০৩ ডিসেম্বর ২০২০

প্রেমাংশু শ্রাবণ কবির,রের দীর্ঘ কবিতা



সই বিকেলের কথা মনে পড়ে

সেই বিকেলের কথা মনে পড়ে?

এক দীর্ঘতম আশ্চর্য বিকেল!

লোকালয় থেকে দূরে

 আমাদের সেই স্বপ্রেম সাঁতার,মনে পড়ে?

তোমার সমস্ত তুমি আমার সমস্ত আমি মিলেমিশে কি রকম একাকার

একটা বিকেলের আর অনন্ত অতীতে ডুবে গিয়েছিলো--মনে পড়ে?


সূর্যের জিহ্বায় লাল সে সময়ে ছুঁয়ে ছিলো প্রকৃতির শেষ দিনটুকু

তুমি তার রক্তিম কুঙ্কুমরেণু গ্রীবা ও চিবুকে

খুব মেখে ছিলে বলে

উজ্জ্বল  সিংহের মত বাতাসেরা অপূর্ব কেশর দুলাতে দুলাতে এসে

তোমার চিবুকে ঘাড়ে--শুরু করে দিয়ে ছিলো সুন্দর তান্ডব।


আমরা সেদিন ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদের সবকটি ইটের মমতা ছুঁয়েছি

মাতাল বাতাস নিয়ে অপরুপ খেলতে খেলতে আমরা কেমন অতীতের খুব বর্ণময় অভ্যন্তরে ডুবে যাচ্ছিলাম,মনে পড়ে?


একটা সরু কুঠুরির মুখোমুখি এসে থমকে দাঁড়ালে তুমি।

প্রশস্ত দীঘল সিঁড়ি দেখিয়ে বললে,এসো--এই সিঁড়ি ভেঙে আরও নিচে নামি

কিছুটা সময় আজ কাটুক এখানে,


এই ভাবে এরপর তিনটি বিদীর্ণ ঘরে

দীর্ঘক্ষণ কেটেছে কেমন!

ওই ঘরে কোনোদিন বোধিসত্ত্ব বুদ্ধের মূর্তির তলে সমর্পিত হতো

অনার্য বিক্ষোভে জ্বলা অবিনাশী বাঙালীর বিষাক্ত বল্লম

বিনয়ী বীরের মতো করতল পেতে আত্নার গভীরে তারা তুলে নিতো

অহিংসার প্রেমের আর নির্বাণের অনন্ত কামনা!

সেরকম প্রণামের অতীত মুদ্রায় তুমি দুই বাহু আন্দোলিত করে

আমাকে জড়িয়ে নিলে বাতাসের সাথে,

আমি কি বাতাস।


দ্বিতীয় কুঠুরি জুড়ে তোমার গভীর গাঢ় চুম্বনের ছায়া বেঁচে আছে

একটা বেদির মূলে আমরা বসেছিলা বুদ্ধ আলিঙ্গনে।


শতাব্দীর ক্লান্তি মোড়া তোমার নিঃসীম ঘাড় উজ্জ্বল মন্ত্রের মত জ্বলছিলো পবিত্র আলোয়

তোমার অচিন ঠোঁট কানে কানে বলেছিলো শুধু,

অনার্য কুমারী আমি,

তুমি কোন বীরনাথ দুর্ধর্ষ প্রমিক

আমাকে উদ্ধার করো,ধরো--

সীমাহীন উচ্চারণে মন্ত্রপূত করো!মনে পগে?


তৃতীয় দুয়ারে ঢুকে তুমি আরও আর্যর্পুব রমণীর নিজস্ব কলায় 

আমার কন্ঠার হাড়ে মুখ গুজে কী সব বলেছো....

আমি তার কিছুই শুনতে পারিনি!


আমি শুধু তোমাকে দেখছিলাম।

কী রকম বদলাতে বদলাতে তুমি মুখর অতীতে ডুবে গেলে--

মনে হলো,

আমরা কোথাও নেই,

বাতাসের শব্দ জুড়ে শুধু আছে ইতিহাস মন্থনের পরে জমে থাকা এক পূতঃ স্মৃতির উত্থান!


তোমার চিবুকে খুব ঝরঝরে স্মৃতিময় পাতাদের মর্মরিত ধুলো।

তোমার কন্ঠা ও গ্রীভায় বোদ্ধ যুগীয় লিপি উঠেছিলো ফুটে

তোমার গভীর চোখে বুদ্ধের অবিনাশী মন্ত্রের ক্রন্দন

তোমার বাহুর ছন্দে নেচে ওঠে আর্যতীত রমণীর আত্নার উৎসব

তোমার ওষ্ঠে শুধুই

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি....


তোমার শরীর যেনো শূন্য থেকে শূন্যতর

অতীতে দিকে ধাবমান

আমি শুধু ওষ্ঠ পেতে আকন্ঠ করেছি পান নির্জন অতীত

এইভাবে আমাদের কয়যুগ কেটেছে সেখানেঃমনে পড়ে?


যখন ফিরছিরাম,পূনরায় লোকালয়ের দিকেই

এগিয়ে আসছিলাম

তখন সন্ধ্যা নেমেছে,

নিয়নের আলোময়

যত তুমি উঠছিলে ভেসে

তোমার শরীর থেকে একে একে অবসিত হয়ে গেলো সব অতীতের ধুলো!


আমি তবু তোমাকে দেখছিলাম,

কী ঘোর লজ্জায় ডুবে

এবার বললে তুমি--

কী দেখছো অমন করে?

লোকেরা কি ভাববে বলো তো!

কি ভেবে বললে ফের,

কোন কিছু ফেলে আসোনি তো?

আমি তখন সমস্ত চেতনায় শুকে দেখছিলাম

তোমার এই পরিবর্তনের ঘ্রাণ।


আমরা এসেছি ফেলে

আমাদের বিহ্বলতা চুম্বনের গন্ধমাখা বিভোর বিকেল

লোকালয় থেকে দূরে অন্য এক জীবনের নর্ম সমর্পন!

তখন ফিরছো তুমি ফের বর্তমানে।

মনে পড়ে? 

মনে পড়ে?

৪টি মন্তব্য:

thank you so much