১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ৯ পর্ব





ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ৯ ম পর্ব ) 
মনি জামান

অফিস থেকে জিকু ছুটি নিয়েছে এক সপ্তাহের জন্য,ছুটি নিয়েই জিকু হাসপাতালে স্ত্রী আসমার কাছে চলে এসেছে,জিকুকে দেখে আসমা জানতে চাইলো ছেলের নাম কি ঠিক করেছো,
জিকুঃ নয়ন,বলেই আসমার কাছে জিকু জানতে চাইলো এ নাম কি তোমার পছন্দ হয় কিনা বলো?আসমা মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলল হ্যাঁ সুন্দর নাম পছন্দ হয়েছে আমার,আসমা স্বামী জিকুর কোন পছন্দে আজ পর্যান্ত না বলেনি।
আসমাঃ জানো আজ যদি নয়নের দাদি আমাদের সাথে থাকতো তাহলে কতো খুশি হত উনি,
জিকুঃ হ্যাঁ সত্যি মা আজ থাকলে খুব খুশি হতো যেহেতু আমার আর দুভাইয়ের কোন ছেলে সন্তান নেই,দুই ভাইয়ের তিন মেয়ে,বড় ভাইয়ের দুটো,মেজ ভাইয়ের এক মেয়ে।পারিববারিক বিষয় নিয়ে আসমা আর জিকুর যখন কথা বলছে তখন জিকুর বাল্য বন্ধু সাংবাদিক ফিরোজ এসেছে হাসপাতালে জিকুর সন্তানকে দেখতে, জিকু ফিরোজকে দেখে বলল,কিরে কখন এলি!ফিরোজকে দেখে জিকু খুব খুশি হলো এবং বলল,ফিরোজ তুই যখন বাড়ি যাবি তখন মাকে বলিস আমাদের ছেলে হয়েছে এই খবরটা অবশ্যই মাকে দিবি,আর আমার শশুর ও শাশুড়িকেও খরবটা জানাস।
ফিরোজঃ মাথা নেড়ে বলল চিন্তা করিসনে দোস্ত কাকি মাকে আমি অবশ্যই এই খুশির খবরটা জানিয়ে তারপর তোর শ্বশুর শ্বাশুড়িকে দিয়ে আসবো।তারপর ফিরোজ আর জিকু গল্পে মেতে উঠলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক হবে,
ফিরোজঃ ঘড়ি দেখে জিকুকে বলল,আরে দোস্ত অনেক বেজে গেছে খেয়াল করিনি,ওহঃ আমার অনেক কাজ পড়ে আছে অনেক সময় কাটালাম তোদের সাথে যাক তোর ছেলেও মাশাল্লা সুন্দর হয়েছে এবার আমাকে যেতে হবে।
জিকুঃ এখন না গেলে কি নয় একটু পরে যা,এলি তো কিছুক্ষণ আগে আজ আমাদের সাথে না হয় থেকে যা।
ফিরোজঃ নারে দোস্ত অনেক কাজ পড়ে আছে আজ যেতে হবে আমি সময় করে আবার এসে তোদের দেখে যাবো,আর সেদিন থেকে যাবো ওহ ভালো কথা কোন কিছুর দরকার পড়লে আমাকে অবশ্যই জানাস বলে ফিরোজ আসমাকে বলল ভাবি আসি তাহলে।
আসমাঃ ঠিক আছে ভাই তবে কথা দিলেন কিন্তু সময় করে আবার আসবেন,ফিরোজ হো হো করে হেসে উঠে বলল,কখন কথা দিলাম ভাবি।
আসমাঃ ফান করলাম তবে আসবেন কিন্তু
ভাই,বিপদে আপাদে সবসময় পাশে আছেন বলে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি,
ফিরোজঃধুর কি বলেন ভাবি,জিকু আমার ছোট বেলার বন্ধু আর বন্ধু তো বন্ধুর জন্য সব করে নইলে বন্ধু কেন।
ফিরোজ ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো,আসমা আজ এত খুশি যে জিকু এবং তার পরিবারকে একটা ছেলে সন্তান উপহার দিতে পেরেছে,আসমা আজ নারীত্বকে নিয়ে গর্ব অনুভব করছে।আজ আসমার মা বাবার কথা ও খুব মনে পড়ছে,আসমা ভাবছে কতদিন হয় মা বাবাকে দেখেনি,খুব মিস করছে আসমা 
ফিরোজ ভাই বাড়ি গিয়ে খবরটা দিলে কত যে খুশি হবে বাবা মা এটা ভেবে আজ আসমার মনটা কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলো।
করিম সাহেবের তিন ছেলের মধ্যে জিকুর প্রথম ছেলে সন্তান নয়ন,জিকুর আর দুই ভাইয়ের কোন ছেলে সন্তান হয়নি।
তাই জিকুর মায়ের খুব আফসোস তার দুই ছেলের কোন পুত্র সন্তান নেই তাই,
জিকুর ছেলে নয়ন করিম সাহেব পরিবারের প্রথম ছেলে সন্তান,আজ হাসপাতাল থেকে আসমাকে ছাড় করবে জিকু।এই পাঁচটাদিন আসমা হাসপাতালে আজ আসমা ও নয়নকে বাসায় নিয়ে যাবে জিকু,আসমা এখন অনেক সুস্থ্য হয়ে উঠেছে ডাক্তারের সাথে কথা বলে জিকু সব টাকা পয়সা পরিশোধ করে একটি প্রাইভেট কার ডেকে এনে আসমা এবং ছেলে কে গাড়িতেে তুলে নিজেই উঠে বসলো,গাড়ি বাসার পথে রওনা হলো,আজ জিকুর কি যে ভালো লাগছে সে একজন পিতা হয়েছে। পরিবারের অমতে ভালোবেসে গরিব ঘরের মেয়ে আসমাকে বিয়ে করে পরিবার ছাড়া হয়েছে তবুও জিকুর কোন কষ্ট নেই দুঃখ নেই,জিকু স্রষ্টার কাছে মনে মনে প্রার্থনা করলো আসমা ও তার ছেলে নয়নের জন্য আল্লাহ যেন ওর ছেলে ও স্ত্রীকে ভালো রাখেন।জিকু আসমাকে কখনো কষ্টে রাখেনি আর রাখবেও না, জিকুর যত কষ্টই হোক না কেন জিকু ভালোবাসার মুল্যায়ন করতে জানে,এসব কথা ভাবতে ভাবতে ওদের গাড়ি বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।
ড্রাইভারঃ স্যার এসে গেছি,
জিকুঃ হ্যাঁ ভাই আপনি একটু সাহার্য করুন আমাদের নামতে,ড্রাইভার ওদের সব জিনিষ পত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসায় উঠিয়ে দিয়ে ভাড়ার টাকা নিয়ে চলে গেলো।
বাসায় এসে আসমা ঘর দোর দেখলো সব অপরিষ্কার,কেমন যেন নোংরা নোংরা লাগছে, আসমা পরিস্কার করার জন্য প্রস্তুত হলো আসমার হাতে ঝাড়ু দেখে
জিকুঃ আসমা তুমি এখনো পুরোপুরিভাবে সুস্থ নও কি করছো এসব, তুমি চিন্তা করনা রেষ্ট নাও আর নয়ন কে রাখো আমি সব পরিস্কার করছি বলে আসমার হাত থেকে ঝাড়ু নিয়ে পরিস্কার করার জন্য রেডি হলো।
আসমাঃ জিকুর হাতটা ধরে বলল,একটা কথা বলবো,জিকুঃ বলো কি বলবে,আসমাঃ জিকুর হাতে একটা চুম্বন দিয়ে বলল,লোকে কি বলবে, 
জিকুঃ কে কি বলবে সেটা আমাদের বিষয় নয়,লোকে কি আমাদের খেতে দেয় না পরতে দেয়,যে তাদের কথা শুনতে হবে।
আসমাঃতুমি এত ভালো কেন,তুমি কি বলতো,জিকু আসমার কপালে চুম্বন দিয়ে বলল,তুমি যে আমার ভুবন যে।
কথাটি শুনেই আসমার দুচোখ অশ্রুতে ভরে গেলো,আজ এ অশ্রু দুঃখের নয় এ অশ্রু ভালবাসার,এ অশ্রু আনন্দের কারণ জিকু আসমাকে কতটা ভালবাসে আসমা
সেটা আজ মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারছে, জিকুর প্রতিটা কাজে আসমা বুঝতে পারে।আজ আসমার নারী জীবন স্বার্থক কারণ জিকুর মত একজন সহজ সরল মনের স্বামী পেয়ে,আসমা আল্লার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দোয়া করলো স্বামী জিকুর জন্য,যেন দুজনের ভালোবাসা আর সুখ গুলো অটুট রাখে।জিকু সব কাজ শেষ করে আসমাকে বলল,গোসল করার জন্য আসমা ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে গোসলের জন্য তৈরি হলো, জিকু আসমাকে ধরে ওয়াশ রূমে নিয়ে গোসল করিয়ে দিয়ে রূমে এনে কাপড় পরিয়ে দিয়ে নিজে গোসল করলো।
তারপর জিকু আসমাকে বলল,দুপুরের খাবার তো রান্না হলো না আজ এক কাজ করি আমি যায় হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসি বলে বের হয়ে গেলো,জিকু হোটেল থেকে খাবার নিয়ে বাসায় এলো,আজ দুপুরে ওদের রান্না হয়নি কারণ অনেক পরিশ্রান্ত জিকু,নইলে জিকু রান্না করতো। ঘরের সব কাজ আজ একা করতে সময় গেছে তাই রান্নাও হয়নি,হোটেল থেকে আনা খাবার আসমা আর জিকু দুপরে খেয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে জিকু আর আসমা শুয়ে পড়লো,তারপর পরস্পর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো আজ কতদিন দুজন পৃথক হয়ে থেকেছে,
আসমাঃ হেসে বলল এই কি করছ তুমি,
জিকুঃ আসমাকে বলল,জান আজ কত  দিন বা কত কাল মনে হয় তোমার স্পর্শ পাইনি আমি তাই জড়িয়ে ধরেছি,
আসমাঃ তুমি খুব দুষ্ট হয়েছো জান আমার শরীর ভালো না,কেন কষ্ট বাড়াও!
জিকুঃ বাড়ুক সমস্যা নেই শুধু তোমায় ভালোবাসি,আসমা এবার জিকুকে খুব করে কাছে আরো কাছে টেনে নিয়ে পাগলের মত চুম্বন করলো,মাথায় চুলের ভিতর হাত বুলিয়ে আদর করলো মনে হলো কতকাল আসমাও জিকুকে একান্তে এভাবে কাছে পাইনি।তারপর দুজন দুজনকে পরস্পর জড়িয়ে ধরে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো জানে না ওরা।


চলবে.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much