শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৩৭)
শামীমা আহমেদ
রাহাত আরো একদিন অফিস ছুটি বাড়িয়ে নিল। একটি কর্পোরেট অফিসে রাহাতের এটাই প্রথম জব চলছে। তা প্রায় বছর দুই হয়ে এলো। ছুটি নেবার মত কখনো এমন কোন সিরিয়াস বা ইমার্জেন্সি প্রয়োজন পড়েনি। এবারই প্রথম আপুর জন্য ছুটি নেয়া। শায়লার জন্য রাহাত অন্তত এটুকু করতে পেরে নিজের উপর কিছুটা দায়িত্ববোধ হালকা করলো।
আপুর রুমটা ঠিকঠাক করে দিতে হবে। একটি ইলেকট্রনিক্স শোরুমে কথা বলে রাহাত ঘরে বসেই একটা ছোট এসি শায়লার রুমের জন্য অর্ডার করে দিল। ওদের কোম্পানির লোক এসে সেটা সেট করে দিয়ে গেলো। শায়লার রুমের লকটা ঠিক করা হলো। রাহাত এবার বেশ উঠেপড়েই লেগেছে। শায়লার মনে যেন সবসময় একটা নিরাপত্তাবোধ কাজ করে রাহাত সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করবে। সবশেষে দুজন লেবার গোছের লোক আর বাসার দাড়োয়ান নিয়ে আপুর রুমের জিনিদপত্রগুলোর একটু জায়গা পরিবর্তন করে দিলো। শুধু শায়লার আপত্তিতে রুমের খাটটা সরানো হলোনা। খাটটা ঠিক জানালার পাশে আছে। শায়লা বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশ দেখে,পাখি দেখে মেঘ, বৃষ্টি, চাঁদ দেখে, রাতের আঁধার দেখে, দিনের উজ্জ্বল আকাশ থেকে ! রাহাত ভাবলো আপুর রুমের জন্য শীত আসবার আগেই একটা কার্পেট বসিয়ে দিবে। মোটামুটি রুমটা গোছানো হয়ে গেলে নতুন এসি ছেড়ে ভাইবোন খোশ গল্পে নেতে উঠল, যাক ! শায়লা এখন একেবারেই স্বাভাবিক হয়েছে। মা বেশ একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো । যে ভয় লাগিয়ে দিয়েছিল মেয়েটা !
রাহাত মায়ের কাছে দুই কাপ চা পাঠিয়ে দেয়ার বায়না করে মূলত রুম থেকে মাকে সরিয়ে দিলো।রাহাতের ইচ্ছা আপুকে হালকাভাবে জিজ্ঞেস করে শিহাব সম্পর্কে টুকটাক কিছু জানতে চাইবে।খুব ডিটেইলড কিছু না।আপুর প্রাইভেসীটাও মেইন্টেইন করতে হবে।
ভাইবোন আলাপচারিতায় মেতে উঠলো। খুব হালকাভাবেই রাহাত জানতে চাইল,আচ্ছা আপু তুমি যখন অসুস্থ ছিলে মিঃশিহাব নামে একজন ভদ্রলোক বারবার তোমার খোঁজ নিচ্ছিল। তোমাকে দেখতেও আসতে চাইছিল। কিন্তু দ্রুতই তোমার রিলিজ হওয়াতে আর আসা হলো না ! রাহাত একটু বাড়িয়েই বললো।জানতে চাইল,আচ্ছা আপু
আমি কি উনাকে চিনি ? কখনো দেখেছি কি ?
শায়লা হঠাৎ শিহাবের এমন প্রসঙ্গে একটু বিব্রতবোধ করলো। আর ভেবে অবাক হলো শিহাব নিয়মিত তার খোঁজ নিয়েছে? ছিঃ আর আমি তার সম্পর্কে কি না কি ভেবেছি !
যদিও এই অসুস্থতা পুরোটাই শিহাবের সেদিনের কথার কারনে হয়েছে কিন্তু সবতো আর রাহাতকে বলা যাবে না। শায়লা চাইবে না তার ভাইয়ের কাছে শিহাবকে কোনভাবে ছোট করতে। আর তা ছাড়া শিহাবতো সে ধরনের মানুষ নয়। শায়লা
শুধু হাল্কা স্বরে বললো, এইতো ফেসবুক ফ্রেন্ড। ফেসবুকে পরিচয়, তিন মাস হলো পরিচয় ।রাহাত বুঝে নিলো, তাহলে আপুর বিয়ের পরে এ সম্পর্ক । তাহলে নোমান ভাইয়ের সাথে কী শায়লার যোগাযোগে নেই? এ কেমন কথা হলো ! আপু বিয়ের পরেও এমন সম্পর্কে কেন জড়ালো।নাহ! এটা আপুর একেবারেই ঠিক হয়নি ।
আপু উনি কি করেন ?
একে একে রাহাতের সকল প্রশ্নের উত্তর শায়লা অবলীলায় দিয়ে গেলো। রাহাত অবাক হলো ,সম্পর্ক তবে তো অনেকদূর গড়িয়েছে। শায়লা ইচ্ছে করেই শিহাব সম্পর্কে সবটাই জানালো।কিছুই লুকালো না। আসলে শায়লাতো এটাই চাইছে সবাই শিহাবের কথাটা জেনে যাক, নাহ ! শায়লার শিহাবকে নিয়ে আর কোন লুকাছাপা করবে না। সম্পর্কটা যে এখন শিহাবের ইচ্ছায় বন্ধুত্বে দাঁড়িয়েছে সেটাও বুঝিয়ে
দিলো । যদিও শায়লা খুবই একান্তভাবে শিহাবকে নিজের করে পেতে চাইছে কিন্তু সেটা আড়ালেই রেখে দিলো।তবে রাহাতের বুঝতে একটুও কষ্ট হলোনা যে, আপু ভীষণভাবে শিহাব সাহেবের ঘোরের মধ্যে আছে । তাকে একান্তে পেতে চাইছে ।খুবই মুশকিল হবে এ সম্পর্ক থেকে আপুকে বের করে আনা। কিন্তু কানাডার বিষয়টির কী হবে? কেমন করে সেটা এভয়েড করবে বা আদৌ কি তা করা সম্ভব? যদিও এমন ঘটনা যে একেবারে ঘটে না তা নয়! কত প্রবাসীইতো নতুন বউ রেখে যায় আর বউ আরেকজনের সাথে প্রেম করে পালিয়ে যায়।অবশ্য রাহাত এতে দোষ দেখেনা।বিয়ে করা নতুন বউয়ের তো একা থাকা সম্ভব না একেবারেই।
ওদিকে শিহাব সাহেবের কথাও শুনতে হবে।সে কি চাইছে? আপুকে নিয়ে তার ভাবনাটা কি ? আপু যে বিবাহিতা সেটা উনি জানেন কিনা? তবে ফিলিংস্টা যে বেশ গভীরে সেটা বুঝাই যায়। খুবই সিরিয়াস হয়ে গেছে ব্যাপারটা। আত্মীয়স্বজনেরা তো ছিঃছিঃ করবে। তা করুক ! রাহাত এ ক্ষেত্রে একেবারেই লিবারেল। যে কোন মূহুর্তেই মানুষ কারো প্রেমে পড়তে পারে।তখন হয়তো নিজেদের পিছন বা অতীতটা আর ভাবা হয় না।
মা চা নিয়ে এলো। সাথে পাপড় ভাজা। শায়লা জানে শিহাবের খুব পছন্দ এই পাপড় ভাজা। শিহাবের কথা মনে হতেই শায়লা বলে উঠলো, আচ্ছা আমার মোবাইলটা কোথায় ?
রাহাত বুঝতে পারলো এটা শায়লার শিহাবের জন্য আকুলতার কারনে! নয়তো এখন মোবাইল কোন জরুরি বিষয় নয়।
রাহাত সরাসরিই জানতে চাইল,আচ্ছা আপা শিহাব সাহেব কেমন মানুষ ? শায়লা কথাটা শুনে বেশ চমকে গিয়ে চোখ তুলে তাকালো।
কিছুক্ষন নীরব থেকে বললো, শিহাব খুব ভালো একটা ছেলে রাহাত । ওর একটা কষ্টের অতীত আছে।আমাকে সবটাই বলেছে । আমরা এখন খুব ভালো বন্ধু হয়েছি । আমার সবকিছুই সে জানে ।
ওহ! রাহাত একটু আশ্বস্ত হলো । তাহলে শিহাব সাহেব যেহেতু সবই জানেন তবে আপার কানাডার ব্যাপারে আর কোন পিছুটান রইল না। শায়লা চায়ে চুমুক দিলো।রাহাত চা খেয়ে বললো, আপু, তোমার ফোনটা আমার রুমে । ফোনে একেবারেই চার্জ ছিল না তাই চার্জে দিয়েছি । শায়লা একটু টেনশনে পড়ে গেলো মন হচ্ছে ।কিন্তু রাহাত চাইছে না এখুনি আপার হাতে ফোনটা দিতে ।
চার্জ হলে মোবাইল আমি নিজেই দিয়ে যাবো।চা শেষ করে রাহাত শায়লাকে এসি চালানোয় রিমোটের নিয়মকানুনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরুলো আর ভেবে নিল আজ বিকেলেই শিহাব সাহেবকে কল দিবে। তার কথাতেই বুঝা যাবে আসলে সম্পর্কটা কতদূর গড়িয়েছে,, একদিকে একজন সেন্সলেস হচ্ছেন আরেকদিকে উৎকন্ঠায় আরেকজন বারবার ফোন করেই যাচ্ছিল! হু বুঝা যাচ্ছে,,, ডাল মে কুচ কালা হ্যা !
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much