একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা নিয়ে কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন " চলবে...
টানাপোড়েন (৫৮)
পরিষ্কার স্থানে পাবে মুক্ত ঘ্রান
রেখা আজ শীতের সকালের প্রথম আলোর স্পর্শ সারা শরীরে মেখে নিল। শ্বশুরবাড়িতে ব্যস্ততায় সূর্যের প্রথম আলোর স্পর্শ মাখার সুযোগই হয় না। আজ রেখা ভীষণ খুশি। মনের গভীরে এত খুশির মাঝে শুধুই উঁকি - নীল সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে ইচ্ছে করছে, সারা মনটাকে নীল নীলাভ করে নিতে।
এমন সময় শুনতে পেল ভোলা কাকা চেঁচিয়ে বলছে'ছোট বৌদি, ছোট বৌদি ,আজকে আমাদের গ্রামে না চাঁদের হাট বসেছে?'
কাকিমা বললেন 'কেন রে কি হয়েছে? কোথায় বসেছে?'
ভোলা কাকা বলল 'আরে বাবা, আমাদের মিলনের দোকানে।'
কাকিমা অবাক হয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে খুন্তি হাতে বললেন 'কার দোকান ?মিলনের দোকান!'
ভোলা বললো ' তাহলে আর কি বলছি তোমায়?'
ছাদ থেকে তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে রেখা সব শুনছে।
কাকিমা বললেন 'কেন রে মিলন কি করেছে?'
রেখা মনে মনে ভাবল এই ভোলা কাকা হচ্ছে এবিপি আনন্দের রিপোর্টার ।সব খবর আগে ভোলা কাকার কাছে।
ভোলা কাকা বলল 'মিলনের চায়ের দোকান আছে না?'
কাকিমা বললেন'' হ্যাঁ ,,আমাদের মিলন তো খুব ভালো ছেলে। চায়ের দোকান আছে ,কি হয়েছে তাতে?'
ভোলা কাকা বলল 'কি হয়নি বলো?'
কাকিমা বললেন ' সেই থেকে হেঁয়ালি করে যাচ্ছিস বাবা , আমার রাজ্যের কাজ পড়ে রয়েছে ।এবার বল তো কি হয়েছে?'
ভোলা বলল 'ছোট বৌদি, একটু চা হবে গো?'
কাকিমা বললেন 'খুব হবে ।একটু বোস।'
কাকিমা রান্নাঘরে ঢুকে ফ্লাক্স থেকে চা কাপে ঢেলে ভোলাকে দিলেন।
ভোলা কাকা গরম চা পেয়ে খুব খুশি হলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে একটু চুমুক দিয়ে বলল ' ছোট বৌদির হাতে চা না খেলে সারাটা দিন কেমন যেন লাগে।'
কাকিমা বললেন 'তা তো বুঝলাম ।কালকে ওই যে সকাল বেলা বেরিয়ে গেলি ,বাজার-টাজার করে দিয়ে ।তোর যে খাবার রাখা ছিল ,সেটা কি মাথায় ছিল ?'
ভোলা কাকা জিভ কেটে বলল' আমি কান ধরছি ছোট বৌদি ।আমার ভুল হয়ে গেছে।'
কাকিমা বললেন 'খুব হয়েছে। এবার বল তো সারাটা দিন কোথায় ছিলিস?'
ভোলা কাকা বলল' আরে ওই পাশের গ্রামে গিয়েছিলাম মাছ ধরতে।'
কাকিমা বললেন' সে কি রে ?তা কতগুলো মাছ পেয়েছিস বাবা।'
ভোলা কাকা বলল মাথা চুলকে 'কই আর পেলাম ।সারাটা দিনই শুধু এমনি ছিপ ফেলে কেটে গেল।'
কাকিমা বললেন' সে তো হবেই ।তুই আবার কবে থেকে মাছ ধরার পোকা হয়ে গেলি বল তো?'
ভোলা কাকা হে হে হে করে হেসে উঠলো।
আর বলল' তবে বৌদি চা না খেয়ে তো আর আমি বেরোয় নি ।চা টা কিন্তু সুপার ছোটবৌদি ।তোমার হাতে।'
কাকিমা বললেন 'নে হয়েছে ভোলা আর প্রশংসা করতে হবে না এবার আসল কথাটা খুলে বল তো?'
ভোলা বলল ' আরে বাবা, বলার জন্যই তো আমি আসলাম ।রোসো,রোসো।'
ভোলা কাকা বলল ''আমাদের মিলন চায়ের দোকানের সঙ্গে সঙ্গে আর কি কাজ করে সেটা তো জানো?'
কাকিমা বললেন 'হ্যাঁ ও তো নিজের দোকানের সামনে ছাড়াও নিয়মিত চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুদায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে।'
ভোলা কাকা বলল 'হ্যাঁ ,সেই জন্যই তো সাড়া ফেলে দিয়েছে চারিদিকে।'
রেখা যেন কেমন একটা মজার বিষয় পেল ও বসে পড়ল বিষয়টা শোনার জন্য।
কাকিমা বলল 'হ্যাঁ ,তাতে কি হয়েছে বল?'
ভোলা কাকা বলল 'একটা নতুন বুদ্ধি খাটিয়েছে তাতে দেখা গেছে ওর চায়ের দোকানে যারা আড্ডা দিতে আসেন,সেখানকার চা খেতে আসা মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে একটি করে পরিচ্ছন্নতার স্টিকার লাগানো কাপে গরম চা।
কাকিমা বললেন 'বলিস কি রে?'
ওদিকে ঘর থেকে কাকু শুনছেন ।শুনে বললেন ' কি বলছিস রে?'
ভোলা কাকা ঘরে ঢুকে একটু গলা বাড়িয়ে বলল ,' হ্যাঁ গো দাদা। এতেই তো সাড়া পড়ে গেছে চারিদিকে।'
রেখা বলল ' তারপর কি হলো সেটা বলো?'
ভোলা কাকা বলল 'স্টিকারে কি লেখা ছিল জানো?'
কাকু কাকিমা সবাই বললেন ,' কি করে জানবো সেটাই তো জানার চেষ্টা করছি?'
ভোলা বলল প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া চায়ের কাপে যে স্টিকার লাগানো ছিল তাতে লেখা ছিল পরিষ্কার রাখলে স্থান ,তবেই পাবে মুক্ত ঘ্রাণ।'
রেখা বলল ' কি সুন্দর শব্দচয়ন গো?'
কাকিমা বললেন' হ্যাঁ, হারুদা মারা যাবার পর আর তো পড়াশোনাটা বেশি দূর চালাতে পারে নি ।কিন্তু ওর উচ্চমাধ্যমিক পাস এবং ফায়ার এন্ড সেফটি ট্রেনিং কোর্স করা আছে।'
রেখা বলল' বাহ শুনতেও কত ভাল লাগে। এটা আমাদের গ্রামের গর্ব।'
ভোলা কাকা' তারপর ওই শোনো কি হয়েছে?'
মা বললেন বল?
ভোলা বলল আজকে যেন চায়ের দোকানের আড্ডায় দেখা গেল বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজনদের।
কাকিমা বললেন যেমন-
ভোলা কাকা বলল 'এই কলেজে পড়ান তাদের কি বলে?
রেখা বলল ' অধ্যাপক বা প্রফেসর।'
ভোলা কাকা বলল 'একদম ঠিক মামনি।'
এছাড়া কবি ,তারপরে হচ্ছে শিক্ষক সঞ্চালক এরকম গুণীজনের সমাবেশ।
রেখা বলল 'কি অবাক কান্ড তাহলে তো মিলনদার নাম অনেক দূর পর্যন্ত চলে যাবে গো?'
কাকিমা বলল ' হ্যাঁ, ঠিক তাই।
রেখা বলল' এই কাজগুলো কখন করে?'
ভোলা কাকা বলল 'সকাল-বিকেল বা রাতে নিজের দোকানের কাজের শেষে।
রেখা বলল 'পুরো বাজার সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার কর
ভোলা কাকা বলল ' তাহলে আর কি বলছি তোমাদের?'
রেখা বলল ,' এটা তো একদম অভিনব ব্যাপার'
ভোলা কাকা মাথা নেড়ে বলল 'আরো বলেছে সামনে যে শুভ নববর্ষ আছে ,সেই নববর্ষের দিন এইভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে দিয়ে স্বচ্ছতার বার্তা সকলের উদ্দেশ্যে দিতে চাইছে।'
রেখা বলল ও অধ্যাপক কবি কোথাকার?'
ভোলা কাকা বলল 'আরে বাবা ,আমাদের মিলনের নাম অনেক দূর অব্দি ছড়িয়েছে ।তাই তারা শহর থেকে এসেছেন মিলনের কাজ স্বচক্ষে দেখার জন্য।'
কাকিমা বললেন ,'একজন সামান্য চা বিক্রেতা সে যদি চা বিতরণ করার মধ্যে দিয়ে স্বচ্ছতার বার্তা দিয়ে আনন্দ অনুভব করতে পারে ,তাহলে প্রত্যেকের উচিত সেই প্রচেষ্টা চালানো।'
রেখা বলল' এই মিলনদার জন্য আমাদের এই গ্রামের নাম কিন্তু অনেক দূরে পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে।'
কাকিমা বললেন ,'সবার প্রচেষ্টা যদি এরকম থাকত ?তাহলে সুন্দর হয়ে উঠত আমাদের এই পৃথিবী।'
রেখা বলল 'সারা পৃথিবীর মানুষ যদি শোনে এবং সবাই যদি সচেষ্ট হয় পৃথিবীকে সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎমিলনদার মতোই যদি সকল এগিয়ে আসে তাহলে পৃথিবী এভাবে অশান্ত হয়ে উঠবে না ,শান্ত হবে।
কাকীমা বললেন ' একদম ঠিক বলেছিস ননী?
রেখা বলল ' নচিকেতার এই গানটা মনে পড়ে কাকিমা'?
কাকিমা বললেন 'কোন গানটা বল তো?'
রেখা বলল 'একদিন ঝড় থেমে যাবে... পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
কাকিমা বললেন ' একদম ঠিক বলেছিস। হ্যাঁ গানটা শুনেছি।'
এর ভেতর জুড়েই শুভ চেতনা আসত তো?'
কাকু বললেন 'বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না'
এই আশাতেই বুক বাঁধি আমরা সকলে।''
কাকিমা বললেন 'মিলনের জন্য গর্ববোধ হচ্ছে।'
কাকু বললেন 'একদিন আমাদের এই গ্রামের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে সকলের স্মৃতি কোঠায়'।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much