উপন্যাস
টানাপোড়েন ১১৩
স্বপ্নের জগত
মমতা রায়চৌধুরী
ফোনটা বেশ কয়েকবার রিং হবার পরে ফোনটা ধরল রেখা। রিম্পা দি বলল'কোথায় থাকিস' জিনিয়াস'? রেখাকে উত্তর দেবার আগেই বলল শোন তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে তবে যেটুকু বলার আগে সেটুকু বলি ,সেটা হল তোর লেখা গল্প পড়ে অন্য একজন সম্পাদক তোর ঠিকানা চাইছিল । তোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় লেখা পাঠানোর জন্য।
আসলে প্রথম লেখাটা তো আমার ঠিকানা থেকেই পাঠানো হয়েছিল ওই জন্য বোধহয় আমাকেই ফোনটা করেছেন।আমি কিন্তু হ্যাঁ বলে দিয়েছি। তুই কিন্তু না করতে পারবি না?
'সে তো বুঝতে পারলাম কিন্তু তুমি আমার নামটা হঠাৎ করে জিনিয়াস রাখলে কবে থেকে?'
'বা,বা তোকে জিনিয়াস না বলে উপায় আছে। তাই এই নামটা আমি খুব খুঁজে বুদ্ধি খাটিয়ে
পেলাম ।তোর সঙ্গে এখন এটা খুব যায় ।একগাল হেসে রিম্পা দি বলল।
রেখার হাসিতে যেন জোছনা ঝরে পড়ে যত কালিমা সব ধুয়েমুছে চলে যায় কোথায়।
'তা বেশ বেশ জিনিয়াস নাম নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আরেকটা নাম হল সে তো ভালো কথা। তবে নামকরণটা সার্থক হবে কিনা সেটা একবার ভেবে দেখতে পারতে? শেষ পর্যন্ত দেখো কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন এর মত না হয়। রেখা ও প্রাণ খুলে হেসে নিল।
'হ্যাঁ হয়েছে আমি যা নাম রেখেছি দেখবি সার্থকতা লাভ করবে? এবার কাজের কথায় আসি। জানিস আমরা একটা পিকনিক করছি আর তুইও আছিস । না করবি না কিন্তু? মনোজকেও বলবো। একটা গেট টুগেদার এর মত হবে।'
'সে তো যেতে ইচ্ছে করছে। কতদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়না। মনে হচ্ছে যেন একটা যুগ। কত কথা বলার আছে জানো?এক আকাশ মন নিয়ে বিছিয়ে রেখেছি থরে থরে সাজানো অনুভূতি। শুধু তোমার সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করবো আর অনুভূতির অনুরণনে গা ভাসিয়ে শুধুই উপলব্ধি উপলব্ধি।'
'তা হলে না করিস না ।কিন্তু কিন্তু করবি না কিন্তু?'
একটু উদাস ভাবে বলল তবুও একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে গো। আমার বেবিগুলো তো
অসুস্থ ।তারমধ্যে দুটো একটু ঠিকঠাক এর মধ্যে আছে ,কিন্তু আমার পাইলট সোনা ও ঠিক না হলে যেতে পারবো না।'
'সে কিরে আবার পাইলটের শরীর খারাপ?'
'তবে আর কি বলছি তোমায়। কি যে টেনশনে আছি ,ওষুধ দেয়া হয়েছে কিন্তু খাবার একদমই খাচ্ছে না ।ওর চেহারাটা না ভেঙে গেছে। দেখে না চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। বেচারা কাছে গেলে যেরকম হতো অর্থাৎ আগে যেরকম ভাবে আদর করত ,ওঠার ক্ষমতা ওর নেই তবে কিন্তু তাকায় করুণভাবে।'
'শোন চিন্তা করিস না রেখা বুঝলি ?ঠিক হয়ে যাবে ।দুজনা যখন ঠিক হয়েছে, ও ঠিক হয়ে
যাবে ।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডেটটা তো কাছে পিঠে। তাহলে তোর জন্য ডেটটা তোর সুবিধামতো ঠিক করতে হবে ।বাকিদের সঙ্গে কথা বলে দেখি।'
'শুধু শুধু আমার জন্য ডেট চেঞ্জ করবে রিম্পা দি কতজনার সঙ্গে তুমি সেট করেছ , দেখো এখন ওদের কোন অসুবিধা হবে নাতো?'
'সেটা অবশ্য ঠিকই বলেছিস, এই জন্য তো তোর নাম জিনিয়াস দিয়েছি। তবে মনে হয় না কেউ আপত্তি করবে ।তবুও একবার কথা বলে দেখতে হবে বুঝেছিস? আমি চেষ্টা করবো অবশ্যই।
আর শোন স্কুলে যাবি তো কাল?'
কেন বলতো ?কিছু দরকার আছে? যাবো ভেবেছি তো এখন স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। অন্য রকম পরিবেশ হয়ে গেছে না ।তবে ওই যে বড়দি সামনে সরস্বতী পুজো আছে, দেয়াল পত্রিকা স্কুলের সামনে সাজানোর এসব দায়িত্ব পড়েছে আবার?'
'কেন রে এত যে জায়গা নিয়ে ঝগড়া করল ওকে দিয়ে দিক বড়দি।'
রেখা একগাল হেসে বলে ,তা যা বলেছ ।বড়দি ছাড়তে রাজি হবে নাকি। সবই ঘেঁটে ঘ করে দেবে।'
খুব মিস করবো রিম্পা দি তোমাকে জানো তো, এই কাজগুলো তুমি আমি মিলে করতাম। একদমই ভালো লাগছে না। সবথেকে বড় ব্যাপার স্টাফ রুমে গেলেই ওইপাশে চেয়ারটা
ফাঁকা ।মন-প্রাণ কেমন হু করে ওঠে ।জানো মনে হয় যেন কত দূরে চলে গেছো তুমি ।তোমাকে স্পর্শ করতে পারবো না ।প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবো না ।তখনই চোখ ফেটে জল আসে।'
', বুঝি , বুঝি, সবই বুঝি ।কিন্তু কি করব
বল ?পরিস্থিতি মানুষকে কোথায় কখন নিয়ে যায় কেউ কি আর বলতে পারে? আমার মেয়েটা বড় হয়ে গেল দেখ ও এরপর পড়াশোনার চাপ আছে ।তাছাড়া তোর দাদাও অফিসে চলে যাবে কে মেয়েটা কে সামলাবে আমি যদি কাছে না যেতাম ।তোকেও বলছি' উৎস শ্রী' নাম লেখা কি দরকার ওখানে পড়ে থাকার? এরপর বয়স হবে শরীরে ক্ষমতা কমে যাবে তখন কি করবি
বল ?তাছাড়া তুই এখন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় দিতে পারবি ?আর বড়দি তো যখন তখন তোকে ডেকে নেন। তোকে কি লোকাল টিচার ভাবেন নাকি বলতো?'
রেখা একমনে কথাগুলো শুনতে থাকে তারপর বলে হ্যাঁ সেটাই ভাবছি আবার অন্যদিকে একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে। কি যে হবে কাছে আসলে সেটাও বুঝতে পারছিনা । রিম্পা দি অত্যন্ত উৎসুক ভাবে বলল কেন রে কি হয়েছে?'
' আর বোলো না শাশুড়ি মা তো এখন এখানে এসে থাকবেন । গাছ থেকে পড়ে গেলে যেমন ঝটকা লাগে তারপর কিছু ভেবে ওঠার আগেই যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে, ঠিক তেমনি রিম্পা দি রেখার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারলো। তাই অবাক হয়ে বললো ওরে বাপরে দেখ তুই এবার বারুদ নিয়ে খেলা করবি।'
'তা যা বলেছ আমি কিছু বুঝতে পারছিনা?
কি করবো ?মনোজ অবশ্য বলেছে 'তোমার ডিসিশনটা জানাও ।
'আমি কি জানাতে পারি বল? তার মা তার বাড়িতে আসবেন ।আমি কি বলব, আসবেন
না ।এটা কি কখনো আমার কাম্য ।সেটা তো আমি পারবো না। রিম্পা দি অতি আশ্চর্য হয়ে বলল 'কেনই বা পারবি না বল না ?অন্যভাবে নিস না। দেখ সবকিছু নিয়ে গেছে মেয়ের
পরামর্শে ।সব নিয়ে চলে গেছে ওখানে থাকবে বলে। তোকে তো সহ্যই করতে পারেন না। এখন হঠাৎ করে আবার এখানে এসে থাকার কথা ভাবছেন কেন? আবার কি মতলব ?'
রেখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো 'জানিনা আমি কিছু জানিনা গো ?কি হবে সারাক্ষণ এক মানসিক যন্ত্রণা দেবার জন্য থাকবে । অন্যদিকে স্কুলের পরিবেশটাও দিনকে দিন কেমন হয়ে
যাচ্ছে ।
' এবার ঘরেতে এসে এক দন্ড শান্তি পাবি না। কি হবে রেখা তোর বুঝতে পারছিনা ।'
'আমিও বুঝতে পারছি না।'
মা মা মা আ আ আ..
রেখা ফোনেতে এই রিম্পাদির মেয়ের গলা শুনতে পেলো।
' ওই দেখ। হ্যাঁরে, তোর সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওদের দরকার পড়ে কেন বলতো?আমি দেখেছি এটা খেয়াল করে ।বিশ্বাস কর যখনই তোর সাথে কথা বলবো তখনই এইরকম। আবার শুনতে পেল ওমা মা ওমা আ আ আ… রিম্পা দি এবার বিরক্ত আর ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,' কি হয়েছে? ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন?'
'পাশের বাড়ির আন্টি এসেছেন নিচে বসে আছেন তাই তোমাকে ডাকছি?'
'ও বাবা। ওই দেখ, সেই পিকনিকের কথা বলছিলাম পাশের বাড়ির বন্দনাদি । উনিও স্কুল টিচার ।একসঙ্গে পিকনিক করবে বলে ,তার তো তর সইছে না রে ।আচ্ছা ,এখন ফোনটা রাখি কেমন ?পরে কথা বলবো। বাচ্চাগুলো কেমন থাকে, আমাকে একটু জানাস ।ভালো
থাকিস ।অত টেনশন করিস না ।সময় সবকিছু ঠিক করে দেবে।'
রিম্পা দি ফোনটা কাটার পর রেখার মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল ।উফ ,কতদিন পর রিম্পা দি সঙ্গে কথা বলে একটু খানি যেন হালকা মনে
হচ্ছে ।কিন্তু ফোনটা ছাড়ার পরে মনে হল যেন আবার একযুগ পর দেখা হবে, কথা হবে ।খুবই খারাপ লাগছে ।এদিকে বাইরে ভালই বৃষ্টি হচ্ছে হিমেল হাওয়া বইছে ,জানলাগুলো আওয়াজ তুলেছে।রেখা ফোনটা রেখে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় চোখেমুখে দু চার ফোঁটা ছাট এসে ভিজিয়ে দিল। আজ বৃষ্টির ঘ্রাণ রেখার ভালো লাগছে ।
এই অনুভূতিটা এসেছিল কয়েক বছর
আগে ।স্বপ্নের মতোই যেন এসেছিল জীবনে। রেখার থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোট ।মনে পড়ে সেই দিনটার কথা ।স্কুল থেকে ফিরছে ,বাইপাশে দাঁড়িয়ে, ক্লাস থেকে বের হতে দেরী হওয়াতে ট্রেন পায়নি। ট্রেন মিস করাতে, যত গন্ডগোল ।স্বপ্নরা এসে ভিড় করেছিল। সেদিন একসঙ্গেই স্টেট গাড়িতে উঠেছিল দূরপাল্লার গাড়ি ।সিটে বসেছে পাশে এক ভদ্রলোক, কাছে একটা স্টপেজে নেমে যাওয়াতে ,তার পাশেই বসে পড়ে দরদর করে ঘাম পড়ছিল , পকেট থেকে রুমালটা বের করে ঘামটা মুছে নিলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমাল বের করতে গিয়ে রেখার হাতের সাথে স্পর্শ হয়ে যায় ।তখনই একটা কি অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়েছিল রেখার দিকে। রেখাও তাকিয়েছিল রেখার তাকানোতে কি ছিল সেটা তো রেখা বলতে পারবে না। তবে ওর চাহনিতে একটা মাদকতা ছিল ',মহুয়া' ফুলের নেশা যেন। ক্লান্ত ,শ্রান্ত ,মন সেই নেশায় বুঁদ হয়ে চলে যেতে চেয়েছিল অনেক অনেক দূর 'মহুয়ার দেশে।' আর ঠিক তখনই বৃষ্টি। জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাট এসে পড়ছিল রেখার চোখেমুখে একটু একটু করে সরে এসেছিল স্বপ্নীলের পাশে। স্বপ্নীল জানালাটা বন্ধ করতে চাইছিল কারণ রেখা চেষ্টা করেও জানালাটা বন্ধ করতে পারছিল না। স্বপ্নীল জানলাটা যখন বন্ধ করতে যায় স্বপ্নিলের মুখটা অনেকটা রেখার কাঁধের কাছে। স্বপ্নিলের দীর্ঘশ্বাস পড়ছিল ঘনঘন। কি অনুভূতি
জানিনা ।শরীর রোমাঞ্চিত হচ্ছিল ।তারপর জানলা বন্ধ করতে গিয়ে স্বপ্নীলও কিছুটা ভিজে যায় ।এতটাই টাইট ছিল জানলাটা। তারপর রেখা আর স্বপ্নীল মিলে দুজনে হাত লাগিয়ে জানলাটা টানে। যখন দুজনে মিলে জানলাটা টানছিল দুজন দুজনের হাতের স্পর্শ আর শরীরের গন্ধ একটা পাগল পাগল উত্তেজনা, যেন রক্তে নাচন শুরু হয়ে গেছে তারপর স্বপ্নীল বলল অনেকটাই ভিজে গেছেন আপনি মুছে নিন। রেখা মোহাবিষ্ট এর মতো তাকিয়েছিল । ব্যাগ হাতরে হাতরে রুমাল বার করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু রুমালটা খুঁজে পাচ্ছিল না ।স্বপ্নীল আর একটা রুমাল বের করে রেখাকে দেয়, বলে এটা দিয়ে মুছে নিন ।'
রেখা প্রথমে রুমালটা নিতে চাইছিল না।
' রুমালটা তো কোন দোষ করেনি ।এটা ফ্রেশ রুমাল নিন্ না। তাছাড়া রুমালটা তো আপনাকে আমি দিয়ে দিচ্ছি না ।অ্যাতো হেসিটেট্ ফিল করছেন কেন?'
রেখা রুমালটা নিতে চাইছিলো না তবুও কিভাবে যেন হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিল আস্তে আস্তে। স্বপ্নীল রুমালটা দিলে, মুছতে থাকে। কপালের জল তখন পড়ছে কয়েকটা বুকের ভাঁজের কাছে এসে পড়ল । চোখ দুটো ভিজে গেছে।
স্বপ্নীল আবেগ ভরা দৃষ্টিতে দেখছিল, তারপর চোখ নামিয়ে নিল । হঠাৎই অবিন্যস্ত আঁচলটা ঠিক করে নিল রেখা।তারপর রুমালটা স্বপ্নীলকে দিয়ে দিল।
প্রথম পরিচয় কিভাবে যে হয়েছিল ,জানা যায় না এই ভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের পথ চলা কিন্তু সেই পথ চলতে গিয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আঁতকে উঠেছিল রেখা । কোন বাধা ছিল না স্বপ্নীলের। ব্যাচেলর ছেলে সে মনেপ্রাণে চাইছিল রেখাকে এইভাবে কয়েক বছর কেটে গেছে ধীরে ধীরে যখন জানা যায় স্বপ্নিল একটি বেসরকারি ব্যাংকে ভালো পোস্টে আছে পোস্টিং হয়েছে তার ইদানিং এখানেই রেখার কাছ থেকে স্কুল ঠিকানাটা জানতে পারল এবং বাড়ির ঠিকানাটা ও কায়দা করে জেনে নিয়েছিল ।
এভাবেই মাঝেমাঝেই ওদের দেখা হতে লাগল এবং কেমন যেন একটা নেশার মতো হয়ে গেছিল স্বপ্নীল ট্রেনে যাতায়াত করে না। ওরতো দূরপাল্লার গাড়ি সুবিধা ।তবে অকারণেই এরপর দেখা যেত রেখার ট্রেন ফেল হয়ে যেত। স্বপ্নীল ও মাঝে মাঝে ট্রেনে যাতায়াত করতো।যেন অপেক্ষায় থাকত রেখা আসবে ।
কি জানি হয়তো তাই মনে হয়েছে। এভাবেই পথ চলা শুরু হয়েছিল ।দুটো ভালোলাগা মন ।যেখানে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র ।এই প্রথম এই কথাটা স্বপ্নীলের মুখে শুনতে পেয়ে রেখা অত্যন্ত খুশি হয়েছিল ।প্রথম ভালোবাসার প্রস্তাব জানিয়েছিল স্বপ্নীল।কিন্তু রেখা সাড়া দিতে পারেনি ।রেখা বলেছিল সে যে অবস্থাতে আছে তাকে ভালোবাসা যায় না ।ভালবাসার পূর্ণতা সে কোনদিনও পাবে না ।স্বপ্নীল তাকে বলেছিল ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে জানলে স্বপ্নীল স্বপ্ন দেখায় না ,বাস্তবে তার প্রয়োগ করে দেখাবে। স্বপ্নীল মনেপ্রাণে চেয়েছিল রেখাকে।'
কিন্তু রেখার শুধু মনে হতো কি করে হবে? একটা অসম বয়সের সঙ্গে কখনো ভালোবাসা
হয় ?তাছাড়া সে তো বিবাহিতা। রেখা সাড়া দিতে পারেনি।'
স্বপ্নীল পাগলের মত হয়ে গেছিল রেখার জন্য। একদিন হাতে হাত রেখে স্বপ্নিল বলেছিল এক মুঠো আকাশ আমাকে হতে দাও ,দেখো তোমার জীবনে বৃষ্টি দিয়ে সব জীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে, আবার নতুন করে সাজিয়ে দেবো তোমায়?
এক মায়াবী রাতে তুমি হবে আমার গল্পের উপাখ্যান । শুধু তাই নয় আমি তোমার জন্য সমুদ্র হতে পারি ।তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাব দূর বহুদূরে ।রেখা স্বপ্নীলকে বলেছিল
থামতে । দুইকানে আঙ্গুল দিয়েছিলো
রেখা। এগুলো শোনা তার পাপ, সে কিছুতেই পারবেনা তার ডাকে সাড়া দিতে। সেদিন রেখার দু চোখ ভিজে উঠেছিল ।তখন তার বাড়িতে চলছিল চরম অশান্তি ।মনোজের মা, দিদি যেভাবে মেন্টালি টর্চার শুরু করেছিল রেখার
প্রতি মনোজের কিছুই করার ক্ষমতা ছিল
না ।রেখা একটা আলাদা জগৎ খুঁজে পাবার চেষ্টা করছিল । স্বপ্নীলের ভেতরে সেটা পেয়েছিল কিন্তু রেখা সাড়া দিতে পারল না ।এভাবেই রয়ে গেল তাদের অলিখিত উপাখ্যান ।
আজ হঠাৎ এইসব মনে হচ্ছে কেন?
ইতিমধ্যেই রেখার ফোন বেজে ওঠে একবার ফোন বেজে কেটে যায় ।আবার ফোনটা বেজে
ওঠে রেখা তখনো জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হিমেল হাওয়ায় আর বৃষ্টি স্নাত হয়ে সে ডানায় ভর করে উড়ে যেতে চাইছিল দূর বহুদূরে তার ভাবনায় ছন্দপতন ঘটায় ফোনের রিং। রেখা জানলাটা কোনরকমে বন্ধ করে এসে ফোনটা ধরে বলে হ্যালো'
বৃষ্টি হচ্ছে? সেই বৃষ্টি যাতে গন্ধ আছে মিষ্টি মধুর?
রেখা বলল কে ?কে বলছেন আপনি?'
অপরপ্রান্ত থেকে বলল আমি তোমার অনেক কাছের ।তুমি চিনতে পারছ না আমায়? স্বপ্নে তুমি আমাকে দেখতে পাও না? বলেই ফোনটা কেটে যায়..।