২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৩





ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১৩ তম পর্ব 
মনি জামান

সন্ধ্যার একটু আগে গাড়ি জিকুদের বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো,সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।শুধু সাংবাদিক ফিরোজ নিজ বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো,জিকু ডাকলো ফিরোজকে কোথায় যাচ্ছিস তুই,ফিরোজ বলল,আমার অনেক কাজ আছে জিকু এখন যায় কালকে এসে কথা বলবো বলেই ফিরোজ হাঁটতে শুরু করলো বাড়ির পথে।
আজ ফিরোজের কেন জানি আসমার কথা বার বার মনে পড়ছে মোমেনা বেগমের অহঙ্কারী মনোভাব ফিরোজকে কেন জানি খুব ভাবাচ্ছে,প্রশ্ন জাগছে মনে আসমা মেয়েটা ভাল থাকবেতো?আবার এটাও ভাবছে ফিরোজ আসমাকে নিয়ে ভাবনা তার বোধহয় ঠিক হচ্ছেনা কারণ আসমা পরস্ত্রী।
সকাল হলো আসমার মা বাবা এসেছে জামাইয়ের বাড়ি নাতি ছেলে দেখতে,কিন্তু বেয়াইন মোমেনা বেগম একবারও ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলো না এমন কি তাদের বসতেও বললো না।আসমা তার মা ও বাবাকে ডেকে ঘরে নিয়ে বসালো,নয়নকে এনে মায়ের কোলে দিয়ে বলল,মা তোমার নাতি,জিকু এসে শশুর শাশুড়িকে দেখে খুব খুশি হলো তারপর শশুর শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো মা এবং আব্বা আপনারা কেমন আছেন,শশুর শাশুড়ি বলল,ভালো আছি বাবা তুমি কেমন আছো,জিকু বলল,ভালো আছি আমরা। 
জিকুর শশুর শাশুড়ি খুব খুশি হলো জামাই জিকুর অমায়িক ব্যবহারে,আসমা মা বাবার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো তারপর মা বাবাকে খেতে দিলো খাওয়া শেষে আসমার মা বাবা নাতি ছেলেকে খুব কষ্টে যোগাড় করা আংটিটা পরিয়ে দিয়ে জামাই ও বেয়াইন মোমেনা বেগমকে বললো,বেয়াইন আমরা বাড়ি যাচ্ছি আপনি যাবেন,কিন্তু মোমেনা বেগম মুখটা ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
জিকু শশুর শাশুড়িকে থাকার জন্য খুব অনুরোধ করলো কিন্তু শশুর শাশুড়ি বলল,বাবা আজ যাই সময় করে আবার একদিন আসবো বলেই আসমাকে ডেকে বলল মা জিকুর দিকে খেয়াল রেখো।
জিকুর শশুর শাশুড়ি চলে যাবার পর
মোমেনা বেগম ছেলে জিকুকে ডাকলো, ডেকে বলল,আমাদের পারিবারিক সব ব্যবসা এখন থেকে জিকু তোমাকে দেখতে হবে,এবং তোমাকে কোম্পানির চাকরি ছেড়ে বাড়ি থেকে সকল জমি জায়গা সব দেখা শুনা করতে হবে।
জিকু কিছু বললো না শুধু সম্মতি দিয়ে রূমে চলে গেলো,রূমে এসে স্ত্রী আসমাকে ডেকে জিকু মায়ের প্রস্তাবটা আসমাকে জানালো,আসমা স্বামীর হাতটি ধরে বলল প্লীজ জিকু তুমি মায়ের প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিও না প্রস্তাবটা রাখো না হলে মা খুব কষ্ট পাবে,কত আশা করে হয়তো আমাদের এনেছে। জিকু বলল ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম কিন্তু তুমি আমার পাশে থেকে সাহার্য করবে।
জিকু পরের দিন কুমিল্লার উদ্দশ্য রওনা হলো অফিসে গিয়ে দরখাস্ত দিয়ে আসলো চাকরি ছাড়ার,বাড়ি ফিরে কিছুদিন বিশ্রামে কাটালো তারপর পরিবারের ব্যবসা এবং জমি জায়গা দেখাশুনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে দেখাশোনা শুরু করলো,এর ভিতর এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো।
মোমেনা বেগম আসমার উপর আস্তে আস্তে নির্যাতন শুরু করলো শারীরিক এবং মানুষিক ভাবে,বাড়ির সব থালাবাটি ধুয়া মাঝা থেকে শুরু করে ঘর দোর সব মুছা এবং উঠোন ঝাড়ু দেওয়া পর্যন্ত সব আসমার উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বাড়ির কাজের মেয়েকে বিদায় করে দিয়েছে মোমেনা বেগম।
এখন থেকে আসমার উপর সব দায়িত্ব, আসমা শাশুড়ি মোমেনা বেগমকে খুশি করার জন্য সব একমনে মেনে নিলো একটু বৌমা স্বীকৃতি পাবার আশায়,ক্রমশ কাজের চাপে আসমার আস্তে আস্তে শরীর খারাপ হতে শুরু করলো,জিকু বাসায় এসে প্রায় জিজ্ঞেস করে আসমাকে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা,মা কেমন ব্যবহার করছে ইত্যাদি,আসমা হাসি মুখে জিকুকে বলল না কোন সমস্যা হচ্ছেনা আর সমস্যা হবে কেন,শাশুড়ি মোমেনা বেগমের প্রসংশা করে বলল মা এখন সংসারের দায়িত্ব সব আমার কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে।
জিকু আসমার মুখে সব শুনে খুশি হলো এবং মনে মনে ভাবলো মা তাহলে আস্তে আস্তে পুত্র বধু আসমাকে মেনে নিয়েছে।
কিন্তু জিকু তার মা মোমেনা বেগমের ঘৃণ্য দুরঅভিসন্ধি ঘুর্ণাক্ষরেও টের পেলোনা, এমন কি নয়নকে আসমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করলো শাশুড়ি মোমেনা বেগম,আসমার কাছে ছেলে নয়নকে এক প্রকার দেইনা সব সময় মোমেনা বেগম নিজের কাছে রাখে।
নয়নও প্রায় মায়ের সংস্পর্শ না পেয়ে এই এক বছরে মাকে প্রায় ভুলেই গেছে,সময় বয়ে চললো দুই বছর হয়ে গেলো জিকু কিছু জিজ্ঞেস করলে আসমা জিকুর কাছে সব লুকায়,কিন্তু নিভৃতে একা একা বসে কাঁদে কি চেয়েছিল আর কি পেতে শুরু করেছে সে।
দিন দিন আসমা মোমেনা বেগমের চক্ষু শুলে পরিণত হতে থাকলো কিন্তু ছেলে জিকুর ভয়ে প্রকাশ্য কিছু বলতো না মোমেনা বেগম,কৌশল অবলম্বন করে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ালো।
এদিকে সকাল হলো জিকু আসমাকে বলল খেতে নাস্তা হয়ে থাকলে দাও আমি বেরুবো,আজ মালের চালান আসবে দোকানে,আমাকে সকাল সকাল যেতে হবে।আসমা সকালের নাস্তা আনতে রান্নাঘরে গেলো,হঠাৎ জিকুর একটা চিৎকার শুনতে পেলো,আমাকে ধরো।আসমা চিৎকার শুনা মাত্র ছুটে এসে যা দেখলো জিকু বুকটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে,আসমার হৃদয়ে হঠাৎ একটা ভয়ের সঞ্চার হলো আসমা জিকুকে জড়িয়ে ধরে বলল,কি হয়েছে সোনা বলেই আসমা চেঁচিয়ে কেঁদে শাশুড়ি মোমেনা বেগমকে ডাকলো।
জিকুর মা মোমেনা বেগম সহ বাড়ির অনন্যরা সবাই ছুটে এলো,মোমেনা বেগম ডাক্তারকে ফোন করলো,আসমা জিকুকে ডাক দিয়ে বললো কি হচ্ছে তোমার আমাকে একটু বলো প্লীজ জিকুর ঠোঁট দুটো শুধু বিড় বিড় করে নড়লো,কিন্তু কিছু বলতে পারলো না তারপর আসমার হাতে এলিয়ে পড়লো।
ডাক্তার এলো জিকুর হাত ধরে পরীক্ষা করে জানালো জিকুর মৃত্যু হয়েছে,শুনে
আসমা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তার ভালবাসার শেষ অবলম্বন এ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছে,তার শেষ আশ্রয় টুকুও সৃষ্টি কর্তা আজ কেড়ে নিয়েছে,আসমা যে রাজকুমারের স্বপ্ন দেখেছিলো সেই রাজকুমার আজ তাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলো পরপারে,নয়ম এতিম হয়ে গেলো আসমা বিধবা হলো জিকু হয়তো আসমার হৃদয়ে এখন থেকে হয়তো স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে চিরকাল।


চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much