চিঠি
স্নেহের মালবিকা ,
আজ ভীষন ভাবে মনে পড়ছে তোকে ...... কেন মনে পড়ছে সেটা পরে বলছি । এর আগে তোকে কখনো চিঠি লিখিনি । লেখার কোনো কারণ ও ছিল না ।
বলতে পারিস তোকে আমি অনেকটাই ভুলে গেছিলাম , তবে বোধহয় পুরোটা ভুলিনি ! তাই আজ বহু বছর পর তোকে মনে পড়লো , মনে পড়লো তোর আর আমার একসাথে বড়ো হওয়া ......
তোকে যখন প্রথম দেখি তখন তুই অনেক ছোটো , আর আমি তোর থেকে একটু বড় । তোর সাথে কেউ খেলতো না বলে আমি রোজ স্কুল থেকে ফিরে তোকে ডাকতে যেতাম খেলার জন্য , আর তুই আমাকে দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে হাততালি দিতিস । তারপর তুই আর আমি যেতাম খেলার মাঠে ..... সেখানে তোকে দেখে সবাই ভয় পেতো , কেউ কেউ আবার মজা করে বলতো , " মালা পাগলী এসে গেছে " ..... তুই কিছুই বুঝতিস না , ওদের মজাটা খেলা ভেবে জীব বার করে জোরে জোরে হাততালি দিতিস !
আমার খুব রাগ হতো জানিস ! ..... বাড়িতে এসে মাকে নালিশ করতাম , বলতাম " মা ! মালবিকার ওপর সবাই হাসে কেন ? ওর সাথে কেউ খেলে না কেন ? " মা কোনো উত্তর করতেন না , শুধু বলতেন " সন্ধ্যে হয়ে গেছে .... পড়তে বসো " ।
পরের দিন তোর সাথে আমি আবার খেলতে যেতাম । তোর অর্ধেক বলা কথা গুলো আমি পুরো করার চেষ্টা করতাম .... তুই বসার সময় যখন তোর ফ্রক গুটিয়ে যেতো , আমি টেনে সোজা করে দিতাম ..... তুই যখন মুখে আঙ্গুল দিতিস , আমি বার করে দিয়ে বলতাম .... মালবিকা ডোন্ট !! তুই এক গাল হাসতিস ..... পরের দিন এই সব আবার করতিস .....
তোর সাথে খেলতে খেলতে কবে বড়ো হয়ে যাই আমি !! .... পড়ার চাপে তোর সাথে খেলা তো দূর , দেখাও অনেক কম হতো । তারপর একদিন শুনলাম তুই আর নেই ! তোকে শেষ বারের মতো দেখতে যাই নি .... মা বলেছিলেন " যা , একবার দেখে আয় " .... কিন্তু যাই নি । পারিনি যেতে ...... ঠায় বসেছিলাম সারাটা সন্ধ্যে । জানি তুই আমায় সেদিন স্বার্থপর ভেবেছিলিস ।
তবে আজ তোকে আমার মনে পড়লো কেনো ? ..... আজ এতদিন পর !!
আজ তোকে আমি অনুভব করলাম আমার গালে । তুই প্রায়ই আমায় জরিয়ে ধরে চুমু খেতিস । আর আমি বিরক্ত হয়ে বলতাম " এই মালবিকা এমন চুমু খেলে আমি কাল থেকে আসবো না " ..... তুই আনন্দে হাততালি দিতিস । আর পরের দিন আবার জরিয়ে ধরে আমার গাল ভিজিয়ে চুমু খেতিস ....... পরিবর্তে আমি তোকে কখনোই কিছু দিই নি । আজ তোর গালে একটা চুমু দিয়ে বলতে ইচ্ছা করলো " মালবিকা যেখানেই থাকিস আনন্দে থাকিস " ......
ইতি ,
চৈতি
অসম্ভব সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুন