উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৬৮
একরাশ টাটকা বাতাস
মমতা রায়চৌধুরী
গতরাত্রে রেখা বেশ দেরী করেই ঘুমাতে গেছিল। গত সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাড়িটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। কালকের এত সুন্দর পরিবেশের সুঘ্রান আজও রয়ে গেছে। সকালে উঠে দূরে থাকুন গুনগুন করে গান গাইছে-
"এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে ,দেখা পেলেম ফাল্গুনে….।*
মনোজের ও ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠে না । রেখা বুঝতেও পারে নি মনোজের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। রেখা গান শেষ করে মনোজের পাশে এসে বসে তারপর আলতো হাতে চুলগুলো নেড়ে দিতেt লাগলো। একসময় কপালে আলতো চুম্বন করে, আর ঠিক তখনই মনোজ রেখাএতকে বুকের কাছে টেনে নেয়।
"এ কি কী করছ?'
"কি করছি?'
'নিজের বউকে একটু আদর করছি।'"
সকালেই যেন পারদের উষ্ণতা আস্তে আস্তে চড়ছে।দুজনের বুকে তখন ঝড়। কোথা থেকে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া দুজনকে এলোমেলো করে ফেলবে। ঝড় থামল অনেকক্ষণ পর। কালবৈশাখী চলে যাবার পর চারিদিকটা যেমন শান্ত সমাহিত, একটা স্নিগ্ধতায় ভরে যায় পরিপূর্ণতায়। মনোজ রেখাকে ঠিক সেরকম মনে হল।
মনোজ আস্তে আস্তে রেখা কে ডাকলো আজকে 'স্কুলে যাবে তো?
'হ্যাঁ যাবো তো দেখো কেমন দেরি করে দিলে ভালো লাগে না ছাই।'
দেরি হয়ে যায় নি জীবনে এই সময়টুকু অনেক দরকার আছে বুঝেছ গালটা ধরে একটু আদর করে দিয়ে বলল।
"এখন আমি উঠছি।"
"আর একটু থাকো না?'
"এ কি স্কুলে যাব না নাকি?"
"ঠিক আছে তাই হোক।'
রেখা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল তারপর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ গুলো করে চায়ের জল বসালো কিন্তু তখনও মাসি আসেনি।
মনোজ ও উঠে পড়েছে। চায়ের নেশা এবার ।
পেপার টা পড়তে পড়তে মনোজ বলল' চা টা দিলে?"
_"হ্যাঁ দিয়েছি তো?'
"কোথায় রেখেছো?"
"এ বাবা ঘরে রেখে এসেছি."
"ও সরি খেয়াল করিনি।'
"কি বলতো আজকে কি মাসি আসবে না? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেখা বলল" না আর বসে থাকলে হবে না ।নাহলে স্কুলে যেতে পারবো না। কাজ গোছাতে হবে।'
"ঠিক আছে আমি আজকে তোমাকে স্টেশনে ড্রপ করে দেবো।"
'আচ্ছা শোনো না তোমার অত চাপ নিতে হবে না আজকে ব্রেকফাস্টে বানিয়ে ফেলো আর মিলি আরো বাচ্চাদের খাবার টা তৈরি করে
ফেলো ।বাকি আজকে লাঞ্চ আমিও করে নেব অফিসে আর তোমাদের ওখানে ডেলিভারি দেয় বলেছ খাবার ।খাবার অর্ডার করে নিয়ে নিও।"
"একদম ঠিক বলেছ আজকে আর ভালো লাগছে না।"
মনোজ রেখার দিকে তাকিয়ে বলল" "আমি জানি তো?"
"হ্যাঁ তুমি তো সবই জানো। মাঝে মাঝে তোমার কি হয় বল ত তখন যেন আমাকে তুমি সহ্য করতে পারো না জানো তখন আমার কত কষ্ট হয়।
মনোজ মনে মনে ভাবল একথাটাও অনেকবার ভেবেছি কেন যে রকম হয় সেটা মনে জানে না মন শুধু বলল তার জন্য আমি দুঃখিত।
আজকে ব্রেকফাস্টে কি বানাচ্ছ?
কি খাবে বলো?
কি খাই বলতো ফ্রিজে পনির আছে?
রেখা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল হ্যাঁ আছে কেন?
পনির রেজালা করে দাও।
Ok ডিয়ার।
এরমধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলো। রেখা রান্নাঘর থেকে বলল দেখতো কে আসলো মাসি আসলো কিনা?
হ্যাঁ যাই।
মনের দরজা খুলতেই মিলল বাচ্চারা এসে ওদের ভাষায় কিছু বলতে লাগলো মনোজ বলল একটু ওয়েট কর ,দেব , বিস্কুট দেব।
আপনি কে?
আমি মাসি মানে আপনাদের বাড়িতে যে কাজ করে পাশের বাড়ির আমাকে খবর দিতে বলা হয়েছিল তাই এসেছি।
হ্যাঁ বলুন
আজকে মাসী কাজে আসতে পারবে না?
মনোজ বললো' কেন কিছু হয়েছে কি?'
"হ্যাঁ?'
'মাসির বৌমার খুব শরীর খারাপ।'
'ও আচ্ছা ,আচ্ছা, ঠিক আছে।"
এর মধ্যে সাইকেল নিয়ে পার্থ যাচ্ছিল মনোজকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল 'কি দাদা এখানে দাঁড়িয়ে?"
"আরে ওই কাজের মাসি কাজে আসবে না, তাই একজন খবর দিতে এসেছিল।"
রেখা রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে ডাকলো কিগো কে এসেছে?"
"পার্থ।'
"ও আমি ভাবলাম মাসি এসেছে।'
"মাসি আজকে কাজে আসবে না খবর দিতে এসেছিল।"
পার্থ চলে গেল?
না। কেন?
আরে ওকে তো সেই ইলিশ মাছের দাম আর বার্সাকে দামটা দেয়া হয়নি দিয়ে দাও।
পার্থ কথাটা শুনতে পেয়ে বললো আচ্ছা ঠিক আছে থাক না।
রেখা বললো ',না তা হয় না।'
পার্থ বলল আচ্ছা আমি কি এদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি কোথাও?
রেখা বলল" না তা আর হচ্ছে না।"
তোমাকে ধরা যায়না কবে ভুলে যাব তখন সেই চেম্যানের মত অবস্থা হবে।
বৌদি তাহলে কি তুমি আমাকে সেই সুদখোর মহাজন ভাবছ? পার্থ হাসতে হাসতে বলল,.
রেখা বলল না সেই সুর মহজন তুমি নও কিন্তু দেখো এতদিন ধরে যদি টাকাটা ফেলে রাখ তাহলে কি আমার দিক থেকে তো ঋণের বোঝা বাড়ছে।
বাবা বৌদি সত্যি তোমার সঙ্গে পারা যাবেনা কথায়।
ঠিক আছে দাও
সেদিন ইলিশ মাছটা কত দাম নিয়েছিল?
তেরোশো টাকা।
আর পাট শাক এর দাম?
ক আঁটি দিয়েছিলাম।
দুআটি বোধহয়।
দিওনা পনেরো কুড়ি টাকা দিও।
মনোজ বল পার্থ দাঁড়াও টাকাটা নিয়ে যাও ভাই ঋণ মুক্ত করো।
আরে ভেতরে এসো না পার্থ চা খেয়ে যাও।
ঠিক আছে দাও তোমার হাতের লিকার চা টা কিন্তু দারুন হয় বৌদি?
ঘর থেকে টাকা নিয়ে এসে পার্থক্যে দিল আর বলল দারুন হয় না বল?
আমি তো ফিদা হয়ে গেছি।
মনোজ হাসতে হাসতে বললো তুমিও ফিদা হয়ে গেছো
একদম দাদা।
রেখা বলল পার্থ কালকের জন্য আর একবার তোমাকে স্পেশাল থ্যাংকস জানাচ্ছি।
ও আচ্ছা আচ্ছা।
পরের বারের জন্য রেডি থেকো বৌদি।
এবার তো হঠাৎ করে জানতে পারলাম।
পরেরবার অন্যরকমভাবে করব।
এই নাও চা নাও।
বিস্কিট তুলে নাও বৌদি খাব না বিস্কিট খাব না।
আরে বাবা এটা ভালো বিস্কিট খাও না ব্রিটানিয়া নিউ টি চয়েস ডাইজেস্টিভ।
ঠিক আছে তাহলে একটা দাও।
কাকিমা কি করছে পার্থ?
ওই যে হাঁটুর ব্যথা।
সত্যি আসলে কাকিমার অনেকটা কষ্ট হয়েছে কালকে।
আরে না বৌদি মায়ের এমনিতেই ব্যথা আছে।
এমনি সময়ে পার্থর ফোন বেজে উঠলো।
পার্থ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল হ্যালো
আরে আমাদের গাড়িটা এখন এসে পৌঁছায়নি দাদা।
কে বলছেন অবিনাশবাবু?
হ্যাঁ আমাদের এয়ারপোর্টে যেতে হবে তো?
কিন্তু ও তো অনেক আগে বেরিয়ে গেছে ঠিক আছে আমি ফোন করে দেখছি।
মনোজ বলল কি হল পার্থ?
নতুন ড্রাইভারটা কে নিয়ে খুব অশান্তি হচ্ছে সঠিক টাইমে পৌঁছাবে না কাস্টমারের বাড়ি।
একবার তো ফোন করে ড্রাইভারকে বললো আরে কোথায় আছো তারাতারি যাও অবিনাশবাবু ফোন করেছিলেন,?
হ্যাঁ আমিতো দাঁড়িয়ে আছি।
তাহলে কি তুমি ঠিকানা ভুল করলে?
তুমি কোন ব্লকে গেলে?
আমি এ ব্লকে আছি।
তোমাকে কখন বললাম যে এ ব্লকে বাড়ি তার তো বি ব্লকেই বাড়ি।
ও আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি এক্ষুনি যাচ্ছি।
পার্থ ফোনটা ছেড়ে দিয়ে বিরক্তিভরে বলে দেখলে দাদা কাদের নিয়ে কাজ করি কানে কি কম শোনে কিনা কে জানে,,?
ঠিক আছে দাদা আসছি ।
বৌদি আসছি।
মনোজ বললো:" মিলিদের খাবার রেডি হয়ে গেছে?"রেখা ঝটপট বেসিনে কয়েকটা বাসন মেজে নিতে নিতে বলল "হ্যা হয়ে গেছে।'
মনোজ বলল আমি বাথরুমে ঢুকলাম স্নান করতে।
দেখা বলে এখন তুমি বাথরুমে ঢুকছো আমি কখন তাহলে বাথরুমে যাবো বলো?
আমার বেশি সময় লাগবে না।
তোমাকে কি বলবো বল কাজের সময় বাথরুম ব্লক করে বসে থাকবে।
মনোজ তাড়াতাড়ি গিয়ে বাথরুমের দরজা লাগাল।
রেখাও এদিকে ব্রেকফাস্ট রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রাখল। যেটুকু কাজ এগোনো যায়।
রেখা এবার বাথরুমের দরজায় কে কড়া নাড়লো হয়েছে তোমার?
মনোজ বাথরুম থেকে বলল দাঁড়াও বেরোচ্ছি।
আরে বেরোচ্ছি বেরোচ্ছি করলে হবেনা বেরোতে হবে।
এরপর মনোজ বাথরুম থেকে বেরোলে রেখা বাথরুমের দিকে গেল স্নান করতে।
তারা দিল রেখাকে তাড়াতাড়ি করো ট্রেনের টাইম হয়ে যাবে কিন্তু রেখাও হন্তদন্ত হয়ে নিজেকে রেডি করে ফেলল।
রেখা খেয়াল করল মনোজ একাই ব্রেকফাস্ট নিয়ে নিচ্ছে।
রেখা নিজের ব্রেকফাস্টটা টিফিন বক্সে নিয়ে নিল খাবার টাইম নেই।
মনোজ তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বাইকটা বের করল।
রেখাও তাড়াতাড়ি ব্যাগ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
তারপর স্টেশন উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
একরাশ টাটকা ভালোবাসা যেন উপহার পেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much