০৪ আগস্ট ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০২





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০২

 পিসিমার কষ্ট

মমতা রায়চৌধুরী


মাধু ঘুম থেকে উঠে টুকিটাকি বাসি কাজ করে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছে। সবেমাত্র ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে দু "হাত জড়ো করে
"হে ভগবান ,সবাইকে ভালো রেখো ।আমার স্বামীকেও ভালো রেখো। ইদানিং ওর যেন কি হয়েছে ,কিছু বলছে না । মনটা ভাল নেই। ভগবান ওর মনের কষ্ট ,দুঃখ যাই হোক না কেন? সব লাঘব ক'রো।'
হঠাৎই মাধু একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় "মাধু ও মাধু ও মাধু মরে গেলাম গো ,এসো গো ,আমাকে বাঁচাও গো?"এ ধরনের আওয়াজ শুনে।
কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কোন দিক থেকে আওয়াজ  আসছে।

"হ্যাঁ ,এতো পিসিমার আ ওয়াজ।"
মাধু কোনরকমে ঠাকুরকে ভোগ  নিবেদন করে
আওয়াজের উৎসের দিকে ছুটল।
তখনো ডেকে যাচ্ছে 'ও মাধু ,ও সুরো আয়রে আমাকে  বাঁচা রে ,আমার কি হলো?"
মাধুর মাথার উপর দিয়ে তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে" নে বাবা ,কি হলো? কালকে রাত্রে তো দিব্যি খাবার-দাবার খেলেন ।আজকে সকালের মধ্যে কি হলো পিসিমার ?'ভাবতে ভাবতে ছুটল পিসিমার ঘরের দিকে।
 "পিসি মা তো ঘরে নেই ।তাহলে কোথায়?
 পিসিমা কি তাহলে কোথাও গিয়ে পড়ে গেলে ন।"
মাধু ডাকতে লাগলেন "পিসিমা, পিসিমা ,পিসিমা আপনি কোথায়?"
"ও মাধু আমি বাথরুমে।"
বাথরুমে ?কি হয়েছে? পড়ে গেছেন?"
"আর বোলো না আমি এখন কি করবো?"
"দরজা খুলেছেন?"
"হ্যাঁ ,কোন রকমে খুলেছি।"
মাধু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।
দেখছে পিসিমা বিবস্ত্র অবস্থায়, কমোডে বসে।
কি হয়েছে আপনার।"
এই অবস্থায়  নিজেরই লজ্জা লাগছে।
আর লজ্জা পেতে হবে না আমি তো আপনার মেয়ের মতোই।লজ্জার কি আছে?'
"আমি কত চেষ্টা করছি আমার পটি পরিষ্কার হচ্ছে না কালকেও তোমাদের বলিনি?'
"পরিষ্কার হচ্ছে না মানে কি?"
"মানে পায়খানার বেগ পাচ্ছে কিন্তু আমি পটি করতে পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।"
"আমার গুহ্যদ্বারে অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে।'
"আপনার কি কনস্টিপেশন আছে?"
"সে তো আছে একটু।"
"তাহলে কালকে  থেকে হচ্ছে বলেন নি কেন?'
*"ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে।"
"গ্যাস হয়েছিল? "
"হ্যাঁ"
"এগুলো কেউ চেপে রাখে পিসিমা ।এখন আপনি কত কষ্ট পাচ্ছেন ।বয়স তো হচ্ছে নাকি?'
"আর কত জ্বালাবে আমি তোমাদের?"
"তাতে কি কোন কিছু সুরাহা হলো?"
"ও বৌমা ,আমার কি কষ্ট হচ্ছে আমি বাঁচতে পারব না।"
"এই দেখো বেগ পাচ্ছে আমি আমি পটি করতে পারছিনা।"
করলো পিসিমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পটি করার সত্যিই পারছেন না।'
মাধু একটু সামনে গিয়ে  দেখে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
 উঠুন পিসিমা ,উঠু ন।"
"আপনার তো মলদ্বারে ওখানে চিরে গেছে মনে হচ্ছে?"
"হ্যাঁ।"
*খুব যন্ত্রণা হচ্ছে?"
"হ্যাঁ গো।'
"ঘেমে স্নান করে উঠেছেন।"
"হঠাৎ করে এরকম হলো কেনো?"
"আসলে ইসুবগুল খেতাম। সেটা শেষ হয়ে গেছে।"
"তাহলে বলতে হতো।"
"এখন কি করবেন?'
*আবার কি পটি  করার জন্য কোমটে বসবেন?"
"আমার লজ্জা ঘেন্না কোথায় গেল?"
"কি করবেন শরীর ঠিক না থাকলে এসব নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই।'
ইতিমধ্যে দরজার বাইরে সুরো এসে বললো "কি করছো তোমরা বাথরুমে ?আর পিসি এত চেঁচাচ্ছিল কেন?'
"ঠিক আছে, তুমি ঘরে যাও আমি পিসিমাকে দেখছি।"
"ভয়ের কিছু নেই তো? ডাক্তার কি খবর দিতে হবে?"
"ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ,ওষুধ নিতে হবে।"
"ঠিক আছে। তাহলে কি হয়েছে পিসিমার?"
পিসিমার  পটি শক্ত হয়ে গেছে, পটি করতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে, রক্ত পড়ছে।"
"সেকি?"
পিসিমা আবার বললেন আবার আমার বেগ পাচ্ছে, আমার ভয় লাগছে ।এবার আমি হার্ট ফেল করব।আমি এই কষ্ট করতে পারছিনা।'
"ঠিক আছে আপনি যান আস্তে আস্তে দেখুন পটিটা করতে পারেন কিনা?'
"পটি খুব শক্ত হয়ে গেছে বেরোচ্ছে না।"
"একটা কথা বলব  পিসিমা, কিছু মনে করবেন না। লজ্জা পাবেন ,আমি বাইরে যাচ্ছি  একটা পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি  দেখুন তো ওটা কাজে লাগিয়ে ,কিছু সুরাহা হয় কিনা?"
মাধুর কথাতে  যেন আশার আলো দেখতে পেলেন বেশ কৌতুহলী হয়ে বললেন " বলো বৌমা, বলো।"
পিসিমাকে দেখে  তখন মনে হচ্ছিল'এই অবস্থায় যদি কেউ বিষ পান করতেও বলেন, তাহলে বোধহয় করে ফেলবেন।"
মাধু বললো "একবার আঙ্গুল দিয়ে বের করার চেষ্টা করুন।"
"বলছো?"
"হ্যাঁ"
 যে শক্তটুকু আছে ওটা যদি বেরিয়ে যায়। তাহলে  এত কষ্ট হবে না। তখন বাকি মল স্মুথলি  বেরিয়ে আসবে।"
"ঠিক আছে সেটা একবার চেষ্টা করে দেখি।"
মাধু দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।
এরকম একটা সমস্যায় পড়েছিল মাধু শিখার বিয়ের সময়, তখন রেখা তাকে এই উপায় বাতলে ছিল।
পিসিমার এই কষ্ট দেখে যতদূর  সম্ভব রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গোপাল ভাঁড়ের সেই গল্পটার কথাই মনে পড়ে গেল।

পৃথিবীর বোধ হয় সেরা শান্তি পটিতেই আছে।
মাধু বাইরে থেকে বলল" পিসিমা  হয়েছে?'
পিসিমা বলল' হ্যাঁ সেই শক্ত মতো পটিটা হঠাৎ করে বেরিয়ে আসলো ,আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেবার পর।"
পিসিমা বললেন' কি শান্তি পেলাম গো বৌমা?'
"আপনি এখন একা বের হতে পারবেন তো?'
"হ্যাঁ পারবো ।আমি হাঁপিয়ে গেছি বৌমা।'
"ঠিক আছে আপনি আস্তে আস্তে শৌচ কর্ম করে বাইরে বেরিয়ে আসুন।
"আমি কি চলে যাবো? চায়ের জল বসাই গিয়ে।'
"আচ্ছা যাও।"
মাধু রান্নাঘরের দিকে যেতে  যেতে ভাবল কি রাশভারী মহিলা নিজের অহংকার ,ঐতিহ্য নিয়ে কত গর্ব করেছেন।
আজ সত্যিই সবকিছুই কালের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। সেই ঐশ্বর্যের অহংকার আজ আর নেই। আজ ছেলে বৌমা ঘাড়ের থেকে নামিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে ।তাইতো ছেলে বউ  খবর নেয় না।
কালেভদ্রে ছেলে কখনো কখনো ফোন করে কিন্তু কখনো বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে না।
কি দিনকাল পরলো?
আর এই পিসিমাই কি  মাধুকে কম কথা শুনিয়েছেন?"
এমন সময় ফোন বেজে উঠল। মাধু তখন ছাকনিতে চা ছাঁকছে। এ সময় আবার কে ফোন করল। ফোন বেজে রিং হয়ে কেটে গেলো।
আবার রিং হল। সুরঞ্জন বাথরুম থেকে চেঁচিয়ে বলল "কে ফোন করেছে একটু ধরো না?"
মাধু বলল" হ্যাঁ ,এই তো ধরছি ।হাতে একটু কাজ ছিল তাই ধরতে পারছিলাম না। এক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পিসিমার ঘরের দিকে যাবে সেই সুযোগে ফোনটা ধরে নিল।
"হ্যালো'
"কে !"
'আমি রেখা বলছি ।মাধু বৌদি?"
"আরে সকাল সকাল লেখিকার গলার আওয়াজ  কি সৌভাগ্য ,কি সৌভাগ্য!"
"সবাই ভালো আছ?"
"হ্যাঁ ভালো আছি কিন্তু আজ সাতসকালেই তোমার একটা টোটকা  দেয়া ওষুধটা পিসিমার ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করেছি।"
*আমার দেয়া টোটকা কি গো বৌদি?'
"আর বোলো না পিসিমার তো হেভি কনস্টিপেশন হয়ে গেছে। সেই পটি করতে গিয়ে পটি আটকে গেছে।"
রেখা বলল "ও হো, খুব কষ্ট পেয়েছেন তাহলে উনি ,।বুঝতে পেরেছি কি টোটকার কথা  
বলছো ।ওষুধ খাইয়েছো কিছু?"
"তোমার দাদাকে বলেছি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে।"
"আচ্ছা উনার কি গ্যাস ফর্ম করে?'
"হ্যাঁ সে তো করেই।"
 মাধু ফোনটাতে কথা বলতে বলতে চা এর কাপটা হাতে নিয়ে পিসিমার ঘরের দিকে গেল।
তাহলে এই ওষুধটা খাইয়ে দেখতে পারো mom plus suspension '
"প্রথম ওষুধ টা কি কাজ করেছে?"
হ্যাঁগো কিছুটা হলেও করেছে কিন্তু বয়স হয়েছে তো পিসিমার অবস্থা দেখে আমার একদমই তখন ভালো লাগেনি।,,""
খুব কষ্ট পেতে হলো,।' দেখো এই ওষুধ টা খাইয়ে না হলে পরে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিও।"
*দেখো সারা সারাক্ষণ প্রয়োজনের কথাই বলে গেলাম  তোমাদের কথা জিজ্ঞেস করা হলো না।তোমরা সবাই ভালো তো?'
"এইতো চলে যাচ্ছে বৌদি ,।ভালো থাকার চেষ্টা করা ছাড়া তো আর কিছু করতে পারি না আমরা।'
"সে তো ঠিক কথাই।'
"হ্যাঁ, যে কারণে ফোন করেছিলাম  বলছি বৌদি শিখার ফোন নম্বরটা একটু আমাকে দিতে পারবে?"
এভাবে কেন বলছো শিখার ফোন নম্বর তোমাকে দেব না ।আচ্ছা একটু হোল্ড করো। আমি পিসিমাকে চায়ের কাপটা দিয়ে তোমাকে নম্বরটা বলছি।"
"এখন কেমন আছেন?"
পিসি,মা, তো বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছেন তারপর বলল "ওই আছি বৌমা ।খুব যন্ত্রণা হচ্ছে গো।"
'ঠিক আছে চা খেয়ে নিন।"
শুনুন যেহেতু সকাল বেলাটা আপনি চা খান তাই দিলাম। বেশি চাপ দেবো না ।শরীর কসে যাচ্ছে এবার একটু করে শরবত দেবো ।গরম পড়েছে ঠিক আছে কিছু মনে করলেন না তো?'
একটু মলিন হেসে বললেন "না '।মাথা নেড়ে।
"কালকে লুচি খাওয়াটা ঠিক হয়নি?
কিছু মনে করলেন না তো? যখন আগের দিন থেকে বুঝতেই পারছিলেন যে পটিটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমাকে একটু বলতে পারতেন আপনাকে আমি ওটস দিতাম।'
রেখা সব কথাগুলো শুনছে তারপর বললো "বৌদি ভাই ,তাহলে তোমরা কথা বলে নাও আমি পরে তোমাকে ফোন নম্বরটা নেব।"
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে পরে ফোন করে দিয়ে দেবো নম্বর। কিছু মনে করলে
 না তো ভাই?"
"কি যে বলো না মনে করবো কেন গো?"
আচ্ছা তাহলে  ব্রেকফাস্টে আপনাকে ওটস দিই।'
"পিসিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।'
"ঠিক আছে একটু বিশ্রাম নিন ।আমি পরে আসবো ।ও বাথরুম থেকে বের হচ্ছে ,ওকেও চা দেবো ।জলখাবার  বানাবো ।এখনো তো কাজের মেয়েটা কাজ কাজে আসেনি। জানি না আসবে কিনা ?রাজ্যের কাজ পড়ে  রয়েছে।"
পিসিমা বললেন  হ্যাঁ জানি বৌমা ,তোমাকে একা হাতে সবকিছু করতে হয় আর আমিও একটা বাড়তি বোঝা হয়ে গেছি মে কি করি বলো তো?'
পিসিমা সবসময় এরকম কথা বলেন
কেন ,,?এটাতো নিজেরও বাড়ি নাকি? আমি কি কখনো কিছু বলেছি আপনাকে,। কিছু মনে করবেন না ।আপনার এই কষ্টটা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে  চেপে রাখলেন কতটা কষ্ট পেতে হলো বলুন তো?"
শুধু কষ্ট বলে কষ্ট বৌমা। এখন তো আমার ভয়ই লাগছে পটি পেলে আমি কি করবো?"
এবার পটি যাতে নরম হয় সেই ব্যবস্থা করছি  দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে ।এবার চাটা খেয়ে নিন। "মাধু পিসীমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বেড়িয়ে আসল।
পিসিমা যে কষ্ট টা পেয়েছেন তার মধ্যে হঠাৎ করে একটুখানি যেন রিলাক্স মনে হচ্ছে।একটু শান্তি পাচ্ছে। যতই হোক নিজের ছেলে, ছেলে বউ তো নয় ,সব কথা তো বলা যায় না। তবুও মাধু যেভাবে পিসিমার সাথে কথা বলে ,সে ওর কথাতেই যেন একটা আলাদা মানসিক শান্তি পেল শুধুই যন্ত্রনা যদি সেরে যায় । পটি টা যদি একটু পাতলা হয় তাহলেই শান্তি এই ভেবে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখল সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে পিসিমার বিছানার ওপর । গত রাত্রেও যে হারে বৃষ্টি হয়েছে , ভাবতেই পারে নি যে আজকে রোদ উঠবে ।তাই দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা চিরস্থায়ী নয় ।
এসব কথা ভেবেই পিসিমা মনে মনে খুশি হলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much