্বর ।"
"আজ এতদিন ধরে অপেক্ষা করছি ।চলে যাওয়ার জন্য তো আসি নি সুন্দরী"।

"এসব আপনি কি বলছেন?"
"আমি ঠিকই বলছি ,।আজ রাতে আমি এখানেই থাকব।"
সুমিতা বলে "আমি কিন্তু চেঁচাব।  বস্তির লোক সব জেগে উঠবে।"
"চেঁচিয়ে কি হবে?"
"বস্তির লোক দেখবে রাত্রি বেলায় এক মরদ তোমার ঘরে ঢুকেছে?"
আর তাছাড়া এতদিন ধরে খোঁজখবর রাখছি কি এমনি এমনি টাকা দিচ্ছি?"
সুমিতা  যেন আকাশ থেকে পড়লো ।বলল "টাকা তো আমার স্বামী আপনার হাতে পাঠাচ্ছে।"
বনোয়ারিলালের কদর্য হাসি তে মাটির ঘর ফাটিয়ে ফেললো ।
তারপর আস্তে আস্তে সুমিতার দিকে অগ্রসর হলো সুমিতার হাতটা ধরে টানলো।
বললো "আজকে আমার তোমার সাথে সোহাগ রাত।"
সুমিতা বলল "আপনি মুখ সামলে কথা বলুন।"
বনোয়ারিলাল বলল" সতী সাবিত্রী । কো ঠ  ঘরের থেকে এসেছো বড় বড় কথা ।তাই এবার আমাকে একটু রসে মজাও।
আর তোমার স্বামী তো আমার কাছে তোমাকে বিক্রি করে দিয়ে গেছে। এতদিন ধরে ভেবেছিলাম যে তুমি আপনা থেকেই আমার কাছে ধরা দেবে তা যখন হলোই না আরে সত্যটা জেনে এবার তো তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে।"
সুমিতা বলল" খবরদার বনওয়ারী লাল বাবু আমার দিকে এগোনোর চেষ্টা করবেন না।"
বনোয়ারিলালের ভেতরে জন্য হিংস্রতা বেড়ে উঠলো।
সুমিতার মুখটা কালো হয়ে গেল ভয়ে ,অপ্রত্যাশিত বিভীষিকার এইরূপ দেখে।
সুমিতা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
তারপর ভয় মিশ্রিত কন্ঠে সুমিতা অনুরোধ করে বনোয়ারীলাল বাবু ,আপনার টাকা আমি শোধ করে দেব কিন্তু আপনি আমার সাথে এরকম করবেন না এই অনুরোধ টা রাখুন।
বনোয়ারিলাল তখনও অর্থহীনভাবে হেসে ওঠে তারপর বলল এতক্ষণ তো হিংস্র বাঘিনীর মত কথা বলছিলে এখন হঠাৎ করে মেনি বিড়াল হয়ে গেলে কি করে?
সুমিতা দু'হাত জোর করে বলে"আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আপনার আমি পায়ে পড়ছি।
সুমিতা দু'পা জড়িয়ে ধরে।
বনোয়ারিলাল তখন হিংস্র বাঘ বলে ওঠে আরে আরে করো কি? দুহাত দিয়ে তুলে সুনিতা কে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করে আর বলে আমার পায়ের কাছে তোমার জায়গা না তোমার জায়গা আমার হৃদয়ে।
বনোয়ারিলাল এই কথা বলেই সুমিতাকে জোর করে বুকের কাছে চেপে রাখে তারপর তার আঙ্গুলগুলো আস্তে আস্তে পিয় থেকে ক্রমশ তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্পর্শ করতে থাকে সুমিতা অনুভব করে এ যেন বৈশাখ মাসের দুপুরের খড়ের গাদার  মতন গরম গা এক্ষুনি পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

সুমিতা জানে মুখ পোড়া মাগীচাটা পুরুষগুলো সব সময় এরকম কামুক দৃষ্টিতেই মেয়ে মানুষগুলোকে দেখে থাকে ।এ যেন এক মারাত্মক ভাদ্র মাসের কুকুরের মত সে ছটফট করছে। ছ্যাচরা,শয়তান ইতর স্বার্থপর লোককে কি করতে হয় তা সুমিতা জানো। তখন সুমিতা হয়ে গেছে রোদে শুকিয়ে যাওয়া কাঠের মতো শক্ত ।তাই সে মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে ,এর বিষদাঁত ভাঙতেই হবে।
দুজনার মধ্যে জোর ধস্তাধস্তি চলছে হঠাৎই বনোয়ারি তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সুমিতাকে মেঝেতে ফেলে দেয় আর সুমিতার গায়ের উপর তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের কামতৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার চেষ্টা করে ।ঠিক সেই সময়ে পাটকাঠির বোঝার পাশেই ছিল একটা বটি কোনরকমে হাতরে হাতরে তার কাছে যাবার চেষ্টা করে ।তারপর পেয়েও যায়  ।সে আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না ।তার মাথায় তখন খুন চেপে গেছে।বসিয়ে দেয় এক  কোপ। সুমিতা
 খেয়াল করে বনোয়ারিলাল তখন মারাত্মকভাবে জখম ,যন্ত্রণার বিকারে তার ওঠার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেলেছে।
বাইরে বৃষ্টির আওয়াজ তখন আরো বেড়েছে ঢোবাটাতে  জল পড়াতে ব্যাংগুলো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দে গান তুলেছে আর সুমিতা তখন নিজেকে বাঁচিয়ে ভাবছে যে 'জীবন 'তার নতুন জীবন দিতে চেয়েছিল, সেও তাকে এইভাবে ঠকিয়ে জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়ে গেল। কি চেয়েছিল সে জীবনে স্বামীর একটু ভালোবাসা ,দারিদ্রতা ও তার কাছে হার মানবে । কি এক টানা-পোড়েনে একি হয়ে গেল তার জীবনে।