২৩ এপ্রিল ২০২২

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৭




ধারাবাহিক উপন্যাস 


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৯৭)
শামীমা আহমেদ 



শায়লার বিয়ের উদ্দেশ্যে বিয়ে বাড়িতে আগত আত্মীয়স্বজনেরা ভীষণ  একটা ভ্যাবাচ্যাকা পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। এত রাতে এমন একটা খবরে তারা বুঝে উঠতে পারছে না কি ঘটতে যাচ্ছে! তারা বুঝতে পারছে না আজ দুপুরে কানাডা থেকে নতুন জামাই আসবে না জানালো কিন্তু  আবার কিভাবে সে এতো রাতে চলে এলো! তবে কি আগের খবরটা ভুল ছিল? নাকি ফ্লাইটের কোন ঝামেলা হয়েছিল। মুরুব্বিরা নানান প্রশ্নে বুবলীকে জর্জরিত করতে লাগল। বুবলী ভাবলো এইসকল প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে এখন তার রাত কাবার হয়ে যাবে। এর মাঝে যে কত ক্লাইমেক্স আর টানাপোড়েন গিয়েছে তা শুধু বুবলীই জানে। তবে এখন সে নিজের করণীয় কাজে মনযোগী হলো।  সে একটা দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলো। এখন সে কোনদিকে যাবে ? এদিকে শায়লা আপু শিহাব ভাইয়ার জন্য  নিজেকে আলুথালু বেশে ভাবলেশহীন হয়ে একেবারে আশাহীন হয়ে গিয়েছিল। এখন তার মনে আবার আশার আলো জাগাতে হবে। তাকে নতুন করে বাঁচবার পথে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
তাকে হলুদের সাজে সাজাতে হবে। আবার ওদিকে নিচে শিহাব ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন।এইমাত্র রাহাত তাকে নিয়ে আসতে নেমে গেলো। উপরের চেঁচামেচিতে সে শিহাবকে নিচে রেখেই চলে এসেছিল। বাচ্চাদের পাওনা আদায়ের পর সবাই আনন্দে হৈচৈ করে উপরে উঠে এসেছে। বুবলী শায়লাকে আর একা না রেখে তার মায়ের ঘরে বসিয়ে রেখে গেলো।  শিহাবকে রিসিভ করতে  ঘরের ফুলদানি থেকে একগোছা রজনীগন্ধা নিয়ে দ্রুত  সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই সে দেখতে পেলো শিহাব মেইন গেট পেরিয়ে বাসায় ঢুকেছে। রাহাত শিহাবের বাইকটি বাসার গ্যারাজে রাখছে। বুবলী  সামনাসামনি শিহাবকে দেখে কিছুটাক্ষন থমকে দাঁড়িয়ে রইল। এমন একজন হ্যান্ডসাম মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে!  বুবলী  তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।জাস্ট সিম্পলি শার্ট প্যান্ট পরা তবুও যেন মনে হচ্ছে একজন স্মার্ট হিরো! শিহাব এগিয়ে আসতেই বুবলী নিজেকে সামলে নিয়ে হাতের একগোছা রজনীগন্ধা শিহাবের হাতে তুলে দিলো। শিহাব ফুলের গোছা গ্রহণ করে
বুবলীকে ধন্যবাদ জানালো। বুবলী যেন কন্ঠস্বর শুনে আরো ফিদা হয়ে গেলো।তার মনে শায়লা আপুকে একটু একটু হিংসা হতে লাগল। সে ভাবতে লাগলো, ইস! কী দারুণ একজন হাজবেন্ড পেতে যাচ্ছে শায়লা আপু! সাথে সাথে বুবলীর নোমান সাহেবের কথা মনে হলো।তার মনে বেশ রাগ হতে লাগলো রাহাতের জন্য।কেন অমন একজন বয়সী মানুষের সাথে শায়লা আপুকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল ! যাক, এবার তো সব ঝামেলা মিটেছে। বুবলী শিহাবকে উপরে যাওয়ার জন্য বললো। শিহাব চোখে সম্মতি জানালো। রাহাত বুবলীকে,আমার কাজিন, বলে  শিহাবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।  এবার সামনে বুবলী  আর পিছনে রাহাত যেন গার্ড অফ অনার দিয়ে শিহাবকে উপরে নিয়ে যাচ্ছে।দোতলায় উঠতেই দরজার সামনে অতিথিদের ভীড়। নতুন জামাইকে এক নজর দেখার জন্য চাচী খালা মামীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।  তাদের চোখে মুখে বিস্ময়!  অনেকেরই কোথায় যেন একটা খটকা লাগছে। আগে তারা কানাডার জামাইকে যেমন দেখেছে এবার যেন তার চেয়ে বয়স অনেক কমে গেছে ? তাদের  বিস্মিত চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন! দিন দিন মানুষের বয়স কি বাড়ে না কমে ? এ আবার অন্য কেউ আসেনিতো ? অতিথিদের এমন আচরণে, এমন ঘোলাটে  পরিস্থিতিতে শিহাব ভীষণ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করেই উপরে উঠে এলো। বুবলী সবাইকে আশ্বস্ত করতে লাগলো,এটাই শায়লা আপুর আসল হাজবেন্ড। তার নাম মিস্টার শিহাব। রাস্তায় জ্যামের কারণে, আমাদের বাসায় পৌঁছুতে একটু রাত হয়ে গেছে। বলেই বুবলী চট করে শিহাবের হাত ধরে অতিদ্রুত অতিথিদের কবল থেকে রক্ষা করতে শিহাবকে এক টানে ড্রইংরুমে নিয়ে বসালো।রাহাত তাকে অনুসরণ করে ভেতরে গিয়ে শিহাবের পাশে বসলো।বুবলীর কথায় স্বজনেরা খুব একটা সহজ হলো না। তাদের মনে চোখে মুখে একটা কিন্তু রয়েই গেলো। 
বুবলী সবাইকে জানালো, একটু পরে শায়লা আপু আর শিহাব ভাইয়ার গায়ে হলুদ হবে। সবাই তৈরি হয়ে নাও।শায়লা আপুর হলুদের জন্য যে যেমন পোশাক এনেছিলে পরে নাও আর ছাদে গিয়ে  তোমাদের গান নাচ প্র‍্যাকটিস করে নাও আর মুরুব্বিরা আপনারাও তৈরি হয়ে নেন।আপুকে হলুদ ছোঁয়াতে হবে। এ কথায় সবার মাঝে আনন্দের ঢেউ বয়ে গেলো! ভীষণ এক চটপটে মেয়ে বুবলী। যেমন তার বুদ্ধিমত্তা তেমনি সে করিৎকর্মা!  এক সাথে সবদিক সামাল দেয়ার অনন্য এক দক্ষতা তার। একই সাথে সে সবদিক ম্যানেজ করে চলছে। এবার এক দৌড়ে সে কিচেনে ঢুকে গেলো।চট করে দুই কাপ চা বানিয়ে ট্রে সাজিয়ে  নিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে  এলো। রাহাত তখনো শিহাব ভাইয়ার হাত ধরে বসে আছে।যেন নীরবে এখনো সে শিহাবের কাছে ক্ষমা চাইছে। শিহাব লজ্জাবনত হয়ে মাথা নিচু করেই বসে আছে। বুবলী দুজনকে সহজ করতে চায়ের ট্রে নিয়ে হাজির হলো।দুজনার হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে চাইলে শিহাব আগে পানি খেতে চাইলো। বুবলী ফিক করে হেসে দিলো ! কি ? টেনশনে কি গলা শুকিয়ে গেছে ? গলা ভিজিয়ে নিতে হবে ? বুবলীর দুষ্টুমিতে শিহাবের মুখে লজ্জায় লাল আভা ফুটে উঠছে! বুবলী  শিহাবকে আর ঘাটালো না।তাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই শিহাব প্রায় এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের পানিটা শেষ করলো।সবকিছু দেখে রাহাত ভাবলো, আহা,বেচারা,আপুকে পাওয়ার জন্য কতইনা ঝামেলা পোহালো। সে শিহাবকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। তবে শিহাবের টেনশন দূর করতে  এখন একটা বেনসন স্টিকের অভাব ফিল করছে। একটা দুটো টান দিলে মাথাটা হালকা হতো।কিন্তু এ অবস্থায়  তা একেবারেই সম্ভব না।খুবই অনিচ্ছায় সে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ালো।  বুবলী ইতিমধ্যে শায়লার কাছে গিয়ে হাজির ! সেখানে এক নদী ভাবাবেগে যেন কান্নার সাগর বইছে।শায়লার মা,মানে বুবলীর ফুপু মেয়ের এই অকস্মাৎ জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়াতে অতি উচ্ছ্বাসে হত বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।বিয়ে নিয়ে মেয়ের জীবনের উত্থান পতনে তিনি যেন আর কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছেই তিনি এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজেছিলেন।বিধাতাও সদয় হয়ে যেন তার কথা শুনেছেন।তাইতো আজ শিহাবের মত এমন  রাজপুত্রের মত ছেলে তার মেয়ের জীবনসঙ্গী হবে। শায়লাও যেন তার আবেগ ধরে রাখতে পারছে না।একদিকে শিহাবের আগমনে সে আনন্দে দিশাহারা অন্যদিকে আবার শিহাবকে হারানোর ভয় ! বুবলী নানান কথায় মা মেয়ের এই যুগলবন্দী কান্না থামালো। বুবলী বললো, আপু,শিহাব ভাইয়া তোমাকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছেন।ঐতো,ড্রইংরুমে বসে আছেন।তোমাকে এখুনি হলুদের সাজে তৈরি হতে হবে। বুবলীর এঘর ওঘর দৌড়াদৌড়ি বেড়ে গেলো। মায়ের ঘরের দরজা লাগিয়ে
সে খুব দ্রুতই  শায়লাকে ফুলের গহনা আর শাড়ি পরিয়ে দিলো। শায়লা একেবারে  নিশ্চুপ হয়ে রইল।তার ভেতরে অপার এক আনন্দ কিন্তু সারাদিনের উৎকন্ঠার মিশেলে কেমন যেন মিশ্র অনুভব ! শায়লাকে ফুলের গহনা আর হলুদ শাড়িতে যেন অপরূপা লাগছিল।
আজ সকালের পার্লারের সেই ফ্রেশনেশটাতে শায়লার  সৌন্দর্য যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। শায়লার মা অবিরল ধারায় কেঁদেই যাচ্ছেন। এযে আনন্দাশ্রু তা বুঝতে বুবলীর আর বাকী রইল না। এবার বুবলী ছুটলো ড্রইংরুমের দিকে। শিহাব ভাইয়াকেও  একটু তৈরি করতে হবে। কিন্তু এখন কেমন করে তা সম্ভব।তার জন্যতো কিছুই কেনাকাটা হয়নি। শিহাবের দিকে চোখ পড়তেই বুবলী যারপরনাই মুগ্ধতায় ডুবে গেলো! সেতো খেয়ালই করেনি সিম্পল একটা নেভিব্লু চেক শার্টে এত রাতেও শিহাব যেন সাদা খইয়ের মত ফুটে আছে! এই রুমে আসার উদ্দেশ্যই সে ভুলে গিয়েছে যেন! রাহাত যেন তাকে চেতনায় আনলো, কি হলো বুবলী ? আপুকে রেডী করেছো ? তাহলে চলো ছাদে হলুদের স্টেজে আপুকে নিয়ে যাও আমি শিহাব ভাইয়াকে নিয়ে আসছি। বুবলী যেন চেতনায় এলো! সে বলে উঠলো কিন্তু শিহাব ভাইয়াকেতো নতুন কিছু পরাতে হবে। রাহাত বুঝতে পারছে না কি করবে। বুবলী দুরদর্শিতার কাছে রাহাত যেন বারবার পরাজিত হচ্ছে।বুবলী রাহাতকে টেনে শায়লার ঘরে নিয়ে এলো। বিয়ের এত্ত এত্ত শপিংগুলো কি এমনিই থাকবে ? এক্ষুনি এখান থেকে সিল্কের ঘি রঙা পাঞ্জাবীটা শিহাব ভাইয়াকে পরিয়ে দাও আর হলুদের সবকিছু ছাদে পাঠিয়ে দাও।রাহাত ছোঁ মেরে পাঞ্জাবিটা নিয়ে গেলো আর শিহাবকে তা পরার জন্য অনুরোধ করতেই শিহাব তা পরে নিলো। শিহাব ভাবলো, এমনিতেই এই পরিবারটি আজ সারাদিন নানান দুশ্চিন্তার মাঝ দিয়ে গেছে। যার জন্য সেও অনেকটা দায়ী। এখন যদি তার সবকিছুতে একটু সম্মতি আর সহযোগিতা  ওদের আনন্দ দেয় শিহাব তা সানন্দেই গ্রহন করবে। রাহাত  ড্রইংরুম থেকে বেরিয়ে এলো।শিহাব পাঞ্জাবিটা পরে নিলো।
তাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে পাঞ্জাবিটা চমৎকারভাবে তার গায়ে ফিট হয়ে গেলো! রাহাত ভেতরে ঢুকেই আশ্চর্য হয়ে গেলো। পাঞ্জাবিটা সে নিজে কিনেছে কিন্তু তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি এটা শিহাবের জন্যই যেন বানানো হয়েছে! আর ঘি রংএ শিহাব ভাইয়াকেতো খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। বুবলী  ওদের দরজায় নক করে জানান দিলো যে আমরা তৈরি, তোমরা তৈরি তো ? এত রাতেও শিশুদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক বয়ে যাচ্ছে।সবাই যার যার মত তৈরি  হয়ে নিয়েছে। মুরুব্বিরাও কম যায় না! তাদের সাজগোযে সবারই বয়স অর্ধেক কমে গেছে ! আর এই পরিবর্তিত রূপে কেউ যেন কাউকে চিনতে পারছে না। সবাই সবাইকে দেখে অবাক  হচ্ছে আর সারা বাড়িতে হাসির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিশোরী মেয়েদের মেকাপ বক্সের আজ অর্ধেকটাই যেন খালি হয়ে গেছে। কিশোর ছেলেগুলো ওদের পিছনে লেগেই আছে। নানান টিপ্পনীতে ওদের অতীষ্ঠ করে তুলছে। কিছুতেই ওদের পিছু ছাড়ছে না। এই মাঝ রাতে সারা বাড়িতে বিয়েবাড়ির আমেজ ফুটে উঠেছে ! সারাদিনের প্রচন্ড খরার পরে যেন মধ্যরাতে মুষলধারায় বৃষ্টি নেমেছে আর সেই প্লাবনে সারা বাড়িতে আনন্দের জোয়ার  বয়ে যাচ্ছে ! হতাশাগ্রস্ত অতিথিরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছাদের দিকে চলছে। বুবলী এবার শায়লাকে তার মায়ের ঘরের দরজায় আনতেই রাহাত শিহাবকে ড্রইংরুমের দরজায় এনে দাঁড় করালো। মূহুর্তেই খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার  ঘটে গেলো।  দুজনেই মুখোমুখি ঘরের, মুখোমুখি দরজায় দাঁড়িয়ে। যা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ! দুজনেই দুজনকে দেখে চমকে গেলো ! দুজনার চোখে রাজ্যের ভালোলাগা,ভালোবাসা, অভিমান প্রশ্ন জিজ্ঞাস্য অবশেষে এতটা কাছে আসার আনন্দে যেন বাকহীন হয়ে পড়েছে। রাহাত আর বুবলী  দুজনে যেন এই চার চোখের মহামিলনের সাক্ষী হয়ে রইল।শিহাব শায়লার  হলুদ শাড়িতে আর ফুলের সাজে দেখে মুগ্ধতায় আছন্ন হয়ে গেলো। সে থমকে দাঁড়িয়ে রইল। শায়লা ও অবাক দৃষ্টিতে শিহাবকে দেখছে। সে আজ পর্যন্ত শিহাবকে পাঞ্জাবিতে দেখেনি।ঘি রঙা পাঞ্জাবিতে শিহাবকে খুঁজে  পাওয়াই ভার! কেমন করে এমন হলো ? শায়লার চোখে বিস্ময় মিশ্রিত প্রশ্ন ! কেমন করে এই পোশাক তারই হলো ! রাহাত আর বুবলী  অপলক দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎই  সেই গেট ধরার দলনেতা কিশোরীটির আগমনে ওদের ধ্যান ভাঙলো।  
কি হলো তোমরা কখন উপরে আসবে ? আমরা তোমাদের নাচ গান দেখাবো।বলেই মেয়েটি শিহাবের হাত ধরে টানতে লাগলো। এবার রাহাত আর বুবলী  ওদের নিয়ে গুটি গুটি পায়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে আগালো। শায়লা  আর শিহাব এখন এক সুতা পরিমাণের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে। দুজন যেন দুজনার স্পর্শ  পাচ্ছে,দুজন যেন দুজনার ঘ্রাণ শুষে  নিচ্ছে। শিহাবের  সংস্পর্শে শায়লার ভেতরে যেন গরম জলের নহর বয়ে গেলো আর শিহাবের ভেতরে যেন ভুমিধ্বসে বিরাট এক গহবর তৈরি হলো! দুজনের মনে একই ভাবনা, আজ থেকেই কি তবে আমরা দুজন দুজনে খুব নিবিড় করে পাবো!এতদিনের কষ্টের কি আজ অবসান হবে? পিছনে রাহাত আর বুবলী দাঁড়িয়ে। ওদেরও ইচ্ছে করছে ঠিক এই সময়টা অনন্তকাল ধরে চলুক।দুজনার ভেতরের নির্বাক কথা চলুক আজীবন। অথচ পরক্ষণেই এই নীরবতা কে খানখান করে ভেঙে দিয়ে  শিহাবের মোবাইল বেজে উঠলো ! এত রাতে কার ফোন ? শিহাবের মন অজানা আশংকায় কেঁপে উঠলো! আরাফ বা মায়ের কিছু হয়নি তো ! সে  মোবাইলে তাকাতেই দেখতে পেলো,  বন্ধু  রোমেলের কল! এত রাতে রোমেল। কেন কল করলো ? শিহাব কল রিসিভ করতেই,রোমেলের উত্তেজিত  কন্ঠস্বর! শিহাব, আমার কাজিন, তোমার সন্তানের মা  রিশতিনা একটু আগে  লন্ডনে  ওর বাসায় অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুইসাইড  করেছে। তোমার প্রতি অভিমানে সে এই কাজ করেছে। যদি ওর কিছু একটা হয়ে যায় তবে এর জন্য তুমিই দায়ী থাকবে। আমি তোমাকে  ছাড়বো না।পুলিশকে  সব জানাবো। বলেই শিহাবের কোন উত্তর না শুনেই সে খট করে কলটা কেটে দিলো। ওপ্রান্তে কি খবর এলো! রাহাত আর  বুবলী যেন থমকে গেলো। শিহাব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে  রইল। শায়লা শিহাবের মুখের অভিব্যক্তি দেখে তার কাছে খুব ঘনিষ্ঠ  হয়ে শক্ত করে তার হাতটা  ধরে চোখের ভাষায়  কিছু একটা সান্ত্বনা দিতে চাইলো।


চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much