১৬ নভেম্বর ২০২১

মোঃ সেলিম মিয়া'র ছোট গল্প


 
প্রথম শীতের আভাস 
 




                                                  কিশোরী তুল্য নব যৌবন অধিকারিনী ঘণ কুয়াশা যেমন সাদা শাড়ির ঘুমটা পড়ে আন্দোলিত  নব যৌবনটা নিয়ে সরু কোমরটা দোলায়ে দোলায়ে কাঁচা নাচন নাচতে নাচতে সামনের দিকে  ধাপিত হচ্ছে আর খিল খিল হাসিতে নদীর দু'পাড় ঘেঁষে  প্রকৃতির নিয়মে জন্মানো  সাদা বকের পালকের ন্যায় সাদা সাদা পল্লবে কাশবন মাঠে আদরের পরশ বুলাতে বার বার হাসিতে আছর খাচ্ছে। তাই দেখে সূর্যী মামা  তার স্নেহের পরশ আরোও বাড়িয়ে দিতে মেঠু পথের দু'পাশে জন্মানো দূর্বাঘাস, কচুপাতা ও  পত্র পল্লবের উপর জমে থাকা শিশির বিন্দুতে  সকালের সু মিষ্ট রোদে গা বুলিয়ে দিতে কোন রুপ কার্পণ্য করেছে না। নবাগত শীতকে সাদরে সম্ভাষণ জানাতে সূর্যী মামার আদর স্নেহের  পরশ জুড়ি মেলা ভাড়! সাদা সাদা ঘণ কুয়াশা ও শির শির ঠান্ডা বেতাল হাওয়া ভেত করে  গ্রাম্য গেছু সহিষ ভাই দিগন্ত মাঠ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুরের গাছ গুলিতে বুক চিড়ে খেজুরের রস তুলতে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পাড় করছেন । খেজুরের গাছ গুলিও তার সুমিষ্ট রসে প্রকৃতির সাথে নিবির সম্পর্কে একত্বা ঘোষণা করছে। গ্রামের মা জননী গণও  বিভিন্ন স্বাদে  পিঠা পল্লীর মাধ্যমে  নবাগত শীতকে বরণ করে নিতে  কোন রুপ কার্পণ্য করেছেন না। রাত ভোর মা বোনদের  ঢেঁকিতে আটা কোটার শব্দে শিয়াল মামাদের হুক্কা হুয়া ডাক ও নবাগত শীতের আমেজ জনমনে  হয়ে উঠছে আরো বেশি প্রানবন্ত। শীতের আগমনী বার্তাকে স্বাগত জানাতে প্রতিটি গ্রামে  জারি সারি পালা গানের প্রতিযোগিতা এবং তবলা, ঢুল,খন্জর, বাঁশি আর হারমনিয়ামের সুরে বয়াতি-বাউলদের কোমড় দোলানো নিত্য দেখে নবাগত শীত যেন লজ্জায় গদ গদ! শীতের আগমনী বার্তাকে জানান দিতে ঘণ কুয়োশায় লেপটে থাকা রজনী গন্ধাও প্রস্ফুটিত হয়ে আরো বেশী সুগ্রাণে আগমনী শীতকে বরণ করতে খুব বেশি মাত্রায় ব্যস্ত। অন্যদিকে নবাগত শীতের আগাম  প্রস্তুুতিতে ধনীদের মাঝে গরম কাপড় কেনাকাটায় এক মহোৎসব চলে এসেছে । গরীবদের দিকে ফিরে তাকানোর মতো সময় তাদের কারো নেই। গরীবের তাতে কি আসে যায়? গত বছরে জমিয়ে রাখা ছেঁড়া কাথা, রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত ছেঁড়া কম্বল  দিয়ে শীত পাড় করার মতো অদম্য সাহস তাদেরকে কোন মতেই শীতের আগমনী বার্তা  নিরুৎসাহীতো করার সুযোগ দেইনি। কেউ কেউ গোয়াল ঘরের পাশের উঠোনে খরকুঠো জ্বালিয়ে  আগুনে দু'হাত সেকে নবাগত শীতকে ঠেকানোর কসরত করছে মাত্র। 
তাইতো বিদ্রোহী কবি নজরুলের মতো কবিতার ভাষায় বলতে মানা নেই--

"শীত আসবে বসবে ঘরে,
গরীব দুঃখীর কুড়ে ঘরে! 
যতন করে বসতে দিবো,
কাঠ পুড়িয়ে আগুন জ্বেলে।
দু'হাত সেকে আগুন পুড়ে,
করবো বরণ পা জুড়িয়ে! 
ছেঁড়া কাঁথার গা জুড়িয়ে,
ফাটা ঠোঁটে আদ্র নয়নে"।

# পরিশেষে  বলতে চাই -আসুন সমাজের আনাচে-কানাচেতে পড়ে থাকা ছিন্নমূল গরীব দুঃখীর কথা স্মরণ করে আগমনী শীতকে এমন কায়দায় বরণ করি যাতে শীতের কনকনে হিমেল হাওয়ার পরশে ও  ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা না পড়ুক ছিন্নমূল গরীব দুঃখী মানুষ । আগমনী শীতকে বরণ করতে সামর্থ্যবান বিত্তবান সকলে মিলে একতাবদ্ধ হয়ে  গরীব দুঃখীদের মাঝে বাড়িয়ে দেই  গরম কাপড়ে শীতের আচ্ছাদন।  আর তাতেই দেখা মিলবে আগাম শীতের পূর্বাভাষে ঘুণ কুয়াশায় ভেদ করে এক চিলতে  স্মৃতি বিজুরিত অমলিন হাসি। এমন হাসিতে হয়তো ঝড়বেনা কোন মুনিমুক্তা; প্রকারন্তরে  প্রথম শীতের আভাসে কষ্ট সহিষ্ণু সুবিধা বঞ্চিত লক্ষ কোটি মানুষদের মুখের হাসি বাংলার ঐতিহ্যবাহি  শীত ঋতু  তার সঠিক ঐতিহ্য হিম হিম শির শির কুয়াশায় নিশ্চিত ফিরে পাবে শতভাগ বর্ণিল সজীবতা এটা আমি হলফ করে বলতে পারি!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much