সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিলো
( ৮ম পর্ব )
মনি জামান
সৃষ্টি কর্তা যেন আসমার সব চাওয়া গুলো পূর্ণ করে দিয়েছেন,জিকু অফিস থেকে এসে আসমার সব কাজে সাহায্যে করে রান্না থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া পর্যান্ত।কারণ জিকু চাই আসমার যেন কোন রকম কষ্ট না হয়,আসমা আর জিকু দুজনে পরস্পরকে এতোটাই ভালবাসে যে না দেখলে কেউ বুঝতেও পারবে না ভালবাসা কি।
জিকু আর আসমা দুজনে সংসারটাকে স্বর্গে রূপান্তরিত করতে শুরু করলো,দুই বছর এভাবে চলে গেলো বুঝতে পারলো না দুজনের কেউ। আস্তে আস্তে আসমা টের পেলো সে মা হতে যাচ্ছে,আসমার কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে আজ বমি বমি ভাব আসছে কিছু খেতে পারছে না আর খেতে গেলে এমন হচ্ছে।
জিকু যখন প্রথম জানতে পারে আসমার পেটে তার সন্তানের অস্থিত্ব সেদিন জিকুর আনন্দ আর ধরে না,যখন আসমার পেটের সন্তানের বয়স সাত মাস হলো জিকু তখন আসমাকে নিয়ে কুমিল্লা হাসপাতালে আল্ট্রাসোনো গ্রাম করতে নিয়ে গেলো, ডাক্তার পরিক্ষা করে জিকুকে বলল, আসমার পেটে ছেলে সন্তান এবং সন্তান খুব ভালো আছে।
জিকু এই সংবাদ শুনা মাত্র দৌড়ে মিষ্টির দোকানে গিয়ে মিষ্টি কিনে নিয়ে হাসপাতালে ফিরে এসে ডাক্তার ও নার্সদের মিষ্টি খাওয়াল,ডাক্তার নার্স সবাই খুশি তারা বুঝতে পারলো নতুন দম্পতি নতুন বাবা মা হতে যাচ্ছে।
মিষ্টি খাওয়ানো শেষ করে জিকু আসমাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে এলো,আর আসমার জন্য হরেক রকম ফল কিনে এনে ফ্রিজ ভরে ফেললো,আসমা জিকুর এমন পাগলামীতে মাঝে মাঝে রাগ করতো,জিকু বলতো আসমা তোমার জন্য আর আমার সন্তানের জন্য সব করছি তুমি কেন রাগ করছো তুমি ভাল থাকলে আমার সন্তানও ভালো থাকবে।
তাই তোমাকে প্রতিদিন পুষ্টিকর এসব ফল খেতে হবে ইচ্ছে না করলেও বুঝতে পেরেছ,আসমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বললো তুমি এত ভালো কেন,আসমার চোখে আবেগ ভর করলো তার চোখে পানি এলো এটা ভেবে যে,জিকু আসমার জন্য বাড়ি ঘর ছেড়েছে ভালবাসার টানে।
আর জিকু এমন কিছু নেই যা আসমার জন্য করছেনা,রান্না করা ঘরদোর গুছানো আসমাকে খাওয়ানো গোসল দেওয়া সব সব কাজ,আসমা অবাক হয় জিকু পুরুষ ছেলে সে সব কাজ এমন ভাবে করছে দেখলে মনে হয় কোন মেয়ে এই মাত্র সব কাজ করে দিয়ে গেলো।
এভাবে জিকু আসমাকে প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগে সব কাজ গুলো করে আসমাকে সাহায্যে করতে থাকে,অবশেষে আসমার বাচ্চা ডেলিভারির সময় এলো।
আসমার মনটা খুব খারাপ আজ,জিকু আসমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো আর বলল,পাগলি ভয় পাচ্ছো কেন কোন ভয় নেই আমাদের সাথে আল্লা আছে! আমি আছি কিছুই হবেনা তোমার!জিকু আসমাকে সাথে নিয়ে কুমিল্লা হাসপাতালে এনে ভর্তি করে দিয়ে জিকুর এক বন্ধুর স্ত্রীকে আসমার কাছে রেখে দিয়ে জিকু অপেক্ষা করছে,নার্সরা আসমাকে ডেলিভারি রূমে নিয়ে গেল এক ঘন্টা পর নরমাল ডেলিভারি হলো,ডাক্তার এসে জিকুকে জানালো মা ছেলে দুজনেই সুস্থ্য আছে,জিকু আনন্দে আত্মাহারা হয়ে গেল তার আসমা ভাল আছে সাথে ছেলেও।
আজ জিকু পিতা হয়েছে এ এক অন্য রকম অনুভূতি অন্য রকম ভালো লাগা অন্য রকম গর্ব,আল্লার প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে আসমার রূমে গিয়ে আসমা ও ছেলেকে দেখলো আসমা জেগে আছে ক্লান্ত আর পাশে ছেলেটা হাত পা নাড়ছে,জিকু আসমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আসমার নিমিষেই সব ক্লান্ত মনে হলো দুর হয়ে গেছে,জিকু জীবনে প্রথম সন্তান স্পর্শ করলো এবং ছেলের কপালে চুম্বন করলো জিকুর মনে হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ সাত রাজার ধন মানিক আজ তার স্ত্রীর কোল জুড়ে আলো ছড়াচ্ছে আজ সে গর্বিত একজন পিতা।
জিকু আসমার পাশে বসে আসমা জানতে চাইলো জিকুর কাছে সে খুশি কিনা,জিকু আসমা কে বলল,আমার জীবনে এত খুশির দিন আর আসেনি আসমা।
শুনে আসমার চোখে পানি এসে গেছে আনন্দে,জিকু আসমার চোখের জল মুছে বলল,পাগলি কাঁদছো কেন,আসমা আজ আবেগে কাঁদছে আজ সে নারীত্ব পেয়েছে,
আজ সে একজন গর্বিত মা হয়েছে তার ভালোবাসার মানুষটিকে তার চাওয়াটা পূর্ণ করতে পেরেছে এটা যে কত আনন্দের সেটা কেউ বুঝুক বা না বুঝক আসমা অনুভব করছে।
জিকু নকিছুক্ষণ ছেলের পাশে বসে ছেলেকে অনেক্ষণ দেখে একটু চুমু দিয়ে বন্ধুর বউকে বলল,ভাবী আর কিছু প্রয়োজন হলে বলেন,ভাবী বলল,দরকার হলে বলবো আর সব প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র সব আছে ভাই।
জিকু ভাবীকে বলল,ভাবী আমি অফিসে যাচ্ছি আপনি আসমার পাশে সবসময় থেকে কখন কি লাগে একটু দেখবেন,আমি আজ অফিস থেকে ছুটি নেবো কাল থেকে আমিও থাকতে পারবো।বলে জিকু ডাক্তাদের সাথে কথা বলে আসমাকে বলল,আমি আসি লক্ষী আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বিকালেই ফিরে আসবো।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much