২০ অক্টোবর ২০২১

সজল কুমার মাইতি




স্মৃতির টান

মনে পড়ে ছোটোবেলায় যখন সকাল ইস্কুল থাকত। আমরা 
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়তাম। চোখে তখনও ঘুমের
রেশ কাটেনি, কৌটৌয় মুড়ি নিয়ে সঙ্গে কোনদিন বাতাসা কোনদিন 
ছোলা। প্রায় দৌড় লাগিয়ে ইস্কুল পৌঁছে যেতাম। টিফিনের সময় 
দল বেঁধে কৌটৌ খুলে টিফিন খেতে বসে যেতাম। ছুটির পর বাড়ি
 ফিরে বইব্যাগ ইস্কুল ড্রেস ছেড়ে দৌড়ে পুকুরের পাড়ে বটগাছের 
লম্বা ডালে উঠে বসতাম। সঙ্গে থাকতো টক ঝাল মিষ্টি আচার। ডাল 
থেকে একে একে ঝপাঝপ লাফ দিতাম আমাদের বড় পুকুরে।
চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা জলকেলি। কখনো সখনো বাবা কাকাদের 
বকুনিতে লাল চোখে দৌড়ে হাজির হতাম ভাতের থালায়। বিকেলে 
মাঝেমধ্যে খুড়তুতো দাদা ভাইদের সঙ্গে ছিপ নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম।
 মাঠে মাছ ধরতাম। চ্যাং ল্যাটা, কখনও ভেটকি ও উঠতো। বেশি 
সময় থাকতো কেবল চ্যাং মাছ। ছিপে মাছ পড়লে কি আনন্দ সবার। 
নতুন উদ্যমে আবার ঝাঁপিয়ে পড়তাম। মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে আমাদের
বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা ছোট নদী আছে। সেখানে যেতাম লম্বা 
সূতোয় বঁড়শি বেঁধে সেই নদীর জলে ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম।
কখনো দু একজন লোক যেত নদীর ওপার দিয়ে। অথবা জেলে জাল ফেলতে 
ফেলতে এগিয়ে যেত। কখনও দু একটা মাছ পড়তো কখনও বা শূন্য হাতে ফিরতো। 
শূনশান এই জায়গায় জেলেদের ছোটো ছোটো কুঁড়েঘর এদিক ওদিক ছড়িয়ে
ছিটিয়ে আছে। পরতে পরতে তাতে দারিদ্র্যের ছবি আঁকা। সন্ধে হলেই জায়গাটা
কেমন গা ছমছম করে। তখন দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসি। নদী কিন্তু কলুকুলু রবে
 বয়ে যায়। তার তো ছুটি নেই! সেই নদী দিয়ে কত জল যে বয়ে গেছে। কত বসন্ত 
পেরিয়ে গেছে। কত আত্মীয় স্বজন হারিয়েছি। কত হাসিকান্না, কত সুখদুঃখ 
আজ অতীত। আজ প্রৌঢ়ত্বে অর্থ আছে সুখ নেই, প্রাচূর্য আছ শান্তি নেই, 
অহংকার আছে ঔদার্য নেই। শুধু অশান্তি, অ-সুখ, হিংসা আর আছে দারিদ্র্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much