০১ অক্টোবর ২০২১

মোঃহা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা"১২তম পর্ব (ধারাবাহিক মুক্তগদ্য)








সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
                                                                              (১২তম ,শেষ পর্ব)


প্রত্যক স্ত্রীই তার স্বামীর কাছ থে‌কে ভালোবাসা আশা ক‌রে। স্বামীর উচিৎ হ‌বে, স্ত্রীকে ভালোবাসা ও তার প্রতি সহানুভূ‌তি প্রদর্শন করা। সকল স্ত্রীরাই স্বামীদের কাছ থেকে ভালোবাসার বহির্প্রকাশ দে‌খে আনন্দ পায়, দারুন খু‌শি হয়। কা‌জেই স্বামী‌দের‌কে এ বিষয়টি‌কে গুরুত্ব দেয়া খুবই জরুরী। স্বামীর উ‌চিৎ হ‌বে স্ত্রীর প্রতি‌টি কাজে প্রশংসা করা ও উৎসাহ প্রদান করা। স্ত্রী‌কে কথায় ও কা‌জের মাধ‌্যমে ভা‌লোবাসা প্রকাশ করতে হবে আর বিষয়‌টি যেন স্ত্রী এভা‌বে বু‌ঝে যে, তার স্বামী তা‌কে প্রতি‌টি ক্ষে‌ত্রে য‌থেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সাংসা‌রিক কাজক‌র্ম ও উন্নয়ন বিষয়ক ‌বি‌ভিন্ন বিষ‌য়ে স্বামী‌কে স্ত্রীর সা‌থে শেয়ার করাটা খুবই জরুরী।

স্বামীকে কা‌জে-ক‌র্মে, ব‌্যবহার ও আচর‌ণে বুঝা‌তে হ‌বে যে, সে তা‌কে শুধুমাত্র রাঁধুনী কিংবা দৈহিক আনন্দের উপকরণ ভাবছে না বরং স্ত্রীকে সে তার জীবনসঙ্গী হি‌সে‌বে তার প্রধান সহযোগী, তার সন্তানের মা, বিপদে আপ‌দে সে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অ‌তি আপনজন ভাব‌ছে। এসব করা বা প্রদর্শনের মাধ‌্যমে একজন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি অগাধ ভালবাসা ও বিশ্বাস জন্মা‌বে এবং স্বামী বেচারা‌কে স্ত্রী মনপ্রাণ উজাড় ক‌রে বিশ্বাস কর‌বে, অন্তর দি‌য়ে ভালবাস‌বে আর সংসার‌টি হ‌বে সু‌খের আধার। সংসা‌রে আস‌বে পরম শা‌ন্তি আর দু‌টি দেহ আলাদা হ‌লেও দু‌টি প্রাণ যেন একাত্ম হয়ে সংসা‌রে আন‌তে সক্ষম হ‌বে একান্ত সু্খ ও সমৃ‌দ্ধির ফল্গুধারা।

ইসলাম নিশ্চিত করেছে স্ত্রীর নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনের। ইসলাম নারী জাতিকে অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে। স্বামীকে নির্দেশ দেয়া হ‌য়ে‌ছে তারা যেন সব সময় তা‌দের স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করে। আল কুরআনে বলা হয়েছে, "আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বসবাস করো সদাচারের সাথে"।

বিয়ের মাধ‌্যমে শুধু জৈবিক চাহিদা পূরণ হয়। তবে এটা শুধুমাত্র জৈবিক ও বৈষয়িক ব্যাপারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসাপূর্ণ একটা আবেঘন পারিবারিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কুরআনে কারিমের একাধিক আয়াতের মাধ্যমেও এ বিষয়টি বুঝে আসে। যেমন সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর আরেক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকতে পারো এবং তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সূরা রূম : ২১)

আরও বলা হ‌য়ে‌ছে যে,স্বামী-স্ত্রীর জন্য পোশাক এবং স্ত্রী-স্বামীর জন্য পোশাক স্বরূপ। সৃ‌ষ্টিকর্তা, মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাদের মাঝে প্রেম, ভালবাসা,মায়া, মমতা, বিবেক, বুদ্ধি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার গুণাবলী দিয়ে। নারী এবং পুরুষ এই দুটো জাতিকে তিনি এক অসীম মহিমায় (বিবাহের মাধ্যমে) একত্রিত করেন।

একজন মানুষ তার লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক পরিধান করে থাকে। রোদ, বৃষ্টি, ঠাণ্ডা ইত্যাদি বাহ্যিক উপাদান থেকে রেহাই পেতে পোশাকের প্রয়োজন। ঠিক তেমনই বিবাহ, দুইজন মানুষকে এমনই ভাবে এক করে যে, তারা একে অপরের পোশাক এর ন্যায় হয়। একে অপরের দোষ, অন্যায় গুলোকে ঢেকে রেখে আগলে রাখে আজীবন। পোশাক বাহ্যিক সৌন্দর্য একজন মানুষ তার লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক পরিধান করে থাকে। 

রোদ, বৃষ্টি, ঠাণ্ডা ইত্যাদি বাহ্যিক উপাদান থেকে রেহাই পেতে পোশাকের প্রয়োজন। ঠিক তেমনই বিবাহ, দুইজন মানুষকে এমনই ভাবে এক করে যে, তারা একে অপরের পোশাক এর ন্যায় হয়। একে অপরের দোষ, অন্যায় গুলোকে ঢেকে রেখে আগলে রাখে আজীবন। পোশাক বাহ্যিক সৌন্দর্য রক্ষা যা অন্যদের কাছে আমরা প্রদর্শন করি, কিন্তু বিবাহিত দম্পত্তি তারা পরস্পর পরস্পরের পরিধেয় এর ন্যায়।

সনাতনধর্মে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার বন্ধনকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়। এই ধর্ম সর্বদা স্বামী স্ত্রীকে একত্রে থাকার কথা বলে , কারণ স্বামী স্ত্রী আলাদা থাকলে তাদের ধর্মকর্মাদি সব বিফল হয়। এজন্যই বোধহয় স্ত্রীকে সহধর্মিণী বলে । ন বৈ তেষাং স্বদতে পথ্যমুক্তং যোগক্ষেমং কল্পতে নৈব তেষাম।
ভিন্নানাং বৈ মনুজেন্দ্র! পরায়ণং ন বিদ্যতে কিঞ্চিদন্যদ্বিনাশাৎ।

-মহাভারত উদ্যোগ ৩৬/৫৭
অর্থ- নরশ্রেষ্ঠ! স্বামী ও স্ত্রী পৃথক স্থানে থাকলে, তাদের কাছে কোনো খাবারই সুস্বাদু বলে বোধ হয়না এবং শাস্ত্রোক্ত যোগক্ষেম সম্ভব হয়না। সেইরূপ জ্ঞাতিরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকলে, তাদের ভিন্ন অন্য কোনো গতি থাকেনা।

এত‌কিছুর মা‌ঝেও স্বামী-স্ত্রী‌কে শাসন কিংবা স্ত্রী‌-স্বামী‌কে শাসন কর‌তে পা‌রে আর এ শাসন হ‌তে হ‌বে অবশ‌্যই স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে হাস‌্যরসাত্মক কায়দায় যা‌তে তা‌দের ম‌ধ্যে এই শাস‌নের মাধ‌্যমে পরস্পর সম্পর্কটি আরও গাঢ় হয়, বন্ধন‌টি আরও দৃঢ়তর হয়। এরই নাম ভা‌লোবাসা আর এই ভা‌লোবাসা থে‌কে জন্ম হয় আজন্ম ভাল লাগা। এভা‌বেই দু‌টি সম্পর্ক হয় চিরস্থায়ী, কে‌টে যায় আমরণ একই ঘ‌রের ছা‌দের তলায় তা‌দের জীবন।

সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তাটা যেন সব সময় হয় স্বামীর কল‌্যা‌ণের জন‌্য, সংসা‌রের সা‌র্বিক শা‌ন্তি আয়ে‌নের জন‌্য। বি‌শ্বের সকল স্বামী স্ত্রীর দাম্পত‌্য জীবন সু‌খের হোক, স্বর্গ এ‌সে তা‌দের ঘ‌রে যেন সহসাই বাসা বাঁধে। 

(প‌বিত্র কুরআন ও মহাভার‌তের উদ্ধৃ‌তি ইন্টার‌নেট থে‌কে সংগ্রহ করা হ‌য়ে‌ছে)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much