বনফুল
( ৪০ তম পর্ব )
শান্তা কামালী
মাল্টা দেশ টা ইউরোপে,একটা দ্বীপ রাষ্ট্র। রাজধানী ভেল্টা।সিসিলি দ্বীপের থেকে ৯৭ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত। গরম কাল বেশী সময় ধরে থাকে। শীত কম পড়ে। ভীষণ সুন্দর পরিবেশ। জনসংখ্যা এক কোটি ও নয়।আশি লক্ষের কাছাকাছি। খুব ভালো বাণিজ্যকেন্দ্র। কেউ ওখানে বেকার থাকে না। পড়াশোনার সাথে সাথে চাকরি ও পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটিতে আমাদের দেশের ছাত্রদের খুব ভালো সুযোগ দেয়।ইউরোপের অন্যান্য দেশের থেকে এখানে খরচ কম,কিন্তু এদের সার্টিফিকেট সারা বিশ্বে প্রশ্নাতীত ভাবে কদর করা হয়।ক্যাম্পাসিং থেকেই ছাত্ররা বিভিন্ন মাল্টি-ন্যাশানাল কোম্পানিগুলো তে জায়গা পেয়ে যায় ভালো মায়নার জব এ।থাকার ব্যবস্থা ও ভালো। দু'রকম ভাবে থাকা যায়। ইউনিভার্সিটির নিজস্ব গেস্ট হাউসে সেগুলো অনেক টা দূরে, বাসে আসতে হবে।অথবা হোম,মানে স্থানীয় মানুষের বাড়িতে গেস্ট হিসাবে। যেগুলো ক্যাম্পাসের আশেপাশে। গেস্ট দের রাখতে ওরা বিশেষ কিছু খরচ নেয় না।কিন্তু ইউনিভার্সিটির থাকার জায়গায় খরচ বেশি। মাসে দশ হাজার আটশো ইউরো ভাড়া বাবদ দিতে হয়।ইন্সুইরেন্স পঞ্চাশ ইউরো,খাওয়া খরচ দু'শ ইউরো মাসে।আর স্থানীয় বাড়িতে খরচ পড়ে সারা বছরে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার, খাওয়া বাবদ একশো ইউরো মাসে।বাস ভাড়া লাগে না। আর ঐদিকে বাস ভাড়াই মাসে দেড় থেকে দুহাজার ইউরো।
এক ইউরো মানে আমাদের দেশের প্রায় সত্তর পঁচাত্তর টাকা, সেটা তো,মানে....., খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার....।
জুঁই এতোক্ষণ সব মন দিয়ে শুনছিলো। এবারে বললো, ও এটাই তোমার প্রবলেম?
হুমম,এটা একটা প্রবলেম তো বটেই,তাছাড়া......
এটা তো তোমার চিন্তা করার কথা নয়,এটা আমার আব্বুর ব্যাপার। সে কি মানা করেছে? না-কি না করবে? আমার আব্বুর কাছে এটা কোনো প্রবলেম হবে না, সেটা আমি ভালো করেই জানি।
আমি আব্বু,আম্মুর সাথে কথা বলবো। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
পলাশ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। কিছুটা যেন ভারমুক্ত হলো।
হ্যাঁ, আরেকটা প্রবলেম কি বললে না তো? জুঁই প্রশ্ন করে।
সেটা হলো, স্থানীয় বাড়ির থাকার।
কেন,তারা কি খারাপ মানুষ?
না না,তারা খুব অতিথি বৎসল।
তবে প্রবলেম কিসের?
জানো তো জুঁই, ইউরোপের এই দেশের নারী স্বাধীনতা খুব বেশী।
ভালো তো, মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে কেন?
তা নয় জুঁই, তুমি বুঝতে পারছো না, অথবা আমি ঠিক বুঝাতে পারছি না....
ঠিক আছে, বুঝিয়েই বলো।
একটু লজ্জা করছে যে...
কিসের লজ্জা, আমাকে বলতে?
ওখানকার মেয়েদের পনেরো বছর বয়স হলেই স্বাধীনতা দেয়া হয়,লিভ ইন করার। ওরা স্টে- টুগেদার, লিভ- টুগেদার করে। তারপর ইচ্ছে হলে সংসার করে। না হলে লিভ আউট করে দেয়।
জুঁই চুপ করে যায়।কি যেন ভাবতে থাকে। বেশকিছু সময় দুজনেই চুপচাপ।
তারপর পলাশ ই বললো, হোমে থাকতে গিয়ে যদি নিজেকে হারিয়ে ফেলি,সেটা ই ভয় করছে।
জুঁই হঠাৎ পরিবেশ টা কে হাল্কা করতে বোধহয়, নিজের ডান হাতটা দিয়ে পলাশের নাক টা টেনে ধরে বলে,ইস্ আমি আছি না! নাক টা ধরে রাখবো,দেখি তো কে লিভ ইন করতে আসে? আমি জানি,আমার পলাশ সাত জন্ম আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারে,কিন্তু নিজেকে নষ্ট করতে পারবে না।
পলাশ অবাক হয়ে জুঁই য়ের মুখ টা দেখে, আর ভাবে কি নিস্পাপ ফুলের মতো একটা মেয়ে,আমার জন্য কি না করতে চায়।
হঠাৎ পলাশের সম্বিত ফেরে, দেখে জুঁই ওর বাঁহাতের কড়ে আঙলে একটা আস্তে করে কামড় দিয়ে বলছে, এই আমি তোমাকে কেটে দিলাম, আর কেউ তোমার দিকে নজর দেবে না। তুমি মাল্টা তেই হায়ার এডুকেশন নিতে যাবে,ইনশাআল্লাহ। এটা আমার স্বপ্ন তোমাকে ঘিরে।
পলাশ চুপ করে বসে থাকে। তার বাড়িতে ফেরার সময় পার হয়ে গেছে।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much