শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ৯)
শামীমা আহমেদ
প্রায় দুই আলমারী বোঝাই শিহাবের পোষাক,একটি তো স্যুট দিয়ে, তারপরেও তার মায়ের আলমারী দখলের চেষ্টা।আবার কিনতে গেলেই সাত আট সেট পোষাক একসাথে নিয়ে আসে,আরো চার পাঁচ সেট বানাতে দিয়ে আসেন টেইলারিং শপে। একসেট পোশাক একদিন পরলে আবার সেটা পরার জন্য ঘুরে আসতে কখনো দুই মাসও লেগে যায়। কেউ বলবে না এক পোষাকে তাকে দুই দিন দেখেছে।অবশ্য গ্রামে গেলে অনেক কাপড় বিলিয়ে দিয়ে কিছু কমিয়ে আসে।আবার যা তাই,নতুন নতুন কিনে আলমারী ভরিয়ে ফেলা।
আর মা এতে বেশ বিরক্ত।দরকারের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজে পায়না।সেই কলেজ লাইফ থেকে শিহাবের এই পোষাক বিলাসিতা।মাতো প্রায়ই বলেন, তোর কাপড়চোপড়ের যন্ত্রণায় আমার বাড়ি ছাড়তে হবে। এগুলো দিয়ে একটা শোরুম খুলে ফেল।বিক্রি হলে কিছু আয় হবে,ঘরে কিছুটা হলেও কাপড় কমবে। মায়ের এই রাগ সবই বৃথা যায়।মা খুব ভালো করেই জানে কাপড়ের সাথে শিহাবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সে টিপটপ চলতে পছন্দ করে।সেই যে সেই কলেজ জীবনে ফার্স্ট ইয়ারে কলেজে যাবার জন্য দুই সেট শার্ট প্যান্ট আজো রয়েছে স্মৃতি হয়ে।ঘড়ি আর সানগ্লাস এগুলোতো ব্র্যান্ডেড হতেই হবে।জুতা! সেও এক ইতিহাস। যেমন জুতার সংগ্রহ তেমন তাদের যত্নআত্তি।দেশের বাইরে গেলে বাড়তি সুটকেস কিনতে হয় জুতা ক্যারি করতে। আর যখন বাইরে বেরুবে সুগন্ধিতে তো সারাবাড়ি মৌ মৌ করবে!
দু তিনটে পারফিউম মিশিয়ে স্প্রে করা শিহাবের হ্যাবিট।একসময় খুবই সৌখিন ছিল এইসব নিয়ে।এখন কিছুটা কমেছে।তবে পরিস্কার পরিচ্ছন পরিপাটি পোষাকে নিজেকে খুব যে জাহির করে সেটা নয়, শিহাব বরাবরই খুবই মার্জিত আর সংযত তার চালচলনে।একসময় উঠতি তরুণ বয়েসে নিত্য নতুন পোষাকে সেকি রোমিও রোমিও ভাব নিয়ে চলা! মেয়েরা জানালা, দরজার আড়াল থেকে, বারান্দায় কাজের অজুহাতে কিংবা মোড়ের দোকানে কিছু কেনাকাটার ছলে শিহাবের আড্ডার পাশ দিয়ে ঘুরে আসতো।সে সব দিনের কথা ভাবলে শিহাবের বেশ হাসি পায়।কিন্তু শিহাবতো শুধু একটা বারান্দারই অপেক্ষায় থাকতো।
তা হউক কড়া রোদ, ঝড়, বৃষ্টি কিংবা প্রচন্ড শীত আর এরজন্য বন্ধুদের নিয়ে কত হাজার টাকা যে চায়ের বিল দিতে হয়েছে!
শিহাব চা খেয়ে গোসল সেরে নিলো।ঘড়ির কাটা আটটা ছুঁই ছুঁই। মা নাস্তা নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে।গতরাতে মা আর আরাফের জন্য যা যা কেনাকাটা করেছিলো সেগুলো একেএকে গুছিয়ে নিলো। নিজে গুলশান মার্কেট থেকে কেনা প্রিন্টেড শার্ট, মিলিয়ে প্যান্ট আর গায়ে সুগন্ধি ঢেলে নীচে নেমে এলো।আকর্ষণীয়, সুন্দর সুপুরুষ বলতে যা বুঝায়!এদেরকে ফিল্মেই মানায়। সিনেমার পর্দায় দারুণ দেখায় আর দর্শকরা তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।হিরো হওয়ার প্রস্তাবও দু'একবার এসেছিল। দূরসম্পর্কের এক সিনেমা মামা আছেন।সিনেমার পরিচালক।ছোটবেলা থেকে এই নামেই চিনে তাকে।সিনেমা বানায় বলে নামের সাথে সিনেমা শব্দটা জুড়ে গেছে। সেই সিনেমা মামা ছোট বোন শিহাবের মাকে বলেছিল, ছেলেকে নায়ক বানাবি নাকি? তাহলে পাঠিয়ে দিস,,
কোথায় কি! নায়ক! সন্ধ্যা হলে মা পিটিয়ে পড়াতে বসাতেন।পড়ালেখা ছাড়া কোন কথা নেই।বাবা বিদেশ থেকে হাঁড়ভাঙা খাঁটুনি করে টাকা পাঠায়। কড়া নির্দেশ, দুই ছেলে যেনো মানুষ হয়। শিহাবের বড় ভাই শাহেদ ছিল খুবই মেধাবী।তার সাথে তুলনায় শিহাব বরাবরই পিছিয়ে যদিও দুষ্টুমিতে এগিয়ে।
শিহাবের সিনেমার নায়ক হওয়া হয়নি তবে তার ভেতরে শিল্প সাহিত্য গান সিনেমা এইসব নান্দনিকতার প্রভাব প্রবল।সে যেমন আবেগী তেমনি রোমান্টিক।
শিহাব তিনতলা থেকে নেমে এলো। নিজে হাতে বাইকটা মুছে নিয়ে চোখে সানগ্লাসটা বসিয়ে বাইকে স্টার্ট দিল আর সাথে সাথেই প্রতিদিন নিয়ম করে যে ব্যাপারটা ঘটে যাচ্ছে, নীচতলার ভাবী দরজা খুলে তাকে উৎসুক চোখে একনজর দেখে নিচ্ছে। শিহাব ব্যাপারটা বেশ এনজয় করে।আর সামনের বিল্ডিংয়ের ডাইনিং এর পর্দাটা একটু সরবেই।কিন্তু কে আছে পর্দার পিছনে তা আর দেখা হয় না।শিহাব এসব ব্যাপার ফেস করে অভ্যস্ত।এ এলাকায় শিহাব নতুন।তাকে দেখবার উৎসুক চোখ তো থাকবেই!
শিহাব মনে মনে দিনের প্ল্যানটা করে নিলো। উত্তরা থেকে জিগাতলা যাওয়ার পথে পরীবাগের পেট্রোল পাম্প থেকে বাইকের জন্য তেল নিতে হবে।আর কিছু না ভেবেই শিহাব বাইক স্টার্ট দিয়ে ঝিগাতলার দিকে ছুটলো।
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much