৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কুসুম, আপনাকে

সানি সরকার

যে-কোনো রূপকথাই আদপে কোনো ছেলে ভোলানো গল্প নয়
কোনোভাবেই নয়, আপনিও জানেন

আমাদের মধ্যিখানে একটি বৃত্ত থমকে আছে
তার ভেতর কিছু শিশুর মতো মৌনতা -

কখনো পক্ষীরাজ ঘোড়াটি শব্দ করে, লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে
পাহাড় ডিঙিয়ে যায়...
সহজপাঠ খুলে বসে আমাদের টিনটিন, আপনি তার সহজ মা
আপনি তার বর্ণপরিচয়
কত দ্রুত ভুলে যান কমলালেবুর গল্প
আস্তে আস্তে গুঁটিগুলি ভেঙে ফ্যালে ফুলেদের রাণী প্রজাপতি...
ফুলেদের রাজা প্রজাপতি...

আমরা এভাবেই একদিন রূপকথার ঝিলটির সামনে আসি
কে সেই যাদুকর, আপনি কী চেনেন তাঁকে,
আপনি কি তাঁকে দেখতে পান
আপনি তাঁর নামে আজও পূজো দেন দূর্গা মন্দিরে

দৃঢ় ঘণ ধূসরের ভেতর একটি হরিণ ঘড়ির সঙ্গে দৌড়ে যায়
আপনি তার দৌড়ের দিকে অপলক চেয়ে থাকেন কুসুম
আমি তার কেন্দ্রের দিকে চেয়ে থাকি এক অস্পৃশ্য মেরুন দুপুর

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্জন রাতের কবিতা

 সোমাশ্রী সাহা

এই নির্জন রাতে ভেসে আসে কবিতারা 

যেন ভেসে আসায় কত সুখ 

আমিও কী ক্রমশ ডুবে যাই নীরবে 

তারপর শুরু হয় , সোনালী দিনের ব্যস্ত উৎসব 

আমিও ভিড়ে যায় সেই ভিড়ে ---

এই তো দ্যাখো , আমিও নিস্তেজ নই এখন 

ছুটছি এদিকে , ওদিকে , আর 

ভেঙে ফেলছি একটি একটি দেয়াল ...

এই মুহূর্তেই খুঁজে পেতে হবে তাঁকে 

যে হারিয়ে গিয়েছে , সূর্যাস্তের আগে 

 

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সময় উৎসব দেখে

মুন চক্রবর্তী

ফুলের পাপড়ি জানে মন্ত্রের মুগ্ধতা শিখাতে পারেনি ।
জল সঙ্গমে মিশে পেয়েছে চিতা ভস্ম সেই জীবন ।

নীলাচল থেকে গঙ্গার কল্লোলে পদ্মা মেঘনার
ভাটিয়ালি  ৠতুর আড়ম্বরে দিগন্ত মাতিয়ে কবিতা লেখে পাতা সাজাই
গানের তরণী বেয়ে পৃথিবী ঘুরে নিজের ঘর চিনি না ।

মোমবাতির শরীর পুড়ে শান্তির ডাক পাঠাই
শান্তির দূতকেই মেরে খাই
কতো ধর্ম জাত বিচার করে
নিজেকে অবিচারে রাখি ।
পোষ্টমর্টেম দেখে  চোখের জল মুছে নৃশংসতার রক্তে
ভাসাই ।
সময় উৎসব দেখে প্রকৃতির কাছে হাত পেতে অবজ্ঞায় ছায়ানীড় কেটে ফেলি ।
ভূমিকম্পে মঙ্গল শঙ্খধ্বনি
মঙ্গলদীপ হৃদয় থেকে জ্বালিনি ।
আড়ম্বরে যতো উৎসব নগ্ন মিছিলে তপোধ্বনি দেয় ।
বৈরাগ্য  বাউল  ফকির
একতারা দোতারায় সময় উৎসব দেখে জোড়াশাঁকো চুরুলিয়ার প্রস্রবনে
সময় উৎসব দেখে যতো অহংকারে মহান মিলনস্রোত
সময় উৎসব দেখে ক্লান্ত হয়নি সময়
মিলন বাসর সাজে ৠতুর পূর্ণ অবগাহনে
ফিরে ফিরে আসে জন্ম কথা
সময় উৎসব দেখে রামধনু
নক্ষত্ররাজি মৃত্যুরে পিছনে রাখে ।
উৎসব সেজেছে হাজার কবির ভুবন দেখে
সকালের পাখি আজও জীবনের স্বরলিপি গায় ।

আগুন করা সুখ

সুব্রত হাজরা


কীভাবে ভাবতে পারলে -
এতই সহজে তোমার বস্যতা  স্বীকার করে নেব  ?
ভুলে গেছো-
নাকি
ভুলতে চায়ছো সুরেলা দুপুরের সেই সব অভিমান।

এখনও আমার তপ্তঘামে খুঁজে পাবে
ইলেভেনের সেই কিশোরটি ।
যে হার মানতে শেখেনি কোনও দিন
কিন্তু আজ সে হারিয়ে গেছে মহাকালী পাঠশালার পথে
যেখানে সে লিখেছিল পাকুড় পাতায় বার বার তোমার নাম।

নই আমি কোনও জনজাতির হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, কিংবা শরীরী দিব্য সঞ্চালন।
ধারাপাতের মতো সখ্যতায়
দূরন্ত শিশুর আঁকড়ে পড়া কবিতায় শুধু আপন করেছি মাত্র।

আসুক না বৃষ্টিমুখর রাত
শেষ ভাদ্রের করতলে এনে দেবো তোমার আগুন করা সুখ।

প্রেম একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া 

সামিরুল মণ্ডল

স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার ঢেউয়ে আবেগী নৌকাবিলাস
বিবর্ণ হৃদয়ের প্রচ্ছায়ার মতো ম্রিয়মান সঞ্চিত নীরবতা। 
পিপাসু মনে আকুল করা বিশুদ্ধ অভিযোজন
সৃজনেসু প্রিয় বাতাস বয়ে আনে তোমার সোঁদা গন্ধ
চিত্রলিপিতে ফুটে ওঠে সেই উর্বরমুখ।
ঠিক তার বিপরীতে;
অস্তিত্বের অবস্থান খুঁজতে গিয়ে সব অনুভূতি পালিয়ে যায়।
আঁধারের বুকে জ্যোৎস্নারা লুকোচুরি খেলে
তবু অপেক্ষায়...........
ছিন্ন প্রেমের বন্ধনে x,y এর মান খুঁজতে খুঁজতে মনে হয়......
প্রেম একটি রাসায়নিক  বিক্রিয়া। 

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিয়োগফলের বত্রিশ আনা জীবন

বিশ্বজিৎ লায়েক

ভাবছি নিজের কথা লিখব। হয় না। লেখার সঙ্গে ঢুকে পড়ে চাল, গম, চিনি। বি.পি.এল. এর মানুষ। পোড়ামাটির জীবন ও মানুষজন। মিডডে মিলের ভাত। ভাঙা স্কুলঘর। সর্বস্ব খোয়ানো আমানতকারীর ক্যাবলা, দোমড়ানো মুখ। আর্দ্রতা ও কৌতুহল।

আকাশে চাঁদ উঠলে নাচতে ইচ্ছে করে। কানে গুঁজে নিতে ইচ্ছে হয় পাখির পালক। সম্ভব হয় না। ঘর বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। পারি না।

মেসবাড়ির জানলা বন্ধ করলে পাশের খাট থেকে চিৎকার করে বিশু, ' দেখছিস না, বিড়ি ধরিয়েছি! স্যাভোকেশন হবে।'

আমি বিড়ির ধোঁয়ার দিকে ঈষৎ প্রেম প্রেম চোখে তাকাই। ঈষৎ জুলজুল চোখে তাকাই। বিপরীত  ইচ্ছের প্রবল দড়ি ধরে টানে কেউ। তাকের উপর রাখা ডিওলিন চোখ গোল গোল করে তাকায়। আমি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যাই।

অতনু ফোন করে। বলে, 'খবরটা শুনে সেই থেকে আমার খুব খারাপ লাগছে। কেন এমন হল বলো তো!'

কী হল ভাবতে থাকি, ভাবতেই থাকি। ভাবনার আর গাছ, পাথর থাকে না। ১৯ মিনিট ১৩ সেকেন্ড পর মনে হয়, 'সেকি! অমন তো কিছুই হয়নি। হ্যাঁ, হতে পারত। কিন্তু হয়নি।'

বাংলা বাজারের জলবায়ু অঙ্কুরোদগম সহায়ক। দ্রুত মাটি ফুঁড়ে চারাগাছ। ডালপালা গজায়। গোঁফদাড়ি গজায়। শিশু কিশোর হয়। কিশোর যুবক হয়। যুবক প্রৌঢ় গাছ। প্রৌঢ় কি হেঁটে যায় ফেলে আসা শৈশবে। হাঁটি হাঁটি পা পা।

মিহির এসেছিল। আজ। এ যে আস্তাকুড়! কী করে থাকিস! বিছানা জুড়ে বইপত্র। খাতা। চ্যবনপ্রাস। আয়না।  বিস্কিট। মুড়ির কৌটো। ব্যাগ। শোয়েটার, ল্যাপটপ, বিনয় মজুমদার, নীরা, আকাশ অংশত মেঘলা থাকবে, টর্চ!  বসবো কোথায়!

আমি সন্তর্পণে বাগিয়ে গুছিয়ে জায়গা করে দিই। নে বোস। চা খাবি? মিহির শুয়ে পড়ে। টান টান। চোখ বন্ধ। গরম জলে ব্ল্যাক কফি মিশিয়ে আমি নাড়তে থাকি। মিহির বোঝাচ্ছে বি-কমপ্লেক্স এর গুণাগুণ। প্রোটিন পাউডারের দাম...

আমি অনেকটা পিছনে হেঁটে ক্লাস ফাইভে ঢুকে পড়ি। গোরুর গাড়ি চেপে মামার বাড়ি। একমাসের অফুরন্ত এঁড়ে বাছুর। সন্ধ্যেবেলায় পড়তে বসার হ্যাপা। 

আমাকে অঙ্ক কষতে দিয়েছে মিহির। আমি মিহিরকে দিয়েছি একটা খোলা নল আর ভর্তি নলের সঙ্গে বানর আর লম্বা বাঁশের পাটিগণিত। ঠাণ্ডা লড়াই আস্তে আস্তে গরম হচ্ছে - কে উত্তর মেলাতে পারে আগে।

সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে লাফ মারি। উফ্ পিছলে পড়ি। টিউশন জুড়ে হো হো! ফাস্টবয়ের তিন টাকা দামের খাতায় প্রথম পাতায় লাল কালিতে গোল্লা। দশে শূন্য আমি। দশে মিহির দশ। সারা ক্লাস মুখ নিচু। লজ্জার চেয়েও দশ গুণ ভয় দাদাকে 

মিহির আজ বীরপুরুষ। মুখে, চোখে যুদ্ধ জয়ের হাসি। মিহির আজ অঙ্ক পুরুষ। মেজাজের রঙে দশে দশ।

ইলেকট্রিক বাতি তখনও আসেনি গ্রামে। বিকেল বিকেল হ্যারিকেনের কাঁচ মুছে দিত মা। কেরোসিন ভরে দিত ঠাকুমা। টিউশন শেষে হৈ হৈ বেরিয়ে পড়া। নিজের সামনেটুকু আলো। পিছনে ধূ ধূ অন্ধকার। হ্যারিকেন নিয়ে দৌড়লেই ঝুপঝাপ অন্ধকারে ভূতের ভয়। ভয় সামনে পিছনে। মাথার উপর অগণন নক্ষত্র। কে যেন চিৎকার করল, ' ভূত আসছে... '  আর দে দৌড়...

আজ নিখিল বিশ্বজুড়ে এতো জ্বালিয়েছ প্রভু। টিউব আর নিয়নের ধাঁধাঁ। আমাদের সন্তানেরা কি টের পাবে ভূতের ভয়। পাবে না। আরে ভূতের রাজা তো বর দিয়ে গেছে জব্বর জব্বর তিন বর - আলো, আলো, আলো...

এতো কষ্ট করে থাকিস। ভালো ঘর দেখে উঠে যা।

আমি চায়ে চুমুক দিই।

আর্দ্রতা বেশি হলে বাটা কাটি। চালের দেবতা রুষ্ট হন।

ঘরের কোণে এনে রাখি পাখির পরিত্যক্ত বাসা।

ছেলের ভাঙা খেলনা।

ডায়েরির পাতায় লিখি হিসেব। তের বছর তিন মাস সতের দিন সময় বিক্রি করে, শ্রম বিক্রি করে, নিম্নমেধার সঙ্গে ঘাম বেচে সাকুল্যে একলাখ উনিশ হাজার সাতশো সতের টাকা পঞ্চাশ পয়সা। ব্যাঙ্কে জমা রাখি। বছরে হাজার দশেক থেকে নেমে নেমে সাত, ছয়.. বই কিনি, মৃত আর তরুণ কবির কবিতাযাপন....

আয়নায় ঢিল ছুঁড়েছিল যে প্রবীণ,  ইন্ধন দিয়েছিল ঈষৎ নবীন ও মধ্যবর্তী তরুণ। আজ ওরা ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। কথা বলে না। আড়ালে গোপনে। লোক মারফত খবর নেয়।

ভাবে কোন যাদুবলে একটা মধ্য তিরিশের খেটে খাওয়া মানুষ এত আনন্দে গমগম হেঁটে যায়। স্বর্গের বাগানে। দুঃখ কি লুকোয় তাকে! নাকি সেই দুঃখ লুকিয়ে রাখে! বাড়ি আসে।  ছাদে উঠে পায়চারি দেয়। ফুলগাছে জল, মাটি, প্রাণ আর আরাম।

গান গায় - " বাসনা যখন বিপুল ধুলায়/ অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়/ ওহে পবিত্র ওহে অনিদ্র, রুদ্র আলোকে এসো।"

বাড়ি এলে, দু-পাঁচ জন লোক দেখা করতে আসে। চা আর পাঁপড় ভাজা খায়। আড্ডা দেয়। কবিতা আর অঙ্ক কষে রোজ। দুঃখ কষে না কেন!

কিছুতেই ভাঙে না, নুয়ে না। চা খাও তারপর অন্য কথা হবে। 

কী আছে তার শিরদাঁড়ায়।

এইসব ভেবে ভেবে মনখারাপ করে কেউ কেউ। 

ভাবতে ভাবতে কারো পেটও খারাপ হয়।

কেউ কেউ চাঁদা চাইতে আসে। দুর্গামন্দিরের চাতালে পাথর বসবে। কালিমন্দিরে মোজাইক। জানি ঈশ্বর মন্দিরে থাকেন না। ভাতের থালায় থাকেন আর থাকেন স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে...

দুপুরে উবু হয়ে শুই। কোনো কোনো রোববার। মাসে দু-একবার তো হয়ই। হাসতে হাসতে তিন বছরের সন্তান অপ্রতিম এসে খাটের বাজু ধরে দাঁড়ায়। হামি খায় গালে। 

কোলের পাশে এসে চুপচাপ শোয়। ভাবি ঘুমোবে এবার। না। মিনিট পাঁচেক চুপচাপ থেকে তড়াক করে উঠে বসে।  ডায়েরিতে আঙুল ছুঁইয়ে বলে, 'বাবা দেখো 'ক'।'

আমি ওর মুখের দিকে তাকাই। ওর শৈশবের সঙ্গে মিশতে থাকে আমার ফেলে আসা শৈশবের রঙ। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রামধনু। আমার বিয়োগ ফলের বত্রিশ আনা জীবন।

ছোটো ছোটো দুটো হাত আমার কর্কশ গালে বুলিয়ে দেয়। আদর করে। হামি দেয়। বলে, 'বাবা সোনা ছেলে 'ক' করে।'

ওকে বোঝাতে চেষ্টা করি  - 'ক' তারপর এই 'বি' (বিশ্বচরাচর)।  তারপর এই যে 'তা'(তাক ধিনতাধিন)  এই আমার কবিতা লেখা।

যাপিত জীবনে কবিতার আলো-অন্ধকার। তুই লিখবি!

হাততালি দিয়ে ওঠে, 'বাবা, আমিও কবিতা... '

আমার হাতে আলগা করে ধরে থাকা কলম কেড়ে নিয়ে গোটা পাতা জুড়ে মস্ত 'ক' লিখছে আমার শিশু ভোলানাথ।

সাতবছর পর আবার আমার চোখে জল আসছে।

আমি কাঁদছি না।

আমার অপ্রতিম সত্ত্বার ভিতর দেখছি আমার বীজ, আমার আগামী স্বপ্ন..

হাসছি। হো হো করে হেসে উঠছে অপ্রতিম। আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করছি বত্রিশ বছর পিছনে গিয়ে সেই হাসি টুকু ছুঁয়ে থাকার...

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আজ

সুশান্ত মন্ডল

বিমুর্ত আজ বিগলিত
              অশ্রুর বিদ্রুপে।
হীনতায় হীন উদ্দ্যম
           পরাজিত তুরুপে।।
কর্ন পর্দা ছিন্ন আজিকে
          ধ্বনীত অট্ট হাঁসিতে।
প্রতিবাদী কন্ঠ রুদ্ধ  তাই
            ভীরুতার ফাঁসিতে।।
কান্নার ক্ষীন রব
             প্রবাহীত বায়ুতে।
অন্তহীনে ভাসিছে কেবল
          হ্রিংসার ধরনীতে।।
নিয়ত বৃদ্ধিমান
           এই প্রগতীর সমরে।
মনুস্বত্য শর্তহীনে
         সমায়ীত  স্বার্থের কবরে।।
মানুষের হাতে মনুষ্য-প্রাণ
            আজ লুন্ঠীত অবাদে।
হালহীন সমাজ তরী
          ভাসিছে ধর্মীয় প্রবাদে।।

জাফর রেজা

ইতিকথা

একদিন তোমাকে বলে দেব
আমার ধূসর জীবনের কথা;
বলে দেব, কত পথ পাড়ি দিয়ে
এসেও ক্লান্ত আমি
পাইনি তোমার দেখা,
কতবার তোমার পিঠে ছড়িয়ে থাকা
মেঘ কালো চুল গুলো ছুঁতে চেয়েও
পারিনি ছুঁতে,
কতবার তোমার চোখে চোখ মিলাতে গিয়েও
পারিনি মিলাতে,
কতবার তোমার হাতে হাত রাখতে চেয়েও
পারিনি রাখতে,
কতবার তোমাকে নিয়ে লেখা
অজস্র কবিতা
শোনাতে চেয়েও পারিনি শোনাতে,
কতবার শুধু একটি শব্দ
বলতে গিয়েও পারিনি তোমাকে বলতে।

একদিন তোমাকে বলে দেব
আমার ধূসর জীবনের ইতিকথা।

বৃষ্টির বাগানে ফুটে চোখ

হুমায়ুন গালিব

বৃষ্টির বাগানে ফুটে আছে চোখ
অনন্তকালের  ঝরনায় শুধু ঝরে
কোনো সরোবরে  মিলনের আকাঙ্খায়

জোছনা নামে মগ্নতায়, গোপন হাহাকারে
সোনালি নদীর ধারে স্বপ্নের ঘরে
রুপালি জল ভেসে যায় তৃষার্ত হৃদয় পাড়ে।

দহন

স্বরূপ মণ্ডল

ঠাণ্ডা দখিনা বাতাসো পোড়ায় কখনো 
সে দগ্ধতা জেনেছি আখ্যানে

সূর্য যেভাবে ঘোরে পৃথিবীর আঁচলে
সেভাবেই খেয়েছি পাক তোমার মোহান্ধে
বিশ বছর এতটা বিষ হয়ে গ্যালো
হেরো ভূত হয়ে—
ছুটে বেড়ায় ছোটে প্রেতাত্মা

পিতার অন্ধতায় শরীরী পরাভব
লাট্টু হয়ে লুটায় ধুলায়

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঝিনুক বৃত্তান্ত

শারমিন সুলতানা রীনা

কবি, চুম্বনে জেগে ওঠে ঠোঁটের বিনিদ্রতা

তবু ক্লান্তিতে বুজে আসে পাপড়ি....

অহংকারী পতঙ্গ হয়েও  এক পশলা শিশিরে  ওপাশ  থেকে
ভিজিয়ে দিলে বালুচর।

ঝিনুক বুকে বালুকনায় জন্ম দিয়ে যাবো যে মুক্তো।

যদি ফিরে যাই মৃত্যুর ওপাড়ে

ধুসর বাসনায় এ মুক্তো তোমারই প্রাপ্য...

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছাই

       
 সুধাংশুরঞ্জন সাহা 

করিডোরে দাঁড়িয়ে তুমি শাসন কর প্রহর !

তোমার নিক্ষিপ্ত তীর আমাকে  আহত করে।

আমার শরীরে শুয়ে আছে একটি বিষাক্ত সাপ ।

সে চলে যেতে চায়  সমুদ্র  অথবা  অরণ্যে । 

দৃশ্যপট বদলে বদলে যায়  .......

তোমার সীমানা ছাড়িয়ে দূরে যেতে চেয়েছি

কিছু একাকিত্ব কুড়িয়ে  আনব বলে ।

পারি নি । নিরিবিলি রাতে ফিরে এসেছি একা ।

কয়লা পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নির্ঘাত ।

এখন আর  আগুন জ্বলে না কোনভাবেই ।

একটি প্রতিবাদি কবিতা

দুর্গাদাস মিদ্যা

জীবন যেখানে হুমকির পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন

সেখানে বাঁচার জন্য অস্ত্র খুঁজে নিতে হবে।

মাভৈঃ মাভৈঃ মন্ত্রে জেগে উঠতে হবে পুর্নবার।

এইযে এতো অন্যায় অত্যাচার, মুখ বুজে কতকাল

সহ্য করা যায় আর?

কেন আজ আমরা এতো ম্রিয়মান, কোথায় সেই

বিদ্রোহের গান আমাদের গলা থেকে! কেন

বেঁকে গেল প্রগতির পথ, যে পথ একদিন

উজ্জ্বল করেছিল, উজ্জ্বল করেছিল জীবনের অগ্নিরথ ।

নিবে গেল কেন চিরকাঙ্ক্ষিত দীপ, তাই আজ

দিকে দিকে এত অন্ধকার। অত্যাচার। বিচার

আচার সব জলাঞ্জলি দেখি মলমলি সেই-

সব নরখাদকদের যারা কখনো জানে না

মানবিকতার মূল্যবোধ।

আর কি আসবে না সেই জোয়ার যে

জোয়ারে ভেসে গেছে একদিন শাসকের

অন্যায় অত্যাচার ?

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৃজন

জয়ন্ত দত্ত

আজ নয় কাল--

মেঘ কাটবে রোদ উঠবে

ভেবে যাচ্ছি অথচ দিগন্তে

মেঘের তামস-চাদর !

তবু এরই মাঝে --

ভিজে-একসা নরম মাটিতে

শিকড় চলেছে গভীরে...