২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা

 


রীতি
মোঃ ইসমাঈল 

আহা কতই না সুন্দর দেখতে ফুল
চোখ আসে জুড়িয়ে হয়ে যায় ব্যাকুল। 
যখনই নাকে আসে ফুলের ঘ্রাণ
পরম শান্তিতে জুড়ায় এ মন ও প্রাণ। 

মৌমাছিরা ফুল থেকে করে মধু আহরণ
তোমারই মনের গহিনে আমি করিবো বিচরণ।
ফুল ফুটে বসন্তের ঋতুতে
আমি হারিয়ে যাবো কেবল শুধু তোমাতে।

ফুল ফুটে ফল ধরিয়ে যায় সে ঝড়ে
মানুষ অভিনয়ের মাঝে যায় যে মরে।
অবশেষে হয়ে যায় ফুলের ইতি
অপরদিকে মানুষের বেঁচে থাকে শুধুই স্মৃতি।

মমতা রায়চৌধুরীর পত্রিকা





উপন্যাস




 টানাপোড়েন ১১৫
থাকো জাজ্জ্বল্যমান হয়ে

মমতা রায়চৌধুরী

টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টির পর শীত প্রভাতের কাঁচা সোনালী রোদ্দুর যেন নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে ।পথের ধারে নির্জীব গাছগুলোর শিশির
চাকচিক্যে ভরিয়ে দিয়েছে ।তবে বাতাস একটু 
কড়া আছে ।বেলা বাড়ছে রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া ,যাতায়াত ,পথিক সংখ্যাও বেড়ে 
চলেছে ।শীতকালে কাশ্মীরি কোম্পানির নানা রঙের শাল , রেপার এবং নানা রংয়ের বালাপোষ পথচারীরা শরীর ঢাকাতে  রবির ছটা যেন আরো বেশি বর্ণ বহুল হয়ে উঠেছে।
রেখা অনেকদিন পর ছাদের অনুচ্চ আলিশার ধারে দাঁড়িয়ে এই সব দৃশ্যগুলো দেখছিল। এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি আজ স্কুলে যাবে কিনা। তবে শরীরটা তো সাথ দিচ্ছে না  রান্না তো এখনো বসায় নি। না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।মাসি এসে কাজ করছে। এই মাসিকে বেশি কিছু দেখানোর নেই। মাসিকে একবার বুঝিয়ে দেয়াতে , সব বুঝে গেছে।
এমন সময় রেখার ভাবনা পাশের বাড়ির 
দিকে ।নজরে আসলো শূন্য বাড়িটার বাইরের দিকে তাকিয়ে ,একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।' বেশ কয়েকদিন হল চৈতির মা নেই। রেখা শুনেছি মেয়ের বাড়ি থেকে একটু বাবার বাড়ি হয়ে আসবে কেমন শূন্যতা ঘিরে আছে যেনো বাড়িটাকে অথচ এই ছাদে উঠলে চৈতির মা ও ছাদ থেকে কত কথা বলে। কখনো বা জানলার ধারে দাঁড়িয়ে কখনো বা রান্নাঘরের থেকে কত কথাই না 
হয়েছে ।যখন কোন মানুষই দূরে থাকে তখন বোঝা যায় তার শূন্যতা।কাছে থাকলে বোঝা যায় না। দূরে গেলে তার অভাব ততটাই প্রকট হয়ে ওঠে। এই শূন্য বাড়িটার সঙ্গে একটা মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতি যেন জড়িয়ে গেল।
হঠাৎ মনোজ নিচ থেকে ডাকছে'রেখা, রেখা,রেখা
আ. আ আ…
এরপর মাসি ডাকলো ও বৌমা বৌমা বৌমা।
রেখা ছাদের থেকে উত্তর দিল ডাকছো মাসি?
'আরে ছেলে ডাকছে তোমায় একবার নিচে এসো তো।
ও আচ্ছা যাচ্ছি
মনোজ যে রেখাকে ডাকবে কল্পনার অতীত ছিল।
বাচ্চাগুলোর অসুস্থতার সময় দু এক কথা ওর সঙ্গে হত ।আজকাল যেন কথাটাও বড় প্রয়োজন মাফিক। তাই মনোজ ডাকছে শুনে একটু উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো , পরক্ষনেই মনটা নিষ্প্রভ হয়ে গেল কারণ প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে এজন্যই মনোজ ডেকেছে এই ভেবে । তার স্বচ্ছ আনন্দময় দর্পণএর  মত উজ্জল প্রাণের উপরে ধুলোর পর্দা যে পড়ে গেছে। তবুও রেখার ইচ্ছে হয় ধুলোকণাকে  সরিয়ে ,দর্পণে আবার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে। দেখতে ইচ্ছে করে তার প্রিয় মানুষগুলোর  প্রতিচ্ছবিও। যত অভিমান ক্ষোভ সব দূরে সরিয়ে ভেসে যেতে চায়, চলে যেতে চায় কাছের মানুষের টানে। রেখা বড্ড ভালবাসার কাঙ্গাল। তাই মনোজের ডাক শোনা মাত্রই ছাদের থেকে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নামতে থাকে ।যত দ্রুত এসে পৌঁছানো যায় কিন্তু একি হচ্ছে তার শরীর আগের মত কেন সাড়া দেয় না ,নামতে গিয়ে ও সে দ্রুত নামতে পারে না। একটু নামতে গিয়ে হাঁপাতে থাকে। ওদিকে মনোজের ক্রুদ্ধ স্বর শোনা যায়"এতক্ষণ আসতে লাগে ?একটা কাজের জন্যই তো ডেকেছি, গল্প করার জন্য তো নয়?'
সব কথাগুলো শুনতে পায় রেখা। মনের ভেতরে যে খুশির হাওয়া  পাল তুলে দিয়েছিল, আস্তে আস্তে সেটা যেন চুপসে যেতে থাকে। তবুও আস্তে আস্তে আসে ।তারপর জিজ্ঞেস করে 'কি হয়েছে?'
'তোমাকে কখন থেকে ডাকছি। তুমি কি শুনতে পাও না? নাকি শুনেও, না শোনার ভান করো। কেন এরকম করো বলো তো ?এত কথা বলতে ত ইচ্ছে করে না , তবুও বলতেই হয়?'
রেখার বুকের ভেতরে লাগে তবুও শব্দটা ব্যবহার করার জন্য রেখার এতটাই অপ্রয়োজনে হয়ে N  ।,গেছে এতে রেখার কি দোষ আছে ভেবে পায় না ভাবার চেষ্টা করতেও চায়না এখন যত ভাবতে যাবে তত কষ্ট বাড়বে শুধু রেখার দুই চোখ জলে ভরে ওঠে। এসব কথাগুলো শুনতে চায় না। অথচ আজকাল  এসব কথা শুনতে হয় ।কি পেয়েছে এই সংসার থেকে?উপরি পাওনা হিসেবে পেয়েছে অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান।
তবুও মনের কষ্ট গুলোকে পাথরচাপা দিয়ে বলল 'কি হয়েছে বলো?  '
 'ওদিকে' সুরু' ফোন করেছিলো? '
রেখা একটু অবাক হলো' সুরো' দা?
 'ওরা কাজের মানুষ কতক্ষণ ফোন ধরে থাকবে বলো ?তোমার মত তো আর সাতসকালে কেউ ছাদে গিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে বেড়াবে না অত সময় ওদের কাছে নেই তাই না?
ফোনটা কেটে দিলো।'
রেখা শুধু বললো '  তা আমাকে কি জন্য প্রয়োজন তোমার বন্ধু র ?'
'কি অবাক কান্ড আমার বন্ধু কোনদিন তোমার সঙ্গে কথা বলে নি? না  কি কেউ কথা বলে না এমন ভাবে বলছো?'
রেখা একটু চুপ করে থাকলো তারপর ভাবলো 'তাই তো কথা তো বলে ।'
ফলে আর কিছু কথা বাড়ালো না।
"আর শোনো ' মা'  কিন্তু ,দিন তিনেক পরেই আসছে। শুধু এটুকুই বলবো বাড়িতে যেন শান্তি বজায় থাকে।'
রেখা যত মনোজকে দেখছে তত বেশি অবাক হয়ে যাচ্ছে।  বাড়িতে অশান্তির মূল তাহলে কি রেখা? এটাই বোঝাতে চাইল মনোজ।
আজ মনোজ ও একথাটা স্পষ্ট করে বলল।
রেখা বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট ,যেন আর নিতে পারছি না , রেখা আস্তে আস্তে নিজের ঘরে চলে আসে। ওদিকে মাসি কাজ করে দিয়ে যাবার সময় বলল বৌমা ,আসছি মা।'
প্রতিদিনই মাসি চলে যাবার আগে রেখাকে এভাবে সম্মোধন করে যায় । উফফফ একটা কাজের মাসি তার এই মিষ্টি ডাকটা  এত কষ্টের ভেতরের যেন কোথায় একটু যন্ত্রণা উপশমের মলম লাগিয়ে দেয়। 
রেখা শুধু বলে হ্যাঁ, মাসি এসো।'
কতদিন কাকিমার সাথে কথা হয় না। নানা ঝামেলায় জড়িয়ে থাকার জন্য খবর নেওয়া হয়নি।
মা চলে যাবার পর থেকে কাকু কাকিমার কাছ থেকে একটু স্নেহ ভালোবাসা পায়। মাসের মানি অর্ডার টা ঠিক পৌঁছেছে কিনা খবর নেওয়া হয়নি। গতদিনের পেপারে বেরোনোর স্বপ্নীলের ছবিটা ওর কাব্যের অংশটুকু সযত্নে রেখে দিয়েছে রেখা খাটের পাশে রেখে দিয়ে ভাবলে একবার কাকিমার কাছে খবরটা নেয়া দরকার বলেই ফোনটা করলো। রিং হয়ে গেল ।ধরল না।
রেখা আবার ফোন করল। এবার মনে হচ্ছে ফোনটা ধরল। 'হ্যালো'।
রেখা বলল ও কাকিমা?
কাকিমা বললেন 'কে রে ননি?'
রেখা বলল  কাকিমা'।
কেমন আছিস মা গলাটা শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে? কি হয়েছে মা?'
রেখার চোখ তখনো জলে ভেজা। নিজেকে সাম্লে নিয়ে বললো'কই কিছু হয়নি তো।'সবাই ঠিক আছে তো?'
হ্যাঁ আমরা মোটামুটি ঠিকই আছি তবে তুই লুকিয়ে গেলে হবে মা তোর গলাতে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
না না তোমরা সব সময় তো ওটাই ভাবো কিছু না কিছু হয়েছে বলো?
আমরা মা সন্তানের দুঃখ-কষ্ট আমরা ভাল করে বুঝি মা। যাক ভাল থাক এটাই সব সময় চাই।
তোমরা ও'মাসে মানি অর্ডারে টাকাটা পেয়েছো?
হ্যাঁ ,পেয়েছি ।একটু দেরি হয়েছে মা আর আমাদেরও জানানো হয়নি ।জানানো উচিত ছিল। একটু অন্য সমস্যা হয়েছিল?'
রেখা অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল 'কি হয়েছে? কাকু ঠিক আছে? তুমি ঠিক আছো তো?'
কাকিমা বললেন' হ্যাঁ আমরা সবাই ঠিক আছি।তোর কাকুর যা অবস্থা সেরকমই আছে আরে বুলু দির কথা বলছিলাম।'
কি হয়েছে বুলু কাকিমার?
 বুলুদি তো শয্যাশায়ী ।কদিন আর আয়ু আছে পৃথিবীতে কে জানে? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রেখা যেন স্পষ্ট শুনতে পেল।
'সেকি কাকিমা? ছোট ছেলে বৌমা দেখছে তো?'
'ঐতো দায়ে পড়ে' পাড়ার লোকে চাপ আছে না?'
তবে বুলু দি মনে হচ্ছে বড় ছেলের জন্যই প্রাণটা ধরে রেখেছেন।'
'নীলুদা তাহলে আর আসলো না। নীলুদাকে কি খবরটা জানানো হয়েছে।'
'কে জানে ওদেরকে তো বলেছি যে খবরটা জানাতে। ওরা জানাচ্ছে কিনা সেটাই তো বুঝতে পারছি না। না হলে বলো না মায়ের এরকম অবস্থা শুনে সে কি না এসে পারে?'
রেখা বলল 'তাই তো?
'খুব দেখতে  ইচ্ছে করছে।'
'চলে আয় না মা ।কতদিন আসিস না ।সেই যে এসেছিলি। ক দিন এসে থেকে যা। আমাদেরও ভালো লাগবে। তোরও মনটা একটু ভালো হবে।
রেখা মনে মনে ভাবল   মা আসলে পরেই যাবে। 
হ্যাঁ দেখছি কাকিমা ।আমারও মনটা ছুটে গেছে তোমাদের 
জন্য ।রোজই তো পাখির মত মন  ছুটে যায়। শুধু দেহটা পড়ে থাকে এখানে।
দেহ থাকে।প্রাণ থাকে না।
ঠিক আছে কাকিমা পরে কথা বলবো ভালো থেকো সবাই। রাখছি ফোন।
'হ্যাঁ মা ।রাখ। ভাল থেকো।'
ফোনটা নামিয়ে  রেখে ভাবে ,কিছু সময়ের জন্য তার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠেছিল। নইলে এই সংসার তার প্রতি অন্যায় বিচার করে ,তাকেই শুধু দোষী সাব্যস্ত করে। কষ্টগুলো যেন হু হু করে বুকের ভেতরে ছুটে চলে। তবুও স্বপ্নীলের ছবিটাকে আঁকড়ে ধরে  বলতে থাকে 'যেখানেই থাকো ,ভালো 
থেকো ।কবিতা, কাব্য ,উপন্যাস এরমধ্যে তোমার প্রকাশ জাজ্জ্বল্যমান হয়ে থাকুক। শুধু আমি থাকি অন্ধকারে চাইলেও দেয়াল চিরে পারবে না দেখতে।চোখের জল শুধু পড়বে। তবুও তুমি চলো নীল আকাশে দু'চোখ মেলে আর হৃদয় পথে দু 'পা ফেলে। দেখবে হৃদয় আকাশের মত। আজ বলবো কি তোমায় প্লিজ নিজের খেয়াল রেখো।
আমি যেথায় যেখানে থাকি শুধু বলবো তুমি ভালো থেকো ।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা




 ভাষা
সেলিম সেখ 

বাংলা মোদের গর্বের ভাষা
পেয়েছি শত কষ্টে,
সেই ভাষাই শুনবে তুমি
সকল বাঙালীর ওষ্ঠে।

বাংলা ভাষা শুনে মোদের
প্রাণ ধড়ে তে ফিরে,
বাংলা ভাষার অপমানে
প্রাণ যে যায় ছিঁড়ে।

পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়েছে আজ
এই বাংলা ভাষা,
বিদেশীরাও পড়ছে বাংলা
বলছে দেখো খাসা।

বাঙালির রক্তে মিশে আছে
মোদের বাংলা ভাষা,
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তায়
সপ্তম স্থানে আসা।

এই ভাষাতেই পড়ি লিখি
এই ভাষাতেই গাই গান,
বাংলা ভাষা না বললে
বাড়বে কীভাবে মান।

কবি সৈয়দ আহম্মদ আশেকী এর কবিতা




পালাব কোথায়
সৈয়দ আহম্মদ আশেকী


তোমাদের ছেড়ে আমি পালাব কোথায় ?
এ মমতাময়ী প্রেম-ভালোবাসা মাখা
মিশে আছে আমার প্রাণ।
আমার শত জনমের পূর্ব পুরুষেরা
এইখানে ঘুমায়ে আছে,
আমার বাবা ,আমার দাদা
তাঁর বাবার বাবা,দাদার দাদা
তাঁদের স্পর্শ পাই সর্বত্র।
মমতাময়ী মাটির পরতে পরতে
বৃক্ষের কান্ডে,ডালে,পাতায় মুকুলে, ফুলে
বাতাসের গন্ধে,সুস্নিগ্ধ নদী-ঝিলের জলে
পাখির কলতান,আলো,বৃক্ষ ছায়
তাঁদের ছেড়ে আমি পালাব কোথায়?

এইখানে মাটির ঘ্রাণে মিশে গেছেন নবাব সিরাজ
জন্মভূমি ছিলো যার বক্ষের পাঁজর,
দরাজ মুক্তি কন্ঠের ঢেউ শেখ মুজিবুর রহমান,
বহমানকালে শেরে বাংলা ফজলুল হক,
দেশ প্রেমের উপমা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী,
শুদ্ধ মানব মাওলানা ভাসানী,
উদ্যমী প্রাণ পুরুষ জেনারেল উসমানী
স্বপ্ন সিঁড়ি-চুড়ায় স্বপ্ন ছিল;
মেঘের ফাঁকে ফাঁকে ধবল চাঁদ
উঠে হেসেছিল মায়ায় মায়ায়
তাঁদের ছেড়ে আমি পালাব কোথায় ?

টলমল নদীজল, সুনির্মল বায়ু
দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ,সবুজের হাসি।
এইখানে আমার ঘর,গ্রাম,নগর,বন্দর
আমার স্বজন,প্রিয়জন,স্বপ্ন-কোলাহল। 
রাধারমণ,বাউল করিম,হাছন,লালন
ধানের শিষে কৃষকের আনন্দকেতন
ঢেউ খেলে আঁকাবাঁকা হাওয়ায়
এত সুখ রেখে আমি পালাব কোথায় ?

এ মাটি আমার বেঁচে থাকা
যে ঘ্রাণে বুকে সজিব-শক্তি সাহস
দুর্বার চিত্ত ,উম্মত্ত ইচ্ছা পৌরুষ।
জন্ম জন্মান্তরে বাঙালিপনা।
এ মাটি আমার মা;
পূর্বপুরুষদের মত আমিও
মাটির কোলে মিশে যাব
তবু নিঃশেষ হবো না কোনদিন।
এ বায়ু চরে শ্যমল আঁচল ধরে 
নির্মল ঘ্রাণ নেবো,সুবাস নেবো।
তোমাদের ছেড়ে, প্রেমের কোল ছিঁড়ে 
কভু কি ভাল থাকা যায়?
তোমার ছেড়ে আমি পালাব কোথায় ?

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৪ পর্ব






ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১৪ তম পর্ব 

মনি জামান


জিকুর মৃত্যুর পরে আসমা খুব ভেঙ্গে পড়েলো ঠিক মত ঘুমায় না ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না,ছেলেটাকে ও কাছে পেতনা সব সময় শাশুড়ি মোমেনা বেগম নয়নকে কাছে রেখে দিতো,আসমা নয়নকে কাছে ডাকলে মোমেনা বেগম আসমার কাছে আসতে দিতোনা ছেলেকে।ছেলে নয়ন ও দাদী মোমেনা বেগমের কাছে থাকতে থাকতে মা ছাড়া দাদীর কোলে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো,মা আর ছেলের দুরত্বটা বাড়ানোর জন্য মোমেনা বেগম মনে মনে সেই প্রথম দিন থেকে সুদুর প্রসারি এই কৌশল অবলম্বন করে সে সফল,যাতে মা আর ছেলের দুরাত্ব বেড়ে যায় কারণ মোমেনা বেগম মনে মনে চায় ছোট লোকের বাচ্চা আসমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
আজ হোক কাল হোক মোমেনা বেগম সেই সুদর প্রসারি যড়যন্ত্রের ফসল মা ছেলের এই দুরত্ব সৃষ্টি।জিকুর মৃত্যু আজ দেড় বছর হয়ে গেলো এই দেড় বছরে আসমার জীবনে নেমে এল চরম নির্যাতনের এক ভয়ংকর অধ্যায়,জিকুর মৃত্যুর পর মোমেনা বেগম আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো আসমা উপর এখন এই ছোটলোকের মেয়ে আসমা তার বাড়ির বোঝা হয়ে গেছে, তাই নিষ্ঠুর সব কৌশল একের পর এক প্রয়োগ করতে শুরু করছে।
আসমার কোন কাজে ত্রুটি না পেলে ও অহেতুক আসমাকে গালাগালি মার ধোর শুরু করলো,প্রতিবেশিরা কেউ কোন কথা বলতো না মোমেনা বেগমের ভয়ে।
সাংবাদিক ফিরোজ মাঝে মাঝে আসতো মোমেনা বেগমের বাড়ি আসমাকে দেখতে, কিন্তু মোমেনা বেগম ফিরোজের আশা একদম পছন্দ করতো না কারণ ফিরোজকে ভয় পেতো যদি ফিরোজ কিছু জেনে যায়,তাই কৌশল অবলম্বন করে একদিন মোমেনা বেগম ফিরোজকে ডেকে বলল,ফিরোজ আসমা এখন বিধবা তুমি এই যে আসা যাওয়া কর আমাদের বাড়ি পাড়ার লোকেরা কিন্তু কানাঘুষা করে। 
তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো আর কি বলবো,মোমেনা বেগমের কথা শুনে ফিরোজ যা বুঝার বুঝে নিয়েছে,তারপর থেকে ফিরোজ জিকুদের বাড়ি আর কখনো যায়নি দুর থেকে দেখতো,আসমার কষ্ট আর নির্যাতন গুলো সাংবাদিক হিসেবে সকল খবর প্রতিবেশীদের কাছে নিয়ে নিতো,সব যখন শুনতো ফিরোজ নিজেই যেন কষ্ট অনুভব করতো।
ফিরোজ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আসমাকে বাঁচানোর একটাই পথ আসমাকে বিয়ে করা কারণ ফিরোজ আসমাকে পছন্দ করে,তাই একদিন আসমাকে ডেকে ফিরোজ নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিলো,প্রস্তাব শুনে আসমা ফিরোজকে বলল,এটা সম্ভব নয় ভাই। আমার মৃত্যু বেতীত জিকুকে এই মাটিতে শুয়ে রেখে আমি বিয়ে তো দুরের কথা আমি কোথাও যাব না মৃত্যু হলে এখানেই হবে কারণ জিকু আমার হৃদয়ে ভালবাসার রাজকুমার,আমার হৃদয়ে অন্য কাউকে আমি কখনো স্থান দিতে পারবনা ভাই।
ফিরোজ অবাক হয়ে শুনলো সেদিন আসমার কথা গুলো,ফিরোজ ভাবছে এই সমাজে কজন নারী ভালোবাসাকে এমন শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়ে ধারণ করে এমন ভালোবাসা আঁকড়ে রাখে,আসমার কথা গুলো শুনার পরে আসমার প্রতি ফিরোজের আরো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে গেলো।
ফিরোজ ভাবলো আসমা কি সত্যিই মানুষ না কোন স্বর্গের দেবী যে এত নির্যাতন ভোগ করার পরেও স্বামী জিকুর ভালবাসা আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে স্বামীর ভিটে!ফিরোজ সেদিন বলল,ভাবি স্যালুট আপনাকে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে শুধু একবার সংবাদ দেবেন আমি আপনার পাশেই আছি।আসমা মাথা নাড়িয়ে সেদিন সাই দিয়ে বলল,প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলব ভাই।
ফিরোজ চলে গেলো কিন্তু ফিরোজ একবারও বুঝতে পারলো না আসমা আজ দুইদিন কিছুই খায়নি তাকে খেতে দেয়নি নিষ্ঠুর শাশুড়ি মোমেনা বেগম।এদিকে মোমেনা বেগম একের পর এক কৌশল অবলম্বন করে ও যখন আসমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলো না,তখন একটা ভয়ঙ্কর যড়যন্ত্র মনে মনে ঠিক করে মোমেনা বেগম তার ভাইয়ের ছেলে বকাটে নিশাখোর যবুক আরমানকে ফোন করলো তারপর বললো,আরমান বাবা তুমি আমার বাড়ি একবার এসো কালকে জরুরী দরকার তোমার কাছে,আরমান বলল,কি এমন দরকার আমার কাছে,ফুফু বলেন কি হয়েছে।মোমেনা বেগম আরমানকে বলল, একটা কাজ করতে পারবি বাপ,আরমান বলল কি কাজ ফুফু?মোমেনা বেগম বললো,আমার বাড়ি আয় তারপর বলবো। আরমান পরের দিন ফুফু মোমেনা বেগমের বাড়ি এসে হাজির হলো,আরমানকে ফুফু মোমেনা বেগম বলল,বাবা তুমি ঐ ছোট লোকের বাচ্চা আসমার ঘরে রাত্রি ঢুকে  আসমার সাথে ধস্তাধস্তি করবে আমি ঠিক সেই সময় লোকজন নিয়ে ধরে ঐ ছোট লোকের বাচ্চাটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব।পারবিনা বাপ?তোকে অনেক অনেক টাকা দেব,আরমান বলল,পারবনা মানে কখন করতে হবে কাজটা?মোমেনা বেগম বলল,কাল রাতে।
পরের দিন রাত নামলো আসমা ঘরে থাকা কিছু মুড়ি খেলো,তাও মোমেনার বাড়ির বৃদ্ধ কর্মচারী মোবারাক চুরি করে কিনে দিয়ে গেছে আসমার কষ্ট না দেখতে পেরে।পরের দিন রাতে আসমা শুয়ে আছে তার ঘরে,দরজা এখনো দেইনি ভাবছে পরে দরজা দিয়ে ঘুমাবে।হঠাৎ আসমা দেখলো আরমান ঘরে ঢুকেই আসমাকে জড়িয়ে ধরলো,আসমা ধস্তাধস্তি করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কিন্তু দুর্বল শরীর আসমার,না খেয়ে খেয়ে এতটাই দুর্বল যে আরমানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।
আরমান আসমাকে এত জোরে ধরেছে যে আসমার আর কিছুই করার নেই,আরমান একে পর এক আসমার শরীর থেকে শাড়ি ব্লাউজ সব খুলে ফেলেছে তারপর
আসমাকে ধর্ষণ করে ঘরে অপেক্ষা করছে আরমান মোমেনা বেগমের জন্য।
একটু পর মোমেনা বেগম পাড়ার লোক জন নিয়ে হাজির হয়ে ঘরে ঢুকে আসমাকে ধরে বাইরে নিয়ে এলো,আরমান মোমেনা বেগমের কথা মত পালিয়ে গেলো। মোমেনা বেগম লোকজনকে বলল,এই মেয়ে চরিত্রহীন আমার কথা তো কেউ এতদিন বিশ্বাস করনি আজ সবাই প্রমাণ পেলে তো?
কাল সকালে এই চরিত্রহীন ছোট লোকের বাচ্চার বিচার করে বাড়ি ছাড়া করা হবে আপনরা কি বলেন,সবাই বলল হ্যাঁ সকালে বিচার করতে হবে।আজ সবাই একসুরে কথা বলছে,আসমা নির্বাক,আসমার আজ কেন জানি মনে হলো পাষান পৃথিবীর জীর্ণ কুঠিরে আজ সংরক্ষিত তার ভালোবাসা বিসর্জন হলো,চূর্ণ হলো তার সব অহঙ্কার।জিকুকে হারানোর পর থেকে কত রাত কেটে গেছে একা,নির্ঘুম অশ্রু সজল দুটি চোখ,কষ্টের আলিঙ্গনে ছিলো এই ক্ষণিক জীবনে না পাওয়ার সব কষ্ট গুলো,আজ কারো প্রতি আসমার কোন অভিযোগ নেই,নেই পৃথিবীর প্রতি কোন অভিমান
আজ যা আছে সেটা তার ভাগ্যের প্রতি ঘৃণা,নিজেকে বড় একা লাগছে কেউ নেই তার আজ।



চলবে....

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৪




ধারাবাহিক উপন্যাস


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬৪)
শামীমা আহমেদ 

শায়লার ফোন ব্যস্ত পেয়ে শিহাবের ভেতরে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।।যেন সাজানো বাগানে আচমকা  কালবৈশাখীর তান্ডব। শিহাব বুঝতে পারছে না সে এখন কি করবে? শায়লার নাম্বারে কি কল দেবে বা দেয়া উচিত  হবে? কিন্তু এমনতো হতে পারে শায়লা তার অনিচ্ছাতেই কানাডায় কথা বলছে।পরক্ষণেই শিহাব ভাবলো, না,শায়লাতো কথা বলতেই পারে। শিহাবের মন  কেমন যেন  দোদুল্যমান হয়ে যাচ্ছে।তবে কি শায়লা অন্য কিছু ভাবছে? তবে যে আজ সারাদিন আমাদের সাথে সময় কাটালো? যদিও রেস্টুরেন্টে তাকে বেশ চিন্তিত লাগছিলো।তবে কি নোমান সাহেব শায়লার সাথে যোগাযোগে আছে? কই শায়লাতো কিছু বললো না?আর এতদিন নীরব  থেকে এখন সে কেন শায়লার খোঁজ করছে।কিন্তু শায়লাতো বলেছে সে আমাকেই ভালবাসে। শায়লাতো বারবার এটাই বুঝিয়েছে।আরাফকে আপন করে নিয়েছে। আরাফও শায়লাকে খুব পছন্দ করেছে।তাহলে কেন এতটা কাছে আসা? তার জন্য এতটা আকুল হওয়া? আবার কি তবে তার জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটতে যাচ্ছে? শিহাবের 
বিছানায় আর ভালো লাগছে না। মোবাইল নামিয়ে রেখে সে উঠে বসলো।  এক চাপা উত্তেজনায় ঘরময় হেঁটে চললো।এমন টেনশনের সময় সিগারেট  দরকার টেনশন কমাতে।কিন্তু সন্ধ্যা থেকে শায়লার ভাবনায় ডুবে থেকে একে একে সব স্টিক শেষ হয়েছে।এখন কি করা ? এত রাতেতো সিগারেটের দোকান খোলা নেই। শিহাবের ভেতর কিছু একটা হারিয়ে যাওয়ার আশংকা!
নোমান সাহেব আজ কিছুতেই ফোন কল ছাড়ছেন না।মনে হচ্ছে গত দেড়বছরের কথা সে আজ বলবে। অবিরত বলেই চলেছে,
সুইট হার্ট শাআলা।আই এম ভেরি সরি ফর মাই ডিলে।ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।ইন ফ্যাক্ট,আই ওয়াজ ওয়েটিং ফর ইউর রেস্পন্স!
শায়লা বুঝে নিলো,আসলে উনি ভেবেছিলেন আমি বিদেশ যাওয়ার জন্য নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে করে আছি।উনি ভেবেছেন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের মত বিদেশের পাত্রের জন্য আমি লোভী হয়ে আছি। সে শায়লাকে  খুবই সস্তা ভেবেছে।বারবার তার মুখে শায়লাকে  শাআলা ডাকটি অসহ্য লাগছে।
শাআলা,আই এম কামিংজাস্ট আফটার টেন ডেজ।প্লিজ, ফরগিভ মি,নাউ আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড, ইটস মাই ফল্ট,
এ প্রান্তে শায়লা একেবারে নীরব পাথর হয়ে আছে।শিহাবকে কি উত্তর দিবে সে? কি করবে এখন?
শাআলা,মাই চিল্ড্রেন লাইক ইউ ভেরি মাচ! ইউ আর দেয়ার মম। দে আর আলঅয়েজ আস্কিং এবাউট ইউ।প্লিজ,জাস্ট থিংক অফ দেম।
শাআলা,প্লিজ টক টু মি, প্লিজ রিপ্লাই মি,,প্লিজ ইউ গেট রেডি।ইউ প্যাক আপ ইউর এভরিথিং। আই উইল টেক ইউ উইথ মি হিয়ার ইন কানাডা।
প্লিজ, মাই লাভ,ডোন্ট বি স্যাড! 
শাআলা,প্লিজ, টক টু মি।প্লিজ রিপ্লাই মি,,
শায়লা এপাশে একেবারেই নিরুত্তর হয়ে রইল। অচেনা একটি কন্ঠে শায়লার নাম উচ্চারিত হচ্ছে শায়লার ভেতরে হু হু করে উঠছে। কিছুতেই তা ভাললাগছে না। সন্ধ্যার ফোনকলের শিহাবের কন্ঠের প্রলেপ এখনো তার কানে লেগে আছে।
নোমান সাহেব কোন সাড়া না পেয়ে অগত্যা বললেন,
ওকে,ডিয়ার,আই এম বিজি নাউ।টক টু ইউ লেটার।প্লিজ,গেট ইওর মাইন্ড রেডি টু কাম টু কানাডা।আই এম ইন এ হারি নাউ,,,
সো,বাই ফর দিস মোমেন্ট! লাভ ইউ শাআলা।
শাআলা,ডু ইউ লাভ মি? বাই হানি!
নোমান সাহেবের এই বিরতিহীন কথা শায়লার ভেতরে এঁফোড় ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে গেলো! বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণায় রক্তক্ষরণ হতে লাগলো।তার রক্তের ভেতর একটাই স্পন্দনের পুনরাবৃত্তি ,শিহাব, শিহাব, শিহাব!শায়লা একেবারে নীরব নিথর হয়ে ঘরের দেয়ালে দৃষ্টি নিয়ে মন ভাবনায় ডুবে রইল। অপলক দৃষ্টিতে  শুধু শিহাবের মুখটিই ভেসে উঠছে!
শিহাব বুঝতে পারছে না কি করবে? আইনি জটিলতা পার করে শায়লাকে তার কাছে আনা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখুনি শায়লার সাথে কথা বলতে হবে তার।শিহাব এগিয়ে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো।শায়লাকে ছোট্ট করে একটা মেসেজ লিখলো।
শায়লা ঘুমিয়েছ? 
মেসেজের শব্দে শায়লা ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।শিহাবের নাম দেখে দ্রুতই মেসেজটি দেখে নিলো। সাথে সাথে রিপ্লাই দিলো,না জেগে আছি। রিপ্লাইটি পৌঁছাতে এক দন্ড সময়ের মধ্যেই শিহাবের কল চলে এলো, শায়লা রিসিভ করে হ্যালো  বলতেই, জানার প্রবল আগ্রহ আর উত্তর শোনার উৎকন্ঠায়  জানতে চাইল, শায়লা তোমার ফোন বিজি পাচ্ছিলাম কেন? 
শায়লা একটু সময়ও নষ্ট না করে উত্তর দিলো,কানাডা থেকে কল এসেছিল।
কি বললেন উনি?
বললেন, উনি দশদিন পর বাংলাদেশে আসছেন আমাকে নিয়ে ফিরবেন।
শিহাব কথাটি শুনে শিহাবের শরীরের ভেতর দিয়ে মনে হলো একটি শীতল অনুভুতি বয়ে গেলো।যা  শায়লাকে নিয়ে তার মনের ভেতর জ্বলে উঠা শত আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিটি যেন ধপ করে নিভিয়ে দিলো।
শিহাব হালকা করে বললো,তুমি কি বললে? 
শায়লা নীরব হয়ে রইল।
শায়লার নিরুত্তরে শিহাব যেন ভেঙে পড়লো।
শায়লা,কিছু বলো।তুমি কি বললে? তুমি কি তার সাথে চলে যাবে? শায়লা কথা বলো।উত্তর দাও। শিহাবের আবেগী কন্ঠে শায়লার চোখ দিয়ে কান্নার ধারা নেমে আসছে। শায়লা কোন কথাই বলতে পারছে না।সে শিহাবকে এই বলেও আশ্বস্ত করতে পারছে না, শিহাব তুমি ভয় পেও না। কিছুক্ষন পর শিহাবের উৎকন্ঠাকে দমাতে শায়লা বলে উঠলো,,শিহাব  নোমান সাহেবের কথার আমি কোন উত্তর দেইনি।কারণ,আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই।তুমি আমাকে বেঁধে রাখতে পারবে না শিহাব? আমি তোমার সাথেই জীবন কাটাতে চাই।
শায়লার কথাগুলো শিহাবের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনলো। শায়লা তাকে ছেড়ে যাবে না, শায়লা তার হয়েই থাকবে! শিহাব মনকে আনন্দের খবরটি জানিয়ে দিয়ে, একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। শায়লাকে কাছে নেয়ার আবেগে শিহাব বেশ আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,শায়লা তুমি আমার খুব কাছে আসো। আমার বুকের মাঝে তোমার আবাস গড়ে নাও।আমি সকাল বিকাল রাত সারাটাক্ষন  শুধু তোমাকেই দেখতে চাই।
শায়লা তুমি আমাকে কাছে টেনে নিবে না?
এবার শায়লা অনেকটা স্বাভাবিকে ফিরে এলো।সন্ধ্যা থেকে ঘটে যাওয়া সবকিছুকে তুচ্ছ করে শায়লা শিহাবের মাঝে ডুবে গেলো।খুবই মোলায়েম কন্ঠে, মাদকতায় পূর্ণ কন্ঠে  শায়লা বললো,হু, এসো আমার খুব কাছে।
ফোনের দু'প্রান্তে দুজন যেন দুজনের পরশ অনুভব করছে। দুজন দুজনার নিঃশ্বাসের দুরত্বে খুব কাছাকাছি অনুভবে একেবারে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে যেনো! 
কিছুক্ষন পর শিহাব বলে উঠলো, শায়লা তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমারও মন চাইছে তোমাকে দেখার,তোমার একটা ছবি পাঠাবে? 
এ কথা বলতেই, শিহাব ভিডিও কলে চলে এলো। দুজন দুজনকে দেখে যেন শান্তি পেলো।
কি আজ ঘুমাতে হবে না? শায়লার প্রশ্নে শিহাব বলে উঠলো, কেন এক রাত কি আমার জন্য না ঘুমিয়ে কাটানো যায় না?
বেশ যায়,
তবে থাকো জেগে।জানো শায়লা তোমার ফোন বিজি পেয়ে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
কেন আমার হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে? 
হ্যাঁ, তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি এই জীবনে আর আমি কাউকে  বিশ্বাস করবো না জেনে রাখো।
না, আমি হারাবো না।আর তোমাকেও একা থাকতে হবে না।
কিন্তু কিভাবে শায়লা? কিভাবে তা সম্ভব করবে? 
ভালোবাসায় সব সম্ভব শিহাব।ভালোবাসায় সব জয় করে নেয়া যায়।শুধু অধিকারে সব পাওয়া যায় না।
শায়লা, তুমি আমাকে অভয় দিচ্ছো।
হ্যাঁ, শিহাব মনে রেখো, তুমি না, আমিই তোমাকে আগে ভালবেসেছি।তাই তোমাকে পাওয়ার আকুলতা আমার বেশি।আর তুমি আমার ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছো তাই তোমাকে পূর্ণ করা আমার ভালোবাসার শপথ।
শায়লার কথায় শিহাব আজ যেন অন্য শায়লাকে দেখছে।কথায় আর দৃষ্টিতে বেশ দৃঢ়তা। শিহাব নিজেকে একজন সুখী মানুষ ভাবছে যেখানে শায়লা  তাকে এমনিভাবে ভালোবেসেছে।এই ভেবে শায়লাকে হারানোর ভয় থেকে একটু যেন সাহস ফিরে এলো।
বেশ অনেক রাত হয়েছে।শায়লা মন থেকে নোমান সাহেবের কথাগুলো মুছে ফেওলতে চাইছে। হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন মনের ভেতর সাহস জমা হলো।নিজেকে বেশ হালকা মনে করেছে।
শিহাবকে জানালো,এখন তার বেশ ঘুম পাচ্ছে।সে ঘুমাতে চায়।শিহাবও যেন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।শায়লা শিহাবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিলো।
কল শেষ করলেও আজ শিহাবের চোখে যেন ঘুম নেই। সন্ধ্যা থেকে শায়লার ভাবনায় ডুবে থেকে হঠাৎই হারানোর ভয়ে শিহাবের চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গেছে।তার শায়লাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।শিহাব ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় রইল।

খুব সকালে শিহাবের ফোন কলে শায়লার ঘুম ভাঙলো।ঘুম জড়ানো চোখে শায়লা হ্যালো বলতেই, শিহাবের কন্ঠ ভেসে এলো,
শায়লা তোমার  বারান্দায় এসে একটু দাঁড়াবে?  তোমাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।



চলবে.....

কবি রফিকুল ইসলাম এর কবিতা





আশাদীর্ণ অনুতাপে
রফিকুল ইসলাম

নন্দন ভুবনলোকে  আনমনে জাগে 
কত স্বপ্ন  এলোমেলো 
তৃষ্ণিত পলাতকা মন পরম আত্মীয় প্রিয়জন
কত বন্ধু এল-গেলো।। 
অনুভূতির সীমানায় কত কল্পনা
কত প্রত্যাশার পায়চারী 
কখনো অভিমানে পিয়াসী মনে আড়ি ।
স্বপ্ন বিন্যাসে নিশিদিন নীলকণ্ঠ ফোটে
ধূলা মাটির মায়া মালিকায়
বেগুনি প্রজাপতি নাচে বাতাসে গায়।
ভালোবাসার অরণ্যে মুখ লুকায় 
আবেগী বাসর সাজায় পাতার আড়ালে।
 শত চুম্বনে অনুরাগে মায়ায় জড়ালে ।
ঘুম ভাঙা ভোরে ঝরে পড়ে সুখের শিশির 
রোদেলা ক্লান্ত দুপুর 
অদূরে হাঁসের ছানা জলে ভাসে 
ব্যথার দেউলে বসে কত কথা মনে আসে।
বিকেলের  সোনা রোদে 
হলুদ ঝিঁঙে ফুল মাচায় দোলে
প্রণয়ী পায়রা বাকবাকুম মাতে টিনের চালে।
অলখ্যে হলুদ রঙে ঝরে পড়ে পাতার আয়ু 
আশাদীর্ণ অনুতাপে
বিমর্ষ-ম্লান জীবন সন্ধ্যা বিদায় আরতি জ্বালে 
আঁধারের  নির্জন পথে।

২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস ১১৪ পর্ব




উপন্যাস

 টানাপোড়েন ১১৪
বি ব্লক এর ২৩ নম্বর
মমতা রায় চৌধুরী



সারারাত ছটফট করেছে রেখা ।কি যে ভেতরে একটা উত্তেজনা অনুভব করেছে ফোনটা আসার পর থেকে ।কে হতে পারে ?কে হতে পারে? এই ভাবনা বার বার মোচড় দিয়ে উঠেছে তার হৃদআকাশে । একবার এপাশ, একবার ও পাশ করেছে। একটু অবাক হল আবার মনোজ আজও এ ঘরে শুতে আসে নি। অথচ আগে বলতো রেখার পাশে না শুলে নাকি ওর ঘুমই আসে না। 
চুলের গন্ধে ওকে নাকি আলাদা একটা মাদকতা এনে দিত। এসব অতীত রেখা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।একটা সময় পর বোধহয়  এরকমই
 হয়  ।দাম্পত্য জীবনের একঘেয়েমি দোরগোড়ায় কড়া নাড়ে। রেখার  ও মনোজের জীবনে তো আরও তাড়াতাড়ি চলে আসলো ।এর কারণ অবশ্যই আছে, তাদের মাঝে সেতুবন্ধন ঠিকঠাক হয়নি ।আজ যদি ওদের মাঝে এক নতুন অতিথি র আগমন হতো, তাহলে কি সব কিছু অন্যরকম হতো। নাকি তিথি এখনো মনোজের মন জুড়ে আছে ।কিছুটা সময় হয় তো রেখার সঙ্গে মোহাবিষ্ট হয়ে জড়িয়ে ছিল ।এজন্যই হয়তো তখন তিথি ছিল নিষ্ক্রিয় । আজ রেখা নিষ্ক্রিয় হতে  চলেছে ।এমনিতেও রেখাকে পছন্দ করে না শাশুড়ি, ননদ ।মনোজের একরাশ ভালোবাসা সবকিছু ভুলে গেছিল কিন্তু আজ যদি ও  মুখ ফিরিয়ে নেয় ,তাহলে রেখার ভালোবাসার স্বপ্নগুলো কিভাবে পূর্ণতা পাবে?
তবে কি সে বড় ভুল করেছে ?তার জীবনে বসন্ত এসে তার দোরগোড়ায় কড়া নেড়েছে বারবার । স্বপ্নীল এসেছিল জায়গাটা নিতে  সে জায়গায় তাকে বসালেই কি তার জীবনে অন্য পূর্ণতা পেত?
আজ ভীষণভাবে স্বপ্নীলের কথা মনে হচ্ছে।
হঠাৎই রেখা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ,জানলার কাছে পর্দা সরিয়ে ভালো করে পাল্লা খুলে  দেখতে থাকে । নিচের দিকে তাকিয়ে ঝিমঝিম করে উঠে মাথাটা। অবলম্বনহীন একটা শূন্যতা যেন রেখার চারপাশে দুহাত বাড়িয়ে আকর্ষণ করতে 
থাকে ।জানলা দিয়ে বাতাস ছুটে আসছে। অবলম্বনহীন দীর্ঘ শূন্যতা তার নেমে আসছে সারা শরীরে। কিভাবে অতিক্রম করবে ?অনেকক্ষণ চেয়ে রইল নিচের দিকে ।ভুল হয়ে গেছে।   প্রায় পোকার মত মানুষ হাঁটছে, মর্নিং ওয়াক করছে।  গাড়ি যাচ্ছে।
এর মধ্যেই বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ আসলো। এত সকালে বাথরুমে কে মনোজ ই 
হবে ।হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে রেখাও উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে। রেখার আজকাল শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। ভাবছে একবার ডাক্তার দেখাবে কিনা? এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল রেখার যদি লেখার রসদ কিছু খুঁজে পাওয়া যায় ,তাই ডায়েরি নিয়ে বসল গিয়ে ব্যালকনিতে।
হ্যাঁ তাঁর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলো ।  আলোর মনটা ছিল কল্পনাপ্রবন। কল্পনায় সে হারিয়ে যেত দূর থেকে বহুদূর। তার নায়িকার মধ্যে রয়েছে একাকীত্ব, তার স্বামী তাকে ভালোবাসে না, তার মেয়ে তাকে ভালোবাসে
 না ,তার ছেলে তাকে ভালোবাসে না, সংসারে কেউ তাকে চায় না ।তার সেই দু:খের কথা ভেবেই  ভেবেই সে  সুখ পেত।
তাঁর উপন্যাসের আলো ছিল রক্ষণশীল পরিবারের বধূ। ও বাড়ীর কাঁটাতার পেরিয়ে মনের হদিশ পাওয়া খুবই দুষ্কর ব্যাপার। তবুও যেন পবিত্র কোন এক রন্ধ্র পথে  ঢুকে পড়েছিল। আলোর দুর্বলতাগুলো যেন সে জেনে নিতে পেরেছিল। এই দুর্বলতাকে  না সরিয়ে বরং আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আলো বোধহয় এ রকমই কিছু চেয়েছিল ।কোন একটা অঘটন ,একটু পতন। তবুও,একটু  সামান্য অপরাধবোধে জীবনটাকে যেন উজ্জ্বল করে দিয়ে যায়।
এই অব্দি লেখার পর রেখা একটু আঁতকে উঠলো একি আলো, আলো ক্রমশ রেখার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ যেন মনে হচ্ছে দুটি ভিন্ন আত্মা।
এবার লেখা থামিয়ে রেখা ভাবল এবার প্রাতঃক্রিয়া সেরে  ফেলে গোপালের ভোগ চাপাতে হবে। চা করতে হবে। কাজের মাসি একটু পরেই চলে আসবে। মিলি,তুলিদের খাবার দিতে হবে।
কালকে রাত্রিতে খেয়াল করেছে পাইলট একটু  খেয়েছে ।আশা করা যায় আজ থেকে পাইলট খাবার ধরবে। ওদের তো শুনেছি আজকে ভ্যাকসিন করতে আসার কথা, যে দুটো বাচ্চা সুস্থ আছে তাদের জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে বাথরুমে চলে যায় রেখা।তারপর ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে গোপালের ভোগ নিবেদন করে। 
, চায়ের জলটা বসিয়ে  পেপারে মনোযোগ দেয়। অনেকদিন পর পেপারটা পরছে । সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে ।অলস বৃষ্টির দিনে আজকে স্কুলে যাবে না এমনিতেই শরীরটা ভালো যাচ্ছে না সেজন্য স্কুলে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। পেপারের পাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ করে একটা ছবি নজরে আসে। আরে ,এ তো স্বপ্নিলের ছবি ।ভুল দেখছে না তো? ছবিটা আরেকটু চোখের সামনে নিয়ে আসলো । চশমাটা পরে নিল  হ্যাঁ ঠিক দেখছে।
ভালো করে পরল পড়ে দেখল স্বপ্নীলের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে বইমেলায়। স্বপ্নীলের সঙ্গে যখন পরিচয় হয়েছিল। তখনো মাঝেমাঝেই কবিতা আওরাত এতো ভালো লাগতো ওর 
কন্ঠে।রেখা মোহাছন্নের  মতো তাকিয়ে
 থাকতো ।কবিতা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকিয়ে থাকত রেখা।
মনে পড়ে স্টেশনে আসার পর গরম এক কাপ চা না খেলে যেন সারা সকালটাই
যেন তখন মাঠে মারা যেত।
আর স্টেশনের রত্নাদির চা না খেলে তো জীবনটাই যেন বৃথা। একদিন  স্বপ্নীল বলল ' চা খাবে?'
 দোকানটার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললো ওই দোকানের চা খুব ভালো।
রেখা বলল' হ্যাঁ ,চা তো খাবোই। রত্নাদির তাহলে তো কথাই নেই। রত্নাদির চা ঠিক আছে। আজ তুমি কিন্তু আমার 
অতিথি ।আমি তোমাকে চা 
খাওয়াবো ।স্বপ্নীল একগাল হেসে 
নিল। তারপর বলল' বেশ তাই হবে।'
তড়িঘড়িরেখা বলল 'রত্নাদি তোমার স্পেশাল চা খাওয়াও। দু কাপ দিও।'
রত্নাদি হেসে বলল' রিম্পাদি এসেছে?'
রেখা ঘাড় নেড়ে বলল আসেনি।
রত্নাদি বলে তাহলে দুকাপ চা।
স্বপ্নীল নিজেকে দেখিয়ে এগিয়ে এসে বলল' 'এই যে আমি অধম এখানে পড়ে আছি ,আমার জন্য।
রত্নাদি অত্যন্ত আহ্লাদিতো ভাবে  বলল' আরে আমার কবি
 ভাই ।তোমাকে চা না খাওয়ালে হবে ,তোমার কবিতার লাইন শুনবো কি করে?'
রেখা খুব অবাক হয়ে যায় রত্নাদি স্বপ্নীলকে চেনে? অনেক কিছুই জানে মনে হয়।
স্বপ্নীল ও রেখা একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে বসল।
ইতিমধ্যে রত্নাদি স্পেশাল চা করে এনে দিয়ে গেছে। চা খেতে খেতে বলল' তোমাকে কবি ভাই বললো ,তাহলে তোমার লেখা এরাও পড়েছে?'
স্বপ্নীল মুচকি মুচকি হাসে আর বলে 'আমার কাছ থেকে শুনেছে।আবার অন্য কোনভাবে উপরে থাকতে পারে সেটা আমার জানা নেই।'
কত সুন্দর মুহূর্ত গুলো কেটেছে।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে যায়, আরে, রান্নাঘরে তো
চায়ের জল বসানো 
আছে ।এতক্ষণ পর মনে পড়ল রেখার।
তড়িঘড়ি করে রেখা রান্নাঘরে গেল ,গিয়ে দেখল চায়ের জল কমে এক কাপের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। কি আর করবে অগত্যা আর একটু জল দিয়ে দিল । এবার চা করে নিয়ে এককাপ মনোজের ঘরে দিতে গেল।
চা নিয়ে গিয়ে রেখা দেখল মনোজ অঘোরে ঘুমোচ্ছে। রেখা ডাকলো না ।চা নিয়ে চলে আসলো। এরমধ্যে কলিংবেলের আওয়াজ জয় গনেশ জয় গনেশ জয় গনেশ দেবা।'
রেখা ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দেখে মাসি এসেছে 
কাজে ।রেখা বলল' তুমি আজকে আরো তাড়াতাড়ি আসলে।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে না আসলেই পারতে   
মাসি।'
মাসি এক গাল হেসে বলল 'তোমাকে বলে যায়নি তো। তাই?
রেখা বলল 'তা বুঝেছি, এই বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ হবে মাসি। আর তোমাকে বলা থাকলো এরকম বৃষ্টি হলে তুমি সেদিন কাজে এসো না।
বলতে বলতেই রেখা চায়ের কাপটা মাসীর দিকে এগিয়ে ধরে।
চা খেতে খেতে মাসী বললো আজকে তুমি স্কুলে যাবে না?
রেখা আস্তে আস্তে বলল 'আজকে আমি ডুব দিলাম'।
'তা বেশ করেছো'। এর মধ্যেই আবার কলিং বেলের আওয়াজ 'জয় গনেশ, জয় গনেশ ,জয় গনেশ দেবা '। রেখা অবাক হয়ে গেল ।বলল'আবার কে আসলো?
একটু বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুলল, খুলেই ভূত দেখার মত দেখল" একি পার্থ?'
পার্থ বলল' হ্যাঁ বৌদি, মনোজদা রেডি তো?'
 রেখা অবাক হয়ে বলল 'রেডী মানে? কোথায় যাবে?'
' সে কি আপনাকে বলে নি।,


"আমাকে বলেছিল তো কলকাতায় যাবে।'
রেখা বললো' কে জানে ।কলকাতায় যাবে তো এখনো অঘোরে ঘুমোচ্ছে ।আমাকে তো কিছু বলেনি। এসো ,ভেতরে এসো পার্থ ।কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে?'
বৃষ্টির অলস দিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকেই সারাদিন ধরে মনের ভেতরে পিয়ানোর সুর এর মত বারবার বেজে উঠেছে স্বপ্নীলের কথা। কতবার স্বপ্নের ঘোরে স্বপ্নীল আর রেখা এক হয়েছে ,পাশাপাশি চলেছে, তাদের এই ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছে । স্বপ্ন ভেঙে গিয়ে দেখে সে পড়ে আছে কল্যাণীর 'বি' ব্লকের ২৩ নম্বর বাড়িতে। এখানে আছেএখন একরাশ বিরক্তি ,ভালবাসাহীন, অবলম্বনহীন শূন্যতা।'

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১১৩





উপন্যাস 



টানাপোড়েন ১১৩
স্বপ্নের জগত 
মমতা রায়চৌধুরী

ফোনটা বেশ কয়েকবার রিং হবার পরে ফোনটা ধরল রেখা। রিম্পা দি বলল'কোথায় থাকিস' জিনিয়াস'? রেখাকে উত্তর দেবার আগেই বলল শোন তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে তবে যেটুকু বলার আগে সেটুকু বলি ,সেটা হল তোর লেখা গল্প পড়ে অন্য একজন সম্পাদক তোর ঠিকানা চাইছিল । তোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় লেখা পাঠানোর জন্য। 
আসলে প্রথম লেখাটা তো আমার ঠিকানা থেকেই পাঠানো হয়েছিল ওই জন্য বোধহয় আমাকেই ফোনটা করেছেন।আমি কিন্তু হ্যাঁ বলে দিয়েছি। তুই কিন্তু না করতে পারবি না?
'সে তো বুঝতে পারলাম কিন্তু তুমি আমার নামটা হঠাৎ করে জিনিয়াস রাখলে কবে থেকে?'
'বা,বা তোকে জিনিয়াস না বলে উপায় আছে। তাই এই নামটা আমি খুব খুঁজে বুদ্ধি খাটিয়ে 
পেলাম ।তোর সঙ্গে এখন এটা খুব যায় ।একগাল হেসে রিম্পা দি বলল।
রেখার হাসিতে যেন জোছনা ঝরে পড়ে যত কালিমা সব ধুয়েমুছে চলে যায় কোথায়।
'তা বেশ বেশ জিনিয়াস নাম নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আরেকটা নাম হল সে তো ভালো কথা। তবে নামকরণটা সার্থক হবে  কিনা সেটা একবার ভেবে দেখতে পারতে? শেষ পর্যন্ত দেখো কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন এর মত না হয়। রেখা ও প্রাণ খুলে হেসে নিল।
'হ্যাঁ হয়েছে আমি যা নাম রেখেছি দেখবি সার্থকতা লাভ করবে? এবার কাজের কথায় আসি। জানিস আমরা একটা পিকনিক করছি আর তুইও আছিস । না করবি না কিন্তু? মনোজকেও বলবো। একটা গেট টুগেদার এর মত হবে।'
'সে তো যেতে ইচ্ছে করছে। কতদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়না। মনে হচ্ছে যেন একটা যুগ। কত কথা বলার আছে জানো?এক আকাশ মন নিয়ে বিছিয়ে রেখেছি থরে থরে সাজানো অনুভূতি। শুধু তোমার সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করবো  আর অনুভূতির অনুরণনে গা ভাসিয়ে শুধুই উপলব্ধি উপলব্ধি।'
'তা হলে না করিস না ।কিন্তু কিন্তু করবি না কিন্তু?'
একটু উদাস ভাবে বলল তবুও একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে গো। আমার বেবিগুলো তো
 অসুস্থ ।তারমধ্যে দুটো একটু ঠিকঠাক এর মধ্যে আছে ,কিন্তু আমার পাইলট সোনা ও ঠিক না হলে যেতে পারবো না।'
'সে কিরে আবার পাইলটের শরীর খারাপ?'
'তবে আর কি বলছি তোমায়। কি  যে টেনশনে  আছি ,ওষুধ দেয়া হয়েছে কিন্তু খাবার একদমই খাচ্ছে না ।ওর চেহারাটা না ভেঙে গেছে। দেখে না চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। বেচারা কাছে  গেলে যেরকম হতো অর্থাৎ আগে যেরকম ভাবে আদর করত ,ওঠার ক্ষমতা ওর নেই তবে কিন্তু তাকায় করুণভাবে।'
'শোন চিন্তা করিস না রেখা বুঝলি ?ঠিক হয়ে যাবে ।দুজনা যখন ঠিক হয়েছে, ও ঠিক হয়ে
 যাবে ।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডেটটা তো কাছে পিঠে। তাহলে তোর জন্য ডেটটা তোর সুবিধামতো  ঠিক করতে হবে ।বাকিদের সঙ্গে কথা বলে দেখি।'
'শুধু শুধু আমার জন্য ডেট চেঞ্জ করবে রিম্পা দি কতজনার সঙ্গে তুমি সেট করেছ , দেখো এখন ওদের কোন অসুবিধা হবে নাতো?'
'সেটা অবশ্য ঠিকই বলেছিস, এই জন্য তো তোর নাম জিনিয়াস দিয়েছি। তবে মনে হয় না কেউ আপত্তি করবে ।তবুও একবার কথা বলে দেখতে হবে বুঝেছিস? আমি চেষ্টা করবো অবশ্যই।
আর শোন স্কুলে যাবি তো কাল?'
কেন বলতো ?কিছু দরকার আছে? যাবো ভেবেছি তো এখন স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। অন্য রকম পরিবেশ হয়ে গেছে না ।তবে ওই যে  বড়দি সামনে সরস্বতী পুজো আছে, দেয়াল পত্রিকা স্কুলের সামনে সাজানোর এসব দায়িত্ব পড়েছে আবার?'
'কেন রে এত যে জায়গা নিয়ে ঝগড়া করল ওকে দিয়ে দিক বড়দি।'
রেখা একগাল হেসে বলে ,তা যা বলেছ ।বড়দি ছাড়তে রাজি হবে  নাকি।  সবই ঘেঁটে ঘ করে দেবে।'
খুব মিস করবো রিম্পা দি তোমাকে  জানো তো, এই কাজগুলো তুমি আমি মিলে করতাম। একদমই ভালো লাগছে না। সবথেকে বড় ব্যাপার স্টাফ রুমে গেলেই ওইপাশে চেয়ারটা
 ফাঁকা ।মন-প্রাণ কেমন হু করে ওঠে ।জানো মনে হয় যেন কত দূরে চলে গেছো তুমি ।তোমাকে স্পর্শ করতে পারবো না ।প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবো না ।তখনই চোখ ফেটে জল আসে।'

', বুঝি , বুঝি, সবই বুঝি ।কিন্তু কি করব
 বল ?পরিস্থিতি মানুষকে কোথায় কখন নিয়ে যায় কেউ কি আর বলতে পারে? আমার মেয়েটা বড় হয়ে গেল  দেখ ও এরপর পড়াশোনার চাপ আছে ।তাছাড়া তোর দাদাও অফিসে চলে যাবে কে মেয়েটা কে সামলাবে আমি যদি কাছে  না যেতাম ।তোকেও বলছি' উৎস শ্রী' নাম লেখা কি দরকার ওখানে পড়ে থাকার? এরপর বয়স হবে শরীরে ক্ষমতা কমে যাবে তখন কি করবি 
বল ?তাছাড়া তুই এখন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় দিতে পারবি ?আর বড়দি তো যখন তখন তোকে ডেকে নেন। তোকে কি লোকাল টিচার ভাবেন নাকি বলতো?'
রেখা একমনে কথাগুলো শুনতে থাকে তারপর বলে হ্যাঁ সেটাই ভাবছি আবার অন্যদিকে একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে। কি যে হবে কাছে আসলে সেটাও বুঝতে পারছিনা । রিম্পা দি অত্যন্ত উৎসুক ভাবে বলল কেন রে কি হয়েছে?'
' আর বোলো না শাশুড়ি মা তো এখন এখানে এসে থাকবেন  । গাছ থেকে পড়ে গেলে যেমন ঝটকা লাগে তারপর কিছু ভেবে ওঠার আগেই যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে, ঠিক তেমনি  রিম্পা দি রেখার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারলো। তাই অবাক হয়ে বললো ওরে বাপরে দেখ তুই এবার বারুদ নিয়ে খেলা করবি।'
'তা যা বলেছ আমি কিছু বুঝতে পারছিনা?
 কি করবো ?মনোজ অবশ্য বলেছে 'তোমার ডিসিশনটা জানাও ।
'আমি কি জানাতে পারি বল? তার মা তার বাড়িতে আসবেন ।আমি কি বলব,  আসবেন
না ।এটা কি কখনো আমার কাম্য ।সেটা তো আমি পারবো না। রিম্পা দি অতি আশ্চর্য হয়ে বলল 'কেনই বা পারবি না বল না ?অন্যভাবে নিস না। দেখ সবকিছু নিয়ে গেছে মেয়ের 
পরামর্শে ।সব নিয়ে চলে গেছে ওখানে থাকবে বলে। তোকে তো সহ্যই করতে পারেন না। এখন হঠাৎ করে আবার এখানে এসে থাকার কথা ভাবছেন কেন? আবার কি মতলব ?'
রেখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো 'জানিনা আমি কিছু জানিনা গো ?কি হবে সারাক্ষণ এক মানসিক যন্ত্রণা দেবার জন্য থাকবে । অন্যদিকে স্কুলের পরিবেশটাও দিনকে দিন কেমন হয়ে
 যাচ্ছে ।
' এবার ঘরেতে এসে এক দন্ড শান্তি পাবি না। কি হবে রেখা তোর বুঝতে পারছিনা ।'
'আমিও বুঝতে পারছি না।'
মা মা মা আ আ আ..
রেখা ফোনেতে এই রিম্পাদির মেয়ের গলা শুনতে পেলো। 
' ওই দেখ। হ্যাঁরে, তোর সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওদের দরকার পড়ে কেন বলতো?আমি দেখেছি এটা খেয়াল করে ।বিশ্বাস কর যখনই তোর সাথে কথা বলবো তখনই এইরকম। আবার শুনতে পেল ওমা মা ওমা আ আ আ… রিম্পা দি এবার বিরক্ত আর ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,' কি হয়েছে? ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন?'
'পাশের বাড়ির আন্টি এসেছেন নিচে বসে আছেন তাই তোমাকে ডাকছি?'
'ও বাবা। ওই দেখ, সেই পিকনিকের কথা বলছিলাম পাশের বাড়ির বন্দনাদি । উনিও স্কুল টিচার ।একসঙ্গে পিকনিক করবে বলে ,তার তো তর সইছে না রে ।আচ্ছা ,এখন ফোনটা রাখি কেমন ?পরে কথা বলবো।  বাচ্চাগুলো কেমন থাকে, আমাকে একটু জানাস ।ভালো 
থাকিস ।অত টেনশন করিস না ।সময় সবকিছু ঠিক করে দেবে।'
রিম্পা দি ফোনটা কাটার পর রেখার মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল ।উফ ,কতদিন পর রিম্পা দি সঙ্গে কথা বলে একটু খানি যেন হালকা মনে 
হচ্ছে ।কিন্তু ফোনটা ছাড়ার পরে মনে হল যেন আবার  একযুগ পর দেখা হবে, কথা হবে ।খুবই খারাপ লাগছে ।এদিকে বাইরে ভালই বৃষ্টি হচ্ছে হিমেল হাওয়া বইছে ,জানলাগুলো আওয়াজ তুলেছে।রেখা ফোনটা রেখে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় চোখেমুখে দু চার ফোঁটা ছাট এসে ভিজিয়ে দিল। আজ বৃষ্টির ঘ্রাণ রেখার ভালো লাগছে ।
এই অনুভূতিটা এসেছিল কয়েক বছর 
আগে ।স্বপ্নের মতোই যেন এসেছিল জীবনে। রেখার থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোট ।মনে পড়ে সেই দিনটার কথা ।স্কুল থেকে ফিরছে ,বাইপাশে দাঁড়িয়ে, ক্লাস থেকে বের হতে দেরী হওয়াতে ট্রেন পায়নি। ট্রেন মিস করাতে, যত গন্ডগোল ।স্বপ্নরা এসে ভিড় করেছিল। সেদিন একসঙ্গেই স্টেট গাড়িতে উঠেছিল দূরপাল্লার গাড়ি ।সিটে বসেছে পাশে এক ভদ্রলোক, কাছে একটা স্টপেজে নেমে যাওয়াতে ,তার পাশেই বসে পড়ে দরদর করে ঘাম পড়ছিল , পকেট থেকে রুমালটা বের করে ঘামটা মুছে নিলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুমাল বের করতে গিয়ে রেখার হাতের সাথে স্পর্শ হয়ে যায় ।তখনই একটা কি অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়েছিল রেখার দিকে। রেখাও তাকিয়েছিল রেখার তাকানোতে কি ছিল সেটা তো রেখা বলতে পারবে না। তবে ওর চাহনিতে একটা মাদকতা ছিল ',মহুয়া' ফুলের নেশা যেন। ক্লান্ত ,শ্রান্ত ,মন সেই নেশায় বুঁদ হয়ে চলে যেতে চেয়েছিল অনেক অনেক দূর 'মহুয়ার দেশে।' আর ঠিক তখনই বৃষ্টি। জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাট এসে পড়ছিল রেখার চোখেমুখে  একটু একটু করে সরে এসেছিল স্বপ্নীলের পাশে। স্বপ্নীল জানালাটা বন্ধ করতে চাইছিল কারণ রেখা চেষ্টা করেও জানালাটা বন্ধ করতে পারছিল না। স্বপ্নীল জানলাটা যখন বন্ধ করতে যায় স্বপ্নিলের মুখটা অনেকটা রেখার কাঁধের কাছে। স্বপ্নিলের দীর্ঘশ্বাস পড়ছিল ঘনঘন। কি অনুভূতি 
জানিনা ।শরীর রোমাঞ্চিত হচ্ছিল ।তারপর জানলা বন্ধ করতে গিয়ে স্বপ্নীলও কিছুটা ভিজে যায় ।এতটাই টাইট ছিল জানলাটা। তারপর রেখা আর স্বপ্নীল  মিলে দুজনে  হাত লাগিয়ে জানলাটা টানে। যখন দুজনে মিলে জানলাটা টানছিল দুজন দুজনের হাতের স্পর্শ আর শরীরের গন্ধ একটা পাগল পাগল উত্তেজনা, যেন রক্তে নাচন শুরু হয়ে গেছে  তারপর স্বপ্নীল বলল অনেকটাই ভিজে গেছেন আপনি  মুছে নিন। রেখা মোহাবিষ্ট এর মতো তাকিয়েছিল । ব্যাগ হাতরে হাতরে রুমাল বার করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু রুমালটা খুঁজে পাচ্ছিল না ।স্বপ্নীল আর একটা রুমাল বের করে রেখাকে দেয়, বলে এটা দিয়ে মুছে নিন ।'
রেখা প্রথমে রুমালটা নিতে চাইছিল না। 
' রুমালটা তো কোন দোষ করেনি ।এটা ফ্রেশ রুমাল নিন্ না। তাছাড়া রুমালটা তো আপনাকে আমি দিয়ে দিচ্ছি না ।অ্যাতো হেসিটেট্ ফিল করছেন কেন?'
রেখা রুমালটা নিতে চাইছিলো না তবুও কিভাবে যেন হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিল আস্তে আস্তে। স্বপ্নীল রুমালটা দিলে, মুছতে থাকে। কপালের জল তখন পড়ছে কয়েকটা বুকের ভাঁজের কাছে এসে পড়ল । চোখ দুটো ভিজে গেছে।
 স্বপ্নীল আবেগ ভরা দৃষ্টিতে দেখছিল, তারপর চোখ নামিয়ে নিল । হঠাৎই অবিন্যস্ত আঁচলটা ঠিক করে নিল রেখা।তারপর রুমালটা স্বপ্নীলকে দিয়ে দিল।
প্রথম পরিচয় কিভাবে যে হয়েছিল ,জানা যায় না এই ভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের পথ চলা কিন্তু সেই পথ চলতে গিয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আঁতকে উঠেছিল রেখা । কোন বাধা ছিল না স্বপ্নীলের।  ব্যাচেলর ছেলে সে মনেপ্রাণে চাইছিল রেখাকে এইভাবে কয়েক বছর কেটে গেছে ধীরে ধীরে যখন জানা যায় স্বপ্নিল একটি বেসরকারি ব্যাংকে ভালো পোস্টে আছে  পোস্টিং হয়েছে তার ইদানিং এখানেই  রেখার কাছ থেকে  স্কুল ঠিকানাটা জানতে পারল এবং বাড়ির ঠিকানাটা ও কায়দা করে জেনে নিয়েছিল ।
 এভাবেই মাঝেমাঝেই ওদের দেখা হতে লাগল এবং কেমন যেন একটা নেশার মতো হয়ে গেছিল স্বপ্নীল ট্রেনে যাতায়াত করে না। ওরতো দূরপাল্লার গাড়ি সুবিধা ।তবে অকারণেই এরপর দেখা যেত রেখার ট্রেন ফেল হয়ে যেত। স্বপ্নীল ও মাঝে মাঝে ট্রেনে যাতায়াত করতো।যেন অপেক্ষায় থাকত রেখা আসবে ।
কি জানি হয়তো তাই মনে হয়েছে। এভাবেই পথ চলা শুরু হয়েছিল ।দুটো ভালোলাগা মন ।যেখানে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র ।এই প্রথম এই কথাটা  স্বপ্নীলের মুখে শুনতে পেয়ে রেখা অত্যন্ত খুশি হয়েছিল ।প্রথম ভালোবাসার প্রস্তাব জানিয়েছিল স্বপ্নীল।কিন্তু রেখা সাড়া দিতে পারেনি ।রেখা বলেছিল সে যে অবস্থাতে আছে তাকে ভালোবাসা যায় না ।ভালবাসার পূর্ণতা সে কোনদিনও পাবে না ।স্বপ্নীল তাকে বলেছিল ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে জানলে স্বপ্নীল স্বপ্ন দেখায় না ,বাস্তবে তার প্রয়োগ করে দেখাবে। স্বপ্নীল মনেপ্রাণে চেয়েছিল রেখাকে।'
কিন্তু রেখার শুধু মনে হতো কি করে হবে? একটা অসম বয়সের সঙ্গে কখনো ভালোবাসা
 হয় ?তাছাড়া সে তো বিবাহিতা। রেখা সাড়া দিতে পারেনি।'
স্বপ্নীল পাগলের মত হয়ে গেছিল রেখার জন্য। একদিন হাতে হাত রেখে স্বপ্নিল বলেছিল এক মুঠো আকাশ আমাকে হতে দাও ,দেখো তোমার জীবনে বৃষ্টি দিয়ে সব জীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে, আবার নতুন করে সাজিয়ে দেবো তোমায়?
এক মায়াবী রাতে তুমি হবে আমার গল্পের উপাখ্যান  । শুধু তাই নয় আমি তোমার জন্য সমুদ্র হতে পারি ।তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাব দূর বহুদূরে ।রেখা স্বপ্নীলকে বলেছিল 
থামতে । দুইকানে আঙ্গুল দিয়েছিলো 
রেখা। এগুলো শোনা  তার পাপ, সে কিছুতেই পারবেনা তার ডাকে সাড়া দিতে। সেদিন রেখার  দু চোখ ভিজে উঠেছিল ।তখন তার বাড়িতে চলছিল চরম অশান্তি ।মনোজের মা, দিদি যেভাবে মেন্টালি টর্চার শুরু করেছিল রেখার
 প্রতি  মনোজের কিছুই করার ক্ষমতা ছিল
 না ।রেখা একটা আলাদা জগৎ খুঁজে পাবার চেষ্টা করছিল । স্বপ্নীলের ভেতরে সেটা পেয়েছিল কিন্তু রেখা সাড়া দিতে পারল না ।এভাবেই রয়ে গেল তাদের অলিখিত উপাখ্যান ।
আজ হঠাৎ এইসব মনে হচ্ছে কেন?
ইতিমধ্যেই রেখার ফোন বেজে ওঠে একবার ফোন বেজে কেটে যায় ।আবার ফোনটা বেজে 
ওঠে  রেখা তখনো জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হিমেল হাওয়ায় আর বৃষ্টি স্নাত হয়ে সে ডানায় ভর করে উড়ে যেতে চাইছিল দূর বহুদূরে  তার ভাবনায় ছন্দপতন ঘটায় ফোনের রিং। রেখা জানলাটা কোনরকমে বন্ধ করে এসে ফোনটা ধরে বলে হ্যালো'
বৃষ্টি হচ্ছে? সেই বৃষ্টি যাতে গন্ধ আছে মিষ্টি মধুর?
রেখা বলল কে ?কে বলছেন আপনি?'
অপরপ্রান্ত থেকে বলল আমি তোমার অনেক কাছের ।তুমি চিনতে পারছ না আমায়? স্বপ্নে তুমি আমাকে দেখতে পাও না? বলেই ফোনটা কেটে যায়..।

কবি শহিদ মিয়া বাহার এর কবিতা




ওফেলিয়া গঙ্গা নিতল
শহিদ মিয়া বাহার

ওফেলিয়া হাতে, বল্লরী রাতে বেঁধেছ বাধন 
হ‍্যামলেট নই তবু অকারণ
মৌ- শিহরণ, জলে-আলোড়ন 
পরিযায়ী চোখে চেয়ে চেয়ে দেখি
 বসন্ত -ছায়ার বয়লার দহন। 

আকাশ-কুঞ্জে কার
 চারু চারু মুখে তার শালবন সঙ্গীত দোলে
বাতাসের পলে পলে, ভৈরবী রাগ তুলে 
বেজে উঠে বিকেলের একতারা মন
হায় উচাটন---
নর্তকী চুলে চুলে 
হাওয়ায় হাওয়ায় দোলে
মৌতালী চোখের চৈতালী বন।

কঙ্কন হাতে, নির্ঝর রাতে  বাজাও তোমার ভায়োলিন সুর
কতদূর-- আর কতদূর---
আকাশ মেঘের সীমানা তাহার ?
আঁধার যাহার 
আরন‍্যক পথে, হেটে যেতে যেতে
বন্ধ কপাট খুলে, মন্দিরা চোখ তুলে 
কত তারে দেখাবো,কত তারে শেখাবো
মেগাবাইট মনের সমুদ্র অতল, 
আমি বার বার বহুবার 
ছেঁকে ছেঁকে ছুঁয়েছি 
 তাহার গঙ্গা মোহনা নিতল ।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৩





ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১৩ তম পর্ব 
মনি জামান

সন্ধ্যার একটু আগে গাড়ি জিকুদের বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো,সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।শুধু সাংবাদিক ফিরোজ নিজ বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো,জিকু ডাকলো ফিরোজকে কোথায় যাচ্ছিস তুই,ফিরোজ বলল,আমার অনেক কাজ আছে জিকু এখন যায় কালকে এসে কথা বলবো বলেই ফিরোজ হাঁটতে শুরু করলো বাড়ির পথে।
আজ ফিরোজের কেন জানি আসমার কথা বার বার মনে পড়ছে মোমেনা বেগমের অহঙ্কারী মনোভাব ফিরোজকে কেন জানি খুব ভাবাচ্ছে,প্রশ্ন জাগছে মনে আসমা মেয়েটা ভাল থাকবেতো?আবার এটাও ভাবছে ফিরোজ আসমাকে নিয়ে ভাবনা তার বোধহয় ঠিক হচ্ছেনা কারণ আসমা পরস্ত্রী।
সকাল হলো আসমার মা বাবা এসেছে জামাইয়ের বাড়ি নাতি ছেলে দেখতে,কিন্তু বেয়াইন মোমেনা বেগম একবারও ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলো না এমন কি তাদের বসতেও বললো না।আসমা তার মা ও বাবাকে ডেকে ঘরে নিয়ে বসালো,নয়নকে এনে মায়ের কোলে দিয়ে বলল,মা তোমার নাতি,জিকু এসে শশুর শাশুড়িকে দেখে খুব খুশি হলো তারপর শশুর শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো মা এবং আব্বা আপনারা কেমন আছেন,শশুর শাশুড়ি বলল,ভালো আছি বাবা তুমি কেমন আছো,জিকু বলল,ভালো আছি আমরা। 
জিকুর শশুর শাশুড়ি খুব খুশি হলো জামাই জিকুর অমায়িক ব্যবহারে,আসমা মা বাবার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো তারপর মা বাবাকে খেতে দিলো খাওয়া শেষে আসমার মা বাবা নাতি ছেলেকে খুব কষ্টে যোগাড় করা আংটিটা পরিয়ে দিয়ে জামাই ও বেয়াইন মোমেনা বেগমকে বললো,বেয়াইন আমরা বাড়ি যাচ্ছি আপনি যাবেন,কিন্তু মোমেনা বেগম মুখটা ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
জিকু শশুর শাশুড়িকে থাকার জন্য খুব অনুরোধ করলো কিন্তু শশুর শাশুড়ি বলল,বাবা আজ যাই সময় করে আবার একদিন আসবো বলেই আসমাকে ডেকে বলল মা জিকুর দিকে খেয়াল রেখো।
জিকুর শশুর শাশুড়ি চলে যাবার পর
মোমেনা বেগম ছেলে জিকুকে ডাকলো, ডেকে বলল,আমাদের পারিবারিক সব ব্যবসা এখন থেকে জিকু তোমাকে দেখতে হবে,এবং তোমাকে কোম্পানির চাকরি ছেড়ে বাড়ি থেকে সকল জমি জায়গা সব দেখা শুনা করতে হবে।
জিকু কিছু বললো না শুধু সম্মতি দিয়ে রূমে চলে গেলো,রূমে এসে স্ত্রী আসমাকে ডেকে জিকু মায়ের প্রস্তাবটা আসমাকে জানালো,আসমা স্বামীর হাতটি ধরে বলল প্লীজ জিকু তুমি মায়ের প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিও না প্রস্তাবটা রাখো না হলে মা খুব কষ্ট পাবে,কত আশা করে হয়তো আমাদের এনেছে। জিকু বলল ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম কিন্তু তুমি আমার পাশে থেকে সাহার্য করবে।
জিকু পরের দিন কুমিল্লার উদ্দশ্য রওনা হলো অফিসে গিয়ে দরখাস্ত দিয়ে আসলো চাকরি ছাড়ার,বাড়ি ফিরে কিছুদিন বিশ্রামে কাটালো তারপর পরিবারের ব্যবসা এবং জমি জায়গা দেখাশুনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে দেখাশোনা শুরু করলো,এর ভিতর এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো।
মোমেনা বেগম আসমার উপর আস্তে আস্তে নির্যাতন শুরু করলো শারীরিক এবং মানুষিক ভাবে,বাড়ির সব থালাবাটি ধুয়া মাঝা থেকে শুরু করে ঘর দোর সব মুছা এবং উঠোন ঝাড়ু দেওয়া পর্যন্ত সব আসমার উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বাড়ির কাজের মেয়েকে বিদায় করে দিয়েছে মোমেনা বেগম।
এখন থেকে আসমার উপর সব দায়িত্ব, আসমা শাশুড়ি মোমেনা বেগমকে খুশি করার জন্য সব একমনে মেনে নিলো একটু বৌমা স্বীকৃতি পাবার আশায়,ক্রমশ কাজের চাপে আসমার আস্তে আস্তে শরীর খারাপ হতে শুরু করলো,জিকু বাসায় এসে প্রায় জিজ্ঞেস করে আসমাকে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা,মা কেমন ব্যবহার করছে ইত্যাদি,আসমা হাসি মুখে জিকুকে বলল না কোন সমস্যা হচ্ছেনা আর সমস্যা হবে কেন,শাশুড়ি মোমেনা বেগমের প্রসংশা করে বলল মা এখন সংসারের দায়িত্ব সব আমার কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে।
জিকু আসমার মুখে সব শুনে খুশি হলো এবং মনে মনে ভাবলো মা তাহলে আস্তে আস্তে পুত্র বধু আসমাকে মেনে নিয়েছে।
কিন্তু জিকু তার মা মোমেনা বেগমের ঘৃণ্য দুরঅভিসন্ধি ঘুর্ণাক্ষরেও টের পেলোনা, এমন কি নয়নকে আসমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করলো শাশুড়ি মোমেনা বেগম,আসমার কাছে ছেলে নয়নকে এক প্রকার দেইনা সব সময় মোমেনা বেগম নিজের কাছে রাখে।
নয়নও প্রায় মায়ের সংস্পর্শ না পেয়ে এই এক বছরে মাকে প্রায় ভুলেই গেছে,সময় বয়ে চললো দুই বছর হয়ে গেলো জিকু কিছু জিজ্ঞেস করলে আসমা জিকুর কাছে সব লুকায়,কিন্তু নিভৃতে একা একা বসে কাঁদে কি চেয়েছিল আর কি পেতে শুরু করেছে সে।
দিন দিন আসমা মোমেনা বেগমের চক্ষু শুলে পরিণত হতে থাকলো কিন্তু ছেলে জিকুর ভয়ে প্রকাশ্য কিছু বলতো না মোমেনা বেগম,কৌশল অবলম্বন করে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ালো।
এদিকে সকাল হলো জিকু আসমাকে বলল খেতে নাস্তা হয়ে থাকলে দাও আমি বেরুবো,আজ মালের চালান আসবে দোকানে,আমাকে সকাল সকাল যেতে হবে।আসমা সকালের নাস্তা আনতে রান্নাঘরে গেলো,হঠাৎ জিকুর একটা চিৎকার শুনতে পেলো,আমাকে ধরো।আসমা চিৎকার শুনা মাত্র ছুটে এসে যা দেখলো জিকু বুকটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে,আসমার হৃদয়ে হঠাৎ একটা ভয়ের সঞ্চার হলো আসমা জিকুকে জড়িয়ে ধরে বলল,কি হয়েছে সোনা বলেই আসমা চেঁচিয়ে কেঁদে শাশুড়ি মোমেনা বেগমকে ডাকলো।
জিকুর মা মোমেনা বেগম সহ বাড়ির অনন্যরা সবাই ছুটে এলো,মোমেনা বেগম ডাক্তারকে ফোন করলো,আসমা জিকুকে ডাক দিয়ে বললো কি হচ্ছে তোমার আমাকে একটু বলো প্লীজ জিকুর ঠোঁট দুটো শুধু বিড় বিড় করে নড়লো,কিন্তু কিছু বলতে পারলো না তারপর আসমার হাতে এলিয়ে পড়লো।
ডাক্তার এলো জিকুর হাত ধরে পরীক্ষা করে জানালো জিকুর মৃত্যু হয়েছে,শুনে
আসমা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তার ভালবাসার শেষ অবলম্বন এ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছে,তার শেষ আশ্রয় টুকুও সৃষ্টি কর্তা আজ কেড়ে নিয়েছে,আসমা যে রাজকুমারের স্বপ্ন দেখেছিলো সেই রাজকুমার আজ তাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলো পরপারে,নয়ম এতিম হয়ে গেলো আসমা বিধবা হলো জিকু হয়তো আসমার হৃদয়ে এখন থেকে হয়তো স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে চিরকাল।


চলবে....

কবি সৈয়দ আহম্মদ আশেকী




প্রথম প্রেমের শিরোনাম
সৈয়দ আহম্মদ আশেকী

বিরহের একেকটি সময়
 কতো মহাকাল দীর্ঘ হয়
সে টুকুন
বিরহানলে প্রজ্জ্বলিত প্রেমিক জানে।
সুখ সময়ের সজ্ঞা খুবই ছোট্র হয়,
আঁভা ও সুবাস ছড়ায়ে যে ফুল ফোঁটে;
কালো ভ্রমর ও রঙিন প্রজাপতির
ডানার কম্পনে মাতুয়ারা করে কানন।
ফুলের কোমল পাঁপড়িগুলো মনলোভা হারালে
একদিন সুখ-মোহের গুঞ্জন ভাঙে,
 আনন্দের মন্থন ফুরায়ে যায়।

আমার কাননে তুমি মৌসুমী 
ফাগুণ হয়ে এসেছিলে।
অনিন্দ ভালোবাসার পরশে পরশে
মৃদু-মৃদঙ্গে ছুঁয়েছিলে পাঁপড়িদ্বয়,
এতো ভাবাবেগ! এতো মায়া-ব্যাকুলতায়
আমার হৃদয় কমলে জাগালে চৈতন্য।
কম্পন উঠেছিলো প্রতিটি লোমকূপে,
দেহের আপাদমস্তক আরশিনগরে,
মাইকোকন্ড্রিয়ার উষ্ণাঞ্চলে প্রাণানুভুতির
কেতনে পুলকে পুলকে দোল উঠে।
ভালোবাসার জন্য বহমান স্রোতধারায়
স্নায়ূর প্রতিটি কোষে বিদ্যুতায়িত হয়,
স্বর্গানুভুতির বিভোরে সুখের মলাটে আমি শিরোনামে লিখে দিলাম তোমার নাম।

সময় গড়িয়ে যায় দিবস-যামির প্রহরে প্রহরে,
কতকাল কতদিন চলে গেলো তুমিহীনা
সে টুকুন আমি টের পাই ক্ষণে ক্ষণে,
জীবনের অনেকটা পথ পার হয়েও
হৃদয়ের একাকীত্বে আজও খুঁজি তোমাকে।
পঁটে আঁকা ছবিটা শুধুই তোমার,
তোমাকে কি করে ভুলবো বলো?
তুমি ভালোবেসেছিলে বলে
আমার অস্তিত্বে তুমি কবিতা হয়ে গেছো,
বুকের প্রকোষ্টে বিরহের তপ্তানল জ্বালায়ে
আমাকে পোড়ায়ে পোড়ায়ে অতীতের
ভালোবাসাগুলোর সময় জাগিয়ে দাও।
প্রতিটি শব্দের কোঠরে কোঠরে 
বিরহ তোষানলে হৃদয় পোড়ায়ে
আজও তোমার অস্তিত্ব টের পাই।

শিরোনামে মলাটের ভেতর খুঁজি তোমায়
প্রথম প্রেমের শিরোনাম 
কখনও বদলানো যায় না ।

শামীমা আহমেদ  এর ধারাবাহিক উপন্যাস পার্ব ৬৩





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৬৩)
শামীমা আহমেদ 

সন্ধ্যার চা পর্ব শেষ করে গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে শায়লা নিজের ঘরে চলে এলো।নানান রকম খবরে কেমন যেন  মন বিষন্ন করা অনুভবে বিছানায় বসলো। ভাবনায় দুই বিপরীতমুখী মনের চলন! সারাদিন যেমন একটা অনন্য সুখের আবেশে ভেসেছিল এখন যেন ঠিক ততটাই  বেদনার সাগরে ভেসে চলা।সে জানে না এই ভেসে যাওয়া তাকে কতদূর নিবে।প্রতিটা মূহুর্তে শিহাবের অনুভুতি অনুভব তাকে আবেগী করে তুলছে আবার নোমান সাহেবের পিছুটান আশংকা হয়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কেন জীবন আজ দুই দিকে দাঁড় করালো।নোমান সাহেব কেন এতদিন নীরব রইলেন?কেনইবা শায়লাকে আপন করে নেয়ার কোন আগ্রহই দেখাননি? শায়লাতো বয়সের ব্যবধানকে তুচ্ছ করেছিল।ভেবে ছিল মনটাই আসল। যদি তার সাথে মনের বন্ধন হয়ে যায় তবে আর বয়স কোন বাধা হবে না। তবে শায়লাকে নোমান সাহেবের বিয়ে করার প্রকৃত কারন যখন সে জেনেছে তখন তার প্রতি একরাশ ঘৃনাই জন্মেছে।মিথ্যে দিয়ে ঢেকেছে তার উদ্দেশ্য। দুজনার জীবনের শুরুটাই যদি এমন হয় তবে সেখানে আর কোন বিশ্বাস অবশিষ্ট থাকে না। বিয়ের পর তিনটি রাত তাদের একসাথে কাটলেও নোমান সাহেব কোন কিছুতেই এগিয়ে আসেননি। শায়লা বিছানার এক কোনায় একপাশ হয়ে নানান ভাবনায় থেকেছে।অজানা অচেনা ভিনদেশী মানুষ কোন অধিকার খাটায় নি বলে শায়লা তাকে বেশ ভদ্রলোকই ভেবেছিল।কিন্তু এখন মনে বারবার প্রশ্নটা  উঁকি দেয়,এটা কি তার নিছক ভদ্রতা ছিল, নাকি ছিল একধরনের উপেক্ষা? ফাইভ স্টার হোটেল রুমে শায়লার বতেমন করে বাসর সাজানো হয়নি,বিয়েতে  আর দশটি মেয়ের যেমন হয়।সেই যে তার শায়লাকে আপন করে না নেওয়া সেটা যেন বিশাল এক শূন্যতা হয়ে রইল।আর আচমকাই একটু একট করে, কেমন করে  শিহাব তার ভাবনায় জায়গা করে নিলো!দুজনেই যেন বঞ্চিতের দুঃখ ব্যথায় দুজনের কাছে আশ্রয় খুঁজেছে।দুজনার শূন্য জায়গাটা পূরন করার আকুলতায় কাছে এসেছে। শায়লার চোখের কোনে পানি এসে জমলো।তার জীবনটা কেন সবসময় এমনি অপ্রাপ্তি দিয়ে ভরা? এমনি নীরব প্রশ্নে বুকের ভেতরটা অভিমানী হয়ে কেঁদে উঠলো।  নানান ভাবনার গভীরতায় ডুবে শায়লা গুটিসুটি হয়ে কখন যেন ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো।

রাহাত টিভির ক্রিকেট  খেলায় একেবারে ডুবে রইল।ছুটির দিনটি আজ  ঘরেই কাটালো রাহাত। চোখ টিভি স্ক্রিনে আটকে থাকলেও মনের ভেতর অনেক কিছুরই হিসেব চলছে।মাথার ভেতরে অনেককিছুর গণনার হিসেব চলছে।নোমান সাহেব আসতে আর দধদিন বাকী।তাইতো শায়লার বিষয়টি নিয়ে সে গভীরভাবে ভাবছে। শায়লার মুখের দিকে তাকালে রাহাতের মনটা কেঁদে উঠে।কতদিন আর আপুর এই একার জীবন চলবে? যদিও নোমান সাহেব আসতে চাইছেন।কিন্তু তা বেশ দেরি হয়ে গেলো। নব বিবাহিতদের মাঝে দেড় বছরের দূরত্ব সেতো অনেক। দুজনার মাঝে বয়স আর ভাষার ব্যবধান তাদের একেবারেই কাছে টানেনি।তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা দেয়া ঠিক হয়নি।কিন্তু কী আর করা তখন? এক বোনের ভালোর জন্য আরেক বোনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
রুহি খালাকেও উপেক্ষা করা যায়নি।আমাদের পরিবারে তার একটা বিরাট অবদান। এখন এই সিচুয়েশনে   তাকেও ম্যানেজ করতে হবে।আবার নোমান সাহেব নিজের স্ত্রীকে কাছে নেয়ার অধিকারের কাছে তো আর শিহাব ভাইয়ার আবেগ দাঁড়াতে পারবে না। যেখানে কাগজে কলমে আইনে সে শায়লার স্বামী। কিন্তু এদিকে শায়লাও পুরোপুরি শিহাবের দিকে মন নিয়ে গেছে। দুজনাকে মানায়ও বেশ!
তবে এখানে শায়লার চেয়ে নোমান সাহেবের দোষটাই বেশী। তার উচিত ছিল আপুর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা আর তাকে কাছে নেয়ার প্রসেসটা দ্রুত করা।চাইলে জীবনের একটা দীর্ঘ সময় একা থাকা যায় কিন্তু কারো সাথে জীবন বাঁধলে তখন দূরত্বটা চরম এক হতাশা আর অস্থিরতায় ভরে উঠে। মনের সাথে শরীরেরও এক তীব্র চাওয়া হিংস্র হয়ে উঠে।স্বামীদের দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন দেশে থাকা স্ত্রীরা জানে জীবনের  কতটা  সুন্দর সময় একাকীত্বে কাটছে।তখন অন্য কোন হাতছানি এলে নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।মানুষের দেহ আর মনের চাওয়া যে সমানভাবেই গুরুত্বপূর্ণ এটা আমাদের সমাজের মুরুব্বিরা বুঝতে চায় না।
রাহাত ভাবলো,কাল একটু সময় করে শিহাব ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে।রাহাত টিভিতে  খেলার চ্যানেল বদলে অন্য চ্যানেলে থামতে হলো।সংবাদ চলছে।সংবাদ পাঠিকাকে রাহাতের খুব ভাল লাগলো।চমৎকার একটি শাড়ি পরেছে।রাহাত ভাবলো,বাঙালি মেয়েদের শাড়িতে অনন্য অপূর্ব রূপসী লাগে! 
রাতের খাবারের সময় হয়ে এলে রাহাত শায়লাকে ডেকে তুললো।এমন অসময়ে কিভাবে ঘুমিয়ে গেলাম? এইভেবে শায়লা দ্রুতই বিছানা ছাড়লো। টেবিলে খাবার সাজিয়ে নীরবে নিঃশব্দে ভাইবোন খেয়ে নিলো। শায়লার ভাবনায় কপালের ভাঁজ রাহাতের দৃষ্টি এড়ায়নি। রাহাত নিজেও কোনপথে কিভাবে এগুবে তা নিয়েও ভাবনায় ডুবে থাকে।সুনশান নীরবতায় বাড়িটাকে যেন মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে।মা থাকলে তবুও কিছু কথা চলে।
রাহাত খাবার শেষ করে শায়লাকে সব গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করলো। রাহাত বুঝেছে আপুর জন্য এখন নিত্যদিনের কাজকরায় দিনদিন অনাগ্রহই আসবে।
আপু রাত জেগোনা,ঘুমিয়ে যেও।
বলে রাহাত নিজের ঘরে চলে গেলো।শায়লা নিজের ঘরে ঢুকলো।শিহাবের কথা মনে পড়ছে।সেকি রাতের খাবার খেয়েছে? নাকি নাখেয়েই ঘুমিয়ে গেলো? একটা কল দিয়ে জানাতো  যায়!ভাবতেই মোবাইল স্ক্রিন আলোকিত হয়ে উঠলো। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো, নোমান সাহেবের কল!  শায়লা বুঝতে পারছে না এখন কি করবে? এখনতো কোন অজুহাতে কল না ধরে থাকা যাবে না।
শায়লা হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে কল রিসিভ করলো।হ্যালো বলতেই,পৃথিবীর ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো,হাই,শাআলা,,দিস ইজ নোমান ফ্রম কানাডা।হাউ আর ইউ? গুড ইভনিং,, 
কে যেন শায়লার কন্ঠ রোধ করে রাখলো।অপ্রান্ত থেকে বারবার একই প্রশ্নের শায়লার  অস্ফুট স্বরে একটা কথাই বেরিয়ে এলো,আই এম ফাইন,,থ্যাংকিউ।নোমান সাহেবের আজ যেন কথার খই ফুটেছে! একটানা কথা বলেই চলেছে।শায়লার অনিচ্ছতে কানে মোবাইলটা আটকে আছে যেন!

শিহাব রাতের বেশ অনেকটা সময় বারান্দায় বসেই কাটিয়ে দিলো।আজ আর ঘরের দিকে মন টানছে না।মন চাইছে সারারাত এই বারান্দায় বসে কাটিয়ে দিতে।শায়লার অনুভব নিয়ে চোখে এক ঘোর লাগা  রঙিন 
স্বপ্নভেলায় ভাসছে সে।তার মন খুব করে শায়লার উপস্থিতি চাইছে।মনে হচ্ছে এখুনি কল করে শায়লাকে চলে আসতে বলি। আজ সারাটাদিন শায়লার চোখের প্রতিটি চাহনী তার বুকে যেন তীর হয়ে বিঁধছে।সুখানুভুতির তীব্রতায় আনমনে ভাবনায় কখন এভাবে সময় হয়ে গেলো, একেবারে টেরই পেলো না শিহাব।  একটি একটি করে পুরো এক প্যাকেট বেনসন শেষ হয়েছে।নিশ্চয়ই শায়লা থাকলে শত বারনে থামিয়ে দিত এই ধোয়া টেনে যাওয়ায়।নিশ্চয়ই বলতো সন্ধ্যে হয়েছে ঘরে আসো,এমন ভর সন্ধ্যায় বাইরে থাকতে হয়না।এমনি করে মিষ্টি  শাসনে কতদিন হল কেউ বারন করে না। শিহাববের ভাবনায় বারবার লিফটে সেই শায়লার স্পর্শ  শায়লার নিজেকে  একেবারে সঁপে দেয়া ক্ষণ গুলো যেন শিহাবকে বিদুৎ চমকে আবেশিত করছে।শিহাব ক্রমশ অধীর হয়ে উঠছে।শায়লাকে একান্তে পাওয়ার আবেগে একাকীত্বটা অসহনীয় হয়ে উঠছে। কেবলি বলতে ইচ্ছে করছে, শায়লা তুমি এক্ষুণি চলে আসো,এসে দেখো আমি কেমন একা  একা বসে শুধু তোমাকেই ভেবে চলেছি।হাতের কাছে মোবাইলটা। তবুও ইচ্ছে করছে না কল করতে, ইচ্ছে করছে না কথা বলতে, অনুভবের এই উন্মাদনায় শিহাব পুরোপুরি ডুবে আছে।চাইছে না কথার অনুরননে তার ছেদ ঘটাক। মাঝে মাঝে নিঝুম নিশ্চুপ নিরালা পরিবেশ হাজার কথার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠে। আজ আকাশে প্রচুর তারার মেলা।শিহাব বারান্দায়  আলো নিভিয়ে সেই সন্ধ্যা থেকে বসা।ধীরে ধীরে সে সন্ধ্যার আকাশ থেকে রাতের এই ঘন কালো আঁধারের আকাশ দেখছে। তারার ঝিকিমিকিতে শিহাবের মন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। নিজেকে আজ একজন পরিপূর্ণ সুখী মানুষ ভাবছে। দুঃখ যতই আঘাত হানুক একটু সুখ ছোঁয়ার তার চেয়ে অনেক ক্ষমতা। শায়লাকে খুঁজে পাওয়া তার  আপন হওয়া এমনি করে তার জীবনের সাথে শায়লার মিশে যাওয়া শিহাবের  পিছনের সব দুঃখকে ভুলিয়ে দিয়েছে। শিহাবের যেন আর দেরী সইছে না, শায়লাকে কবে নিজের ঘরে তুলে আনবে।সব কিছুর দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সে শুধুই শায়লাকে দেখে সময় কাটাবে। কত কত দিন যে এই নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছে। দিন শেষে শূন্য হৃদয়ে,ফাঁকা এই ঘরটার লক খুলে ঢুকেছে। অসহনীয় সেই ক্ষণগুলো।আর ভাল লাগছে না কিছুই।কবে শায়লার সান্নিধ্য পাবে, কাটবে মধুময় সময়।শিহাব বুঝতে পারছে কেমন করে শায়লা তাকে এতটা বিভোর করে রাখে।
ইচ্ছে করছে এখুনি বাইকটা নিয়ে পিছনে শায়লাকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ি অজানার উদ্দেশ্য।  ছুটে চলি মাঠ ঘাট প্রান্তর পেরিয়ে দূর থেকে দূরে। 
বেশ অনেক রাত হলো।শিহাব মোবাইল ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। রাত সাড়ে বারোটা!  কিভাবে এতটা সময় পেরিয়ে গেলো।শায়লার সাথে কথা বলার জন্য মনটা বেচায়েন হয়ে উঠলো!  তার ফোন কলের অপেক্ষায় নিশ্চয়িই অভিমানী মুখ নিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। শিহাব বিছানায় আধশোয়া হয়ে শায়লাকে মেসেঞ্জারে কল দিতেই ফোন স্ক্রিনে দেখা গেল, সি ইজ বিজি উইথ এনাদার কল! 
শিহাব বুঝতে পারলো না, এত রাতে শায়লা কোন কল নিয়ে বিজি হলো? তবে কি কানাডার কল এটেন্ড করছে সে? 
শিহাবের ভেতরটা ওলোট পালোট হয়ে গেলো।


চলবে.....

২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

কবি গোলাম কবির এর কবিতা





স্বপ্নের ভিতরে জীবনানন্দ দাশকে দেখে 
গোলাম কবির 

  
  এই তো সেদিন-
  ঘুমের ভিতরে দেখলাম ফার্মগেটের কাছেই 
  স্বপ্নের কবি জীবনানন্দ বাবু একাএকা
  হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের নির্মীয়মান
  মেট্রোরেলের পথের ওপর দিয়ে, 
  তাঁকে দেখে হঠাৎ চমকে উঠে 
জিজ্ঞাসা করলাম, " কেমন আছেন প্রিয় কবি? " 
  বললেন ভালো নেই খুব, ওখানেও তাঁকে খুব
জ্বালাচ্ছে সুরঞ্জনা, বনলতা সেন ও লাবণ্যদাশ। 
 ওখানেও বাংলার নদীমাঠ, ভাঁটফুল,
 ধানসিঁড়ি নদী, কীর্তনখোলা আর
 সন্ধ্যানদীর মায়া, গাঙশালিকের দলের
 কথা ভুলতে পারছেন না কিছুতেই, 
 তাছাড়া আবার যে ফিরে আসবেন 
এই বাংলায় কিশোরীর রঙিন ঘুঙুর 
 নাঙা পায়ে পরে হয়তো মানুষ নয়, শঙ্খচিল
 কিংবা শালিকের বেশে সেই সুযোগও 
 আর এলোনা বলে কষ্টে আছেন খুব!
 এটুকুই আলাপ শেষে কোথায় জানি 
 তিনি হারিয়ে গেলেন সেদিনের মতো!
 অথচ আমি তাঁকে আবার ঘুমের ভিতরে
 দেখবো বলে, আরো অনেক না বলা কথা
 বলবো তাঁকে, তাঁর এতো অদ্ভুতসুন্দর
 কবিতা লিখার রহস্য জানবো বলে
 অপেক্ষার কুয়াশা ঢাকা মেঘের দিনে অপেক্ষা করতে করতে আবার ঘুমিয়ে পড়ছি প্রতিদিনই।

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১১২





উপন্যাস 



টানাপোড়েন ১১২

ছুঁ কার মেরে মনকো

মমতা রায় চৌধুরী




রেখার আজ অলস বিকেল কাটছে শুধু ওদেরকে নিয়েই ।মিলি আগের থেকে স্টেবল হয়েছে ওষুধ খাওয়ানোর পর  কিন্তু পাইলটের অবস্থা এখনো ঠিক হয়নি ।বিকেলবেলায় ওদের আদর করতে করতে হঠাৎ করে নজর পড়ে পাইলটের দিকে । রেখা খেয়াল করল'ও পটি করল কিন্তু পটিটা ভীষণ পাতলা ।
তখন সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে মনোজের
 ঘরে ।রেখার ভেতরটা যেন পাইলটের জন্য কেমন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। যে বাচ্চাটি সবসময় এত উচ্ছ্বসিত থাকে রেখাকে দেখলে তো রক্ষে নেই ।আগে রেখাকে ধরবে জড়িয়ে দুই হাত 
দিয়ে । তারপর ওর গালে ঠোঁটে অসংখ্য অসংখ্য আদর করতে থাকে। তারপর ওকে রেখা যখন নিজে আদর করবে ভালো করে কোলে নিয়ে ,তখন ও শান্ত হয় ।আজকে এরকম নিস্তেজ অবস্থা দেখে রেখার চোখ ফেটে জল আসে। তবু ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। এঅবস্থাতেও কোনরকমে রেখার গালে চুম্বন এঁকে দেয়।
 রেখা আর রিক্স নিতে পারে না। ছুটে আসে মনোজের ঘরে। 
মনোজ তখন অলস বিকেল, মেঘলা দিনে বিছানা নিয়েছে। বিছানায় ঘুমিয়েছে কিনা বুঝতে পারছে না দরজায় নক করার প্রয়োজন মনে করেনি সরাসরি ছুটে গেছে।
 গিয়ে ডাকছে 'কিগো শুনছো? শুনছো ?
সাড়া না দেওয়াতে মনোজের গায়ে হাত দিয়ে ওকে ডেকে তোলে। আর রেখা দেখছে মনোজ  ঘুমিয়ে পড়েছে।
হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ মনোজ রেখার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ।মানে বোঝাতে চায় ব্যাপারটা কি হলো ?
রেখা উদগ্রীব হয়ে বলল 'পাইলট পটি করেছে,খুব পাতলা হয়েছে আর কেমন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। তুমি এক্ষুনি একবার মন্টু ডাক্তারকে ফোন করো।,'
মনোজের ভেতরেও কেমনএকটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেল ।ফোনটা দাও । দাও প্লিজ তাড়াতাড়ি।টেবিলের কাছে চার্জে দেয়া আছে ।'
রেখা ছুটে গিয়ে ফোনটা এনে দেয়।
মনোজ ফোন করে মন্টু ডাক্তারকে।
একবার রিং হয়ে গেল আবার ফোন ধরাল মনোজ ।এবারও রিং হয়ে গেল ।ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে ।
রেখার লক্ষ্য করলো মনোজের কেমন যেন একটা চোখেমুখে অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে। রেখার দিকে তাকিয়ে বলছে 'ফোন কেন রিসিভ করছেন
 না ?'এরকম তো করেন না ।তাহলে কি উনি আর্জেন্ট কোন কাজে আছেন?'
 রেখা সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে দুই হাত জ্ড়ো করে প্রণাম করে আর বলে ঈশ্বর ফোনটা যেন ডাক্তারবাবু ধরেন ।করুণা করো আমাদের 
প্রতি ।ঈশ্বরের করুণা অবশ্য অশেষ তাই ডাক্তারবাবু এবার ফোনটা  ধরলেন।
 মনোজ আনন্দে চেঁচিয়ে  বলল' ডাক্তারবাবু ফোন ধরেছেন ।
'হ্যালো '
এ প্রান্ত থেকে' ডাক্তারবাবু আমি মনোজ
 বলছি। 
''হ্যাঁ বলুন ।ওদের কি খবর বলুন তো? '
ডাক্তারবাবু বললেন।

মনোজ বলল' হ্যাঁ, আপনাকে জানানো হয়নি দুজন ঠিকই আছে,  কিন্তু ছেলে বাচ্চাটি পাইলট যার নাম ও কিন্তু নিস্তেজ হয়ে গেছে ।একটু আগে আমার স্ত্রী  ওদেরকে যখন আদর করতে 
গেছে ।খেতে দিতে গেছে, তখন দেখছে, পাইলট পটি করেছে খুবই পাতলা  ,আর কেমন যেন একটু নিস্তেজ প্রকৃতির হয়ে গেছে।'
 ডাক্তারবাবু বললেন ' সে কি কথা? আপনারা এক কাজ করুন ,দ্বিতীয় ওষুধ টা অর্থাৎTaxim-0 বন্ধ করে দিন ।
আর বদলে আমি একটা ওষুধ বলছি ওটা লিখে নিন।
মনোজ বলল একটু হোল্ড করুন  ডাক্তার বাবু। আর রেখার দিকে তাকিয়ে বলল পেনটা দাও ।
দাও প্লিজ তাড়াতাড়ি।'
রেখা পেন্ টা এগিয়ে দিল।
মনোজ  বলল 'শুধু পেন্ দিলে? লিখবো 
কিসে ?রাইটিং প্যাডটা দাও বিরক্তির স্বরে বলল।
রেখা তড়িঘড়ি করে রাইটিং প্যাড টা এগিয়ে দিল
আর অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুজনের কথোপকথনের শুনতে লাগল ফোনটা স্পিকারে দেয়া ছিল।
মনোজ বলল 'হ্যাঁ বলুন ডাক্তার বাবু।'

ডাক্তারবাবু বললেন
Nor-metrogyl(R)o
খাবার আগে দিনে দুবার খাইয়ে দিন 2ml করে।
ইমিডিয়েট খাইয়ে দিন।
আর একটাWalyte-ors
জলে গুলে রেখে দিন এই জল খেলেও কাজে দেবে।'
মনোজ বলল' অবশ্যই ডাক্তারবাবু। অসংখ্য ধন্যবাদ।'
ডাক্তারবাবু বললেন 'কেমন থাকে না থাকে জানাবেন অবশ্যই
মনোজ বলল 'ডেফিনেটলি'
এবার ফোনটা কেটে দিলো।
মনোজ তাড়াতাড়ি হাফপ্যান্ট পরা ছিল সেটাকে ছেড়ে দিয়ে একটা ফুলপ্যান্ট পড়ে নিল সঙ্গে করসুলের শার্ট,মাফলার জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল।'
রেখা দুশ্চিন্তা নিয়ে গোপালকে ভোগ চাপাতে 
গেল।
আজ পূজো করতে বসেও রেখার মন নেই। এরমধ্যে মনোজ ওষুধ নিয়ে এসে হাজির। এসেই রেখা রেখা বলে শোরগোল করতে শুরু করলো।
মনোজ রেখাকে বললো 'এসো ধরবে  ওষুধ খাওয়াবো  ।
রেখা সঙ্গে সঙ্গে গেল ।গিয়ে ধরলো পাইলট কে। খুব কষ্ট করে ওষুধটা খাওয়ানো হলো।
থ্যাংকস গড যে তাড়াতাড়ি ওষুধ খাওয়ানো গেলো রেখা বলল।
রেখl একটু নিশ্চিন্ত হল' দেখা যাক কি হয়।'
এবার রেখা নিজের রুমে চলে আসলো। এসে উপন্যাসের নেক্সট পার্ট লিখতে শুরু করলো। কিন্তু লিখতে শুরু করার আগে বারবার মনে হতে লাগলো সম্পাদককে । তিনি যে নাম বলছেন এই নামটা তো অনেক আগে তার জীবনে একটা দাগ কেটে গেছে। ডিপিতে কোন ছবি দেখা যাচ্ছে না। অনেক কথাই মিলে যায় তার সঙ্গে। হঠাৎ করে রেখাকেই বা কেন এত উৎসাহিত করছেন,?'
সাত-পাঁচ ভেবে কূলকিনারা করতে পারল না,। সে পেন্ নিয়ে বসল লিখতে। শুরু করলো লেখা।
এর মধ্যেই ফোন বেজে ওঠে' তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম..।'
রেখা একটু বিরক্ত হল এক আকাশ ইচ্ছে নিয়ে বসেছে লিখতে ।লেখার মাঝে তার কেটে দিলে ভাবনায় ছেদ পড়ে।'
একটু বিরক্ত নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলে "হ্যালো'।
হ্যালো লিখছেন?
রেখা বলল হ্যাঁ লিখছি
সম্পাদক বললেন'বাচ্চাগুলো কেমন আছে?
রেখা বলল দুজন ভালো আছে আর একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সম্পাদক বললেন সে কি?
রেখা বলল' হ্যাঁ,তাছাড়া কি বলছি।
সম্পাদক বললেন' তাহলে তো আপনার খুব চিন্তা বাড়লো।'
রেখা বললো' তা ঠিকই বলেছেন।'
সম্পাদক  হেসে বললেন 'আমাকে আপনি না করে বললেও হয় ।আমি কিন্তু আপনার থেকে বয়সে ছোট?'
রেখা বলল 'তা হয়ত হতে পারেন কিন্তু অচেনা-অজানা একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে প্রথমেই তুমি করে বলা যায় না আপনি তাই প্রযোজ্য বেশি।'
সম্পাদক বললেন তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।
তবে এখন যেখানে আমি বলছি আপনি আমাকে '' আপনি'শব্দটা বাদ দিতে পারেন।
রেখা বলে চেষ্টা করব?
সম্পাদক বলেন' সেই চেষ্টা।'
রেখার বুকের ভেতরে এসে যেন ধাক্কা দিলো কথাটা।
এ তো অবিকল তার মত কথা।
কি করে হতে পারে?'
সম্পাদক বললেন' ভাবনায় পড়ে গেলেন না?'
রেখা মনে মনে ভাবল একি রে বাবা কি হচ্ছে এসব। আমার মনের ভেতরে কিছু আছে তিনি কি   করে বলছেন?'
সম্পাদক বললেন' মাইগ্রেন আছে?'


রেখা এবার  অবাক হয়ে যাচ্ছে ,সে তো কখনো বলেনি তার মাইগ্রেন আছে? 'তাহলে এ প্রশ্ন কেন করছেন?'
সম্পাদক হেসে বললেন'এখন কি বসে বসে ভাবার চেষ্টা করবেন, কী রহস্য?
বলেই ফোনটা কেটে দেন।
রেখা সত্যিই উপন্যাসের পার্ট লিখতে বসে জীবনের পার্ট একের পর এক মেলে ধরছে ।কি যেন প্রজাপতির ডানায় চেপে এসেছে ভাবনাগুলো।
রেখার কেমন পাগল পাগল মনে হতে লাগলো। আবার নতুন কোন জীবনে কেউ আসতে চলেছে। এই ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে না তো দূর
 বহুদূরে ?নাকি খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে আপন মনে ।
রেখা ভাবনাটাকে  মন থেকে সরিয়ে দিয়ে উপন্যাস লেখায় মনোযোগী হল।'
রেখার ভাবনায়  উপন্যাসের চরিত্র কথা নিয়ে আসে।
উপন্যাসে মেঘ বৃষ্টির খেলা, আর নির্জন দুপুরে কারো ভাবনায় কেটে যায় কত মুহূর্ত। এ যেন রেখার জীবনেও ঘুরছে। ফিকে হয়ে যাওয়া স্মৃতি গুলো আবার কেন রঙিন বসন্ত হয়ে উঠছে।
এ যেন' ' ছু কর মেরে মনকো, কিয়া ত্যুনে কিয়া ইশারা….।'

রেখার এবার পাগল পাগল মনে হচ্ছে। পেন টা নিয়ে হিজিবিজি দাগ কেটে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই মনোজ চিৎকার করে ডেকে ওঠে রেখা, রেখা, রেখাআ আ আ হঠাৎই রেখার ধ্যান ভাঙ্গে। 
সে সাড়া দেয়'কি হলো?'
মনোজ পাশের ঘর থেকে বলে কি হলো মানে কটা বাজে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেছ?
রেখা সত্যিই ঘড়ির দিকে তাকায় নি খেয়ালই করে নি তাকিয়ে দেখে সাড়ে নটা বাজে। ইসসস কত দেরি হয়ে গেল।
মনোজ বলে ওদেরকে খেতে দেবে তো?
রেখা বলে হ্যাঁ দেবো তো?
রেখা পেন খাতা রেখে দিয়ে ছুটতে থাকে রান্নাঘরের দিকে আর মনে মনে ভাবতে থাকে আহা রে কত দেরি হয়ে গেল ।রেখার ভুলের জন্য বারবার ওদের কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে ।এবার খাবার নিয়ে গিয়ে হাজির হয় মিলিদের কাছে কিন্তু সেই একই মিলি, তুলি খেলো বটে পাইলট কিন্তু ধারেকাছেও আসলো না। রেখা এত বার চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারল না। চিন্তিত মনে তালা রান্নাঘরের বেসিন এর রেখে দিয়ে মনোজের ঘরে আসে এবং বলে পাইলট কিন্তু খাইনি।
মনোজ একটু চিন্তিত ভাবে বলল 'সবে তো ওষুধ পড়েছে একবার ।দেখো নিশ্চয়ই খাবে?'
রেখা ও তাই ভাবতে থাকে নিশ্চয়ই খাবে। একটা অনিশ্চয়তা' এই হবে ,হয়তো ,বোধহয় ,শব্দগুলো জীবনে একটা গভীর প্রভাব ফেলে। আর মন ছুঁয়ে যায়। তাইতো মন বলে ওঠে ছুঁকার মেরে মনকো কিয়া তুনে কেয়া ইশারা...।'

কবি মিলাদ হোসেন এর কবিতা




একুশে ফেব্রুয়ারী  
মিলাদ হোসেন 

মাতৃভাষা বাংলা আমার 
সকল ভাষার সেরা
রক্ত দিয়ে এনেছি মোরা
তাইতো সবার সেরা। 

ভয় করেনি টিয়ার গ্যাস 
দামাল ছেলের দল 
চুয়াল্লিশ ধারা ভঙ্গ করে
রাস্তায় নামে ঢল। 

মায়ের ভাষা কেড়ে নিবে
এমন সাহস কার? 
জীবন দিয়ে রক্ষা করে 
সালাম রফিক জব্বার। 

২১ শে ফেব্রুয়ারী নয় শুধু 
স্মরণীয় এক দিন
রক্ত দিয়ে এনেছে যারা
স্মরণীয় চিরদিন।

কবি সালমা খান এর কবিতা





ছায়া
সালমা খান 

ঘোর সন্ধ্যায় হাঁটছি নদীর 
পাশ ঘেঁষে, 
আমার ছায়া যাচ্ছে পিছু 
নিয়ে ,
মায়াবিনী ছায়া পড়েছে 
আমার মায়ায়।
আমার ছায়া পথে পথে  
আমায় শাসায়,
আমার ভঙ্গিমা নকল করে 
আমায় আগলে রাখে ।
পিছন ফিরে ছায়ায় 
বলি,
করিস কেন বাহাদুরি ?
জানা আছে তোর 
জারিজুরি। 
ঐ চেয়ে দেখ, আকাশ  
পানে।
একটু করে চাঁদের আলো
চেয়ে, 
গন্ধ গায়ক যাচ্ছে গান
গেয়ে ।
চাঁদ তখন মেঘের 
আলিঙ্গনে 
ঢেকে মুখ আলগোছে 
আনমনে।
অন্ধ ভাবে চাঁদের সঙ্গ
জোছনা বুঝি ধুইয়ে 
দিচ্ছে অঙ্গ । 
জানেই নাতো আচ্ছা 
বোকা অন্ধ ,
কখন যে চাঁদের দুয়ার 
হলো বন্ধ। 
তখন সে ভাবলো, এটাই
তার অন্ধকার,
এটাই আশীর্বাদ অন্ধতার।
 ঠিক ছায়া তোর ও নেই,
কোনো অধিকার ।

২১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১২ তম পর্ব 





ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১২ তম পর্ব 
মনি জামান

গাড়ি চলছে জিকু আর আসমা দুজন পাশাপাশি সিটে বসে,নয়ন দাদী মোমেনা বেগমের কোলে ফিরোজ পিছুনের সিটে মোমেনা বেগমের পাশে বসে ভাবছে এক মনে,আজকে যে ব্যবহার আসমার সাথে করেছে শাশুড়ি মোমেনা বেগম তা রীতিমত ভাবনার বিষয় সে নিজ চোখে দেখেছে ঘটনাটা,কিন্তু বন্ধু জিকু সেটা লক্ষ্য করেছে কিনা জানে না ফিরোজ তবে বিষয়টি জিকুকে বলা কি উচিত হবে আবার ভাবলো না বিষয়টি বলা ঠিক হবে না কারণ এটা তাদের পারিববারিক বিষয়।
গাড়ির ড্রাইভার জিকুকে জিজ্ঞেস করলো,ভাই ঐ সামনে মোড় দেখা যায় মোড় থেকে কোনদিকে যাবো,জিকু ড্রাইভারকে বলল,আপনি মোড়ে গিয়ে তারপর ডানে ঘুরে সোজা ঐ যে রাস্তা ওটায় যাবেন,ড্রাইভার বলল,আমি কখনো এই রাস্তায় আসিনি তাই জিজ্ঞেস করলাম ভাই কিছু মনে করবেন না ভাই,জিকু বলল না না কেন কিছু মনে করবো আপনি তো এই রাস্তা চিনেন না আমি জানি।
নয়ন প্রস্রাব করেছে দাদী মোমেনা বেগমের কোলে,মোমেনা বেগম বৌমা আসমাকে না ডেকে ফিরোজকে বলল,নয়নকে জিকুর কাছে দাও দাদু ভাই প্রস্রাব করে দিয়েছে আমার কাপড়ে বলে ফিরোজের কাছে নয়নকে দিয়ে বলল জিকুকে দাও।
ফিরোজ নয়নকে নিয়ে আসমাকে ডেকে বলল,ভাবি নয়ন প্রস্রাব করেছে ওর দাদীর কাপড়ে ধরেন নয়নের জামা প্যান্ট পাল্টে দেন,জিকু হাত বাড়িয়ে ফিরোজের কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে আসমার কোলে দিয়ে বলল,পাল্টে দাও জামা প্যান্ট।
জিকু ব্যাগ থেকে ছেলের জামা প্যান্ট বের করে আসমাকে দিলো আসমা ছেলেকে নতুন জামা প্যান্ট পরিয়ে নিজের কাছে রাখলো।গাড়ি চলছে ভবদা গ্রামের পথ ধরে আজ আসমার বেশ খুশি খুশি লাগছে কতদিন পর স্বামীর বাড়ি যাচ্ছে সে,কারণ প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার আসমার স্বপ্ন ও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নয়।
আসমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাশুড়ি তার সাথে যত খারাপ ব্যবহার করুক না কেন সে শাশুড়ির মন জয় করবেই কাজে ব্যবহারে সব দিক থেকে তা যতোই কষ্ট হোক আসমার,হঠাৎ জিকু আসমাকে বলল,এই আসমা তুমি চুপ করে আছো কেন,জিকুর ডাক আসমার ভাবনায় ব্যবচ্ছেদ ঘটলো,আসমা বলল না এমনি বাইরের গাছপালা কত সুন্দর তাই দেখছি।
জিকু আসমাকে বলল,ঐ যে দুরে যে গ্রামটা দেখা যায় ওটার পরেই আমাদের ভবদা গ্রামের শুরু,আসমা বলল,আর কত সময় লাগবে আমাদের পৌছাতে বাড়ি।
জিকু বলল,আর এক ঘন্টা মত সময় লাগবে বাড়ি পৌছাতে,আসমা বলল,তাই?জিকু বলল হ্যাঁ।
আসমা আর জিকু গল্প করছে তাদের কথোপকথনে ফিরোজ লক্ষ্য করলো মোমেনা বেগমের ভিতর কিছুটা বিরক্ত বিরক্ত ভাব মনে হচ্ছে,মোমেনা বেগমের লাল টকটকে মুখের চেহারাটা কেমন যেন কালচে রঙ্গ ধারণ করেছে রাগে।
সাংবাদিক হিসেবে ফিরোজের নাম ডাক আছে সে দৈনিক ভবদা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তার চোখ শকুনের মত তীক্ষ্ণ যা এড়ালো না মোমেনা বেগমের মুখচ্ছবি দেখে।
ফিরোজ কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছে এভাবে চললে কতদিন টিকবে আসমা! আগামী দিনে কিছু ঘটার আভাষে শঙ্কিত ফিরোজ,কারণ মোমেনা বেগম এমন এক নারী সে কখনো হয়তো আসমাকে পুত্র বধু হিসেবে মেনে নেবেনা,সেটা আজকের এই ব্যবহারে ফিরোজ অনুমান করতে পারছে। মোমেনা বেগম এমন এক কঠিন মনের মানুষ যেমন অহঙ্কারি তেমনি লোভী এবং গরীব বিদ্বেষী,এটা ভবদা গ্রামের সবাই জানে।
আসমা স্বামী জিকুকে বলল,নয়নকে একটু ধরো নয়ন ঘুমিয়ে পড়েছে বলে জিকুর কাছে দিয়ে নিজে একটু নড়েচড়ে গুছিয়ে বসলো তারপর জিকুকে বললো কয়টা বাজে দেখতো,জিকু ঘড়ি দেখে বলল,পৌনে পাঁচটা আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বাড়ি পৌছে যাবো,আসমা বলল,তাই নাকি তাহলে তো আমরা এসে গেছি তাই না?জিকু বলল,হ্যাঁ আর দশ মিনিট মত সময় লাগবে।
এ কথা শুনার সাথে সাথে আসমার ভিতর একটা কেমন যেন রোমাঞ্চকর ভাব অনুভুত হলো,সত্যি আজ সে শশুর বাড়ি যাচ্ছে কতদিনের স্বপ্ন আসমার শশুর বাড়ি যাওয়ার আজ সে স্বপ্ন পূর্ণ হতে যাচ্ছে,শশুর বাড়ির সবাইকে সে আপন করে নিবে,সুন্দর একটা সংসার হবে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকবে ছেলে নয়নকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবে,আসমা নিজে আবার কলেজে ভর্তি হয়ে অনার্স শেষ করবে অবশ্য স্বামী জিকু আসমাকে বার বার বলেছে তুমি ভর্তি হও আমি ভর্তি করে দিয়ে আসি।আসমা রাজি হয়নি শুধু এটুকু জিকুকে বলেছিলো যদি কোন দিন শাশুড়ি মেনে নেই সেদিন আবার লেখাপড়া শুরু করবে।আজ শাশুড়ি মেনে নিয়েছে আসমাকে,আসমার মনের ভিতর কি যে খুশি লাগছে কাউকে বোঝাতে পারবেনা সে।
আজ কতদিন বাবা মা'কে দেখিনি আসমার মনটা যেন ছুটছে মায়ের বাড়ির দিকে,আসমাকে মেনে নিয়েছে তার শাশুড়ি এই কথাটা শুনলে বাবা মা ও অনেক খুশি হবে।আসমার আজ ছোট দুটো বোনের কথা মনে পড়ছে ওরা কেমন আছে লেখাপড়া করছে কিনা ইত্যাদি ভাবনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে মনের ভিতর,আসমা তার ভালোবাসার রাজকুমার পেয়ে আজ এতদিন সবাইকে ভুলে গিয়েছিলো আজ আবার নতুন করে পেতে যাচ্ছে সব কিছু।জিকু আসমার গায়ে ছোট্ট একটা টোকা দিয়ে বলল,আসমা ঐ দেখো আমাদের বাড়ি দেখা যায় আর মিনিট তিনেক সময় লাগবে বাড়ি পৌছাতে,আসমা জিকুর আঙুল লক্ষ্য করে তাকালো এবং দেখলো এই প্রথম তার শশুরবাড়ি,দুইতলা বিশিষ্ট অট্টালিকা ঐ দুরে যেন ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে নতুন বউ আসমাকে স্বাগত জানাতে।


চলবে.....

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬২




ধারাবাহিক উপন্যাস


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬২)
শামীমা আহমেদ 

অপ্রত্যাশিতভাবে আগত নোমান সাহেবের মিসড কল দেখে শায়লা সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বোধহীন হয়ে কতক্ষন যে সেভাবে দাঁড়িয়ে রইল তা হয়তো সময় ঘড়িই বলতে পারবে! ভেজা চুলে আলুথালু বসনায় একেবারে বেখেয়াল হয়ে রইল। ওয়াশরুমে শাওয়ার ঝরছে অবিরল ধারায়। একেবারে কানে তালা লেগেছে নয়তো সে শব্দও কোন চেতনা আনছে না কেন?আবার মোবাইল রিং হতেই শায়লা একেবারে চমকে উঠলো! মোবাইল স্ক্রিনে তাকাতে বুকের ভেতর কেঁপে উঠছে!ফোনের শব্দটা যেন তার ভেতরে আতংক হয়ে বেজে উঠলো। যেখানে  এতদিন এই রিংটোন কতইনা কাঙ্ক্ষিত ছিল। আজ নোমান সাহেবের মিসড কলে শায়লা একেবারে জড় কাঠের মত হয়ে গেছে।নোমান সাহেব ফোন করলে তাকে কি বলবে? কেমন করে সে বুঝাবে কানাডায় যাওয়ার এতটুকুও ইচ্ছে তার নেই। কলটা কি রিসিভ করবে না আগে রাহাতকে জানাবে?শায়লার ভেতরে অস্থিরতায় পায়ের তলায় ভেজা কাপড়ের জমে থাকা জলের ধারা বইছে। শায়লা বুঝে উঠতে পারছে না সে এখন কি করবে? একটানা অনেকক্ষন কল হয়ে  থেমে গিয়ে আবার কল শুরু হতেই শায়লা বিছানায় রাখা মোবাইলটির দিকে খুবই ভয় মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকাতেই যেন তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওহ! এও কোনদিন হতে পারে!শিহাবের কল! শায়লা রীতিমতো এক ঝটকায় ফোনটি খাঁমচে ধরলো। কলটি দ্রুতই রিসিভ করলো।মনে হলো কোন খুনী তাকে তাড়া করেছিলো আর বারবার পিছন ফিরে তাকিয়ে  প্রাণ  বাঁচাতে দৌড়াতে গিয়ে   হঠাৎই শিহাবের  আগমন। বাঁচবার প্রানান্তকর চেষ্টায় অন্ধের মত তার উপর গিয়ে পড়েছে ! শায়লা দ্রুতই ফোন রিসিভ করে নিলো। যেন সে অনুভব করলো শিহাব তার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে।
ও-প্রান্ত থেকে শিহাবের জানতে চাওয়ার সে কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না শায়লা। কিছুই যেন শুনতে পায়নি।শুধু শিহাবই তার জন্য অনেক পাওয়া। শিহাব শায়লাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে,,ভালো মত পৌছেছো? কি করছো? তোমাকে মিস করছি।সারাদিন একসাথে ছিলাম। এখন আমার পাশটা কেমন ফাঁকা লাগছে।ঘরে এসে ভালো লাগছে না শায়লা।তোমার কথা খুব মনে পড়ছে!শায়লা তুমি এসে আমায় বিকেলের চা বানিয়ে দিয়ে যাও,,শায়লা,
শায়লা কিছু বলছো না যে?বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে? রাহাত কি কিছু বলেছে? তোমার মা কি রাগ করেছেন? 
রাহাত আর মায়ের কথা শুনতে পেয়ে শায়লা যেন নিজের মাঝে ফিরে এলো।চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সে তার নিজের ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে। তবে এতক্ষন সে কোথায় ছিল? 
শিহাবের বারবার শায়লা, শায়লা ডাকে, এবার যেন সে স্বাভাবিকে ফিরে এলো! 
সন্ধ্যে হয়ে গেছে ঘরের বাতি দেয়া হয়নি,ওয়াশরুমের দরজা খোলা, বাতি জ্বলছে,শাওয়ার থেকে পানি ঝরছে!
শায়লা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো,পরনের ভেজা কাপড় গায়ে অর্ধেক শুকিয়ে গেছে।ভেজা চুল পানিতে জমাট বেঁধে আছে।
হাতের মোবাইল খেয়াল হতেই তা কানে লাগালো।শিহাব বলেই যাচ্ছে,শায়লা কোন সমস্যা হয়েছে?কথা বলছো না কেন?
এবার শায়লার কন্ঠ খুললো, না  না কোন সমস্যা নেই।আমি ভালমতো পৌছেছি।রাহাত, মা আমাকে কিছু বলেনি।
শিহাব,আমি শাওয়ারে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে দেরী হলো।
ওহ! সরি, ঠিক আছে,তুমি শাওয়ার সেরে নাও। আমি বাসায় ঢুকেছি।তাই তোমার খোঁজ নিলাম।আচ্ছা রাতে কথা হবে।শিহাব কল শেষ করলো।
ঠিকাছে বলে শায়লা মোবাইলটির দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে রইল আর ভাবলো,কি এক আজব যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে যা কিনা বয়ে আনতে পারে এক অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ আবার বয়ে আনতে পারে একরাশ শুভবারতা। একটু আগের ভীত শায়লার মনের ভেতর এখন যেন শিহাবের রেশ লেগে রইল। হাতে ধরা মোবাইলটিকে শিহাব মনে করে শায়লা তাকে বুকের খুব কাছে নিয়ে আলতো করে চেপে ধরলো, শিহাবের উষ্ণতায় হৃদয়ে শক্তি ভরে নিলো।
শায়লা ফোনটি বিছানায় রেখে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো!
হায়! কতক্ষণ হলো শাওয়ারওটা চলছে,,,
শায়লা শাওয়ার বন্ধ করে টাওয়েল হাতে নিলো। শরীর আর চুলে বুলিয়ে নিয়ে কাপড় পালটে নিলো। ভেজা কাপরগুলো কাল বুয়ের জন্য বালতিতে জমিয়ে রাখলো।যদিও সে নিজের কাপড় নিজেই কেচে নেয় কিন্তু এখন শায়লার আর কিছুই ভালো লাগছে না।মনের ভেতর মিশ্র অনুভূতি।  দোটানায়  পায়ের চলা বারবার ধীর হয়ে যাচ্ছে। বারবার শিহাবের মুখটা ভেসে উঠছে। শায়লা ঘরের বাতি জ্বালিয়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে  দরজা খুলে বেরিয়ে ডাইনিং এ এলো। 
ডাইনিং এ মা বা রাহাত কাউকে দেখছে না।
ড্রইং রুম থেকে বেশ জোরে টিভির সাউন্ড ভেসে আসছে। শায়লা উঁকি দিতেই রাহাত হাসি মুখে বললো, আপু আসো।বসো।টিভি দেখি।
শায়লা এগিয়ে গেলো।মা কোথায়? ঘরে?  যাই দেখা করে আসি।
না আপু, মা ঘরে নেই।
কেন?  মা কোথায় গিয়েছে?
মা,নায়লার বাসায় গিয়েছে। আজ দুপুরে এসে মোর্শেদ মাকে নিয়ে গেছে।নায়লার নাকি মাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মেয়েদের মায়ের জন্য আকুলতাতো লাগবেই। 
তাহলে,মা আজ ফিরবে না?
না,কয়েকদিন হয়তো থাকবে।বসো আপু।
আচ্ছা,আমি চা বানিয়ে আনি।তারপর ভাইবোন বসে গল্প করবো।
শায়লা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।চুলা জ্বালিয়ে চায়ের পানি বসাতেই ঝট করে চা নিয়ে শিহাব যেন তখন কি বলছিল,সেটা মনে করার চেষ্টা করলো,,ও হ্যাঁ, চা বানিয়ে দিয়ে আসতে বললো! শায়লা মনে মনে একা একাই হেসে ফেললো,আর নীরব কথায় বলে উঠলো, ইস, খেয়ে দেয়ে আমার কোন কাজ নেই? তাকে চা বানিয়ে দিতে হবে।শায়লা এই মন গড়া কথন শুধু সে নিজেই শুনতে পেলো।
ট্রেতে দুই কাপ চা, বিস্কিট নিয়ে শায়লা ড্রইং রুমে গেলো।ভাই বোন টিভির দিকে তাকিয়ে।রাহাত ক্রিকেট খেলা দেখছে।
টিভির দিকে মুখ রেখেই রাহাত চায়ের কাপ হাতে নিলো।শায়লা একটা বিস্কুট এগিয়ে দিতেই রাহাত বলে উঠলো, আপু কেমন লাগলো শিহাব ভাইয়াদের বাড়ির সবাইকে? আরাফ কি তোমার কাছে এসেছিল?
শায়লা আনমনে চায়ের কাপ তুলে নিলো।তার চোখে আজ সারাদিনের ঘটে যাওয়া সবকিছু রিক্যাপের মত ভেসে উঠলো। 
শায়লা বললো, হ্যাঁ সবাইকে ভালো লেগেছে।সবাই খুব ভালো।
হ্যাঁ,তাতো  শি্হাব ভাইয়াকে দেখলেই বুঝা যায়। খেলা দেখায় ডুবে থাকা রাহাতের মন্তব্য। 
আর আরাফ?
আরাফ প্রথমে আসতে চায়নি।পরে আস্তে আস্তে কাছে এসেছে।রেখে আসতে মায়াই লাগছিলো।
তাহলেতো আপু, আজ তুমি অনেক আনন্দ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরেছো।তোমার মন শিহাব ভাইয়ের ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
তবুও তোমার সাথে আজ কিছু জরুরি কথা খোলামেলাভাবে বলে নিতে চাই।আজ মা ঘরে নেই।মা যেটুকু বুঝার বুঝে গেছে।তার কাছে আমরাতো কিছুই লুকাইনি।এখন তোমার,আমার আর শিহাব ভাইয়ার মিলিতভাবে সবকিছুতে আগাতে হবে।
শায়লা চায়ের কাপে বিস্কুটটি ভিজিয়ে নিলো।একচুমুক চা গলায় চালিয়ে দিল।সবকিছুর টেনশনে শায়লার গলা শুকিয়ে আসছিলো।আমি তো তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
আজ সন্ধ্যায় নোমান সাহেবের  মিসড কলে ফোনের কথাটা কি বলবে? ভাবতেই রাহাত 
বলে উঠলো, আজ দুপুরে রুহি খালা এসেছিলো।ততক্ষনে মা নায়লার বাসায় চলে গেছে।সম্ভবত  আজ সকালে সে তোমাকে আমাকে বাইরে যেতে দেখেছে।
রুহি খালা কি বললো?
বললো, তোমরা ভাইবোন যা করছো সেটা ঠিক করছো না।তোমার বিবাহিত বোন অন্য পর পুরুষের সাথে সারাদিন বাইরে কাটাচ্ছে এইসব কানাডায় জানলে বিষয়টি ভালো হবে না।একজনের বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে অন্য আরেকজনের কাছে দিয়ে আসছো,,শায়লার কানাডায় যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।নোমান বাবাজি শীঘ্রই চলে আসবে।তোমরা ঠিকঠাক মত চলাফেরা করো।,,,এইসব আরকি,,
শায়লা নীরবে চায়ের সাথেই যেন কথা বলছে।যেন বলছে,আমি কোনদিনই কানাডা যাচ্ছি না।তা  যত শর্তেই সে বাধা থাকুক না কেন।
শায়লা এবার বুঝতে পারলো,আর এজন্যই
নোমান সাহেবের এত কল? আজ আমার কথা মনে পড়েছে।বিয়ে করে রেখে যাওয়া বউয়ের যে খোঁজ নেয় না, যার মন বুঝার কোন দায়িত্ব সে মনে করেনা,কেবল স্বামীর অধিকারে  অন্যের খবরে আজ কল করা।
রাহাত বললো, আপু নোমান সাহেব শীঘ্রই আসছে।চিন্তা করোনা। তার আগেই আমি ডিভোর্সের কাগজপত্র রেডি করে ফেলবো।তুমি শুধু নিজেকে ঠিক রেখো আর নিয়মিত শিহাব ভাইয়ার সাথে যোগাযোগটা রেখো।
শায়লা আর কোনদিক চিন্তা না করেই বলে ফেললো,একটু আগে সন্ধ্যা নোমান সাহেব কল দিয়েছিলেন।আমি শাওয়ারে ছিলাম।মিসড কল হয়ে গেছে।কথা হয়নি।
আমি কি এরপর ফোন এলে আমি কি কল রিসিভ করবো? রাহাতের কাছে জানতে চাইলো শায়লা।
হ্যাঁ আপু, অবশ্যই কল ধরবে আর কি বলতে চাচ্ছে তা শুনবে। তুমি তোমার কথা কিছু জানিও না।আবার আইনি ঝামেলা করতে পারে। নিশ্চয়ই রুহি খালা সব জানিয়েছে,,,
শায়লা  মনের ভেতর উৎকন্ঠা নিয়ে যেন সামনে এক বিরাট যুদ্ধ তার মোকাবেলা করতে হবে,,এই ভেবে ভেবে  ধীর পায়ে খালি চায়ের কাপ, ট্রে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।

শিহাব একপ্রস্থ গ্রোসারী আইটেম কেনাকাটা করে ঘরে ফিরেছে।কিচেনে গিয়ে সব গুছিয়ে রাখলো।নিজেই এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে  বারান্দায় বসলো।একটা বেনসন স্টিক ধরিয়ে সাথে চা পান চললো আর   আজ শায়লাকে কাছে পাওয়ার ক্ষনগুলো মনে করে চোখে মুখে এক আনন্দের ঝিলিক খেলে যাচ্ছিল! অবশ্য সে ঝিলিক কেউ দেখছে না,এমন কি শিহাব নিজেও দেখছে না,শুধু ভেতরে ভেতরে  রক্তস্রোতে আর হৃদস্পন্দনে তার সাড়া মিলছে।
চলবে......