শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ৮)
শামীমা আহমেদ
চায়ের মগ হাতে নিয়ে শায়লা বারান্দায় চলে এলো।সকাল হয়েছে। ছুটির দিন তাই শহরবাসী একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। প্রতিদিনের মত ছুটোছুটিটা নেই।অবশ্য শায়লার এখন প্রতিদিনই ছুটির দিন।চাকরীটা ছাড়ার পর এখন জীবনের দিনগুলো অন্যরকম কাটছে।নিজের দিকে তাকানোর ফুসরত মিলেছে! কথায় বলে সুখ দুঃখ পালা করে আসে।
এখন শায়লাদের পরিবারে সুখের সুবাতাস বইছে।শায়লা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
রাহাত একটা ভালো চাকরী করছে।মায়ের দেখভাল, চিকিৎসা নিয়মিত হচ্ছে।দুঃসময়ের কষ্টটাকে যদি মাটিতে পুঁতে রাখা যায় তবে সময়ের পরিক্রমায় তা সুখবৃক্ষ হয়ে সুখের ডালপালা ছড়িয়ে দেয়। শায়লাদের সুখবৃক্ষ এখন রাহাত।আজ ছুটির দিনে সে একটু বেলা করে উঠবে।কর্পোরেট জবে যেমন হ্যান্ডসাম স্যালারী তেমনি কাজের বিস্তৃতি। তাতে কি? কথায় বলে---পেটে খেলে পিঠে সয়। তাছাড়া এতে লিভিং স্ট্যান্ডার্ডটা রাতারাতি বদলে যায়।যা একটা সরকারী চাকরীতে সারাজীবন লেগে যায়।
হঠাৎ শায়লার রাতের কথা মনে পড়তেই মোবাইলে চোখ চলে গেলো।খুব দ্রুতই ফেসবুকে ঢুকলো। হু,ফ্রেন্ড লিস্টে চলে এসেছেন সেই কাংখিত "সততায় শিহাব" ভদ্রলোকের ছবিটি।
তাহলে কখন এক্সেপ্ট করলেন? টেরই পেলাম না!যা হোক বন্ধু যখন হয়েছে এক সময় সবই জানা যাবে।
মেসেঞ্জারেএকটু ঢুঁ দিয়ে আসি।শায়লার সিনিয়র জুনিয়র অফিস কলীগরা অনেকেই তাকে খুব মিস করে।শুভ সকাল শুভ দুপুর ঈদ পূজা নিউ ইয়ার সব শুভেচ্ছাই জানায়। শায়লার ভালোই লাগে।ছোট একটা চাকুরী করলেও অন্তত সবার মনে একটা জায়গা নিতে পেরেছে,এটাই প্রাপ্তি! বেশ অবাক করে দিয়েই শায়লার চোখ একটা মেসেজে আটকে গেলো।শিহাবের মেসেজ,"শুভ সকাল"।ওহ! তাহলে সকালে এক্সেপ্ট করেছেন ভদ্রলোক। শায়লাও ভদ্রতা রক্ষার্থে পালটা শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দিলো।শুভ সকাল।আজকের দিনটি সবার জন্য সুন্দর হউক।
শায়লা চায়ের মগে চুমুক দিতেই চট করে রিপ্লাই চলে এলো, কেমন আছেন?শায়লা খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই লিখলো, জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
চা খেয়েছেন? সকালের মর্নিং টি বা বলা যায় বেড টি?
জ্বী, এইতো চায়ের মগ হাতে বারান্দায়।
চমৎকার! আমিও চা বানিয়ে নিয়ে বারান্দায়। নিজের হাতে যত্নে গড়া ছোট্ট ব্যালকনী বাগানে এসে বসেছি,,
জ্বী,সকালের চা, সারাদিনের জন্য মনকে প্রস্তুত করে।আর প্রকৃতির কাছাকাছি গেলেতো অন্য রকম ভালোলাগা।
ও প্রান্ত নীরব।শায়লা কি কথা বেশি টেনে নিচ্ছে? ছুটির দিন তারতো আজ ফ্যামিলিকে সময় দিতে হবে। ঠিক আছে আরেকটু দেখে না হয় আর কথা বাড়াবে না ।
তখুনি স্ক্রিনে উত্তর ভেসে উঠল!
আচ্ছা কথায় কথায় এত জ্বি জ্বি করা হচ্ছে কেনো?আমি কি আপনার অফিস বস? ফাইল দেখাচ্ছেন আর পাতা উল্টাচ্ছেন?
শায়লা বেশ লজ্জিতই হলো।তাকে বেশ রসিক মানুষই মনে হলো! মনে মনে ভাবল হ্যাঁ,চাকরীর সুবাদে একটুতো জ্বী হুজুর, জ্বী স্যার জ্বি ম্যাডাম এসেই যায়, সেই বৃটিশ আমল থেকেই বাঙালির মুখে উঠেছে এই সম্বোধন।
চায়ের সাথে গান শুনছেন না?
নাহ্, শুনতাম একসময়। এখন শোনা হয় না।
সে কি! গান ছাড়বেন না।আমি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছি। গান হচ্ছে এই এক কাপ চায়ের মত, চুমুকেই চাঙ্গা! বিজ্ঞাপনের ভাষায় বললাম।
শায়লা নিজেকে সামলে নিয়ে লিখলো, হ্যাঁ, তবে শুনবো এখন থেকে।
ঠিক আছে আবার কথা হবে। একটু ব্যস্ততা আছে। আর হ্যাঁ,আপনার প্রোফাইলে গিয়েছিলাম। বেশ ছিমছাম আপনি। অতিরিক্ত কিছু নেই। আর আপনার ভাবনাগুলোও অসাধারণ।বাই।
বলেই নিমেষে উধাও হয়ে গেলেন মোবাইল থেকে।শায়লা বিদায় নেবার আগেই!
কি যেন? খুব বুঝি তাড়া! নাকি এড়িয়ে গিয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে যাওয়া।
শায়লা মনের অজান্তে নিজের প্রোফাইলে ঘুরে এলো।এইতো নানান মনোভাবনার কিছু টুকিটাকি কথা লেখা আর অফিস কলীগদের সাথে একটা চাইনিযে খেতে গিয়ে অনুরোধে কিছু ছবি তোলা।লাল একটা সালোয়ার কামিজ পরা। শাড়ি খুব একটা পরা হয় না।এর জন্য মায়ের অনেক চাপা ক্ষোভ। কেন শাড়ি পরিনা।মাকে কিভাবে বুঝাবে যার দুটো বাস বদলে অফিসে যেতে হয় তার জন্য শাড়ি পরে বের হওয়া কতটা ঝামেলাপূর্ণ ! মায়েরা একসাথে সবই চায়। মেয়ে স্বাবলম্বী হবে আবার সেজেগুজে অপরুপাও হবে।পাত্র পক্ষ একেবারে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। তবে মধ্যবিত্তের জন্য সাজগোজ, ফ্যাশান এসব বিলাসিতা খুব একটা মানায় না। আজকালকার মেয়েদের দেখে তাদের পরিবারের অবস্থান বুঝ্য যায় না।তারা বেশ স্মার্ট আর পরিপাটি।ড্রেস বদলের মত বয়ফ্রেন্ড বদলায়।
শায়লার ভাবনায় আবার শিহাব চলে এলো।এতগুলো কথা যখন বলেছে তবে নিশ্চয়ই আবার কথা হবে।কথায়তো বেশ ভদ্রই মনে হলো। আর শায়লাকে জানার জন্য অতিরিক্ত কোন প্রশ্ন করেনি।এটা শায়লার ভালো লাগলো।কারণ সে আপাতত এত দ্রুত নিজেকে জানাতে চাইছে না
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much