ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হলো লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "
মতামত দিন আপনাদের একটি কমেন্ট লেখকের ১০০ লেখার সমান মূল্যবান।
ক্ষণিক বসন্ত
( শেষ পর্ব )
নীরবতা ভাঙল বুলা।
__ বাবা, মা ফোন করেছিল, আমাকে দেশে চলে যেতে হবে, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
আমি বুলা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম, মনে হলো সব কিছু যেন থেমে গেছে, চারপাশের হাজারো মানুষের এমন কি বুলার অস্তিত্বও অনুভব করছিলাম না।
বুলাই বলল__ এখানে আমার এক মাসীর কথা বলেছিলাম না, সেই মাসী বাড়িতে জানিয়েছেন, এখানে আমি এক মুসলিম ছেলের সাথে প্রেম করছি, সবসময় এখানে সেখানে দেখা যায়। আমি বাবা,মাকে যা বলার বলেছি, কিন্তু ওনাদের দৃষ্টিতে আমি পাপ করে বেড়াচ্ছি।
আমি কিছু বলতে পারছিলাম না তবুও অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করলাম __ যেতে কি হবেই ?
__ হ্যা আমি যাব, আমার পরিবারকে আত্বীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর কাছে ছোট করবোনা, তাছাড়া আমিতো কোন অন্যায় করিনি, এই কথাটাও ওদের বোঝার প্রয়োজন আছে, বুলা বেশ কঠিন ভাবেই কথাগুলো বলল।
বললাম__ বুলা আমার কি কোন ভুল হয়েছে ?
বুলা ম্লান হেসে বলল__না আমার দেখা সবচেয়ে ভাল মানুষ আপনি। দেশে ও এখানে খুব কম মানুষের সাথে আমার পরিচয়, এই গুটি কয়েক মানুষের মধ্যেও খারাপ মানুষ যেমন পেয়েছি, আবার অনেক ভাল মানুষও পেয়েছি।
এই প্রথম বুলা আমার নাম ধরে ডাকল_ অনিক- আপনি আমার দেখা একজন অসাধারন ভাল মানুষ, কিন্তু ভাগ্যটা আমার ঘোলা জলের মত, যার অস্তিত্ব আমার সমস্ত মনে প্রানে, তাকেই আমি দূরে ঠেলে দিচ্ছি, বলুন এবার বলুন, ভাগ্যটা আমার ঘোলা জলের মত কিনা ? আমি জানি আপনি ভাল থাকবেন না, তবুও চেষ্টা করবেন ভাল থাকতে।
ডাকলাম_ বুলা। উত্তর নেই। আবার ডাকলাম_ বুলা।
এবার সারা মিলল,__বলুন।
__ বুলা আপনি ভাল থাকবেনতো?
_ সোজাসুজি উত্তর _না।
__ কবে যাচ্ছেন ?
__আগামী রোববার।
__ মানে আর মাত্র পাচদিন পর। বুলা আপনার জন্য বাশী এনেছি, ভেবেছিলাম আপনার জন্মদিনে দেব, কিন্তু সেটা আর হলনা।
যাবার দিন সকাকে আমি বুলার বাসায় গেলাম, ওর লাগেজ গুছিয়ে দিলাম। বাশীটি ওর হা তে দিলাম। ও অনেকক্ষণ বাশীটির দিকে চেয়ে রইল।
এয়ারপোর্টে বোডিং পাশ নিয়ে আমার কাছে এল, হেসে বলল__গুড বাই, আপনাদের লন্ডন।
আমি ক্লান্ত ভাবে বললাম__আমাদের কি আর দেখা হবেনা ?
বুলা কিছু না বলে আমার হাতে লম্বা একটি প্যাকেট দিল। জিজ্ঞেস করলাম এটা কি?
__আপনার সব প্রশ্নের উত্তর।
বুলা চলে গেল, ওর চোখে জল, একবারও ফিরে তাকাল না। যতক্ষন ওকে দেখা যাচ্ছিল আমি তাকিয়ে রইলাম, এক সময় দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল।
বুলার প্যাকেট আমার হাতে, বলেছিলো আমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে। প্যাকেট খুলে দেখি, ওকে দেয়া আমার বাঁশি আর একটি খাম।
অনিক, বাঁশিটি নিতে পারলাম না, বা বলতে পারেন আপনার কাছেই রেখে গেলাম, কারন এই বাঁশিটি আমার চোখের সামনে থাকবে, আর আমি এই বাঁশির মাঝে আমি আপনাকে খুজবো- না তা হবেনা, কারণ আপনিতো মিশে আছেন আমার সমস্ত সত্বার সাথে, আপনাকে খুজব আমি বর্ষার রাতে, হয়তবা শীতের সন্ধায়। একটি অনুরোধ, আর কখনো কাউকে লিফট দেবেন না, ওটা আমার জন্য রেখে দেবেন, ও হ্যাঁ আমি কিন্তু বিয়ে করবনা; মানে কোনদিনই না, আমার মনের মন্দিরে আর কাউকে বসাতে পারবনা। আমার ঠিকানা দিলাম না, কারন আপনার ঠিকানাতো আমি জানি। অনিক, পৃথিবীতে ভাল মানুষদেরই কষ্ট বেশী। আমার জন্য হলেও ভাল থাকবেন।
আকাশে মেঘ নেই
মাথার উপড় নক্ষত্রেরা মিটমিট করে জলছে।
গাড়ি চালিয়ে দিলাম।
গন্তব্য জানা নেই।
সমাপ্ত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much