২৩ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৬০





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৬০
নানা রকম
মমতা রায় চৌধুরী



আজ এতটাই ট্রায়াড ছিল রেখা যে বিছানায় শুতে না শুতেই ঘুমিয়ে পড়ল। মনোজ ড্রইংরুমে বসে খেলা দেখছিল টিভিতে। তারপর যখন ও শোবার ঘরে আসলো দেখল রেখা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে ভোস ভোস করে। মনোজ আপন মনে বলল আমাকে বলে আমি নাকি নাক ডাকি। আর আজ যে ম্যাডাম নাক ডাকছে তার প্রমান রাখতেই হবে। বলেই ফোনটা নিয়ে ভিডিও করলো।
তারপর রেখাকে ডাকলো 'কি গো এত নাক ডেকে ঘুমোচ্ছ?"
কোনো আওয়াজ  না পেয়ে  রেখাকে ধাক্কা মারলো।" কিগো এত নাক ডাখছ কেন? তুমি  নাকি ঘুমানোর সময় নাক ডাক না?"
রেখা অবাক হয়ে তাকিয়ে ঘুমের ঘোরে বলল "বেশি বাজে ব'কো না তো? আমি নাক ডাকি না তোমার মত।"
মনোজ  খুব জোরে হো হো হো করে হেসে উঠলো কিন্তু তাতেও রেখার কোনো হেলদোল নেই ।তখন ও ঘুমিয়ে যাচ্ছে ,সঙ্গে নাক ডাকছে।
মনোজ বলল "আজকে আর কিছু বলছি না । ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।যেদিন আবার তাকে (মনোজকে) বলবে, এই ভিডিওটা দেখাবে। এটাই মনোজের ব্রম্ভাস্ত্র।"
মনোজও সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
রেখা আজকে এতটাই ঘুমিয়েছে যে মাসি আসার আগেই ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে পরলো। বেশ ঝরঝরে মনে হচ্ছে শরীরটা। চনমনে মন। রেখা সকাল সকাল প্রাতঃক্রিয়া সেরে, ফ্রেশ হয়ে গোপালভোগকে ভোগ চাপিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো।
চায়ের জল গ্যাসের চুলায় বসাতে না বসাতে কলিং বেলের আওয়াজ,"ওম জয় মা লক্ষী মাতা…।"
রেখা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলল"দেখল মাসি নয় মাসির বৌমা এসেছে। কি ব্যাপার তুমি ?মাসি কোথায়?"
কাজের ব্যাপারে মাসির বৌমার চেয়ে মাসি অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
মাসির বৌমা বলল "মায়ের খুব জ্বর কাজে আসতে পারবেনা তাই বলতে আসলাম।"
ওমা তাই বুঝি? কখন থেকে?"
"রাত থেকে।"
"ওষুধ খাওয়াও নি মাসিকে?'

"হ্যাঁ ওষুধের দোকান থেকে বলে নেয়া হয়েছে"।
"ঠিক আছে দেখো। মাসি কেমন থাকে আমাকে খবর দিও।"
"আচ্ছা।"
রেখা দেখল মাসির বৌমার চোখ মুখ শুকিয়ে যায়। সত্যিই তো তাই। গরীবের সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তারমধ্যে স্বামী অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শাশুড়িমার রোজগারে সংসার চলছে। বাড়িতে এতগুলো প্রানী।
রেখা মাসির বৌমার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ। তারপর হঠাৎ মনে হল এই যা কিছু টাকা দিয়ে দিলে হতো? যাক চলে যখন গেছে পরের দিন আসলে ,দিয়ে দেবে'। প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে রেখার মনে হলে অনেক কাজ পড়ে আছে।
না যাই গিয়ে কাজে হাত লাগাই।'
এর মধ্যেই মিলি আর  তার বাচ্চাগুলো এসে রেখার চারপাশে ঘুরঘুর করতে লাগল আর ওদের ভাষায় কিছু বলতে লাগলো। রেখা ওদেরকে ধরে একটু আদর করলো তারপর ভাবলো যা প্রতিদিন মাসিকে বলা হয় বিস্কিট দিতে। আজ তো আর মাসি আসবে না।তাই রেখা  বিস্কুট দিলো।
ভাগ্যিস আজকে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে নইলে যে কি হতো?'
রান্নাঘরে গিয়ে চটপটএকদিকে মিলিদের জন্য খাবার বসাল ,অন্যদিকে নিজেদের, সিমে দিয়ে বাকি কাজগুলো করতে লাগলো।
কাজ শেষে একবার   ঘরে গিয়ে মনোজকে ডাকলো"কিগো আজকে কি ঘুম ভাঙবে না কি ?
মনোজ ঘুমের জড়তা নিয়ে বলল" হ্যাঁ ,উঠব না কেন?"
" উঠছো না কেনো তাহলে ? ওঠো,।
আমার কিন্তু অত সময় নেই ডাকার। চা রেখে গেলাম খেয়ে নিও।"
আজ আবার মাসি আসবে না।'
 মনোজের কানে কথাটা যেতে লাফিয়ে উঠল" হ্যাঁ
সে কি কথা?কি  হয়েছে?'
"মাসীর শরীর খারাপ। জ্বর এসেছে।'
তুমি যদি তাড়াতাড়ি না উঠ, আমি খাবার দাবার গুছিয়ে দিতে পারব না ।আমার নিজের স্কুল আছে।"
"অ্যাই না ,না আমি উঠে পড়ছি।"
"ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি করো।'
এরমধ্যে আবার কলিং বেলের আওয়াজ "ওম জয় মা লক্ষী মাতা…।"
রেখা বলল "দরজাটা খোলো"।
মনোজ সিগারেট ধরিয়ে ছুটল বাথরুমের দিকে।
রেখা বুঝল নির্ঘাত বড় বাথরুম পেয়েছে।
অগত্যা রেখাতেই দরজা খুলতে হলো?
দরজা খুলে রেখা তো অবাক 'একি পার্থ এ সময়? 
এই জানো তো আমার লজ্জার শেষ নেই। সেদিন থেকে তোমার ইলিশ মাছের দাম আর পাটশাকের দাম দেয়া হয়নি।"
পার্থ বলল "সে সব পরে হবে ।আগে বলো তো দাদা কোথায়'?"
"ও তো  বাথরুমে ঢুকলো।"
"ও ও ও"
"কেন কিছু হয়েছে
ভেতরে এসে বসো।'
'হ্যাঁ হয়েছে ,মানে দাদাকে বলা হয়েছিল না ,সেই ডাক্তারের ঠিকানা টা দেওয়ার জন্য।"
বৌদি তো এখন ভেঙে পড়ছে আস্তে আস্তে।'
'কেন ভেঙে পড়ার কি আছে সব ঠিক হয়ে যাবে। 'ভয় পেয়েছে হয়তো কোন কারনে। বাচ্চা তো?
"সব আমরা বুঝতে পারছি বৌদি । কিন্তুযে বাচ্চা এত কথা বলে, এখন আস্তে আস্তে কথা বলছে না।"
"ওমা সেকি গো ?"
"হ্যাঁ,তবে আর বলছি কি?"
এমনিতেই সারা বাড়ি ও মাথায় করে রাখে দেখেছো তো ?আমাদেরকে কাকু কাকু বলে অস্থির করে রাখত আর সেই বাচ্চা যদি এখন কথা না বলে ,কেমন খারাপ লাগে বলো?'
"হ্যাঁ ,সে তো একটা চিন্তার ব্যাপারই বটে।"
"দাদা ,বৌদি তো দুজনারি প্রায় মাথা খারাপের মত অবস্থা।"
'তো ,হবেই না? মা বাবা তো?'
রেখা বললো "একটু ওয়েট করো ।আমি ওকে তাড়া দিই। বলি পার্থ এসেছে ।তবে তাড়াতাড়ি বের হবে।"
পার্থ একটু  ম্লান হাসলো।
রেখে আস্তে আস্তে বাথরুমের দিকে এগোলো তারপর বাথরুমের দরজায় কড়া নেড়ে বলল" কি গো একটু তাড়াতাড়ি করো?'
মনোজ ভেতর থেকে জলের কল টা খুলেছে , তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তারই মধ্যে বলল কেন আমাকে বাথরুমে ঢুকতে দেখলেই তাড়া দাও কেন?"
"দিচ্ছে কি আর সাধে পার্থ এসেছে চিৎকার করে বলল।"
"কে এসেছে.এ.এ ."মনোজ ভেতর থেকে বলল।
*"পার্থ।"
"ও আচ্ছা, বেরোচ্ছি।”
মনোজ ভেজা টাওয়ালটা জড়িয়ে এসে বলল " কি হয়েছে পার্থ ?"
আরে দাদা ওই ডাক্তারের ফোন নম্বর টা।
"এ বাবা ,আমার তো ফোন করা হয়নি।'
'ঠিক আছে, তুমি বসো ,আমি এক্ষুনি ফোন করছি।"
মনোজ সুরঞ্জনকে ফোন করল। রিং হয়ে গেল ধরল না আবার ফোন করল। এবার রিং হতেই অপরপ্রান্ত থেকে বলল ''হ্যালো"
"এই আমি মনোজ বলছি'।
"হ্যাঁ বল কেমন আছিস সবাই?"
"ভালো আছি ।তোরা!?'
"হ্যাঁ ভালোই আছি।"
"বলছি তোর একটা হেল্প লাগবে?"
"কি বল না?'
বলছি একটা বাচ্চার কাউন্সেলিং করাবে । ভালো ডাক্তারের নাম বলতো আর তার ফোন নম্বর ঠিকানা।"
 ডক্টর রাধাকান্ত দেব। কন্টাক্ট নম্বর########২৩৬৪
"অসংখ্য ধন্যবাদ রে।'
"বাবা, এর জন্য ধন্যবাদ   কবে থেকে এত ফরমালিটি শিখেছিস?'
মনোজ হো , হো,হো করে হেসে উঠলো।
"না রে খুব উপকার হলো"।
"কার জন্য দরকার?'
আরে না ,না আমাদের পাশের বাড়ির পার্থর ভাইপোর জন্য.
"ও ঠিক আছে ।সবাই ভালো 
থাকিস ।ছাড়ছি রে?"
"হ্যাঁ, হ্যাঁ রাখ।"
পার্থকে ফোন নম্বরটা দিয়ে দিল আর বলল' যোগাযোগ করে নিতে তাড়াতাড়ি।'
পার্থ মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
ইতিমধ্যে রেখা পার্থর সামনে এক কাপ চা বিস্কিট এনে হাজির করল।
পার্থ এসে বলল 'বৌদি আবার চায়না হাজির করলেন।'
রেখা বলল "তা বললে তো হবে না ।তুমি প্রতিদিনই এড়িয়ে চলে যাচ্ছ।"
"আচ্ছা, দিন।'
মনোজ ঘর থেকে ড্রেস পরতে পরতে বলল' রেখা ,আমার ব্রেকফাস্ট রেডি করো।'
"রেডি করা আছে ।
তাড়াতাড়ি এসো।"
পার্থ বলল'বৌদি আসছি আমি  ।অন্য সময় হলে আরেকটু থাকতাম।'
"ঠিক আছে এসো ভাই আর কি বলব। যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে কন্টাক নম্বরে যোগাযোগ করো।'
'বৌদি দরজাটা লাগিয়ে দিন।'
"ঠিক আছে যাচ্ছি।'
"তোমার হল?"রেখা দরজা বন্ধ করতে যেতে গিয়ে তাড়া দিল 
'আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা….।'
ড্রেস পরছে আর মনোজ গান করছে।
'ঠিক আছে ,তোমার গান করা শেষ হলে এসে খেয়ে নিও আমি গিয়ে তৈরি হচ্ছি।'
মানুষ তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে টাই বাঁধতে বাঁধতে এসে বলল' এই না,না, না, খাবার দিয়ে যাও।'
"তুমি দেখছো যে আমি নানা রকম কাজে ব্যস্ত থাকি এতকিছু করার পর এবার নিজেকে তো তৈরি হতে হবে বল ,এত বায়না করলে তো হয় না?'"
'আরে বাবা রাগ করছ কেন? তোমার নিজের হাতে যত্ন করে বেড়ে দেওয়া  খাবার না খেলে আমার পেট ভরে না জান না ?"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much