ধারাবাহিক উপন্যাস
সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
(২য় পর্ব)
মনি জামান
নিলয়ের কয়েকটা রাত কেটেছে এক প্রকার ঘুমহীন কি একটা অনুভূতি তাকে জাগিয়ে রেখেছে কয়েক রাত ধরে, হয়তো এই জেগে থাকাকে ভালবাসার নির্ঘুমতা বলে।
প্রেমিক প্রেমিকাকে প্রেম এমনি ভাবে নির্ঘুম করে দেয়, শূক্রবার রাত্রি শেষে এলো সেই ক্ষাংকিত শনিবার নুতন ভালো লাগার একটি ভোর নিলয় হয়তো এই ভোরটার জন্য এই কয়দিন ধরে অপেক্ষা করেছে।
নিলয় ভোরে উঠলো উঠেই ওয়াস রূমে গিয়ে ব্রাস আর জেল নিয়ে দাঁত ব্রাস করে ফ্রেস হলো তারপর ক্লীন সেভ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরখ করে দেখে নিচ্ছে,নিলয় আজ নিজেকে দেখলো আয়নার ভিতর অন্য রকম এক নিলয়কে।
নিজেকে এভাবে পরখ করে আর কখনো দেখা হয়নি, রূমে ফিরে ফোনটা হাতে নিয়ে বাটন টিপলো মেবিনের ফোন নাম্বারে,রিং হচ্ছে একটু পর মেবিন ফোনটা রিসিভ করলো,নিলয় বলল,কি করছো কাক পাখি।
মেবিন বলল,এইতো উঠলাম ফ্রেস হলাম এখন ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে নিচ্ছি শোন তুমিও সব গুছিয়ে নাও নিলয়,এখন বাজে আটটা আর মাত্র দুই ঘন্টা সময় আছে আমাদের হাতে দ্রুত সেরে নাও সব কাজ।
নিলয় বলল,ঠিক আছে কাক পাখি আমি এখুনি সব গুছিয়ে নিচ্ছি বলে ফোনটা কেটে দিয়ে রেখে দিলো,নিলয় সব গুছিয়ে নিয়ে আবারও মেবিনকে ফোন করে দুজন দুজনের কথা শেষ করে ফোন কেটে দিয়ে পকেটে ভরে ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
নিলয় ও মেবিন দুজনে নিধারিত স্থানে এসে এক সাথে মিলিত হল তারপর দুজনে একটা রিক্সা ডেকে রিক্সাই উঠে বসলো,মেবিন রিক্সাওয়ালাকে বলল, কমলাপুর রেল ষ্টেশন চলো রিক্সাওয়ালা কলাপুরের দিকে রিক্সা ঘুরালো নিলয় আর মেবিন দুজনে ট্রেনে যাবে কক্সবাজার,ওদের দুজনের দুটো ফাষ্টক্লাস টিকেট আগাম কেটে রেখেছে মেবিনের বন্ধু মরুফ। রিক্সায় নিলয় আর মেবিন দুজন গল্পে মত্ত,রিক্সাওয়ালা প্রায় বিশমিনিট পর এসে পৌছালো কলাপুর। রিক্সাওয়ালা বলল, আপু এসে গেছি কমলাপুর,নিলয় আর মেবিন রিক্সা থেকে নেমে রিক্সার ভাড়া দিয়ে স্টেশনে হেঁটে এলো তারপর দুজনে এসে বসলো একটা যাত্রী বেঞ্চে,ট্রেন ছাড়তে আর মাত্র আধা ঘন্টা সময় আছে,নিলয় মেবিন স্টেশনের পাশের দোকান থেকে আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র গুলো কিনে দুজনে ট্রেনে উঠে ওদের সিটে গিয়ে বসলো।ট্রেন ছাড়ার সময় প্রায় আগত একটু পর ট্রেন স্টার্ট হলো বিকট চিৎকার দিয়ে উঠলো ট্রেন, কারণ যাবার সংকেত দিচ্ছে যাত্রীরা যে যেখানে আছে যেন তাড়াতাড়ি সবাই হুইচেল শুনে উঠে পড়ে ট্রেনে।
স্টার্ট হয়েছে ট্রেন কাপছে যেন মৃদ ভূমিকম্পন হচ্ছে, ধীরে ধীরে ট্রেন চলতে শুরু করলো নিলয় আর মেবিন পাশাপাশি বসে আছে,নিলয় কেবিনের জানালা খুলে দিল ঝিরি ঝিরি বাতাস ওদের কেবিনে প্রবেশ করছে,মেবিন আজ নীল সেলোয়ার কামিজ পরেছে কপালে ছোট্ট একটা কাল টিপ পরেছে,অপূর্ব সুন্দর লাগছে মেবিনকে, ঝিরি ঝিরি বাতাস মেবিনের মাথার চুল গুলো এলোমেলো করছে, কখনো চুল গুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে কপাল চোখ মুখ কখনো বা গ্রীবা।মেবিনের চোখে মুখে আজ একটা আনন্দের ঝিলিক বয়ে যাচ্ছে মনে হয় কিছু পাওয়ার প্রাপ্তির এ ঝিলিক,নিলয় অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেবিনের দিকে।
মেবিন নিলয়কে বলল,কি দেখছো অমন করে,নিলয় বলল,তোমাকে দেখছি কাক পাখি।
মেবিন বলল,মনে হয় কখনো দেখনি আমাকে,নিলয় দুষ্টমির হাসি হেসে বলল,না আজ প্রথম দেখছি।
মেবিন বলল,তাই নাকি?তাহলে এতদিন ধরে কাকে দেখেছো?তোমরা ছেলেরা না এমন।
নিলয় মেবিনের হাতটা হাতে নিয়ে বলল, এতদিন ধরে দেখেছি মেবিন নামের একটি মেয়েকে কিন্তু আজ দেখছি আমার স্বপ্নের এক রাজকন্যাকে,সত্যি তুমি অপূর্ব সুন্দর। মেবিন লজ্জায় লাল হয়ে গেলো এমন লজ্জা সে কখনো পাইনি আজ কেন এত লজ্জা লাগছে মেবিন জানে না।নিলয় মেবিনের গ্রীবা স্পর্শ করলো এবং আরো কাছে টেনে নিলো,মেবিন নিলয়ের কাঁধে মাথাটা রাখলো,রাখার পর মেবিনের কাঁধে মনে হল এ কাঁধ কত নির্ভাবনার কতটা প্রশান্তির তা আজ যেন অনুভব করছে মনে মনে।
হঠৎ নিলয় মেবিনকে ছোট্ট করে একটা টোকা দিয়ে আদর করে বলল,এই কাক পাখি দেখো দেখো বাইরে কত অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতি কত রূপ যেন দিগন্ত বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে সুবজ অরণ্য।
মেবিন দেখ ঐ দেখ তোমার প্রিয় কাশফুঁল মেবিন সেদিকে তাকালো,তখন ট্রেন আপন গতিতে চলছে একের পর এক দৃশ্যপট পরিবর্তন হচ্ছে মাঠ আর মাঠ এ যেন স্বর্গ উদ্যানের বুকে চিরে ওদের কক্সবাজার যাত্রা।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রেনও ছুটছে, দুজন প্রেমিক প্রেমিকা পাশাপাশি বসে অপলক চেয়ে আছে পরস্পরের দিকে, নিলয়ের মনে হলো মেবিনকে আজ প্রথম আবিস্কার করেছে,নিলয় মেবিনকে বলল,এই চুপ কেন কিছু বলো,মেবিন বলল,জানো নিলয় আজ খুব ভালো লাগছে তোমাকে কাছে পেয়ে।
নিলয় বলল,আমারও যে কত ভালো লাগছে তোমাকে বোঝাতে পারবো না,তোমাকে এত আপন করে কাছে পাবো ভাবিনি কখনো,মেবিন নিলয়কে বলল,তোমার মনে আছে চারুর কথা,নিলয় বলল,হ্যাঁ মনে আছে গত বছর তো তোমাদের বাসায় বেড়াতে আসলো তা হঠাৎ চারুর কথা জিজ্ঞেস করলে কেন।মেমিন বলল,চারুর জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো জানি না চারু এখন কতটা মানুষিক ভাবে সুস্থ আছে,নিলয় বলল,কাক পাখি তুমি ফোনে তো কথা বলো চারুর সাথে কিছু বুঝতে পারো না ওর মনের অবস্থা,মেবিন বলল,মনে হয় সয়ে গেছে ওর কষ্ট গুলো,কক্সবাজার যাচ্ছি শুনে মা বলে দিয়েছে চারুকে যেন ফিরার পথে সাথে করে নিয়ে আসি,নিলয় বলল,ভালোই হবে চারু আমাদের সাথে আসলে।
ট্রেন ছুটছে সবুজ মাঠের বুক চিরে নিলয় মেবিনকে টোকা দিয়ে বলল,এত সুন্দর দৃশ্য আগে কখনো ট্রেনে বসে দেখা হয়নি ঐ সবুজ অরণ্য,ওরা যেন আমাদের সাথে কক্সবাজার যাচ্ছে,মেবিন সেদিকে তাকিয়ে বলল,সত্যি সুন্দর কিন্ত তুমি ইদানীংকাল খুব ফাজিল হয়ে যাচ্ছো।
নিলয় বলল,কি রকম ফাজিল,মেবিন হাহা করে হেসে উঠলো তারপর বলল,ঐ সবুজ অরণ্য আমাদের সাথে কক্সবাজার যাচ্ছে বলে আবার হাসলো।
নিলয় মেবিনের একটু চোয়াল টেনে বলল,বুঝলাম কাক পাখি তবে খারাপ বলেছি কি?মেবিন বলল,মোটেও না একটুও খারাপ বলোনি তবে জানো আমি মা"কে তোমার কথা সব বলেছি, মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে আমাদের বাড়ি,এবার কক্সবাজার থেকে ঘুরে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো আমাদের বাড়ি।
নিলয় মনে মনে খুশি হলো আবার ভয়ও পেলো,মেবিনের মা যদি পছন্দ না করে তাকে দেখে,তখন কি হবে নিলয় যখন মনে মনে ভাবছে কথা গুলো তখন মেবিন বলল,কি ভাবছো চুপচাপ,মেবিন বলল,নিলয় জানো শীত শীত লাগছে এখন,নিলয় মেবিনকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলল,আমাকে জড়িয়ে ধরে বসো তাহলে শীত চলে যাবে,মেবিন বলল,খুব দুষ্ট হয়ে গেছো ইদানীং তাই না!তখন ট্রেন দুর্বার গতিতে ছুটছে কক্সবাজার অভিমুখে।
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much