যেখানে রূপকথারা সত্যি ছিল
তারপর অনেক দিন কেটে গিয়েছে।
এখন তো আমি আকাশ দেখে আর মুগ্ধ হই না।
দিগন্তের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে
দিকচক্রবালে হারিয়ে যায় না উদাস দৃষ্টি।
অগনিত তারার মধ্যে অকারণে খুঁজে বেড়াই না
আগের রাতের দেখা একটা তারা!
এখন তো উন্মাদ মনটাকে বহু ঝটাপটি করে
বন্ধ করে ফেলেছি খাঁচায়।
খাঁচার পরিধি এমনই হয় যে তার মধ্যে
পাখি মেলতে পারে না তার ডানাদুটি।
মুক্তি? ওটাকে এখন 'মেকী' বলতে শিখেছি।
চেতনার রঙে পান্না সবুজ হয়-
একথা জোর দিয়ে আর মানতে পারি কই ?
সবুজ রং আর নেই!
এখন সবই ধূসর, পান্ডুর!
তাই নিয়েই খুশী থাকতেও শিখেছি সম্প্রতি!
আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনকে প্রশ্ন করতাম,
- "কি চাও?"
মন সলজ্জ হাসি হেসে বলত,
- "জানো না?"
জানতাম। আগে সবই জানতাম।
মনের কথা, আকাশের কথা,
তারা আর ঘাসফুলের হাসি,
শিশির বিন্দুর শীতলতা,
প্রকৃতির যত অমূল্য ভাষা-
সব আমার জানা ছিল।
এখন তো কংক্রিটের পথে হেঁটে যাই।
জুতোর খাঁচায় বন্দী দুটো পা।
কাজের খাঁচায় বন্দী আমার মন।
হোঁচট খেলে সামলে ওঠা শিখেছি।
চোখে জল আসলে পলকেই হেসে উঠতে পারি।
নদীর কাছে কোনো দিন ঢেউ চেয়েছিলাম-
একথা এখন মনে পড়ে না!
বাতাসে কোনো দিন উড়তে চেয়েছিলাম-
ভুলতে বসেছি তাও!
ফুলের কাছে তার গন্ধ চেয়েছিলাম-
মনে করতে লজ্জাই পাই!
একদিন আকাশ আমার বন্ধু ছিল-
স্বীকার করি না কোনো মতেও!
নিজেকে পোষাকী করে,
স্বকীয়তা আর সজীবতা কে তাড়িয়ে,
যে আমিটা সত্যিকারের, তাকে মেরে-
বেশ চলছিলাম।
হঠাৎ চলার পথে নির্জন এক বাঁকে
ছোট্টবেলার সঙ্গী আকাশের সাথে দেখা।
আশমানী শাড়ি তার গায়ে,
দুচোখে ঘন নীল কাজল;
কালো মেঘের চুল পিঠে ছড়িয়ে
নীলাম্বরী আকাশ আমায় জিজ্ঞেস করল,
- "চিনতে পারছো?"
চিনতে পারলাম।
মোসায়েবী জীবনে অভ্যস্ত মনটা
ছুটে পালাতে চাইল লজ্জায়।
পারলাম না।
নিয়মের ভারে আমি বন্দী।
আমার ছোট্টবেলার সঙ্গী আকাশ
আজও মুক্ত, স্বাধীন।
বহুদিন পর চোখে জল এলো।
ঘাসের উপর পা রাখব বলে
খুলে ফেললাম শক্ত জুতো।
আকাশ নীল আঁচল মুখের উপর বুলিয়ে বলল,
-"এসো!"
- "কোথায় যাবো?"
- "ঝর্ণা তলায়, ফলসা গাছের ছায়ায়
আমাদের সেই ছোট্ট খেলাঘরে!"
আমের বোলের গন্ধ;
জামরুল গাছে সবে ফুল এসেছে;
দাঁতন ঝোপ ভরে আছে পাকা ফলে;
মা পৌষ-পার্বণে পিঠে ভাজছে;
আমার ছোট্ট ছোট্ট লুচি চাই;
আজ আমার পুতুল মেয়ের বিয়ে!
বাহ্... খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ বন্ধু।
উত্তরমুছুন