ধারাবাহিক উপন্যাস
সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
৩ য় পর্ব
মনি জামান
খোলা মাঠ মাঝখান দিয়ে একটি সরল রেখা যেন চলে গেছে ট্রেন লাইন,চারিদিক গাছের সারি যেন ওদের সাথে ছুটে চলছে।
গ্রামের পর গ্রাম যেন অতীত হয়ে যাচ্ছে,ঝিরি ঝিরি বাতাস নিলয় আর মেবিনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে,বিকেল হয়ে গেলো কখন টের পাইনি ওরা দু'জন,মাঝে মাঝে ট্রেনের ঝাকুনি ওদের কে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
মেবিন নিলয়ের গা ঘেঁষে বসলো,নিলয় বাম হাতে মেবিনের গাড়ের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরছে,ওরা আজ এত কাছাকাছি যে আগে কখনো এভাবে একসাথে হয়নি।সূর্য অস্ত যেতে আর বেশি সময় নেই,ট্রেন ছুটছে গন্তব্য কক্সবার।
ধীরে ধীরে সূর্য ডুবার আয়োজন সম্পন্ন করছে কিছুক্ষণ পর সূর্য ডুব দিলো,আস্তে আস্তে সন্ধ্যা গ্রাস করছে দিনকে,অন্ধকার নেমে আসলো।
দুরের গ্রাম গুলোয় মিটি মিটি আলোর মিছিলে যেন পরিণত হয়ে গেল মহুর্তে,এ যেন এক অপূর্ব আলোর দ্যুতি ওদের চোখ দুটোকে আটকে রেখেছে,মাঠের দুপ্রান্তে গ্রাম আর গ্রাম এমন ভাবে কখনো দেখা হয়নি মেবিন আর নিলয়ের।
আজ দুরের মিটি মিটি আলো গুলো গ্রামের পর গ্রামকে করছে যেন স্বর্গ রাজ্য,
মেবিন নিলয়কে জড়িয়ে ধরে আবেগ ঘন হয়ে বলল,নিলয় আজ এত ভালো লাগছে কেন বলতে পারো ঝিরি ঝিরি বাতাস দুজনকে আজ মাতাল করেছে।দুজন দুজনকে জড়িয়ে আছে,আরো অন্ধকার হলো চারপাশ নিলয়ের ভিতর কি যেন একটা বুনো স্বভাব ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো এবং সমস্ত শরীরে কি একটা প্রাপ্তির নেশায় সেটার যেন ছুঁয়ে দিতে ব্যাকুল।
নিলয়ের সমস্ত শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হলো মনের অজান্তেই মেবিনের ঠোটে চুম্বন করলো,আজ কোন লজ্জা শরম শান্ত ছেলে নিলয়ের ভিতর নেই,মেবিন ও নিলয়কে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলো মেবিনের ভিতর ও তোলপাড় শুরু হয়েছে।মেবিন নিলয়ের ঠোট দুটি স্পর্শ করলো তারপর পরস্পরকে আলিঙ্গ করলো এক আদিম উন্মাদনায় ডুবলো দুজন,দুজনের শ্বাস-প্রস্বাশ আর বুকের উঠানামা যেন উত্তাপ ছড়াচ্ছে,ধীরে ধীরে দুজন দুজনকে পাগলের মত জড়িয়ে ধরে কাছে আরো কাছে নিতে ব্যাকুল।আজ নিজের মত করে নিলয় অনুভব করলো মেবিন যেন সঙ্গমরত বিষধর গোখরো,দুচোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে,যেন অনন্তকাল ধরে জড়িয়ে আছে নিলয়কে।
নিলয়ের ভিতর ও আজ কোন ভদ্রতা নেই নম্র-স্বভাব গুলো সব অনুপস্থিত,আজ সাহসী এক পুরুষে পরিণত হয়েছে সে।
ট্রেন ঝিক ঝিক শব্দ তুলে তখন রাতের বুক চিরে ছুটে চলেছে,দুরে কোথাও এক ঝাক বুনো শিয়াল হুকাহুয়া চিৎকার করে ডেকে উঠলো,ঝক ঝকে আকাশ মিটি মিটি তারার অপূর্ব মিছিল রাতকে করেছে আরো গাঢ় আরো সুন্দর।
প্রকৃতির সব সৌন্দর্য আজ যেন প্রকাশ করছে অকৃপণের মত প্রকৃতি,কিছুক্ষণের মধ্যে চাঁদ উকি দিল,প্রকৃতি আলোময় হয়ে উঠলো,নিলয় আর মেবিন আজ উন্মাদ ওদের দু'জনের শ্বাস উঠানামা করছে খুব দ্রুত,দুজন দুজনকে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যেন কোন গুল্ম কোন বৃক্ষকে জড়িয়ে আছে অনন্তকাল ধরে।
আজ দুজন দুজনকে নতুন করে আবিস্কার করছে,নিলয় মেবিনের সমস্ত শরীর আস্তে আস্তে স্পর্শ করলো,মেবিনও নিলয়কে আদর করে আরো কাছে টেনে নিলো দুজনে যেন ঠিক এই মুহুর্তটার জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল,ঈশ্বর প্রাপ্ত এক আদিম নেশায় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে সেই চিরচেনা বাসনা পূর্ণ করার সংকল্প নিয়েছে আজ।কতক্ষণ ওরা পরস্পর জড়িয়ে ছিল ওরা নিজেরাই জানেনা,হঠাৎ নিলয় ও মেবিনের কানে ভেসে এলো ভোরের ফজরের আযানের ধ্বনি।
ওরা অবাক হয়ে গেলো সকাল হয়ে গেছে টেরই পাইনি!নিলয় মেবিনকে ডেকে বলল,এই কাক পাখি সকাল হয়ে গেছে ফজরের আযান হচ্ছে আমরা বোধয় পৌছে গেছি।
মেবিন চোখ মেললো এবং ঘড়ি দেখে বলল,আর আধা ঘন্টার ভিতর আমরা পৌছে যাব,নিলয় বলল,আমরা কোথায় উঠব হোটেলে?মেবিন বলল,আমার বান্ধবী চারুদের বাড়ি উঠব চারু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
নিলয় বলল,আমাকে আগে বলনি কেন কাক পাখি,মেবিন স্বভাব সুলভ সেই মিচকি হাসি দিয়ে বলল,এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো বলে আমার পাগলু।নিলয় একটু অভিমানের সুরে বলল,আমাকে বলতে হতো,মেবিন নিলয়ের নাক টেনে আদর মাখা কন্ঠে বলল, হয়েছে আর পানসে অভিমান নয় এবারতো বললাম তোমাকে।
নিমেষেই নিলয়ের সব অভিমান উধাও হয়ে গেলো,নিলয়ও হেসে বলল,হুম খুব চালাকি আমার সাথে তাই না? বলেই নিলয় মেবিনকে একটু আদর করে চোয়াল টেনে দিলো,মেবিনও বলল,হয়েছে আর না স্যার সারারাত অনেক তো হয়েছে।নিলয় প্রশ্ন করলো মেবিনকে সারারাত কি হয়েছে কাক পাখি,এবার দুজনই হেসে উঠলো,ট্রেন ছুটছে আর মিনিট তিনেক লাগবে ওদের স্টেশনে পৌছাতে,ওরা অপেক্ষায় আছে স্টেশনে কখন থামবে ট্রেন।
মেবিন ঘড়ি দেখে নিলয়কে বলল,এইতো এখন ট্রেন থামবে পৌছে গেছি তুমি ব্যাগ দুটো নাও,বলতে বলতেই ট্রেন স্টেশনে এসে দাঁড়ালো।যাত্রীরা সবাই নামছে মেবিন আর নিলয় ওদের ব্যাগ পত্র নিয়ে নেমে পড়লো স্টেশনে।
নেমেই নিলয় মেবিনকে বলল,চলো যাওয়া যাক কাক পাখি,মেবিন বলল,না এখানে অপেক্ষা করতে হবে চারু গাড়ি নিয়ে আসবে আমাদের নিতে,নিলয় বলল,চলো তাহলে স্টেশনের ঐ বেঞ্চটায় গিয়ে বসি,মেবিন বলল,চলো নিলয়।
মেবিন আর নিলয় বার বার ঘড়ি দেখছে বেঞ্চে বসে,আর অপেক্ষা করছে মেবিনের বান্ধবী চারুর জন্য,চারু কখন আসবে ওদের দুজনকে নিতে।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much