কাঁচের চুড়ি ও নতুন বছর
সাফিয়া খন্দকার রেখা
আচ্ছা তোমার এই নাম কে রেখেছে মোনা! তুমি কিন্তু একেবারেই মোনালিসার মতো দেখতে নও। কথাগুলো বলেই মোনার মুখের দিকে তাকায় গালিব। মোনার হাসি থামতে চায়না গালিবের এই কথায়।
গালিব কপাল কুঁচকে ভাবে কি অদ্ভুত মেয়ে রাগ হওয়ার কথা বললেও হাসে!
আচ্ছা গালিব সাহেব আপনি কি সেই বিখ্যাত কবি মীর্জা গালিবের মতো লিখতে পারেন? একটি লাইনও তো লিখতে পারেন না জনাব, তবে কেন আপনি গালিব নাম ধারণ করে আছেন হুম?
আসলে কি হয়েছে মোনা, আমার মা খুব কবিতা প্রেমিক ছিলেন তিনি চেয়েছিলেন আমার নাম জালালুদ্দিন রুমি রাখতে কিন্তু বাবার পছন্দ হয়নি তিনি বললেন গালিব রাখা যেতে পারে... হাহাহা এই হলো আমার নামের ইতিহাস।
মোনা তাকিয়ে আছে গালিবের মুখের দিকে, গালিব হাসলে ওর বাম গালে টোল পড়ে, ছেলেদের গালে টোল খুব কম ই দেখেছে মোনালিসা। আমার নামের এমনই এক ইতিহাস রয়েছে বুঝলে!
বুঝলাম তবে তুমি মোনালিসার চেয়ে বেশি সুন্দর, তুমি যখন কথা বলো আমার কি মনে হয় জানো?
না জানিনাতো
মনে হয় রিমঝিম করে বৃষ্টি এলো আবার কখনও মনে হয় দুহাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি কেউ বাজাচ্ছে আমার কানের কাছে।
কি যে বলোনা তুমি.. মোনালিসা সেই প্রথম দিনের মতো লজ্জায় রংধনুর মতো হয়ে গালিবের স্পর্শ খোঁজে। কেউ নেই পাশে বেলকনিতে মোনালিসা একা দাঁড়িয়ে আছে
আকাশে আতসবাজির আলো চারিদিকে শব্দ উল্লাস. …দশ বছর আগের কথাগুলো এখনও কেমন আগলে রেখেছে মোনালিসাকে। মানুষ না থাকা সময়ে আরও অধিক রয়ে যায় কাছে।
এইতো গত বছর ডিসেম্বরে হালকা জ্বর নিয়ে অফিস থেকে ফিরে সেই যে বিছানায় গেলো তিন দিন পর আই সি ইউ আর ফেরা হয়নি ঘরে গালিবের। সাত বছরের রুপন্তী অবিকল গালিবের মতো দেখতে, মেয়েটার গালে টোল পড়ে।
আমি জানি আজ বাবা আকাশ থেকে আমাদের দেখছে এইজন্যই তুমি বাবার প্রিয় কাঁচের চুড়ি পড়েছো তাইনা মোনা আম্মু?
মোনা রুপন্তীকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে বুকে টেনে নেয়, কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে কেন তুই আমাকে শুধু আম্মু ডাকিস না?
রুপন্তীর চোখ থেকে টপটপ জল মোনালিসার ঘাড়ের ওপর পড়ছে...
আকাশে আতসবাজি ফুটছে শব্দ উল্লাস...মোনালিসা অনুভব করে একটি ছায়ার ক্রমশ বিস্তার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much