১৫ আগস্ট ২০২২

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা "স্বাধীনতা"




স্বাধীনতা
 
আমিনা তাবাসসুম


আমরা প্রতিদিন এগিয়ে চলেছি
অন্ধকার থেকে আলোর উৎসে
নাকি আলো থেকে অন্ধকারে

জল খাবার অপরাধে যে শিশু
মৃত্যুশয্যায়
সে দলিত
আমরা স্বাধীনতার 75তম বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন করি
ঠোঁটে এবং চোখের ইশারায়
নিরাসক্ত অন্ধকার নয়
উচ্চ মর্যাদা আমাদের শিরায় শিরায় 

পেছনে পড়ে থাকে চাপ রক্ত, শহীদের বীরত্ব

বুকে জড়িয়ে রাখি পতাকার ভেতর আগুন
বুকের ভেতরে থাকে জাতিভেদের অস্পৃশ্যতা
আমি ক্ষুধার্ত, তুমি গান গাও
জয় হিন্দ আর বন্দে মাতরম

যে নারীর হৃদয় খুঁড়ে ছিঁড়ে খায় ধর্ষক
আর দেশের নেতা মানবতা রাখে লুকিয়ে
আদর্শ সেখানে ছুটে ছুটে যায় বাইরে
স্বপ্ন কাঁদে চার দেওয়াল থেকে শূন্যে
স্বাধীনতা বিলাস কী তবে!

মনের ভেতর অস্থির এক উন্মাদ
যে পতাকা বিপ্লবীর রঙে সুন্দর
আজ দেখি সেই মুখোশের এক রক্ষিতা

কবি মমতা রায় চৌধুরীর কবিতা " সূর্যমুখী ভোরের স্বাধীনতা"




সূর্যমুখী ভোরের স্বাধীনতা

মমতা রায় চৌধুরী



আজ ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস
কত মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার
 শত বিপ্লবীর রক্তে রাঙানো  মহার্ঘ দিন।
 দিকে দিকে তেরাঙ্গা পতাকা 
আর বন্দে মাতরম ধ্বনিতে 
 সরগরম গোটা দেশ।
তবুও  স্বাধীনতা অপ্রাপ্তির

এক দুঃসহ যন্ত্রণা  রয়েছে 
 সমাজের প্রতিটি কোণে।
নিরক্ষরতা, অশিক্ষা,,বেকারত্ব, পণপ্রথা
যৌন নিগ্রহ , শিশুধর্ষণ ,নারী পাচার,
সমাজে বাসা বাঁধছে নিরন্ত র।
শিক্ষা স্বাস্থ্য নিয়েও   অসাধু ব্যবসা,
হাজারো শিশুর স্বপ্ন কাড়ে রাজনৈতিক নেতা।
তখনই প্রশ্ন ওঠে এ কেমন স্বাধীনতা?
তবে কি..
স্বাধীনতা প্রাপ্তি রাত্রের সেই ক্ষত 
এখন আরো  দগদগে।
ধর্মান্ধতা, জাতিভেদ  ,
বিচ্ছিন্নতাবাদ ,অস্পৃশ্যতা 
জাতির  আজও রন্ধে রন্ধ্রে।
 স্বাধীনতার ছিয়াত্তর বছরে 
এখনো  শিশু  খাটে চায়ের দোকানে।
নয়তো  শিশু মনিবের বাড়িতে
 মায়ের সঙ্গে ঝিয়ের কাজে।
এ কোন বিষে আজ জর্জরিত দেশ?
তাই ,
প্রশ্ন জাগে এই কি স্বাধীনতা?
ছিয়াত্তর বছরে এই আমাদের প্রাপ্তি?
এই স্বাধীনতাই কি চেয়েছিল 
মৃত্যুঞ্জয়ী  বীর বিপ্লবী?
এ প্রশ্ন সকলের কাছে।
এ যন্ত্রনা সকলের যন্ত্রণা।
এর থেকে কি তবে মুক্তি নেই?
আছে…
ছিয়াত্তর বছর স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাসে 
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা না ভেবে, 
জাগরণ হোক  যুব সম্প্রদাযয়ের।
 রাজনৈতিক নেতারে দিকে না তাকিয়ে 
হাল ধরুক নিজের দেশে র।
সকল যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে
সেদিন আসবে প্রতিটি ঘরে 
এক সুন্দর সূর্যমুখী ভোরের স্বাধীনত।

১৩ আগস্ট ২০২২

কবি সানি সরকার এর কবিতা "ড্যানিয়েল"




ড্যানিয়েল 
সানি সরকার 


পাথরটির দিকে লক্ষ্য করো ড্যানিয়েল 
অতঃপর নিজের দিকে আরেকবার 

রাত্রির কলকাতায় আলো
এবং গাড়ির হর্ণ ব্যতীত কোনও শব্দ নেই 
এত দ্রুত তুমি ঘুমিয়ে পড়বে না 
অবশ্য তেমন কথাও নেই 

এখন ঠিক সামনের পাখিটিকে লক্ষ্য করো 
ছবির ওপর বসে যে মোহ ছড়িয়ে দিচ্ছে 
ভালো করে লক্ষ্য করে দ্যাখো, ওঁর  পা'য়ে 
ঘুঙুর পরানো, বাইরে চাকচিক্য, কাচের মতন, আর ধোঁয়া 

হরিণেরও খিদে পায় একথা সত্যি- 
প্রতিটি মুহূর্তে দলদল হরিণ 
তৃণের খোঁজে অরণ্যাঞ্চল তোলপাড় করে তছনছ করে 

পাখিটি ঘুঙুরের শব্দ তোলে পায়ে 
তখন তৃণ নয়, হরিণের দল 
আরও ক্ষুদার্ত, দৌড়য় ঘুঙুরের শব্দের দিকে 

এমনি নির্মম... 

ড্যানিয়েল, তাই বলে তুমি কী পাখিটির পা'য়ের ঘুঙুর 
কেড়ে নেবে 
না... 

সময় তো এমনি, সময় হলেই বলে 
ওটা সাদা, ওটা কালো, ওটা সবুজ, ওটা পীতবর্ণ... 

ড্যানিয়েল, দেখতে থাকো ও এবং হাসো

১২ আগস্ট ২০২২

কবি কাব্য রাসেল এর কবিতা "সেই এলোকেশ! ""




সেই এলোকেশ! 


কাব্য রাসেল 


তুমি হেঁটে যাও ফুটপাত মাড়িয়ে আমার দুরন্ত দৃষ্টি 
চেয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথের মতো। আর নজরুলের মতো
আমার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের উচ্চারণগুলো তোমার এলোকেশী গন্ধের মাদকতায় আরও বেশি স্বতঃস্ফূর্ত 
হয়ে ওঠে।  আমার কন্ঠ আরও ঝাঁঝালো, আরও বিমূর্ত হয়ে ওঠে স্লোগান। তোমার এলোকেশী বৈশাখী ঝড়ের মতো আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর করে আমাকে শীতল আরও শীতল করে দেয়।  আমার চারপাশে সঙ্গতিপূর্ণ সমস্ত অসঙ্গতিই   আমাকে শৃঙ্খলিত করে রাখে,আর শৃঙ্খল ভেঙে ভেঙে আমিও এক ঐন্দ্রজালিক অলৌকিক অদৃশ্য মোহনীয়তায় বেরিয়ে আসি তোমার এলোকেশী দীর্ঘ কালো চুলের অসামান্য অরণ্যে।


কবি শাকিল সারোয়ার এর কবিতা "ক্রশবিদ্ধ একটি সময়"






ক্রশবিদ্ধ একটি সময়

 শাকিল সারোয়ার 



তোমাকে ছুঁলেই বিবর্তনের জল 
গড়িয়ে গড়িয়ে বরফ-বাস্প 
বিশ্বাসের দর্পণে সমর্পণের প্রতিবিম্ব 
একটি সময় ক্রুশবিদ্ধ চোখে ... 
স্মরণে মরণে পূর্ণাভা
রাত্রীর আলো

তোমাকে ছুঁলেই আবর্তনে ষোলকলা 
নির্জলা ছুঁই ছুঁই তৃষ্ণা, 
দাহ 
দাউ দাউ 
দগ্ধ দরিয়া...

কবি নীলা রহমান এর কবিতা "শান্তি বালা"




শান্তি বালা

নীলা রহমান



বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো?
মেঘ ছিঁড়ে একরাশ বিদুৎ খড় কুটো শুষ্ক ঘরে 
মাটির  পাঁচিলে পড়ে সব দগ্ধিত ছেঁড়া খেতা। 
বৃষ্টি হয়নি সেদিন। সাত কোটি জনতার স্তব্ধ নয়নে অস্থির ভাষায় স্পষ্ট ছিলো 
স্বাধীনতার তৃপ্ত স্বাদ।

বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো?
দগ্ধ ভিটে মাটির অন্তরে দাঁড়িয়ে দূর নীলিমায় লাল সবুজ পাখির হলুদ ঠোঁটে শুভ্র শিসে শুনতে পেরেছো বিজয় ইমন সুর। ঐ দেখো ভৈরবী সুরে পুষ্পিত স্বাধীন চন্দ্র ফুল।।

বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো? 
দগ্ধ অন্ত চাঁদোয়ার ভ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিন্দু বিন্দু নীল কুয়াশায় সিক্ত মনে জানান দেয় বীরাঙ্গনার নির্মম চিৎকার।  তবুও  ছিদ্র শুষ্ক মনে স্মরণ করিয়ে দেয় লাখো  শহীদের আত্মত্যাগ।। 

বলতে পারো শান্তি বালা,
তুমি আজ কেমন আছো? 
দগ্ধ কুটিরে অন্ত ভিটেই এখনো হায়ানার তীব্র থাবা একটু একটু করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।
তবুও লাল সবুজ নিঃশ্বাসে ঘ্রাণ পায় জয়োৎসব ।। 

বলতে পারো শান্তি বালা,  
তুমি কেমন...... আছো....?

১১ আগস্ট ২০২২

কবি বন্ধু তুহিন এর কবিতা"চুলচেরা হিসাব"





চুলচেরা হিসাব

বন্ধু তুহিন



তোমাদের চুলচেরা বিচারে অর্ধেকটা সময় অধিবাস্তব পংক্তি,
বাকি অধের্কের পিচ ঢালা রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
থক থকে নাভিশ্বাসের পালাবদলে হাতবদল নর্দমা,
ব্রহ্মতালুর পাশ ঘেঁষে  বিচারক, উল্টো পথে।

লোভের চারপাশে যখন অনবদ্য গ্লানি কাজ করে,
তখন সুসময়ের হিসেব কসে একে একে ধসে পরে দেয়াল।

স্বপ্ন দেখতে দেখতে চোয়ালের ভেতর চোয়াল, হারের ভেতর মাংস;
শুকিয়ে যায় শুটকির গন্ধ, বুকের ভেতর এখনও নোনা জল।
উড়তে উড়তে পরতে থাকা নিছক যুবকের লোমকূপ লজ্জিত
রেটিনায় ভাগ্যের গণনা, নাকের ভেতর সুড়সুড়ি, পেটে ক্ষুধা।

ওহে সনাতন, বোঝ এখন কি করে মানুষ বেঁচে যায়; 
 কাপড়,আতর,বিজ্ঞাপনে অবিন্যস্ত  ঢেকে যায় শহর রাস্তা।

ছায়ার ঘুরন্ত বৃত্ত বড় হতে হতে ব্ল্যাক হোল হবে একদিন,
তখন আধভাঙ্গা সড়কে ফ্লাইওভার কিংবা কংক্রিটে তেতে উঠা অস্তিত্বে
 আমি ঢেলে দেব মৌন মন ...

০৪ আগস্ট ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০৪





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ২০৪

প্রতীক্ষার মূল্যদান

মমতা রায় চৌধুরী



প্রত্যেক মানুষই প্রতীক্ষা করে জীবনের যত ব্যর্থতা আছে সেগুলো কে সার্থক করে তুলবার আশায়।
তাইতো মনের ভেতরে আগুন ওঠে আগুনের তাপে ব্যর্থতা যন্ত্রণা জ্বালা সবকিছু পুড়িয়ে পরিণত করতে। তারপর আস্তে আস্তে হয়ত সে আগুন নিভে যায় সেও বছরের পর বছর প্রতীক্ষারত অবস্থায় জীর্ণ মলিন হয়ে যায় সংসারের ধুলোয়। প্রতীক্ষা তো আর সার্থক হয় না সার্থক হয়নি বিপাশার প্রতীক্ষা সার্থক হয়নি রেখার প্রতীক্ষা ,সার্থক হয়নি মনোজের প্রতীক্ষা , সার্থক হয়নি শিখার প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি কল্যাণের প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি তিথির প্রতীক্ষা, সুমিতার প্রতীক্ষা, সার্থক হয়নি নদীর প্রতীক্ষা, মীনাক্ষী দেবী প্রতীক্ষা আরো এরকম কতজনের প্রতীক্ষা সার্থক হয়নি। সব প্রতীক্ষাগুলো যেন পথহীন অরণ্যে সকলের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। আলাদা হওয়াটা পুরো টাই অদৃষ্ট বা নিয়তির লিখন হয়েছে তা নয় ,কিছুটা নিজেদেরও হাত  থাকে।
প্রতিটা চরিত্র অনুযায়ী প্রত্যেকের প্রতীক্ষায় একটা আলাদা মাত্রা আছে ,একটা আলাদা ধরন আছে। প্রত্যেককে এক ধাঁচে ফেললে চলবে না।

নইলে কে জানতো  নীল  রেখার জীবনটা আলাদা হয়ে যাবে। গ্রামের সহজ সরল দুটি ছেলে মেয়ে যখন পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল শৈশবের এতগুলো দিন তারা একসঙ্গে অতিবাহিত করেছিল, স্বপ্ন দেখেছিল হাজারো তর তখন সেই স্বপ্নগুলো যেন প্রজাপতির ডানা মেলে উড়ছিল। ঘোষেদের জোড়া পুকুর ,বটগাছ, আর গ্রামের পথ ঘাট , বিস্তীর্ণ প্রান্তর ,নদী সবকিছুই যেন ছবি এঁকে দিয়েছিল অত্যন্ত পারিপাট্যের সঙ্গে। কেরালা উঁকি দিয়ে গেছে কত না স্মৃতিমধুর খন আজ সবই রেখার কাছে ক্লান্ত ঔদাসীন্যের মত লাগে শুধু যারা একটা ঘুমন্ত নিষ্প্রাণ আত্মা রয়েছে সদা পাহারায়।
ব্যালকনিতে বসে সেইসবগুলি প্রতিচ্ছবি ছবি হয়ে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে।

রেখা গল্প লিখতে বসে হঠাৎ জীবনের গল্প গুলোই কেন তার লেখনীর ক্যানভাসে আঁচড় কাটতে শুরু করল সেটাই বুঝতে পারছে না 
আজ সেই সব যন্ত্রণা ব্যাথা গুলো আছে বলে হয়তো এখনো হৃদয় নামক পাম্পে জল ওঠে।
দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আজ ভাবনাও আবেগের উদ্বেল সাগর হঠাৎ করে জেগে উঠলেও তা আস্তে আস্তে শান্তনি তার হয়ে যাচ্ছে সেসব দিন গোধূলি বেলার মত অস্পষ্ট হতে শুরু করেছে স্মৃতির সে সমস্ত পাতাগুলো যেন আস্তে আস্তে তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে জীবনের একটা বাধা সুখে থাকতে গিয়ে সবকিছুই যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
এসব ভাবনার মাঝে চেয়ে ঘটায় সিঁড়ি পত্রিকার সম্পাদকের ফোন। ফোন বেজে চলে অকাতরে রেখার ইচ্ছে করছে না ফোনটা তুলতে। অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়  রেখাকেও তাই করতে হলো। এতবার ফোনের আওয়াজ শেষ পর্যন্ত নিচের থেকে বাকিরা ছুটে আসত। হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।
হয়তো মনোজই উঠে আসতো বলতো"কিগো ফোনে যাচ্ছে ফোন ধরছো না?
রেখাকে তখনই বানিয়ে বলতে হতো 'শুনতে পাই বা একটা লেখা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।"
তাই মিথ্যা বলার চেয়ে ফোনটা রিসিভ করা অনেক বেশি শ্রেয়।
হ্যালো
 ম্যাম
হ্যাঁ নমস্কার।
চিনতে পারছেন?
না চিনে উপায় আছে ফোন নম্বরটা যে সেভ করা আছে।
বলেই দু'পক্ষ ও হো হো করে হাসতে শুরু করল।
তারপর ম্যাম মৌচাকের কতদূর খবর?
চলছে ঠিকঠাকই
হ্যাঁ দেখবেন মৌচাকে যেন তাড়াতাড়ি ঢিলটা না কেউ ছুঁড়ে দেয়।

কি করবো দাদা পুরোটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
ভাগ্যের অদৃষ্টের কথা বারবার বলবেন না।
আপনি লেখিকা সৃষ্টি করাই আপনার ধর্ম।
রেখা হেসে বলে আপনি কি যে বলেন না?
কেন ম্যাম  আমি কি খারাপ কিছু বললাম?
রেখা বলল না না বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি নিয়ন্ত্রণে এনে তাতে জলসিঞ্চন করেন।
রেখা এসব কথা বলছে  এরমধ্যেই রেখার  জা।তীব্র চিৎকারে যেন আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ হচ্ছে।
রেখা কানটা খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল অন্যদিকে ফোনে অনর্গল বুকে চলেছেন সম্পাদক মহাশয়।
রেখা বলল ঠিক আছে দাদা। মৌচাক নিয়ে ভাববেন না। ওখানে ঠিক মধু তৈরি হবে।
সম্পাদক মহাশয় বললেন'অসংখ্য ধন্যবাদ।'
রেখা ফোনটা নামিয়ে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে আসে এসে পুরোটাই জলের মত পরিস্কার হয়ে যায় সেই চিৎকার এর প্রধান উৎস কি।
আসলে তুতু পাইলট ওরা খেলছিল। উঠোনটা জানো মনে হচ্ছে পুরোটাই ওরা কিনে নিয়েছে। বাচ্চাগুলো খেলা করছে সেটাও সহ্য হচ্ছে না।
আজকের এই কান্ড দেখে রেখার মাথাটা গরম হয়ে গেল।
বলেই ফেলল কি হয়েছে কি করেছে ওরা?
সঙ্গে সঙ্গে রেখার জা বলল এদেরকে মেরে পিটিয়ে শেষ না করলে শান্তি নেই।
রেখা তখন বলল"এত যে  ধর্ম কর্ম করো সহিষ্ণুতা শেখায় না।"
সেটা তোমায় দেখতে হবে না।
 প্রয়োজনে শিখতে হয়।
যত অজাত কুজাতকে বাড়ি ঢুকিয়েছে এই জন্যই তো আজ বাড়িতে এই হাল।
দিদিভাই মুখ সামলে কথা বল অদ্ভুত মানে কি বলতে চাইছো?
বলছি ওই কুকুরের বাচ্চা গুলো যেন আমাদের সীমানায় না আসে।
আমাদের সীমানা মানে এটা তো যৌথ বাড়ি এখনো তো ভাগ হয়নি?
আর তাছাড়া ওরা অবলা জাত ওদের কি শেখানো যায় মানুষকে শেখানো যায় না যদি তাই হত তাহলে এরকম কথাবাত্রা শুনতে হতো?
তুমি আমাকে ইঙ্গিত করে কথা বললে না?
যাক বাবা তাহলে বুঝতে পেরেছ।
সারাদিন ঠাকুর নিয়ে পড়ে রইলাম আর মনে মনে অন্যের ক্ষতি চাইলাম আর ভাবলাম কখন ওই অবলা জীব গুলো একটু বেচাল কিছু করবে তখন হাজারো তর কথা শোনাবো।
এত চিৎকার চেঁচামেচিতে বাচ্চাগুলো যেন একটু হতভম্ব হয়ে গেছে ওরা রেখার কাজটা তে এসে সব একা একা বসে পড়ল তারপর রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
রেখা তখন ওদেরকে আদর করে বলছে তোমরা কি দুষ্টু দুষ্টু করছিলে?
এরকম দুষ্টু দুষ্টু কাজ করবে না ।দেখছ না দুষ্টু লোকেরা না হলে কিন্তু বকবে।
রেখার যায় এবার নিজের শ্বাশুড়ীকে ডেকে নাও সোনার চেয়ে দেখুন দেখুন আমরা কি দুষ্টু লোক।
রেখা কথা বাড়ায় না এদের সাথে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই এতে মন-মেজাজ দুটোই বিগরে  যায়।
রেখা ওদের কে নিয়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে পরল তখনো রেখা শুনতে পারছে ওর যা চিৎকার করে যাচ্ছে কোথা থেকে এক ছোটলোকের মেয়ে নিয়ে এসেছে বাড়িতে এই জন্য এইসব ছোট রকমই কাজকর্ম চলছে বাড়িঘর যেন কুকুরের বাড়িঘর হয়ে যাচ্ছে।

রেখা শুধু ভাবে আর কতদিন প্রতীক্ষা চলবে এদের শুভ বুদ্ধির জাগরণের কবে এরা নিজেদের আত্মসমালোচনা করবে? আর শুধু অহংকার ঐশ্বর্য নিয়ে আত্ম অহংকার ভুগবে? 
ভগবানের কাছে শুধু প্রার্থনা করল রেখা ভগবান এদের শুভ বুদ্ধির জাগরণ হোক শুধু সেই দিনটার প্রতীক্ষায় আছি ।
তারপর মনে মনে ভাবল এই সমস্ত ক্যারেক্টারগুলোকে তার মৌচাকের উপন্যাসের ভেতরে টেনে নিয়ে আসতে হবে তবে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে নীলাঞ্জন তার প্রতিদান আজ তার প্রতীক্ষার পথগুলো সব এঁকে বেঁকে  গেছে হয়ে গেছে সেখানে সবকিছুই অস্পষ্ট কোন রেখাপাত নেই।
এক্ষেত্রে রেখা আশাবাদী আগুন জ্বলে উঠবে যে আগুনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে যত হিংসা অহংকার আত্মগরিমা আর প্রকৃত শুদ্ধ আত্ম জগরণ ঘটবে।
সেদিন রেখা মলিন আর  ক্লান্ত থাকবে না। সেটা হবে শেষ পরীক্ষা নতুন জীবনের প্রথম মূল্য দান।
এরমধ্যে রেখা খেয়াল করল বাচ্চাগুলো যেন বুঝতে পেরেছে ওরা যেটা কাজটা করেছে ভুল করেছে ওরা যেন রেখার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না রেখা ওদের অঙ্গভঙ্গিতে সবকিছু বুঝতে পারল। ওদেরকে কাছে ডেকে এনে খুব করে আদর করলো আর বলল তোরা কচু হয়ে যেটা বুঝিস মানুষ এটা বোঝে না রে। মানুষগুলোর ভেতরে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে মে

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০৩




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ২০৩

রেখার স্বপ্নের পরমায়ু

মমতা রায় চৌধুরী




রেখা আজ বেশ কয়েকটা লেখা কমপ্লিট করল পত্রিকায় দেবার জন্য।'সিড়ি' পত্রিকার সম্পাদকের তাড়া আছে। গতকালকেই ফোন করে রিমাইন্ডার দিয়েছেন। ওই পত্রিকার লেখাটা কমপ্লিট করতে না পারলে সত্যিই রেখা মুখ দেখাতে পারবে না।
অলরেডি দুটো উপন্যাস ওনার পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ।" বার্তা" পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে গল্প। ওই পত্রিকার সম্পাদক অলরেডি ফোন করে জানিয়েছেন আরেকটি গল্প রেডি করতে দর্শকরা নাকি খুব খাচ্ছেন  ।ফলে রেখার চাপ আছে। লেখা কমপ্লিট করে রেখা দাঁড়াল জানলার কাছে। আকাশটার যে মাঝে মাঝে কি হয় মানুষের মতো কখনো মুখ ভার কখনোবা প্রসন্ন হাসির উজ্জ্বল ছটা । রাতের নিস্তব্ধতা রেখাকে মাঝে মাঝে টানে।সে নিস্তব্ধতা রেখার দুচোখে যেন মায়া কাজল পরিয়ে দেয়। হঠাৎই এই নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিল বিদ্যুতের ঝলকানি। রেখা দেখল না আর জেগে থাকলে হবে না ।এবার দু'চোখের পাতা এক করতে ই হবে। কালকে আবার যেতে হবে কলেজের মেয়েদের পুরস্কার নেওয়ার আছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই রেখা এবার বিছানায় নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দিল
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ,রেখা নিজেও জানেনা ।ঘুম ভাঙলো বৃষ্টির শব্দে ।রেখা এবার জানলার কাছে গেল জানলা দুটোকে বন্ধ করতে। হঠাৎই নজরে পড়লো তুতু,মিলি, পাইলট কিরকম থ্রি ইডিয়েট এর মত রেখাদের বাড়ির দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে একসা হয়ে গেছে। রেখা উদগ্রীব হয়ে উঠলো ।রাতে কি শাটার টা খুলে দেয়া হয়নি? খুব রাগ হল রেখার মনোজের ওপর।এবার নিজেই দরজা খুলে নিচে গেল। রেখা  অবাক হয়ে গেল সত্যিই তো খোলা নেই মনোজের এই কান্ডজ্ঞানহীনতার জন্য আরো একবার খুব রাগ হলো।


 সামনে একটা বস্তা ছিল ওটাকে চেপে ধরে রেখা ওদের গা মুছিয়ে দিলো।। রেখা তুতুকে বললো" কি ব্যাপার রে ,হঠাৎ রাত্রে বাইরে আসলি?'
তুতু ওর লেজ নাড়িয়ে কাছে আসলো রেখা একটু আদর করে দিলো ।তারপর কলাপসিবল গেট লাগিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো।
এবার রেখা ঘুমোতে গেল অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেল । কালকে অনুষ্ঠান শেষ কখন  হবে , তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই । লেখাগুলো মোটামুটি রেডি,একটু ফ্রেশ করে নিয়ে পাঠিয়ে দিলেই হলো। এটা সবথেকে বড় চাপের ব্যাপার ছিল , সেটাতে সে চাপ মুক্ত
রেখা তাই নিশ্চিন্তে বিছানায় শরীরটাকে ফেলতে ফেলতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল 
রেখা দেখছে ওর কাজ কত
 বাকি ?এখনো লেখা বাকি। এদিকে কাজের মাসি আসে নি ।আজকে ওর একটা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যাবার কথা স্কুল থেকে মেয়েদের নিয়ে ।কি হবে এখন? রেখা ভীষণ রেগে গেল ।,যে মাসিকে এত ভালবাসে সেই মাসিও রেখাকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে।
না এদের জন্য কিছু করা যাবে না।
কলিং বেলের আওয়াজ দরজা খুলতেই দেখতে পেলে চৈতির মা

 একেতে কাজ কর্ম নিয়ে নাজেহাল অবস্থা সেই সময় এসেছে চৈতির মা। চৈতির মার আলুথালু বেশ,চোখের দু'কোনে কালি। চৈতির মা কে জিজ্ঞেস করল
" কি ব্যাপার দিদি হঠাৎ এ সময় আপনি?"
"না আসলাম  ।
আমাকে আসতেই হতো।'
আপনি তো লেখিকা সমাজের বাস্তবতা নিয়ে আপনার লেখার রূপ দেন ।গল্পে বা উপন্যাসের আমাকে একটু জায়গা দেবেন আমাদের তো নশ্বর দেহ ওখানে আমাদের জায়গাটা চিরস্থায়ী থাকবে ।

চৈতির মার কথাগুলো যেন কেমন হতাশার মতো শোনাচ্ছিল "কেন, কি হয়েছে?'
 বসুন বসুন প্রথমে এক গ্লাস ঠান্ডা জল আর দুটো মিষ্টি দিল। "রোদে তেতে পুড়ে এসেছেন। 
আগে একটু বিশ্রাম নিন তারপরে কথা শুনবো।'
"আমার অত সময় নেই গো আমার কথাগুলো আপনি শুনুন।
আমার  জামাই আমাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করছে এই বাড়িটা
ওদেরকে লিখে দিতে হবে শুধু তাই নয় আপনার দাদার ট্রিটমেন্ট ভালো  করে করানোর
  দিকে ওদের কোন নজর নেই।"
এরমধ্যে রেখা দেখতে পেল চৈতির মার  দুই চোখ জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
"এ কথাগুলো আমি কাকে বলব দিদি,  উপরে থুতু ছিটালে নিজের গায়ে লাগে।
এত জ্বালাচ্ছে এত জ্বালাচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে 
না ।মেয়েটা তো এখন পোয়াতি ওকে কি দোষ দেব ?ওকে তো শ্বশুর বাড়ি ঘর করতে হবে জামাই এর কথা শুনে চলতেই হবে।"
"দাদার শরীর অবস্থা এখন কেমন?"
"ভালো নেই।"
কালকেই পার্থকে জিজ্ঞেস করছিলাম  দিদি, কবে বাড়িতে আসবেন, তুমি জানতে পারলে আমাকে একটু জানিও ।তারপর ভেবেছিলাম আমি করব তা আর পেরে উঠি নি। এত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম , কিছু মনে করবেন না দিদি।'
"আমি বুঝি আপনার সংসারের কাজ রয়েছে ,তারপর স্কুলে নানা কাজ নিয়ে আপনি ব্যস্ত এর ওপরে রয়েছে আপনার লেখালেখি।"
হঠাৎই রেখার হাত দুটো ধরে বলল *আপনার লেখায় আমি যেন থাকি ।"
রেখা তার জীবনে এই প্রথম কোনো বাস্তব চরিত্র তার কাছে আকুতি মিনতি করছে তার লেখায় স্থান দেবার জন্য।'
'দিদি আপনি খুব করে লিখবেন দোষ,গুণ ,ব্যর্থতা সার্থক জীবনের কথা আপনার সাহিত্যে রূপায়িত করবেন।'
রেখা মনে মনে ভাবছে কোন কোন গল্পের লেখক এর এর ভেতরে  কোন চরিত্রের আবেদন শুনতে পেয়েছে।
সাক্ষাৎ রেখার গল্প বা উপন্যাসের বাস্তব চরিত্র এভাবে আকুতি জানাবে এটা ভাবতে "পারেনি।
হয়তো তাই হবে তার জীবনের লেখক এর সাহিত্যের পাতায় এরকম কত চরিত্র আসবে আকুতি জানাবে। এক হিসেবে ভালো। কল্পনা করে চরিত্র অঙ্কন না করে হাতের কাছে চরিত্র যখন তার কাহিনী নিয়ে হাজির হয়। তখন লেখকের অত ভাবনা চিন্তা করতে হয় না।'
মনে পড়ে যায় লেখক সন্তোষ কুমার ঘোষ এর" পরমায়ু' গল্পের কথা।
লেখক সুরপতি চৌধুরী র প্রথমদিকে বেশকিছু গল্প ছাপা হয়েছিল  ।কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখা গেছে লেখক এর নামই ভুলতে বসেছে,  এমন কি যে প্রকাশক তার বইটাকে প্রকাশ করেছেন সেখানে গেলেও দেখা যায় য 
লেখক যখন নতুন করে বই ছাপানোর কথা বলেছেন প্রকাশক ক। তখন তার যুক্তি এখন সবই নতুন নাম নতুন বই তার মাঝে সুরপতি চৌধুরী মুছে যেতে বসেছে।
মনে পড়ে তার কাতর উক্তি"ভুল,সব ভুল।কত অবুঝ ওরা, সাধারণ মানুষ। লেখক এর কাছে অমরত্ব চায়, কিন্তু লেখক কের নিজের আয়ু ক' দিনের….।"
তাহলে কি রেখার এরকম অবস্থা হবে আজ রেখার লেখায় কত চাহিদা কত সম্পাদক তার কাছে লেখা চেয়ে পাঠান, কাতর অনুরোধ করেন
আজ তাঁর লেখা নাকি খুব খাচ্ছে সম্পাদকদের কথা অনুযায়ী ভবিষ্যতে কি এরকমই থাকবে নাকি! উইপোকা খাওয়া বাসা যেমন ঝুরঝুর করে পরে ঠিক তেমন অবস্থা হবে রেখার। ভাবতে ভাবতে ও যেন কেমন অস্থির হয়ে উঠল ।তারপর ভাবলো না না এটা কখনো হতে পারে না, কখনো হতে পারে না ।লেখকরা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকে সেই সৃষ্টি  মানুষের ভেতরে অনেক দূর পর্যন্ত শিকর গেড়ে বসে।
এসব ভাবছে আর কেমন যেন রেখা ঘেমে স্নান করে উঠছে।
আপন মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে ঠিক তখনই মনোজের ঘুমটা ভেঙে যায় মনোজ দেখছে "রেখা যেন কেমন বিছানায় শুয়ে পাগলের প্রলাপ বকছে যেন মনে হচ্ছে। আর হাত-পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে  তখন মনোজ রেখা কে ধাক্কা দেয় কি হয়েছে ?তোমার কি হয়েছে?
তখন বড় বড় করে মঞ্চের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে আমার কি হয়েছে?
তুমিতো আপন মনে বিড়বিড় করে কি যেন বলছিলে কি হয়েছে তোমার ?শরীর খারাপ লাগছে?"
এক গ্লাস জল এনে রেখা দিলো 'এই নাও জল খাও ।'
রেখা ঢকঢক করে জল খেলো তারপর বলল
"কই নাতো শরীর তো ঠিকই আছে।"
ও বুঝেছি তাহলে তুমি স্বপ্ন দেখছিলে?
রেখা  ভাবল "হ্যাঁ সত্যিই স্বপ্নই দেখছিল।

"খুব কি খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে?"
রেখা লজ্জা পেয়ে বলল, না ঠিক তা নয়। তারপর মনে মনে ভাবল এটা তার স্বপ্ন কিন্তু কতটা পরমায়ু। আচ্ছা বল তো এখন কটা বাজে ?।
পাঁচটা বাজে। এখন একটু ঘুমিয়ে নাও তোমাকে ডেকে তুলব।'
আর যদি মাসি না আসে আমি যদি ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে কি করে হবে?  আমার কলেজে যাবার কথা আছে।'
"না ,না ঠিক মাসি আসবে   মাসি ওরকম নয় আর সেরকম হলে আমি তোমাকে ডেকে দেবো।'
রেখা হো হো করে হেসে উঠলো বলল "বাবা তোমার ভরসায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি তারপর তুমি আর তোমার যা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে 
না ।তারপরে আমার কি অবস্থা হবে বলো ।দেখা গেল কপাল এমন খারাপ মাসিও কাজে আসলো না ,আর কখনোই কাজ সেরে নির্দিষ্ট টাইম এর ট্রেন না পেলে একটা  প্রোগ্রামের যাবার ব্যাপার রয়েছে। তাহলে আমার কি অবস্থা হবে ভাবো।"

"আচ্ছা তুমি সব সময় এত নেগেটিভ ভাবো কেন রেখা।"
"তাহলে কি করবেএখন উঠে তুমি কাজ করবে?'
রেখা মনে মনে ভাবল তাও তো ঠিক ।
"এক কাজ কর  আমি ঘুমাচ্ছি ,তুমি এলার্ম দাও মাসি যে টাইমে কাজে আসে ,সেই টাইম এর মধ্যেই । মাসি আসলেও ভালো না আসলেও ভালো।"
মনোজ বলে' এটা তুমি ভালো বুদ্ধি বাতলেছ, এটা করে দিই। এতে কারোর কোন টেনশন থাকবে
 না ।না আমার ,না তোমার ।কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারবে না।'
মনোজ এলার্ম দিল তারপর বলল আচ্ছা" আজকে তুতু কোথায় ?"
"তুমি আর ওসব কথা ব'লো না ।আজকে তুতু তো বাইরেই ছিলো। তুমি তো শেষে দরজা বন্ধ 
করেছ ।পরে যখন আমি ডাকতে গেলাম আসলো না ।তারপর তো বৃষ্টি হলো ।বৃষ্টির মধ্যে ভিজছে দেখে আবার আমি গিয়ে দরজা খুলে  দিয়ে।আবার সাটার টাও বন্ধ করে রেখেছো , সেটা খুলে ওদের ঢুকিয়ে দিলাম।"
"তা বেশ ।নাও তোমার জিৎ ',আমার হার। এবার ঘুমাও তো।"
মনোজ রেখার চুলে বিলি কাটতে কাটতে ঘুম পাড়িয়ে দিতে লাগল তারপর কখন যে দু জনা একে অপরের কাছাকাছি একটি বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে জানেই না। ঘুমিয়ে ভেঙেছে মাসির  কলিং বেলের আওয়াজে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ২০২





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০২

 পিসিমার কষ্ট

মমতা রায়চৌধুরী


মাধু ঘুম থেকে উঠে টুকিটাকি বাসি কাজ করে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছে। সবেমাত্র ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে দু "হাত জড়ো করে
"হে ভগবান ,সবাইকে ভালো রেখো ।আমার স্বামীকেও ভালো রেখো। ইদানিং ওর যেন কি হয়েছে ,কিছু বলছে না । মনটা ভাল নেই। ভগবান ওর মনের কষ্ট ,দুঃখ যাই হোক না কেন? সব লাঘব ক'রো।'
হঠাৎই মাধু একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় "মাধু ও মাধু ও মাধু মরে গেলাম গো ,এসো গো ,আমাকে বাঁচাও গো?"এ ধরনের আওয়াজ শুনে।
কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কোন দিক থেকে আওয়াজ  আসছে।

"হ্যাঁ ,এতো পিসিমার আ ওয়াজ।"
মাধু কোনরকমে ঠাকুরকে ভোগ  নিবেদন করে
আওয়াজের উৎসের দিকে ছুটল।
তখনো ডেকে যাচ্ছে 'ও মাধু ,ও সুরো আয়রে আমাকে  বাঁচা রে ,আমার কি হলো?"
মাধুর মাথার উপর দিয়ে তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে" নে বাবা ,কি হলো? কালকে রাত্রে তো দিব্যি খাবার-দাবার খেলেন ।আজকে সকালের মধ্যে কি হলো পিসিমার ?'ভাবতে ভাবতে ছুটল পিসিমার ঘরের দিকে।
 "পিসি মা তো ঘরে নেই ।তাহলে কোথায়?
 পিসিমা কি তাহলে কোথাও গিয়ে পড়ে গেলে ন।"
মাধু ডাকতে লাগলেন "পিসিমা, পিসিমা ,পিসিমা আপনি কোথায়?"
"ও মাধু আমি বাথরুমে।"
বাথরুমে ?কি হয়েছে? পড়ে গেছেন?"
"আর বোলো না আমি এখন কি করবো?"
"দরজা খুলেছেন?"
"হ্যাঁ ,কোন রকমে খুলেছি।"
মাধু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।
দেখছে পিসিমা বিবস্ত্র অবস্থায়, কমোডে বসে।
কি হয়েছে আপনার।"
এই অবস্থায়  নিজেরই লজ্জা লাগছে।
আর লজ্জা পেতে হবে না আমি তো আপনার মেয়ের মতোই।লজ্জার কি আছে?'
"আমি কত চেষ্টা করছি আমার পটি পরিষ্কার হচ্ছে না কালকেও তোমাদের বলিনি?'
"পরিষ্কার হচ্ছে না মানে কি?"
"মানে পায়খানার বেগ পাচ্ছে কিন্তু আমি পটি করতে পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।"
"আমার গুহ্যদ্বারে অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে।'
"আপনার কি কনস্টিপেশন আছে?"
"সে তো আছে একটু।"
"তাহলে কালকে  থেকে হচ্ছে বলেন নি কেন?'
*"ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে।"
"গ্যাস হয়েছিল? "
"হ্যাঁ"
"এগুলো কেউ চেপে রাখে পিসিমা ।এখন আপনি কত কষ্ট পাচ্ছেন ।বয়স তো হচ্ছে নাকি?'
"আর কত জ্বালাবে আমি তোমাদের?"
"তাতে কি কোন কিছু সুরাহা হলো?"
"ও বৌমা ,আমার কি কষ্ট হচ্ছে আমি বাঁচতে পারব না।"
"এই দেখো বেগ পাচ্ছে আমি আমি পটি করতে পারছিনা।"
করলো পিসিমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পটি করার সত্যিই পারছেন না।'
মাধু একটু সামনে গিয়ে  দেখে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
 উঠুন পিসিমা ,উঠু ন।"
"আপনার তো মলদ্বারে ওখানে চিরে গেছে মনে হচ্ছে?"
"হ্যাঁ।"
*খুব যন্ত্রণা হচ্ছে?"
"হ্যাঁ গো।'
"ঘেমে স্নান করে উঠেছেন।"
"হঠাৎ করে এরকম হলো কেনো?"
"আসলে ইসুবগুল খেতাম। সেটা শেষ হয়ে গেছে।"
"তাহলে বলতে হতো।"
"এখন কি করবেন?'
*আবার কি পটি  করার জন্য কোমটে বসবেন?"
"আমার লজ্জা ঘেন্না কোথায় গেল?"
"কি করবেন শরীর ঠিক না থাকলে এসব নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই।'
ইতিমধ্যে দরজার বাইরে সুরো এসে বললো "কি করছো তোমরা বাথরুমে ?আর পিসি এত চেঁচাচ্ছিল কেন?'
"ঠিক আছে, তুমি ঘরে যাও আমি পিসিমাকে দেখছি।"
"ভয়ের কিছু নেই তো? ডাক্তার কি খবর দিতে হবে?"
"ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ,ওষুধ নিতে হবে।"
"ঠিক আছে। তাহলে কি হয়েছে পিসিমার?"
পিসিমার  পটি শক্ত হয়ে গেছে, পটি করতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে, রক্ত পড়ছে।"
"সেকি?"
পিসিমা আবার বললেন আবার আমার বেগ পাচ্ছে, আমার ভয় লাগছে ।এবার আমি হার্ট ফেল করব।আমি এই কষ্ট করতে পারছিনা।'
"ঠিক আছে আপনি যান আস্তে আস্তে দেখুন পটিটা করতে পারেন কিনা?'
"পটি খুব শক্ত হয়ে গেছে বেরোচ্ছে না।"
"একটা কথা বলব  পিসিমা, কিছু মনে করবেন না। লজ্জা পাবেন ,আমি বাইরে যাচ্ছি  একটা পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি  দেখুন তো ওটা কাজে লাগিয়ে ,কিছু সুরাহা হয় কিনা?"
মাধুর কথাতে  যেন আশার আলো দেখতে পেলেন বেশ কৌতুহলী হয়ে বললেন " বলো বৌমা, বলো।"
পিসিমাকে দেখে  তখন মনে হচ্ছিল'এই অবস্থায় যদি কেউ বিষ পান করতেও বলেন, তাহলে বোধহয় করে ফেলবেন।"
মাধু বললো "একবার আঙ্গুল দিয়ে বের করার চেষ্টা করুন।"
"বলছো?"
"হ্যাঁ"
 যে শক্তটুকু আছে ওটা যদি বেরিয়ে যায়। তাহলে  এত কষ্ট হবে না। তখন বাকি মল স্মুথলি  বেরিয়ে আসবে।"
"ঠিক আছে সেটা একবার চেষ্টা করে দেখি।"
মাধু দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।
এরকম একটা সমস্যায় পড়েছিল মাধু শিখার বিয়ের সময়, তখন রেখা তাকে এই উপায় বাতলে ছিল।
পিসিমার এই কষ্ট দেখে যতদূর  সম্ভব রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গোপাল ভাঁড়ের সেই গল্পটার কথাই মনে পড়ে গেল।

পৃথিবীর বোধ হয় সেরা শান্তি পটিতেই আছে।
মাধু বাইরে থেকে বলল" পিসিমা  হয়েছে?'
পিসিমা বলল' হ্যাঁ সেই শক্ত মতো পটিটা হঠাৎ করে বেরিয়ে আসলো ,আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেবার পর।"
পিসিমা বললেন' কি শান্তি পেলাম গো বৌমা?'
"আপনি এখন একা বের হতে পারবেন তো?'
"হ্যাঁ পারবো ।আমি হাঁপিয়ে গেছি বৌমা।'
"ঠিক আছে আপনি আস্তে আস্তে শৌচ কর্ম করে বাইরে বেরিয়ে আসুন।
"আমি কি চলে যাবো? চায়ের জল বসাই গিয়ে।'
"আচ্ছা যাও।"
মাধু রান্নাঘরের দিকে যেতে  যেতে ভাবল কি রাশভারী মহিলা নিজের অহংকার ,ঐতিহ্য নিয়ে কত গর্ব করেছেন।
আজ সত্যিই সবকিছুই কালের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। সেই ঐশ্বর্যের অহংকার আজ আর নেই। আজ ছেলে বৌমা ঘাড়ের থেকে নামিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে ।তাইতো ছেলে বউ  খবর নেয় না।
কালেভদ্রে ছেলে কখনো কখনো ফোন করে কিন্তু কখনো বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে না।
কি দিনকাল পরলো?
আর এই পিসিমাই কি  মাধুকে কম কথা শুনিয়েছেন?"
এমন সময় ফোন বেজে উঠল। মাধু তখন ছাকনিতে চা ছাঁকছে। এ সময় আবার কে ফোন করল। ফোন বেজে রিং হয়ে কেটে গেলো।
আবার রিং হল। সুরঞ্জন বাথরুম থেকে চেঁচিয়ে বলল "কে ফোন করেছে একটু ধরো না?"
মাধু বলল" হ্যাঁ ,এই তো ধরছি ।হাতে একটু কাজ ছিল তাই ধরতে পারছিলাম না। এক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পিসিমার ঘরের দিকে যাবে সেই সুযোগে ফোনটা ধরে নিল।
"হ্যালো'
"কে !"
'আমি রেখা বলছি ।মাধু বৌদি?"
"আরে সকাল সকাল লেখিকার গলার আওয়াজ  কি সৌভাগ্য ,কি সৌভাগ্য!"
"সবাই ভালো আছ?"
"হ্যাঁ ভালো আছি কিন্তু আজ সাতসকালেই তোমার একটা টোটকা  দেয়া ওষুধটা পিসিমার ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করেছি।"
*আমার দেয়া টোটকা কি গো বৌদি?'
"আর বোলো না পিসিমার তো হেভি কনস্টিপেশন হয়ে গেছে। সেই পটি করতে গিয়ে পটি আটকে গেছে।"
রেখা বলল "ও হো, খুব কষ্ট পেয়েছেন তাহলে উনি ,।বুঝতে পেরেছি কি টোটকার কথা  
বলছো ।ওষুধ খাইয়েছো কিছু?"
"তোমার দাদাকে বলেছি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে।"
"আচ্ছা উনার কি গ্যাস ফর্ম করে?'
"হ্যাঁ সে তো করেই।"
 মাধু ফোনটাতে কথা বলতে বলতে চা এর কাপটা হাতে নিয়ে পিসিমার ঘরের দিকে গেল।
তাহলে এই ওষুধটা খাইয়ে দেখতে পারো mom plus suspension '
"প্রথম ওষুধ টা কি কাজ করেছে?"
হ্যাঁগো কিছুটা হলেও করেছে কিন্তু বয়স হয়েছে তো পিসিমার অবস্থা দেখে আমার একদমই তখন ভালো লাগেনি।,,""
খুব কষ্ট পেতে হলো,।' দেখো এই ওষুধ টা খাইয়ে না হলে পরে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিও।"
*দেখো সারা সারাক্ষণ প্রয়োজনের কথাই বলে গেলাম  তোমাদের কথা জিজ্ঞেস করা হলো না।তোমরা সবাই ভালো তো?'
"এইতো চলে যাচ্ছে বৌদি ,।ভালো থাকার চেষ্টা করা ছাড়া তো আর কিছু করতে পারি না আমরা।'
"সে তো ঠিক কথাই।'
"হ্যাঁ, যে কারণে ফোন করেছিলাম  বলছি বৌদি শিখার ফোন নম্বরটা একটু আমাকে দিতে পারবে?"
এভাবে কেন বলছো শিখার ফোন নম্বর তোমাকে দেব না ।আচ্ছা একটু হোল্ড করো। আমি পিসিমাকে চায়ের কাপটা দিয়ে তোমাকে নম্বরটা বলছি।"
"এখন কেমন আছেন?"
পিসি,মা, তো বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছেন তারপর বলল "ওই আছি বৌমা ।খুব যন্ত্রণা হচ্ছে গো।"
'ঠিক আছে চা খেয়ে নিন।"
শুনুন যেহেতু সকাল বেলাটা আপনি চা খান তাই দিলাম। বেশি চাপ দেবো না ।শরীর কসে যাচ্ছে এবার একটু করে শরবত দেবো ।গরম পড়েছে ঠিক আছে কিছু মনে করলেন না তো?'
একটু মলিন হেসে বললেন "না '।মাথা নেড়ে।
"কালকে লুচি খাওয়াটা ঠিক হয়নি?
কিছু মনে করলেন না তো? যখন আগের দিন থেকে বুঝতেই পারছিলেন যে পটিটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমাকে একটু বলতে পারতেন আপনাকে আমি ওটস দিতাম।'
রেখা সব কথাগুলো শুনছে তারপর বললো "বৌদি ভাই ,তাহলে তোমরা কথা বলে নাও আমি পরে তোমাকে ফোন নম্বরটা নেব।"
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে পরে ফোন করে দিয়ে দেবো নম্বর। কিছু মনে করলে
 না তো ভাই?"
"কি যে বলো না মনে করবো কেন গো?"
আচ্ছা তাহলে  ব্রেকফাস্টে আপনাকে ওটস দিই।'
"পিসিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।'
"ঠিক আছে একটু বিশ্রাম নিন ।আমি পরে আসবো ।ও বাথরুম থেকে বের হচ্ছে ,ওকেও চা দেবো ।জলখাবার  বানাবো ।এখনো তো কাজের মেয়েটা কাজ কাজে আসেনি। জানি না আসবে কিনা ?রাজ্যের কাজ পড়ে  রয়েছে।"
পিসিমা বললেন  হ্যাঁ জানি বৌমা ,তোমাকে একা হাতে সবকিছু করতে হয় আর আমিও একটা বাড়তি বোঝা হয়ে গেছি মে কি করি বলো তো?'
পিসিমা সবসময় এরকম কথা বলেন
কেন ,,?এটাতো নিজেরও বাড়ি নাকি? আমি কি কখনো কিছু বলেছি আপনাকে,। কিছু মনে করবেন না ।আপনার এই কষ্টটা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে  চেপে রাখলেন কতটা কষ্ট পেতে হলো বলুন তো?"
শুধু কষ্ট বলে কষ্ট বৌমা। এখন তো আমার ভয়ই লাগছে পটি পেলে আমি কি করবো?"
এবার পটি যাতে নরম হয় সেই ব্যবস্থা করছি  দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে ।এবার চাটা খেয়ে নিন। "মাধু পিসীমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বেড়িয়ে আসল।
পিসিমা যে কষ্ট টা পেয়েছেন তার মধ্যে হঠাৎ করে একটুখানি যেন রিলাক্স মনে হচ্ছে।একটু শান্তি পাচ্ছে। যতই হোক নিজের ছেলে, ছেলে বউ তো নয় ,সব কথা তো বলা যায় না। তবুও মাধু যেভাবে পিসিমার সাথে কথা বলে ,সে ওর কথাতেই যেন একটা আলাদা মানসিক শান্তি পেল শুধুই যন্ত্রনা যদি সেরে যায় । পটি টা যদি একটু পাতলা হয় তাহলেই শান্তি এই ভেবে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখল সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে পিসিমার বিছানার ওপর । গত রাত্রেও যে হারে বৃষ্টি হয়েছে , ভাবতেই পারে নি যে আজকে রোদ উঠবে ।তাই দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা চিরস্থায়ী নয় ।
এসব কথা ভেবেই পিসিমা মনে মনে খুশি হলেন।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস টানাপোড়েন ২০১





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ২০১
নানা চিন্তা
মমতা রায়চৌধুরী

মনোজ অফিসে বেরোনোর পর রেখা ক্লান্ত মন নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছিল ,যেন বিছানা চাইছিল রেখার শরীরটা। কি আশ্চর্য ব্যাপার ঘুম এসে 
গেছিল ।হঠাৎই তুতুর কিউ কিউ আওয়াজে ঘুম ভাঙলো ।ঘুম থেকে উঠে দেখছে তুতু রেখার বালিশের কাছে এসে হাত দিয়ে ডাকছে আর আওয়াজ করছে ।সত্যি একটা অবলা জীব কথা বলতে পারে না কিন্তু কি সুন্দর অনুভূতি ।রেখা তাকাতেই এমনভাবে তাকাল তারপর উসখুস করতে লাগল ।তখন রেখা বুঝতে পারল 'ও বাইরে বেরোবে' ।
রেখা বললো "আহা মা ,আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সরি ,সরি ।চলো, চলো, চলো গেট খুলে দিচ্ছি।
গেট খুলতেই তুতু দ্রুত ছুটে গেল বাইরে তারপরে ও বাথরুম করতে লাগল ।শুধু তাই নয় রেখা খেয়াল করলো বাথরুম শেষে ও কিছুটা দূরে গেল যেখানে  ও পটি করে।  রেখা বুঝল তার জন্য এত জোরে আওয়াজ করছিল  অন্যদিকে পাইলট ,মিলি সকলে রেখার কাছে এসে দাঁড়ালো।
পাইলটের মুখটা তো একদম ইনোসেন্ট এত সুন্দর মায়াবী চোখ ঝোলা ঝোলা  কান ।ও যখন তাকায় রেখা যেন ওর মায়াবী চোখে বাঁধা পড়ে যায় কিছুতেই ওর চাউনিকে উপেক্ষা করতে পারে না রেখা বললো কটা বাজে ।ঘর এর ভেতরে এসে দেখল ও বাবা সাড়ে তিনটে বেজে গেছে । তবে তো খিদে পাবেই। তাড়াতাড়ি রেখা ভেতরে গিয়ে ওদের খাবার নিয়ে আসলো ।প্রত্যেককে  ভাগ করে খাবার দিল । রেখা যখন দাঁড়িয়ে রইলো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখল চৈতিদের বাড়ি সে যেন মনে হচ্ছে একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তির মত একটা কালো রঙের চাদরে মোড়া ।চাদরটা যেন মাথার উপরে ঘোমটার আকারে তুলে দেয়া ।কেউ যেন এই বাড়িটার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি যেন মনে 
হচ্ছে ।কেন এরকম মনে হচ্ছে ?আগে বাড়িটা তো কখনো এরকম মনে হয় নি। চৈতিরা কতদিন নেই বাড়িতে কি একটা কুৎসিত  অদ্ভুত
 দূরদৃষ্টি ।রেখার ভয় হতে লাগলো ।দিনের বেলা তেই ভয়।
আপন মনে এসব ভাবছে ভাবনায় ছেদ ঘটালে" ও বৌদি "ও বৌদি"ডাকে।
রেখা অবাক হয়ে তাকালো।
পার্থ সাইকেল থেকে নেমে রেখার মুখের সামনে গিয়ে হাত নাড়তে লাগলো ,তারপর বলল" কি হল বৌদি ,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিবা স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
নাকি দাদার কথা ভাবছিলে? না তোমার উপন্যাসের কোন চরিত্র ,ঘটনার কথা ভাবছিলে?"
রেখা হেসে বলল"ও পার্থ   তুমি?"
"ও বাবা তুমি কি আমার চেহারা ভুলে গেলে নাকি?"
"আরে তা নয় গো। আসলে আমি ঘুম থেকে উঠেই ওদেরকে খেতে দিতে এসেছি। তারপর ওদের খাওয়া দেখছি আর ওইদিকে চৈতি দের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি । ওদের বাড়িটার দিকে তাকিয়েই ভাবছিলাম নানা রকম কথা।
পার্থ এসে বলল "তাও ভাল।"
"আচ্ছা পার্থ চৈতির বাবার কী খবর গো?"
"ভালো নয় বৌদি।"
"বৌদি কি এর মধ্যে বাড়িতে আসবে?'
"আজকে আসার কথা ছিল এখন আসবে কিনা আর ফোন করে জানা হয়নি, জানো?"
"তা তুমি যদি ফোন করো যদি আসে আমাকে জানিও তাহলে আমি বৌদির সঙ্গে একটু দেখা করব আর যদি আমি পারি আমি ফোন করে নেব।'
" ঠিক আছে।"
"মাসিমা কেমন আছে গো?'
"ওইযে বাতের ব্যথা।"
কিন্তু কে কার শুনে বলো। একটু সুস্থ থাকলে বসে থাকবে ?জল ঘাটতে থাকবে ঘাটতেই 
থাকবে ।জলের যেন পোকা।
" আসলে আগেকার দিনের মানুষ তো একটু পরিষ্কার পরিষ্কার বাতিক আছে না ?এদের সমস্যাটা তো এটাই।"
"কি বলবো রোজই কাজের মেয়ের সাথে এই নিয়ে অশান্তি  । বলে ভাল পরিষ্কার হয়নি কাজ আচ্ছা বৌদি, বলো নিজে যখন পারবো না অত কিছু করতে তাহলে সেটাই তো মেনে নিতে হবে।"
"জানি ভাই ,কিন্তু যারা পারে না চিরকাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে এসেছে তারাও নোংরা কাজ পছন্দ করবে না। আমার মাকে তো দেখেছি কাকিমাকে তো দেখি ।কাকিমা এখনো নিজেই করে নেয় কাজের লোক থাকলেও। দেখবে কাজের লোক বসে গল্প করছে ,আর কাকিমা কাজ করছে ,এরকম ও দেখা যায় ,ভাবো পার্থ।'

"হ্যাঁ দেখা যায়  এই গ্রহে তুমি দে।খতে পাবে ,মঙ্গল গ্রহে দেখতে পাবে কিনা জানি না।' বলেই দুজনা  হো হো হো করে হাসতে শুরু করল।
রেখা বলল' পার্থ ,তুমি পারোও বটে। আমি মাসিমাকে বলছি ছেলের দুষ্টুমির কথা।'
"ভালোই হলো তুমি তো আমাদের বাড়ির পথ ভুলে গেছো এই সুযোগে যদি একটু জানাশোনা হয়ে যায় '
রেখা বলল" না গো জানো তো কতটা চাপে থাকি হ্যাঁ সেতো জানি  তবে এখন একটু ছুটি যেতে পারো না  বৌদি?"
 ",যাবো যাবো এ কদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম ছুটি হলে কি হবে আমাকে তো বিভিন্ন কাজে স্কুলে ডেকে পাঠায় না ।এই দেখো না কালকেই আছে আবার যেতে হবে কলেজে ।এর আগে একবার কলেজে গেলাম এবার একটা কলেজে যাব আবার সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পুরস্কার নেওয়ার জন্য আমাকে যেতে হবে।'
"কেন যেতে হবে না তুমি এত কষ্ট করে মেয়েদেরকে রেডি করালে ,বড়দি ঠিক লোককে নির্বাচন করেছেন। না বৌদি, আমরা তো জানি আমরা তো কাছে থাকি তুমি কি ?নিন্দুকেরা যে . যা। বলে বলুক এই বৌদি কবে আছে কাকিমা?
আগামী সপ্তাহে উঠবেন । নাতনির জন্মদিন আছে বলতে পারবো না আমাকে তো বলে না ভাই কি করে জানবো বলো। সত্যি বিচিত্র এই পরিবার কি নেই তোমার মধ্যে বলতো ?বৌদি একটা মেয়ে এরমধ্যে চাকরি করছে সংসারের কাজ করছে তার মধ্যে এত সুন্দর সৃজনশীলতার প্রতিভা রয়েছে ।পার্থ থাক, আর বলো না আমার সম্পর্কে এত প্রশংসা আমি নিতে পারছি না চুপ করো তো ?বৌদি আমাকে বলতে দাও এগুলো কেন? কাকিমা কেন এগুলো মেনে নিতে পারেন না। জানিনা একটা ছেলের বউ সেখানে তোমাকে মাথায় করে রাখা উচিত একদিন নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে দেখো বৌদি বললাম তুমি এই নিয়ে মনে কোন কষ্ট রেখনা নাগো পার্থ আগে না প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হতো জানোতো এখন এসব ভাবি না কেন বলতো বল ওইটা ভাব আর কোন সময় নেই এখন নানা কাজে থাকি না পার্থ বলল তাহলে কোন একটা সময়ে তোমার মনা মনের চোরাবালিতে কখনো তো উঁকি দেয় দেয় না বৌদি তুমি বেশ ভালো কথা বলতো তোমার মতো গুছিয়ে বলতে পারিনা বৌদি তুমি একজন লেখিকা তার সামনে আমি কথা বলছি তুমি আমাকে এত সুন্দর একটা কমপ্লিমেন্ট দিলে তার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।
তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাবে না ভেতরে আসবে? এস চা খেয়ে যাও।
না বৌদি চা খেলে হবেনা যাচ্ছি আর তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো কেমন?
Ok
বৌদি ওই দেখো তোমার তুতু  কি করে বুঝলো তুমি এখন ভেতরে ঢুকবে ,এতক্ষণ  তো বেশ বসে ছিল ।দেখেছো, এখনো আগে আগে দরজার কাছে চলে গেছে। আবার পিছন থেকে দেখছি তুমি আসছো কিনা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা।
রেখা তাকিয়ে বলল'তুমি চলো তুতু মা 
 আমি যাচ্ছি ।"
 করো তো বৌদি ।আমাকে বলতে দাও ।এগুলো কেন কাকিমা  এগুলো মেনে নিতে পারেন না জানিনা ।একটা ছেলের বউ সেখানে তোমাকে মাথায় করে রাখা উচিত। একদিন নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে দেখো বৌদি, বললাম দেখে নিও।তুমি এই নিয়ে মনে কোন কষ্ট রেখ না।"
 "না গো পার্থ ,আগে না প্রথম প্রথম আমার খুব কষ্ট হতো জানো তো  এখন এসব ভাবি না । কেন বল তো? বল ওইটা ভাবার কোন সময় নেই এখন নানা কাজে থাকি না ?'
পার্থ বলল" তাহলেও কোন একটা সময়ে তোমার  মনের চোরাবালিতে কখনো তো উঁকি দেয় ।দেয় না বৌদি ? সত্যি করে বলো,,!
"তুমি বেশ ভালো কথা বল.তো ?"
"তোমার মতো গুছিয়ে বলতে পারিনা বৌদি তুমি একজন লেখিকা ,তার সামনে আমি কথা বলছি তুমি আমাকে এত সুন্দর একটা কমপ্লিমেন্ট দিলে তার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।
তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাবে ,না ভেতরে আসবে? এসো চা খেয়ে যাও।"
"না বৌদি, চা খেলে হবে না যাচ্ছি। আর তোমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো কেমন?"
'Ok'
"বৌদি ওই দেখো ,তোমার তুতু   কি করে বুঝলো তুমি এখন ভেতরে ঢুকবে ,এতক্ষণ  তো বেশ বসে ছিল ।দেখেছো, এখন আগে আগে দরজার কাছে চলে গেছে। আবার পিছন থেকে দেখছে তুমি আসছো কিনা। আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা।"
রেখা তাকিয়ে বলল'তুমি চলো তুতু মা 
 আমি যাচ্ছি ।"
রেখা বললো "ঠিকআছে ,পার্থ আস ছি।"
"এই যা পার্থকে তো বলা হলো না  সঞ্জীবনী তে
রোগীর ভিড় কেমন আছে?"
রেখা তাড়াতাড়ি সিঙ্ক এ   বাসন টা রেখে হাত ধুয়ে পিন্টুকে ফোন লাগালো। চারটের সময় যাবার কথা চারটে তো বেজে গেল।
ফোন করলে আবার দেরি হবে দরকার নেই রেডি হয়ে বেরিয়ে চলে যাই রিপোর্টটা নিয়ে ডাক্তারবাবুর কে দেখিয়ে আসি ।'বলেই তাড়াতাড়ি করে সালোয়ার কামিজ পড়ে ফেললো আর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে তুতুকে ঘরের ভেতরে রেখে দিয়ে বাইরে শুধু কলাপসিবল গেট টা তালা লাগিয়ে দিয়ে গেল।
সঞ্জীবনী পৌঁছাতে ই এখনো কত রোগী ভর্তি।
অনেকেই রেখাকে জিজ্ঞেস করল 'আপনার টোকেন নম্বর কত?'
বলল-আমাকে তো টোকেন নম্বর দেয়নি তবে বলেছিল এই টাইমে আসতে কারণ আমি এর আগেই নাম লিখে রেখেছি ।"
আমরাও তো অনেক আগে এসেছি অনেকেই আপত্তি জানাল।
"ঠিক আছে আপনাদের হওয়ার পরেই নাই আমি যাব তার আগে আমি যাদের সাথে কথা বলেছি তারা কি বলে ,দেখি আগে কথাটা শুনে।"রেখা
মেডিকেল শপ এর দিকে এগিয়ে গেল পিন্টু কে বলল "এই পিন্টু কখন আমার সময় দেখানোর?"
"
এইতো এক্ষুনি।'
"কিন্তু এক্ষুনি বললে তো  হবে না ।আমাকে কি  ঢুকতে দেবে ?'
রেখাকে টোকেন  নম্বর 56 দিল।এখন চলছে 51 নম্বর।"
রেখার তাড়া এই কারণে তুতুকে ঘরে বন্দি করে এসেছে।
"কি করছে কে জানে?"
নানবিধ চিন্তা এসে মাথায় চাপলো।
এরমধ্যে পিন্টু এসে বলল" আজকে বৌদি দেখানো হবে না?"
"কেন কি হয়েছে?"
"আর্জেন্ট কল এসেছে ডাক্তারবাবুকে যেতে হবে।
ও বাবা তাহলে কি হবে?"
'দেখে নিই আগামী সপ্তাহে রাখতে পারবো । ?"*ডাক্তারবাবু আসতে পারবেন কিনা তোমাকে জানিয়ে দেবো।"
 
কিন্তু আমাদের কাছ থেকে যে এডভান্স টাকা নেয়া হয়েছে সেগুলো?
সেগুলো ফেরত দিয়ে দেবো।
এমনিতেই ভয় লাগছে।
এযেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া মত টনটন করছে।