২৯ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯০




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০০

রেখার মনের গলিগুপচি

মমতা রায় চৌধুরী


সারারাত ঘুম আসছে না বলে রেখা ভাবল কত কত লেখা জমে রয়েছে, পত্রিকার জন্য পাঠাতে হবে ।বসে বসে বরং তাতে কিছু কথাকে গল্পের পাতাতে রূপ দান করলে কাজে দেবে। আচ্ছা সুমিতাকে নিয়ে   লিখলে কেমন হয় ।আপন মনেই উত্তর পেয়ে গেল ভেরি গুড ।তা বেশ সুমিতা আজ রেখার মনের গলি গুপচির আজকের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ওযে ভেতরে ভেতরে কতটা ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত তাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবে।
টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে মোবাইল স্কিনে  dox ফাইল বের করে টাইপ করে যেতে লাগলো।
লিখতে লিখতে ভোর হয়ে গেল। এবার চোখটা জড়িয়ে আসছে। মাথা রেখে কখন টেবিলের উপরে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।
ঘুম ভেঙেছে কলিং বেলের আওয়াজে।
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে সাড়ে ছয়টা বাজে। বাপরে কত বেলা হয়ে গেছে ।বড়ো করে একটা হাই তুলল রেখা। মনোজ কি সুন্দর অকাতরে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। তুতু ও ঘুমিয়ে আছে।
তবে তুতু রেখার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে 
আছে ।রেখা তুতুকে একটু আদর করে দিল। তারপর দরজা খুলতে গেল ।দরজা খুলতেই দেখলো কোন ফাঁকে আবার তুতুও উঠে পড়েছে?/
তুতু  সোজা গেট খুলতেই বাইরে বেরিয়ে গেল তারপর হিসু করতে শুরু করলো।
মাসি জিজ্ঞেস করল" কি বৌমা রাত্রে তোমার ঘুম হয়নি?"
"না গো মাসি।তবে ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ।তোমার  কলিং বেল টেপার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো।"
কথা বলতে বলতে মাসি ভেতরে ঢুকলো।
তারপর বলল "আমাদের কি আর ঘুম আছে গো বস্তিতেও আমাদের কারোর চোখে ঘুম ছিল না।"
"সুমিতাকে কি ধরে নিয়ে গেছে ?"
" হ্যাঁ সেজন্যই তো।"
"সুমিতা কত মিনতি করল যে ওর বাচ্চা আছে ওর কোন দোষ ছিল না । লোকটাই জোরজবস্তি করে ওর ঘরে ঢুকেছিল, নিজেকে বাঁচানোর জন্যই সে এরকম কাজ করেছে।"
একজন পুলিশ অফিসার তো বেশ টিপ্পনি কেটেই বললো "মরদ ঘরে ঢুকিয়েছিস ,পোষায় নি তখন তাকে আঘাত করেছিস, এখন বড় বড় কথা না?চল, চল থানায় চল  কোর্ট এ চালান করে দেবো, বিচার হবে ,তখন যা বলার বলিস?"
সুমিতা কেঁদে ককিয়ে বলল 'স্যার আমাকে বাঁচান।বাচ্চার  জ্বর না  সারা পর্যন্ত আমাকে একটু সময় দিন।"
"কেন তখন তোর মনে ছিল না?"বলেই
মহিলা কনস্টেবল কি নির্দেশ দিল ওকে চুল ধরে পুলিশ ভ্যানে তুল তে।
রেখা বলল "সে কি গো?"
অন্যদিকে বনোয়ারিলালের লাশটাকেও পুলিশের ভ্যানে করে চাপিয়ে নিয়ে গেল ময়নাতদন্তের পাঠানোর জন্য।"
"সে , বৌমা সুমিতার যদি কান্না দেখতে তোমারও বুক চাপড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করতো।'
মাসি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো "সত্যি কথা বলতে কি বৌমা ,ও কোঠি ঘরে জীবন কাটিয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের বস্তিতে ওকে আমরা খারাপ কোন কিছু দেখি নি  মিথ্যে কেন বলবো বলো ?"
রেখা যে কি বলবে কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না।
মাসি আপন মনে বলে যেতে লাগলো' মানুষ কি চায় আর কি পায় বল ?সবই ভবিতব্য নিয়তির লেখা কেউ খন্ডাতে পারে না।
নইলে ও তো চেয়েছিল স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সমাজ ব্যবস্থা কি সেটা হতে দিল?"
রেখা বলল' মাসি তুমি হাতের কাজ একটু গুছিয়ে নাও ,আমি ও একটু ফ্রেশ হয়ে গোপালকে ভোগ চাপিয়ে আসছি ,তারপরে তোমার কাছ থেকে অন্য কথা শুনবো।"
মাসি বললো "আজকে আমার কোন কাজই করতে ইচ্ছে করছে না বৌমা, শুধুই মনে মনে চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য।"
সেইতো  রেখা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশ রুমে গেল তারপর ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে আসলো গোপালকে ভোগ চাপা ল । গোপালের কাছে রেখা প্রার্থনা করলো সুমিতা যেন শান্তি 
পায়।"গোপালকে ভোগ চাপিয়ে এসে রেখা রান্নাঘরে চা এর জল  বসাল।"
মাসি তখন কলতলাতে ছিল । কৌটো থেকে কতগুলো বিস্কিট নিয়ে তুতু মিলি ,পাইলটদের খেতে দিল।
এর মধ্যেই মাসি বাসনগুলো মেজে ধুয়ে রেখার সামনে এসে দাঁড়ালো। রেখা মাসির দিকে তাকিয়ে দেখে মাসির চোখ দুটো ছল ছল করছে  ।
 রেখা বলল ও মাসি ও মাসি তোমার জল খাবার টা দি ই?'
"কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না বৌমা।"
"অন্য আমিও কিছু বানায়নি তোমাকে মুড়িই দেবো খেয়ে নাও।"
রেখা ,মাসি না করার আগেই মুড়ির বাটিটাতে কিছুটা চানাচুর ,আর এক কাপ  এনে মাসিকে দিল স,ঙ্গে দুটো রসগোল্লা।
মাসি বললো " এতকিছু কেন দিলে বৌমা?"
'কোথায় এত কিছু ,?খেয়ে নাও ।তারপর বলো পরের ঘটনা।'
"ও যখন  কাঁদছিল  বৌমা, ওর শক্তি ও যেনো খানিকটা মরে গেছিল শেষের দিকে কান্নাটা ওর মনে হচ্ছিল যেন পাতালের অন্ধকার ঘরের থেকে উঠে আসছে।'
শুধু যাবার সময় বারবার আমাদেরকে বলল 'আমি কি দোষ করেছি আমার বাচ্চাটা কি দোষ করেছে ।আমি তো ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম ,কেন আমার সাথে এরকম হলো? তার জলভরা চোখ দুটো যেন মনে হচ্ছিল বিদ্যুতের শিখা ,তার চোখ-মুখ একেবারে মনিহারা সাপের মত অবস্থা হয়েছিল, এতটাই অসহায় লাগছিল যে আমরাও ওকে সান্তনা দেবার মত কোন ভাষা খোঁজে পাচ্ছিলাম না।"
রেখা বললো "সবই বুঝতে পারছি?"
"জানো বৌমা, ও সংসারটাকে এতটাই ভালবেসে ছিল ,জীবনকে এতটাই ভালবেসেছিল  যদি ইচ্ছা করত আরেকটু সুখ-স্বাচ্ছন্দ পেতে পারত । কিন্তু সেটাও করে নি দেখতে সুন্দর ছিল গায়ের রং ফর্সা টুকটুকে , রোগা পাতলা গড়ন। লোকের বাড়ি কাজ করত, তবুও ওর গায়ের রং থেকে একটা যেন আলাদা দ্যুতি বেরোতো।কত মরদ ওর জন্য পাগল ছিল কিন্তু পাত্তা দেয়নি কাউকে  আমরা তো বস্তিবাসী আমরা জানি।"
"সবই ভবিতব্য মাসি, নিয়তি।"
মাসি একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল "আসি বৌমা"।
রেখা বলল  "এসো।
"আর তুমিও সাবধানে যেও। তুমি তো টলছ দেখছি ।তোমার আবার প্রেসার ট্রেসার ফল করে নি তো? ওষুধ খেয়েছো প্রেসারের ।"রেখা দরজা কাছে গিয়ে বলল।
"ওই দেখো বৌমা একদম ভুলে গেছি।'
"চোখ-মুখ কথা বলছে তোমাকে দেখে আমার মোটেই ভালো লাগছে না।
" তুমি কি একটু বসে যাবে? যেতে পারবে বাড়ি?"
"হ্যাঁ ,পারব যেতে।"
"তুমি কি হেঁটে যাবে ?"
"দুবেলা টোটো করে যাওয়া জন্য কোথায় টাকা পাবো বৌমা?'
"থাক তোমাকে আর কথা বলতে হবে না। তুমি এখানে দাঁড়াও ।হেঁটে যেতে হবে না।'
ইতিমধ্যে একটা টোটো পাস করছে।
রেখা জোরে ডাকলো" অ্যাই টোটো, অ্যাই টোটো,'
টোটো দাঁড়ালো।
 'যাবেন?'
স্টেশনের দিকে যে বস্তি আছে ওখানে?
"হ্যাঁ যাবো।'
"মাসি ওঠো ।"
মাসিকে ধরে টোটেতে চাপিয়ে দিল তারপরে টোটো ওয়ালা কে বলল " দেখবেন ওনাকে একটু সাবধানে নানিয়ে দেবেন কেমন?'
 টোটোওয়ালা ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখন রেখা বললো "দাঁড়ান ,দাঁড়ান, দাঁড়ান।"
রেখা দশটা টাকা টোটোওয়ালকে দিল।

রেখা বলল "মাসি ,যদি শরীর ঠিক থাকে তবেই কালকে কাজে এসো ,আর যদি না আসতে পারো অবশ্যই আমাকে জানিও।'
মাসিকে বিদায় জানিয়ে রেখা দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নটা বাজে।
রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি বসাল। কি রান্না করবে পাঁচমিশেলি একটা সবজির তরকারি সে বসালো  মনোজ কখন গেছে বাজারে এখনো ফিরল না। আর একটা দিকে  চাল দিয়ে ভাতের হাঁড়ি বসিয়ে দিল।
রেখাও একটু মুড়ি চিবোতে লাগলো। এর মধ্যেই কলিংবেলে র কলতান বেজে উঠলো।
রেখা গিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখল মনোজের দুই হাতে দুটি ব্যাগ ।
"এত বাজার করেছো ?এই জন্যই তোমার দেরি হচ্ছিল।ঘামে স্নান করে গেছ ।"
 ব্যাগ দুটো নামাতে নামাতে বললো "এক সপ্তাহের বাজার আছে লাগবে না?"
"কি মাছ  এনেছ?"
"ভেটকি পেয়েছি। কুচো চিংড়ি নিয়েছি লাউ দিয়ে করার জন্য।"
"ভালো ।এখন তোমাকে কি করে দেবো ভেটকি পাতুরি করা তো এখন সম্ভব নয়।"
"তাহলে  একটু করে দাও  ঝোল টোল।"
মনোজ বাথরুমে ঢুকলো রেখা এদিকে সবজিগুলো ব্যাগ থেকে নামিয়ে ফ্রিজের থেকে বাজার রাখার ব্যাগ গুলো বের করে সবজি ভরে রাখলো।
মনোজ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সরাসরি ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো 'ব্রেকফাস্ট কি বানিয়েছো? দেরি হয়ে গেছে আমার।'
রেখা বলল আজকে ব্রেকফাস্ট সেভাবে কিছু বানাইনি তুমি কি খাবে বলো আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
তাহলে বাটার টোস্ট বানিয়ে দাও। আর ডিম সেদ্ধ করে দাও।'
Ok
আর লাঞ্চ টিফিন ক্যারিয়ারে দিয়ে দাও।
মনোজ খেতে খেতে বলল "আজকে সঞ্জীবনী 'তে কিন্তু ডাক্তার সুধাংশু শেখর ঘোষ বসবেন তুমি রিপোর্টটা দেখে নিও।"
" তাহলে তো নাম লেখাতে হবে।"
"আমি পিন্টুকে বলে রেখেছি।'
Ok।
"রিপোর্টে কি বলবে কে জানে?"
মনোজ  বলল;"ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন ?আগে রিপোর্ট টা দেখুক না ডাক্তারবাবু ।তারপর তো ডিসিশান নিতে হবে।"
তবুও রেখার ভিতর যেন একটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ওদের স্কুলে যা খারাপ অবস্থা যাচ্ছে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু টেস্ট করলে খারাপ কিছু বেরোচ্ছে। রেখার মনে র আঙিনার গলিগুপচিতে তারই ছায়া দেখতে পাচ্ছে।

কবি দেবব্রত সরকার এর কবিতা "অপার্থ"






অপার্থ
দেবব্রত সরকার

বেকার মেরে মোহের ঘরে দেদার টাকা ঢালছে
আজকে সে যে প্রাক্তন তিনি মন্ত্রী ছিলেন কালকে
যে অর্পিতা নয় সর্পিতা নয় গরিব পার্থ একলা
অপার ঘরে টাকার চূড়া তাকিয়ে রাজ্য দেখ্লা

উনীই হল মশাই মুন্ত্রী উন্নয়নের বক্তা 
আছেন দিদি সামলে নেবে এটাই যেনে পক্তা 
আসল খেলা গরিব মেরে দলের ভোটে ঢালছে
আজকে সে যে প্রাক্তন তিনি মন্ত্রী ছিলেন কাল যে 

ভাঙছে জেলা নিজের স্বার্থে সিলমোহরে ডাকলে
জানেন তিনি আফ্রিকা নয় শুনতে পাবে  হাঁকলে
বোঝায় কাকে বলুন দেখি একার মতে সবটা
চালান করে খরচা পাতি লিখেছে বই কয়টা

অনেক প্রশ্ন দালাল বলে রাজনীতিতে ধর্ম
চেয়ার দেব বছর ঘুরে দেখাও দেখি কর্ম 
আসল কথা জলের মত মানুষ মেরে কুর্শি
মারছে তুলে মাছের মতো ধর্ম নামক বর্শী

একাই তিনি সামাল দেন বিশেষ কিছু দপ্তর
এটাই তিনি পারদর্শী অবাক করে সত্ত্বর
সে সব কোথা পড়ছে ঢোলে নজর রাখে এফ  রে
আজকে সে যে প্রাক্তন তিনি মন্ত্রী ছিলেন কাল রে।

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা "আত্মা জন্ম"




আত্মা থেকে
রুকসানা রহমান

আমি যখন ভ্রমণ করি তোমার ভিতরে
তখন আমার আত্মা থেকে জন্ম হয়
এক- একটি অনবদ্য কবিতার।
তখন  আরো বেশি কমনীয় হয়ে উঠি এই- আমি
 তোমারই ভিতর।

২৮ জুলাই ২০২২

কবি বানীব্রত এর কবিতা "ভরা থাক স্মৃতি শুধায় "





ভরা থাক স্মৃতি শুধায় 
বানীব্রত 

সেদিন সূর্য ঢলে পড়েছিল পশ্চিমাকাশে
গোধুলির আলো পড়েছে মোহরকুঞ্জে
নিয়নের আলো জ্বলেছে নন্দন চত্বরে 
সেই আলো বিদির্ন করে তোমার আগমন। 

সামনে ঘোষকের সুরেলা কন্ঠ
সুবোধ বাবুর মঞ্চে আনাগোনা
সাহিত্যের ভাষনে হাততালির কলতান
সেল্ফির বহর চলে চার দিকে।

শুধু দৃষ্টি বিনিময় ঠোঁটের কোনে হাসি
সময় বয়ে চলে রাত গাঢ় হতে থাকে
ঘরের ফেরার পালা সবার,
তারই মাঝে বিদায়ী করমর্দন। 

এরপর কফি হাউসের নিরালা বিকেলে
কল কোলাহলের মাঝে ছুঁয়ে দেখা
কফি কাপ হাতে  ঘন্টার পর ঘন্টা
শুধু দুজনে কুজনে সুজনে। 

কোনো এক তাপিত দুপুরের হাতছানিতে
দুটি মনের আকুল আর্তি
নিরালায় কাছে পাওয়া 
সুখের চাদরে মুহূর্তে ডুবে যাওয়া।

ভালোবাসার ছোঁয়ার স্পর্শ 
ওষ্ঠের উষ্ণ অভ্যর্থনা 
কতো ভালো লাগা
নিবিড়  বাধনে বাঁধা।

তবুও হয়ে গেল ভুল
মনের দ্বিচারিতায় অনিচ্ছাকৃত
পেলে কষ্ট  ভাষা হারালো 
ভালোবাসার কাছে। 

আজও আছে মনের অতলে
কষ্টের চাদরের নিচে,
অনুতাপের অনলে 
ক্ষমা করো তারে অন্তর হতে।।।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৯




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৯

বোবা কান্না

মমতা রায়চৌধুরী


রেখা তৈরি হচ্ছিল প্রোগ্রামে যাবার জন্য ভেতরে ভেতরে যে টানটান উত্তেজনা আর আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছিল মনের চোরাস্রোতে সেটা অনেকটাই থমকে যায় মাসির কাছে সুমিতার কথা শুনে ।তবুও রেডি হয়ে বেরুতে যাবে ঠিক তখনই তুতু দেখছে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।আসলে রেখা যখনি কোথাও বের হয় বা পোশাক-আশাক পরতে দেখলেই তুতু বুঝতে পারে যে কোথাও বেরোচ্ছে  রেখা তুতুকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করল বলল 
"আমি তো বেরোচ্ছি এক জায়গায় ,তুমি লক্ষী সোনা হয়ে থাকবে কেমন। দুষ্টু দুষ্টু করবে না যেন।"
তারপর রেখা ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে ঢং ঢং করে ছটা বাজলো।   মাসি অলরেডি কাজ করে চলে গেছে।
এখন ছটা বাজে সাড়ে ছয়টা থেকে প্রোগ্রাম শুরু এখনই বেরোতে হবে ।তার আগে ভাবলো একবা র পার্থকে ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়ে রাখবে ।যদি আসতে দেরি হয় তাহলে পার্থ তো ওদের খাবারগুলো দিয়ে দিতে পারবে। সেন্টুদা
 কে তো আর রাত্রিবেলায় পাওয়া যাবে না। পার্থকে ফোন লাগাল পার্থর ফোন রিং হয়ে গেল ধরল না।"
মনোজকেই ফোনটা করলো ও ভেবেছিল মনোজ অফিসে আছে ওকে বিরক্ত করবে না কিন্তু উপায় নেই কি আশ্চর্য একবার রিং হতেই মনোজ ফোনটা তুলে বলে' হ্যালো'
রেখা বলল "তুমি কখন ফিরবে?'
"আর বোলো না আজ একটু দেরি হবে গো ,তুমি বের হচ্ছ?"
"হ্যাঁ।"
"তোমার প্রোগ্রাম শেষ হবে ক'টাতে?"
"সাড়ে নটা টা থেকে দশটা।"
"আমারও মনে হচ্ছে আজকে নটা দশটা বেজে যাবে।
যদি আমি আগে পৌঁছে যাই তাহলে তো আমি ব্যবস্থা করে দেব।"
"রাখছি সাবধানে এসো।"
রেখা ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে কতগুলো বিস্কিট নিয়ে  বাইরে বেরোলো "তুতু  এসো, এসো ,বাইরে এসো "।
কলাপসিবল গেট লাগাতেই পাইলট এসে দাঁড়াল রেখার কাছে ।রেখা বিস্কিট হাতে ধরে ওদের দেখাতেই পাইলট ঈগলের মত ধা করে নিয়ে চলে গেল ।
তারপর রেখা টোটো ধরে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছালো কনফারেন্স হল টা খুঁজে বের করল ,সেখানে গিয়ে পৌঁছাতেই দেখা গেল অতিথিদের আসন আলাদা করে রাখা আছে। রেখা অতিথির আসন অলংকৃত করল ।অতিথিদের পরিচয় সঙ্গীতশিল্পীদের পরিচয় করানো হলো পরিচয় পর্ব শেষে অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথমে লোকাল কিছু শিল্পীর অনুষ্ঠান দিয়ে শুভ সূচনা হলো ।তারপরেই চমক থাকলো নৃত্যমোদি দর্শকদের জন্য।
"ভারতনাট্যম" এর বিখ্যাত শিল্পীUttiya Barua এবং তার স্টুডেন্টদের শুরু হল চমকপ্রদ নৃত্য প্রদর্শনী। সরস্বতী বন্দনা শৈব বন্দনা এবং শেষে শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার দুষ্টুমি চিত্র অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুললেন  তাদের অনবদ্য নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে  কি অসাধারন অভিব্যক্তি তা ভোলার নয়।
এর পরবর্তীতে ছিল" কুচিপুডি "এর বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীBiraj Roy এবং সন্দীপ Kundu নৃত্য প্রদর্শন। এখানেও তাদের স্টুডেন্টরা ছিল যারা অনেকে কুচবিহার থেকে এসেছিল, এসেছিল ভুবনেশ্বর থেকে।
এদের নৃত্য শৈলী ও  ছিল অতুলনীয়। অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শন চোখ জুড়িয়ে গেল।
এছাড়া ঢাকা থেকে এসেছিলেন  ওডিসি নৃত্য শিল্পী ।পরবর্তীতে শেষ লগ্নে গিয়ে তাদের নিবেদন ছিল ওডিসির বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীReebdhita Barua অসাধারণ নৃত্যকলা  প্রদর্শন ।পৌরাণিক কাহিনী রামায়ণের উপর ভিত্তি করে তৈরি ছিল তাঁর নৃত্য প্রদর্শন ।তাতে কি ছিল না ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকেও কিভাবে ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হয়েছে। একদিকে ষড়যন্ত্র ,অন্যদিকে বিশ্বাস ভালোবাসা ,ভাতৃত্ববোধ , প্রজা বাৎসল্য, বনবাস যাত্রা ইত্যাদি ইত্যাদি। সর্বোপরি একটা টান টান উত্তেজনা তাঁর নৃত্য প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছিল। কি অসাধারন অভিব্যক্তি ভুলবার নয়। রেখা আপ্লুত হয়ে গেছে।তার জীবন ধন্য।
সব শেষে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে এবং অতিথিদের ভাষণ ।রেখাকে যখন অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলো ।তখন রেখা শুধু একটা কথাই বলেছিল যে এত সুন্দর ধ্রুপদী নৃত্য শৈলী শহরের মানুষের মনটাকে নাড়া দিতে পারে নি ,তাই যদি হতো তাহলে সমস্ত কনফারেন্স হলটাই পরিপূর্ণ হয়ে যেত ।অন্যদিকে রেখা একথাও বলেছে তবে এটাই বাস্তব সবাইতো এই রস সাগরে ভেসে যেতে পারে না, হয়তো সব জায়গার অবস্থা এক ই রকম ।তবুও আশা রাখি ভবিষ্যতে এই সমস্ত ধ্রুপদী নৃত্য অনুষ্ঠান এবং শিল্পীরা তাদের সমাগমে এই শহর ধন্য হোক আগাম শুভেচ্ছা শুভকামনা জানাল আর রইল তাদের চলার পথে  সমৃদ্ধি কামনা।
সমস্ত রাস্তা টোটো তে আসার সময় রেখা বেশ উপলব্ধি করতে পারছে  রেখার হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে চলেছে অসাধারণ নৃত্য শৈলীর সুর মূর্ছনা। রেখা বাড়ি ফিরে এসে  দেখে মনোজ তার আগেই পৌঁছে গেছে। তুতু ,মিলি ,পাইলটদের খাবার দেয়া হয়ে গেছে মনোজ ড্রইংরুমে বসিয়ে নিউজ চ্যানেল চালিয়ে নিউ শুনছে রেখা এসে দাঁড়ালে রেখার দিকে একটু তাকালো আর হাসলো ।
রেখা বললো "কখন আসলে?"
"এইতো তুমি আসার মিনিট কুড়ি আগে।"
"তোমাদের অনুষ্ঠান কেমন হলো?"
*এক অনবদ্য নৃতশৈলী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যিই আমি ধন্য।"
"যাক তুমি তো এসব ভালোই বাসো ,তোমার মনটাও তাহলে ভাল হয়ে গেছে কি বলো?
সে আর বলতে। তবে ভেতরে ভেতরে সংগীতার জন্য চিন্তা হচ্ছিল কিন্তু মানুষকে সেটা বুঝতে দিল না।
ফ্রেশ হয়ে আসি।"
রেখা ফ্রেস হতে চলে গেল ওয়াশরুমে ।এই সময় হঠাৎই মনোজ রেখা রেখা রেখা আ. আ. আ বলে চিৎকার শুরু করল রেখা দরজাটা খুলে গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো কি কারনে এত গলাবাজি করছ। আরে সুমিতাকে খবরে দেখাচ্ছে?
*"কি দেখাচ্ছে?"
"জানিনা তবে সাংঘাতিক কিছু করেছে।"
রেখা দরজাটা বন্ধ করে সাওয়ারের কল টা খুলে দিয়ে আচ্ছা করে গা ঠান্ডা করছে।
রেখা মনে মনে ভাবচ্ছে আসলে মনোজের সবকিছু অজানা   তো 
তাই অবাক হয়ে যাচ্ছে। রেখা বাথরুম থেকে বেরোনোর সময়  টাওয়ালটা জড়িয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল সেখানে গিয়ে হাউসকোট পরে নিল।
রেখা বলল "তোমাকে খাবার দিয়ে দিই?"
"কি আছে আজকে?"
"ঐতো চিকেন রেজালা আর রুটি।"
"বেশ তাহলে দাও তাড়াতাড়ি ।"
"রেখা মনোজকে চারটে রুটি আর চিকেন রেজালা দিল।"
" নিজেও নিয়ে নিল।"
"খাওয়া-দাওয়া মিটতে মিটতেই 12:30।"
মনোজ একবার জিজ্ঞেস করল" কি হয়েছে ?কে বলেছে তোমাকে?"
"ঐতো সকালে যখন মাসি কাজে এসেছিল তখনই তো মাসির মুখেই শুনলাম।'
*তাহলে একটু বলো'",.
রেখা বলল "আজ আর নয় এমনি ক্লান্ত লাগছে শরীর।"
মনোজ বলল "ওকে।"
মনোজ উঠে চলে গেল।

রেখা যখন সব কমপ্লিট করে উঠলো তারপর নিজের রুমে গিয়ে দেখলো মনোজ ঘুমোচ্ছে নাক ডেকে।
রেখা মনে মনে ভাবল আজ বিছানায় যেতে না যেতেই ঘুমে ঢলে পড়বে।কিন্তু
একি কাণ্ড। রেখার ঘুম আসছে না বারবার শুধু এপাশ ওপাশ করছে। আসলে রেখার মনের চোরাবালিতে বারবার উঁকি দিচ্ছে সুমিতার ভবিতব্যের কথা ভেবে।
ঘুম আসছে না ভেবে রেখা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ঢং ঢং করে ঘড়িতে দুটো বাজলো । রেখার উপলব্ধি করলো শেষ রাতের স্তব্ধতা ।সারা শহর যেন ঘুমের দেশে চলে গেছে ।শুধু জেগে আছে যেন তার পোষ্য পালিত কন্যা ও তার ছেলে মেয়েরা। শুধু তাই নয় জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল সেই গুলুমলু কান ঝোলা কুকুরটা।শেষ রাতের ভৌতিক মুহূর্ত যেন মনে হলো এই পাথর আর কংক্রিটের তৈরি শহরটাকে দেখল। তার সঙ্গে এও দেখতে পেলো একটা কুকুর অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
রেখা ভাবতে লাগলো নিস্তরঙ্গ মহা সমুদ্রের মতো পৃথিবীটাকে যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন শান্ত হয়ে আছে। অথচ এই পৃথিবীর দিবালোকে কত কোলাহল .প্রবঞ্চনা দুঃখ-বেদনার ইতিহাস লুকিয়ে আছে
সুমিতা এখন খুনি। তার পেটের জ্বালা মনের জ্বালা, সমস্ত জ্বালার মধ্যে দিয়েই তার ভেতরে যেন একটা হিংস্র ঝড় উঠেছিল ,নইলে এরকম একটা কাজ কি কেউ করে?"
 সুমিতার ভিতর যেন একটা বোবা কান্না নিংড়ে নিংড়ে বেরোচ্ছে। অথচ ওকে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই।যে সুমিতা নতুন জীবন পেতে সংসার পেতে ছিল ,সেই সংসারও তার টিকলো না। উপরন্তু খুনের দায়ে তাকে জীবনের শেষ পরিনতি কাঁধে তুলে নিতে হলো।

২৭ জুলাই ২০২২

কবি মামুন তালুকদার এর কবিতা "তোমাকে মনে পড়ে"






তোমাকে মনে পড়ে
 মামুন তালুকদার 

অলস দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে
তোমাকে মনে পড়ে,
মুষল ধারে বৃষ্টিতে একলা ছাতা মাথায় দিয়ে 
তোমাকে মনে পড়ে। 
কারণে-অকারণে মনে পড়ে,
যখন তখন একশো বার মনে পড়ে। 
ক্লান্তিময় কর্তব্য শেষে পথের মোড়ে মোড়ে
তোমাকে মনে পড়ে। 
রবি ঠাকুরের শেষের কবিতায় 
তোমাকে মনে পড়ে। 
পিচ ভেজা রাস্তায়
হুড খোলা রিকশায়,
তোমাকে মনে পড়ে। 
পূর্ণিমার জ্যোসনায়
রাজহংসী নৌকায়
তোমাকে মনে পড়ে। 

সমুদ্র কল্লোলে কেমন হাহাকার জাগানিয়া শব্দে
তোমাকে মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে।
গোধুলির স্নিগ্ধতায় চুল ওড়া বাতাসে
তোমাকে মনে পড়ে, 
উদাসীন বিকেলে ঢেউ তোলা চায়ের কাপে 
তোমাকে মনে পড়ে। 
পাহাড় চুড়ায় মেঘের ছোঁয়ায়
তোমাকে মনে পড়ে।
জোনাক জ্বলা পাহাড়ী রাতে 
তোমাকে মনে পড়ে, ভীষণ মনে পড়ে। 
কথার খইয়ে তুরি মেরে উড়িয়ে দেয়া
বিরক্তিকর যানযটেও তোমাকে মনে পড়ে। 
অকারণে একশো বার যখন তখন মনে পড়ে,
তোমাকে মনে পড়ে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৮




টানাপোড়েন ১৯৮

সুমিতার হঠকারিতা

মমতা রায় চৌধুরী


রেখা আজ স্কুল থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে।বড়দিকে আগেই বলেছিল। বড়দিও ছেড়ে দিয়েছেন। আর দেবেনই না কেন?রেখাকে যখন যে অবস্থাতে যে কাজ করতে বলেছেন যেখানে যেতে বলেছেন ,সে ছুটে গেছে ।কাজেই একটা কৃতজ্ঞতাবোধ বলেও তো কাজ করে.। আজ একটি ক্লাসিক্যাল ডান্স প্রোগ্রাম সিডিউল ছিল অর্থাৎ"Inauguration of festival,6.30 p m
এটা রেখার কাছে ছিল একটা লোভনীয় প্রোগ্রাম কারণ  ওর ক্লাসিক প্রোগ্রামগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে আর সেখানে যদি সে আমন্ত্রিত হয়ে যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই। ভারতনাট্যম প্রেজেন্টেশন বাই দা ওয়ার্কসপ এটেন্ডেস এন্ড স্টুডেন্ট অফ নিত্য তরঙ্গিনী। ভারতনাট্যম বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীUTtiya Barua., Odissi  Reebdhita barua এবং kuchipudi  বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী Biraj Roy এবংSandip Kundu 
ভিতরে ভিতরে একটা উত্তেজনা কাজ করছিল কতক্ষণে সেই প্রোগ্রামের যেতে পারবে কতক্ষণে সেই আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যেতে পারবে এসব ভেবেই রেখা কেমন রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ল।
বাড়িতে এসেই ঝটপট ফ্রেশ হতে যাবে ঠিক করছে ঠিক তখনই তুতু ,মিলি পাইলটরা চেঁচিয়ে উঠলো । রেখা ভাবল" কি হলো ?"এজন্য বাইরে বেরিয়ে আসলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না । আবার যখন ভাবল যে এবার ফ্রেশ হবে ওয়াশ রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক তখন আবার
 চেঁচালো । রেখা আবার বাইরে বেরিয়ে আসলো তখন দেখতে পেল একদল ছেলে অকারণে লাঠি হাতে একবার এপাশ একবার ওপাশ করছে। রেখা  বললো ", তোমরা এই দিক দিয়ে লাঠি হাতে যাচ্ছ কেন?"
ছেলেগুলো বলল" আমাদেরকে তাড়া করছে '
রেখা  বলল
" অকারণে  ওরা কাউকে তাড়া করে না, কেউ বদমাইশি করে থাকলে তবেই কিন্তু তাড়া করে "
 আর তোমাদের বাড়ি কোথায় তোমরা এত  ঘোরাঘুরি করছো কেনো ?"
ছেলেগুলো কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।
রেখা গেটটা লাগাতে যাচ্ছে ঠিক তখনই তুতু পেছন থেকে কিউ কিউ করে উঠলো ।
 রেখা বললো "ওরে আমার সোনা বাচ্চা,। আমি তো তোমাকে খেয়ালই করি নি ।চলো ,চলো, চলো তুমি তো ভেতরে ছাড়া থাকবে না ।"তুতু সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকে এলো।
রেখা ফ্রেশ হতে গেল। ওয়াশরুমে ঢুকে বারবার মনে করছে যে ,মাসি কাজে আসবে তো ?আর একদিকে রয়েছে সেই অনুষ্ঠানে যাবার টানটান উত্তেজনা  চলছে ভেতরে ভেতরে । অন্যদিকে একটা টানাপোড়েন। 
 রেখা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো  একটু নাস্তা করবে বলে ফ্রিজে খুলে দেখল কি খাবার 
 আছে ।সেরকম কোন খাবার চোখে পড়ল
 না ।তবে চিকেন রেজালা টা ছিল তাই দিয়ে  ভাবলো যে ঠিক আছে একটু রুটি করে নিয়ে   চিকেন রেজালা দিয়ে খেয়ে নেবে।
 রুটি করতে করতে ই কলিংবেলের আওয়াজ তখন ভাবল নির্ঘাত মাসি এসেছে । রেখা ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখা গেল মাসি ই  বটে কিন্তু মুখটা যেন থমথমে কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকলো ।
" কি হল মাসী ,তোমার কি কিছু হয়েছে ?"
"আমাদের বস্তিতে তো এখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।"
" কেন কি হয়েছে ?পুলিশ এসেছে ।পুলিশ
 কেন ?কেউ কি চুরি করেছে ,না ডাকাতি করেছে যে পুলিশ এসেছে? নাকি সুইসাইড কেস?"
মাসি বলে" একটু জল খাওয়াবে বৌমা ।রেখা তো হ্যাঁ, বলে এক গ্লাস জল দিলো।
 তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে  মাসি বললো" কি বলবো তোমায় ,সুইসাইড ঠিক নয় ।তবে এতক্ষণ
বোধ হয় মারা গেছে।"
"কে মারা গেছে?"
" আরে তোমাদের বাড়িতে কাজ করত 
না ?,"
"কে কাজ করত ।বেশ কয়েকজন কাজ করে গেছে । কার  কথা বলছো তুমি?"
বিরক্ত স্বরে মাসি  বলল' তোমাদের বাড়িতে কাজ করে গেছে আমি আসার আগে।"
" সুমিতার কথা বলছো ?"
""হ্যাঁ গো ,হ্যাঁ।"
" কেন ওর আবার কি হয়েছে?"
"কেন ও মারা গেছে?"
মাসি বললো" মারা যায়নি তবে ও এবার মরবে।"
"ভনিতা করা ছাড়ো তো ,কি হয়েছে সেটা খুলে বলবে প্লিজ ,আর আমারও তাড়া আছে 
কিন্তু ।"
" হ্যাঁ সেই জন্যই তো ,কাজে আসলো ।না হলে কি আজকে বেরোতাম। আজ আমাদের পাড়ায় গিয়ে দেখ কি অবস্থা।"
" কি হয়েছে?"
" আরে সুমিতার সম্পর্কে তো তোমরা কিছুই জানো না। সুমিতা তো ওই খারাপ পাড়ার মেয়ে ছিল  ওকে তবু  বিয়ে করে এনেছিল
 জীবন নতুন জীবন দেবে বলে। কিন্তু জীবন দু'বছর পর চলে যায় ওকে রেখে।"
রেখা আশ্চর্য হয়ে বলে "সে কিগো?"
" তবে মেয়েটা এমনি ঠিকই ছিল ও সংসার করছিল ।দেখ বৌমা কেউ তো আর স্বভাবদোষে ওখানে যায় না ।নিশ্চয়ই কোন সমস্যা 
ছিল ।জানিনা অতটা ইতিহাস ।"
 "তারপরে বলো কি হয়েছে ?"
"ও মেয়ে তো নতুন জীবন পেয়ে খুশি ছিল কেনই বা খুশি হবে না বলো কোঠি ঘরের জীবন কি ভালো?"
রেখা ভাবতে লাগল মনে মনে সত্যিই সুমিতা কেন যে মাঝে মাঝে এরকম ব্যবহার করত এবার বুঝতে পারছে।
মাসি আপন মনে বকেই যেতে লাগলো।
রেখার দিকে তাকিয়ে দেখল রেখা আপন মনে যেন কি ভেবে যাচ্ছে তখন বলল "ও বৌমা শুনতে পাচ্ছ,?"
রেখা বলে" হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।"
" বাচ্চাকে রেখে জীবন চলে গেল রেখাকে অথৈ জলের মধ্যে ফেলে দিয়ে।"
রেখা বলল" ব লো কি গো?"
এবার তো ওর খাওয়া জোটে না ঠিক করে ।তারপরে তো বাড়ি বাড়ি কাজ ধরিয়ে দিল , আমাদের পাড়ারই একটি কাজের মেয়ে।*
"আমার বাড়ি, তেও  তো করতো।
তবে কাজ ওর পরিষ্কার ছিল না গো মাসি আর এত মিথ্যা কথা বলতো।"
মাসি বললো," কেন যে মিথ্যা কথা বলতো আমরাও জানি না ।তবে কিন্তু মেয়েটা এমনি খারাপ ছিল না। নাটক এর মধ্যেই কুশীলব হিসেবে ঢুকে পড়ে  বনোয়ারিলাল বলে একজন লোক  । প্রতিদিন ওর বাড়ি আসতে লাগলো ।ওর আনাগোনা নিয়ে যখন পাড়া-প্রতিবেশী প্রশ্ন তুলল  তখন সুমিতা বলেছিল ওর বর   পাঠিয়েছে, উনার হাতে টাকা পাঠানোর জন্য, দেখভাল করার জন্য। ওই লোক নাকি ওর  বরের বন্ধু।"
'এখন তো কালকের ঘটনার পর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আসলে ঐ লোকটার  কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল ওর বর। আর কিছু টাকা সুমিতাকে দিতে বলেছিল । অথচ দেখো এই লোক প্রথমে বলেছিল দুর্দিনের বন্ধু হিসেবে এসেছে আর সে এখন গলার ফাঁস লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল  "।
"মানে কি গো?'
"কি বলবো বৌমা, এই তো গত রাত্রের ঝড়জলের সময় সুমিতা দরজা বন্ধ করে ছিল ।দরজা বন্ধ করে দিয়ে থাকার কথাই ব টে । থাকেনা কেউ তার উপর বৃষ্টি। এই দুর্যোগ ।সেই সময় দরজায় বারবার ধাক্কা দেয় ।"
"বলো কি মাসি,?'
 সুমিতা তখন বলেছে যে এত রাত্রে কী করতে তখন বলেছিল যে দরকার আছে দরজাটা একটু খুলতে জীবনদা পাঠিয়েছে।'
সুমিতার সাদা মনে কোন কাদা নেই মাঝে মাঝে সাহায্য করে টাকা পয়সা দিয়ে ওর নিশ্চয়ই কিছু আবার টাকা পয়সা হয়তো পাঠিয়েছে স্বামীর কথা  বললে কে না দরজা খুলবে বলো? এদিকে মেয়েটার জ্বর কিছু খাওয়াতে পারছে না ,নানা দিক থেকে দিশাহারা ছিল।
এই অবস্থাতেই সেই সাংঘাতিক  ঘটনা।
রেখার মনে আরও কৌতুহল জন্মায় তখন সে বলে কি ঘটনা?"
গতরাত্রে ওকে জোরজবস্তি ভোগ করতে চাইছিল আর সুমিতা সেটা বাধা দিতে গিয়ে যখন পেরে উঠছিল  না তখন হাতের কাছে বটি ছিল হঠকারিতার সঙ্গে কোপ বসিয়ে দিয়েছে।"
রেখা তো আশ্চর্য হয়ে চক্ষু একদম চড়ক গাছ বলে 'হ্যাঁ সুমিতা করেছে?"
"হ্যাঁ গো ,তাছাড়া তো কোনো উপায় ও ছিল 
না।"
রেখামনে মনে ভাবল" হ্যাঁ তা ই তো ।ঠিক সুমিতা আত্মরক্ষার জন্যই করেছে  এতে তো খারাপ  কিছু দেখতে পাচ্ছে না ।"
মাসি বললো" বলো এতে কি খারাপ অভিসন্ধি ছিল? কপাল খারাপ  হলে যা হয়।"
"সুমিতার তাহলে চলবে কি করে গো?"
মিথ্যে  বলব না বৌমা। এতকিছুর মধ্যেও কিন্তু ও খারাপ রাস্তা বেছে নেয় নি বরং বাড়ি বাড়ি কাজ করে যেটুকু হতো ওই দিয়েই সংসার চালানোর চেষ্টা করত। তবু যেন ওর মুখে  হাসিতুকু লেগে থাকত।
রেখার মনে মনে আফসোস হতে লাগলো ছি :ছি :ছি : সুমিতার কাজ থেকে ছাড়ান ঠিক হয়নি তারপর আবার ভাবল কি করবে এত কামাই করত ।এত কামাই হলেও তো রেখার চলে না।
 সে তো অনেক সময় দিয়েছিল যাতে শুধরে যায় যাইহোক রেখা যেন মনে মনে সুমিতার ভাগ্য খারাপ এর পেছনে নিজেকেও একটু দায়ী মনে করল।
মাসি বলল "আমিও গেছিলাম দেখতে । যদিও সুমিতা  নিজেই এসেছিল ,মানে হাতে তখন রক্তের দাগ ।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম বললাম কি করে হয়েছে ?তখন ও হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিল এবং ঘটনাটি পুরোটা বলাতে তখন আমরা বলি এবার বডি  সরাতে পারবে না  জানাজানি হয়ে যাবেই । পুলিশকে তো খবর দিতেই হবে।
সুমিতা বলল এছাড়া  কোনো উপায় ছিল না  মাসি বললো য"খন এই কথাটা বলল ওর চোখ দিয়ে তখন জল পরছে ,।মনে মনে ভাবলো  যে মেয়েটা নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলো সে কি আদৌ   পারবে ?
' একটা যন্ত্রণার কাজ করছে যেন তো ওর ভেতরে রয়েছে যন্ত্রনা রয়েছে ।ওর যন্ত্রণা ।
মাসি বলল" আমাদেরও কষ্ট লাগছে তাই দেখি একটু দেখে তাড়াতাড়ি কাজ গুছিয়ে চলে যাব ওর কাছে।
রেখাও কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল ওর ভেতরে আজকে যে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে যাবে কিন্তু মনে যে টানটান উত্তেজনা ছিল ,ভালোলাগার বিষয়টা ছিল ।"
কিন্তু এই ঘটনা যেন অনেকটাই বিষণ্ণতায় ভরিয়ে দিল তারপর বললো "মাসি তুমি কাজ করো ।আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হই কেমন?"
মাসি বললো 'ওকে দেখে যা মনে হচ্ছিল যেন মনে হচ্ছিল  ডিমে সেদ্ধ হলে যে রকম অবস্থা হয়
সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন জানানো হয়েছে। বড়দিও এক কথায় ছেড়ে দিয়েছেন।
আর ছাড়বেন ই  ইবা না কেন বরদি যখন যেটা বলেন কোনো সারা না করে হাসি মুখে রেখে খুলে দেন সকালবেলায় কারণ এই কাজগুলো

কবি মাহাবুব টুটুল এর কবিতা "না দুঃখ না প্রেম"





না দুঃখ না প্রেম
মাহাবুব টুটুল 

অনুভূতি জড়ানো দুহাতে হাত রেখে 
সকাল কিনতাম ইচ্ছের দামে,
অবারিত সময়ের পরাগ মেখে 
মেলে ধরতাম ভাবনার আকাশ ।
নির্লিপ্ত মেঘের চোখে দেখেছি
অনন্ত পিপাসার শিহরণ ।
পাহাড় ধসের মত সময় ঢলে পড়ে
পশ্চিম দিগন্তের শেষপান্ত বিন্দুতে 
তবু আকাংখা প্রজাপতির প্রলেপ মাখায় 
মনের সংগোপনে।
বিকেলের পরাগ রেণু ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
বন্ধনকে দৃঢ় করে কংক্রিটের আবরণে 
জিঘাংসার পায়রা উড়তেই সন্ধ্যা নেমে আসে ।
রাত্রিতে ভাবনায় জড়ানো জিঘাংসার প্রতিধ্বনি 
আন্দোলিত করে প্রতি মুহুর্তে,
কিন্তু না দুঃখ, না কান্না, না প্রেম নাকি অন্য কিছু 
বুঝে ওঠার ছলে মেঘের ভূকটি মেলে ধরি
প্রাণের জড়িত শিহরণে
তখন,দুচোখ ভরে ভালবাসার নির্যাসে।

মো: আবদুল্লাহ আল মামুন রুনু এর প্রবন্ধ "ব্বইয়ের অনুভূতি"




প্রবন্ধ 

নব্বইয়ের অনুভূতি

মো: আবদুল্লাহ আল মামুন রুনু



লোকে বলে প্রথম সবকিছুই স্পেশাল। আমার জীবনে অনেকগুলো প্রথম আছে  নব্বই দশকে।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত গণ্ডির বাইরেও যে কারো জন্য বুকের ভেতরটা জ্বালা করে সেই প্রথম উপলব্ধি করা।
নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অস্তিত্ব সম্পর্কেও প্রথম অবগত হওয়া।
জীবনে প্রথমবার রিল লাইফের কারো জন্য চরম কষ্টে চিৎকার করে কাঁদা (কোথাও কেউ নেই'তে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি)।
জীবনে প্রথম রিল লাইফের কারো আনন্দে অভিভূত হয়ে খুশির কান্না (দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে'র শেষ দৃশ্য)।
প্রথম প্রেমপত্র লেখা!

আসলে তখনকার সবকিছুর মধ্যে আমি মিশে আছি। সত্যিকার আমি তাই ঘুরে ফিরে শুধু সেই সময়েই ফিরে যাই। কবি হলে বলতাম "আমি বারবার নিজেরে হারায়ে খুঁজি সেথায়""!
নব্বই দশকে ‘সেরাম’, ‘প্যারা’, ‘বিএফ’, ‘ব্রেক আপ’, ‘ক্রাশ খাওয়া’ এসব শব্দ ব্যবহৃত হতো না। তবু হৃদয়ের কথা সুন্দর করে বলা হতো।
সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না কিন্তু সম্পর্কগুলোতে অন্য ধরনের গভীরতা ছিল।
সেলফি তোলা হতো না অথচ ক্যামেরার ওই ৩৬টি ছবি হাতে পাওয়ার আনন্দ অপরিসীম মনে হতো।
পকেটে বা ব্যাগে আইফোন ছিল না তারপরেও মনে সুখ ছিল।
সেই সময়ের মানুষগুলোর মানসিকতা, আচার–আচরণ, জীবন–যাপন পদ্ধতি, হাসি–আনন্দ, দুঃখ–কষ্ট সবকিছুই বড় বেশি আপন। তখনকার নাটক–সিনেমা, নায়ক–নায়িকা, গল্প–কবিতা, গান–নাচ সবকিছু বড় বেশি সুন্দর, বড় বেশি প্রিয়। তখন গান শুনে গায়ে কাঁটা দিত। সিনেমা দেখে বই পড়ে অঝোরে চোখের পানি পড়ত।
এখন আর কোনো কিছুতেই সেই মুগ্ধতা কাজ করে না। সেই আবেগ আসে না। সবার মধ্যে অদ্ভুত এক অস্থিরতা। সবকিছু অতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। অনুভূতিগুলো যান্ত্রিক হয়ে গেছে।
সময়ের প্রলেপ মুছে দিয়েছে বহু কিছু। শুধু রয়ে গেছে সেই সময়ের অসাধারণ কিছু স্মৃতি। আজো প্রাণকে আলোড়িত করে তারা। করে হৃদয়কে আলোকিত। এক অসাধারণ মহিমায়, এক মায়াবী মাধুর্যে।
আহা নব্বই দশক, আহা ভালোবাসা!

২৫ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৭





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৭

সুমিতার জীবন

মমতা রায় চৌধুরী


এমনটা কখনো ভেবেছিল কি সুমিতা ,জীবনটা সেই কোঠীঘরের মতোই আবার হয়ে যাবে?
সেই জীবনের দগদগে ঘা শুকানোর আগেই একি হয়ে গেল। আজ মাটির ঘরে বসে বসে সেটাই ভাবছে। আজ সমস্ত মুখখানা যেন সিদ্ধ করা ডিমের মতোন ফ্যাকাশে। কি ভেবেছিল আর কি হলো ?বিয়ের দু'বছরের মধ্যেই তার জীবনের সমস্ত রস নিংড়ে ছোবড়া করে দিয়ে চলে গেছিল জীবন।
অন্য কোন মাধবি লতা বা সুমিতার খোঁজে। তাকে রেখে গেছিল অন্ধকারে। তাতে আর সুখ নেই ,স্বাদ নেই ,তার সবকিছুতেই যেন অরুচি ধরে গেছে।
 হঠাৎ করেই একদিন ফাগুনের রাত ।সেই রাত তার কাছে অনেক মধুর মিষ্টি রসে টইটুম্বুর হওয়ার কথা ছিল।  কিন্তু না, তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু'মাসের মধ্যে ফিরে আসার কথা বলে সেই  যে গেছে ,তার আর কোন পাত্তা 
নেই। ঠিক দুমাস পরে বনোয়ারি তার জীবনে এসেছে ।এর মধ্যে দু বছরে তার সন্তানও হয়েছে। বনোয়ারিলাল এর কাছে শোনা যায় যে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সে এক মরদ বটে তার কো ঠী ঘরেও এরকম মরদ জোটেনি।
প্রথম প্রথম বুঝতে পারেনি  বনোয়ারিলাল এর মতলব। সকালে বাসি উঠোনটা ঝাঁট দিচ্ছে তার আগেই মেয়েটাকে সাবু ফুটিয়ে  খাইয়েছে ,এক ফোঁটা দুধও দিতে পারছে না  মেয়েটির মুখে ।সেই সময়ে কাজ ধরেছে লোকের বাড়ি ,ঘর ঝাঁট দেওয়া ,বাসন মাজা ইত্যাদি ইত্যাদি। রেখার বাড়িতে সেই সূত্রেই কাজে যাওয়া। ঝাড় দিতে দিতে সে ভাবছে তার আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে মানুষটা যে সেই গেল আর কোনো খোঁজ খবর নিল না ।সে ভাবতেও পারেনি যে তার জীবনে একটা পাজি ন চ্ছার লোক 
জুটেছিল ।মাঝে মাঝে তার মনে পড়ে তাদের সোনালী দিনের কথা। অর্থাৎবিয়ের সীলমোহর যখন দিল কালী মন্দিরে শাঁখা ,সিঁদুর, ঢাকাই শাড়ি পরে। বুঝেছিল এই শাঁখা ,স্বামীর সিঁদুর আসলে সীলমোহর হিসেবেএকটা মেয়েমানুষ রেখেছিল। তার ঘৃণ্য জীবনে ভেবেছিল 'জীবন 'তার আশার আলো । তাকে নতুন জীবন দান করবে। হ্যাঁ নতুন জীবনই তাকে দান করেছিল। সন্তানকে নিয়ে যখন সে দিশেহারা স্বামীর খোঁজ মিলছে না ,তখন বনোয়ারিলাল এসে তাকে হঠাৎ করে হাজার খানেক টাকা ধরিয়ে দেয় বলে তার স্বামী জীবন পাঠিয়েছে সেই সূত্রেই বনোয়ারিলাল মাঝে মাঝে সুমিতার বাড়িতে আসত কিন্তু লোকটার চাহনি বুনো বুনো ছিলো ।মোটেই ভাল লাগেনি ।কেমন যেন একটা উগ্র খিদে দাও দাও করে যেন জ্বলছে ।চোখ মুখের ভেতর দিয়ে ফুটে বের হচ্ছে যেন এক্ষুনি গোগ্রাসে গিলে 
ফেলবে মাঝে মাঝে মনে  হত সুমিতার ।কিন্তু হাসি মুখে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে তার সাথে কথা বলতো ।সুমিতা যখন জিজ্ঞেস করত যে কবে ফিরে আসবে 'জীবন ?'তখন সে একটু  তাচ্ছিল্যভরে হেসে নিতো তারপর বলতো" সময় হলেই আসবে না হলে তো আমি আছি দেখভালের জন্য।"
এর অর্থ সেদিন সুমিতা বুঝ তে পারে নি। বুঝতে পারেনি তার জীবনে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে ।অন্ধকার তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 
সেদিনটা বিকেল থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। মাটির ঘর জবজবে ভিজে গেছে। মেয়েকে খাইয়ে শুয়ে দিয়ে সে ঘরে বসে তার রঙ চটা তোবড়ানো বাক্সটা খুলে সেই জিনিস গুলো সে দেখতে দেখছিল আর জীবনের কথা ভাবছিল ।তার মধ্যে ছিল তার সেই বিয়ের ঢাকাই শাড়ি। এটা খুব সাধ করে ঢাকাই চেয়েছিল সুমিতা। এনে ও দিয়েছিল। বাক্সের ভেতর থেকে এক এক করে খুলে দেখছিল, রাখা ছিল ঝুটো মুক্তোর মালা ছিল সিটি গোল্ডের হাতের চুরি, ক'টা মাথার কাঁটা। এগুলো হাতে নিয়ে বসে বসে ভাবছিল আর জীবনের মুখটাকে চিন্তা করছিল।
সেই রাত্রেই আচমকা দরজায় ঘা পড়ে। সুমিতার চমক ভাঙ্গে তার শব্দে।
ঘর থেকে জিজ্ঞেস করে 'কে?'
ঘরের এক পাশে পাটকাঠির ওপর বস্তা রাখা ছিল তার ওপর একটা কালো ছিট কাটা বিড়াল মুখ গুঁজরে ঘুমাচ্ছিল।
সেই শব্দের যেন ঘুম ভেঙে গেল।
না পাওয়াতে আবার জিজ্ঞেস করে গলা জড়িয়ে কে?"
তখন উত্তর দেয় আমি' বনোয়ারী।"
সুমিতা ভেবে পায় না এত রাত্রে কি করতে আগমন ।কথা শুনে তো মনে হচ্ছে নেশাগ্রস্ত।
কি করবে কি করবে ভাবতে না ভাবতেই আবার দরজা পেটানোর আওয়াজ।
 সুমিতা দরজা খোলার সাথে সাথেই বনোয়ারি ঘরে ঢুকে পড়ে।
সুমিতা বলে 'বৃষ্টি জলের রাত্রে আপনি?'
"আমি ছাড়া আর তোমার কি খোঁজখবর রাখে তাই একটু খোঁজ নিতে আসলাম।,"
তখনও মুখ থেকে মদের গন্ধে সারা ঘর ভরে গেছে ,চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে।
কেমন কদর্য চাহনি তবুও সুমিতা বলে "আপনি চলে যান সকালে আসবেন রাত হয়ে গেছে তো?
আমার মেয়েটার বিকেল থেকে জ্বর ।"
"আজ এতদিন ধরে অপেক্ষা করছি ।চলে যাওয়ার জন্য তো আসি নি সুন্দরী"।

"এসব আপনি কি বলছেন?"
"আমি ঠিকই বলছি ,।আজ রাতে আমি এখানেই থাকব।"
সুমিতা বলে "আমি কিন্তু চেঁচাব।  বস্তির লোক সব জেগে উঠবে।"
"চেঁচিয়ে কি হবে?"
"বস্তির লোক দেখবে রাত্রি বেলায় এক মরদ তোমার ঘরে ঢুকেছে?"
আর তাছাড়া এতদিন ধরে খোঁজখবর রাখছি কি এমনি এমনি টাকা দিচ্ছি?"
সুমিতা  যেন আকাশ থেকে পড়লো ।বলল "টাকা তো আমার স্বামী আপনার হাতে পাঠাচ্ছে।"
বনোয়ারিলালের কদর্য হাসি তে মাটির ঘর ফাটিয়ে ফেললো ।
তারপর আস্তে আস্তে সুমিতার দিকে অগ্রসর হলো সুমিতার হাতটা ধরে টানলো।
বললো "আজকে আমার তোমার সাথে সোহাগ রাত।"
সুমিতা বলল "আপনি মুখ সামলে কথা বলুন।"
বনোয়ারিলাল বলল" সতী সাবিত্রী । কো ঠ  ঘরের থেকে এসেছো বড় বড় কথা ।তাই এবার আমাকে একটু রসে মজাও।
আর তোমার স্বামী তো আমার কাছে তোমাকে বিক্রি করে দিয়ে গেছে। এতদিন ধরে ভেবেছিলাম যে তুমি আপনা থেকেই আমার কাছে ধরা দেবে তা যখন হলোই না আরে সত্যটা জেনে এবার তো তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে।"
সুমিতা বলল" খবরদার বনওয়ারী লাল বাবু আমার দিকে এগোনোর চেষ্টা করবেন না।"
বনোয়ারিলালের ভেতরে জন্য হিংস্রতা বেড়ে উঠলো।
সুমিতার মুখটা কালো হয়ে গেল ভয়ে ,অপ্রত্যাশিত বিভীষিকার এইরূপ দেখে।
সুমিতা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
তারপর ভয় মিশ্রিত কন্ঠে সুমিতা অনুরোধ করে বনোয়ারীলাল বাবু ,আপনার টাকা আমি শোধ করে দেব কিন্তু আপনি আমার সাথে এরকম করবেন না এই অনুরোধ টা রাখুন।
বনোয়ারিলাল তখনও অর্থহীনভাবে হেসে ওঠে তারপর বলল এতক্ষণ তো হিংস্র বাঘিনীর মত কথা বলছিলে এখন হঠাৎ করে মেনি বিড়াল হয়ে গেলে কি করে?
সুমিতা দু'হাত জোর করে বলে"আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আপনার আমি পায়ে পড়ছি।
সুমিতা দু'পা জড়িয়ে ধরে।
বনোয়ারিলাল তখন হিংস্র বাঘ বলে ওঠে আরে আরে করো কি? দুহাত দিয়ে তুলে সুনিতা কে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করে আর বলে আমার পায়ের কাছে তোমার জায়গা না তোমার জায়গা আমার হৃদয়ে।
বনোয়ারিলাল এই কথা বলেই সুমিতাকে জোর করে বুকের কাছে চেপে রাখে তারপর তার আঙ্গুলগুলো আস্তে আস্তে পিয় থেকে ক্রমশ তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্পর্শ করতে থাকে সুমিতা অনুভব করে এ যেন বৈশাখ মাসের দুপুরের খড়ের গাদার  মতন গরম গা এক্ষুনি পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

সুমিতা জানে মুখ পোড়া মাগীচাটা পুরুষগুলো সব সময় এরকম কামুক দৃষ্টিতেই মেয়ে মানুষগুলোকে দেখে থাকে ।এ যেন এক মারাত্মক ভাদ্র মাসের কুকুরের মত সে ছটফট করছে। ছ্যাচরা,শয়তান ইতর স্বার্থপর লোককে কি করতে হয় তা সুমিতা জানো। তখন সুমিতা হয়ে গেছে রোদে শুকিয়ে যাওয়া কাঠের মতো শক্ত ।তাই সে মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে ,এর বিষদাঁত ভাঙতেই হবে।
দুজনার মধ্যে জোর ধস্তাধস্তি চলছে হঠাৎই বনোয়ারি তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সুমিতাকে মেঝেতে ফেলে দেয় আর সুমিতার গায়ের উপর তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের কামতৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার চেষ্টা করে ।ঠিক সেই সময়ে পাটকাঠির বোঝার পাশেই ছিল একটা বটি কোনরকমে হাতরে হাতরে তার কাছে যাবার চেষ্টা করে ।তারপর পেয়েও যায়  ।সে আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না ।তার মাথায় তখন খুন চেপে গেছে।বসিয়ে দেয় এক  কোপ। সুমিতা
 খেয়াল করে বনোয়ারিলাল তখন মারাত্মকভাবে জখম ,যন্ত্রণার বিকারে তার ওঠার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেলেছে।
বাইরে বৃষ্টির আওয়াজ তখন আরো বেড়েছে ঢোবাটাতে  জল পড়াতে ব্যাংগুলো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দে গান তুলেছে আর সুমিতা তখন নিজেকে বাঁচিয়ে ভাবছে যে 'জীবন 'তার নতুন জীবন দিতে চেয়েছিল, সেও তাকে এইভাবে ঠকিয়ে জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়ে গেল। কি চেয়েছিল সে জীবনে স্বামীর একটু ভালোবাসা ,দারিদ্রতা ও তার কাছে হার মানবে । কি এক টানা-পোড়েনে একি হয়ে গেল তার জীবনে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৬




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৯৬

অস্তিত্বের লড়াই

মমতা রায় চৌধুরী



বিদ্যালয়ে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী উৎসব মোটামুটি ভালোভাবেই পালিত হয়েছে ।যদিও সেই দিনটা ছিল ঝড়ো মেঘলা দিন। ঝোড়োমেঘলা দিনের গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য গুরুদেবের গান  দিয়েই "আজ ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে"স্নিগ্ধা"অপূর্ব গাইল। রাজশ্রী কবিতা আবৃত্তি করল "আফ্রিকা'। 'অনবদ্য কবিতা আবৃত্তি।
সোহিনী তার শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে রবি ঠাকুরের অনবদ্য রচনা "গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে…।' নৃত্যের মধ্যে দিয়ে । আরো যারা ছিল মিত্রা ,দেবাংশী প্রত্যেকে খুব সুন্দর পারফর্ম করেছে।
সবার শেষে বিদ্যালয়ের সিনিয়ার দিদি ঘোষণা করলেন আমার নাম। তিনি বললেন একজন লেখিকা আর তার নিজের স্বরচিত  কবিতা আবৃত্তি না শুনলে আজকের দিনটার আনন্দঘন শ্রদ্ধার্ঘ্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।তাই শুনবো না এটা কখনো হতেই পারে না ।সত্যিই দিনটা এমন ছিল মনের ভেতরে গুনগুনাচ্ছিল রবি ঠাকুরের প্রতি আমার প্রাণপ্রিয় গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব। তাই রেখা আর কালবিলম্ব না করে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনাল "অপেক্ষার বৃষ্টি হয়ে ফিরে এসো রবি ঠাকুর। "অনবদ্য কবিতা আর তার পাঠিয়ে সকলেই মোহিত হয়ে গেল 
সারাটা দিন বেশ সুন্দর একটা শেষ ভাবের মধ্যে দিয়ে যেন উদযাপিত হল  মনটাও একটা আলাদা তৃপ্তি অনুভব করল। বড়দি ভীষণ খুশি হলেন যে হঠাৎ করেই প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করে এত সুন্দর শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন হবে কল্পনার অতীত ছিল। বড়দি প্রোগ্রাম নিয়ে খুব প্রশংসা করলেন।
আজ অনিন্দিতা এসেছিল স্কুলে। ওর শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। রিপোর্ট পেয়েছে হাতে ক্যান্সার ফাস্ট স্টেজ।ওর চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। কি একটা দুশ্চিন্তা সবসময় ওকে ঘিরে আছে ।রেখা ওকে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করে নি ।প্রোগ্রাম শেষে যখন বড়দির সঙ্গে কথা বলছিল, তখন অনিন্দিতা এসে বলল "রেখাদি তুমি ভালো আছো?"
 রেখা হেসে বললো"হ্যাঁ, ভালো আছি ।তুই কেমন আছিস?"
 রেখার কথা শুনে অনিন্দিতার চোখে জল আসে আর বলে -" আর আমার ভালো থাকা, ভালো থাকার চেষ্টা মাত্র ।শুধু একটাই চিন্তা জানো তো আমার ছেলেটার জন্য।"
বড়দি আর রেখা বলল" এতো ভাবছো কেন সব ঠিক হয়ে যাবে ।তুমি তো ট্রিটমেন্ট 
করাচ্ছো ।ঈশ্বরের প্রতি ভরসা রাখ।"
"এই রোগের আর ঠিক হওয়া দিদি"বিষন্ন সুরে বলল অনিন্দিতা।
বড়দি আর রেখা কি বলবে জানে তো এই রোগ সম্পর্কে এজন্য কিছুটা চুপ থেকে বলল "এই রোগের ট্রিটমেন্ট করাচ্ছো টিটমেন্ট অনুযায়ী তোমাকে ভালো থাকতে হবে।"
 অনিন্দিতা একটু ম্লান হেসে বলল
"কি যে পাপ করেছি সেজন্য তার শাস্তি ভোগ করছি,।"
রেখা বললো "এভাবে কেন বলছো? শরীর থাকলে তো অসুখ হতেই পারে ।এতে পাপ-পুণ্যের কথা কেন আসবে ,তুমি মনটাকে ভালো রাখার চেষ্টা করো। সবসময় এরকম নৈরাশ্যজনক কথা ব'লো না।  পজিটিভ ভাবো।"
*ভাবি কিন্তু পেরে উঠি না গো রেখাদি।'
রেখা বলল"তুমি আজকে শরীর খারাপ নিয়ে স্কুলে আসলে কেন? এখন তো সামার ভ্যাকেশন চলছে ।আজকে তো কারো বাধ্যতামূলক ছিল
 না । বড়দি সেভাবে কাউকে আসতে বলেন  নি।'
"না গো ,বাড়িতে থেকেও তো বোরিং হচ্ছিলাম এইতো কদিন আগেই ফিরেছি চেকআপ
 করিয়ে ।ভাবলাম, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী তো হবেই আর তুমি যেখানে আছো সেখানে তো হবেই ।তাই চলে আসলাম।"
"খুব ভালো করেছ "
বড়দি রেখার দিকে তাকিয়ে বললেন 'যে কয়জন মেয়ে এসেছে অভিভাবক এসেছেন, তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করেছ টিফিনের?
"ওই পঞ্চমীদিকে বলাই ছিল কাউন্ট করে নিয়ে কয়েকটা কেক আনিয়ে দিতে।"
বড়দি বললেন* অনিন্দিতা, রেখার উপর কেন আমি ভরসা করি এবার বুঝতে পারছ?ওকে যেকোনো কাজ দিলে ও কতটা দায়িত্বের সঙ্গে করে। আমাকে কোন টেনশন করতে হয় না "
রেখা বুঝতে পারল বড়দি  অনিন্দিতাকে একটু খোঁচা দিয়ে কথা বললেন "কারণ এর আগে অনিন্দিতা খুব সমালোচনা করেছে রেখাকেনিয়ে।"
"দিদি ,আপনারা অভিজ্ঞ ব্যক্তি আপনাদের চোখকে কখনো ফাঁকি দেয়া যায়?আপনি যোগ্য লোককে দায়িত্ব দিয়েছেন।"
রেখা অনিন্দিতার কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছে। মনে পড়লো মহৎ বানী'কেউ আঘাত করলে প্রতিশোধ নেবার দরকার নেই। ধৈর্য ধরলে আঘাত নিজেই তার কর্মের জন্য পাবে।
সেদিন যে অকারনে রেখাকে আঘাত করেছিল কন্টিনিউয়াসলি, আজকে ভাগ্য কোথায় নিয়ে গেলো অনিন্দিতাকে ।সেই রকম মেজাজি অহংকারী মনোবৃত্তি কোথায় চলে গেছে।"
রেখা খেয়াল করল অনিন্দিতার ভিতর যেন একটা আর্তনাদ রয়ে গেছে বুকের ভেতরে যে এতদিন শুধু প্রত্যেককে অপমান আঘাত করার আগুন  জ্বলছিল, সেটা এখন নিভে যেতে বসেছে আপনা থেকেই। হয়তো এটা তার অনুশোচনা অনুতপ্তবোধ তাকে বিবেকবোধের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
কাউকে কখনো ছোট করে দেখা উচিত নয়।
বড়দি বললেন" রেখা আমার সঙ্গে দুজন ভদ্রলোক কথা বলতে আসছেন ,তোমরা বরং স্টাফ রুমে গিয়ে বাকি কথাটুকু সেরে নাও কেমন?"
রেখা বলল" হ্যাঁ বড়দি ,ঠিক আছে।"
স্টাফ রুমে যেতে যেতে রেখা অনিন্দিতাকে বলল "তোর বর সুরেন  ঠিক আছে তো?
তোকেনিয়ে খুব ভাবছে না?"
রেখা বলল "সে তো একটু ব্যস্ত আছে, ভাবনা তো রয়েছে  বাচ্চাটা ছোট।"
রেখা খেয়াল করল অনিন্দিতার কথার মধ্যে যেন একটা ঔদাসীন্য আর অবহেলায় ভরা সুর। 
সেই অস্তিত্বটাকেই  বুঝাতে চাইছিল ।যদিও ভাষাতে তার  অভিব্যক্তি নেই কিন্তু চোখে-মুখে 
 বিষন্নতার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে।
রেখা বলল "অনিন্দিতা বাড়ি যাবে না?"
"তোমার ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে।"
"না ,এখনো মিনিট দশেক বসতে পারব।"
আমি বাড়ি গেলে তো হাজারো চিন্তা মাথায় আসে এখন শুধু মনে হয় কত তাড়াতাড়ি স্কুল টা খুলবে আমি কাজের মধ্যে নিজেকে এখন জড়িয়ে রাখতে চাই।"
"কিন্তু তোমার বাড়িতেও তো একটা বাচ্চা আছে ওকে নিয়েই তো তোমার সময় কেটে যাবে।"
জানি রেখাদি ,কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকালে না শুধু মনে হয় কেন আমি ওকে পৃথিবীতে আনলাম আমি যদি ওকে সঠিকভাবে লালন পালন করে ওকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে না পারি তাহলে আমার মা হবার কোন অধিকারই নেই।"
"এভাবে বোলো না অনিন্দিতা।"
অনিন্দিতা অঝোরে কাঁদছে আর বলছে" আমি কতদিন এই পৃথিবীতে আছি রেখাদি আমি জানি না ।যেহেতু ফাস্ট স্টেজে  ধরা পড়েছে ,হয়তো থাকবে কিছুদিনের জন্য কিন্তু কতদিন?"
একটা হতাশাগ্রস্থ বেদনা ,যন্ত্রণা অনিন্দিতাকে কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে ভেতরে ভেতরে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে একটা ভয়। সর্বদা যেন কুকুর তাড়া করছে।
রেখা অনিন্দিতার মাথায় হাত রেখে বলল "যে কটা দিন থাকো তুমি হেসে খেলে পজেটিভ ভাবনা নিয়ে থাকো ।সেই কটা দিনই  তুমি তোমার সন্তানের জন্য মূল্যবান সময় অতিক্রম করো।
" রেখা দি তুমি সন্তানের মা হতে পারোনি তুমি অনেক লাকি।"
কথাটা শুনে রেখার চোখ ছল ছল করে উঠলো আর বললো "বলছো আমি লাকি ।আমি জানি আমি কতটা লাকি। আসলে আমাদের জীবনটা এরকম জানো তো যে যা পায় ,সেটা নিয়ে খুশি হতে পারে না ।আমরা যদি প্রত্যেকেই সেটুকু অংশ নিয়ে খুশি থাকতে পারতাম, তাহলে মনেহয় সব থেকে বেশি সুখী হতে পারতাম।"
"রেখাদি আমি অনেক ভুল করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।"
অনিন্দিতা হাতজোড় করে রেখার কাছে ক্ষমা চাইছে  ।রেখা উপলব্ধি করলো আজ অনিন্দিতা ক্ষমা সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখছে।
অনিন্দিতা অনর্গল বলে যাচ্ছে " জানো আমি তোমাকে খুব ঈর্ষা করতাম আর ভেতরে ভেতরে খুব জ্বলতাম।"
রেখা খেয়াল করল অনিন্দিতার স্বপ্নময় দুটি চোখ যেন এখন ক্লান্ত শুধু খুঁজে বেড়ায় তার অস্তিত্ব টিকে থাকার লড়াই, একটা সচকিত আতঙ্ক যেন ক্রমশ অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে টেনে।
রেখা বলল "শান্ত হও অনিন্দিতা, শান্ত হও।"
অনন্দিতা চঞ্চল ,অস্থির ,উদ্দাম হয়ে বলতে লাগলো আমাকে বলতে দাও রেখা দি।
আমি এই কথাগুলো বলে যেতে না পারলে আমি যে আমার জীবন শেষে শান্তি পাব না।"
কন্টিনিউয়াসলি অনিন্দিতা কেঁদে চলেছে ।রেখা দেখল কাঁদারপ্রয়োজন রয়েছে ।
শুধু এইটুকু বলল "আমার ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে অনিন্দিতা। আমাকে এবার উঠতে হবে তুমিও বাড়ি যাও  মাঝে মাঝে ফোন ক"রো আমিও তোমাকে ফোন করবো ।ওকে সান্ত্বনা দিয়ে রেখা বেরিয়ে পড়ল টোটো ধরবে বলে । টোটোতে উঠে বসে বসে রেখা ভাবছে অনিন্দিতা কাঁদুক। ওর অসাড় দেহ অন্ধের মত হাতরে হাতরে খুঁজে বেড়াচ্ছে শুধু অস্তিত্ব টিকে থাকার 
লড়াই ।অন্ধকারে মনে হচ্ছে যেন কিছু দেখতে পাচ্ছে না ।চারিদিক শুধু অনন্ত অন্ধকার ।অঙ্গার এর আগুন যেমন পুড়ে পুড়ে নিজে শেষ হয়ে যায় তেমনি যেন মনে হচ্ছে ওর স্বপ্নগুলো আর বাস্তবায়িত হবে না।চারিদিক চোখ বন্ধ করে দিচ্ছে।

রেখা আজ রবি ঠাকুরের জন্মদিনে তাই বারবার মনে করছে "হে গুরুদেব , হে ঠাকুর,সকলের ভেতরে তুমিই উদ্যম ,প্রাণশক্তি জোগাতে পারো তুমিই আমাদের বেঁচে থাকার রসদ ।মনেপ্রাণে সেই শক্তি দাও। সেই শক্তি ওকেও দান করো "

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৫




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৯৫

অভিনয়

মমতা রায় চৌধুরী

নারী যেন নদীর মত আপন বেগে প্রবাহিত হতে চায় কিন্তু তার গতি রুদ্ধ করে দেয়া হয় ।একদিকে যদি ভরাট হয়, অন্যদিকে ভাঙ্গন  ।তাই দুই কুলকে  সযত্নে রক্ষা করে চলতে হয় 
নারীকে ,আর সংসার প্রবেশ করলে তো কথাই নেই ।একদিকে সংসার অন্যদিকে তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই। এই দুটো দিক সযত্নে যখন ব্যালেন্স করে রাখা যায় বা চলা যায় তাহলে সেই ক্ষেত্রে সেই নারী সংসারে তত বেশি প্রতিষ্ঠা, প্রতিপত্তি, সুনাম। মাধুরী বরাবর এটা ব্যালেন্স করে চলেছে। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে তা নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যেতে বসেছে ,কখনো স্বামীর মন রক্ষা করা ,সেখানে তার অভিনয়টা খুব পাকাপোক্তভাবে করতে হয় ।কখনো বা সন্তানদের ক্ষেত্রে কখনো বা   শাশুড়ির সঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে তার নিজের শাশুড়ি নেই । এখন সবই পিসি শাশুড়িদের সঙ্গে।
এই তো শিখার বিয়ের পর থেকে মেজো পিসি শাশুড়ি রয়েছেন ,তার আবার শরীর খারাপ একটুতেই অভিমান।  সব দিকে মাধুকে নজর রাখতে হয় ,বিরক্ত হলেও সে বিরক্তিভাব প্রকাশ থাকে না ।সব সময় হাসিমুখে চলে, সর মাধুর্যে একটা আলাদা চমক আছে।

এইতো গত পরশুদিন শিখা ফোন করেছিল বলেছিল বৌদি ভাই এসো না কদিন এখানে বেরিয়ে যাও। বাড়ি ছেড়ে তো নড়ার কোন অবসর তুমি পাও না।".
মাধুরী হেসে বলেছিল 'যাব বৈকি ।"
শিখা উৎফুল্ল হয়ে বললো ' কবে আসছো
 বলো ?বলো ,বলো?"
"এইতো মেজ পিসিমা রয়েছেন তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন ।"
শিখা হতাশ হয়ে বলে "তারপর?''
মাধু বলল " হ্যাঁ তার পরই তো।
রেখে যাই বল কার ভরসায়।"
"বলে আচ্ছা ,বৌদি সব দায়িত্ব কি শুধু তুমিই নিয়ে রেখেছো ?তোমার নিজস্বতা বলে কিছু 
নেই ।এখন আমি বড় হয়েছি to আমার বিয়ে দিয়েছ। এবার আমি যেটা বলবো তোমাকে সেটাই শুনতে হবে।"
"হ্যাঁ জানি তো ।এরপর আমাদের বয়স হয়ে যাবে তোরাই তো আমাদেরকে সবকিছু বুঝাবি, শাসন করবি। তোরা ছাড়া কে আছে বল?"
এই কথা বলে এড়িয়ে যাবার মতলব না? বাহরে  কোথায় গেলাম বল?'
"তবে না  না তো কি বলো?'
"বাববা পিসিমা জানতে পারলে খাপ্পা হয়ে যাবে রে?"
বলার আগে একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল 'পিসিশাশুড়ি আবার শুনতে পেলেন কিনা?''
  শিখা বলল "তুমি আবার এ কথাগুলো বলছে আবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখে নাও।
মাধু মনে মনে ভাবল সে আর বলতে ।সে তো দেখে নিয়েছে  শিখা কি করে মাধুর মনের কথা জানে কে জানে?"
কি হলো বৌদি চুপ করে আছো যে?
পিসি কবে যাবে বল তো ?আমার বিয়ের আগে এসেছে, এখনো পড়ে আছে।"
"আমি কি করে বলি বল ?তাদের বাপের,! বাড়ি আসতেই পারেন।"
"বৌদি এতকিছু সহ্য করো অন্য কেউ বলে না কবে মুখের উপর বলে দিতো।"
কি করব বলো? সবকিছুই তো মেনে নিতে হবে
আর কত মানাবে বলতো? "
"দাদারা আর ফোন করে নি পিসির ব্যাপারে?"
'কই।এখন তোর দাদার কাছে করেছে কিনা জানিনা?'
'ও মাধু ও মাধু চা টা পাবো নাকি গো?'
'কে পিসির গলা না?'
'হ্যাঁ রে ,বলতে না বলতেই।'
শিখা বলল 'যেন বোমা বর্ষণ হচ্ছে।'
মাধু একটু শিহরিত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন সাড়ে চারটে বাজে সর্বনাশ।"
শিখা বলল-হঠাত সর্বনাশ করে উঠলো যে?
"বাবা এই টাইমে যদি চা না পান ,তাহলে  হার্টের  ট্রাবল দেয় নাকি ওনার খুব।"
"বলছো কি বৌদি ভাই"? শিখা হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে। বাববা যাই হোক তোমার মুখ থেকে তবু এই কথাটা বেরোলো।'
"এবার আমি ফোনটা রাখছি বুঝেছিস, পরে কথা বলব।
"কেন রানুদি আসেনি ।রানুদিকে বলো না আজ চা করে দিতে?"
"রানু ঘর ঝাঁট দিচ্ছে।"
রানু "একটু চায়ের জলটা বসা তো?
পিসি শাশুড়ি উপর থেকে সব লক্ষ্য রাখলো আর মনের ভেতরে গজ গজ করতে লাগলেন তারপর নিজের বিছানায় গিয়ে বসলেন।
এমনি তুই  ভালো আছিস তো? কল্যাণের খবর কি?"
শিখা একটু চুপ করে থেকে বলল' চলছে ।'
"সামার ভাকেশন পড়েনি ?কদিনের জন্য একটু বেরিয়ে যা।'
'আর ব'লো না তো, আজ এই সেমিনার ,কাল ওই সেমিনার করে বেড়াচ্ছে ।'
"আর আমার ননদিনীকে সময় দিচ্ছে না তাই তো?"
শিখা চুপ করে থেকে বলেন আমার তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে বৌদি ভাই?

রানু চা করে এনে মাধু কে এক কাপ দিয়ে বললো" বৌদি এই নাও চা " 
মাধু শিখা কে বলল "এই দেখ, রানু চা করে এনেছে  । তোর চা কোথায়? আর পিসিমা চা দিয়েছিস?
রানু বলল 'হ্যাঁ দিয়েছি।
কার সাথে কথা বলছো গো, দিদিভাই? আমাকে একটু দাও না কথা বলি।
মাধু বলল "এই শিখা ,এই নে, রানু কথা বলবে তোর সাথে?''
আরে কেমন আছিস রানু?
আছি দিদি তুমি ভালো আছো কবে আসবে?
ভালো আছি আমি গেলে তো তোর বাসন বাড়বে।
দিদি কোনদিন আমি বলেছি !যতদিন এই বাড়িতে কাজে লেগেছি তোমরা আসলে বাসন বাড়বে,?
"না রে পাগলী ,আমি এমনি বললাম  আসলে ম্যাক্সিমাম কাজের লোক না ,এই আমার বাড়িতেই দেখ না দু একজন লোক আসলেই আগে জিজ্ঞেস করবে কদিন থাকবে !বল, খারাপ লাগে না ?এর  মধ্যে ভদ্রতা নেই রে বাবা ।আমি এমনি বলেছি মনে কিছু করিস না ।"
একগাল হেসে বলল 'না গো দিদি ,আমি কখনো তোমাদেরকে না পর ভাবতে পারি না ।আসলে এরকম ভালোবাসা আমি আর কোন পরিবারে পাই নি।"
"ঠিক আছে শোন, আমি এরপরে গেলে তোর একটা ভালো কানের দুল আর হারের সেট নিয়ে যাচ্ছি কেমন ?তোকে খুব মানাবে দেখিস আর বৌদি ভাইয়ের যেন কষ্ট না হয় দেখিস কিন্তু ,।রানু , বৌদি ভাই কিন্তু কখনো বলবে না নিজের থেকে একটু করে দিস।"
হ্যাঁগো ,বৌদি ভাই তো কথাই শোনে না ।দেখবো আমি আসার আগে কত কাজ করে 
নিয়েছে ।আমি মাঝে মাঝে রেগে যাই জানো 
তো ? রেগে গিয়ে বলি' আমাকে রাখার কি দরকার ?তুমি তো নিজেই করতে পারো।"
"আমাদের বৌদি ভাই বুঝলি রানু ,সবার দুঃখ নিজে ভাগ করে নিতে জানে  আচ্ছা শোন, যাই বলুক তুই কিন্তু কামাই করিস না   ।বাবা না না আমি এগুলো আমার নিজেরই ভালো লাগে না অন্য বাড়িতে কামাই করলে তোমাদের বাড়িতে আমি কামাই করব না কখনো হয়তো দেরি হতে পারে?
তারপর বৌদি ভাইয়ের দিকে তাকে বললো" বল বৌদি ভাই ,আমি কামাই করি?"
তুই মেলা বকেছিস তোকে আর বকতে হবে
 না ।যা দিয়ে এবার ভাল করে বাসন টাসন মেজে নে । আবার তো বাড়ি যাবি ?ঠিক আছে ।না রে কামাই করে না ।করলে ও বলে যায় । বাববা আগের যে কাজে ছিল  যা ভুগিয়েছে ।সত্যি কথা রানুর মত মেয়ে পেয়েছি খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। ও খুবই ভালো মেয়ে।"
কথাটা শুনে খুব রানু খুশি হলো ।তারপর হাসতে হাসতে নিজের কাজ করতে গেল।
"ফোন করাটা কমেছে বৌদি ভাই ?"
"ওইটাই তো  রোগ।যেদিন ফোন নিয়ে আসবে কাজ করার আগে ফোনে গল্প,।
" কার সাথে কথা বলে,  সেই হাঁদু?
ছেলেটি কি করে গো বৌদি ভাই?"
"জানি না বাবা ,রানুই জানে। রানুর কাছে ওই ছেলেই সর্বেসর্বা  ওর ব্যাপারে কিছু বলা যাবে
 না ।ও বাবা এ যে তোকে বলছি আবার শুনে ফেললে তো একেবারে  মুখ হাঁড়ি করে ফেলবে।'
"ঠিক আছে, রাখছি রে  সন্ধে দেব কেমন? ভালো থাকিস।"
ফোনটা কেটে দিয়ে মাধু দেখছে, রানু চলে যাচ্ছে "কি রে রানু ,আজকে তুই আমাকে না বলেই চলে যাচ্ছিস? কি ব্যাপার?"
"এমনি তুমি ফোনে কথা বলছো তো তাই?"
মাধু বুঝল নিশ্চয়ই হাদুর  ব্যাপারটা বলেছি শুনে নিয়েছে।
"বুঝেছি তুই আমার উপর রাগ করেছিস, তোকে চা করতে হয়েছে বলে?"
বাববা এত রাগ। একটু চা করতে গিয়ে, তুই তো চা করে খাওয়াস তো। তোর হাতে চা কত ভালো?"
এ নিয়ে মুখ ভার করি নি বৌদিভাই ।আমি কখনো চা করতে গিয়ে এরকম করেছি?'
"তাহলে এত গোসা ক্যান,? তোমার মুখে অমাবস্যা লেগেছে?ও বাবা তোর চোখে জল।"
 মাধু রানুকে কাছে টেনে বললো' আমি কি এমন কথা বলেছি রে। যার জন্য তুই কষ্ট পেয়েছিস?"
"কি করব বলো আমি তো হাদুকে ভালোবাসি।"
"হ্যাঁ, হ্যাঁ ভালোবাসা অপরাধ নাক
 রে ?ভালবেসেছিস বেশ করেছিস ।তুই ওকেই ভালোবাসবি। হাদুর মতো ছেলে হয় নাকি? তোকে কতো ভালবাসে?
একদিন আমার কাছে হাদু কে নিয়ে আসবি তো?"
রানু খুব খুশি হয়ে বলল" তুমি দেখবে 
বৌদিভাই ?তুমি দেখবে ?ঠিক আছে নিয়ে আসব।"
"আমি তো এমনি শিখার আছে ইয়ার্কি
 মারছিলাম ।একটা ক্ষেপি মেয়ে। রানুকে কাছে টেনে আর একটু আদর করে দিলো।"
রানু খুশি হয়ে বাড়ী চলে গেল।
এরপর মাধু গেল পিসিমার কাছে ।তার এখন ওষুধ খাওয়ার টাইম ।সন্ধ্যের নাস্তার আগে ওষুধ আছে।
মাধু ঘরে ঢোকার আগে বলল" পিসিমা, পিসিমা ঘুমিয়ে গেলে ন নাকি পিসিমা? আপনার ওষুধ খাবার আছে খেয়ে নিন ।না হলে আবার সেই সন্ধ্যেবেলার নাস্তা খেতে পারবেন না । উঠুন, 
উঠুন।শুয়ে আছেন ?কি ব্যাপার শরীর খারাপ?"
"একি চা খাননি কেন?"
"ইচ্ছে হয়নি তাই?"
"ওমা সেকি কথা !আপনার ওই টাইমে চা না খেলে শরীর খারাপ করে মাথা ছাড়ে না। আচ্ছা খান নিকেনো?"
"আজ সুরো অফিস থেকে  আসলে একটু ফোন করতে ব'লো তো  ,আমার ছেলের কাছে।"
"সে কি হঠাৎ ফোন? মন খারাপ করছে সবার জন্য?"
"না মা কে আর কতদিন এখানে ফেলে রাখবে 
বলো ?নিজের বাড়িঘরেও তো যেতে হবে নাকি?"
মাধু জানে কিভাবে পেট থেকে কথা বের করে নিতে হয়। তার মানে শিখার সাথে  যখন পিসি মাকে নিয়ে কথা বলছিল, তখন কিছু একটা শুনে নিয়েছেন। তাই এত গোসা।'
"ঠিক আছে পিসিমা, সব কথা হবে আরো ক'দিন থেকে যান। আপনি না থাকলে কি আমাদের ভালো লাগে বলুন? কেমন বটবৃক্ষের মতো আছেন  আমরা তার ছায়ায় নিশ্চিন্তে কাটাচ্ছি।
"আমি না থাকলে তোমাদের খারাপ লাগবে?"
"১০০বার লাগ বে।"
"কি বলছ বৌমা তাহলে যে শিখার সাথে বলছিলে..।
এবার পথে এসো চাঁদু মাধু মনে মনে বলল।তারপর কথাটা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই বলল মাধু " ওতো শিখাকে একটু রাগানোর জন্য বলছিলাম  ।আপনার সাথে খুব আড়ি আছে না?*
"ও তাই ,?রাগ করো না মাধু ।আমি তোমাকে কতো কথা শোনালাম। মাধুকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় আশীর্বাদ করে বললেন "তোমার মত লক্ষ্মীমন্তবউ এ বাড়িতে এসেছ বলেই ,এই সংসার টা এখনো সবাইকে মানিয়ে নিয়ে চলছ।
ভগবান তোমাদের কল্যান করুক।'
আসলে এই সংসারটাই হচ্ছে একটা নাট্যশালা তাই এই রঙ্গমঞ্চে যে যত বেশি ভালো অভিনয় করতে পারবে ,তার তত বেশি প্রতিষ্ঠা ,প্রতিপত্তি সুনাম-সুখ্যাতি ।সংসারে এই অভিনয়ের যথেষ্ট দরকার রয়েছে ।মাধু যেমন এখানে অভিনয় করেছে ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে একটা মমতাময়ী নারী সত্বেও আছে। সে সে যেন তার বিশাল পক্ষপুটের আড়ালে সযত্নে আশ্রয় দিয়েছে সকলকে।
 

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৪




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৪

মনোজের মৌউল নেশা

মমতা রায়চৌধুরী


মনোজ আজ অফিস থেকে বাড়ি ফিরল প্রায় রাত্রি নটার পরে।  ক্লান্ত শ্রান্ত মন নিয়ে যখন সে তার কলাপসিপল গেট খুলে ঘরে ঢুকলো তখন মনে হল সে বেশি বড্ড ক্লান্ত হয়ে 
পড়েছে ।তাড়াতাড়ি কোনরকমে আলোটা জ্বাললো । জোরালো আলো আরও বেশি ক্লান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে , তাই মৃদু আলো জ্বাললো।ওদিকে পুবের জানালার শার্সি দেয়া ছিল তার ভেতরে প্রচুর চাঁদের আলো এসে পড়েছে ঘরের 
মধ্যে ,ঘরের প্রায় সবকিছুই আবছা দেখা 
যাচ্ছে কোন অসুবিধাই হচ্ছে না দেখতে lনিজের প্যান্ট, শার্টটা খুলে আলনায় টাঙিয়ে রাখল তারপর এক এক করে ঘরের জানলাগুলো
 খুলে মনে মনে ভাবছে  "কি ব্যাপার আজকের জানলা গুলো বন্ধ? রেখা কি এখনো বাড়ি ফেরেনি ?কি হতে পারে? কোথায় গেল ভাবতে ভাবতেই সোফায় গিয়ে নিজের শরীরটাকে এলিয়ে দিলো।
"এইসময় রেখা থাকলে, এক কাপ কফি হলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যেত ।আজকে এত ক্লান্ত লাগছে কেন ?মনে মনে ভাবছে  তারপর চোখটা বুজে আসলো। এরমধ্যে দেখা গেল তুতু এসে মনোজের পাশটাতে বসে" কিউ কিউ" আওয়াজ করছে ।মনোজ চোখ বন্ধ করেই বললো " কি ব্যাপার ,তোর আবার কি হলো ?তোর মালকিন কোথায় গেল ,কিছু বলে গেছে ?'
তারপরও দেখা গেল কিউ ,কিউ আওয়াজ করে যাচ্ছে  তখন মনোজ আবার উঠলো ,উঠে দেখল সামনেই ফ্লাক্স রাখা রয়েছে  মনোজ এতক্ষণে খেয়াল করে। ফ্লাক্স এর ঢাকা খুলে
খুলে দেখল' সত্যিই কফি রাখা আছে ।'
"উফ এইজন্যেই রেখা কে এত ভালো লাগে কিন্তু সত্যিই কি এত ভালো লাগে ?"
ভাবতে ভাবতে তু তুর  কাছে গেল  ।
দেখা গেল ও আবার দরজার কাছে যাচ্ছে, বুঝল তুতু বাইরে বেরোবে ।
মনোজ আবার গেটটা খুলে দিল । গেটটা
  বন্ধ না করে সোফায় এসে বসলো আর মনে মনে ভাবল একটু পরেই তো আবার তুতু
 ঢুকবে  কাজেই গেট বন্ধ করে লাভ নেই । সামনেই কাপ রাখা ছিল তাতে কফি ঢেলে খেল। কফি খেতে ই মাথাটা যেন ছেড়ে গেল ,ক্লান্তি দূর হয়ে গেল ।এবার রিমোট নিয়ে নাড়াচাড়া করল টিভিতে সেই একই নিউজ শুনতে আর ভালো লাগছে না ।সেই ভোটের তরজা।'
তার চেয়ে মনোজ সিগারেট হাতে নিয়ে জানলার কাছে গেল তারপর লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালো ,ধরিয়ে চাঁদের আলোর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে লাগলো। মনটা যেন আজ কেমন কেমন সিগারেট পাশে এক সুন্দরী নারী।
মনোজের মন ক্যানভাসে নাড়া দিয়ে গেল আরো কিছু তুলির আচড়  মনে পড়ে গেল মনোজ যখন গ্রামের বাড়িতে ছিল সেই সময় প্রতিবেশী এক দিদি তাকে খুবই স্নেহ করত কিন্তু দিদিকে দিদি হিসেবে ভাবতেই পারতো না ।মনে মনে তাকে নিয়ে কত কিছুই কল্পনা করেছিল কিশোর মনে। সেই অলিখিত মনে দোলা দিয়ে গিয়েছিল প্রথম  দিদি নারী ।তার জীবন তখন ভোরের সদ্যফোটা আলোর মত ছড়িয়ে পড়তে চাইছিল চারিদিক। শীতের ভোরের কুয়াশা যখন দূর্বা ঘাসের উপর পড়ে তার ওপর যদি রোদের ছটা পরে তা যেমন চিকচিক করতে থাকে ,এক অপরূপ মুক্তার মত আলোয় ভরে যায় চারিদিক । ঠিক জুঁই দিদিকে দেখে মনোজের মনপ্রাণ হিন্দলিত হত ।এভাবেই মনাকাশে চলতো মেঘের আনাগোনা ।কিন্তু কোথাও দ্বিধা কোথাও যেন একটা লজ্জা, বোধের জগতে কাজ করছিল। ভালোবাসার প্রকাশ করতে পারেনি একটা অনাবিল সর্বদা তার ভেতরে কাজ করেছে কাউকে শেয়ার করতে পারেনি কারন সেটা সমাজের কাছে সেখা নিজে অসম বয়স এ ভালোবাসা কখনো মর্যাদা পাবে
 না  মনোজের থেকে বয়সে তিন বছরের বড় তার সমবয়সী পিন্টুর দিদি । পিন্টুর সঙ্গে একসঙ্গে খেলাধুলা করত ,পিন্টুদের বাড়ি প্রায়শই যেত, পরে বুঝতে পেরেছিল তার কিসের এত টান ওই বাড়ির প্রতি। আসলে দিদির ওই সৌন্দর্য সেই বয়সেই তার মনে দাগ কেটে গেছিল অপরূপ কাঁচা রুপের সাজ , মনোজের মনের ভিতরে জুই দিদির  মাধুর্যএর ছটা সর্বদা ঘুরপাক খেত। তাই কারণে-অকারণে পিন্টু দের বাড়িতে হাজির হতো মনোজ। জুই দিদির অপরূপ সৌন্দর্য। সুন্দর ফর্সা দেহ খানি কোকড়ানো চুল, পটলচেরা চোখ সেই চোখের দৃষ্টি যেন অনেক গভীরে পৌঁছে যেত মনোজ। সাঁতার কাটতো ।নিটল বক্ষের ভেতরে ছিল গোলাপের সুগন্ধ।  
প্রেম যেন অপ্রত্যাশিতভাবেই আসে ।তার  কোনো দিনক্ষণ থাকে না। বয়স থাকে না ।মনোজের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটেছিল  প্রথম যৌবনের সুরভী লেগেছিল, তার মনের কোণে কোন এক বনমালী বাঁশ রী বেজেছিল ।সে মনে মনে প্রত্যাশা করত অভিসার যেতে। তার মানস প্রত্যাশিত সেই প্রেমিকা ছিলো জুইদিদি।
আজকে এসব কথা ভাবতেও খারাপ লাগে কিন্তু কিছু করার ছিল না তার প্রথম প্রেম , তাকে অস্বীকার করবে কি করে? মৌউল ফুলের নেশার মত টান তো।
প্রেমের বোধহয় একটা অবাধ্য ভাব আছে। কারোর জন্য কোন কিছু নিয়ে প্রতীক্ষা করলে বা অনেক আয়োজন নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করলে সে আসে না। তার দর্শন পাওয়া দায়। প্রেম কখনো দিনক্ষণ দেখে আসেনা ,তা শুধু অপ্রত্যাশিতভাবেই আসে আর যখন আসে তার সেই আবেগ ত্রিভুবনে জুড়ে বসে।
জুই দিদিকে নিয়ে বেশি ভাবলেই তার ভেতরে একটা শিহরণ লাগতো ,সে রাত্রে তার চোখে ঘুম আসত না। জুঁই দিদিকে নীল শাড়িতে খুব সুন্দর মানাত ,যেন একটা নীল পরী নেমে এসেছে কিন্তু একটা দুঃখের বিষয় এত সুন্দর রূপ তার প্রকাশ নেই। মনোজ সেই দিদিকে নিয়েই কত বর্ষার সন্ধ্যা কত জ্যোৎস্নাময় রাত্রি ভেবে গেছে কিন্তু সব সময়  অধরাই থেকে গেছে।
মনোজের শুধু মনে হতো একটি সুকোমল নারীর হৃদয়ে এত সম্ভার রক্ষিত আছে অথচ তার প্রিয়তমের আসন খানা জনশূন্য অন্ধকারে হাহাকার করত। যদি  কাঁচা রূপের সাজের আবরণে আস্তে আস্তে আরো অভিজ্ঞ সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়, তার কথা বলার ভঙ্গি ,তার সাজসজ্জা, এমনকি বেনিবন্ধেও  অভিজ্ঞ সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায় তাহলে হৃদয়ের সমস্ত অপ্রার্থিত প্রেম রাশি একজনের স্মরণেই নিবেদিত হতো, তাহলে কি ভালোই না হত। কত নির্জন রাত্রে মনোজের মনে এভাবে জুঁই দিদি নাড়া দিয়ে যেত। আর মনোজকে উতলা করে দিত।
মনোজ মনে মনে ভাবে এই সৌন্দর্যের একটা  মোহিনীশক্তি আছে । যার বসে মনোজ পড়েছে সেই সুন্দর্যকে উপলব্ধি করতে না পেরে বারবার তাই মনোজ হতাশ হয়ে যেত তার হৃদয় মরুভূমি নয় সবসময় যেন নতুন রসের উদ্ভব হত।
একসময় এই মোহিনী রূপেই জুঁই দিদি মনোজের মনেও এক  ম্লানগোধূলির আলো তে পরিণত হয়েছিল, যেদিন মনোজ তার কল্পনার প্রথম প্রেমিকা  অন্য কারোর হতে যাচ্ছে ,সেই মুহূর্তে তার কাছে পৃথিবীর রং বদলে গিয়েছিল।

পিন্টু যখন এসে বিয়ের কার্ড খানা মনোজদের বাড়িতে এসে ধরিয়ে দিয়েছিল। সেদিন মনোজের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছিল, তার মনের ভেতরের সদ্য পাপড়ি মেলা প্রস্ফুটিত ফুল যেন ঝরে পড়তে শুরু করেছিলো। মনে মনে তাকে নিয়ে সাজানো নতুন বাড়ির গোলাপি পর্দা গুলো ক্রমশ অনেকদিনের রং চটা ধুলোর আস্তরণে  পরিণত হয়েছিল।
তার হৃদয় বিকল হয়ে গেছিল সে দ্রুতপদে নিজের ঘরে চলে এসেছিল যেন মনে হয়েছিল তার চোখের সামনে তার সেই কল্পিত জুই দিদি তার মানসপ্রতিমা যেন নীল জর্জেটের আঁচল খানা মেলে দিয়ে একটা অন্তরাল সৃষ্টি করেছিল দুই দেশেই মোহনীয় উদ্ধত রূপ আর মনোজ দেখতে পেল না।
মনোজ সাহসে বুক বেঁধে আর ভেতরে ত্যাগের মহিমায় উন্নীত হয়ে পরেরদিনই হোস্টেলে চলে গেছিল।
যে মনোজকে হস্টেলে পাঠানোর জন্য বাবা-মা হিমশিম খাচ্ছিল সেই মনোজ নিজের থেকেই হোস্টেলে যাবার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে দেখে বাবা-মা একটু অবাক হয়ে গেছিল মাত জিজ্ঞেস করেই ফেলল কি ব্যাপার আজকে তোকে হোস্টেলে যেতে হবে জুয়েল বিয়ে আছে দুদিন থেকে যান তারপরে যাবি।
মনোজ নিরুত্তর থেকে ছিল ছেলের চাউনিতে একটা ভাবলেশহীন প্রতিমূর্তি ধরা পড়েছিল মনোজের মা তখন শিউরে উঠেছিল মনোজকে আর ঘাটাতে সাহস পায়নি মনের ইচ্ছেটা পূর্ণ হয়েছিল
মনোজ তার প্রেমের সকল বাতায়নগুলি রুদ্ধ করে ফেলেছিল সেখানে আর প্রেমের সৌন্দর্য লোক প্রবেশ করতে পারবে না তারপর বহু দিন এই যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেরিয়ে ছিল কিন্তু কাউকে প্রকাশ করতে পারিনি হয়তো মনের মত এরকম সকলেরই কিছু না কিছু ঘটনা থাকে যা সব সময় সকলের কাছে শেয়ার করা যায় না।
এসব ভাবছে এমন সময় রেখা এসে বলল" কি ব্যাপার জানালায় দাঁড়িয়ে এত কি ভাবছো?""
"কই কিছু নাতো। তুমি কোথায় গিয়েছিলে?"
"আরে পার্থর মা ,মানে মাসিমা ।'সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পা মচকে গেছে তাই দেখতে গেছিলাম।
"এ বাবা কখন?"
"সন্ধ্যেবেলায়।"
আর দরজাটাকে হাট করে খুলে রেখেছো যে দেখো তোমার পেছনে কারা কারা বসে আছে।
ও বাবা তুতু, মিলি ,পাইলট সবাই। টু বুঝতে পারেনি দেখো।
তুমি কি এই জগতে ছিলে , অন্য কোন জগতে ছিলে ,কে জানে।'

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৩




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৩

উন্মত্ত খেলা

মমতা রায়চৌধুরী



আজ ছুটির দিন এইমাত্র সূর্য অস্ত গেল । পশ্চিম দিক জানলার সামনে দাঁড়িয়ে মনোজ সিগারেটের পর সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে আর সন্ধ্যারানীর লজ্জা বনত রক্তিম মায়াটুকু দেখার জন্য উৎসুক  । কিছুক্ষণ আগেও রেখা মনোজের পাশে ছিল রেখা আর আকাশের এই অস্থিয়মান সূর্য। দু'জনকেই   যেন অস্পষ্ট মনে হচ্ছে ।সমস্ত রং যেন আকাশের চোখ  থেকে মুছে যাচ্ছে। কেমন যেন একটা বিবর্ণ চেহারা এত আকাশের। তবুও অস্পষ্ট বেড়াজাল অতিক্রম করে মনোজের মনে স্মৃতির অ্যালবাম থেকে বেরিয়ে আসে কিছু অজানা তথ্য ।সেদিনও এভাবেই তারা দুজন পাশাপাশি বসেছিল । শুধু পাত্রী পাল্টে গেছে জায়গা পাল্টে গেছে, পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।সেদিন কারো  মুখে কোন কথা ছিল না। শুধু পরস্পরের সান্নিধ্য আর অন্ধকার রাত্রিতে তারার চাকচিক্য যেন মনে হচ্ছে রঙের খেলা চলছে আকাশের বুকে ।যখন এই রঙের খেলা চলে তখন তো অপূর্ব লাগে। তখন মনোজের হৃদয় আকাশে শুধু তিথি সবই ভালো লাগে।
মনোজের চোখ যখন তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে নিমিলেষ নেত্রে। তখনও মনোজ চোখের ভাষা বোঝেনি । তাছাড়া কখনো বুঝে উঠতে পারেও নি ।তিথি যেন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। কখনো মনে হতো সন্ধ্যারাতে ধূসর ছায়ার মতো, কখনো বা পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত উজ্জ্বল ,কখনো ভোরের শিশির এর উপর সূর্যের কিরণ পরলে ,যেরকম সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় ,সেরকম।  কখনো মনে হতো নদীর কালো জলের মতো ।আসলে তিথির গহন মনের হদিশ কোনদিনও পায় নি ।একতরফাই তিথিকে ভালোবেসেছিল জানে না । কিন্তু শেষ সময় তিথির আবেগ দেখে মনোজের কখনো মনে হয়নি একতরফাই ভালোবেসেছে মনোজ। তারপরে আর কখনো মনে হয়নি যদি তাই হতো তাহলে ইতিহাস হয়ে যেত না আজ তিথি ইতিহাস।তবে হয়তো  সেটা ছিল তার বয়সের দোষ ।এ কাঁচা বয়স তখন তার ভেতরের তারুণ্যের রক্ত টগবগ করে
 ফুটছে ।হয়তো সে জন্যেই তার উষ্ণতার পারদ চলেছে ।সেই কারণে হয়তো মনোজের সান্নিধ্য তার ভাল লেগেছে ।আজ দীর্ঘদিন পরে এসে  যখন আবার  সে ভালবাসার দাবি নিয়ে এসে হাজির হয় । মনোজ অস্বীকার করে ,এটাই তো স্বাভাবিক কারণ যখন তাকে চেয়েছিলো সে ,তখন তার ভালবাসাকে উপেক্ষা করে পাড়ি দিয়েছিল বিদেশে । মনোজ মনে মনে একটা ছোট্ট সুখের ভালোবাসার নীড় মনের কোনে অজান্তেই রচনা করেছিল। অথচ সেটা তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরমার করে দিয়ে চলে গেছে।।তবে কেনই বা আজকে হঠাৎ করে এই সময় আজ আবার তিথির কথা মনে পড়ছে । আজ তিথি তার কাছে অতীত  আর রেখা তার কাছে বর্তমান ।অতীত আর বর্তমানের মাঝে  দাঁড়িয়ে মনোজ ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে  ।ভবিষ্যত  অবশ্যই হওয়া উচিত রেখাকে নিয়ে। রেখাই তার জীবন সঙ্গিনী। রেখার মতো মেয়ে হয় না। উজ্জ্বল ঝকঝকে একটি মেয়ে। কত গুণ ওর। তারপরও মাঝে মাঝে রেখার প্রতি এমন আচরণ করে ফেলে যার জন্য রেখাও ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পেয়েছে। এসব কথা ভাবছে হঠাৎ করেই দোলা দিয়ে যায় তার কাঁচা বয়সের কিছু ভুল। কাঁচা বয়স কলেজে পড়া অবস্থায় সেই সময় মনের ভেতরে যেন একটা তীব্র তৃষ্ণা কাজ করত ।সবসময় মনেপ্রাণে চাই তো তিথিকে স্পর্শ করতে , তিথির সান্নিধ্য পেতে । নাকি তখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ জন্মায়, হয় তো সে তার জীবনে এসেছিল বলে শুধু তিথির প্রতিই তার মোহ জন্মেছিল। যাইহোক কি আর হবে সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া করে। তবুও মনে পড়েএকদিন  অযাচিতভাবে এসে গেছিল সেই মুহূর্ত। সে দিনটা ছিল এরকমই সন্ধ্যের সময় সূর্য অস্ত যায় যায় একটা দারুন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য তিথি
দের বাড়িতে। সেদিন আরও বন্ধুবান্ধবের আসার কথা ছিল। ওরা আস তে  অনেকটা দেরি করেছিল। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসে জানলাগুলোকে দড়াম দড়াম করে বাজনা বাজাচ্ছিল। তিথি  তখন গেছিল চা করতে আর আমি দাঁড়িয়েছিলাম জানলার কাছে জানালাটা বন্ধ করতে ভাল লাগল না। কেমন যেন একটা উন্মত্ততা কাজ করছিল নিজের ভেতরে, ওটাই যেন ভাল লাগছিল  বাইরের প্রকৃতির খেলা আর নিজের ভেতরের খেলাসেদিন যেন সব একাকার হয়ে যাবে মনে হয়েছিল ।ঠিক সেই সময় তিথি এসে চায়ের কাপটা নামিয়ে যখন বলল 
"কি করছো ?জানলাটাকে বন্ধ করো .।তবুও জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থেকেই তিথিকে দেখছিলাম দুচোখ ভরে কি শান্ত ,স্নিগ্ধ, রূপ যেন তিথির মধ্যে কত স্নেহ-মমতা দিয়েই না সৃষ্টি করেছেন বিশ্ব শিল্পী ।তিথি ছাড়া যেন তখন আর কাউকে অর্থাৎকোন নারী তার কাছে এত সুন্দর বলে মনে হয়নি ।দরজা বন্ধ। তিথি জানালা বন্ধ করতে গেছে ।তখন আমি বলেছিলাম "কি দরকার জানালাটা খোলা থাক না ।দেখছো ,না বাইরে কি সুন্দর ঝড় উঠেছে।"
  তিথি কিছুটা মনোজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল "ঝড় উঠেছে বলেই তো বন্ধ
 করছি । জানলা বন্ধ করতে যাবে ঠিক সেই সময়  তিথির হাত দুটো টেনে এনে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছিল । তিথিরও যেন কিছুটা মনে হচ্ছিল নিজেকে পিষে চূর্ণ-বিচূর্ণ  করে ফেলতে চায় মনোজের বুকে। তার সারা দেহ কেঁপে কেঁপে উঠছিল আর আমার ভেতরের  শিরাগুলো যেন বিদীর্ণ করে দিয়ে রক্তের স্রোত ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। বিপুল একটা মুহূর্ত যেন তখন কাজ করছিল। তিথির গায়ের গন্ধ তখন সর্বাঙ্গ ঝিমঝিম করে উঠেছিল । তিথির এত সুন্দর সৌন্দর্য প্রজাপতির ডানার মতো যেন
 যেন দুটি গাল ,গোলাপের পাপড়ির মত সুন্দর দুটো উষ্ণ ঠোঁট, চারুকন্ঠ ছিল অনেক নমনীয় যেন মনে হচ্ছিল রক্তকরবী। আর ছিল স্নিগ্ধতা এ ভরা দুটি বক্ষ। ভেতরে যে তখন কি উত্তেজনা কি সর্বনাশা সেই সুখ পরস্পর পরস্পরের কাছে আসা। হয়তো সেদিন বিপ্লব ঘটে যেত যদি না বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ টা আসতো 
 আজ নিজেকে অপরাধী মনে হয়। সে কথাগুলো রেখার কাছে অকপটে স্বীকার করতেও পারে না একদিন তাকে স্বীকার করতেই হবে নাহলে গ্লানি তাকে কুরে কুরে খাবে কিন্তু কি করে বলবে তার ভাষা কোথায় ?আজকে সেইসব ভাবছে বসে বসে। হঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ ঘটায় এসে রেখা ।
"এই নাও তোমার কফি নাও ।
কি এত ভাবছো বল তো ?জানলার কাছে দাঁড়িয়ে আর কতগুলো সিগারেট খাবে বলো তো ।"
মনোজ বলল" না না বেশি সিগারেট খাই নি ।"
রেখা বলল "কী বলবো ,।বলার তো কিছু নেই। যা ভালো বোঝো করো '।
ওমা দুজনের মধ্যে এই রকম একটু কথা চালাচালি হচ্ছে ।তার মধ্যে তুতু ঢুকে কিউ কিউ আওয়াজ করছে ।
কে জানে? কী হলোতোর ?আবার কি হয়েছে ?"

রেখা তুতুকে আদর করে বললো "শুয়ে পড়ো শুয়ে পড়ো।"
তুতু কি সুন্দর শুয়ে পড়ল।

মনোজের তখনও ঘোর কাটেনি আবার চলে গেছে স্মৃতির অ্যালবামে।
তিথি যখন মনোজকে বলছে "কেউ এসে গেছে সিঁড়িতে তখন হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
মনোজ বলল " আজ বড্ড অশান্ত আমি। তুমিও কি অশান্ত নও।,"
তিথি বলেছিল "আমি শীর্ণ নদীর জল ,শুধুমাত্র একটুখানি ভুলের মাটি ছুঁয়ে গেলাম।"
মনোজ জিজ্ঞেস করেছিল "তুমি কি তৃপ্ত? '
তিথি বলেছিল" তুমি তৃপ্ত নও?'
মনোজ বলেছিল, আজ তৃপ্ত-অতৃপ্ত বিরোধাভাস,'
তিথি বলেছিল তবুও?, এ যেন আশাতীতভাবে পেয়ে যাওয়া । "
যা চেয়ে নেয়া হয়নি, যা অর্জন করা হয়নি।
এত কৌতুহল উত্তেজনা আরও বেশি করে কাজ করে যতক্ষণ না পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়।

এ যে  অফুরন্ত সুখের আধার। হৃদয়ের অন্তস্থল উথলে ওঠে। তবুও আর একবার মনে হয়েছিল দুহাত বাড়িয়ে ওর লতায়মান দেহটিকে আমার সর্বাঙ্গ দিয়ে অনুভব করতে।

এ ভাবে খেলা যদি চলতে থাকতো আরো কিছুক্ষণ তাহলে সেদিন কি হতো সেটা ভগবান ই
জানতো। তিথি বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত তাড়াতাড়ি বাহুবন্ধনে ছাড়িয়ে একবার চারিদিক তাকিয়ে দেখে নিল। সব ঠিকঠাক আছে কিনা। তারপর গেল দরজা খুলতে। আর আমার ভেতরে যে উন্মত্ত লীলা চলেছিল সেটা থমকে গেল কিছুক্ষনের জন্য । তবে বাড়িতে ফিরে এসে রাত্রে শোবার ঘরে গিয়ে শরীরটা হঠাৎ করেই আবার যেন ঝিমঝিম করে উঠলো কেন এরকম হলো কিছুই জানি না  ।তখন সমস্ত রাত শুধু তিথিকে ঘিরে স্বপ্ন এঁকে গেছি। আর ভেবেছি আবার কি তার বুকে এরকম ঝড় উঠবে ?তারা কি আবার কখনো উন্মত্ত খেলায় মেতে উঠবে। এসব ভাবতে ভাবতে সারারাত শুধু তিথির শরীরের আতর মেখে এপাশ-ওপাশ করেছি।'
সেই আতরের গন্ধ আজও যেন নস্টালজিক হয়ে বারবার ফিরে আসে ,যেন সে এক অভূতপূর্ব অনির্বচনীয় সুখ।

২৩ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯২




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯২

ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো

মমতা রায় চৌধুরী


আজ প্রায় সারাটা দিন চলে গেল এই মেয়েদের প্রোগ্রামের লিস্ট করতে, মেয়েদের ফোন কল ওদিকে রাজ্যের কাজ পড়ে রয়েছে। মাসি আসলো না। রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বুকে চিনচিন করে উঠলো।
মাসি এলো  না । মাসি তো না বোলে কামাই করে না।  আগে সমিতা যা মিথ্যে কথা বলতো । সব সময় যেন মা সরস্বতীরকে মিথ্যে কথার ঝুলি তে বন্দি করে রেখেছিল। এই মাসি সে রকম তো নয়। বয়স হয়েছে।মাসির ভিতর  ফাঁকিবাজি কাজ করে না।তবুও ছেলেটা অসুস্থ আছে,নাতি নাতনী দের কথা মাথায় রেখে কাজে নেমেছে। আহা রে এদের আবার  অন্ধের কিবা রাতি কিবা দিন অবস্থার মত।
"না।আর ভাবলে হবে না। যাই জামা কাপড়গুলো শুকোয় নি ।এই বৃষ্টি আবার এই রোদ, ছাদে দিয়ে আসি। এখন তো এক চিলতে রোদ্দুর দেখা মিলেছে ।"
এই ভেবেই রেখা ছাদে গিয়ে উঠল জামা কাপড় নিয়ে ।ছাদের থেকে চোখ পড়ে গেল আবার সেই চৈতিদের বাড়ির দিকে ।
"আহা রে ছাদখানা কেমন খাঁ খাঁ 
করছে ।বাড়িটাও ঠিক তাই ।লোকজন না থাকলে যা হয় ।"
"ছাদ থেকেনেমে গিয়ে একবার চৈতির মাকে ফোন করতে হবে। কি করছে কে জানে?'
রেখা এসব ভাবতে ভাবতে জামা কাপড়গুলো ছাদে মিলিয়ে দিল ,ক্লিপ লাগিয়ে দিলো। এবার ছাদে কিছু ফুলগাছ করেছে ।দেখে নিল  ফুল গাছ গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা ।এখন যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, জল দেবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। গতবার নীলকন্ঠ ফুল যা হয়েছিল বাবা, দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায় ।কতজন যে কত নজর দিয়েছে তার ঠিক নেই।
রেখা ভাবছে "না ,আর একটা কাজ বাকি আছে কদিন ধরে লিখে উঠতে পারছে না, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী জন্য। একটা গল্প বা কবিতা দিতে হবে দুটো পত্রিকা থেকে আর্জি জানিয়েছেন সম্পাদক। এইজন্য তাড়াতাড়ি জামা কাপড়গুলো মিলিয়ে দিয়ে   সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে রেখা নেমে আসলো।l
ঘরের কিছু টুকরো-টাকরা কাজ করার পর দেখল মেঘ করেছে রেখা আবার ছাদে কেন জামা কাপড় গুলো নামিয়ে আনলো। শুকিয়েছে সেগুলো কে আলাদা জায়গায় রেখে বাকিগুলো কে একটু মিলিয়ে দিল। তারপর রেখা ড্রইং রুমের জানলা খুলে দিয়েছে হালকা করে একটু বৃষ্টির ছাঁট ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া তার চোখে মুখে এসে লাগল । মনের ভিতর কেমন একটা উদাসী হাওয়া  বুকের ভেতর হু হু করে বয়ে যেতে লাগলো। একটি সুন্দর প্রাকৃতিক মুহূর্তেই কত রকমের প্রশ্ন ভিড় করছে তার মনের ভেতর।
রেখা ঠিক করে নিয়েছে এখনি একটা রবি ঠাকুরের কবিতা লিখে ফেলবে যেমনি ভাবা অমনি কাজ । সত্যি সত্যি তার কল্পনা প্রবণ মন বাস্তবের মাটিতে
স্পর্শ করে। লিখে ফেলল একটি কবিতা। কবিতা লিখতে লিখতে দু-এক ফোঁটা করে বৃষ্টির ছাঁট রেখার চোখে মুখে এসে লাগলো।
এ যেন মনে পড়ে সেই গান 'আজ ঝর ঝর মুখর বাদল ও দিনে….।"
রবি ঠাকুরের বর্ষাকে নিয়ে যে কত কবিতা গান আছে,তার  ঠিক নেই ।আজ বর্ষাকাল না হলেওবৃষ্টিকে নিয়েই ইচ্ছে করছে কবিতা লিখতে। কবিতা লিখে তার নামকরণ করল "অপেক্ষার বৃষ্টি হয়ে এসো রবীন্দ্রনাথ"।
কবিতাটি লিখে নিজেই পাঠ করতে শুরু করল ।এদিকে বৃষ্টির জোর আরো বেড়ে গেল। রেখা জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে জলকে স্পর্শ করল। রেখার দোপাট্টা হয়ে গেল আলুথালু, চুলগুলো কিছুটা ভিজছে শরীর-মন বৃষ্টির পরশে মেতে উঠেছে। তখন মনে হচ্ছে সেই গুরুদেবের কবিতার লাইন না' আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর ।…..
না জানি কেন রে এতদিন পর জাগিয়া উঠেছে প্রাণ ,ওরে উথলি উঠেছে ,.. প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি.।"
রেখা বেশ কিছু টা  ভিজে গেল এদিকে জানলা দিয়ে জলের ঝাপটায় সেই ঘরেও কিছুটা জল প্রবেশ করল ।সেদিকে কোন খেয়ালই নেই । হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে..।আজকে মনে হচ্ছে রেখা পেখম তুলে ময়ূরের মতো নাচতে ।' 
কিছুটা ঝোড়ো হাওয়ায় গাছগুলো সব ওলট-পালট শুরু হয়েছে ।চৈতিদের বাড়ির নারকেল গাছ ,সুপারি গাছগুলো দুলছে আবার ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এই পরিবেশে স্বাভাবিকভাবেই মন প্রাণ আর বসে থাকতে চায়না। রেখার মনে হলো যে সে 40 পেরোচ্ছে কিন্তু তার মনের বয়স যেন পেরোয়নি সে যেন 18 বছরের তরুণী।
এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।  রিং হচ্ছে।কেটে গিয়ে আবার আবার ফোন বাজছে, সেদিকে রেখার কোনো হুঁশ ই নেই।
হঠাৎই আবার চিনচিন করে ব্যথা হচ্ছে থমকে যায় তার উড়াল পাখি। কি একটা প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করেছিল রেখা নিজের ভেতরে, হঠাৎ একটা যন্ত্রনা কুরে কুরে খাচ্ছে।মাঝে মাঝে হচ্ছে এই যন্ত্রণাটা। জানলাটার থেকে সরে এসে এবার বসল রেখা ।তখন আবার ফোনটা বেজে উঠলো। রেখা কোনক্রমে ফোনটা ধরল বলল 'হ্যালো।'
"হ্যাঁ আমি সুরঞ্জন বলছি মনোজ আছে?"
"কে সুরো দা ,বলছেন ?'
'হ্যাঁ ,রেখা আমি সুরোদা বলছি।
তোমার গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন?'
রেখা পুরো অস্বীকার করল" কই না তো এমনিই মনে হচ্ছে? ও তো অফিসে গেছে দাদা।"
"দেখো আমার মাথাটা গেছে আমি একদমই ভুলে গেছি। ঠিক আছে ও আসলে বলবে আমি ফোন করেছিলাম।"
"ঠিক আছে দাদা বলব।
বাড়ির সবাই ভালো আছে তো দাদা?''
ততক্ষণে সুরো ফোন কেটে দিয়েছে।
রেখা মনে মনে ভাবল আজকে সুরোদাকেএকটু অন্য রকম লাগলো ,বেশ চিন্তিত মনে হল।কিছু কি হয়েছে?
এদিকে আমার যন্ত্রণা টাও কেমন যেন আরও বাড়ছে । কিসের থেকে
 হচ্ছে ? না একটা গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিই।'রেখা ভাবল "রিপোর্টগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ।ডাক্তারবাবু তো আসবেন নাম ক 'সপ্তাহ বলেছেন।"
যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে দেখে তুতু এসে পায়ের কাছে বসল ,মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ।তারপর কেমন একটা অস্থিরতা ওর ভেতরে লক্ষ্য করা গেল ।রেখা নিজের যন্ত্রণার কথা ভুলে যাচ্ছে তুতুকে দেখে ।একটা অবলা জীব তার কত অনুভূতি ।আমার কষ্ট দেখে ওর ভেতরেও কেমন কষ্ট হচ্ছে সত্যিই যারা এদেরকে ভালোবাসে তারাই একমাত্র বুঝতে পারবে ওদের অনুভূতিগুলো ,ওদেরও ভাষা 
আছে ,ওদেরও সমানুভূতি আছে ।শুধু একটু বোঝার অপেক্ষা ।ওদেরকে একটু বুঝে ভালোবেসে কাছে ডাকলে সমস্ত কিছু অনুভব করা যায় ।মানুষের থেকে অনেক বোঝে এরা ,শুধু মানুষের ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না।এবার কিউ  কিউ আওয়াজ করছে। একবার ছুটে  ছুটে দরজার কাছে যাচ্ছে ,একবার রেখার কাছে আসছে । রেখা ভাবলো না যন্ত্রণাতে এইভাবে কাতরানো যাবে 
না ।নিজের কষ্ট হলেও ওকে বুঝতে দিলে হবে না । রেখা এবার হাসিমুখে তুতুকে ডাকছে।' কি হয়েছে মা তোমার ?তুমি এমন করছ কেন ?তুটু এসে রেখার গাল চাটতে শুরু করলো এবং দুই হাত দিয়ে রেখার কোলে মাথা রাখলো ।কি অসাধারন অনুভুতি ।ট্রেনিং দেয়া হয়নি 
 অথচ এমন সব কাণ্ড করে যেন মনে হবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত  এরপর কেমন একটু শান্ত হলো এবার ওকে দেখে রেখার ও যন্ত্রণা যেন মনে হল একটু উপশম হল ।রেখা একটু ওই অবস্থাতেই সোফাতে শুয়ে পড়ল । তুতু ওর বুকের ওপর।
বেশ কিছুক্ষণ  চোখটা লেগে এসেছিল যখন ঘুম ভাঙলো  দেখলো বেশ বেলা হয়ে গেছে ।খাবার খাওয়া হয়নি বাচ্চাগুলোকে।খেতে দিতে 
হবে ।তুতুকে এবার।আস্তে আস্তে সরিয়ে দিয়ে রেখা ভালো করে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে গেল রান্নাঘরে ওদেরকে খাবার খাওয়াবে বলে খাবার রেডি 
করতে ।বাইরে পাইলট বসে 
আছে ।আজকে কোন সাড়াশব্দ 
নেই ।শুধু বসে আছে ।দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই কেমন একটা কৌতুহল ওদের ভেতরে । রেখা খাবার দিল আর গায়ে হাত বুলাতে লাগল। খাওয়ার শেষে দরজা বন্ধ করতে যাবে ঠিক তখনই পার্থ এসে বলল 
"বৌদি ।"
রেখা পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলল "একি তুমি এই সময়?,"
'দাদা তো অফিসে গেছে না?'
'', হ্যাঁ"
"দাদা ফিরলে অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবে বা ফোন করতে ব"লো।"
"কেন কী হয়েছে গো? এত জরুরি তলব।"
"আরে চৈতির বাবার অবস্থাটা ভালো নয় বৌদি ফোন করেছিল।"
"আমরা কি করব বল তো পার্থ? সত্যি কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কি করার আছে। ওদের কেই ডিসিশন তো ওদের নিতে হবে ।কী করবে, না করবে ?মেয়ে জামাই আছে।"
"চিন্তার ব্যাপার। বৌদি একটা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বৌদিকে দেখবে চেহারাটা এই কদিনের মধ্যে কি হয়েছে?"
এ তো স্বাভাবিক। সমস্ত চিন্তাভাবনা এখন বৌদির কাঁধে।এত বড় একটা  সংসার রয়েছে। সংসার টা চলবে কি করে? সে একটা বড় চিন্তা । মেয়েটার  বাচ্চা হবে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতেও তো সেরকম  শুনেছি ভালো নয়। মাঝে তো খুব অশান্তি হয়েছিল। হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।"
"হ্যাঁ এবার আমরা কি করব সেটাও ভাবছি।"
"দাদার গসারি দোকানটাই এখন বৌদিকে কোনরকম চালাতে হবে আর কি করা যাবে ।।সেরকম হলে আমরা পাড়া-প্রতিবেশীরা একটু সাহায্য
 করবো। এই ছাড়া তো আর কিছু করার উপায় নেই।"
"বউদি বলছিল পুঁজিগুলো সব ভেঙ্গে দাদার চিকিৎসা হচ্ছে।
এদিকে আরো বলছিল যে কিছু ধার করে ফেলেছে।"
আমাকে চাবিটা দিয়েছে জানো তো বৌদি বলেছে ঘরদোরগুলো একটু দেখতে গিয়ে।"
"যাবে একটু দেখে আসবে।
সবাই মিলে সহযোগিতা না করলে তো হবে না পার্থ।'
ফোন করবো ভেবেছি তার মধ্যে আমার পেটে এত ব্যথা শুরু হলো না ,দিয়ে আমি মানে ওই গ্যাসের ওষুধ খেলাম তারপর একটু শুয়েছিলাম শুয়ে ওদের খেতে দিতেও দেখছো না দেরি হয়ে গেছে  এবার নীচে গিয়ে একটু ফোন করবো বৌদিকে।'
'হ্যাঁ ,তুমি একবার ফোন ক'রো মনে একটু জোর পাবে।"
"পার্থ বিপদের মধ্যে ,দুঃখের মধ্যে আমরা যদি একটু সাহায্য করতে পারি, তার পাশে থাকতে পারি থেকে আর বড় কিছু নেই ।বিপদেই তো মানুষকে চেনা যায়।"
'"একদমই ঠিক বৌদি।"
আশেপাশে তো আরও লোকজন আছে কেউ খোঁজ খবর নিচ্ছে!"
"ওদিকে তাকিয়ে লাভ নেই পার্থ পৃথিবীতে সব মানুষ সমান হয় না ।কাজ করছ তোমার কর্ম তুমি করে যাও ফল তুমি নিশ্চয়ই পাবে।  আমরা করি না কেউ হলো না তো কি হয়েছে সবার দলে আমাদের ফেললে হবে না বুঝেছ?"
"বুঝলাম ঠিক আছে বৌদি ।আসছি ,মা ওদিকে চিন্তা করবে।"
"ঘরের কাজ আছে, মাসি আসছে না। এইভেদরজা বন্ধ করবে তখনই তুতু আগে আগে ঘরে ঢুকলো।
রেখা বাসন টা রেখে ভাল করে হাত ধুয়ে নিজের খাবারটা নিয়ে বসলো।
ফোন বাজছে রেখা ফোনটা এসে  দেখলো যে বেশ কয়েকবার ফোন বেজেছে । নম্বর টা চেক করে দেখলো না এটা বড়দি ফোন করেছেন।
রেখা রিং ব্যাক করল।
ওদিক থেকে ফোনটা রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে রেখা বলল " বড়দি বলুন।"
রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর সমস্ত অ্যারেঞ্জ করে ফেলেছ রেখা ,না পারো নি ।আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছে।"
" হ্যাঁ দিদি ,কোন টেনশান নেবেন না আমার অ্যারেঞ্জ করা হয়ে গেছে। শুধু পঞ্চমীদিকে বলে রাখা একটু আগের দিন আমি সেটা করবো রাত্রে বেলায় ফোন করবো টেবিল ক্লথ ঠাকুরের ছবি মালা ধুপ এগুলো যেন সব রেডি করে রাখে।
ঠিক আছে টেনশন মুক্ত করলে ,।আমি কেন যে টেনশন করি ?জানি না। জানি তোমার ওপর দায়িত্ব দিলে হবে ।তা হলেও এখন ফোনে পেলে কিনা সে জন্যেই ।ঠিক আছে আমি পঞ্চমীকে বলে দেবো তোমাকে ফোন করতে হবে
 না ।আর কি প্রোগ্রাম টা কখন করছো?স্কুল আওয়ার্স তো?"
" হ্যাঁ দিদি"।
"'বেস্ট অফ লাক।'
ভালো থেকো তুমি।'-বলেই বড়দি
ফোনটা কেটে দিলেন।
রেখা গান ধরল "মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো..।'

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯১





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৯১

হঠাৎই খারাপ খবর

মমতা রায়চৌধুরী


১২.৫.২২ আর ফ্রেশ করে লেখা হল১৩.৫.২২ রাত্রি ৮.১০
গতকাল অনেক রাত হয়ে গেছিল তাই মেয়েদের কে ফোন করে উঠতে পারেনি আজকের দিনটাই সময় পাওয়া যাবে এর মধ্যে ফোন না করলে অ্যারেঞ্জ করা মুশকিল হয়ে যাবে তাই শেভ করার নম্বর থেকে ফোন করলে প্রথমে সোহিনীর নম্বর ডায়াল করলো, রিং হচ্ছে ফোন ধরছে না তখন রেখা মনে মনে ভাবছে সোহিনীকে যদিও বলা ছিল রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে যেন নাচ রেডি করে রাখে ।তাই ওকে নিয়ে অতটা চাপ নেই কিন্তু বলে তো দিতে হবে যে প্রোগ্রামটা হচ্ছে ।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসলো হ্যালো'
হ্যাঁ আমি ম্যাম বলছি।
 হ্যাঁ বলুন দিদি ।
"সোহিনী কে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী প্রোগ্রাম করতে হবে ।জানি ও মোটামুটি রেডি থাকে ।"
"হ্যাঁ রেডি আছে  ।"
 "কোনটা করবে সেটা কি আপনাকে পাঠাবো হোয়াটসঅ্যাপে ।"
"টেক্সট করে রাখুন, আমি পরে দেখে নেব ।ঠিক আছে তাহলে পরশুদিন প্রোগ্রাম অবশ্যই , ও যেন অবশ্যই আসে।'
"এইতো আপনার ছাত্রী কাছেই আছে কথা বলুন।"
সোহিনী তোমার মাকে যা বলার বলে দিয়েছি সেইভাবে রেডি হয়েও আর তোমার কাছে কি রাজশ্রী ফোন নম্বর আছে?থাকলে একটু ফোন করতে বলো। ঠিক আছে রাখছি। "
Ok ম্যাম।
এরপর দেবাংশীর নম্বর ডায়াল করলো।ওকে নিয়েও চাপ নেই। ও নাচে ভালো।
এরপর সোমিয়া কে ফোন করল ।আবৃত্তিও
নাচ দুটোই ভালো করে।
সোমিয়াকে ফোনে পাওয়া গেল না।
এর মধ্যেই তুতু এসে কিউ কিউ আওয়াজ শুরু করেছে। "হল কি তুতু? আমি একটা ইমপর্ট্যান্ট কাজ করছি না?"
মুখের দিকে তাকিয়ে রইল হেসে ফেলে বলল" কি হয়েছে বল ?খাবার খেয়েছো তো ।এখন কি চাই?
বাইরে যাবে চলো দরজা খুলে দিচ্ছি।"
ফোনটা রেখে দরজাটা খুলে দিল ,ছুট্টে বাইরে চলে গেল ।তখনই বুঝতে পারল ওর জোরে পটি পেয়েছে বা হিসু পেয়েছে। এবার রেখা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে আবার ফোন করতে বসলো এবার ফোন করলো রাজশ্রী কে ।রাজশ্রী কে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করল কিন্তু না গলা শুনে মনে হচ্ছে রাজশ্রী নয় ওর মা মনে হচ্ছে। 
"হ্যালো।"
"স্কুলথেকে বলছি।"
"ও ম্যাম বলুন।'
"কেমন আছে আপনার বাচ্চারা।"
"আর বলবেন না। আজকে তো একজন সকাল থেকে পাতলা পটি করছে।,"
"ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।"
"না ফোনে পাইনি। তবে জানি তো কি ওষুধ খাওয়াতে হবে । খাইয়ে দিয়েছি।"
"আপনার বাচ্চারা কেমন আছে?"
"এখনো তো ভালোই আছে।"
"ওরা তো বলতে পারেনা তাই কিছু হলে খুব খারাপ লাগে।"
"একদমই তাই।"
আচ্ছা দেখি যে জন্য ফোন করেছি রাজশ্রী কে আগামীকাল আসতে হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী 
আছে ।আমি জানি ও সব সময় তৈরী ই থাকে।"
"তা ঠিক ।ও মোটামুটি রেডি থাকে।"
"দিদি একটু রাজশ্রীকে ফোনটা দিন তো অনেকদিন ওর গলা শুনি নি।"
রাজশ্রীর মা তখনই গলা হাঁকিয়ে  ডাকলো রাজু ,রাজু তোমার ম্যাম তোমার সাথে কথা 
বলবেন । ম্যাম, দাও, দাও ,দাও আমাকে ফোনটা দাও।"
"হ্যাঁ ম্যাম বলুন। ভালো আছেন আপনি?"
"হ্যাঁ ভালো আছি । শোন তোকে আগামীকাল কবিতা আবৃত্তি করতে হবে।'
"হ্যাঁ ঠিক আছে ।অসুবিধা হবে না ।ম্যাম আমি যদি দুটো কবিতা আবৃত্তি করি ।"
রেখা হেসে বলল "দুটোই করবে । কোন অসুবিধা নেই।"
"ঠিক আছে, তাহলে ওই কথাই থাকলো 
কেমন ?ভালো থেকো।'
এবার মিত্রা আর স্নিগ্ধাকে ফোন 
করলো ।স্নিগ্ধাকে ফোন করার পর একবার রিং হয়ে গেল ধরল না। তারপর আবার ফোনটা 
ধরল ।রেখা খুব খুশি হল বলল স্নিগ্ধা রবীন্দ্র সংগীত তোমার কন্ঠে না শুনলে আমাদের একদমই ভালো লাগে না ।রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীতে কিন্তু তুমি রেডি হয়ে আসবে।
প্রত্যেকে 11 টার মধ্যে চলে আসবে স্কুলে।।
তুমি মিত্রাকে ফোন করে বলে দিও "ও কিসে নাম দেবে, গানে ,না আবৃত্তিতে। আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবে।"
Ok ম্যাম।
"প্রত্যেকে এগারোটার মধ্যে স্কুলে ঢুকে যাবে। এখন স্কুল ছুটি তাতে কী হয়েছে স্কুলে আসবে।"
"Ok ম্যাম "
ফোনটা রেখে রেখা বললো" ওহ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারা হল।"
রেখা ভাবছে বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। যাক ভালোই হলো কিন্তু কই আবার বৃষ্টি শুরু হল । রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল" সাড়ে নটা বাজে ।মনোজ কি আজ অফিসে যাবে না? ওর তাড়া দেখছি না তো।"
এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠলো' হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ ,হরে হরে ।হরে রাম ,হরে রাম হরে রাম ।রাম রাম হরে হরে ।"
রেখা দরজাটা খুলতেই  দেখল মনোজ কোথা থেকে  যেন হন্তদন্ত হয়ে ফিরেছে।
তারপর বললো" খাবার রেডি করেছো ?'
বলেই বাথরুমে ঢুকল।
রেখা বলল"কখন থেকে রেডি করা আছে।তুমি দেরী করছিলে  বলে ভাবছিলাম ,কি হলো?"
 তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল "একটা আর্জেন্ট কাজে গেছিলাম পরে বলব। কি বানিয়েছো এখন দাও তো তাড়াতাড়ি ।ট্রেনটা বোধহয় মিস করে যাব।" ""হ্যাঁ, তুমি বসো এক্ষুনি দিচ্ছি।"
"আজ কি বানিয়েছো ?"
"একটু চিকেন ছিল তাই দিয়ে চিকেন রেজালা করেছি আর রুটি।"
"বাহ দারুন ব্যাপার তো। কোথায় কব্জি ডুবিয়ে খাব তা না ,এখনি আমাকে ছুটতে হবে ',।
"আর দুপুরের কি মেনু করেছো?"
*কেন তুমি নিয়ে যাবে নাকি?*
"না ,না জানতে ইচ্ছে করছে।"
"তেল কই, লাউ চিংড়ি,  উচ্ছে ভাজা, আর আমের চাটনি।"
"দুপুরেরটাও তো বেশি লোভনীয় গো?'
রেখা বলল *একটু ওয়েট করো আমি তোমাকে প্যাক করে দিচ্ছি । ওখানে খেয়ে নেবে।"
"না, না। হবে না ,লেট হয়ে যাবে।"
"আরে বাবা তুমি প্যান্ট-শার্ট পরবে তো নাকি,
ততক্ষন তো আমি দিয়ে দিতে পারব ।তুমি থামো ,দেখ ,আমি  পারি কিনা?"
মনোজ উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে " বলল "তুমি আজকে স্কুলে যাবে না তো?"
"না, না। আবার কালকে যাব।"
টাই বাঁধতে বাঁধতে মনোজ বলল কালকে কেন?'*
"কেন আবার কি ?কালকে রবীন্দ্রজয়ন্তী না?"
মনোজ একটু জি ভ কেটে  বললো "ও বাবা, যেতে তো হবেই।"
"আমার ঘড়িটা কোথায় রেখেছো।'
"দেখো ড্রয়ারে আছে।"রেখাএঁটো বাসন তুলতে তুলতে বলল 
"কোথায় যে রাখো না?"মনোজ একটু বিরক্তির স্বরে বলল।
"দাঁড়াও যাছি।টিফিন ক্যারিব্যাগটা হাতে করে নিয়ে গেল তারপর খুঁজতে শুরু করলো। একবার দেখেই ধরতে পেরে গেল বদমাইশি বুদ্ধি।
 " এই তো ঘড়ি আর তুমি যে বলছিলে ,পাচ্ছি না।"
মনোজ রেখাকে হাতটা ধরে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল "পাচ্ছিলাম না তো আমি।এইতো এখন পেলাম।'
রেখা ভাবল মনোজকে সেই আবার পুরনো ফর্মে দেখতে পাচ্ছে তারপর বলল"মহাশয় এখন তোমার সময় নষ্ট হচ্ছে না ?ট্রেন মিস করবে না?"
মনোজ রেখার কপালে একটা মিষ্টি উষ্ণ চুম্বন এঁকে দিল আর বলল" এবার সারাটা দিন আমার ভালো যাবে দেখো ,বেরোছি। ভালো থেকো।"
"মনোজের এসব কথায় রেখার রক্তের ভেতর কেমন নাচন ধরে । 40 পেরোব পেরোব করছে
  সামনের মাসেই ।40 পেরোনো নারীর নাকি  সবকিছুই ধুয়ে মুছে যেতে শুরু করে জীবনটা নাকি ফিকে হয়ে যায় কিন্তু কেন এখনো এরকম কথা নেশার মত লাগে ।রেখাকে মনোজ টা টা করে চলে গেল ।রেখা তাকিয়ে রইল সত্যিই তো জীবনে কে কটা দিন বাঁচবে ?কেনই বা এত ঝগড়া ?কেনই বা এত অভিমান? থাক না ওসব দূরে সরিয়ে,নিজেদেরকে যদি নতুন করে আত্ম  অনুসন্ধান চালায় তাহলে তো একটু ভালো থাকা যায় ।রেখা আপন মনে হেসে উঠল। তুতুটা ফ্যাল ফ্যাল করে  রেখার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রেখা বলল" ওরে দুষ্টু তুমি এতক্ষণ এইসব দেখছিলে বলেই তুতুকে কাছে টেনে নেয় একেবারে বুকের কাছে যেন দ্রুত রেখার একটা ছোট্ট বাচ্চা সত্যিই তাই ও হয়তো মানুষের বাচ্চা নয় কিন্তু রেখা এক্ষেত্রে সেভাবে দেখেনা তুতু না থাকলে জীবনটা তার কাছে তেতো হয়ে যাবে ,ভাবতেই পারে না। নুন ছাড়া ভাত যেমন লাগে ঠিক এরা না থাকলেও রেখার জীবনটা  বিস্বাদ মনে হবে।
রেখা দেখল  মাসি আজও আসলো ।না কি হলো মাসির কে জানে,,? আজকে মনোজ ফিরলে বাড়িতে একটা খবর লাগাতে হবে,। চৈতির মা বাড়ি থাকলে এ ব্যাপারে অবশ্যই হেল্প করত নিজে গিয়ে আসত ঠিকানাটা আমার কথা ভেবে ভেবে।l রেখা ভাবলো বয়স হয়েছে তো ,নাকি ছেলেটার শরীর খারাপ হলো ।যেন খারাপ কিছু নয় ভালো থাকে ।এ কথা ভেবে রেখা ভাবলো পরে আছে বাসনগুলো ।বাসনগুলো এবার মেজে  ধুয়ে পরিস্কার করবে ঠিক সেইসময় রেখার ফোন বেজে উঠলো দিবসও রজনী আমি যেন কার আশায় আশায়…। রেখা বললো আর কারোর আশা করতে হবে না ।আমি যাচ্ছি ফোনটা রিসিভ করে বলল '"
" হ্যাঁ হ্যালো কে ?"
আমি শুভ্রা বলছি রেখা দি ।'
"হ্যাঁ বল বলছি।
" অনিন্দিতার কিছু খবর শুনেছো ?"
অনিন্দিতার !না আমি কি করে জানব কেউ তো কিছু বলেনি 
" বলছি ও তো ব্যাঙ্গালোরে আছে ।কেন কি হয়েছে ?
ওর নাকি বায়োপ্সি রিপোর্টএকটা খারাপ বেরিয়েছে।
 "সে কি কথা! ভগবান সবকিছু ঠিক করে দেবেন। তারপর ব্স্কটব্রাইটে সাবান লাগিয়ে বাসন মাজতে থাকে।