উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৯০
দুর্যোগ
মমতা রায়চৌধুরী
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে দিয়েছিল যে কদিন টানা ঝড় বৃষ্টি হবে। এটা মাথায় ছিলো না রেখার। বাড়িতে ফিরতে পেরেছে এটাই যথেষ্ট। ভিজে একসার হয়ে গেছিল রেখা। ফিরে এসে মনোজের হাতে চা-টা খেয়ে অনেক ফ্রেশ লাগছে। সত্যি জাদু আছে মনোজের হতে। আগে তো প্রায়শই মনোজ সুন্দর চা টা বানাত। আজকাল সেটা হয় না। তবে আজকে সন্ধ্যের চা নয়, রাত হয়েছে। তো ফিরে এসে যেন মনটা বলে" চা চাই এখন আর কিছু না চাই ।"
চা খেতে খেতে মনোজ বলল "কেমন হলো আজকে তোমাদের জাজমেন্টের কর্মশালা।"
"জাজমেন্টের কর্মশালা কি বলছো তুমি?"
"ওই হলো ।গেছিলে তো বিচারকের ভূমিকা নিয়ে তাই বললাম আর কি।"
রেখা হেসে বললো "আর বোলো না ,হলো একরকম।"
"তোমার অফিস কেমন চললো,?'
"একেবারে ঝাক্কাস।"
"সে তোমার মুড দেখেই বোঝা যাচ্ছে।"
"বাবা ,তুমি আবার কবে থেকে অ্যাস্ট্রোলাইজার হলে বলো তো?"
এটা ভেরি সিম্পল এর জন্য অ্যাস্ট্রোলাইজার হওয়ার দরকার নেই।'
মনোজ হাসতে হাসতে বলল " ও তাই'।
", হ্যাঁ তাই। সেজন্য একটা ফোন করে জানাতে পারো নি "
"কাজের চাপ ছিল প্রচুর সেজন্য পারিনি বললাম তো তোমাকে।"
"সে যাক ছাড়ো ওসব।
হ্যাঁগো চৈতির বাবার কোন খবর পেলে?"
"কাল অবধি পার্থ যা জানিয়েছিল।"
"তুমি একবার খবর নিতে পারতে?"
"সে হয় তো পারতাম ,সময় পেলাম কই বলো আজকে তো সারাদিন অফিসেই কেটে গেল।"
তুমি একদিন ও ফোন করেছিলে?"
"না।"
সে কি ভেরি ব্যাড। তোমার একদিন ফোন করা উচিত ছিল। দুর্যোগ দুর্দিনে মানুষের পাশে থাকা উচিত।
"তাহলে এখনি ট্রাই করি।কি বলো?"
মনোজ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।
রেখা ফোন করল রিং হচ্ছে। কিন্তু ধরছে না।
ধরছে না গো ফোনটা। কে জানে কি
করছে ?খাবার-দাবার খেতে গেছে কিনা আবার ফোন করো।'
রেখা আবার ফোন করল। এবার ফোন ধরল বলল 'হ্যালো।'
"হ্যাঁ আমি রেখা বলছি দিদি।'
"হ্যাঁ দিদি বলুন।'
'দাদা এখন কেমন আছেন?'
"ওই আছেন ফিজিওথেরাপিস্ট এসে দেখে গেছেন ।একটা সাইট তো পড়ে গেছে।'
"না মানে ,কিছু ইমপ্রুভ বুঝতে পারছ না?"
"সেটা বলবো না তা তো একটু কিছু উন্নতি
হয়েছেই।কতদিনে ঠিকঠাক করতে পারব দিদি জানি না। সংসারের পুরো চাপটা এখন আমার উপর ।কি করে, কি করবো,? বুঝতে পারছিনা।"
"অত ঘাবরাবে না সব ঠিক হয়ে যাবে।"
চৈতির মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল" হ্যাঁ ঠিক হবে ।আগের মত তো আর হবে না।
আর কাজ করতে পারবে?'
"আগে মানুষ টা একটু স্টেবল হোক তারপরও এসব নিয়ে ভাবা যাবে দিদি।"
'আজকে বাড়িতে গেছিলাম ।আপনাকে দেখতে পেলাম না।'
"আজকে বাড়িতে এসেছিলে ।আজকেই ভাবছিলাম তোমার ওই ছাদটার দিকে তাকিয়ে।"
"হ্যাঁ ঝড়ে আমার গাছগুলোকে ভেঙে দিয়েছে।
বাড়ি গিয়ে একটু ,গুছিয়ে নিলাম। যা ঘরবাড়ির অবস্থা হয়ে আছে।"
"হ্যাঁ ,আমি বাড়ি ছিলাম না আমাকে স্কুলের কাজে যেতে হয়েছিল এই তো ফিরেছি বেশ খানিকটা রাত হয়েছে।ভাবলাম ফোন করা হয় না একটু ফোন করে নিই।"
"ভালো লাগলো দিদি কাছের মানুষ জন খোঁজখবর নিলে ভালো লাগে।"
"না সে তো দিদি ঠিকই ,।আমার অনেক আগেই কথা বলা উচিত ছিল কিন্তু আমি ও না নানা কাজে পেরে উঠি নি আর সবথেকে বড় ব্যাপার যেহেতু খবরা খবর গুলো পার্থ আর আপনাদের দাদার কাছ থেকে পেয়েছি। সেই জন্য অতটা গুরুত্ব দিইনি।"
"ঠিক আছে সবারই তো সংসারের কাজকর্ম থাকে তবে দাদা আর পার্থ যেভাবে আমাকে সাহায্য করেছে জীবনেও ভুলব না।"
"না, না ওরকম কেন বলছ। পাশাপাশি থাকি মানুষ হিসেবে তো মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত এটাই আমরা জানি।"
আসলে সবার ভেতরে তো সি মানবিক বোধ থাকে না তাই বলা। দেখছি তো নিজের আত্মীয়-স্বজন অতোটা খোঁজ খবর নিচ্ছে বিপদে পড়লে লোক চেনা যায় দিদি আমি হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি।"
" ঠিক আছে দিদি মন খারাপ করো না সব মানুষ তো একরকম হয় না।"
"তবুও আমরা প্রত্যাশায় থাকি,।"
"ঠিক আছে দিদি রাখছি ।পরে আবার জেনে নেবো ফোন করে।"
"ঠিক আছে দিদি রাখুন।"
ফোনটা রাখার পর চৈতির মার মনে হলো এই
আজকের মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টি হয়ে বৃষ্টিহত থেমে যাবেন আবার আলো চারিদিক আলোকিত হবে অন্ধকার কেটে যাবে কিন্তু চৈতির মার জীবনাকাশে যে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে ,আঁধার নেমে এসেছে এ যেন দুর্যোগের ঘনঘটা। এ কবে কাটবে কে জানে? ""একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চৈতির বাবার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগল ।
এদিকে রেখা জিজ্ঞেস করলো "রাত্রে কি খাবে গো?"
"কি খাব বলো তো ?অফিসে আজকের লাঞ্চ হেভি হয়েছে। রাত্রে বেশি ভারী জিনিস খাবো না ওটস দিও।"
"বেশ ভালোই হলো ।রান্নার ঝামেলাটাও থাকলো না।"
"এর মধ্যে তুতু এসে কিউ কিউ করছে।"
মনোজ বললো "দেখো তু তু রানি আবার কি বলছে তোমায়?"
"কি আর বলবে খিদে পেয়েছে খাবে কটা বাজে গো? 'ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল।
১০টার বেশি বাজে।"
"ও বাবা ওইজন্যেই খিদে পেয়েছে গো। "রেখা ওকে একটু আদর করে নিয়ে বলল" দাঁড়াও আমি খাবার নিয়ে আসছি সোনা।'
রেখা রান্নাঘরের দিকে গেল তরকারিটাএকটু গরম করে নিল। তারপর ভাতগুলো ভালো করে মেখে নিল
এবার ডিস গুলো নিয়ে ওদের কাছে গেল ।
"কি গো দরজাটা খোলো তো আমার দুটো হাতই জোড়া।''
"হ্যাঁ এই দিচ্ছি একটু দাঁড়াও।
"আমি দাঁড়িয়ে আছি তুমি ওঠো।'
তুতু তো হাত দিয়ে দরজাটাকে খেলার চেষ্টা করছে। রেখা হেসে বলল ও রে খেপি দরজা খুলবে, তবে তো খুলতে পারবি।"
মনোজ দরজাটা খুলে দিতেই তুতু তাড়াতাড়ি চলে গেল বাইরে ।এমন খোশমেজাজে গেল যেন মনে হচ্ছে মহারানী বেরোচ্ছে ।বাকি যারা ছিল ওদের সঙ্গে সেরকমই বিহেফ করছিল।
"নে আর অন্যের সঙ্গে এখন ধস্তাধস্তি করতে হবে না ,খেয়ে নাও এসো।"
প্রত্যেককে ডিস দেয়া হল সামনে। ওরা যে যার জায়গায় বসে রইল। প্রত্যেককে মাখা ভাত
দিল।
রেখা মনোজকে বলল 'ওরা খাক আমি ভেতরে যাচ্ছি। কালকের তরকারির সবজিগুলো কেটে নিই।
"মাসি তো আসে নি ,না হলে মাসিই কেটে রেখে দিত।"
তারপর আবার মেয়েদের কে ফোন করার বাকি আছে?'
"কাদের ফোন করবে?"
"আর বলো কেন স্কুলে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর জন্য মেয়ে লাগবে, গান ,নাচ ,কবিতা আবৃত্তির।তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তো?"
"এত রাত্রে আবার ওদের এখন ফোন খোলা থাকবে?"
"দেখবো চেষ্টা করে সময়ও বেশি
নেই ।পরশুদিন।"
"ঠিক আছে আমি ভেতরে যাচ্ছি ।খাওয়া হলে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসো।"
মনোজ বললো "হুম।"
রেখা চটপট ওদের থালাটা মেজে ধুয়ে নিল।
তারপর ফ্রিজটা খুলে দেখলো কি কি সবজি আছে।
"হ্যাঁ রুই মাছ আছে, চিংড়ি মাছ আছে।
রুই মাছটা সজনে ডাটা ,আলু ,বেগুন বড়ি দিয়ে ঝোল করে দেবে আর লাউ আছে ,লাউ চিংড়ি করে দেবে। অবশ্য পটল ও আছে তাহলে কি পটল চিংড়ি করবে ?না এ ব্যাপারে মনোজ কে জিজ্ঞেস করতে হবে কোনটা খাবে? নোটে শাক আছে নোটে শাক ভাজা করে দেবে পেঁয়াজ দিয়ে। আর সকালের জলখাবার এর জন্য কি করা যায় কি করা যায়? এইতোভেন্ডি আছে। তাহলে কালকে সকালে জল খাবার পরোটা আর ভেন্ডি ভাজা করে দেবে।
সবজি গুলো নিয়ে রেখা চলে আসলো বারান্দাতে।
এরমধ্যে মনোজ কলাপসিবল গেট লাগাচ্ছে তখন রেখা বলল" হ্যাঁ গো লাউ চিংড়ি খাবে,না পটল চিংড়ি খাবে?"
"যা হোক একটা করো না আমার দুটোই প্রিয়।'
Ok"
হ্যাঁ গো তুতু কোথায়?"
"কেন ভেতরে আসেনি?"
"খেয়াল করি নি ।দেখ তো ঘরে ঢুকেছে কিনা?'
"না তো ঘরে নেই ।'
"এ বাবা তাহলে পটি করতে গেছে। তুমি তার মধ্যেই গেট লাগিয়ে দিলে।"
'খেয়াল করিনি গো ।ঠিক আছে দাঁড়াও । খুলে দিচ্ছি।"
"বাবা ও কি বৃষ্টি পড়ার আওয়াজ হচ্ছে নাকি গো?'
"তাইতো মনে হচ্ছে দেখি তো?"
"জোরে বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে।'
"ধরে গেছিল দেখো কী কান্ড।"
"আজকে শাটারটা খুলে রেখো নইলে ওরা থাকবে কোথায় বলো? ভিজে যাবে।"
"ঠিক আছে খুলে রাখবো।"
এমন সময় ফোন মনোজের ফোন বেজে উঠলো।
রেখা লাউ এর চোকলা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল"হ্যাঁগো তোমার ফোন বাজছে?"
মনোজ বাইরে থেকে আওয়াজ দিল বাজুক গে
রেখা আর কিছু না বলে আপন-মনে লাউ কাটতে লাগল তারপর ভাবতে লাগলোলাউ এর চোকলাগুলো ভাজা করে নিলেও হয়।
আবার ফোন বাজছে।
রেখা বললো 'দেখো তোমার কিন্তু আবারও ফোন বাজছে ,.কোন আর্জেন্ট কল কিনা,?'
মনোজ কলাপসিবল গেট দিয়ে ঢুকে পরল তুতু তো খানিকটা রেখার কাছে এসে লেজ নাড়াতে লাগল
রেখা বলল "কী চলে এসেছ? যাও যাও যাও ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো।'
তারপর তুতু নিজের ঘরে চলে গেল।'
মনোজ বললো "কে ফোন করছে দেখি তো"।
*ও বাবা ,চৈতির মা ফোন করেছে গো। আবার কী হলো কে জানে?""
মনোজ ঘুরিয়ে ফোন করলো রিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরল হ্যালো.
হ্যাঁ বৌদি বলুন আসলে সঠিক সময়ে ধরতে পারিনি ফোনটা আমার বাচ্চাগুলো কে খেতে দিচ্ছিলাম।
চৈতির মা বলল ,l,আসলে পার্থর ফোনটা পাচ্ছি না তো তাই ?
" হ্যাঁ কি হয়েছে বলুন?"
আসলে পার্থর কাছে একটা চাবি আছে আমাদের বাড়ির কালকে গিয়ে একটু শুধু দেখা যে আমি জানলাগুলো লাগিয়ে দিয়েছি কিনা? নয়তো জল এসে ঘর ভেসে যাবে।"
"ও আচ্ছা ,আচ্ছা ।এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে।"
"ঠিক আছে তাই বলব ।"
ফোনটা কেটে দিল।
রেখা সবজিগুলো কেটে আবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিল।তারপর দুধ গরম করে ওটসে মিশিয়ে উপর থেকে কিছু ফ্রুটস মিলিয়ে দিল।।।
তারপর রেখা মনোজকে জিজ্ঞেস করল 'তোমাকে কি খাবার দেবো?"
"হ্যাঁ দিও একটু পরে।'
"আবার এর ও পরে সাড়ে 10 টা তো বাজলো।'
হ্যাঁ হ্যাঁ দাও।"
রোজ খাওয়া নিয়ে বিরক্ত লেগে যায় রেখার একটু বিরক্তির স্বরে বলল সারাদিন তো আমিও বসে থাকি না বলো?'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much