অলিখিত শর্ত
(পর্ব১)
শামীমা আহমেদ
শায়লা শিহাব কথা
শিহাব এক ঝটকায় শপিং ব্যাগগুলো নিজের হাতে নিয়ে নিলো, শায়লা কিছু বুঝে উঠবার আগেই! ক্যাশ কাউন্টারে পেমেন্ট সেরে ক্রেডিট কার্ডটি ওয়ালেটে রাখতে না রাখতেই আচমকা এটা ঘটে গেলো! শায়লা বেশ অপ্রস্তুতই হলো! কারণ শপিংগুলো তারই ছিল। শিহাব বললো," চলো তোমাকে এগিয়ে দেই।" দুজনে নীরবতায় ধীর পায়ে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়।শিহাবের এই কেয়ারিং দিকটিতে শায়লা বেশ আনন্দিত হয়। যে কোন ধরণের সহযোগিতায় সশরীরে না হলেও ফোনে চটজলদি সমাধান বাৎলে দিবে।এমন একজন কেয়ারফুল পার্সন কার না কাঙ্ক্ষিত! যখন একজন কেয়ারলেস লাইফপার্টনারের সাথে শায়লা দিন কাটাচ্ছে।তখন এধরণের প্রাপ্তিটাতো হঠাৎ বৃষ্টির মতই মনটাকে ভিজিয়ে দেয়। একটা চাপা আনন্দে পুলকিত হয় শায়লা! এই সময়টাকে তাই সে জীবনের পরম প্রাপ্তির একটি সময় ভেবে নিল।
শিহাবকে শুধু কিছু জেন্টস এক্সেসরিজ পছন্দ করে দেয়ার জন্যই শায়লা আসতে বলেছিল। শিহাবেরও এদিকটায় একটা কাজ পড়ে যাওয়াতে শায়লার অনুরোধে সে একেবারে চটজলদি রাজী হয়ে গেলো। দুজনের দেখা করার সময়টা খুব একটা মেলে না। কর্মক্লান্ত দিনের শেষে শিহাব যখন ঘরে ফেরে শায়লার যেন তখনই বাইরে বেরুনোর একটু অবসর মেলে।সুপার শপে প্রাত্যহিক কেনাকাটা কিংবা বাসার কাছের পার্কটিতে এক বিকেল হাঁটতে যাওয়া, প্রয়োজনে ধারে কাছের পার্লারে নিজেকে একটু ফ্রেশ করে নেয়া। আজ যেন কাকতালীয়ভাবে সময়টা মিলে গেছে! যদিও অনেকদিন শায়লার অনেক অনুরোধ থাকে একটু দেখা করবার জন্য কিন্তু শিহাব নানান অজুহাতে তা এড়িয়ে যায়। তবে আজ যেন শিহাব বেশ আগ্রহ দেখিয়েই চলে এলো।হয়তো একটা দায়িত্ববোধ কাজ করেছে। অনেকভাবেই শিহাবের এ দিকটির প্রমাণ পেয়েছে সে।
শায়লা অপেক্ষা করছিল শপিং মলটির সামনে। উৎসুক চোখে শিহাবকে নয়, শিহাবের বাইকটিকে খুঁজছিল আর অবশ্যই সেখানে চোখে সানগ্লাস সেঁটে দেয়া একজন সুদর্শন ব্যক্তি থাকবে সে ব্যাপারে শায়লা একেবারে নিশ্চিত ছিল। আসলে শিহাবের সাথে প্রথমদিনের সেই দেখা হওয়ার দৃশ্যটা শায়লার মনে একেবারে গেঁথে গেছে। প্রায়শঃই স্বপ্নেও সে দেখে সে মুখখানি। কালচে নীল শাড়িতে শায়লা টি স্টলটির সামনে অপেক্ষায় ছিল। জিন্স শার্টের নীল রঙ আর শিহাবের শুভ্র মুখখানি যেন শরতের এক টুকরো আকাশ! শায়লা মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।তবে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে শিহাবের এই দর্শন দেয়া।শর্ত ভঙ্গ হলে সে নিজেকে গুটিয়ে নিবে চিরতরে।সব শর্ত মেনে নিয়ে উৎসুক শায়লা শুধু একবার তাকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল।---এইসব নানান ভাবনায় ডুবে থেকে শায়লা কেন বা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে তা একেবারে ভুলেই গিয়েছিল। হঠাৎ সম্বিত ফিরে এলো!ঘড়ি দেখলো শায়লা। চারটা বিশ। এতক্ষনে তো শিহাবের চলে আসার কথা! তক্ষুণি মোবাইল ফোন বেজে উঠল, শিহাবের কল,,কী হলো কোথায় তুমি?
এইতো শপিংমলের ফোয়ারাটার সামনে দাঁড়িয়ে।তোমার জন্য অপেক্ষায়।
---কি বলো? আমিতো সেই কখন থেকে
ফেব্রিক্স শপের ফ্লোরে চলে এসেছি।
আহ! তাহলেতো আজ শিহাবের বাইকে আসার দৃশ্যটা মিস হয়ে গেলো!
শায়লা খুব দ্রুত লিফটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। উফ! লিফট ওপরে উঠে গেছে।শপিং মলটি ষোলতলা। একেবারে টপ ফ্লোরে ক্যাফে,খানাপিনা আর আড্ডার জায়গা। টেইলারিং এন্ড ফেব্রিক্স শপটি আটতলায়।
শায়লা রাতেই জানিয়ে রেখেছিল শপটির কথা।সেটা সে একেবারেই ভুলে বসে আছে।
শিহাব আবার এসব ক্ষেত্রে ভীষণ পাংচুয়াল।
লিফট নেমে এলে শায়লা উঠে গিয়ে নাম্বার এইট বাটনে প্রেস করলো। ভেতরে কেমন যেন একটা ভালোলাগা অনুভুতি।শায়লা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কেন এমন করে দিনগুলো এগুচ্ছে? দিনে দিনে শিহাবের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে।অবশ্য শিহাব এ ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। শুধুমাত্র একজন পরিচিত মহিলা কোন সাহায্য চেয়েছে সে কারণেই তার এগিয়ে আসা।কি জানি শায়লা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না অচেনা একজন মানুষ হঠাৎ পরিচয়ে কিভাবে এতটা আপন হয়ে উঠতে পারে!
লিফট আট তলায় এসে থামতেই দরজা খুলে গেলো। সরাসরি শপটিতে তাকাতেই শিহাবকে দেখতে পেলো।দারুণ হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে।পরনে কালো শার্ট সাথে কম্বিনেশনে ঘি রঙা প্যান্ট আর চোখে সেই কাঙ্ক্ষিত সানগ্লাসটি সেঁটে দেয়া। অবশ্য আজ পর্যন্ত সানগ্লাস খুলে কথা বলেনি শিহাব। নাহ, তাকে দেখতে চাওয়াটা মিস হয়নি।শায়লা এগিয়ে গেলো। শিহাব খুব মাপা হাসিতে শায়লাকে ওয়েলকাম করলো।কেমন আছো কিংবা অবান্তর কোন গল্পে সময় ব্যয় করার মত ব্যক্তিটি তিনি নন। মেয়েদের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলার স্বভাব তার একেবারেই নেই।শায়লা এর আগেও লক্ষ্য করেছে শিহাবের মুখে এক ধরনের বিষন্নতার ছাপ।না, কখনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। ঐ যে, মেপে হাসি আর মাপা কথায় যেটুকু জানিয়েছে শুধু সেটুকুতেই সন্তুষ্ট আছে শায়লা। আর এমন কোন অধিকার পাওয়া হয়নি যে সবকিছু জানতে চাওয়া যাবে।তবে এদিক দিয়ে শায়লা তার উল্টোটায়।সবকিছু বলতে পারলেই যেনো হালকা হয়।এজন্যই হয়তো মেয়েদের পেটে কথা জমে থাকে না।
শিহাব জানতে চাইলো, কী ধরণের কাপড় সে কিনতে চাইছে? ছেলেদের কাপড় কেনার কোন অভিজ্ঞতা শায়লার নেই।ছোটবোনটির বিয়ে হয়েছে ছয় মাস হতে চলেছে। শীত আসি আসি করছে।মা চাইছে জামাইকে একটা কম্পলিট সুটপিস পাঠাতে।
শায়লাকেই তা কিনতে হবে আর এব্যাপারে শায়লা শিহাবের সহযোগিতা চাইতেই শিহাবের সম্মতি মিলেছে।নয়তো একটা দুপুর কিংবা একটা বিকেল শায়লাকে সময় দেয়া কোনদিনই তার হয়নি, শায়লার শত অনুরোধ উপেক্ষা করে শিহাব নিজের বাসায়তেই ফিরে গেছে।তাইতো আজ দুপুরের ঝকঝকে রোদে শায়লা নিজেকে একজন সুখী মানুষ ভেবে নিলো।
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much