আন্তর্জাতিক নারী দিবস
সুপর্ণা চ্যাটার্জ্জী
আজ এই বিশেষ দিনে সারা বিশ্বের সকল নারীদেরকে জানাই আমার পরম শ্রদ্ধা,শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। ভাবলে সত্যি অবাক লাগে, যে নারীগর্ভে আমার মায়ের জন্ম তিনি আমার দিদা।আবার যে নারীর গর্ভে আমার জন্ম তিনি আমার মা। আবার সেই আমার গর্ভে যার জন্ম সে তো আমারই কন্যা আর তার গর্ভে যার জন্ম সে আমার নাতনি। জীবনের এক এক ধাপে নারী এক এক নামে পরিচিতি।
আবার বিবাহের পরে প্রথমে এই নারীই বৌমা,তারপর স্ত্রী,তারপর মা, দিদিমা নয়তো ঠাকুমা।এইভাবে চলে আসছে নারীর জীবন।কিন্তু তারই মাঝে এই নারী নিজেদের সীমিত গন্ডীকে এক বিরাট আকার দিয়েছে। দিদিমা,ঠাকুমা ও মায়ের কষ্টকর জীবনের গল্প ও চাক্ষুষ উদাহরণ থেকে নারী তার প্রতিবাদ্ জানাতে আর পিছপা হয় না।
আজ তারা শুধু পুরুষের ভোগ্যবস্তু বা সন্তানের জন্মদাত্রীই নয়। সংসার ছাড়াও তাদের একটা স্বাধীন জগৎ আছে। যেখানে তারা নিজ সংসার ছাড়াও নিজ সমাজের,নিজ রাজ্যের, নিজ দেশের ও দশের এমনকি সারা বিশ্বের দরবারে নিজেদের মূল্যবোধকে,নিজ যোগ্যতাকে সকলের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
তবে এখনও বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষতান্ত্রিক পরিবার আছে যেখানে নারী নিজেদেরকে অন্ধকার জগতে অলসের মতো কাটিয়ে দিতেই পছন্দ করে। নিজেদের অক্ষমতাকে নিজেদের পরিবারের নারীদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
সুতরাং সব থেকে শঙ্কা ও বিষাদময় বিষয় হল তারা নারী হয়ে আসলে নারীদেরই বড় শত্রু। তাদের ধারণা মহিলারা নাকি বেশী শিক্ষীত হলে তারা মনোযোগ সহকারে সংসার করবে না।যদিও এটা তার শাশুড়ির কথা। আজও তিনি তাতেই বিশ্বাসী এবং এই যুগের নারী হয়েও যা সত্যই খুবই লজ্জার বিষয়।
আসলে এগুলো একধরনের অশিক্ষা যার ঊর্ধ্বে নিজেকে পরিচালিত করতে সক্ষম হননি সেই সমস্ত নারী।তাই এটাই তার অজুহাত।তাই নিজের মেয়ে ও বৌমার ক্ষেত্রে তার একই মানসিকতা। তাঁর জীবনটা তিনি যে লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা সহ্য করে কাটিয়েছেন তিনি চান তার পরিবারের নারীরাও একইভাবে তার মতো দুর্বিষহ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই কাটাক। তার বাইরে তিনি নিজেও যাবেন না আর অশান্তি ও সমাজের ভয়ে তার বৌমাও মেয়েও যেতে পারছেনা। তাই এযুগের শিক্ষিত নারী হয়েও নিজেকে বিকশিত করতে ভয় পাচ্ছে।
অদৃষ্টের এ কি পরিহাস! সে হয়তো তার মা বাবার আদরের একমাত্র কন্যা সন্তান যে মানুষ হয়েছে এক শিক্ষিত মধ্যবর্তী পরিবারে। যে পরিবারে তার মা একজন পুলিশ অফিসার,কি চাকুরেজীবী অথবা শিক্ষিকা।তাই তাঁরা আজও দুচোখে একটাই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন যে কবে তাঁরা তাদের একমাত্র মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেখবেন।
তাই শুধু আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করলেই হবেনা। নারীকে শিক্ষা দিতে হবে জীবনে আবেগবশত কোন ভুল না করে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াও, তারপরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও। তাদের যৌবন বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন আয়ের পথ প্রশস্ত করতে হবে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি। তাহলে বোধহয় মোহবশত ভুল থেকে তারা বিরত থাকবে।য়
নারীসমাজ সম্পূর্ণ শিক্ষিত না হলে পৃথিবীর আলো একদিন নিভে যাবে। সুতরাং আসুন নারী পুরুষ সকলে মিলে আমরা নারীজাতিকে শরীর ও মনের দিক থেকে ছোটথেকেই অনেকটা শক্ত করে গড়ে তুলি।যাতে সমাজের একজন নারীকেও চোখের জল মুছতে না হয় গোপনে।
আরো একটা প্রধান বিষয় হলো প্রাথমিক স্তরে শিশুজীবনে প্রকৃত পঠন পাঠন যা শিশুমনকে বিকশিত করার পক্ষে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করা উচিৎ। সে কন্যা সন্তানই হোক বা পুত্রসন্তানই হোক। কখনই জোর করে গিলিয়ে দেওয়া অবৈজ্ঞানিক পঠনপাঠন একটা শিশুকে স্বাভাবিক ছন্দে বিকশিত হতে দেয় না। আর তা যদি করা হয় তার ফল ভোগ করবে তার নিজ পরিবার ও সমসাময়িক সমাজ।
অর্থাৎ অধিক মাত্রায় অবৈজ্ঞানিক সিলেবাসের বোঝা শিশুমনকে ক্রমে ক্রমে দিশেহারা করে তোলে এবং হিংস্র করে তোলে। আর তার জন্যইতো সারা পৃথিবীতে এতো ক্রাইম বেড়েছে। যা কিনা অনেতকটা অতিমারির মতো। শিশুদের কোমল মনগুলোকে মেরে ফেলে ধীরে ধীরে নিষ্ঠুরতা, কুকর্ম ও অসৎ জীবনের প্রতি পিতামাতার অজান্তেই আকৃষ্ট করে যা কিনা বতর্মান সমাজের পক্ষে ভয়ানক ক্ষতিকারক।
তাই নারীশক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে প্রথমে সুশিক্ষার প্রয়োজন। আবার সমাজের উপযুক্ত পুরুষের সহযোগিতাও একান্ত কাম্য। কারণ একজন নারী ছোট থেকে তার পিতামাতার সান্নিধ্যেই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। এখনও তাকে বহুদূর যেতে হবে তবে কখনই তা অহেতুক প্রকৃত পুরুষের অসম্মান করে নয়,বরং তার সাথে বন্ধুত্ত্ব বজায় রেখে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই তা সম্ভব।
সম্মান সবসময় অর্জন করে নিতে হয়।একজন পুরুষ খারাপ হলে তাদিয়ে সকলকে বিচার করাটা মস্ত ভুল। আর পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখতে নারী পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে প্রতিটি নারীর উন্নতির পেছনে তার পিতা, কি ভাই,কি স্বামী,কি পরোপকারী কোনো বন্ধুর নীরব সহযোগিতা ও আত্মত্যাগ আছে।
শেষে বলি একজন নারীর মধ্যে সুবুদ্ধি,সুশিক্ষা,সহ্য,ধৈর্য্য ত্যাগ, বলিষ্ট শারীরিক ও মানসিক প্রকাশ ও সকলকে নিয়ে চলার একটা সুদৃঢ় মানসিকতা অবশ্যই কাম্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much