স্মৃতির জানালায়
(চতুর্থ পর্ব)
সদ্য গ্রাম থেকে আসা কৈশোর উত্তীর্ণ এক নবীন যুবক। শহরের পরিবেশের সংগে যার কোন পরিচিতি নেই। উচ্চশিক্ষা গ্রহন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় সংকল্প ছিল তাঁর মনে। মেসের একঘেয়ে জীবন আর একমনে লেখাপড়া করা নিয়ে যখন সে ব্যাস্ত তখনি একদিন পরিচয় হলো শবনমের সাথে । তাঁর প্রিয় শিক্ষক রহমান স্যারের মেয়ে। পড়া বুঝে নেবার জন্য স্যার বলেছিলেন সন্ধায় বাসায় যেতে। ঠিকানা খুঁজে খুঁজে সন্ধায় গিয়ে উপস্থিত হল স্যারের বাসায়। দুরুদুরু বক্ষে দরোজায় কড়া নাড়লো। সতেরো আঠারো বছরের কালো ছিপছিপে গড়নের একটি ছেলে দড়োজা খুলল । মাহতাবকে জিজ্ঞেস করল
- কাকে চান।?
-স্যার বাসায় আছেন ?
-জ্বীনা উনিতো বাসায় নেই !
- কিন্তু স্যার আমাকে আজকে সন্ধায় আসতে বলেছিলেন।
- আচ্ছা আপনি ভিতরে এসে বসেন আমি একটু জেনে আসছি।
সুন্দর করে সাজানো বসার ঘর। জুতো খুলে রেখে ভিতরে এসে একটা সোফার এক কোনে জড়সড় হয়ে বসল মাহতাব। মাহতাবকে বসিয়ে ছেলেটি বাড়ীর অন্দর মহলে গেল। পদশব্দে মনে হলো ছেলেটি দোতলায় উঠছে। উপর তলার সিড়িটি সম্ভবত বসার ঘরের ঠিক পাশেই তাই পদশব্দ খুব সহজেই কানে আসে। মিনিট পাঁচেক পরে আবার পদশব্দ নেমে আসছে এবং পরমুহূর্তে দরোজায় যাকে দেখা গেল সে ঐ ছেলেটি নয়, একটি মেয়ে। সে ভিতরে প্রবেশ করে হাত তুলে সালাম জানালো মাহতাবকে। মেয়েটির রূপে ঘর যেন আলোকিত হয়ে গেছে। মাহতাব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোন রকমে ছালাম গ্রহন করলো। মেয়েটির পরনে সালোয়ার কামিজ। সেটা কি রংগের ছিলো এখন আর মাহতাবের মনে পড়েনা। তাঁর ওড়নার এক প্রান্ত বুকের উপর লতানো ভংগিতে ফেলা আর এক প্রান্ত মাথার উপরে ঘোমটা দেয়া। বয়স ষোল সতের হবে। তাঁর দাঁড়াবার ভংগিটিও ভারি চমৎকার। মাহতাবকে ভ্যাবাচ্যাকা খেতে দেখেও সে মোটেই হাসলোনা বরং স্বাভাবিক ভংগিতে বলল
-দাঁড়াতে হবেনা , আপনি বসুন।
মাহতাব বসল। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।তখনো তার চোখের সামনে ঝাপসা কাটছিলো না। ঘরে ফুল পাওয়ারের বৈদ্যুতিক আলো জ্বলছিল তথাপি বার বার তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো। মাহতাবকে বসতে বলে মেয়েটি ঘরের অপর প্রান্তে আরেকটি সোফায় বসল। তারপর সরাসরি মাহতাবকে প্রশ্ন করল
- আব্বা আপনাকে আজকে আসতে বলেছিলেন ? ঢোক গিলে মাহতাব বলল
-জ্বী, স্যার আমাকে আজকেই সন্ধার পরে আসতে বলেছিলেন।
- ও, আপনি বুঝি আব্বার ছাত্র ?
মাথা দোলাল মাহতাব । এবার মিষ্টি করে হাসল মেয়েটি। বলল
- দেখুন আব্বার কান্ড ! এতো ভুলো মন হয় কারো? আজকে উনার সময় নেই অথচ আপনাকে আসতে বলেছেন। আজকে আমার মামাত বোনের বিয়ের কথা পাকাপাকি হবার কথা তাই আব্বা আম্মা দুজনেই সেখানে গেছেন। ফিরতে হয়ত রাত হবে। আপনি শুধুশুধু কষ্ট করলেন কিছু মনে করবেন না। আব্বা প্রায়ই এমন অনেক কিছু ভুলে বসে থাকেন। আজকে প্রথম দেখলেন এরপর আরো দেখবেন। আপনাকে আমি আগেই বলে রাখছি। তবে কি জানেন মানুষ হিসেবে আব্বার কোন তুলনা হয়না।
মাহতাবের কন্ঠতালু পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছিলো সে কোন কথা বলতে পারছিলো না। অনেক কষ্টে বলল
- আমি তাহলে আজকে যাই।
- না না বসুন চা খেয়ে পরে যাবেন।
মেয়েটির কথায় আদেশ ছিলো না অনুরোধ ছিলো কে জানে ! মাহতাব আবার বসে পড়ল।
চলবে......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much