চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় আজ থেকে শুরু হলো লেখক শান্তা কামালী'র নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"
বনফুল
১ম পর্ব
জুঁইয়ের আজ ভার্সিটির প্রথম দিন,
বেশ পরিপাটি হয়ে মাকে বললো, মা আমি যাচ্ছি ।মা বললো এসো। সাবধানে যেও।জুঁই গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো। জুঁই মনেমনে অনেক খুশি, কতদিন এই দিনটির জন্য অপক্ষা করছে। জল্পনা কল্পনা করতে করতে কখন ভার্সিটির গেইটে গাড়ি এস থামলো, জুঁই গাড়ি
থেকে নেমে হাটতে হাটতে দু চারটে মেয়ে একসঙ্গে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করলো ফার্স্ট ইয়ার ক্লাস কোন দিকে?
দোতলায় বাম পাশের দিকটায়, হন হন করে সিঁড়ি বেয়ে দু তলায় উঠার সময় দেখতে পেলো পলাশকে, পলাশের ও চোখ পড়লো জুঁইয়ের দিকে।
পলাশ সিঁড়িতে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ভাবলো এই মেয়েটাকে এর আগে কোনো দিন ভার্সিটিতে দেখিনি তো !
ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে, হবে হয়তো, যাকগে এসব নিয়ে আমার ভাবার দরকার নেই।
জুঁইও ভাবতে লাগলো ছেলেটা বেশ সুন্দর, হ্যান্ডসাম খানিকটা স্মার্টও।
যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার জন্যে যে পরিমাণ অর্থের দরকার তা পলাশের নেই। কারন পলাশের বাবা একজন স্কুল টিচার, তিন ভাই বোনের মধ্যে পলাশ বড় বোন তিথি ছোট ভাই শিমুল।
তিথি ইন্টারে পড়ে, শিমুল ক্লাস টেনে।
পাঁচ জনের সংসার চালাতে হায়দার সাহেবের হিমশিম খেতে হয়,মা শাহানা খাতুন খুব হিসেব করে সংসার চালায়
পলাশ টিউশনি করে নিজের ভার্সিটির খরচ চালায়।
প্রথম দিনের ক্লাস, টিচার ক্লাস মিটদের সাথে আলাপ পরিচয়ে কেটে গেল, দুএকজন ম্যাডাম টিচার এসে লেকচার দিলেন।
ক্লাস শেষ করে জুঁই গেইটে আসার আগেই, গাড়ি দাড়ানো ছিলো।
গাড়িতে উঠতেই ড্রাইবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। জুঁই গাড়িতে বসে মোবাইলে টেনে ঢুকে গেল।
জুঁই বাসায় ফিরতেই বাবা মা দুজনেই জিজ্ঞেস করলেন মামনি ভার্সিটির প্রথম দিন কেমন কাটলো?
ভালো, বলেই নিজের রুমে চলে গেল জুঁই! বিছানায় শুয়ে জুঁই ভাবতে লাগালো ঐ ছেলেটার কথা, খুবই নম্র ভদ্র শান্ত প্রকৃতির বলেই মনে হলো।
যদিও কথা হয়নি,ইংরেজিতে একটা কথা আছে মর্নিং সোজ দা ডে....
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে,
জুঁইয়ের মা, মনোয়ারা বেগম। মেয়েকে খেতে ডাকতে এসে দেখলেন জুঁই ঘুমিয়ে পড়েছে,
মা ভাবলেন আজ ভার্সিটির প্রথম দিনের ক্লাস করে মনে হয় ক্লান্ত হয়ে পরেছে, থাক ডাকব না,
ঘুমিয়ে যখন পড়েছেই কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিক,দরজা চাপিয়ে নিচে নেমে এলেন, জুঁইয়ের বাবা বললেন জুঁই মা খেতে এলোনা?
জুঁই ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই ডাকিনি...
ঘুম ভাঙলে এসে খাবে।
চলো আমরা খেয়ে নিই, তোমাকে তো খানিকক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার বেরোতে হবে....
ওয়াজেদ সাহেবের বিশাল বিজনেস।
জুঁইয়ের ঘুম ভাঙল, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৪ টা বাজে, ক্ষিদাও অনুভব করলো...
ওয়াশ রুমে ঢুকে হাত মুখ দুয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে ডাইনিং এসে বললো, ময়না আমাকে কিছু খেতে দাও।
জুঁই খেয়ে যথারীতি উপরে উঠে গেলো, রাতে খুব ভালো ঘুম হলোনা।
পরদিন সকাল একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো দশটায় ভার্সিটিতে যাবে বলে। নাস্তা খাওয়া শেষ করে ময়নাকে বললো ড্রাইভাকে গাড়ি বের করতে বলো, জুঁই মাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা কোথায়? মা বললেন তোমার বাবা অনেকক্ষণ তোমার জন্য অপেক্ষা করে আধা ঘণ্টা আগে বেরুলো। মাক আসি বলে জুঁই বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।জ্যাম না থাকায় যথা সময়ে চলে গেল, গেটে নামছিল, তখন দেখতে পেলো সেই ছেলেটি হেঁটে ভার্সিটির দিকেই আসছে।
জুঁই যেন স্লো হাটতে শুরু করলো, বরাবর হতেই জুঁই সালাম দিয়ে জানতে চাইলো আপনিও কি?
অমনি পলাশ জবাবে বললো হ্যাঁ আমি ফোর্থইয়ার, আমার নাম জুঁই, ভালোই হলো আপনার কাছ থেকে সহযোগিতা পাবো,
ও সিওর, আমার নাম পলাশ।
জুঁই বললো আমি ফার্স্টইয়ার, পলাশ উত্তরে বললো বুঝতে পেরেছি তোমাকে কালই প্রথম দেখলাম, মজার ব্যপার হচ্ছে দুজনের সাবজেক্টই ইংলিশ।
পলাশ বলল হে, কোনো সহযোগিতা দরকার হলে বলো, এই বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল পলাশ ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much