এই সময়ের অন্যতম স্বনামধন্য উপন্যাসিক কাজী ইনাম এর চতুর্থ উপন্যাস এর প্রস্তুতি চলছে এখন একরাত্রি শুরু হলো ধারাবাহিক গল্প । "স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকায় " পাঠকদের কাছে অনুরোধ লেখাটি পড়ে লেখক কে উৎসাহ প্রদান করুন আরো ভালো কিছু পাবার আশায়।
একরাত্রি
(২য় পর্ব )
বিচ্ছেদ মৃত্যুতেও সে ভারি অবিকার থাকতে পারে ।
আরিফ আর সপ্নাকে পড়তে বসা নিয়ে সারাদিনে রাবেয়া একটা কথাও বলেনি। অন্যদিন তারা রাবেয়াকে ব্যতিব্যাস্ত রাখে। লেখাপড়া শিখে ছেলেমেয়েরা একদিন অনেক বড় হবে এমন কোনো স্বপ্ন রাবেয়ার নেই। তারপরও পড়ার টেবিলে তাদের না দেখলে কেমন অস্থির লাগে। ছেলেমেয়েদের পিছে দৌড়াতে গিয়ে সে তার যৌবনচিত কমনীয়তা আর কন্ঠের মাধুর্য অনেকখানি হারিয়েছে। রাবেয়ার তাতে আফসোস নেই। সংসারসমুদ্রে সে পড়েছে । এখানে কত লক্ষ্মীই তো প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তাদের রূপ-লাবন্য জলাঞ্জলি দেয়। রাবেয়া না ফিরে তাকালেও আরিফ আর সপ্না আজ পড়ার টেবিলে বসেই দিন পার করেছে। এই যে এখন এত রাত, তারা কিন্তু পড়ার টেবিলে। রাবেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। মার মলিন মুখখানাই দেখার জন্য অধীর হয়ে আছে। রাবেয়া না বলা পর্যন্ত তারা বিছানায় যাবেনা।
ঘরে উঁকি দিল রাবেয়া। আরিফ আর সপ্না যে যার টেবিলে। দুজনেই বেশ মনোযোগী। পড়া থেকে চোখ উঠাচ্ছে না কেউ। তাদের দিকে চেয়ে রাবেয়ার এত মায়া লাগছে। আজ সারাদিন কোনো খবর নেওয়া হয়নি। অবহেলায় বেড়ে ওঠা চারার মতই লাগছে এখন তাদের। আফসার না থাকলে তাদের কী হবে তার একটা ছবি কি আগেভাগেই আঁকা হয়ে গেছে? রাবেয়ায় বুক ব্যথায় ভরে ওঠে। সে মনে মনে ঠিক করে ফেলল আর কোনোদিন তাদের রাগ করবে না। মমতার ছায়াতলে রেখে দেবে বটবৃক্ষ হয়ে।
আজ ঘুমাও নি কেন বাবা? বলে রাবেয়া আরিফের হাতটা ধরে। ঠান্ডা হাত। রাবেয়া আজ এই প্রথম একটা শীতল স্পর্শ পেল।
কাল বাবার সাথে কি আমরাও যাব মা?
না। শুধু তোমার বাবাই যাবে। কোর্টে বাচ্চাদের যেতে নেই।
কেন যেতে নেই?
জানিনা। বলে রাবেয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে, শোন বাবা। তোমাদের একটা কথা আগে থেকেই বলে রাখি। তোমাদের বাবা কাল নাও ফিরতে পারে। কাল কেন, হয়ত অনেকদিন ফিরবে না। এই সময়টা তোমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। বাবার জন্য বাসায় কোনোরকম কান্নাকাটি হোক আমি তা চাই না। তোমাদের সাথে তোমাদের মা আছে এটাও কিন্তু মনে রাখা উচিত।
ওপাশ থেকে স্বপ্না বলে, বাবার কি ফাঁসি হবে?
না মা। তা কেন হবে? রাবেয়া ত্বরিত জবাব দেয়। বুক তার ধ্বক করে করে ওঠে। সপ্না যেন সব জেনে বুঝে বলেছে।
ভাইয়া বলেছে বাবার ফাঁসি হবে। যারা কোর্টে যায় তাদের ফাঁসি হয়।
এত দুঃখের মাঝেও রাবেয়া না হেসে পারল না। শিশুদের মাঝে থাকার মতো আনন্দের বোধহয় আর কিছুই নেই। তার হঠাৎ মনে হলো এই কঠিন সময়টা সে খারাপ থাকবে না। একটা অকারণ সুখ অনুভব করে রাবেয়া বলে, তোমার বাবাকে তাহলে কাল কোর্টে যেতেই দেবনা। লুকিয়ে রাখব। কোথায় লুকানো যায় বলত।
সপ্না দৌড়ে এসে রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে। মা, আমার টেবিলের পেছনে একটা জায়গা আছে। বাবাকে সেখানে লুকিয়ে রেখো। পরশুদিন আমি ওখানে লুকিয়েছিলাম। ভাইয়া আমাকে খুঁজে পায়নি।
কুসুম ঘুমিয়েছে। পাশেই আফসার শুয়ে আছে। সে জেগে আছে। রাবেয়াকে আসতে দেখেই চোখ বন্ধ করল। সে যে ঘুমিয়ে গেছে রাবেয়াকে তা বুঝতে দেওয়া। যদিও অন্ধকার ঘরে রাবেয়ার তা দেখতে পাওয়ার কথা না। রাবেয়া আজ সারাদিন একটিবারের জন্যও তার মুখের দিকে তাকায় নি। এই মেয়েটা অভিনয় জানে না। আফসারের কথা ভেবে অন্তত স্বাভাবিক থাকার ভান করা যেত। অন্য কেউ হলে তাই করত। রাবেয়া করল না। অথচ এর প্রয়োজন আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much