২৩ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯১





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৯১

হঠাৎই খারাপ খবর

মমতা রায়চৌধুরী


১২.৫.২২ আর ফ্রেশ করে লেখা হল১৩.৫.২২ রাত্রি ৮.১০
গতকাল অনেক রাত হয়ে গেছিল তাই মেয়েদের কে ফোন করে উঠতে পারেনি আজকের দিনটাই সময় পাওয়া যাবে এর মধ্যে ফোন না করলে অ্যারেঞ্জ করা মুশকিল হয়ে যাবে তাই শেভ করার নম্বর থেকে ফোন করলে প্রথমে সোহিনীর নম্বর ডায়াল করলো, রিং হচ্ছে ফোন ধরছে না তখন রেখা মনে মনে ভাবছে সোহিনীকে যদিও বলা ছিল রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে যেন নাচ রেডি করে রাখে ।তাই ওকে নিয়ে অতটা চাপ নেই কিন্তু বলে তো দিতে হবে যে প্রোগ্রামটা হচ্ছে ।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসলো হ্যালো'
হ্যাঁ আমি ম্যাম বলছি।
 হ্যাঁ বলুন দিদি ।
"সোহিনী কে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী প্রোগ্রাম করতে হবে ।জানি ও মোটামুটি রেডি থাকে ।"
"হ্যাঁ রেডি আছে  ।"
 "কোনটা করবে সেটা কি আপনাকে পাঠাবো হোয়াটসঅ্যাপে ।"
"টেক্সট করে রাখুন, আমি পরে দেখে নেব ।ঠিক আছে তাহলে পরশুদিন প্রোগ্রাম অবশ্যই , ও যেন অবশ্যই আসে।'
"এইতো আপনার ছাত্রী কাছেই আছে কথা বলুন।"
সোহিনী তোমার মাকে যা বলার বলে দিয়েছি সেইভাবে রেডি হয়েও আর তোমার কাছে কি রাজশ্রী ফোন নম্বর আছে?থাকলে একটু ফোন করতে বলো। ঠিক আছে রাখছি। "
Ok ম্যাম।
এরপর দেবাংশীর নম্বর ডায়াল করলো।ওকে নিয়েও চাপ নেই। ও নাচে ভালো।
এরপর সোমিয়া কে ফোন করল ।আবৃত্তিও
নাচ দুটোই ভালো করে।
সোমিয়াকে ফোনে পাওয়া গেল না।
এর মধ্যেই তুতু এসে কিউ কিউ আওয়াজ শুরু করেছে। "হল কি তুতু? আমি একটা ইমপর্ট্যান্ট কাজ করছি না?"
মুখের দিকে তাকিয়ে রইল হেসে ফেলে বলল" কি হয়েছে বল ?খাবার খেয়েছো তো ।এখন কি চাই?
বাইরে যাবে চলো দরজা খুলে দিচ্ছি।"
ফোনটা রেখে দরজাটা খুলে দিল ,ছুট্টে বাইরে চলে গেল ।তখনই বুঝতে পারল ওর জোরে পটি পেয়েছে বা হিসু পেয়েছে। এবার রেখা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে আবার ফোন করতে বসলো এবার ফোন করলো রাজশ্রী কে ।রাজশ্রী কে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করল কিন্তু না গলা শুনে মনে হচ্ছে রাজশ্রী নয় ওর মা মনে হচ্ছে। 
"হ্যালো।"
"স্কুলথেকে বলছি।"
"ও ম্যাম বলুন।'
"কেমন আছে আপনার বাচ্চারা।"
"আর বলবেন না। আজকে তো একজন সকাল থেকে পাতলা পটি করছে।,"
"ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।"
"না ফোনে পাইনি। তবে জানি তো কি ওষুধ খাওয়াতে হবে । খাইয়ে দিয়েছি।"
"আপনার বাচ্চারা কেমন আছে?"
"এখনো তো ভালোই আছে।"
"ওরা তো বলতে পারেনা তাই কিছু হলে খুব খারাপ লাগে।"
"একদমই তাই।"
আচ্ছা দেখি যে জন্য ফোন করেছি রাজশ্রী কে আগামীকাল আসতে হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী 
আছে ।আমি জানি ও সব সময় তৈরী ই থাকে।"
"তা ঠিক ।ও মোটামুটি রেডি থাকে।"
"দিদি একটু রাজশ্রীকে ফোনটা দিন তো অনেকদিন ওর গলা শুনি নি।"
রাজশ্রীর মা তখনই গলা হাঁকিয়ে  ডাকলো রাজু ,রাজু তোমার ম্যাম তোমার সাথে কথা 
বলবেন । ম্যাম, দাও, দাও ,দাও আমাকে ফোনটা দাও।"
"হ্যাঁ ম্যাম বলুন। ভালো আছেন আপনি?"
"হ্যাঁ ভালো আছি । শোন তোকে আগামীকাল কবিতা আবৃত্তি করতে হবে।'
"হ্যাঁ ঠিক আছে ।অসুবিধা হবে না ।ম্যাম আমি যদি দুটো কবিতা আবৃত্তি করি ।"
রেখা হেসে বলল "দুটোই করবে । কোন অসুবিধা নেই।"
"ঠিক আছে, তাহলে ওই কথাই থাকলো 
কেমন ?ভালো থেকো।'
এবার মিত্রা আর স্নিগ্ধাকে ফোন 
করলো ।স্নিগ্ধাকে ফোন করার পর একবার রিং হয়ে গেল ধরল না। তারপর আবার ফোনটা 
ধরল ।রেখা খুব খুশি হল বলল স্নিগ্ধা রবীন্দ্র সংগীত তোমার কন্ঠে না শুনলে আমাদের একদমই ভালো লাগে না ।রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীতে কিন্তু তুমি রেডি হয়ে আসবে।
প্রত্যেকে 11 টার মধ্যে চলে আসবে স্কুলে।।
তুমি মিত্রাকে ফোন করে বলে দিও "ও কিসে নাম দেবে, গানে ,না আবৃত্তিতে। আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবে।"
Ok ম্যাম।
"প্রত্যেকে এগারোটার মধ্যে স্কুলে ঢুকে যাবে। এখন স্কুল ছুটি তাতে কী হয়েছে স্কুলে আসবে।"
"Ok ম্যাম "
ফোনটা রেখে রেখা বললো" ওহ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারা হল।"
রেখা ভাবছে বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। যাক ভালোই হলো কিন্তু কই আবার বৃষ্টি শুরু হল । রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল" সাড়ে নটা বাজে ।মনোজ কি আজ অফিসে যাবে না? ওর তাড়া দেখছি না তো।"
এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠলো' হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ ,হরে হরে ।হরে রাম ,হরে রাম হরে রাম ।রাম রাম হরে হরে ।"
রেখা দরজাটা খুলতেই  দেখল মনোজ কোথা থেকে  যেন হন্তদন্ত হয়ে ফিরেছে।
তারপর বললো" খাবার রেডি করেছো ?'
বলেই বাথরুমে ঢুকল।
রেখা বলল"কখন থেকে রেডি করা আছে।তুমি দেরী করছিলে  বলে ভাবছিলাম ,কি হলো?"
 তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল "একটা আর্জেন্ট কাজে গেছিলাম পরে বলব। কি বানিয়েছো এখন দাও তো তাড়াতাড়ি ।ট্রেনটা বোধহয় মিস করে যাব।" ""হ্যাঁ, তুমি বসো এক্ষুনি দিচ্ছি।"
"আজ কি বানিয়েছো ?"
"একটু চিকেন ছিল তাই দিয়ে চিকেন রেজালা করেছি আর রুটি।"
"বাহ দারুন ব্যাপার তো। কোথায় কব্জি ডুবিয়ে খাব তা না ,এখনি আমাকে ছুটতে হবে ',।
"আর দুপুরের কি মেনু করেছো?"
*কেন তুমি নিয়ে যাবে নাকি?*
"না ,না জানতে ইচ্ছে করছে।"
"তেল কই, লাউ চিংড়ি,  উচ্ছে ভাজা, আর আমের চাটনি।"
"দুপুরেরটাও তো বেশি লোভনীয় গো?'
রেখা বলল *একটু ওয়েট করো আমি তোমাকে প্যাক করে দিচ্ছি । ওখানে খেয়ে নেবে।"
"না, না। হবে না ,লেট হয়ে যাবে।"
"আরে বাবা তুমি প্যান্ট-শার্ট পরবে তো নাকি,
ততক্ষন তো আমি দিয়ে দিতে পারব ।তুমি থামো ,দেখ ,আমি  পারি কিনা?"
মনোজ উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে " বলল "তুমি আজকে স্কুলে যাবে না তো?"
"না, না। আবার কালকে যাব।"
টাই বাঁধতে বাঁধতে মনোজ বলল কালকে কেন?'*
"কেন আবার কি ?কালকে রবীন্দ্রজয়ন্তী না?"
মনোজ একটু জি ভ কেটে  বললো "ও বাবা, যেতে তো হবেই।"
"আমার ঘড়িটা কোথায় রেখেছো।'
"দেখো ড্রয়ারে আছে।"রেখাএঁটো বাসন তুলতে তুলতে বলল 
"কোথায় যে রাখো না?"মনোজ একটু বিরক্তির স্বরে বলল।
"দাঁড়াও যাছি।টিফিন ক্যারিব্যাগটা হাতে করে নিয়ে গেল তারপর খুঁজতে শুরু করলো। একবার দেখেই ধরতে পেরে গেল বদমাইশি বুদ্ধি।
 " এই তো ঘড়ি আর তুমি যে বলছিলে ,পাচ্ছি না।"
মনোজ রেখাকে হাতটা ধরে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল "পাচ্ছিলাম না তো আমি।এইতো এখন পেলাম।'
রেখা ভাবল মনোজকে সেই আবার পুরনো ফর্মে দেখতে পাচ্ছে তারপর বলল"মহাশয় এখন তোমার সময় নষ্ট হচ্ছে না ?ট্রেন মিস করবে না?"
মনোজ রেখার কপালে একটা মিষ্টি উষ্ণ চুম্বন এঁকে দিল আর বলল" এবার সারাটা দিন আমার ভালো যাবে দেখো ,বেরোছি। ভালো থেকো।"
"মনোজের এসব কথায় রেখার রক্তের ভেতর কেমন নাচন ধরে । 40 পেরোব পেরোব করছে
  সামনের মাসেই ।40 পেরোনো নারীর নাকি  সবকিছুই ধুয়ে মুছে যেতে শুরু করে জীবনটা নাকি ফিকে হয়ে যায় কিন্তু কেন এখনো এরকম কথা নেশার মত লাগে ।রেখাকে মনোজ টা টা করে চলে গেল ।রেখা তাকিয়ে রইল সত্যিই তো জীবনে কে কটা দিন বাঁচবে ?কেনই বা এত ঝগড়া ?কেনই বা এত অভিমান? থাক না ওসব দূরে সরিয়ে,নিজেদেরকে যদি নতুন করে আত্ম  অনুসন্ধান চালায় তাহলে তো একটু ভালো থাকা যায় ।রেখা আপন মনে হেসে উঠল। তুতুটা ফ্যাল ফ্যাল করে  রেখার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রেখা বলল" ওরে দুষ্টু তুমি এতক্ষণ এইসব দেখছিলে বলেই তুতুকে কাছে টেনে নেয় একেবারে বুকের কাছে যেন দ্রুত রেখার একটা ছোট্ট বাচ্চা সত্যিই তাই ও হয়তো মানুষের বাচ্চা নয় কিন্তু রেখা এক্ষেত্রে সেভাবে দেখেনা তুতু না থাকলে জীবনটা তার কাছে তেতো হয়ে যাবে ,ভাবতেই পারে না। নুন ছাড়া ভাত যেমন লাগে ঠিক এরা না থাকলেও রেখার জীবনটা  বিস্বাদ মনে হবে।
রেখা দেখল  মাসি আজও আসলো ।না কি হলো মাসির কে জানে,,? আজকে মনোজ ফিরলে বাড়িতে একটা খবর লাগাতে হবে,। চৈতির মা বাড়ি থাকলে এ ব্যাপারে অবশ্যই হেল্প করত নিজে গিয়ে আসত ঠিকানাটা আমার কথা ভেবে ভেবে।l রেখা ভাবলো বয়স হয়েছে তো ,নাকি ছেলেটার শরীর খারাপ হলো ।যেন খারাপ কিছু নয় ভালো থাকে ।এ কথা ভেবে রেখা ভাবলো পরে আছে বাসনগুলো ।বাসনগুলো এবার মেজে  ধুয়ে পরিস্কার করবে ঠিক সেইসময় রেখার ফোন বেজে উঠলো দিবসও রজনী আমি যেন কার আশায় আশায়…। রেখা বললো আর কারোর আশা করতে হবে না ।আমি যাচ্ছি ফোনটা রিসিভ করে বলল '"
" হ্যাঁ হ্যালো কে ?"
আমি শুভ্রা বলছি রেখা দি ।'
"হ্যাঁ বল বলছি।
" অনিন্দিতার কিছু খবর শুনেছো ?"
অনিন্দিতার !না আমি কি করে জানব কেউ তো কিছু বলেনি 
" বলছি ও তো ব্যাঙ্গালোরে আছে ।কেন কি হয়েছে ?
ওর নাকি বায়োপ্সি রিপোর্টএকটা খারাপ বেরিয়েছে।
 "সে কি কথা! ভগবান সবকিছু ঠিক করে দেবেন। তারপর ব্স্কটব্রাইটে সাবান লাগিয়ে বাসন মাজতে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much