৩১ মে ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭৫





উপন্যাস 


টানাপোড়েন   ১৭৫
হঠাৎ মেঘ

মমতা রায়চৌধুরী



এক টুকরো হাসি মেঘ সরাতে পারে, এক টুকরো খুশিই মনের অলিন্দে চাঁদ উঠাতে পারে। আজকের ব্যস্ত দিনে সেই এক টুকরো হাসি যেন মেঘলা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায় দূর বহুদূর। মাসি কাজ করে চলে যাবার পর নচিকেতার গানটা শুনছে"যার কথা ভাসে ,মেঘলা বাতাসে তবুও সে দূরে তা মানি না ।
জানি না ।
জানি না ।
কেন তা জানি না
দূরে দূরে মেঘ যাচ্ছে পুড়ে মন মিললো স্মৃতি দু'ডানায়….,।,,"
রেখার মনও এই মেঘলা দিনে জীবন পারের ওপারেতে যে ধুলো জমে আছে ,এক পশলা বৃষ্টির পরে সে যেন হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো সঞ্চয় করতে থাকে। স্মৃতিরা যখন ভিড় করে আসে ধীর পায়, শুকনো পাতার ওপর যেন কারও নুপুরের আওয়াজ শুনতে পায় ।যখন ভাবছে যার উষ্ণ আঁচে এখনো সেই ভালোবাসা বেঁচে আছে অথচ সেই মানুষটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন সময় মনোজ ডেকে উঠলো "রেখা, রেখা রেখা রেখা আ. আ. আ'।'
হঠাৎ চিৎকারে রেখার স্মৃতিগুলো যেন কোথায় হারিয়ে যায়। সম্বিৎ ফিরে পায়। রেখার ড্রয়িং রুম থেকেই সাড়া দেয় 'কি হয়েছে?'
"দেখো এসে কি হয়েছে?"
রেখা তাড়াতাড়ি মনোজের  ঘরে ঢোকে। মনোজের দিকে তাকিয়ে '," কি?"
মনোজ রেখা কে ইশারায় দেখায়?
রেখা বলে কি হয়েছে?
মনোজ রেখাকে দেখায়..।
রেখা দেখছে তুলি একটু বমি করেছে?
মনোজ বলে এআবার কখন ঢুকেছে?
গতকাল রাত থেকেই তো আছে।
সেকি?
মনোজ আশ্চর্য হয়ে গেল। 
আসলে কালকে ওদের গেটটা বন্ধ ছিল।
মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে ওরা  একসা হয়েছিল।
তুমি জান না মা আসলে কি গন্ডগোল টা বাধবে?
রেখা  চুপ করে আছে।।
রেখা বলল' আমি কি করি বলো তো?
মানে কালকের ওই রকম পরিস্থিতি দেখার পর ও যদি আমার রুমে চলে আসে তাহলে  আমি কি
 পারি তাড়িয়ে দিতে? আমি তা পারি না।
কি অসহায় ভাবে কুঁইকুঁই আওয়াজ করছিল।

যা ভালো বোঝো করো। মনোজ রেগেই বলল।
ঠিক আছে আমি বমি পরিস্কার করে দিচ্ছি।
রেখা ওই জায়গাটিতে ভালো করে ধুয়ে দিল।
তারপর রেখা মনেজের ।
তুলি একবার তাকিয়ে দেখে নিল।
তারপর মাথাটা আবার নামিয়ে চোখ 
বুঝ ল ।

মনোজ বলল "একে আর তোমার  নাওটা ক'রো না। এ কিন্তু আর যাবে না রুম থেকে।"
রেখা বলল " তাহলে কি করব?"
"ওদেরকে ভয় দেখাও যাতে ঘরে না ঢুকে।'
'তুমি বলছো একথা? তুমি? 'রেখা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
মনোজ কেমন করুন দৃষ্টিতে রেখার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
রেখা বুঝতে পেরেছে মনোজের অবস্থাটা ।
রেখা কথা না বাড়িয়ে মনোজকে চা এনে দিল তারপর তুলিকে ডাকলো 'তুলি ,তুলি, তুলি' চলো বাবা ,বাইরে চলো।
কি সুন্দর ডাকের সঙ্গে সঙ্গে তাকালো ।তাকিয়ে রেখার কথামত গেটের বাইরে চলে আসলো।
রেখা মনে মনে ভাবছে এরপর যদি সত্যি সত্যি তুলি রুমে এসে থাকে আর রেখা কি করবে?'
রেখা আর কোন কিছু ভাবতে পারছে না। সে সবকিছুই ভগবানের উপর ছেড়ে দিয়েছে যখন হবে ,তখন দেখা যাবে।
তাছাড়া রেখা তো ওদের কে মেরে বার করবে 
না ।কখনোই না। তাতে যতই ঝড় আসুক না কেন?
ভাবতে ভাবতেই রেখা মনোজকে বলল
"তুমি অফিসে যাবে তো?"
"আর কখন যাব লেট হয়ে গেল?'
'তুমি কি আজকাল অফিসে এভাবেই যাও ,যখন মনে হল তখন গেলে ।মনে হলো না গেলে না।
আদপে অফিসে যাও তো? বলতে চাইছি অফিসে কোন গন্ডগোল হচ্ছে না তো?"
কথাটা শোনার পর মনোজ কেমন যেন একটু অন্য মনস্ক হয়ে গেল।
রেখা মনে মনে ভাবল "কথাটা বলে কি ঠিক করল?
আর কোন কথা না দীর্ঘায়িত না করে স্নান করতে গেল। কারণ রেখাকে তো স্কুলে যেতে 
হবে ।পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সেকেন্ড হাফ বলে এতটা টেনশন ছিল না। এখন যদি সব কাজ গুছিয়ে নিজেকে তৈরি না করতে পারে তাহলে ট্রেন পাবে না।
রেখা বাথরুমে ঢুকে সাওয়ারের কলটা জোরে করে দিয়ে, জলের শব্দ আর  নিজের ভেতরের নৈঃশব্দ্য শব্দগুলোকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। জীবনের যে পাতায় ধুলো পড়ে গেছে ধীরে ধীরে, বাতাসেরাও যেখানে আজ অসহায়। তবুও রেখার মনে হয় শুকনো পাতার নূপুর কেউ যেন তাকে ডেকে যায়।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে মনে মনে ভাবছে কি কি কারণে মনোজ এসব বলছে, শাশুড়ি মা বাড়ীতে পা দিলেই ,সেদিনই কুরুক্ষেত্র বাঁধাবেন । কুরুক্ষেত্রের এই যুদ্ধে কৃষ্ণ অর্জুনের মত তো মনোজের সারথি নেই ।কে সামলাবে?"
কে বা শিখন্ডী হয়ে দাঁড়াবে?"
গোপালের ভোগ চাপিয়ে রেখা ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসলো। আর লাঞ্চ প্যাক করে নিল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজাতে সাজাতে রেখা ডাকলো' কিগো শুনছো?"
মনোজ কোন আওয়াজ দিচ্ছে না।
আবার ডাকল কি গো শুনছো?
রেখা তখন বাধ্য হয়ে মনোজের ঘরে গেল।
গিয়ে দেখে বিছানায় বসে বসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। সারাঘর ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ।
রেখা বুঝল শুধুমাত্র তুলির কারণে মুড অফ নেই অন্য কিছু একটা বড় সরো ব্যাপার ঘটেছে মনোজের মনের ভেতরে ,যে কথাগুলো শেয়ার করতে পারছে না।
একা একাই মনের ভেতরে গুমড়ে গুমড়ে মরছে।
রেখা পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য বলল"ঠিক আছে তোমার কথাই থাকবে ।মা  আসার আগে তুলিকে  রুমের বাইরে রাখা হবে।
এবার খুশি তো?'
মনোজ কোন উত্তর না দেয়াতে রেখা আবার বলল"কিগো শুনতে পাচ্ছ না?"
মনোজ একটু ম্লান হাসলো।
রেখা বলল "জল খাবার খাবে চলো অনেক বেলা হয়ে গেছে।"
"হ্যাঁ, চলো।'
মনোজ ব্রাশ করে একটু ফ্রেশ হয়ে আসলো। তারপর খেতে খেতে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যেতে লাগল আর ফোন ঘেটে যেতে লাগলো।
রেখা বুঝতে পারছে বড়োসড়ো একটা ঝড় আসতে চলেছে আবার ।কিন্তু ঝড় টা কোন দিক দিয়ে আসবে সেটা আঁচ করতে পারছে না।
আসন্ন বিপদের কথা ভেবে রেখার গা শিউরে উঠলো।
তবুও মনে সাহস নিয়ে বললো তোমার কিছু সমস্যা হচ্ছে আমাকে বল না?
কথা বললে সমস্যা গুলো থেকে বেরিয়ে আসার  অনেক সময় সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
মনোজ বলল'কই কিছু হয়নি তো?
তুমি জোর দিয়ে বল আমি বুঝতে পারছি তোমার ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে বলো না কি হয়েছে?
আমি তো তোমার অর্ধাঙ্গিনী ।তোমার সুখেতে যেমন আমার অধিকার আছে ,তোমার দুঃখেতে কষ্টতে আমার অধিকার আছে ,সে গুলোকে ভাগ করে নেবার।
মনোজ রেখার গাল দুটোকে ধরে একটু হাসলো তারপর বলল 'তুমি স্কুলে যাবে তো?'
"হ্যাঁ যাবো তো?"
"ঠিক আছে তোমাকে আমি স্টেশনে ছেড়ে দেবো।"
"তুমি বাড়িতে এভাবে একা একা মন খারাপ করে বসে থাকব আমার তো স্কুলে যেতেও  ভালো লাগছে না।"
মনোজ কোন কথার উত্তর দিল না।
রেখার একটু চাপ বেড়ে গেল আদপে স্কুলে যাওয়া ঠিক হবে কিনা ওকে একা রেখে,।
রেখা একবার বড়দিকে ফোন করবে কিনা মনে মনে ভাবতে লাগল।
তারপর ভাবলো ফোনটা করেই দেখি। বড়দির ফোন নম্বরটা ডায়াল করল। রিং হতে লাগলো। সম্ভবত বড়দি ফোনটা ধরেছেন বেশ গম্ভীর স্বরে বললেন"হ্যালো।
"আমি রেখা বলছি বড়দি।,"
হ্যাঁ বল?'
বলছি আজকে স্কুলে না গেলে কি খুব অসুবিধা হবে?'
'কেন বলোতো কিছু হয়েছে নাকি?."
'না মানে বড়দি আজকে একটু বাড়িতে থাকলে পরে খুব উপকার হত।'
ঠিক আছে অসুবিধা নেই ।তোমার যখন একান্তই দরকার বাড়িতে আজ ছুটি নিয়ে নাও ।তাছাড়া এখন তো হোম সেন্টার হয়েছে।
তাছাড়া সেকেন্ড হবে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা আছে।'
"অত চাপ নেই।'
রেখা বলল
"ঠিক আছে বড়দি ।'
তারপরই ভাবতে লাগলো নীল আকাশে হঠাৎ করে মেঘ ঘনিয়ে আসলে যেমন বেমানান লাগে ঠিক তেমনি জীবনাকাশেও হঠাৎ করে মেঘ ঘনিয়ে আসলে সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়।

কবি মধুমিতা বসু এর কবিতা "আমার কোনও ঘর নেই l"





আমার কোনও ঘর নেই 
মধুমিতা বসু সরকার



থিতু হওয়া হোল না এখনো,
যাকে আমি ঘর বলে জানি,
সে ত আমার একার নয়,
এসেছিলে তুমি,, বলেছিলে
এটাকেই বসত বাটী ভাবো,
যতদুর যেতে চাও, আমিও তোমার সাথে যাব।
এরপর জীবন বীক্ষন শেষে,
বয়োবৃদ্ধ হৃদয়,
যতটুকু দৃষ্টিপাত করি,
কোথাও দেখিনা তোমায়,
পাশে আছ, হয়ত বা দীর্ঘশ্বাস হয়ে,
গভীর রাতে স্পর্শ করো ভালো, মন্দ বোধ,
কিছু খুচরো অভিমান,
ক্ষতের  প্রশমন,
আমার থিতু হওয়া হোলনা তেমন।

কবি মহিউদ্দিন আহমেদ এর কবিতা"মধুসূধন"






মধুসূধন
(চতুর্দশপদী)
মহিউদ্দিন আহমেদ 
               

পুণ্য ভূমি সাগর দাঁড়ি কপোতাক্ষ স্নেহের নীড়,
উদিত হলো নতুন সূর্য নতুন রাগের আভা,
বৈকুণ্ঠের মাঠ বুনে চলে অদ্ভুত ছন্দের ভীড়,
অভিনব আগামীর পথে দুর্দান্ত প্রণয় লাভা ।
শতাব্দীর প্রাচীর ভেঙ্গে গড়লে নতুন পয়ার,
অমৃতাক্ষর সুধায় ভরে গাঁথলে নতুন ধারা,
প্রজাপতি পাখায় এঁকে নতুন রঙের জোয়ার,
বুনন মাঠে ছড়িয়ে দিলে দ্বীপ্ত আগামীর তারা ।

পুরোনো পশরা ঠেলে মেখে নিলে বিশ্ব কাব্য ধারা,
হাজার মাইল দূরে থেকে জননী মাটির ঘ্রাণ,
মহা-কাব্য গগনে দিলে ঢেলে মাতৃভাষার তারা,
মাতৃভূমি মাতৃভাষার অঞ্জলি বিকশিত প্রাণ ।
প্রতি বর্ণে ছন্দে বিকিরণ দেয় দৃপ্ত গুপ্তধন,
অমিয় ধারা বুকে তোমার অক্ষয় মধুসূধন ।

কবি মিলন ইমদাদুল এর কবিতা "বিশ্বাস"





বিশ্বাস
মিলন ইমদাদুল

তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস ততোটাই আছে–
যতোটা আছে ঐ ভোরের পাখিদের কাছে…
তুমি পাড় ভেঙে চলে যাও দূরে,বহুদূরে
পাখিরা দূর আকাশে উড়ে যায় পাখা মেলে!

এরপর দিনের ক্লান্তি শেষে সন্ধ্যায়– 
ফিরে আসে পাখিরা আপন নীড়ে,
জীবনের খেরোপাতায় লেখা থাকে অমর স্মৃতি!
তুমি শুধু আসো না ফিরে আমার হৃদমন্দিরে

প্রতীক্ষায় বেলা বয়ে যায় সময়ে অসময়ে...

২৯ মে ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৭৪





উপন্যাস 

টানাপোড়েন  ১৭৪

ওদের ভালোবেসে

মমতা রায় চৌধুরী



উফ্ বাপরে বাপ অবশেষে কুড়িটা খাতা দেখা হলো। ও বাবা শিরদাঁড়াটা যেনো সোজা হচ্ছে না। মাথাটা এদিক ওদিক করে একটু এক্সারসাইজ করে নিল ।রেখা হাতের এক্সারসাইজটাও করে নিল। যন্ত্রণাটা যেভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ যেন করোনাকেও হার মানাবে । আজকে মরণপণ প্রতিজ্ঞা করেছিল রেখা যে করেই হোক কুড়ি টাকা খাতা দেখতেই হবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রেখা রাত সাড়ে বারোটা বাজে ।  এ বাবা এ যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ,বেশ মুষলধারে বৃষ্টি।
রেখার মনে হল' কি ব্যাপার কুই কুই আওয়াজ হচ্ছে? ওরা কি (তুলি, মিলি ,পাইলট) বৃষ্টিতে ভিজছে,?
শব্দের উৎস সন্ধান এর জন্য রেখা দরজাটা  খুলে দেখে' হ্যাঁ ,যা ভেবেছিল তাই । ব্যাটারা বৃষ্টিতে ভিজে একসার হয়েছে।
কিন্তু আজকে ওরা বাইরেই বা কেন?
কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর ভাবল আজকাল তো ওরা ভেতরে থাকতে চায় না হয়তো ওই জন্যই মনোজ গেটের বাইরে রেখেছে। সারা রাত পাহারা দেয় ।নেহাতই বৃষ্টিটা এসে পড়াতে বেচারাদের শেল্টার ছিল না ,তাই এরকম আওয়াজ করছে।
রেখা তাড়াতাড়ি গ্যারেজ ঘরটা খুলে দিল।
আর একটা গামছা দিয়ে ওদের গা মুছে দিল।
তারমধ্যে রেখা ভালো করে বস্তা বিছিয়ে দিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করে যেই গেট বন্ধ করতে যাচ্ছে ঠিক তখনই তুলি এসে কুঁইকুঁই কুঁইকুঁই আওয়াজ করছে।
রেখা বলল' কি হয়েছে?'
তুলি তো লেজ নাড়তেই থাকে আর কুঁই কুঁই  আওয়াজ করতেই থাকে।
রেখা কতগুলো বিস্কিট নিয়ে এসে দিল। ওরা সবাই খেলো দুটো একটা । আবার দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসতে যাচ্ছে ঠিক তখনই আবার তুলি কুই কুই আওয়াজ করতে থাকে।
রেখা  কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না ও কি বলতে চাইছে?
তারপর  রেখা বলল' তুই কি ভেতরে
 ঢুকবি? ''বলেই রেখা ভেতরে ঢুকলো তার পেছু পেছু তুলিও  ঢুকলো।
ও বাবা রেখার রুমেই এসে ঢুকলো।
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত  দুটো বাজে।
রেখা আর তুলিকে বাইরে বের করার জন্য জোরজবস্তি করলো না।কারণ মনোজ  কিছুই বলবে না ও  ওদেরকে খুব ভালোবাসে আর এখন তো বাড়িতে শাশুড়ি মা নেই সেটা অসুবিধে হবে না। তাই ভেবে চিন্তে দেখল ঘরেই থাক । ওদের ভালোবাসায় রেখা অন্ধ।তাই এই নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল 
না ।এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমোতে হবে ।বাইরে তখনও বৃষ্টি  হয়ে
  যাচ্ছে ।মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ।ভুলে গেছে দেখেছো ওদিকে জানালাটা খোলাই ছিল কতটা জল চলে এসেছে রুমে  কি করবে জল জমে  থাকবে ।জানালার কাছে গিয়ে জানলাটা বন্ধ করলো । জানালাবন্ধ করতে করতে রেখার চোখেমুখে কিছুটা জলের ঝাপটা এসে লাগলো। রেখা ঘর মোছার নেতা টা এনে জলটা মুছে নিল। মুছতেই হত, না হলে তুলির গায়ে এসে পৌঁছাত।রেখার শরীর আর  চলছে না।
এবার বিছানায় পড়লেই দু'চোখ ঘুমে  অন্ধকার হয়ে আসবে।
ঠিক ঘুমোতে যাবে তখনই তুলির দিকে নজর পড়লো । রেখা দেখছে তুলিটা থর থর করে তখনও কাঁপছে ।রেখা তখন একটা বস্তা এনে ওকে চাপা দিলো ।
এবারে ঘুমাতে গেল কিন্তু মাথায় রয়ে গেল সারা রাজ্যের চিন্তা। আগামীকাল স্কুলে যেতে পারবে কিনা কে জানে?
বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিতে এই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল রেখা। ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের আওয়াজে।
কলিং বেলের আওয়াজ হচ্ছে" ওম জয় লক্ষ্মী  মাতা….।
রেখা ঘুমের জড়তা কাটিয়ে দুচোখ দুহাত দিয়ে ডলতে ডলতে দরজা খুলল।
দরজা খুলে দেখতে পেল মাসি দাঁড়িয়ে।
মাসি বলল 'তোমার আজকে ঘুম হয়নি?"
রেখা বলল' কেন বলতো মাসি?"
'তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।'
"একদম ঠিক ধরেছ মাসি?"
'খাতা দেখেছি অনেক রাত পর্যন্ত।
তারপর তুলি মিলিদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।"
মাসি ঘর ঝাড় দিতে দিতে বলল 'কেন ওরা আবার কী করল?'
'ওরা কিছু করে নি ।তবে  বৃষ্টি ওদের করিয়েছে ।
এত বৃষ্টিতে ভিজেছে ওদের আওয়াজে আমাকে বাইরে বেরোতে হয়েছে।"
'হ্যাঁ যা রা ত থেকে বৃষ্টি টা হল, সকালে যদি না কমতো, কি করে কাজে আসতাম কে জানে?"
রেখা চা  করতে গেল এবং চা নিয়ে এসে মাসিকে দিল নিজে এক কাপ নিয়ে বসল।
আজ স্কুলে যেতে ভালো লাগছে না। শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে ।
মাসী বললো" আজকে রেস্ট নাও।"
রেষ্ট নোবো কিন্তু পরীক্ষা থাকলে তো যেতে হবে দেখিতো হোয়াটসঅ্যাপটা খুলে। আবার ভাবছে বড়দিকে ফোনটা করবে?"
কিন্তুএত সকালে ডিস্টার্ব করাটা কি ঠিক হবে?
থাক  একটু পরে করতে হবে।'

একবার শুভ্রাকে মেসেজ পাঠাল পরীক্ষার ডিউটি লিস্ট টা তোর কাছে থাকলে একবার আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাস।'
শুভ্রা লিখলো ,"ঠিক আছে আমি সেন্ড করছি।"
 মেসেজ ঢোকার আওয়াজ পেল 
রেখা সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপটা চেক করলো।
রেখা দেখলে সত্যি সত্যি ডিউটি লিস্ট টা পাঠিয়েছ।
রেখা তারিখ মিলিয়ে দুজনের চেক করে দেখলো হ্যাঁ ডিউটি লিস্টের ছবি।। সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ টা চেক করে নিজের ডিউটি দেখতে পেলে সেকেন্ড হাপে আছে।
তাহলে কিছুটা সময় পাবে রেখা।
সেই আনন্দে যেন অর্ধেক ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। রেখা হাতের কাজগুলো  তাড়াতাড়ি সেরে নিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে  মনোজকে ডাকতে গেল গিয়ে দেখছে তুলি আরামসে ঘুম দিছে।
রেখা চা নিয়ে গিয়ে মনোজকে ডাকলো কিগো আজ উঠবে না উঠবে না?"
রেখার ডাকেতে তুলি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল তারপর আবার ঘুমিয়ে পরল।
মনোজ সাড়া দিল" কি হয়েছে?"
"বলছি উঠতে হবে তো নাকি?'
মনোজ বলল ঠিক টাইমে উঠবো।'
রেখা বললো" ঠিক আছে তোমার যখন সময় হবে তুমি উঠ .,পরে আবার আমাকে বোলো না যেন ডেকে দিই নি কেন,?"
এরইমধ্যে মাসি কাজ সেরে যাবার পথে বলল "বৌমা আসছি গো?
দরজাটা বন্ধ করবে তো?"
রেখা বলল'হ্যাঁ মাসি তুমি এসো। আমি যাচ্ছি।"
রেখা দেখল মনোজের এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই ।ওর যখন সময় হবে ,তখন ঠিকই উঠবে। আর খাবারটা নিয়ে তুলি কে ডাকল।তুলি কথা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসলো। তারপর রেখা সকলকে খাবার দিল।
 রেখা স্নান করতে যাবে ঠিক তখনই আবার ফোন।"
*"কে ফোন করলো কে জানে?"
থাকাটা বেসিনে  রাখতে রাখতে আবার ফোনের আর্তনাদ 'কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায় ,কে যেন ডাকে ….।,"
ফোনটা রিসিভ করে বলে ,"হ্যালো"
"ম্যাম আমি সুনীপা বলছি?"
"কে সুনীপা?"
'ম্যাম আমি এবার 11 ক্লাস পরীক্ষা দিচ্ছি।"
'হ্যাঁ কি হয়েছে?'
"বলছি ম্যাম আমি তো প্রজেক্ট দিইনি…কথাটা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই রেখার মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেল বলল আমি কবে তোমাদের প্রজেক্ট দিয়েছি এখন অব্দি প্রজেক্ট দাওনি তোমরা জানো প্রজেক্ট না দিলে পরীক্ষায় তোমরা ফেল করে যাবে?'
সুনীপা বলল" হ্যাঁ ম্যাম।'
সব জেনে বুঝে তোমরা এরকম কাজ করো বলো?'
"আসলেই ম্যাম আমি জানতাম না কি প্রজেক্ট দেয়া হয়েছে?'
"মানে ,মানে টা কি! জানো না মানে?"
"তখন স্কুলের গ্রুপে দিয়ে দেয়া হয়েছিল।"
"আসলে ম্যাম  আমার ফোনটা খারাপ ছিল তাই?,"
"তা বেশ এখন কি করবে ভাবছো?"
"আমি জমা দেবো?"
"জমা দেবে তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও?'
'আসলেই ম্যাম কার কাছে জমা দেব আপনি তো স্কুলে নেই।"
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে হ্যাঁ 11টা  বাজে।
ও আচ্ছা আচ্ছা তুমি এক কাজ করো অন্য কারো  জিজ্ঞেস করো 'আমি কোথায় বসি। তাছাড়া তোমরা চেন তো আমি কোথায় বসি । অয় টেবিলে এর উপর রেখে যাও।x
"ওকে ম্যাম"
"ঠিক আছে।"
রেখা ফোনটা রাখতে যাচ্ছে তখন আবার বলল ম্যাম ?
রেখা বলল 'আবার কি হলো?
" বলছি ম্যাম আমি কেটু ফ্রম ফিলাপ করবো কার কাছ থেকে নেবো।'
*তোমরা কন্যাশ্রী নো ডাল  টিচারের কাছ থেকে নেবে।"
"থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম।'
'ইটস ওকে।'
এবার রেখা মনে মনে বলল' স্কুলে না গিয়েও শান্তি নেই। ঠিক বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করবে।'
রেখা ভাবতে ভাবতেই ওয়াশ রুমের দিকে গেল।

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা "বিদ্রোহী"





বিদ্রোহী

শিবনাথ মণ্ডল


বাংলা মায়ের  বিদ্রোহী সন্তান 
দেশের স্বার্থে লড়ে
কলমে তার আগুন ঝরে 
শাসকের অত‍্যাচারে।
দুঃখী মায়ের ' দুখু মিঞা
বিদ্রোহের বার্তা ছড়ায় 
গান গল্প কবিতা  শুনিয়ে
বিপ্লবীদের জাগায় ।
শৃঙ্খল মুক্ত করতে মায়ের
গায় মুক্তিরগান
সেই গানেতে বিপ্লবীরা
পায় যে শক্তি প্রাণ।
শাসকেরা তোমায় বন্দি করে
রাখে কারাগারে
বিদ্রোহী বার্তা পৌঁছে দিলে
দেশের ঘরে ঘরে।
ভারতবাসীর অন্তর মাঝে
ফুটেআছো সুগন্ধি ফুল
লাখো লাখো সেলাম প্রণাম
লহ প্রাণের নজরুল।।

২৭ মে ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭৩





উপন্যাস 

টানাপোড়েন   ১৭৩

মাতলা নদীর ঢেউ

মমতা রায় চৌধুরী




ছোট মামা শ্বশুরের জন্য রেখার খুব কষ্ট হয়। এতটা বছর শুধু এক নদীর জল আগুন করে রেখে দিয়েছেন মনের ভেতরে। ডাকনাম বুড়ো ওরফে বনমালী। এই বনমালী মামা যৌবনে নাকি এক মেয়ে মানুষের মনে ধরে যান। মামাদের অবস্থা তখন ভাল ছিলনা। ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। আর এখন সেই মামা মস্ত বড় আড়তদার হয়ে গেছেন। কয়েক বছর আগেও এই মামাকে রাত ভোরে ক্যানিং বাজারের আড় তে লাইন দিয়ে মাল কিনতে হত। এখন নিজেই একজন মস্ত আড়তদার। এখন মামার আড়তেই কত ছেলে কাজ করে। ইচ্ছে করলেই মামা ভালো মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করে সংসারী হয়ে যেতে পারেন  কিন্তু না যার উষ্ণতা ভাগ করে নিয়েছলেন ,তার বুকের  সুমিষ্ট গোলাপের সুবাস নেবার জন্য। সেই গন্ধ আজও হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে। ভুলতে কিছুতেই পারেন  না। ভাবেন ভুলে যাবেন কিন্তু মনের ভেতর আছো যে আঁচড় কেটে চলে।
যে বিশ্বাসঘাতকতা মেয়ে মানুষটি করেছিল তার উপযুক্ত জবাব না দেয়া পর্যন্ত বনমালী মামার শান্তি নেই।
মামার এই ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হয় কয়েক বছর আগে।।
মামার পুরুষ্ট দেহে তখন যৌবন টগবগ করে ফুটছে।
ওই দেখো মেয়ে মানুষটার নামের সাথে পরিচয় করানো হলো না। মেয়েটির নাম ছিল অভিষিক্তা।
এমন ভাবে  অভিষেক করেছে বনমালী মামার হৃদয় প্রাণ জুড়ে যে অন্য কারোর অভিষেক আজ পর্যন্ত আর হলো না। অথচ বনমালী মামার মনে কিন্তু ঘৃণা আছে ,তবুও পারলেন না মনের হৃদয়ের সিংহাসনে অন্য আর একজনকে বসাতে।
শোনা যায় মামার চেয়ে রোজগেরে ভালপাত্র সঙ্গে তাই খুব সহজেই বিয়ে করে নিতে পেরেছে।
সেদিন বিয়ের খবরটি শুনতে পেয়ে মামা নাকি ছুটে গেছিলেন অভিষিক্তাদের বাড়ি ।
কিন্তু অভিষিক্তা মুখের উপর না করে দিয়েছিল উল্টে আরও বলেছিল "আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার প্রচুর টাকা আছে? তোমার কাছে কি আছে? সারা জীবন তোমার অভাবের সংসারে আমার জীবন কাটাব ভাবলে কি করে?'তাছাড়া অভাবের সংসারে ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালাবে' পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি 'মনে হবে।'
সেদিন বনমালী মামা খুব অবাক হয়ে গেছিলেন যার মুখে এত ভালোবাসার কথা শুনেছেন আজ তার মুখে কি শুনছেন? তবু বিশ্বাস করতেই চান নি ।প্রথমে বিশ্বাস করতেই পারেন নি। পরে ভেবেছেন যে বাড়ির চাপ এই জন্য হয়তো অভিষিক্তা মামার সাথে এরূপ ব্যবহার করছে।
বনমালী মামা বলেছিলেন' তুই আমার সাথে মশকরা করছিস ।আমি জানি তুই আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছিস। আমার পরীক্ষা নিচ্ছিস ধৈর্যের,?"
অভিষিক্তা বলেছিল'কোন ঠাট্টা আমি করছি না বাস্তবে দেখো তাকিয়ে কাল আমার বিয়ে। বাড়িতে আলোর রোশনাই দেখে বুঝতে পারছ না?
 বনমালী মামা কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় আর হতবাক হয়ে পড়েছিলেন।
পরে মামার এক বন্ধু মামাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।
সেদিন নাকি মামা বাড়িতে এসে ভীষন কান্নাকাটি করেছিলেন ।আসলে মন থেকে ভালোবেসে ছিলেন, কখনো ভাবতেই পারেননি অভিষিক্তা মামার জীবনটা নিয়ে এরকম ছিনিমিনি খেলবে এইজন্য আজকাল মামার নাকি সব মেয়ে মানুষকে ওই একই মনে হয় ,স্বার্থপর মনে হয় আসলে অভিষিক্তা তখন কিছু কিছু চাহিদা পূরণের জন্যই নাকি মামাকে ইউজ করেছিল। তাই মামা আজও কোন মেয়ে মানুষকে মনের কোণে জায়গা দিতে পারলেন না।
শুধু রোজগার করে টাকার পাহাড় গড়তে চাইছেন আর অভিষিক্তাকে দেখাতে চাইছেন টাকাতে মানুষ কত সুখী হয়।
মনের ভেতরে সেই নদীর জলটাকে আগুনের স্রোত করে রেখে দিয়েছেন।
মামা নাকি পণ করেছেন কোন একদিন অভিষিক্তা নিশ্চয়ই তার কাছে ফিরে আসবে সেই দিনটার অপেক্ষায় আছেন।
তবে সেই দিনটায় ফিরে আসলে আদপেও মামা তাকে গ্রহণ করবেন কিনা সেটা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন রয়েছে।
আজই রেখা, মামা চলে যাবার পর সেই সব কথাই ভেবে যাচ্ছে আর খাতা দেখছে। যদিও খাতা সেরকমভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি ,অত স্পিডই ওঠে নি।
স্পিড আসবে কোথা থেকে একে তো মনে ছিল বিরক্তি তারপর বনমালী মামাকে দেখে মনের ভিতর উথাল পাথাল করছে মামার সেই করুণ অবস্থা ভেবে। রেখা ভাবছে বনমালী মামা আর অভিষিক্তা যে খেলায় মেতে ছিলেন মাতলা নদীর গভীরতার মত। এ যেন একে অপরের পরিপূরক কেউ কাউকে ছেড়ে যেতেই পারেন না।
তাদের মনের ভিতর যে আগুন ছিল তা ছড়িয়ে গিয়েছিল অনেকটা দূর শরীর-মন ঘিরে।, স্বপ্ন দেখেছিল দুটি হৃদয়, একসঙ্গে হবে একাকার। অথচ সেই হৃদয় ভেঙে দিয়ে, হৃদয়ের তার ছিঁড়ে ফেলে শুধু আগুন জ্বেলে রেখে দিয়ে চলে গেছে।
রেখা মনে মনে ভাবছে কেন যে রকম হয়।
সব ভালোবাসাগুলো কেন পরিপূর্ণতা পায় না।
কেন সারাটা জীবন সে অতৃপ্ত ভালোবাসাগুলো ডুকরে ডুকরে কেঁদে মরে।
এমন সময় ফোন বেজে ওঠে 'কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায় কি ডাকে আয় চলে
 আয় .. "।
রেখা ফোনটা প্রথমে ধরে না ,ফোনটা একটু দূরেই 
ছিল। ভাবছে মামার কথা ভেবে ভেবে তো খাতা দেখছে ,খাতাগুলো  আর একবার চেক করতে হবে । কোথাও ভুল ভ্রান্তি হলো কিনা। খাতাটা হাতে আছে সে কটা শেষ না করে ফোন তুলবে না।
রেখা দ্রুত খাতা কাউন্টিং করছে ঠিক সেই সময় আবার ফোন বেজে উঠলো  "কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে…।"
রেখার খাতাটা প্রায় চেক করা হয়েই এসেছে খাতা চেক করতে করতে বলল" দাঁড়া বাবা ধরছি।"
এই মাত্র 50 পেল।
রেখা উঠে খাতাটা রাখল। তারপর ফোনের দিকে এগোলো কল লিস্ট চেক করলো।
এ তো ছোট মামারই ফোন।
রেখা ঘুরিয়ে ফোন করলো।।
ফোন বেজে গেল কেউ তুললেন না।
আবার ফোন করে।, এবার গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন 'হ্যালো।'
রেখা বলল "মামা আমি রেখা বলছি আপনারা ঠিক টাইমে পৌঁছে গিয়েছিলেন তো? পথে কোন বিপদ-আপদ হয়নি তো?'
ছোট মামা বললেন 'না না কোন বিপদের ঝুঁকি ছিলনা আর আমরা নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেছি '।
রেখা হেসে বলল যাক খুব ভালো কথা।"
মামা হেসে আবার বললেন 'রেখা ,পরেরবার তোমার হাতে ইলিশ ভাপা খাব।'
রেখা বলল" একদম মামা।'
মামা বললেন "থাকতে পারলে ভালো হতো।'
"আপনাদের থেকে যেতে বললাম চলে গেলেন।"
আসলে কি বল তো উপায় ছিল না। আমরা তো কোনো প্রস্তুতি নিয়ে যায়নি।'
রেখা বলল' ঠিক আছে ।পরের বার প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন।'
'একদম।'
"ঠিক আছে মামা রাখছি। প্রণাম নেবেন ভালো থাকবেন।"
কথা বলতে বলতে ওদিকে কলিংবেলের আওয়াজ "ওম জয় লক্সমি মাতা।"।
রেখা ফোনটা রেখে দ্রুত ছোটে ।
দরজা খুলতেই মনোজ বলল কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছি।
'কি করবো বলো?'
"কি করবো মানে?"
আসলে এত টাই নস্টালজিক হয়ে গেছে যে ,সুখের কিছু মুহূর্ত রোমন্থন করছে।
রেখা বলল "কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো ভোলা যায় না ।শুধু তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।'
মনোজ বলল 'কে ফোন করেছিল?'
'বনমালী মামা।'
'কেন?'
'কি ভাবে পৌঁছেছেন তার কথাই বলছিলেন।'
আবার অন্য একদিন আসবেন,.।'
মনোজ বলল 'আসলে বনমালী মামার জন্য কষ্ট হয় ,ওপরটা এরকম হাসিখুশি নিয়ে থাকেন অথচ ভেতরটা না জানি কতটা যন্ত্রনা।'
রেখা বলল "আমরা জানি বলেই হয়তো ,মামার ভেতর দিয়ে….।'
এ যেন গানের কথা তুমি বলতে ইচ্ছে করে'মনে করো আমি নেই, বসন্ত এসে গেছে। কৃষ্ণচূড়ার বন্যায় চৈতালি ভেসে গেছে।'
"দারুন বললে তো 'মনোজ বলল।
রেখা বলল' এরকমই হয় জান তো বিরহী মন সব সময় রয়ে যায় ,মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে না থেকে ঘরের দুয়ারে এসে জায়গা নিতে। এ এক অন্তবিহীন যাত্রা।
আজ বনমালী মামার ভেতরে যে টানাপোড়েন চলছে তা মাতলা নদীর ঢেউয়ের থেকে কম নয়।'

২৬ মে ২০২২

কবি আলমগীর হোসাইন এর কবিতা "কান পেতে শুনি"




কান পেতে শুনি
আলমগীর হোসাইন 



মাঝ রাতে রিং টোনের শব্দে
ঘুম ভেঙ্গে গেলো মোর প্রিয়ার
ফোন ধরে কথা বললে না
ক্লান্ত দেহ মন অচল অসার।

উওপ্ত নিঃশ্বাস প্রকম্পিত শব্দ প্রবাহ, 
ধাবন প্রতিয়মান তরঙ্গে
সময় বলে গেলো জীবন বড়ো অসহায়
মুল্যহীন, তুমি বিহনে।

দুর থেকে ভেসে এলো নিঃসঙ্গ কাতর কন্ঠের 
করুন না বলা কথার প্রতিধ্বনি
দুঃসময় মধুর স্বপ্ন জলাঞ্জলী দিয়ে
নিশ্চুপ কান পেতে শুনি।

কবি শাহজাদা রিদওয়ান এর কবিতা অপ্রত্যাশিত বইয়ের পৃষ্ঠা "





অপ্রত্যাশিত বইয়ের পৃষ্ঠা 
শাহজাদা রিদওয়ান 



ছায়া পথের খুব গভীরে আমার অস্তিত্বকে রেখেছিলাম কিছু সময়ের জন্যে, 
তাও আবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে,
কিছু দেখার জন্য -জানার জন্য!
চারদিকে নিরব নিস্তব্ধতা থাকবে
এটা আমার আশা নয় ছিল বিশ্বাস, 
সেখানে ঝড় দেখিনি তবে হৃদয়ে ঝড় বইতে দেখেছি।

ছায়া পথের গভীরে গিয়ে প্রথমেই 
গভীরতা নামক বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকলাম,
আমি আঁতকে উঠলাম কয়েক পৃষ্ঠার পর একটা লাইন পড়ে,
ঠিক তখনই বিশ্বাস ভঙ্গ নামক ঢেউ কাঁপিয়ে দিল পুরো ছায়াপথকে,
আমার বিশ্বাসের অস্তিত্বও কেঁপে উঠল,
শতবার চেষ্টা করেও থামাতে পারিনি।

গোপনে থাকা গভীরতা নামক বইটি দ্বিতীয় বার আর স্পর্শও করিনি,
চাই না আর ছায়া পথের নীরবতা,
গোপনেই থাক না অপ্রত্যাশিত বইয়ের পাতা।

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭২





উপন্যাস 




টানাপোড়েন   ১৭২

বিরক্তি ভরা মুহুর্ত

মমতা রায় চৌধুরী



নববর্ষের সকালটা বেশ ফুরফুরে মেজাজে কেটেছে রেখার কিন্তু বাড়িতে এসে পড়েছে আসন্ন সংকটে বোর্ডের খাতা চোখে সর্ষেফুল দেখছে। আকাশকুসুম ভাবছে। কদিনের মধ্যে কি করে খাতা দেখে ফাস্ট লট জমা দেবে। তারমধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়া মতো রয়ে গেছে হাতের ব্যাথাটা ।দুটো খাতা দেখতে না দেখতেই যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ছে রেখা ,শুতে হচ্ছে । মহা বিপদে পড়েছে।
হাতের যন্ত্রনাকে উপেক্ষা করেই রেখা আজ সন্ধ্যে ছটা থেকে হঠাৎ রাত দশটা পর্যন্ত 15 থেকে কুড়িটা    খাতা দেখবে। যেমনি ভাবা অমনি কাজ
কিন্তু হলে কি হবে দুটো খাতা দেখতে না দেখতেই গেস্ট এসে হাজির। অ্যাটেন্ড করতেই হয়।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে বুঝতে পেরেছে অসময়ে কেউ এসেছেন, মানে অতিথি হবে।
গেট খুলে দেখে যা ভেবেছে নৈহাটি থেকে মামাশ্বশুরা এসেছেন।
রেখা গাল হেসে বিরক্তি কে চাপা দিয়ে বলল' "আসুন মামা আসুন।'
মেজ মামা বললেন 'মনোজ কোথায় ,দেখছি না তাকে?"
"আছে কোথাও কাছেপিঠে ।আপনারা আসবেন জানান নি তো । তাই তো বেরিয়েছে।"
মেজ মামা বললেন" হ্যাঁ, সেটা আমাদের করা উচিত ছিল কিন্তু আমরা করে উঠতে পারিনি।?'
"দিদি কোথায় ?'
'মা তো দিদির বাড়িতে গেছে?'
"সেকি!আমাকে জানায়নি তো?'মেজ মামা বললেন অবাক হয়ে।
রেখা বলল "হঠাৎ করে বোধহয় প্ল্যান হয়েছে।"
"এমনিতে তো কি খায় না খায় ,পাই টু পাই হিসেব দেয় আর চলে গেল সেই খবরটা দিতে পারল না।
প্রতিদিনকার ছেলের সংসারিক এ কি হচ্ছে সব খবর না দিতে পারলে তো ওর পেটের ভাত হজম হয়না।"
রেখা বলল" আপনারা বসুন মামা আমি  চা করে আনছি।'
"তা বেশ ভালো। চা খাই। মনটা চা চা করছে।"
রেখা এই ফাঁকে মনোজ কে ফোন করে মামাদের আসার ব্যাপারটা জানিয়ে দিল। সঙ্গে কিছু মিষ্টি আর অন্যান্য খাবার নিয়ে আসতে বলল।
রান্নাঘরে চা চা করতে করতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো"কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায় কে ডাকে আয় চলে আয়।"
রেখার এমনিতেই বিরক্ত লাগছে একটা খাতা ও ঠিক করে দেখে উঠতে পারল না এর মধ্যে গেস্ট আবার ফোন?'
ও ঘর  থেকে মামাশ্বশুর চিৎকার করে বললেন "রেখা তোমার ফোন বাজছে গো?"
রেখা বলল "হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি মামা ,যাচ্ছি?"
রেখা গিয়ে দেখতে পেলে ওটা মনোজের ফোন তাই ফোনটাকে রান্নাঘরে নিয়ে আসলো।
"হ্যাঁ বলো, ফোন করলে কেন?"
"বলছি মামারা কি আজকে থাকবে?"
"কি আজব প্রশ্ন করো না তুমি মাঝে মাঝে, মাথা এমনিতেই গরম আছে জানো তো তার মধ্যে…?"
"আরে বাবা সেই জন্যই তো ফোনটা করছি তাহলে রাত্রে রান্নাবান্নার জন্য তো কিছু আনতে হবে।"
"আমি কি করে বলি বলো তো ?"
"যাও না কায়দা করে জানো।"
"ঠিক আছে তুমি জলখাবার নিয়ে এসো তারপর না হয় পরে বাজারে যাবে আবার।"
"আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে।"
রেখা চায়ের জল ফুটলে চা পাতা দিয়ে দিল। এক মামাশ্বশুর ঘন দুধের চা আর এক মামাশ্বশুর লিকার।
একজন চিনি ছাড়া আরেকজন চিনি দিয়ে।
চা নিয়ে গিয়ে রেখা হাজির হল।
চায়ের কাপ মামাদের কাছে বাড়িয়ে দিতেই বাইরের কলিংবেল বেজে উঠলো।
"ওম জয় লক্ষী মাতা..।"
 মামাশ্বশুর বললেন "বাহ মনে আছে তোমার, কে কি ধরনের চা খায়?"
ছোট মামা শ্বশুর বলে ন 'মনে থাকবে না ও একজন শিক্ষিকা ।সব মনে থাকে।"
"আবার কলিংবেলের আওয়াজ 'ওম জয় লক্ষী মাতা…।"
মামাশ্বশুরের বলেন" দেখো কেউ এসেছে বোধহয়?'
মেজ মামা শ্বশুর বললেন" বিস্কিট তুলে নাও।"
ছোট মামা শশুর বললেন 'আমাকে দাও।"
মেজো মামার শশুর বলেন আরে প্লেটে রয়েছে নিয়ে নে না ।ঐদিকে কলিং বেল বাজছে ওখানে গিয়ে দরজাটা খুলবে তো নাকি?
ছোট মামা শ্বশুর বললেন 'হ্যাঁ তাই তো ।তুমি যাও রেখা।"
দরজা খুলে দেখতে পেল মনোজ দুই হাতে দুটো প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে।
মনোজ ইশারা করলো" বুঝতে পারলে ?কিছু জানতে পারলে?"
রেখা দরজা বন্ধ করতে করতে বলল''না ,আমি
কিছু জিজ্ঞেস করিনি।'
প্যাকেট দুটো রেখার  হাতে দিয়ে মনোজ। ঢুকলো মামাদের ঘরে।
মামাদের গিয়ে প্রণাম করলো  তারপর জিজ্ঞেস করল 'কেমন আছো,?'
মামারা বললেন 'আমরা ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস?'
মনোজ বলল'এই চলে যাচ্ছে নানা রকম ভাবে।'
এরমধ্যে রেখা প্লেট বোঝাই করে কেশরী ভোগ সন্দেশ ,ফিশ ফ্রাই আর লর্ড চমচম নিয়ে এসে হাজির।
মামাদের সামনে প্লেট ধরিয়ে দিতেই মামারা খুব খুশি হয়ে বললেন এত জিনিস এনেছ।
 ছোটমা বললেন "আমার সব খাবারগুলো প্রিয়।" মেজ মামা বললেন 'ভাগ্নের বাড়িতে আসলে এই উপরিপাওনা টা খুবই ভালো লাগে।"
এই সুযোগে মনোজ জিজ্ঞেস করল রাত্রিতে তোমরা কি খাবে বলো ?তাহলে সেই জিনিসই রান্না করাব।"
দুই মামা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল "মানে?"
,মনোজ  বলল ' মানে তোমরা থাকবে না আজকে?'
মেজ মামা বললেন'  ক্ষেপে ছিস নাকি?'
ছোট মামা বললেন 'থাকতে খুব ইচ্ছে করছে রে ভাগনে কিন্তু থাকার উপায় নেই।"
রেখা যেন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। এমনিতেই অসময়ে এসে যাওয়াতে খুব বিরক্ত লাগছে, যদিও অতিথি নারায়ন। নারায়ন হিসেবে সেবা করা উচিত। রেখা চেষ্টা করেছে যতদূর সম্ভব আপ্যায়ন করার।
অন্যদিকে মনে মনে চাইছিল আজকে যেন উনারা না থাকেন, রেখা জানেন কখনো এরকম বলা উচিত নয় বা ভাবাই উচিত নয়। কিন্তু কি করবে রেখা যে বিপদে পড়ে আছে। কটা দিন থাকা মানেই রেখার এখন বাড়তি চাপ। খাতাগুলো দেখার একটু ফুসরত পাবে না। এরকম ভাবনা চিন্তা করার জন্য ঈশ্বরের কাছে একটু ক্ষমা চেয়েও নিল। অন্যদিকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল যে উনারা যেন না থাকেন।
মেজ মামা শ্বশুর বললেন 'হ্যাঁ রে ভাগনে এইগুলো কোন দোকান থেকে আনলি তোদের সেই মোদক সুইটস।"

মনোজ বললে" একদমই তাই?'
ছোট মামা বললেন"দাদা, কেশরী ভোগটা খেয়ে দেখো ,অপূর্ব।,
মেজ মামা' কেশোরি ভোগ মুখে দিতে দিতে বললেন"হ্যাঁ তাই তো রে।'
মনোজ বলল ," মাঝে মাঝে তো আসতেও পারো তোমরা।"
"সময় কোথায় বল?"
"সময় করে নেবে নইলে আত্মীয়স্বজন কেউ কাউকে তো চিনতেই পারবে না।
ছোট মামা বললেন" তুই থাম তুই কবার যাস। তুই তো ভুলেই গেছিস?'
মেজ মামা বললেন," রেখাকে নিয়ে তো ঘুরে ও আসতে পারিস।"
মনোজ বলে" আমাদের ও তো একই হাল আমার অফিস ,ওর স্কুল।'
মেজো মা বললেন" হ্যাঁ রে দিদি হঠাৎ মেয়ের 
বাড়িতে গেল?'
মনোজ বলল 'এইরকমই মূড হলেই বেরিয়ে পরে।"
ছোট মামা বললেন' দিদি চিরকালই এরকম।'
রেখা মনে মনে ভাবলো যে মানুষটা নেই তাকে নিয়ে এত রকম কথা বলতে পারেন?'
মেজো মা বললেন ছোট ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ,.
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই সাড়ে আটটা বাজে। 
রেখা ঘড়ির দিকে তাকাতেই টাইম টা দেখে নিজের  নিজেই যেন চরম চরম করে বেত মারতে ইচ্ছে করছে।
মেজ মামা বললেন 'আর বসা যাবে না ।'

"ঠিক আছে 'ছোট মামা বললেন।
রেখা বলল আবার আসবেন আপনারা।
মামীদের কেও সঙ্গে নিয়ে আসবেন।
মেজ মামা বললেন আমরা তো এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম যাই দেখা করে আসি।
রেখা হাসতে লাগল।
ছোট মামা বললেন আমরা অন্য দিন আসব তখন জমিয়ে আড্ডা দেবো, কব্জি ডুবিয়ে খাবো। বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন।
মেজো মা বললেন "একদম ঠিক কথা বলেছিস। তখন দেখবি তোদেরই বিরক্ত লাগবে।'
রেখা গিয়ে দরজাটা খুলল।
সঙ্গে সঙ্গে মিলি আর ওর বাচ্চারা রেখা কে ঘিরে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠলো
মামারা বললেন রেখার বুঝি এগুলো পোষ্য।
মনোজ বলল  "পোষ্য ছিলো না এখন হয়েছে।'
"যাক ভগবান কল্যান করুক' মেজ মামা বললেন।
আসছি তোমরা এসো একদিন আজকের এই মুহূর্তটা খুব সুন্দর কাটলো সবাই ভালো থেকো।

২৫ মে ২০২২

কবি মোঃ সেলিম মিয়া এর কবিতা "নির্বাক পুরুষ "






নির্বাক পুরুষ

মোঃ সেলিম মিয়া 



জন্ম নিয়েছি পুরুষ রুপি 
মানুষ বলে কথা, 
সংসার সুখ হাসি ফোটাতে তাইতো বিলিন ব্যাথা।
দিবা রাত কত গাধার খাটুনি 
ভাসিয়ে সুখের ভেলা!
হাসিমাখা মুখ দেখবো সবার
এটাই পুরুষের চাওয়া।
চাঁপা কষ্ট বধ করেছি হজম করছি গ্লাণি, 
চোখে টলমল জল হাসি মাখা ঠুঁট
আত্ন সম্মান হানি।
কে বুঝবে কষ্টে বিমুখ পুরুষের যাতনা খানি?
সংসারের সকল খরচ বউয়ের আবদার যতো,
পাশের বাড়ির ভাবি নাকি স্বর্গ সুখে রত?
সাদামাটা  ফার্নিচার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি ঘর,
লজ্জায় আমায় মাথা হেট 
 তুমি কি বুঝবে নর?
সারাদিন কতো খাটাখাটুনি  অফিস বসের ঠ্যালা,
বাসায় ঢুকতেই বউয়ের প্যাদানি 
নিত্য দিনের চেনা!
সবার শুধু চাই আর চাই বিবেকহীনের মতো,
সংসার সুখে হীনমন স্বামী 
নিরব ভুমিকায় রতো।
ঘাম ঝরানো গন্ধে বিমুখ 
নিজের গতর খানি, 
পারফিউম মেখে বউ জান মোর 
মুহিত ঘর খানি!
চান্দে চান্দে উৎসব মুখর 
গয়না শাড়ির বায়না,
কোত্থেকে আসবে সে সব আমার জানতে চাই না?
রাগ ডর ভয় বউয়ের কদর
প্রিয়তমা এবার থামো,
এনে দিবো চাঁদ হাতের মুঠোয় হাত পাখাটি আনো।
ধিক ধিক করে কাঁপে বুক খানি
বুঝাবো কেমন করে? 
আমিতো পুরুষ সংসার সুখে স্বামী,
অবহেলা অনাদরে!
মেঘে মেঘে দিন ফোরালে বেলা--
জীবন ঘুচাবে পাটে।
কাঁদবে সবাই অঝোরে নয়ন,
অপ্রয়োজনে ভালোবেসে। 
আমি তো পুরুষ নির্বাক পুরুষ, 
নিগৃহীত কপাল দোষে!!!

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭১




উপন্যাস 

টানাপোড়েন  ১৭১

নববর্ষের নবদ্যুতি

মমতা রায়চৌধুরী



"আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে,
শাখে শাখে পাখি ডাকে
কত শোভা চারি পাশে..…।'
রেখা আজকে মন খুলে গান গাইছে ভোর চারটায় উঠে। ফ্রেশ হয়ে আগে গোপালকে ভোগ নিবেদন করলো। তারপর চা, জলখাবার বানিয়ে ফেলল। মিলি আর ওর বাচ্চাদের ও খাবার বানিয়ে ফেলল তার পরে  আজকের নিজেদের খাবার বানানোর সময় হবে না ।গতকাল তো কথা হয়েই গেছিল মনোজের সঙ্গে।মনোজ বলেছিল ' নববর্ষে আমরা' বাইরের খাবার খাব।'
এক হিসেবে ভালোই হয়েছে ভোর ছয়টা থেকে প্রোগ্রাম শুরু' নারীশক্তি বাহিনীর' ।প্রতি বছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো 
হয় । রেখা প্রতিবারই ডিনাই করেছে কিন্তু এবছর একদম নাছোড়বান্দা দুর্গা ।যেতেই হবে। আর সত্যিই তো আর কতবার প্রত্যাখ্যান করা যায় এবার যে করেই হোক যেতেই হবে। তাই কোমর বেঁধে কাজকর্ম সেরে নিয়েছে ।তারপর মাসি এসে যা পারে করবে ।
মনোজকে ডাকতেই বলল 'আমি এখন ঘুমাবো আমাকে ডেকো না ।'
রেখা বলল 'বাহ বেশ তোমাকে আমি নববর্ষের উস করে  বেরিয়ে যাচ্ছি ।ঠিক আছে ।"
রেখা কাছে গিয়ে মনোজের কপালে চুম্বন করল মিষ্টি উষ্ণতায় ভরিয়ে দিয়ে বলল' শুভ নববর্ষ 
আমার কুম্ভকর্ণ।সবকিছু শুভ হোক। ভালো হোক আর আমাদের মধ্যে বিশ্বাস , ভালোবাসার সম্পর্কটা চির অটুট থাকুক।'
মনোজ ঘুমোলে আর কোন ওর হুঁশ থাকে না
 এর মধ্যেই ফোনের কলতান রেখা
তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করতেই, দুর্গা বলে উঠলো 'কি এবারও নিরাশ করবে নাকি?"
 রেখা বলল "একদমই নয় ।"
"কখন বের হচ্ছ ?"
"এই তো শাড়ি পরে তার পরেই তোমার কাছে চলে যাচ্ছি । '
দুর্গা বলল "আমারও হয়ে গেছে ।ঠিক আছে রাখছি ।আমার এদিকে অনেক কাজ করতে হবে তো ।আমিও বের হচ্ছি ।তাহলে দেখা হচ্ছে আমাদের গঙ্গার ঘাটে কেমন ।'
রেখা বলল '।
ফোন রাখতে গিয়ে দুর্গা বলল
" ভালো থেকো , নববর্ষে তোমাকে এটুকুই উইস করছি ।বাকিটুকু আমাদের এখানে এসে হবে কেমন। '
রেখাও বললো 'তুমিও ভালো থেকো।'
ফোনটা কাটতেই রেখা তড়িঘড়ি করে ওয়ারড্রব এর  কাছে দিয়ে শাড়ি চুজ করছে ,কোনটা 
পড়বে ?তার আগে দুর্গাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কোন ড্রেসকোড আছে কিনা?
 দুর্গা বলেছিল 'না ,না ,কোনো ড্রেস কোড  
নেই ।আমরা দোলের সময়  ড্রেসকোড করে
 থাকি ।যা খুশি পরে এসো ,তবে শাড়ি পরে
এসো । রেখার মনে হলো নীল সবুজ কমিশনের পিওর সিল্ক টাই বেটার ।যতই হোক আজকের দিনটা সবুজের মধ্যেই রাখতে চাইছে। 
মনোজকে আর একবার তাড়া দিল কিন্তু মনোজ কোন কথার সাড়া দিল না বলে রেখা বললো ', শোনো, চা  ফ্লাক্সে রেখে দিলাম ।খেয়ে নিও। আর পাম্প চালিয়ে জলটা তুলে নিও ।আমি বেরোচ্ছি ।রেখা গেট খুলতেই মিলি আর ওর বাচ্চারা ধরল ঘিরে। কিছুক্ষণ আদর করলো তারপর   কিছু বিস্কিট দিয়ে যেই টোটোতে উঠতে গেছে, অমনি ওরা বিস্কুট ফেলে দিয়ে টোটোর কাছে এসে হাজির। কিছুতেই টোটো ছাড়তে দেবে না। টোটোওয়ালা যাইহোক করে যেই স্টার্ট দিয়ে কিছু দূর এগিয়েছে ওরাও পেছনে পেছনে ছুটতে শুরু করেছে। রেখার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ও পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখছে কিভাবে অসহায়ের মতো ওরা ছুটছে। টোটোতে এক ভদ্রমহিলা ছিলেন ,উনি বললেন 'কিছুদূর গেলেই আর ওরা আসবে না ।ওদের তো আবার এরিয়া ভাগ করা থাকে। তবে বছরের শুরুতেই ওদের মনে কষ্ট দিতে চায় নি রেখা । মনে মনে শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল "ঈশ্বর ওদের ভালো রেখো, সুস্থ রেখো।'
মন খারাপ নিয়ে লেখা গঙ্গার ঘাটে পৌঁছালো।
গঙ্গার ঘাটে পৌঁছাতেই দুর্গা উষ্ণতায় স্বাগত জানালো আর আপ্লুত হয়ে বলল"ভীষন খুশী হয়েছি।"
রেখা বললো" সব অ্যারেঞ্জ হয়ে গেছে?'
দুর্গা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল 'এমনি সব রেডি হয়ে গেছে ,শুধু গানের মেয়েগুলো রাস্তায় আছে ওরা আসলেই  শুরু করে দেবো।'
বলতে বলতেই গানের মেয়েরা এসে হাজির।
প্রথমে দুর্গা বলল আজকের অনুষ্ঠান শুরু করার আগে নারীশক্তি বাহিনী সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করার কথা আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষিকা শ্রীমতি রেখা চৌধুরীকে অনুরোধ করছি কিছু বলার জন্য।
রেখা বলল 'আজকের অনুষ্ঠানের যারা উপস্থিত আছেন তাদের প্রত্যেককেই শুভ নববর্ষের হার্দিক শুভেচ্ছা, শুভকামনা, ভালোবাসা জানাই আগামী দিনগুলো সকলের ভালো কাটুক ।নববর্ষের নব দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ুক সকলের ভেতরে। জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির মানবতার বিকাশ ঘটুক সকলের ভেতরে। আর নারীশক্তি যেহেতু সকল অনাদৃত ,অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করে থাকে ।তাই সেই সমস্ত মানুষগুলোও  পাক নববর্ষের নব আলোকের সঞ্জীবনী সুধা। তাই নারীশক্তি বাহিনীর প্রতি ও থাকলেও হার্দিক শুভকামনা এগিয়ে চলুক এইভাবে সকলের জন্য কাজ করুক তাদের বার্তা হোক"... প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।'
দুর্গা বললহ্যাঁ সে তো ঠিকই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তাই ,আমরা যেন সত্যিই সে সমস্ত মানুষের জন্য কাজ করতে পারি ।তো আজকে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে উদ্বোধনী সংগীত এর মধ্যে দিয়ে আজকে সারাটা দিন চলবে এই গঙ্গাবক্ষে উন্মুক্ত পরিবেশে আমাদের এই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ।তবে রেখা তোমাকে ছাড়ছি না ,এরপরে তোমার লেখা কবিতা আবৃত্তি আমরা শুনব।'
প্রথমেই উদ্বোধনী সঙ্গীত শুরু হলো 'এসো হে বৈশাখ। এসো, এসো,
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
দূর হয়ে যাক আবর্জনা
যাক যাক যাক…..।"

পরপর চলতে থাকল অনুষ্ঠান পরবর্তী সূচি ।
এর মধ্যে তিনজন অন্ধ ভাই ওরাও এসে উপস্থিত হয়েছে নববর্ষের আলো ওরা ওদের গান, বাঁশির সুরের মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চাইছে ।ওরা মনেপ্রাণে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে।রেখার খুব ভালো লাগলো। পরবর্তীকালে ওদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলো যে ওদের পরিবারের ওরা তিন ভাইই অন্ধ কিন্তু ওদের কি প্রতিভা ! রেখা অবাক হয়ে গেল কি অসাধারণ বাঁশি বাজানো !একজন বাঁশিবাদক,একজন বেহালাবাদক ,আরেকজন সঙ্গীত শিল্পী।অসাধারণ আজকের দিনটা খুব ভালো কাটলো রেখার ।পরবর্তীকালে আরো গানের মধ্যে দিয়ে চলল অনুষ্ঠান। এর মধ্যে দিয়ে সুরাইয়া বলে একটি মেয়ে এত সুন্দর ফোক সঙ্গীত করল , যেমনি গান ,তেমনি সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন দারুন লাগলো। কিন্তু রেখা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারছে না ,তিন চারদিন ধরে হাতটা এত যন্ত্রনা। ওখানেই বসে বসে নিজের হাত নিজে মেসেজ করে যাচ্ছে ।দৃষ্টিকটু লাগছিল । উপস্থিত একজন বিখ্যাত শিল্পী দাদা বললেন হাতটাকে বিভিন্নভাবে নাড়াচাড়া করছো কি হয়েছে তোমার হাতে? সবকিছু খুলে বলার পর বললেন ইমিডিয়েট ডক্টরের পরামর্শ নিতে। কথা বলতে বলতেই মেঘ না চাইতে জল এর মত এর মতো 'মিরা দি বলে নারীশক্তি বাহিনীর এক দিদি এসে বলেন 'কী হয়েছে তোমার?'
রেখা  বললো 'আর বলবেন না দিদি, লজ্জা লাগছে কিন্তু আমি যন্ত্রনায় থাকতে পারছি না।'
 দিদি ছিলেন একজন সিনিয়র নার্স ।তিনি বলেন 'দেখি তোমার হাতটা।'
'রেখা হাতটা বাড়িয়ে দিতেই, দিদি, এমনভাবে  আঙ্গুল আর হাতটা ধরে মেসেজ করে দিলেন যেন কোন যাদু বলে সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা গায়েব। ' 
দিদি বললেন 'চিন্তা করো না ।তুমি, ইমিডিয়েট হসপিটালে যাবে দুই টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ওখানে ভালো ফিজিওথেরাপিস্ট আছে , দেখাবে।'
হসপিটালের কথা শুনে পাশেই এক ভদ্রমহিলা
নাক শিটকালেন আর বললেন ''?
আরো গভীর সুচিন্তিত পরামর্শ দিলেন
"প্রাইভেট হসপিটাল "এর।
মিরাদি কথাটা শুনে শান্ত অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন,এটা মাথায় রাখবেন হসপিটালেই কিন্তু ভালো ভালো ডাক্তার থাকেন ভালো কলেজ থেকে পাস করে সরকারি হসপিটালে ঢোকেন।'উনারাই প্রাইভেটে যখন প্র্যাকটিস করেন তখন আমরা জানতে চাই কোন সরকারি হসপিটালে জয়েন করেছেন?"
তারপর রেখার দিকে ফিরে বললেন "আমি যা বলছি তুমি শোনো, এখন এখানকার হসপিটালে যা ভাল ভাল ডাক্তার আছে ,আমি যেহেতু  হসপিটাল এর  সঙ্গে যুক্ত তাই আমি ভালো করে জানি।'
রেখা যদিও ভদ্রমহিলার কোথায় সেরকম সায় দিতে পারে নি।রেখান হসপিটাল এর পক্ষেই।
অত নাক উঁচু রেখার নয়।
এসব বলতে বলতেই দুর্গা এসে হাজির আবার এখানে কাজে রেখার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার জন্য।
প্রথম দিকটা একটু হকচকিয়ে গেছিল রেখা তারপর বললো ঠিক আছে মোবাইলের ভেতর থেকেই সেভ করা কবিতাটি পাঠ করছে।
কবিতার নাম ছিল 'নববর্ষ'।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে পৌঁছে রেখার কবিতা আবৃতি দিয়েই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবে বলে দুর্গা ঠিক করেছে।
ইতিমধ্যে মোবাইলে সেভ করা কবিতাটি পেয়ে গেছে এবার কবিতা পাঠ করছে"
বছরের অন্তিম লগ্নে
নববর্ষে উঠি মেতে।
দুঃখ হাসি কান্না ভুলে
ভুবন ভোলা বুলি বলে,
যন্ত্রণাগুলো সরিয়ে ফেলে।
আসুক যতই বাঁধার পাহাড়
নিকষ কালো অন্ধকার।
…….
হিংসা-দ্বেষ দ্বিধাদ্বন্দ্ব
ঝেড়ে ফেলেসব মতো দ্বৈত,
পার প্রাণে উঠুকতান
মানবিকতার জয়গান
ধর্ম জাতি ভেদাভেদ ভুলে
শান্তি বিরাজ পৃথিবীজুড়ে
……
পৃথিবীর সব লোকে
ভালো থাকুক বর্ষ জুড়ে।"
কবিতা শেষে দুর্গা বলল আমরা এই প্রার্থনাই করি রেখার কবিতার মত পৃথিবীজুড়ে শান্তি বিরাজিত হোক যার যার ভেতরে মতদ্বৈততা দ্বন্দ্ব আছে সব ঝেড়ে ফেলে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক নববর্ষের নব কিরনের দ্যুতি।

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা "শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ"




শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ

 শিবনাথ মণ্ডল


আজকে যাদের দেখছ ছোটো
তারাই দেশের ভবিষ্যৎ 
তারাই দেশের মান বাড়াবে
দেশকে রাখবে অক্ষত।
শিক্ষা দিলে উৎসব পেলে
বাড়বে শিশুর বল
শিক্ষার মধ‍্যেই লুকিয়ে থাকে
মানবতার ফল।
শিশুর মধ‍্যেই লুকিয়ে আছে
সূর্যের মত আলো
শিক্ষা পেলে সেই আলোতে
মুছবে যত কালো।
শিশুর প্রতি যত্ম বাড়াও
শিশুকে কর বড়ো
তবেই অবাস্তবদূর হবে
মুক্তি পাবে জড়ো।।

কবি সোমাশ্রী সাহা এর কবিতা "অধঃপতন"






অধঃপতন
সোমাশ্রী সাহা 


উন্মাদ মানব জাতির জন্য করুণা হয়

অকারণ ছুটে বেড়ানো মানুষের জন্য করুণা হয়

এই বোধ হয়, জীবনের ব্যতিরেকে জীবন
আমাদের স্বপ্নেরা বাঁধা আছে আজও
যেখানে নিয়মিত অনিয়ম হয়...
ওরা কি জানে না?
ওরা কি অন্ধ?
ওরা কি জানা বৃত্তের মাঝেও অজানা?

অদৃষ্টের দোহায় দিই না আর
নির্দিষ্ট সত্যে উপনীত হই 
ওরাও বাজায় ধর্মশিক্ষা, যাদের হাতে ধর্মনাশ...

২২ মে ২০২২

Poet Suparna Chatterjee




It's only my mind



Nothing is mine,
Nobody is mine,
Nothing can keep me in Mind. 
Except my beloved one 
Who is my beloved Mind.

Anyone can make me cry,
But only my mind can make it
stop.
Anyone can tell me a lie,
But my mind always try to fly
To reach my imaginary lane.
Anyone can give me pain
To hurt me again and again.
 But if it is seen by my Mind,
Make me try to understand, And give me strength to bear.
Bcz only my mind loves me
And I am only his dear.
If I want to laugh with all my heart,
Only my mind can help me to start.
Where there is anyone to love,
No matter without his choice my mind can love.
Whatever I want to imagine
My mind helps me to win.
Still it's my pleasure 
To say everything.
  

০৮ মে ২০২২

কবি মমতা রায়চৌধুরী এর কবিতা "ফিরে এসো রবি ঠাকুর"




রবি ঠাকুরের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

ফিরে এসো রবি ঠাকুর

মমতা রায়চৌধুরী



আজ আবার পঁচিশে  বৈশাখ,
তোমার জন্মদিন রবি ঠাকুর।
 জন্মদিনে কত আয়োজন
তবুও  মনে হয় সব বৃথা।
প্রশ্ন জাগে কেন?
কেন নয় বলো?
শৈশবেই  ভারতকে চিনেছি 
তোমার কবিতার ভাষায়
"নানা ভাষা, নানা মত
নানা পরিধান।
বিবিধের মাঝে দেখ 
মিলন মহান।"
অথচ আজ তাকিয়ে দেখো
মহান ভারতবর্ষের দিকে
লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।
অবাক হচ্ছ?
তবে শোনো-
এখন এ দেশ ,
আমরা ওরার কাঁটাতারের
বেড়ায় ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত।
ধর্মের নামে ধ্বংসের
চলছে তান্ডব লীলা।
শুধু কি তাই?
 আজও
নিরক্ষরতা ,কুসংস্কার
বেঁধেছে বাসা সমাজের
অনেক অনেক গভীরে।
আজও
তোমার নিরুপমার
 রেহাই মেলে নি
পণপ্রথার শাপে।
এখন মানুষ হয়েছে পশু
তাই শৈশবেই শিশু ধর্ষণে
পৈশাচিক জান্তব মগ্ন উল্লাসে।
চারিদিকে শুধু দুঃসহ 
পীড়ন অত্যাচার খেলা।
কন্ঠ আজ বাকরুদ্ধ
আমরা হয়েছি দিকভ্রষ্ট।
আজ পশ্চিমেও মেঘ 
 মেতেছে যুদ্ধ লীলায়।
মুক্তির পথ অন্বেষণ করি
তাই তোমাকে স্মরণ করি
 চেতনায় ঋদ্ধ হব বলে,
আজ আবার পঁচিশে বৈশাখে ।
সেই মানবিকতার দৃপ্ত বাণী
ধ্বনিত করো রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
আমরা ওরার কাঁটাতারের 
বেড়া ভেঙে নতুন দিশাতে।
নতুন ভারত গড়তে,
পৃথিবীতে মৈত্রীর বাণী প্রচারে,
আরো একবার ফিরে এসো,
প্রাণের ঠাকুর রবি ঠাকুর
আজ আবার পঁচিশে বৈশাখে।

০৬ মে ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৭০




উপন্যাস

 টানাপোড়েন ১৭০

নববর্ষের নবদ্যুতি

মমতা রায়চৌধুরী


"আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে,
শাখে শাখে পাখি ডাকে
কত শোভা চারি পাশে..…।'
রেখা আজকে মন খুলে গান গাইছে ভোর চারটায় উঠে। ফ্রেশ হয়ে আগে গোপালকে ভোগ নিবেদন করলো। তারপর চা, জলখাবার বানিয়ে ফেলল। মিলি আর ওর বাচ্চাদের ও খাবার বানিয়ে ফেলল তার পরে  আজকের নিজেদের খাবার বানানোর সময় হবে না ।গতকাল তো কথা হয়েই গেছিল মনোজের সঙ্গে।মনোজ বলেছিল ' নববর্ষে আমরা' বাইরের খাবার খাব।'
এক হিসেবে ভালোই হয়েছে ভোর ছয়টা থেকে প্রোগ্রাম শুরু' নারীশক্তি বাহিনীর' ।প্রতি বছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো 
হয় । রেখা প্রতিবারই ডিনাই করেছে কিন্তু এবছর একদম নাছোড়বান্দা দুর্গা ।যেতেই হবে। আর সত্যিই তো আর কতবার প্রত্যাখ্যান করা যায় এবার যে করেই হোক যেতেই হবে। তাই কোমর বেঁধে কাজকর্ম সেরে নিয়েছে ।তারপর মাসি এসে যা পারে করবে ।
মনোজকে ডাকতেই বলল 'আমি এখন ঘুমাবো আমাকে ডেকো না ।'
রেখা বলল 'বাহ বেশ তোমাকে আমি নববর্ষের উস করে  বেরিয়ে যাচ্ছি ।ঠিক আছে ।"
রেখা কাছে গিয়ে মনোজের কপালে চুম্বন করল মিষ্টি উষ্ণতায় ভরিয়ে দিয়ে বলল' শুভ নববর্ষ 
আমার কুম্ভকর্ণ।সবকিছু শুভ হোক। ভালো হোক আর আমাদের মধ্যে বিশ্বাস , ভালোবাসার সম্পর্কটা চির অটুট থাকুক।'
মনোজ ঘুমোলে আর কোন ওর হুঁশ থাকে না
 এর মধ্যেই ফোনের কলতান রেখা
তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করতেই, দুর্গা বলে উঠলো 'কি এবারও নিরাশ করবে নাকি?"
 রেখা বলল "একদমই নয় ।"
"কখন বের হচ্ছ ?"
"এই তো শাড়ি পরে তার পরেই তোমার কাছে চলে যাচ্ছি । '
দুর্গা বলল "আমারও হয়ে গেছে ।ঠিক আছে রাখছি ।আমার এদিকে অনেক কাজ করতে হবে তো ।আমিও বের হচ্ছি ।তাহলে দেখা হচ্ছে আমাদের গঙ্গার ঘাটে কেমন ।'
রেখা বলল '।
ফোন রাখতে গিয়ে দুর্গা বলল
" ভালো থেকো , নববর্ষে তোমাকে এটুকুই উইস করছি ।বাকিটুকু আমাদের এখানে এসে হবে কেমন। '
রেখাও বললো 'তুমিও ভালো থেকো।'
ফোনটা কাটতেই রেখা তড়িঘড়ি করে ওয়ারড্রব এর  কাছে দিয়ে শাড়ি চুজ করছে ,কোনটা 
পড়বে ?তার আগে দুর্গাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কোন ড্রেসকোড আছে কিনা?
 দুর্গা বলেছিল 'না ,না ,কোনো ড্রেস কোড  
নেই ।আমরা দোলের সময়  ড্রেসকোড করে
 থাকি ।যা খুশি পরে এসো ,তবে শাড়ি পরে
এসো । রেখার মনে হলো নীল সবুজ কমিশনের পিওর সিল্ক টাই বেটার ।যতই হোক আজকের দিনটা সবুজের মধ্যেই রাখতে চাইছে। 
মনোজকে আর একবার তাড়া দিল কিন্তু মনোজ কোন কথার সাড়া দিল না বলে রেখা বললো ', শোনো, চা  ফ্লাক্সে রেখে দিলাম ।খেয়ে নিও। আর পাম্প চালিয়ে জলটা তুলে নিও ।আমি বেরোচ্ছি ।রেখা গেট খুলতেই মিলি আর ওর বাচ্চারা ধরল ঘিরে। কিছুক্ষণ আদর করলো তারপর   কিছু বিস্কিট দিয়ে যেই টোটোতে উঠতে গেছে, অমনি ওরা বিস্কুট ফেলে দিয়ে টোটোর কাছে এসে হাজির। কিছুতেই টোটো ছাড়তে দেবে না। টোটোওয়ালা যাইহোক করে যেই স্টার্ট দিয়ে কিছু দূর এগিয়েছে ওরাও পেছনে পেছনে ছুটতে শুরু করেছে। রেখার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ও পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখছে কিভাবে অসহায়ের মতো ওরা ছুটছে। টোটোতে এক ভদ্রমহিলা ছিলেন ,উনি বললেন 'কিছুদূর গেলেই আর ওরা আসবে না ।ওদের তো আবার এরিয়া ভাগ করা থাকে। তবে বছরের শুরুতেই ওদের মনে কষ্ট দিতে চায় নি রেখা । মনে মনে শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল "ঈশ্বর ওদের ভালো রেখো, সুস্থ রেখো।'
মন খারাপ নিয়ে লেখা গঙ্গার ঘাটে পৌঁছালো।
গঙ্গার ঘাটে পৌঁছাতেই দুর্গা উষ্ণতায় স্বাগত জানালো আর আপ্লুত হয়ে বলল"ভীষন খুশী হয়েছি।"
রেখা বললো" সব অ্যারেঞ্জ হয়ে গেছে?'
দুর্গা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল 'এমনি সব রেডি হয়ে গেছে ,শুধু গানের মেয়েগুলো রাস্তায় আছে ওরা আসলেই  শুরু করে দেবো।'
বলতে বলতেই গানের মেয়েরা এসে হাজির।
প্রথমে দুর্গা বলল আজকের অনুষ্ঠান শুরু করার আগে নারীশক্তি বাহিনী সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করার কথা আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষিকা শ্রীমতি রেখা চৌধুরীকে অনুরোধ করছি কিছু বলার জন্য।
রেখা বলল 'আজকের অনুষ্ঠানের যারা উপস্থিত আছেন তাদের প্রত্যেককেই শুভ নববর্ষের হার্দিক শুভেচ্ছা, শুভকামনা, ভালোবাসা জানাই আগামী দিনগুলো সকলের ভালো কাটুক ।নববর্ষের নব দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ুক সকলের ভেতরে। জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির মানবতার বিকাশ ঘটুক সকলের ভেতরে। আর নারীশক্তি যেহেতু সকল অনাদৃত ,অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করে থাকে ।তাই সেই সমস্ত মানুষগুলোও  পাক নববর্ষের নব আলোকের সঞ্জীবনী সুধা। তাই নারীশক্তি বাহিনীর প্রতি ও থাকলেও হার্দিক শুভকামনা এগিয়ে চলুক এইভাবে সকলের জন্য কাজ করুক তাদের বার্তা হোক"... প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।'
দুর্গা বললহ্যাঁ সে তো ঠিকই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তাই ,আমরা যেন সত্যিই সে সমস্ত মানুষের জন্য কাজ করতে পারি ।তো আজকে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে উদ্বোধনী সংগীত এর মধ্যে দিয়ে আজকে সারাটা দিন চলবে এই গঙ্গাবক্ষে উন্মুক্ত পরিবেশে আমাদের এই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ।তবে রেখা তোমাকে ছাড়ছি না ,এরপরে তোমার লেখা কবিতা আবৃত্তি আমরা শুনব।'
প্রথমেই উদ্বোধনী সঙ্গীত শুরু হলো 'এসো হে বৈশাখ। এসো, এসো,
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
দূর হয়ে যাক আবর্জনা
যাক যাক যাক…..।"

পরপর চলতে থাকল অনুষ্ঠান পরবর্তী সূচি ।
এর মধ্যে তিনজন অন্ধ ভাই ওরাও এসে উপস্থিত হয়েছে নববর্ষের আলো ওরা ওদের গান, বাঁশির সুরের মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চাইছে ।ওরা মনেপ্রাণে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে।রেখার খুব ভালো লাগলো। পরবর্তীকালে ওদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলো যে ওদের পরিবারের ওরা তিন ভাইই অন্ধ কিন্তু ওদের কি প্রতিভা ! রেখা অবাক হয়ে গেল কি অসাধারণ বাঁশি বাজানো !একজন বাঁশিবাদক,একজন বেহালাবাদক ,আরেকজন সঙ্গীত শিল্পী।অসাধারণ আজকের দিনটা খুব ভালো কাটলো রেখার ।পরবর্তীকালে আরো গানের মধ্যে দিয়ে চলল অনুষ্ঠান। এর মধ্যে দিয়ে সুরাইয়া বলে একটি মেয়ে এত সুন্দর ফোক সঙ্গীত করল , যেমনি গান ,তেমনি সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন দারুন লাগলো। কিন্তু রেখা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারছে না ,তিন চারদিন ধরে হাতটা এত যন্ত্রনা। ওখানেই বসে বসে নিজের হাত নিজে মেসেজ করে যাচ্ছে ।দৃষ্টিকটু লাগছিল । উপস্থিত একজন বিখ্যাত শিল্পী দাদা বললেন হাতটাকে বিভিন্নভাবে নাড়াচাড়া করছো কি হয়েছে তোমার হাতে? সবকিছু খুলে বলার পর বললেন ইমিডিয়েট ডক্টরের পরামর্শ নিতে। কথা বলতে বলতেই মেঘ না চাইতে জল এর মত এর মতো 'মিরা দি বলে নারীশক্তি বাহিনীর এক দিদি এসে বলেন 'কী হয়েছে তোমার?'
রেখা  বললো 'আর বলবেন না দিদি, লজ্জা লাগছে কিন্তু আমি যন্ত্রনায় থাকতে পারছি না।'
 দিদি ছিলেন একজন সিনিয়র নার্স ।তিনি বলেন 'দেখি তোমার হাতটা।'
'রেখা হাতটা বাড়িয়ে দিতেই, দিদি, এমনভাবে  আঙ্গুল আর হাতটা ধরে মেসেজ করে দিলেন যেন কোন যাদু বলে সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা গায়েব। ' 
দিদি বললেন 'চিন্তা করো না ।তুমি, ইমিডিয়েট হসপিটালে যাবে দুই টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ওখানে ভালো ফিজিওথেরাপিস্ট আছে , দেখাবে।'
হসপিটালের কথা শুনে পাশেই এক ভদ্রমহিলা
নাক শিটকালেন আর বললেন ''?
আরো গভীর সুচিন্তিত পরামর্শ দিলেন
"প্রাইভেট হসপিটাল "এর।
মিরাদি কথাটা শুনে শান্ত অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন,এটা মাথায় রাখবেন হসপিটালেই কিন্তু ভালো ভালো ডাক্তার থাকেন ভালো কলেজ থেকে পাস করে সরকারি হসপিটালে ঢোকেন।'উনারাই প্রাইভেটে যখন প্র্যাকটিস করেন তখন আমরা জানতে চাই কোন সরকারি হসপিটালে জয়েন করেছেন?"
তারপর রেখার দিকে ফিরে বললেন "আমি যা বলছি তুমি শোনো, এখন এখানকার হসপিটালে যা ভাল ভাল ডাক্তার আছে ,আমি যেহেতু  হসপিটাল এর  সঙ্গে যুক্ত তাই আমি ভালো করে জানি।'
রেখা যদিও ভদ্রমহিলার কোথায় সেরকম সায় দিতে পারে নি।রেখান হসপিটাল এর পক্ষেই।
অত নাক উঁচু রেখার নয়।
এসব বলতে বলতেই দুর্গা এসে হাজির আবার এখানে কাজে রেখার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার জন্য।
প্রথম দিকটা একটু হকচকিয়ে গেছিল রেখা তারপর বললো ঠিক আছে মোবাইলের ভেতর থেকেই সেভ করা কবিতাটি পাঠ করছে।
কবিতার নাম ছিল 'নববর্ষ'।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে পৌঁছে রেখার কবিতা আবৃতি দিয়েই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবে বলে দুর্গা ঠিক করেছে।
ইতিমধ্যে মোবাইলে সেভ করা কবিতাটি পেয়ে গেছে এবার কবিতা পাঠ করছে"
বছরের অন্তিম লগ্নে
নববর্ষে উঠি মেতে।
দুঃখ হাসি কান্না ভুলে
ভুবন ভোলা বুলি বলে,
যন্ত্রণাগুলো সরিয়ে ফেলে।
আসুক যতই বাঁধার পাহাড়
নিকষ কালো অন্ধকার।
…….
হিংসা-দ্বেষ দ্বিধাদ্বন্দ্ব
ঝেড়ে ফেলেসব মতো দ্বৈত,
পার প্রাণে উঠুকতান
মানবিকতার জয়গান
ধর্ম জাতি ভেদাভেদ ভুলে
শান্তি বিরাজ পৃথিবীজুড়ে
……
পৃথিবীর সব লোকে
ভালো থাকুক বর্ষ জুড়ে।"
কবিতা শেষে দুর্গা বলল আমরা এই প্রার্থনাই করি রেখার কবিতার মত পৃথিবীজুড়ে শান্তি বিরাজিত হোক যার যার ভেতরে মতদ্বৈততা দ্বন্দ্ব আছে সব ঝেড়ে ফেলে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক নববর্ষের নব কিরনের দ্যুতি।

কবি সানি সরকার এর কবিতা "সত্যি"




সত্যি
সানি সরকার



মেঘ কেটে গেছে
এখন মুগ্ধতা ব্যতীত কোনো গন্ধ নেই
এখন এই সন্ধ্যেবেলা
                  আমার চড়ুই পাখিটির কাছে যাবো

এই জ্যোতির্মণ্ডলের মতন সত্যি চড়ুই

কোল পেতে আছে
               ঠোঁট পেতে আছে

সূর্যের মতন সত্যি তীব্র রশ্মি
চাঁদের মতন সত্যি অনন্ত উচ্ছ্বাস
বায়ুর মতন সত্যি আলিঙ্গন
                      জল ও মাটির ওপর হেঁটে যাওয়া

তিথি, পাতাগুলি কত চিক্কন-সুমধুর
                      রিদম তুলেছে শোনো

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা "আমাদের ইরার কথা" 




আমাদের ইরার কথা 

আমিনা তাবাসসুম 




অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে 
        সতর্কতা আসে পা বাড়ানোর আগে

অথচ কী অবলীলায়
এই উদ্ভিদ তোমার কথা বলে
আকাশ তোমার কথা বলে
এবং যে মেঘ প্রতিদিন বয়ঃজ্যোষ্ঠ হয়
হুমড়ি খায়, এগিয়ে চলে
তার চোখ তোমার কথা বলে

আমাদের নাভির থেকে উঠে আসে প্রেম
ঈশ্বর দৃষ্টি ফেরান না
সবকিছু দেখেন এবং খুব গোপনে গোপনে
রেখে যান আমাদের ইরা'কে

এখন কি আর ফেরার পথ থাকতে পারে

কবি তরুণ কুমার পাল এর কাবিতা "বল কবিতা সই"





বল কবিতা সই
তরুণ কুমার পাল

ওরে আয়রে কবিতা,তুই যে আমার মনের মিতা-
তুই সেই কবিতা, বক্ষে বহাস দুঃখ নদী- খরস্রোতা- 
প্রেয়সী কবিতা, তুই এ প্রানে -মুগ্ধ প্রেমের বিহ্বলতা-
অভিমানী কবিতা, তুই তো আমার বিরহ ব্যথা, ব্যাকুলতা-
ও কবিতা, তুইই প্রথম শুনিয়েছিস, বসন্তে কুহু কথা,
আজ তুই সেই কবিতা,এক একাকী জীবনে নীরবতা।

ওগো সই কবিতা,বক্ষে তোর অনেক ভাষা শব্দে হাঁটা-
তুইতো সেই কবিতা, সুরে তালে এক গান হয়ে যাস-  
গদ্যে,ছন্দে মধুর আভাস, কখনো হৃদে বিষের কাঁটা।
বল কবিতা,বক্ষে তোর এতো কষ্ট কেন- সেই কথাটা!
হঠাৎ করে, সে কেমনে হৃদয় ভাঙে- এবার বল কবিতা!
কেউ না বোঝে, তুই তো বুঝিস- এ ব্যর্থ প্রেমের যন্ত্রণাটা ?

কবি মৃধা আলাউদ্দিন এর কবিতা "লোকটা"




লোকটা
মৃধা আলাউদ্দিন



চুল-দাড়িতে লোকটারে ভাই যায় না মোটে চেনা
লোকটারে কেউ ক্ষুর-কাঁচি আর আয়না এনে দেনা।
দিনের বেলা ঘুমাই লোকটা, রাতে শুধু হাটে
খাইতে বসে ঠিক যখনি সূর্য নামে পাটে।
লোকটা আমার কেউ ছিলো না, মামার মামা, হরিপদোর কাকা
আর কিছু না, লাগতো ভালো লোকটার ভাই দেশের ছবি আঁকা।

০৪ মে ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬৯





উপন্যাস



 টানাপোড়েন  ১৬৯

একটা মিষ্টি গন্ধ

মমতা রায়চৌধুরী



বসন্তের শেষ লগ্নে এসে নীল গাজনের ঢেউ দোলা দিয়ে যায় রেখার মনে। আসলে কিছু কিছু অনুভূতি আছে যেগুলো শব্দের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করা যায় না আবার কিছু শব্দ আছে যার ভেতর দিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করা যায় ।এক বৈচিত্র্য বিরাজ করে মনের চোরা কুঠুরিতে। সকাল সকাল মনোজের ভালোবাসায় আপ্লুত রেখা স্কুলে পৌঁছে স্কুলের হাজারো কাজের মধ্যেও সুন্দর অনুভূতি গুলো বারবার অনুরণিত করে। শুকনো হৃদয় টাকে এক পশলা ভালোবাসার উষ্ণতায় ভিজিয়ে রাখে।
তারপরেও ক্লাসের ফাঁকে অফ পিরিওডে রেখার মন হু হু করতে থাকে কোন এক উদাস ঘুঘুর ডাকে। রেখাকে নিয়ে যায় তার অতীত স্মৃতিচারণায়। গতকালকে পাওয়া কবিতার বই স্বপ্নীল ভট্টাচার্যের লেখা, রেখা বারবার সেই বইটার গন্ধ নিতে থাকে আর ভাবে এর মধ্যেই তার অতৃপ্ত স্বপ্নগুলো তাড়া করে বেড়াচ্ছে। রেখা বইটা সঙ্গে করে নিয়ে গেছিল স্কুলে কিন্তু এই রাইটার বইটা এত টানছে কেন ?শুধুমাত্র নামের সাথে সাযুজ্য আছে বলে নাকি সত্যি সত্যি তার মনের বালিয়াড়িতে চাপা পড়ে যাওয়া নামটি হঠাৎ কোন এক বদলের বৃষ্টিতে সজীব হয়ে উঠেছে।
রেখা প্রথম দুটো ক্লাস নেওয়ার পর থার্ড পিরিওড অফ পাওয়াতে বইটা খুলে বসে।
একমনে বইটা খুলে কবিতা তে মনোনিবেশ করেছে। প্রথম কবিতার নাম" ভালোবাসা।"
কতবার কবিতাটা পড়ল রেখা।
কিছু শব্দ রেখার এত পরিচিত কেন?
যে শব্দগুলো বারবার শুনেছে কারোর কাছ 
থেকে। শব্দগুলোই রেখার মনের ভেতরে তোলপাড় শুরু করেছে।
"এসব কি হচ্ছে রেখার সাথে?"
রেখা যখনই একটি স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করে ঠিক তখনই যেন রেখার মন উথাল পাথাল  করে।
কবিতা পড়তে পড়তে একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
ঠিক সেই সময় শুভ্রা এ সে বলে' কি করছো গো রেখা দি,?"
রেখা ছিল অন্য জগতে।
রেখা বলল"এই বইগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।,
"কি নাম কবির?'
"স্বপ্নীল ভট্টাচার্য।'
শুভ্রা বললো 'এই নামটা না আজকাল লোকের মুখে মুখে ফিরছে।"
রেখা চুপ করে থাকে।
শুভ্রা আবার বলে 'এই কবিকে জানো কি বলা হয় ভালোবাসার কবি।"
রেখা একটু হেসে বলল 'ও তাই বুঝি?"
হ্যাঁগো অনেকের মনে নাকি এই  কবি  হার্টথ্রব হয়ে গেছে।
রেখা মনে মনে বলল" না ,শুধু হার্ট থ্রব অন্য একজনের…।'
শুভ্রা বললো 'অ্যাই রেখা দি কিছু মনে করবে না বলো?'

রেখা একটু হেসে বলে "কি জন্য মনে করব?'
'তাহলে সাহস করে বলেই ফেলি' শুভ্রা বললো।
"হ্যাঁ কি বলবি বল?'
"বলছি "মানে বলছিলাম…।"
রেখা পোলার কিন্তু কিন্তু করিস না তো
কি বলবি সেটাতো বল।"
' শুভ্রা আমতা-আমতা করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল"বলছি একদিনের জন্য তোমার এই কবিতার বই টা আমাকে দেবে?"
রেখা জানে বই আর বউ নাকি একবার হাতছাড়া হলে খুব মুশকিল হয়ে যায় ঘরে ফেরানো।
তাই রেখা চুপ করে থাকে।
শুভ্রা বললো আবার" তুমি চুপ করে রইলে যে।'
'কি বলি বলতো?'
সত্যি কথা বলতে কি বইটা হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না, আমার বনএখনো পড়া হয়নি।'
শুভ্রার মুখটা নিমেষের মধ্যে যেন বর্ষার মেঘ ঘনিয়ে আসল।।
শুভ্রা বললো 'জানো রেখা দি।'
রেখা কৌতুহল আর উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে 'হ্যা কি বলছিস বল?'
'কোথা থেকে যে শুরু করি বুঝতে পারছি না।'
এরমধ্যে পঞ্চমী দি  এসে খবর দিয়ে গেল" রেখাদি বড় দি আপনাকে ডাকছেন।'
রেখা বলল," যাই।'
 পঞ্চমীদি  বলল' তাড়াতাড়ি 
আসুন ।জরুরী তলব।'
রেখা হেসে ফেলে তারপর বলে 'তুমি যাও আমি এক্ষুনি আসছি।'
রেখা বড়দির ঘরের দিকে এগোয়
'মনের ভেতরে কবিতার লাইনগুলো বারবার মোচড় দিতে থাকে।'
রেখা বলল 'ও বড়দি আসব?'
বড়দি বললেন 'আরে এসো এসো তোমার জন্যই ওয়েট করছি।'
রেখা বড়দির  সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
বড়দি বললেন 'আবার ওয়ার্কশপে চিঠি এসেছে।'
রেখা খুব কৌতুহলী হয়ে বলল" ও তাই বুঝি?"
রেখা বলল" lকাউকে পাঠাচ্ছেন?
 বড়দি বললেন 'সেটাই তো ভাবছি?
কাকে পাঠাই বলতো?
রেখা বলল "কি বলি বলুন তো,,?
বরদি একটু চিন্তিত হয়ে বললেন এদিকে তোমার বোর্ডের খাতা এসেছে তোমাকেও বলতে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে?"
রেখা বলল আপনি একবার শুভ্রাকে বলে দেখতে পারেন,?
বড়দি নিরুৎসাহ ভাবে বললেন" ভালো জেনারেল নাম করেছ?'
রেখা বলল "তাহলে কাকে পাঠাবেন?'
ওটাই তো এদের তো শুধু "মুখেই মারিতং জগত।' কাজের বেলায় লবডঙ্কা।
"তোমার খাতা দেবার ডেট কবে?'
'এই তো সামনের সপ্তাহেই দিদি।:
"এদিকে সামনের সপ্তাহেই আছে ওয়র্কশপ।"
রেখা বুঝতে পারল বড়দি মনে মনে রেখাকেই  পছন্দ করছেন  ওয়ার্কশপে পাঠানোর জন্য।'
"ঠিক আছে , রেখা তুমি এসো। দেখি কি করা যায়।'
রেখা বলল 'আসছি তাহলে দিদি।'
এরমধ্যে টিফিন আওয়ার্স। ও যে  লাঞ্চ ডেলিভারি দেওয়ার জন্য অর্ডার করেছিল toসেটা এখনো এসে পৌঁছায়নি ভাবছে আর একবার ফোন করবে।
ঠিক এমন সময় পঞ্চমী দি এসে বলল রেখাদি আপনার বোধহয় কোন খাবার অর্ডার দেওয়া ছিল ।ওটা এসেছে।"
রেখা বেশি উৎসাহের সঙ্গে বলেছে আচ্ছা দাঁড়াতে বল ,।আমি যাচ্ছি।'
রেখা তাড়াতাড়ি যায়  ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে লাঞ্চের প্যাকেটটা সংগ্রহ করে আর টাকা মিটিয়ে দেয়।
খেতে যাবে ঠিক সেই সময় মনে হল 'মনোজ ও খাবার খাচ্ছে তো?'
এইভেবে রেখা একটা ফোন করল।
মনোজের রিংটোন বেজে যাচ্ছে'

বাবা লোকটার হলো কি?
আবার রিং করলো এবার অপরপ্রান্ত ফোন ধরল বলল ''হ্যালো"
বলছি তুমি লাঞ্চের অর্ডার দিয়েছো? খাচ্ছ খাবার?'
'হ্যাঁ দিয়েছি এখনো এসে পৌঁছায়নি।'
'তুমি খাচ্ছ?'
এইতো সবে বসেছি ভাবলাম তোমাকে একটা ফোন করে জেনে নি।
"বাবা তুমি আমার কথা মনে করলে?"
রেখা বললো "এমন করে বলো না যেন আমি তোমার কথা মনেই করি না।'
মনোজ বলল-এই রেখা রাগ করোনা আমি এমনি বললাম আসলে ফোনটা করলে আমার ভাল লাগল তাই।
আজকের সকালটা বেশ ভালো কাটলো বলো?
কে বলবে 40 বছর পেরিয়ে গেছ?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে বুঝেছি রাখছি এখন।"
মনোজ বলল-এই হচ্ছে তোমার দোষ জানো তো ?কোনো কথা বলতে গেলে তুমি আগে রেখে দাও ফোন।"
'এটা কথা বলার সময় বলো তুমি?
বাড়িতে থাকলে তো তোমার কথা বলার সময় থাকেনা তখন ফোন নিয়ে বসে থাকবো নয় টিভিতে খেলা নিয়ে বসে থাকো"।
মনোজ হো হো হো করে হেসে
 উঠলো ।'ঠিক আছে রাখ।'
রেখা খেতে বসে ভাবলো কবিতার বই টা একটু খুলে পড়বে। কিন্তু কোথাও কবিতার বই টা খুজে পাচ্ছে না। রেখা খাওয়া বাদ দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে।
হঠাৎ শুভ্রার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ্র একমনে বইটা পড়ছে।
রেখা বলল শুভ্র তুই কি বইটা নিলি?
এতটাই কবিতায় মনোনিবেশ করেছে যে রেখার প্রথম ডাক শুনতে পেল না।
রেখার এমনিতেই মনে মনে রাগ রয়েছে কিন্তু প্রকাশ করছে না তারপর আবার বলল" শুভ্রা তুই কি আমার বইটা নিয়েছিস?"
"কি বলছো রেখা দি?"
'বলছিআমার কবিতার বই টা কি তোর কাছে?'
হ্যাঁ'
কিছু মনে করিস না তুই একবার আমাকে বলেছিস যে আমি বইটা নিয়েছি এটা কিন্তু মোটেই ঠিক নয় আমি খাওয়া বাদ দিয়ে তন্নতন্ন করে বইটা খুঁজে যাচ্ছি।
শুভ্রা বললো 'এই রেখা দি, কিছু মনে করো না ।আসলে তখন তুমি ফোনে কথা বলছিলে তো  বইটা তোমার টেবিলের উপরে ছিলো। আমি বললাম ততক্ষণ আমি একটু যদি পড়ে নি।'
রেখা আর কোন কথা বলল না।
রেখা তখন ভালো করে হাত ধুয়ে এসে খেতে বসলো আর মনে মনে ভাবল কিরকম নির্লজ্জ দেখো বইটা নিল। এখন তো  সেটা ফেরত দেবে, সে সবের কোন বালাই নেই।"
রেখা মনে মনে ভাবল খাওয়া শেষ করে যদি বইটা না পায় আজকে শুভ্রাকে দু-চার কথা শুনিয়ে দেবে।
খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবে শুভ্রা এসে বইটা রেখার কাছে দিল।
বলল '
রেখাদি এই নাও তোমার বই।"
রেখা বইটাকে হাতে পেয়ে মনেপ্রাণে সেই বইয়ের গন্ধ নিল। শুধু কি বইটার জন্য নাকি বইয়ের ভেতরে যার লেখাগুলো ফুটে আছে ,সেই প্রতিটা শব্দের সঙ্গে যার ভালোবাসা জড়িয়ে আছে তার জন্য।
এই মিষ্টি গন্ধটা যে তার আবহমানকালের।

Jhhj

LOVE

০৩ মে ২০২২

কবি মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬৮




উপন্যাস



 টানাপোড়েন  ১৬৮

একরাশ টাটকা বাতাস


মমতা রায়চৌধুরী 




গতরাত্রে রেখা বেশ দেরী করেই ঘুমাতে গেছিল। গত সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাড়িটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। কালকের এত সুন্দর পরিবেশের সুঘ্রান আজও রয়ে গেছে। সকালে উঠে দূরে থাকুন গুনগুন করে গান গাইছে-
"এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে ,দেখা পেলেম ফাল্গুনে….।*

মনোজের ও ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠে না । রেখা বুঝতেও  পারে নি  মনোজের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। রেখা গান শেষ করে মনোজের পাশে এসে বসে তারপর আলতো হাতে চুলগুলো নেড়ে দিতেt লাগলো। একসময় কপালে আলতো চুম্বন করে, আর ঠিক তখনই মনোজ রেখাএতকে বুকের কাছে টেনে নেয়।
"এ কি কী করছ?'
"কি করছি?'
'নিজের বউকে একটু আদর করছি।'"
সকালেই যেন পারদের উষ্ণতা আস্তে আস্তে চড়ছে।দুজনের বুকে তখন ঝড়। কোথা থেকে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া দুজনকে এলোমেলো করে ফেলবে। ঝড়  থামল অনেকক্ষণ পর। কালবৈশাখী চলে যাবার পর চারিদিকটা যেমন শান্ত সমাহিত, একটা স্নিগ্ধতায় ভরে যায় পরিপূর্ণতায়। মনোজ রেখাকে ঠিক সেরকম মনে হল।
মনোজ আস্তে আস্তে রেখা কে ডাকলো আজকে 'স্কুলে যাবে তো?
'হ্যাঁ যাবো তো দেখো কেমন দেরি করে দিলে ভালো লাগে না ছাই।'
 দেরি হয়ে যায় নি জীবনে এই সময়টুকু অনেক দরকার আছে বুঝেছ গালটা ধরে একটু আদর করে দিয়ে বলল।
"এখন আমি উঠছি।"
"আর একটু থাকো না?'
"এ কি স্কুলে যাব না নাকি?"
"ঠিক আছে তাই হোক।'
রেখা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল তারপর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ গুলো করে চায়ের জল বসালো কিন্তু তখনও মাসি আসেনি।
মনোজ ও উঠে পড়েছে। চায়ের নেশা এবার ।
পেপার টা পড়তে পড়তে মনোজ বলল' চা টা দিলে?"
_"হ্যাঁ দিয়েছি তো?'
"কোথায় রেখেছো?"
"এ বাবা ঘরে রেখে এসেছি."
"ও সরি খেয়াল করিনি।'
"কি বলতো আজকে কি মাসি আসবে না? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেখা বলল" না আর বসে থাকলে হবে না ।নাহলে স্কুলে যেতে পারবো না। কাজ গোছাতে  হবে।'
"ঠিক আছে আমি আজকে তোমাকে স্টেশনে ড্রপ করে দেবো।"
'আচ্ছা শোনো না তোমার অত চাপ নিতে হবে না আজকে ব্রেকফাস্টে বানিয়ে ফেলো আর মিলি আরো বাচ্চাদের খাবার টা তৈরি করে 
ফেলো ।বাকি আজকে লাঞ্চ আমিও করে নেব অফিসে আর তোমাদের ওখানে ডেলিভারি দেয় বলেছ খাবার ।খাবার অর্ডার করে নিয়ে নিও।"
"একদম ঠিক বলেছ আজকে আর ভালো লাগছে না।"
মনোজ  রেখার দিকে তাকিয়ে বলল" "আমি জানি তো?"
"হ্যাঁ তুমি তো সবই জানো। মাঝে মাঝে তোমার কি হয় বল ত তখন যেন আমাকে তুমি সহ্য করতে পারো না জানো তখন আমার কত কষ্ট হয়।
মনোজ মনে মনে ভাবল একথাটাও অনেকবার ভেবেছি কেন যে রকম হয় সেটা মনে জানে না মন শুধু বলল তার জন্য আমি দুঃখিত।
আজকে ব্রেকফাস্টে কি বানাচ্ছ?
কি খাবে বলো?
কি খাই বলতো ফ্রিজে পনির আছে?
রেখা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল হ্যাঁ আছে কেন?
পনির রেজালা করে দাও।
Ok ডিয়ার।
এরমধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলো। রেখা রান্নাঘর থেকে বলল দেখতো কে আসলো মাসি আসলো কিনা?
হ্যাঁ যাই।
মনের দরজা খুলতেই মিলল বাচ্চারা এসে ওদের ভাষায় কিছু বলতে লাগলো মনোজ বলল একটু ওয়েট কর ,দেব , বিস্কুট দেব।
আপনি কে?
আমি মাসি মানে আপনাদের বাড়িতে যে কাজ করে পাশের বাড়ির আমাকে খবর দিতে বলা হয়েছিল তাই এসেছি।
হ্যাঁ বলুন
আজকে মাসী কাজে আসতে পারবে না?
মনোজ বললো' কেন কিছু হয়েছে কি?'
"হ্যাঁ?'
'মাসির বৌমার খুব শরীর খারাপ।'
'ও আচ্ছা ,আচ্ছা, ঠিক আছে।"
এর মধ্যে সাইকেল নিয়ে পার্থ যাচ্ছিল মনোজকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল 'কি দাদা এখানে দাঁড়িয়ে?"
"আরে ওই কাজের মাসি কাজে আসবে না, তাই একজন খবর দিতে এসেছিল।"
রেখা রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে ডাকলো কিগো কে এসেছে?"
"পার্থ।'
"ও আমি ভাবলাম মাসি এসেছে।'
"মাসি আজকে কাজে আসবে না খবর দিতে এসেছিল।"
পার্থ চলে গেল?
না। কেন?
আরে ওকে তো সেই ইলিশ মাছের দাম আর বার্সাকে দামটা দেয়া হয়নি দিয়ে দাও।
পার্থ কথাটা শুনতে পেয়ে বললো আচ্ছা ঠিক আছে থাক না।
রেখা বললো ',না তা হয় না।'
পার্থ বলল আচ্ছা আমি কি এদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি কোথাও?
রেখা বলল" না তা আর হচ্ছে না।"
তোমাকে ধরা যায়না কবে ভুলে যাব তখন সেই চেম্যানের মত অবস্থা হবে।
বৌদি তাহলে কি তুমি আমাকে সেই সুদখোর মহাজন ভাবছ? পার্থ হাসতে হাসতে বলল,.
রেখা বলল না সেই সুর মহজন তুমি নও কিন্তু দেখো এতদিন ধরে যদি টাকাটা ফেলে রাখ তাহলে কি আমার দিক থেকে তো ঋণের বোঝা বাড়ছে।
বাবা বৌদি সত্যি তোমার সঙ্গে পারা যাবেনা কথায়।
ঠিক আছে দাও 
সেদিন ইলিশ মাছটা কত দাম নিয়েছিল?
 তেরোশো টাকা।
আর পাট শাক এর দাম?
ক আঁটি দিয়েছিলাম।
দুআটি বোধহয়।
দিওনা পনেরো কুড়ি টাকা দিও।
মনোজ বল পার্থ দাঁড়াও টাকাটা নিয়ে যাও ভাই ঋণ মুক্ত করো।
আরে ভেতরে এসো না পার্থ চা খেয়ে যাও।
ঠিক আছে দাও তোমার হাতের লিকার চা টা কিন্তু দারুন হয় বৌদি?
ঘর থেকে টাকা নিয়ে এসে পার্থক্যে দিল আর বলল দারুন হয় না বল?
আমি তো ফিদা হয়ে গেছি।
মনোজ হাসতে হাসতে বললো তুমিও ফিদা হয়ে গেছো
একদম দাদা।
রেখা বলল পার্থ কালকের জন্য আর একবার তোমাকে স্পেশাল থ্যাংকস জানাচ্ছি।
ও আচ্ছা আচ্ছা।
পরের বারের জন্য রেডি থেকো বৌদি।
এবার তো হঠাৎ করে জানতে পারলাম।
পরেরবার অন্যরকমভাবে করব।
এই নাও চা নাও।
বিস্কিট তুলে নাও বৌদি খাব না বিস্কিট খাব না।
আরে বাবা এটা ভালো বিস্কিট খাও না ব্রিটানিয়া নিউ টি চয়েস  ডাইজেস্টিভ।
ঠিক আছে তাহলে একটা দাও।
কাকিমা কি করছে পার্থ?
ওই যে  হাঁটুর ব্যথা।
সত্যি আসলে কাকিমার অনেকটা কষ্ট হয়েছে কালকে।
আরে না বৌদি মায়ের এমনিতেই ব্যথা আছে।
এমনি সময়ে পার্থর ফোন বেজে উঠলো।
পার্থ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল হ্যালো
আরে আমাদের গাড়িটা এখন এসে পৌঁছায়নি দাদা।
কে বলছেন অবিনাশবাবু?
হ্যাঁ আমাদের এয়ারপোর্টে যেতে হবে তো?
কিন্তু ও তো অনেক আগে বেরিয়ে গেছে ঠিক আছে আমি ফোন করে দেখছি।
মনোজ বলল কি হল পার্থ?
নতুন ড্রাইভারটা কে নিয়ে খুব অশান্তি হচ্ছে সঠিক টাইমে পৌঁছাবে না কাস্টমারের বাড়ি।
একবার তো ফোন করে ড্রাইভারকে বললো আরে কোথায় আছো তারাতারি যাও অবিনাশবাবু ফোন করেছিলেন,?
হ্যাঁ আমিতো দাঁড়িয়ে আছি।
তাহলে কি তুমি ঠিকানা ভুল করলে?
তুমি কোন ব্লকে গেলে?
আমি এ ব্লকে আছি।
তোমাকে কখন বললাম যে এ ব্লকে বাড়ি তার তো বি ব্লকেই বাড়ি।
ও আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি এক্ষুনি যাচ্ছি।
পার্থ ফোনটা ছেড়ে দিয়ে বিরক্তিভরে বলে দেখলে দাদা কাদের নিয়ে কাজ করি কানে কি কম শোনে কিনা কে জানে,,?
ঠিক আছে দাদা আসছি ।
বৌদি আসছি।
মনোজ বললো:" মিলিদের খাবার রেডি হয়ে গেছে?"রেখা ঝটপট বেসিনে কয়েকটা বাসন মেজে নিতে নিতে বলল "হ্যা হয়ে গেছে।'
মনোজ বলল আমি বাথরুমে ঢুকলাম স্নান করতে।

দেখা বলে এখন তুমি বাথরুমে ঢুকছো আমি কখন তাহলে বাথরুমে যাবো বলো?
আমার বেশি সময় লাগবে না।
তোমাকে কি বলবো বল কাজের সময় বাথরুম ব্লক করে বসে থাকবে।
মনোজ তাড়াতাড়ি গিয়ে বাথরুমের দরজা লাগাল।
রেখাও এদিকে ব্রেকফাস্ট রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রাখল। যেটুকু কাজ এগোনো যায়।
রেখা এবার বাথরুমের দরজায় কে কড়া নাড়লো হয়েছে তোমার?
মনোজ বাথরুম থেকে বলল দাঁড়াও বেরোচ্ছি।
আরে বেরোচ্ছি বেরোচ্ছি করলে হবেনা বেরোতে হবে।
এরপর মনোজ বাথরুম থেকে বেরোলে রেখা বাথরুমের দিকে গেল স্নান করতে।
তারা দিল রেখাকে তাড়াতাড়ি করো ট্রেনের টাইম হয়ে যাবে কিন্তু রেখাও হন্তদন্ত হয়ে নিজেকে রেডি করে ফেলল।
রেখা খেয়াল করল মনোজ একাই ব্রেকফাস্ট নিয়ে নিচ্ছে।
রেখা নিজের ব্রেকফাস্টটা টিফিন বক্সে নিয়ে নিল খাবার টাইম নেই।
মনোজ তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বাইকটা বের করল।
রেখাও তাড়াতাড়ি ব্যাগ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
তারপর স্টেশন উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
একরাশ টাটকা ভালোবাসা যেন উপহার পেল।

Hhnn

LOVE

০২ মে ২০২২

কবি সানি সরকার এর কবিতা "জলের মতন সহজ" 





জলের মতন সহজ 
সানি সরকার 


এই একটি সময় কাঠের মতন অসাড় 

এবং এইখানে কিছু বিদ্যুৎচমক 

এখন শুধু দেখার
নিজের ভেতরের পরতগুলিকে খুলে খুলে 

মৃদঙ্গ বাজছে শুনতে পাচ্ছি 

মরুভূমির নিস্তব্ধের ভেতর চকমোকি 
আলোর মধ্যিখানে সনাতন আনন্দ 

এই ছাদের ওপর থেকে একজন রাত পাহারা দিচ্ছে

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা "আজ নয় কাল"




আজ নয় কাল
আমিনা তাবাসসুম



আজ নয় কাল
এইভাবেই এগিয়ে আসে এক একটি তারিখ

আমরা অপেক্ষায় অধীর হই

যার থেকে খুশি চলে গেছে
যার নেই দু মুঠো সকাল
চোখের নিচে যার ঢেউ ওঠে রোজ
এবং যে অন্ধকারের মধ্যে চলে গেছে 
                               বাতাসের ভোর

সবাই নিমেষের থেকে সময় চুরি করি
ভুলে যায়
নিঃস্ব হই
বুকে শুধু লেগে থাকে চকমকি শোর
আজ নয় কাল
         ঈদ উল ফিতর

০১ মে ২০২২

কবি মোঃসেলিম মিয়া  এর কবিতা "ঈদ"





ঈদ
মোঃসেলিম মিয়া 

ঈদ মানে খুশির জোয়ার কেনাকাটা বেশ,
নতুন সাজ পোশাকে তাই ঘুচবে কষ্ট রেশ!
সাধ্যমত কেনা কাটা নেইকো কমতি যার,
গরিব দুঃখী নেই ভেদাভেদ  শত কষ্ট আর।
গোমড়া মুখে হাসি ফোটাতে বাড়িয়ে দিতে হাত,
অর্থ কুড়ি কাপড় দিয়ে  রাঙিয়ে দিবো চাঁদ রাত!
পাড়া পড়শীর খোঁজ নিবো কষ্টের অনুভূতি,
বিবেক দিয়ে অর্থ দিয়ে দেখাবো সহানুভূতি। 
যাকাত ফিতরা পরিমিত মিটিয়ে দিবো তাঁরে,
গরীব দুঃখীর হক মিটাতে যাবো দ্বারে দ্বারে।
পৌঁছে দিবো ঈদ শুভেচ্ছা অনাহারীর ঘরে।
সেমাই সূজি মিষ্টিমুখ বাহারি খাবার যতো,
 সাজ গোজে সব হবো  জমায়েত মাঠে অবিরত।
সুগন্ধি আতর মাখিয়ে গায়ে পায়ে হেঁটে মেঠু পথ,
চোখ গড়িয়ে নোনা জ্বলে  গুনা মাপের নছিয়ত!
আমরা পাপি আমরা তাপি গুনার নাইকো শেষ? 
পানা চাইতে তাইতো সবাই ঈদের মাঠে জমায়েত। 
ঈমাম সাহেব দিবেন খুতবা মুক্তির দিশা পেতে,
ধ্যানে মগ্ন নামাজ শেষে মোনাজাতে  বসে।
সবার হয়ে আল্লাহর কাছে করবো ফরিয়াদ, 
আমরা সবাই গুনাহ্গার বান্দা ফিরাইও না কারো হাত।
গরীব দুঃখী নাই ভেদাভেদ 
একই কাতারে সামিল,
সহমর্মিতার কান্না দিয়ে
ঘুচিয়ে  দিবো গ্লাণি।
ঈদ অনাবিল হাসি খুশি ধর্মীয়  উৎসব মানি!!!