আজ থেকে শুরু হলো নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "
ক্ষণিক বসন্ত
২য় পর্ব
হয়তো পারবো। বাসার ঠিকানা দিয়ে বললাম আপনি কাল সকাল ৯ টায় আমার বাসায় চলে আসুন, একসাথে বের হব। ৯ টার একটু আগেই বুলা চলে এল। ঘরে ঠুকেই আমার আগোছালো রুম দেখে বলল আপনি এভাবে থাকেন কিভাবে? বললাম অভ্যাস হয়ে গেছে, তাছারা আমার কোন অসুবিধা হয়না। বুলা কিছু না বলে আমার ঘর গুছাতে লেগে গেল, আমার দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিলনা। আমি বললাম বুলা দেরি হয়ে যাবে চলুন বের হওয়া যাক, আমার কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনার অন্যরুমে কেহ থাকেনা? বললাম থাকে আমার বন্ধু, আজ ওর রাতের সিফটে ডিওটি, তাই ঘুমাচ্ছে। আমি মন্টুর দরজায় ধাক্কা দিতেই সারা দিল, বললাম উঠে আয় একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, বুলার যদিও আপত্তি ছিল ওর ঘুম ভাঙাতে। পরিচয়ের পালা শেষে আমি রান্না ঘরে গেলাম কফি বানাতে। কয়েকদিন কেটে গেলো।
আমার বন্ধুর ট্রাভেল এজেন্সিতে বুলার কাজ হয়ে গেছে , সাপ্তাহিক বেতন ১৫০ পাউন্ড। আমার ভাল লাগলো যাক এখন ও ভালো ভাবে চলতে পারবে। বুলা ত দারুন খুশি। বলল চলুন আপনাকে কফি খাওয়াবো, বুলা আমার দেরি হয়ে গেছে আমাকে যেতে হবে, অন্য আরেকদিন আপনার কফি খাব। বুলা কাজ করছে, বন্ধুর কাছে জানলাম ওর কাজে বন্ধু আমার খুশি। প্রতি রাতে বুলা কল করে, কেটে যাচ্ছে সময়, এগিয়ে যাচ্ছে দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতে আমরা চলে যাই বিভিন্ন জায়গায়, তবে ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা টেমসের তীর। একদিন টেমসের পারে হাটছি হঠাৎ করেই ও বলল এই যে আমরা আজ এই নদীর তীরে হাটছি। আমাদের এই একসাথে পথ চলার সাক্ষী কে জানেন, বললাম না জানিনা, বলল এই যে সীমাহীন আকাশ দেখছেন আর এই নদী , আমরা চিরদিন থাকবনা কিন্ত ওরা থাকবে, ওরাই সাক্ষী হয়ে থাকবে আমাদের এই পথ চলার। দিন যায় মাস যায় সময় এগিয়ে যায়। আমার মধ্যে কি যেন কাজ করে, আমি বুলার কলের জন্য অপেক্ষা করি, ওর সাথে দেখা হবার দিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি। মনের কোথায় যেন কি একটা অনুভব করি। একদিন গিয়েছিলাম হাইড পার্কে। সেদিন জানলাম ও বাঁশি বাজাতে পারে, বাঁশি ওর খুব প্রিয়, কিন্ত এখানে এসে বাজাতে পারছেনা, বললাম - বুলা, বাশি এখানে পাওয়া যায় তবে অনেক দাম। আমি ২/১ সপ্তাহের মধ্যে দেশে যাবো আসার সময় আপনার জন্য বাঁশি নিয়ে আসবো বুলা অবাক হয়ে বললো আপনি দেশে যাবেন, আমাকে বলেননি তো ! বললাম এই যে বললাম। ও হয়তো কষ্ট পেয়েছে, বললাম আসলে এখনো টিকেট কেনা হয়নি, তাই বলিনি, ভেবেছি টিকেট নেবার পর বলবো। কতদিন থাকবেন? ৪ সপ্তাহ। ঠিক ৪ সপ্তাহ তো ? বললাম হ্যাঁ । দেখুন ৪ সপ্তাহের বেশি হলে আমি কিন্ত রাগ করবো , বুলে অনেকটা অভিমানী কণ্ঠে বললো আমি এই ৪ সপ্তাহ থাকবো কিভাবে, বললাম কাজের মধ্যে সময় কেটে যাবে, তাছাড়া আমিতো দেশ থেকে কল করবো । ও কিছু বললো না। হটাৎ করেই ওর সহজাত হাসি খুশি মুখটা মলিন হয়ে গেল। আমারা চুপচাপ হাটছিলাম, হঠাৎ করেই আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, আচ্ছা এই যে সমাজ, সমাজ ব্যাবস্থা এইসব তো আমাদেরই গড়া না কি? বললাম হ্যাঁ । তবে সমাজ কেন মানুযের সুন্দর স্বপ্নে বাধা হয়ে দাড়ায়। কি উত্তর দেব ওর প্রশ্নের, বললাম চলুন ফেরা যাক। ধরা গলায় বললো আরেকটু থাকিনা।
ধারাবাহিক "ছোট গল্প " ক্রমশ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much