উপন্যাস
টানাপোড়েন ২০৪
প্রতীক্ষার মূল্যদান
মমতা রায় চৌধুরী
প্রত্যেক মানুষই প্রতীক্ষা করে জীবনের যত ব্যর্থতা আছে সেগুলো কে সার্থক করে তুলবার আশায়।
তাইতো মনের ভেতরে আগুন ওঠে আগুনের তাপে ব্যর্থতা যন্ত্রণা জ্বালা সবকিছু পুড়িয়ে পরিণত করতে। তারপর আস্তে আস্তে হয়ত সে আগুন নিভে যায় সেও বছরের পর বছর প্রতীক্ষারত অবস্থায় জীর্ণ মলিন হয়ে যায় সংসারের ধুলোয়। প্রতীক্ষা তো আর সার্থক হয় না সার্থক হয়নি বিপাশার প্রতীক্ষা সার্থক হয়নি রেখার প্রতীক্ষা ,সার্থক হয়নি মনোজের প্রতীক্ষা , সার্থক হয়নি শিখার প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি কল্যাণের প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি তিথির প্রতীক্ষা, সুমিতার প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি নদীর প্রতীক্ষা, মীনাক্ষী দেবী প্রতীক্ষা আরো এরকম কতজনের প্রতীক্ষা সার্থক হয়নি। সব প্রতীক্ষাগুলো যেন পথহীন অরণ্যে সকলের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। আলাদা হওয়াটা পুরো টাই অদৃষ্ট বা নিয়তির লিখন হয়েছে তা নয় ,কিছুটা নিজেদেরও হাত থাকে।
প্রতিটা চরিত্র অনুযায়ী প্রত্যেকের প্রতীক্ষায় একটা আলাদা মাত্রা আছে ,একটা আলাদা ধরন আছে। প্রত্যেককে এক ধাঁচে ফেললে চলবে না।
নইলে কে জানতো নীল রেখার জীবনটা আলাদা হয়ে যাবে। গ্রামের সহজ সরল দুটি ছেলে মেয়ে যখন পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল শৈশবের এতগুলো দিন তারা একসঙ্গে অতিবাহিত করেছিল, স্বপ্ন দেখেছিল হাজারো তর তখন সেই স্বপ্নগুলো যেন প্রজাপতির ডানা মেলে উড়ছিল। ঘোষেদের জোড়া পুকুর ,বটগাছ, আর গ্রামের পথ ঘাট , বিস্তীর্ণ প্রান্তর ,নদী সবকিছুই যেন ছবি এঁকে দিয়েছিল অত্যন্ত পারিপাট্যের সঙ্গে। কেরালা উঁকি দিয়ে গেছে কত না স্মৃতিমধুর খন আজ সবই রেখার কাছে ক্লান্ত ঔদাসীন্যের মত লাগে শুধু যারা একটা ঘুমন্ত নিষ্প্রাণ আত্মা রয়েছে সদা পাহারায়।
ব্যালকনিতে বসে সেইসবগুলি প্রতিচ্ছবি ছবি হয়ে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে।
রেখা গল্প লিখতে বসে হঠাৎ জীবনের গল্প গুলোই কেন তার লেখনীর ক্যানভাসে আঁচড় কাটতে শুরু করল সেটাই বুঝতে পারছে না
আজ সেই সব যন্ত্রণা ব্যাথা গুলো আছে বলে হয়তো এখনো হৃদয় নামক পাম্পে জল ওঠে।
দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আজ ভাবনাও আবেগের উদ্বেল সাগর হঠাৎ করে জেগে উঠলেও তা আস্তে আস্তে শান্তনি তার হয়ে যাচ্ছে সেসব দিন গোধূলি বেলার মত অস্পষ্ট হতে শুরু করেছে স্মৃতির সে সমস্ত পাতাগুলো যেন আস্তে আস্তে তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে জীবনের একটা বাধা সুখে থাকতে গিয়ে সবকিছুই যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
এসব ভাবনার মাঝে চেয়ে ঘটায় সিঁড়ি পত্রিকার সম্পাদকের ফোন। ফোন বেজে চলে অকাতরে রেখার ইচ্ছে করছে না ফোনটা তুলতে। অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয় রেখাকেও তাই করতে হলো। এতবার ফোনের আওয়াজ শেষ পর্যন্ত নিচের থেকে বাকিরা ছুটে আসত। হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।
হয়তো মনোজই উঠে আসতো বলতো"কিগো ফোনে যাচ্ছে ফোন ধরছো না?
রেখাকে তখনই বানিয়ে বলতে হতো 'শুনতে পাই বা একটা লেখা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।"
তাই মিথ্যা বলার চেয়ে ফোনটা রিসিভ করা অনেক বেশি শ্রেয়।
হ্যালো
ম্যাম
হ্যাঁ নমস্কার।
চিনতে পারছেন?
না চিনে উপায় আছে ফোন নম্বরটা যে সেভ করা আছে।
বলেই দু'পক্ষ ও হো হো করে হাসতে শুরু করল।
তারপর ম্যাম মৌচাকের কতদূর খবর?
চলছে ঠিকঠাকই
হ্যাঁ দেখবেন মৌচাকে যেন তাড়াতাড়ি ঢিলটা না কেউ ছুঁড়ে দেয়।
কি করবো দাদা পুরোটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
ভাগ্যের অদৃষ্টের কথা বারবার বলবেন না।
আপনি লেখিকা সৃষ্টি করাই আপনার ধর্ম।
রেখা হেসে বলে আপনি কি যে বলেন না?
কেন ম্যাম আমি কি খারাপ কিছু বললাম?
রেখা বলল না না বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি নিয়ন্ত্রণে এনে তাতে জলসিঞ্চন করেন।
রেখা এসব কথা বলছে এরমধ্যেই রেখার জা।তীব্র চিৎকারে যেন আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ হচ্ছে।
রেখা কানটা খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল অন্যদিকে ফোনে অনর্গল বুকে চলেছেন সম্পাদক মহাশয়।
রেখা বলল ঠিক আছে দাদা। মৌচাক নিয়ে ভাববেন না। ওখানে ঠিক মধু তৈরি হবে।
সম্পাদক মহাশয় বললেন'অসংখ্য ধন্যবাদ।'
রেখা ফোনটা নামিয়ে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে আসে এসে পুরোটাই জলের মত পরিস্কার হয়ে যায় সেই চিৎকার এর প্রধান উৎস কি।
আসলে তুতু পাইলট ওরা খেলছিল। উঠোনটা জানো মনে হচ্ছে পুরোটাই ওরা কিনে নিয়েছে। বাচ্চাগুলো খেলা করছে সেটাও সহ্য হচ্ছে না।
আজকের এই কান্ড দেখে রেখার মাথাটা গরম হয়ে গেল।
বলেই ফেলল কি হয়েছে কি করেছে ওরা?
সঙ্গে সঙ্গে রেখার জা বলল এদেরকে মেরে পিটিয়ে শেষ না করলে শান্তি নেই।
রেখা তখন বলল"এত যে ধর্ম কর্ম করো সহিষ্ণুতা শেখায় না।"
সেটা তোমায় দেখতে হবে না।
প্রয়োজনে শিখতে হয়।
যত অজাত কুজাতকে বাড়ি ঢুকিয়েছে এই জন্যই তো আজ বাড়িতে এই হাল।
দিদিভাই মুখ সামলে কথা বল অদ্ভুত মানে কি বলতে চাইছো?
বলছি ওই কুকুরের বাচ্চা গুলো যেন আমাদের সীমানায় না আসে।
আমাদের সীমানা মানে এটা তো যৌথ বাড়ি এখনো তো ভাগ হয়নি?
আর তাছাড়া ওরা অবলা জাত ওদের কি শেখানো যায় মানুষকে শেখানো যায় না যদি তাই হত তাহলে এরকম কথাবাত্রা শুনতে হতো?
তুমি আমাকে ইঙ্গিত করে কথা বললে না?
যাক বাবা তাহলে বুঝতে পেরেছ।
সারাদিন ঠাকুর নিয়ে পড়ে রইলাম আর মনে মনে অন্যের ক্ষতি চাইলাম আর ভাবলাম কখন ওই অবলা জীব গুলো একটু বেচাল কিছু করবে তখন হাজারো তর কথা শোনাবো।
এত চিৎকার চেঁচামেচিতে বাচ্চাগুলো যেন একটু হতভম্ব হয়ে গেছে ওরা রেখার কাজটা তে এসে সব একা একা বসে পড়ল তারপর রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
রেখা তখন ওদেরকে আদর করে বলছে তোমরা কি দুষ্টু দুষ্টু করছিলে?
এরকম দুষ্টু দুষ্টু কাজ করবে না ।দেখছ না দুষ্টু লোকেরা না হলে কিন্তু বকবে।
রেখার যায় এবার নিজের শ্বাশুড়ীকে ডেকে নাও সোনার চেয়ে দেখুন দেখুন আমরা কি দুষ্টু লোক।
রেখা কথা বাড়ায় না এদের সাথে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই এতে মন-মেজাজ দুটোই বিগরে যায়।
রেখা ওদের কে নিয়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে পরল তখনো রেখা শুনতে পারছে ওর যা চিৎকার করে যাচ্ছে কোথা থেকে এক ছোটলোকের মেয়ে নিয়ে এসেছে বাড়িতে এই জন্য এইসব ছোট রকমই কাজকর্ম চলছে বাড়িঘর যেন কুকুরের বাড়িঘর হয়ে যাচ্ছে।
রেখা শুধু ভাবে আর কতদিন প্রতীক্ষা চলবে এদের শুভ বুদ্ধির জাগরণের কবে এরা নিজেদের আত্মসমালোচনা করবে? আর শুধু অহংকার ঐশ্বর্য নিয়ে আত্ম অহংকার ভুগবে?
ভগবানের কাছে শুধু প্রার্থনা করল রেখা ভগবান এদের শুভ বুদ্ধির জাগরণ হোক শুধু সেই দিনটার প্রতীক্ষায় আছি ।
তারপর মনে মনে ভাবল এই সমস্ত ক্যারেক্টারগুলোকে তার মৌচাকের উপন্যাসের ভেতরে টেনে নিয়ে আসতে হবে তবে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে নীলাঞ্জন তার প্রতিদান আজ তার প্রতীক্ষার পথগুলো সব এঁকে বেঁকে গেছে হয়ে গেছে সেখানে সবকিছুই অস্পষ্ট কোন রেখাপাত নেই।
এক্ষেত্রে রেখা আশাবাদী আগুন জ্বলে উঠবে যে আগুনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে যত হিংসা অহংকার আত্মগরিমা আর প্রকৃত শুদ্ধ আত্ম জগরণ ঘটবে।
সেদিন রেখা মলিন আর ক্লান্ত থাকবে না। সেটা হবে শেষ পরীক্ষা নতুন জীবনের প্রথম মূল্য দান।
এরমধ্যে রেখা খেয়াল করল বাচ্চাগুলো যেন বুঝতে পেরেছে ওরা যেটা কাজটা করেছে ভুল করেছে ওরা যেন রেখার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না রেখা ওদের অঙ্গভঙ্গিতে সবকিছু বুঝতে পারল। ওদেরকে কাছে ডেকে এনে খুব করে আদর করলো আর বলল তোরা কচু হয়ে যেটা বুঝিস মানুষ এটা বোঝে না রে। মানুষগুলোর ভেতরে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে মে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much