০৭ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস টানাপোড়েন ১৭৯




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৭৯
ঈশ্বরের ইচ্ছে
মমতা রায়চৌধুরী

"উফ"! কি গরম আর পারা যাচ্ছে 
না ।তারমধ্যে আজ শেষ লটের খাতা জমা দেওয়া। হেড এক্সামিনারের বাড়ি ও তো কম দূরে নয় ।আজকে একা যাবার সাহসই নেই । রেখা মনে মনে ভাবল মনোজকে একবার বলে দেখবে। অবশ্য কদিন আগে বলা হয়েছিল ,নিজের থেকেই বলেছিল যাবে । যদি ভুলে গিয়ে থাকে এখন তো ওর মনটা নানা অবস্থায় আছে।তাই আজকে আর একবার স্মরণ করাবে? মুড কেমন আছে কে জানে? যাই হোক না কেন বলবেই। খুব সকাল সকাল উঠে পড়েছে সব কাজ গুলো গুছিয়ে রেখে দিয়ে যেতে হবে। চা করতে করতেই এসব কথাই ভাবছিল। চা হয়ে গেলে ফ্লাস্কে চা ঢেলে, বাকি চা কাপে ঢেলে নিয়ে মনোজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
রেখা মনোজকে ডাকলো জানলাটা খুলতে খুলতে'কিগো ওঠো। এত গরমের মধ্যে আবার জানলাটা কখন উঠে বন্ধ করেছ, মাথাটা কি কাজ করছে না নাকি?
সাড়া না পেয়ে আবার ডাকল" কি গো সাড়া দিচ্ছ না যে? এবার মনোজের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলল'ওঠো,।
মনোজ এবার চোখটা খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল" কেন এত তাড়াতাড়ি ডাকছ?'
রেখা জানে সকাল সকাল ঘুম ভাঙানো মানে রেখার পক্ষে সেটা খুবই ট্রাপ ব্যাপার। একটা কুম্ভকর্ণ যে অসময়ে ঘুম ভাঙানো যাবে না, ভাঙ্গলেই বিপদ।
রেখা বলল' আজকে খাতা জমা দেবার দিন। তুমি যাবে তো আমার সাথে?'
মনোজ রেখার দিকে তাকিয়ে বলল 'না গেলে হবে ,এতটা রাস্তা তুমি একা 
যাবে? '
রেখা একটু খুশি হল তারপর বলল 'সেই জন্যই তো তোমাকে ডাকছি।'
মনোজ বলল' একটু ঘুমাতে 
দাও ।তারপর দেখো সত্যি সত্যি উঠে যাব।'
রেখা বলল' ঠিক আছে ।'রেখা দেখল এরপর আর বিরক্ত করা চলে না তাই বেরিয়ে এল। আবার আর একটা কথা বলার জন্য ভেতরে ঢুকলো ' হ্যাঁগো একবার বিরক্ত করছি .দুপুরে বাড়িতে খাবে তো নাকি?"
মনোজ বলল' আজকে দুপুরে রান্নাটা ক'রো
 না ।
রেখা খুশি হয়ে  বলল' মানে?
মানে আজকে রান্না করব না বাইরে খাবার খাবে?'
মনের শুধু বললো 'হুম।
রেখা তো মনে মনে এটাই চাইছিল। ঈশ্বর রেখার মনের ইচ্ছেটা পূরণ করেছেন। তাই
রেখার মনের ভেতরে খুশির ঢেউ ফুলে  ফেঁপে  উঠলো 
এমনিতেই গরমে রেখার রান্না করতে ইচ্ছে করছে না ,আর যদি মনের আশাটা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
কিন্তু রেখার তো ছোট বাচ্চারা আছে ওর মায়ের আছে ওদের জন্য তো আমরা করতেই হবে। রেখা চটপট গিয়ে ওদের খাবারটা রেডি করতে গেল।
এরইমধ্যে তুতু এসে কিউকিউ করতে লাগলো। রেখা বলল "ওমা তুমি আবার কখন আসলে"?
"এখন বিরক্ত করো না আমাদের খাবার রেডি করছি।"
তারপরেও সমানে কিউকিউ করে যেতে লাগলো।
রেখা গাল দুটোকে ধরে আদর করে বলল কি হয়েছে? বলবি তো কি হয়েছে?
রেখা আবার কাজে মনোযোগ দেয়। কিন্তু ওর আওয়াজ বন্ধ হয় না। অহ তুতু বিরক্ত করো 
না আমাকে ।বেশ তো
 ঘুমাচ্ছিলে ।আবার উঠে আসলে কেন?
হঠাৎ রেখার সিক্স সেন্স কাজ করলো ওর পটি বা হিসু পায় নি তো?
তাড়াতাড়ি গ্যাসের আঁচটা সিম করে দিয়ে দরজা খুলে দিল। হ্যাঁ যা ভেবেছে তাই। রেখা লক্ষ্য করলো তুতু (তুলি) একটা পা যেন ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। রেখা ভাবল ওর পায়ে কী করে লাগল?
তাহলে তো ওষুধ খাওয়াতে হবে। 
 মন্টু ডাক্তার কে ফোন করে ওষুধ জানতে হবে।
এরমধ্যে পটি করে ঘরে ঢুকে পরল এখন যেন রেখাকে চিনতেই পারল না।
এখান থেকে বলছি কি রে আমি দাঁড়িয়ে আছি তোর হুঁশ নেই।
রেখার কথায় একবার পিছন ফিরে তাকাল তারপর ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়ে একেবারে ঘরের ভেতরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
আপন মনে হাসতে লাগলো। রান্নাঘরে যে ঢুকেছে আবার কলিং বেলের আওয়াজ'জয় রাধে ,রাধে , কৃষ্ণ, কৃষ্ণ গোবিন্দ গোবিন্দ বল রে…।'
রেখা ভাবল এ সময় আবার কে আসলো?"
মাসি? কমটুনমাসির তো এখনো সময় হয়নি।
আবার কলিং বেলের আওয়াজ'জয় রাধে, রাধে, কৃষ্ণ ,কৃষ্ণ ।গোবিন্দ ,গোবিন্দ ,বল রে…।"
দরজাটা খুলতেই রেখা যেন ভূত দেখার মত দেখল চৈতির মাকে?
কি ব্যাপার দিদি এত সকালে?
আর বলবেন না একটা বিপদ হয়েছে একটু দাদা কে ডেকে দিন না?
হ্যাঁ , সে  দিচ্ছি । কিন্তু হয়েছে?
আপনাদের দাদা হঠাৎ করে মুখের একটা অংশ বেঁকে যাচ্ছে কথাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
কথাগুলো বলছে আর চৈতির মায়ের চোখ গুলো জলে ভর্তি হয়ে গেছে।
রেখা বলে এখন দাদা কোথায়?
শুয়ে থাকা অবস্থাতেই হয়েছে।
আপনি দাদাকে রেখে চলে আসলেন?
কিছু বুঝতে পারছিনা আমার দিশেহারা লাগছে।
মেয়েকে ফোন করেছেন?
হ্যাঁ করেছি।
আর এই জন্য আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি।
ঠিক আছে চিন্তা করবেন না'
 দাদা কে ডেকে দিচ্ছি।
কিগো উঠ তো? অ্যা ই ওঠো।
কি হলো?
আর একবার যদি দের বাড়িতে যাও ওর বাবার কি যেন হয়েছে?
হসপিটালে ভর্তি ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে হবে একা মেয়ে মানুষ ?"তো?
হ্যাঁ সে ঠিক আছে একবার পার্থকে ফোন করে দিই। আমিও এই কথাটাই ভাবছিলাম হ্যাঁ যত তাড়াতাড়ি পারো পার্থ কে ফোন করো। সঙ্গে গাড়িটাও যেন নিয়ে আসে।
রেখা চৈতির মাকে বলল" দিদি আপনি বাড়ি যান এখানে দায়ী থাকবেন না ।ওরা যাচ্ছে একটু পরে। আপনি বলুন মেয়ে জামাই কখন আসতে একবার জেনে নিন।
হ্যাঁ ঠিকই  বলেছেন  আমি বাড়ি যাচ্ছি।
মনোজ পার্থকে ফোন করলো

"হ্যালো'

এই আমি মনোজ দা বলছি পার্থ।
হ্যাঁ ,সুপ্রভাত দাদা ।।এ তো দাদা সকাল সকাল মনে করলেন।'
বলেই  হাসতে লাগল।
পার্থ একবার এক্ষুনি গাড়িটা নিয়ে এসে চৈতি দের বাড়ির কাছে দাঁড়াও।

এরমধ্যে রেখা ও দেকগেল আবার কলিং বেলের আওয়াজ
"জয় রাধে ,রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ গোবিন্দ ,গোবিন্দ বল রে।'
রেখা মনে মনেl ভাবল আজকে খাতা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট এর মধ্যে যদি মনোজও চলে
যায় তাহলে তো।  ..?

মনোজ্ঞ বলল' আমি জানি কি ভাবছো?
এর মধ্যে পার্থ এসে হর্ন বাজালো।
মনোজ বলল' আসছি।'
এদিকে তাড়াতাড়ি চৈতির বাবাকে কোল পাজা করে তুলে  গাড়িতে শোয়ালো।
তারপর দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে এসে ভর্তি করে দিল।
এদিকে রেখা ঘড়ির দিকে তাকাতে লাগলো কি জানি শেষ পর্যন্ত মনোজ যেতে পারবে কিনা?
তবুও রেখা মনের ভেতরে ক্ষীণ আশা টুকু জাগিয়ে মনোজ এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কারণ মনোজ যদি না আসতে পারতো, তাহলে ফোন করে দিত।
এসব ভাবতে ভাবতেই রেখা মিলি আর বাচ্চাদের খেতে দিয়ে দিল। নিজেও ব্রেকফাস্ট করে নিল। রেখা সবকিছু গুছিয়ে গাছিয়ে এবার মনোজকে একটা ফোন করলো।
রিং হতে  না হতেই'বলল হ্যালো'
তুমি কখন আসবে?
এইতো ডাক্তার দেখাচ্ছি দাদাকে এডমিট করে নিয়েছে ।
আসলে বেলা হয়ে যাচ্ছে তো। রোদের তাপ টাও বাড়ছে।
সে হোক কি আর করা যাবে বিপদের দিনে মানুষের পাশে তো থাকতেই হবে।
হ্যাঁ সে কথা তো ঠিকই।
রেখা মনোজ যেতে পারবে ভেবে মনে মনে খুশি হল কিন্তু চৈতির বাবার জন্য আবার মন খারাপ হলো ঈশ্বর করুন সবকিছু ঠিক করে দিন।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল রেখা।
চৈতির মা পার্থ আর মানুষকে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
মনোজ বলল বৌদি এভাবে বলবেন না মানুষ হয়ে জন্মেছি মানুষের জন্য যদি কিছু করতে না পারে তাহলে মনুষ্য জীবনের সার্থকতা কি।
পার্থ বলল হ্যাঁ কিছু চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
চৈতির মা বলল তবুও আমি বলার সাথে সাথে যেভাবে আপনারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এইটুকু কৃতজ্ঞতা যদি প্রকাশ না করে তাহলে ভেতরে ভেতরে খুব ছোট লাগবে নিজেকে।
মনোজ বলল বৌদি এসব কথা না ভেবে বরং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন দাদা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পার্থ বলল চৈতি আসছে?
চৈতির মা বলল হ্যাঁ আসবে তত সমস্যা রয়েছে ও প্রেগন্যান্ট এই অবস্থায় হুটোপাটি করে আসাটা জার্নি করাটাও তো রিক্স।
তাছাড়া ওর তো প্রথম বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।
পার্থ, মনোজ দু'জনায় বলল"তাহলে তো রিক্স ই  বটে।'
চৈতির মা বলল তবুও বাবার এই অবস্থা শুনে ও তো আর নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারবে না আসবেই। এখন পুরোটাই ঈশ্বরের উপর ভরসা করা ছাড়া কিছুই নয় ঈশ্বর যেটা ভালো বুঝবেন সেটাই করবেন।
মনোজ বলল কিছু চিন্তা করবেন না ঈশ্বর সব সময় মানুষের ভালোর জন্যই করে থাকেন।
মনোজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল পার্থ আমি বরণ বাঁশি বেরিয়ে যাচ্ছি কারণ রেখার আজকে খাতা জমা দেবার আছে তুমি বরংআরেকটু ওয়েট করে ডাক্তার কি বলেন সব শুনে বৌদিকে নিয়ে তার পরে ফিরো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much