উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৮৪
লাইফ কেয়ার ইউএসজি
মমতা রায়চৌধুরী
মনোজ বাথরুম থেকে বেরিয়ে কোনরকমে জামাটা গলিয়ে সেন্ডেল পরতে থাকে আর রেখাকে তাড়া দিল চলো, চলো চলো ঘোষ দা ফোন করেছিল। যেতে বলেছে ।ডাক্তার বাবু এসে গেছে।
রেখা বললো" ও বাবা ,ওই দেখো পেছনে আবার কিউ কিউ আওয়াজ করছে ।"
"কে?"
"কে আবার আমাদের তু তু রানি।"
রেখা ওর গাল দুটো টিপে দিয়ে বলল" এখন তোকে আদর করার সময় ? এখন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। চল, চল ,ঘরে থাকতে হবে না ,বাইরে চল ।তারপর লেজ নাড়তে নাড়তে মনোজ আর রেখার আ আগে তুতু দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসলো।
রেখা হাঁক দিল "মাসি ,মাসি ,মাসি।"
মাসি তখন কলতলাতে বাসন মাজছিল।
মাসি বললো "কিছু বলছ?"
রেখা একবার দরজার দিকে মাথা বাড়িয়ে বলল 'হ্যাঁ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যাও?'
মাসির বয়স হয়েছে তো তাই মাসির হঠাৎ করে উঠতে গেলে খুব কষ্ট হয় । পিড়িটা একহাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দিতে বলল' এই যাই বৌমা।'
রেখা বললো' ঠিক আছে, তুমি এসে লাগিয়ে
দিও ।আমি আসছি তাহলে ,হ্যাঁ মাসি।'
মাসি বললো' চাবিটা কার কাছে রাখবো?'
"পাশের দোকানের সেন্টুদার কাছে দিয়ে দিও।'
মাসি মাথা নাড়লো কিন্তু সেই মাথা নাড়া রেখা দেখতে পেল না ।তবে রেখা জানে মাসি ঠিকঠাক করে রেখে যাবে এ ব্যাপারে রেখা নিশ্চিন্ত।"
রেখা মনোজের বাইকে চাপল ।মনোজ বাইক স্টার্ট দিয়ে লাইক কেযারএর উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
বাইকে যেতে যেতে মনোজ বলল 'একটা জলের বোতল নিয়েছো তো?"
"হ্যাঁ নিয়েছি।"
লাইফ কেয়ার এর কাছে এসে যখন বাইক থামল
মনোজ রেখা দেখল লম্বা লাইন। মিনিমাম 10 -15 জন বসে আছেন ।প্রত্যেকের হাতেই একটা করে জলের বোতল।
মনোজ বলল "তুমি এখানে বস আমি ঘোষদার সঙ্গে দেখা করে আসি । প্রেসক্রিপশনট
দাও। "
রেখা ব্যাগ হাতরে হাতরে প্রেসকিপ্শনটা বের করল।
মনোজ বলল "এতক্ষণ লাগে একটা প্রেসক্রিপশন বের করতে।"
রেখা বলল
"রেখেছিলাম তো কাছেই অথচ এখন খুঁজে পাবো না, সেই হাতরাতেই হলো।"
মনোজ একটু বিরক্ত হলো। প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে মনোজ ভেতরে ঢুকলো।
সামনে তিনটে ছেলে বসে আছে একজন ফোনে কথা বলছে আর একজন প্রেসক্রিপশন দেখছে আর একজন এন্ট্রি করছে। এরমধ্যে একটি মেয়ে লম্বা লিস্ট নিয়ে নাম ডাকতে শুরু করলো
"কবিতা দুলুই।"
অপরপক্ষ বলল" আছি ।"
"আপনার প্রেসার পেয়েছে।"
"না।"
"জল খান বেশি করে।"
"মনোয়ারা বিবি।"
"আছি।"
"প্রেসার পেয়েছে।"
"না।"
""জল খান জল খান বেশি করে।'
"রতন বাগ।'
"আছি।"
"প্রেসার পেয়েছে।"
" পাচ্ছে না তো।"
"জল খান বেশি করে"।
"পুরো এক লিটার বোতল শেষ করে ফেললাম।'
"যান ভেতর থেকে আরো জল নিয়ে আসুন।"
"এরপর তো পেট বাস্ট হবে।"
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
"পায়চারি করুন ,পায়চারি করুন।"
"সে তো ঘাম হয়ে ঝরে গেলে জলটাই বেরিয়ে যাবে।"
"সে মেয়েটার কোন কথা বলল না ।নেক্সট নাম ঘোষণা করল।"
"রাখি চক্রবর্তী।"
"আছি।"
"প্রেসার পেয়েছে।'
"হ্যাঁ পেয়েছে।"
"আপনি ভেতরে চলে আসুন।"
আরো কতগুলি নাম ডে কে নিল।
নীলা সূত্রধর, বৈশাখী মজুমদার, অনিল বসু
ওদের প্রত্যেককেই বলল' জল খান, প্রেসার পেলে বলবেন।'
বলেই মেয়েটি চলে গেল ভেতরে তারপর ঘোষ দা বেরিয়ে এসে বললেন "সে কি আপনাদের কারোর প্রেসার পাই নি ।এরপরে একসঙ্গে সবাই যখন বলবেন প্রেসার পেয়েছে তখন তো অসুবিধে
হবে ?জল খান বেশি করে।"
ইতিমধ্যে ঘোষ দার সঙ্গে দেখা করে মনোজ বেরিয়ে এসে বলল "তোমার প্রেসার পাচ্ছে?"
রেখা বলল 'না।'
এজন্যই বলেছিলাম বাড়ি থেকে প্রেসার পেলে তবে এখানে আসবে।
রেখা বলল "বাড়িতে তো বাথরুম করে
আসলাম ।তাহলে এত তাড়াতাড়ি কখনো প্রেসার আসে?"
আমাকে বোকার মত বাড়ি থেকে বাথরুম করে আসতে বলল।
"তুমি তো আমাকে আগে ব্যাপারে কিছু বলনি?"
"কেন এর আগে কি তোমার কোনো ইউএসজি হয়নি?"
কিন্তু আমি ভাবলাম এখানে যদি ভিড় থাকে সেই ভেবেই….।
"নাও আর কি ?এখন জল খাও বেশি করে আর আমি কাজকর্ম বাদ দে এখানে বসে থাকি।'
রেখা আর কথা বাড়ালো না। কথায় কথা বাড়বে।
ইতিমধ্যে প্রেসার পেয়েছিল, তাকে আবার বের করে দেয়া হয়েছে। বলছে যে ও উনার ব্লাডার পরিপূর্ণ নেই ।কম্পিউটার রিজেক্ট করে দিচ্ছে।"
রেখাআর কী করবে বসে বসে ,ভালো এই ফাঁকে বসে একটু গল্প লিখে নি।'
আর পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর মনোজ তাড়া দিচ্ছে 'পেলো?
রেখা সেই আগের মতোই মাথা নেড়ে জানালো ,'না।
তারমধ্যে রেখা দেখল যে যা আজ তো যাগুড মর্নিং জানানো হয়নি।
প্রত্যেককে গুড মর্নিং জানানো হয়
নি । প্রথমে প্রত্যেককে গুড মর্নিং জানাই।তাই বসে বসে মেসেজ গুলো ফরোয়ার্ড করতে লাগলো।
এরপর রেখা গল্প লেখায় মনোনিবেশ করল।
এর মধ্যে সেই মেয়েটি আবার এসে নাম ঘোষণা করল "আপনাদের যাদের নাম ঘোষণা করলাম তাদেরকে প্রেসার পাচ্ছে?'
এর মধ্যে রেখার মনে হল একটু একটু প্রেসার পাচ্ছে।
এগিয়ে গিয়ে বললো যে তার প্রেসার পাচ্ছে।
মেয়েটি বলল পেশার পাচ্ছে বললে হবে না কিরকম পাচ্ছে?
যেরকম পেলে বাথরুম হয়।
মেয়েটি বলল সে তো বাথরুমে গেলে একটু হলেও বাথরুম হবে। মানে বলতে চেয়েছি তলপেটে ব্যথা করছে ?মনে হচ্ছে আর যেন বাথরুম ধরে রাখতে পারবেন না এরকম কি হচ্ছে প্রেসার?"
রেখা বলল 'বুঝতে পারছি না । তারপর ভেবে বলল না, না ,সেরকম হচ্ছে না।'
ছেলেটি বলল তাহলে বুঝতে পারছেন এবার আপনাদের ঢুকিয়ে নিলে যদি প্রেসার না পায় তাহলে কিন্তু আবার আপনাকে একদম ওয়েটিং এ থাকতে হবে।
রেখা আর রিস্ক নিল না।
দুপুরে একটা নেমন্তন্ন আছে ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি সেখানে যেতেই হবে। ইউ এস জি করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলে তারপর সেই বাচ্চাগুলো কে খেতে দিয়ে রেডি হয়ে যাওয়া মানে অনেকটা চাপের হয়ে যাবে।
তাইরে খাবার চুপ করে এসে বসল দিয়ে যেটুকু জল ছিল শেষ করে ফেলল ।তারপর মনোজকেকে ভুলার একটু জল খাবও নিয়ে আসি ।
মনোজ বলল"না ,আর জল খেতে হবে না হতেই হবে।"
গল্প একটুখানি লেখার পর তাকিয়ে দেখল সামনেই আখের রস বিক্রেতt আখের রস
বিক্রয় করছে ।এক ভদ্রমহিলা তার বাড়ির লোক বোধহয় টেস্ট করাতে এসেছে তার সঙ্গে আরো অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছে ।প্রধান মহিলা আখের রস নিয়ে ভদ্রলোককে দিলেন ।তারপর অন্যদের জিজ্ঞেস করলেন তারা খাবে কিনা ?তার মধ্যে একজনকে বলতে শুনলাম মেজদি খাবি 'মেজদি বলল '. না না এই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে রস বিক্রি করা জিনিস আমার ভালো লাগে না ।'
রেখা তাকিয়ে দেখল এখানেও বেশ আবার একটু বরফের টুকরো ফেলা হয়েছে। সেটা কেমন ভাবে মিক্স করা হয়েছে উপর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে কিন্তু মনে হলো না .রেখার একবার ও খাই। এই সময় রেখার মনে পরল সেদিন খাতা জমা দিয়েছিল তার কথা। আহা মুখে লেগে রয়েছে চরম উষ্ণতম দিনে একদম শীতলতম হয়ে এসেছিল। এখানে এসব পাওয়াও যাবে না আর সব থেকে বড় কথা ইউ এস জি করতে এসে ওসব খাওয়াও যাবে না ।আপাতত গল্প এখানেই শেষ।
রেখার মনে হলো হ্যাঁ সত্যিই সত্যি ই মনে হচ্ছে প্রেসার পাচ্ছে ।তার মধ্যে দেখলাম সেই মেয়েটি এসে আর একজনের নাম ঘোষণা করল রাখি চক্রবর্তী ।তার সঙ্গে সঙ্গে রেখার নামটাও ঘোষণা করল।
মেয়েটি বলল 'আপনারা প্রত্যেকে ইউ এস জি টেস্ট করার রুমে আসুন।'
একটা বেঞ্চের উপর বসলো তখন দেখল রাখি চক্রবর্তীর ইউএসজি হচ্ছে ।ডাক্তারবাবু কম্পিউটারের সামনে তাকিয়ে আছেন আর একহাতে যেটা দিয়ে পেটের চারিদিকে ঘোরাবেন সেরকম কিছু একটা জিনিস নিয়ে ঘোরাচ্ছেন একবার বলছেন পেট ফোলান আরো পেট ফোলান ।ব্যস ।
"তারপর আবার বলছেন এখন আর পেট, ফোলাতে হবে না ।নরমাল রাখুন ।আপনার কি সমস্যা রাখি চক্রবর্তী বলল তার একটা বাচ্চা এসেছিল নষ্ট হয়ে গেছে ডাক্তার বাবু এখন ইউ এস জি করতে বলেছেন।"
ডাক্তারবাবু আবার বললেন "পেট ফোলান ফোলান।"
রাখি চক্রবর্তীর পেটের ওপর ঘোরাতে লাগলেন।
রেখা বসে বসে দেখতে লাগলো।
ডাক্তারবাবু বললেন" নর্মাল রাখুন আর পেট ফোলাবেন না।"
"উঠে পড়ুন।"
অন্য আরেকটি মেয়ে একটা ছোট্ট কাচের শিশি দিল বাথরুম করে এতে ভরে নেবেন
বাথরুম করার পর আবার আসবেন ।আপনার আবার টেস্ট হবে।"
এর মধ্যে যে মেয়েটির নাম ঘোষণা করেছিল সেই মেয়েটি বলল "রেখা চৌধুরী আপনি যান শুয়ে পড়ুন।"
রেখা ক্লেচার খুলে রাখলো পাশে। তারপর অন্য একটি মেয়ে বলল সালোয়ার কামিজটা উপরের দিকে তুলুন পা টা সোজা করে দিন।
এরপর ডাক্তারবাবু সেই রাখি চক্রবর্তীর মতনরেখার পেটে একটা পদার্থ মাখিয়ে নিলেন তারপর আগের মতো পেটের ভেতরের একটা বস্তু দিয়ে বোলাতে লাগলেন আর বললেন পেট ফোলান।
রেখা পেট ফোলালো।
তারপর ডাক্তার বাবু আবার বললেন "এবার নরমাল জোরে জোরে শ্বাস নিন।'
রেখা তাই করতে লাগলো।
ডাক্তারবাবু বললেন 'আপনার কোনো অপারেশন হয়েছে।'
রেখা তো কিছুতেই মনে করতে পারলো না অপারেশন হয়েছে কিনা? বলল' না হয় নি।'
"আপনার কি সমস্যা?"
রেখা সমস্যার কথা বলল।
তারপর ডাক্তার বাবু ভালো করে পেটের ভেতরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে অবশেষে বললেন' ঠিক আছে ।আপনি উঠুন।"
সেই যে মেয়েটি রেখাকে শুয়ে পড়তে বলেছিল সেই মেয়েটির কাছে রেখা কয়েকটা নেপকিন চাইল। ভালো করে পেটের রসালো পদার্থগুলোকে মুছে নিল। তারপর বাইরে বেরিয়ে আসল।
রেখাকে বেরিয়ে আসতে দেখে কয়েকজন মহিলা বলল "এ বাবা বাথরুমে পাচ্ছে না ,কি হবে ?আজ কটায় হবে ?মহা সমস্যায় পড়লাম।'
একজন ভদ্রমহিলা বলল" যাই আরও জল নিয়ে আসি। জল খাই।"
একজন বলল' যা জল খেয়েছি। সারাদিনেও এত জল খাই না।
তাতেও বাথরুম পাচ্ছে না? কি অবাক কান্ড। '
মনোজ রেখাকে বললো ', চলো ,চলো, বাইকে বস'। এসব কথা শুনলে
হবে ,অনেক কাজ পড়ে আছে।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much