০৪ আগস্ট ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস টানাপোড়েন ২০১





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০১
নানা চিন্তা
মমতা রায়চৌধুরী

মনোজ অফিসে বেরোনোর পর রেখা ক্লান্ত মন নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছিল ,যেন বিছানা চাইছিল রেখার শরীরটা। কি আশ্চর্য ব্যাপার ঘুম এসে 
গেছিল ।হঠাৎই তুতুর কিউ কিউ আওয়াজে ঘুম ভাঙলো ।ঘুম থেকে উঠে দেখছে তুতু রেখার বালিশের কাছে এসে হাত দিয়ে ডাকছে আর আওয়াজ করছে ।সত্যি একটা অবলা জীব কথা বলতে পারে না কিন্তু কি সুন্দর অনুভূতি ।রেখা তাকাতেই এমনভাবে তাকাল তারপর উসখুস করতে লাগল ।তখন রেখা বুঝতে পারল 'ও বাইরে বেরোবে' ।
রেখা বললো "আহা মা ,আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সরি ,সরি ।চলো, চলো, চলো গেট খুলে দিচ্ছি।
গেট খুলতেই তুতু দ্রুত ছুটে গেল বাইরে তারপরে ও বাথরুম করতে লাগল ।শুধু তাই নয় রেখা খেয়াল করলো বাথরুম শেষে ও কিছুটা দূরে গেল যেখানে  ও পটি করে।  রেখা বুঝল তার জন্য এত জোরে আওয়াজ করছিল  অন্যদিকে পাইলট ,মিলি সকলে রেখার কাছে এসে দাঁড়ালো।
পাইলটের মুখটা তো একদম ইনোসেন্ট এত সুন্দর মায়াবী চোখ ঝোলা ঝোলা  কান ।ও যখন তাকায় রেখা যেন ওর মায়াবী চোখে বাঁধা পড়ে যায় কিছুতেই ওর চাউনিকে উপেক্ষা করতে পারে না রেখা বললো কটা বাজে ।ঘর এর ভেতরে এসে দেখল ও বাবা সাড়ে তিনটে বেজে গেছে । তবে তো খিদে পাবেই। তাড়াতাড়ি রেখা ভেতরে গিয়ে ওদের খাবার নিয়ে আসলো ।প্রত্যেককে  ভাগ করে খাবার দিল । রেখা যখন দাঁড়িয়ে রইলো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখল চৈতিদের বাড়ি সে যেন মনে হচ্ছে একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তির মত একটা কালো রঙের চাদরে মোড়া ।চাদরটা যেন মাথার উপরে ঘোমটার আকারে তুলে দেয়া ।কেউ যেন এই বাড়িটার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি যেন মনে 
হচ্ছে ।কেন এরকম মনে হচ্ছে ?আগে বাড়িটা তো কখনো এরকম মনে হয় নি। চৈতিরা কতদিন নেই বাড়িতে কি একটা কুৎসিত  অদ্ভুত
 দূরদৃষ্টি ।রেখার ভয় হতে লাগলো ।দিনের বেলা তেই ভয়।
আপন মনে এসব ভাবছে ভাবনায় ছেদ ঘটালে" ও বৌদি "ও বৌদি"ডাকে।
রেখা অবাক হয়ে তাকালো।
পার্থ সাইকেল থেকে নেমে রেখার মুখের সামনে গিয়ে হাত নাড়তে লাগলো ,তারপর বলল" কি হল বৌদি ,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিবা স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
নাকি দাদার কথা ভাবছিলে? না তোমার উপন্যাসের কোন চরিত্র ,ঘটনার কথা ভাবছিলে?"
রেখা হেসে বলল"ও পার্থ   তুমি?"
"ও বাবা তুমি কি আমার চেহারা ভুলে গেলে নাকি?"
"আরে তা নয় গো। আসলে আমি ঘুম থেকে উঠেই ওদেরকে খেতে দিতে এসেছি। তারপর ওদের খাওয়া দেখছি আর ওইদিকে চৈতি দের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি । ওদের বাড়িটার দিকে তাকিয়েই ভাবছিলাম নানা রকম কথা।
পার্থ এসে বলল "তাও ভাল।"
"আচ্ছা পার্থ চৈতির বাবার কী খবর গো?"
"ভালো নয় বৌদি।"
"বৌদি কি এর মধ্যে বাড়িতে আসবে?'
"আজকে আসার কথা ছিল এখন আসবে কিনা আর ফোন করে জানা হয়নি, জানো?"
"তা তুমি যদি ফোন করো যদি আসে আমাকে জানিও তাহলে আমি বৌদির সঙ্গে একটু দেখা করব আর যদি আমি পারি আমি ফোন করে নেব।'
" ঠিক আছে।"
"মাসিমা কেমন আছে গো?'
"ওইযে বাতের ব্যথা।"
কিন্তু কে কার শুনে বলো। একটু সুস্থ থাকলে বসে থাকবে ?জল ঘাটতে থাকবে ঘাটতেই 
থাকবে ।জলের যেন পোকা।
" আসলে আগেকার দিনের মানুষ তো একটু পরিষ্কার পরিষ্কার বাতিক আছে না ?এদের সমস্যাটা তো এটাই।"
"কি বলবো রোজই কাজের মেয়ের সাথে এই নিয়ে অশান্তি  । বলে ভাল পরিষ্কার হয়নি কাজ আচ্ছা বৌদি, বলো নিজে যখন পারবো না অত কিছু করতে তাহলে সেটাই তো মেনে নিতে হবে।"
"জানি ভাই ,কিন্তু যারা পারে না চিরকাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে এসেছে তারাও নোংরা কাজ পছন্দ করবে না। আমার মাকে তো দেখেছি কাকিমাকে তো দেখি ।কাকিমা এখনো নিজেই করে নেয় কাজের লোক থাকলেও। দেখবে কাজের লোক বসে গল্প করছে ,আর কাকিমা কাজ করছে ,এরকম ও দেখা যায় ,ভাবো পার্থ।'

"হ্যাঁ দেখা যায়  এই গ্রহে তুমি দে।খতে পাবে ,মঙ্গল গ্রহে দেখতে পাবে কিনা জানি না।' বলেই দুজনা  হো হো হো করে হাসতে শুরু করল।
রেখা বলল' পার্থ ,তুমি পারোও বটে। আমি মাসিমাকে বলছি ছেলের দুষ্টুমির কথা।'
"ভালোই হলো তুমি তো আমাদের বাড়ির পথ ভুলে গেছো এই সুযোগে যদি একটু জানাশোনা হয়ে যায় '
রেখা বলল" না গো জানো তো কতটা চাপে থাকি হ্যাঁ সেতো জানি  তবে এখন একটু ছুটি যেতে পারো না  বৌদি?"
 ",যাবো যাবো এ কদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম ছুটি হলে কি হবে আমাকে তো বিভিন্ন কাজে স্কুলে ডেকে পাঠায় না ।এই দেখো না কালকেই আছে আবার যেতে হবে কলেজে ।এর আগে একবার কলেজে গেলাম এবার একটা কলেজে যাব আবার সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পুরস্কার নেওয়ার জন্য আমাকে যেতে হবে।'
"কেন যেতে হবে না তুমি এত কষ্ট করে মেয়েদেরকে রেডি করালে ,বড়দি ঠিক লোককে নির্বাচন করেছেন। না বৌদি, আমরা তো জানি আমরা তো কাছে থাকি তুমি কি ?নিন্দুকেরা যে . যা। বলে বলুক এই বৌদি কবে আছে কাকিমা?
আগামী সপ্তাহে উঠবেন । নাতনির জন্মদিন আছে বলতে পারবো না আমাকে তো বলে না ভাই কি করে জানবো বলো। সত্যি বিচিত্র এই পরিবার কি নেই তোমার মধ্যে বলতো ?বৌদি একটা মেয়ে এরমধ্যে চাকরি করছে সংসারের কাজ করছে তার মধ্যে এত সুন্দর সৃজনশীলতার প্রতিভা রয়েছে ।পার্থ থাক, আর বলো না আমার সম্পর্কে এত প্রশংসা আমি নিতে পারছি না চুপ করো তো ?বৌদি আমাকে বলতে দাও এগুলো কেন? কাকিমা কেন এগুলো মেনে নিতে পারেন না। জানিনা একটা ছেলের বউ সেখানে তোমাকে মাথায় করে রাখা উচিত একদিন নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে দেখো বৌদি বললাম তুমি এই নিয়ে মনে কোন কষ্ট রেখনা নাগো পার্থ আগে না প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হতো জানোতো এখন এসব ভাবি না কেন বলতো বল ওইটা ভাব আর কোন সময় নেই এখন নানা কাজে থাকি না পার্থ বলল তাহলে কোন একটা সময়ে তোমার মনা মনের চোরাবালিতে কখনো তো উঁকি দেয় দেয় না বৌদি তুমি বেশ ভালো কথা বলতো তোমার মতো গুছিয়ে বলতে পারিনা বৌদি তুমি একজন লেখিকা তার সামনে আমি কথা বলছি তুমি আমাকে এত সুন্দর একটা কমপ্লিমেন্ট দিলে তার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।
তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাবে না ভেতরে আসবে? এস চা খেয়ে যাও।
না বৌদি চা খেলে হবেনা যাচ্ছি আর তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো কেমন?
Ok
বৌদি ওই দেখো তোমার তুতু  কি করে বুঝলো তুমি এখন ভেতরে ঢুকবে ,এতক্ষণ  তো বেশ বসে ছিল ।দেখেছো, এখনো আগে আগে দরজার কাছে চলে গেছে। আবার পিছন থেকে দেখছি তুমি আসছো কিনা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা।
রেখা তাকিয়ে বলল'তুমি চলো তুতু মা 
 আমি যাচ্ছি ।"
 করো তো বৌদি ।আমাকে বলতে দাও ।এগুলো কেন কাকিমা  এগুলো মেনে নিতে পারেন না জানিনা ।একটা ছেলের বউ সেখানে তোমাকে মাথায় করে রাখা উচিত। একদিন নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে দেখো বৌদি, বললাম দেখে নিও।তুমি এই নিয়ে মনে কোন কষ্ট রেখ না।"
 "না গো পার্থ ,আগে না প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হতো জানো তো  এখন এসব ভাবি না । কেন বল তো? বল ওইটা ভাবার কোন সময় নেই এখন নানা কাজে থাকি না ?'
পার্থ বলল" তাহলেও কোন একটা সময়ে তোমার  মনের চোরাবালিতে কখনো তো উঁকি দেয় ।দেয় না বৌদি ? সত্যি করে বলো,,!
"তুমি বেশ ভালো কথা বল.তো ?"
"তোমার মতো গুছিয়ে বলতে পারিনা বৌদি তুমি একজন লেখিকা ,তার সামনে আমি কথা বলছি তুমি আমাকে এত সুন্দর একটা কমপ্লিমেন্ট দিলে তার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।
তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাবে ,না ভেতরে আসবে? এসো চা খেয়ে যাও।"
"না বৌদি, চা খেলে হবে না যাচ্ছি। আর তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো কেমন?"
'Ok'
"বৌদি ওই দেখো ,তোমার তুতু   কি করে বুঝলো তুমি এখন ভেতরে ঢুকবে ,এতক্ষণ  তো বেশ বসে ছিল ।দেখেছো, এখন আগে আগে দরজার কাছে চলে গেছে। আবার পিছন থেকে দেখছে তুমি আসছো কিনা। আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা।"
রেখা তাকিয়ে বলল'তুমি চলো তুতু মা 
 আমি যাচ্ছি ।"
রেখা বললো "ঠিকআছে ,পার্থ আস ছি।"
"এই যা পার্থকে তো বলা হলো না  সঞ্জীবনী তে
রোগীর ভিড় কেমন আছে?"
রেখা তাড়াতাড়ি সিঙ্ক এ   বাসন টা রেখে হাত ধুয়ে পিন্টুকে ফোন লাগালো। চারটের সময় যাবার কথা চারটে তো বেজে গেল।
ফোন করলে আবার দেরি হবে দরকার নেই রেডি হয়ে বেরিয়ে চলে যাই রিপোর্টটা নিয়ে ডাক্তারবাবুর কে দেখিয়ে আসি ।'বলেই তাড়াতাড়ি করে সালোয়ার কামিজ পড়ে ফেললো আর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে তুতুকে ঘরের ভেতরে রেখে দিয়ে বাইরে শুধু কলাপসিবল গেট টা তালা লাগিয়ে দিয়ে গেল।
সঞ্জীবনী পৌঁছাতে ই এখনো কত রোগী ভর্তি।
অনেকেই রেখাকে জিজ্ঞেস করল 'আপনার টোকেন নম্বর কত?'
বলল-আমাকে তো টোকেন নম্বর দেয়নি তবে বলেছিল এই টাইমে আসতে কারণ আমি এর আগেই নাম লিখে রেখেছি ।"
আমরাও তো অনেক আগে এসেছি অনেকেই আপত্তি জানাল।
"ঠিক আছে আপনাদের হওয়ার পরেই নাই আমি যাব তার আগে আমি যাদের সাথে কথা বলেছি তারা কি বলে ,দেখি আগে কথাটা শুনে।"রেখা
মেডিকেল শপ এর দিকে এগিয়ে গেল পিন্টু কে বলল "এই পিন্টু কখন আমার সময় দেখানোর?"
"
এইতো এক্ষুনি।'
"কিন্তু এক্ষুনি বললে তো  হবে না ।আমাকে কি  ঢুকতে দেবে ?'
রেখাকে টোকেন  নম্বর 56 দিল।এখন চলছে 51 নম্বর।"
রেখার তাড়া এই কারণে তুতুকে ঘরে বন্দি করে এসেছে।
"কি করছে কে জানে?"
নানবিধ চিন্তা এসে মাথায় চাপলো।
এরমধ্যে পিন্টু এসে বলল" আজকে বৌদি দেখানো হবে না?"
"কেন কি হয়েছে?"
"আর্জেন্ট কল এসেছে ডাক্তারবাবুকে যেতে হবে।
ও বাবা তাহলে কি হবে?"
'দেখে নিই আগামী সপ্তাহে রাখতে পারবো । ?"*ডাক্তারবাবু আসতে পারবেন কিনা তোমাকে জানিয়ে দেবো।"
 
কিন্তু আমাদের কাছ থেকে যে এডভান্স টাকা নেয়া হয়েছে সেগুলো?
সেগুলো ফেরত দিয়ে দেবো।
এমনিতেই ভয় লাগছে।
এযেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া মত টনটন করছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much