২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গল্প - কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

স্যান্ডেল


স্কুলে ঢুকে যারপরনাই অবাক হলাম পাকা একবছর পর দিলীপবাবু এসেছেন অবাক হওয়ার কারণ তার তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি নয় দিলীপবাবুর পায়ে নতুন একজোড়া স্যান্ডেল উনিশ বছর চাকরিজীবনে তার পায়ে স্যান্ডেল দেখিনি সিনিয়র শিক্ষকদের কাছে শুনেছি চাকরিতে ঢুকেছিলেন খালি পায়ে অবসরও নিয়েছেন খালি পায়ে। এমনকি বিয়ে করতেও গিয়েছিলেন খালি পায়ে কেউই নাকি তাকে কোনোদিন জুতো পরতে দেখেননি

----- 'কেমন আছেনঅনেকদিন পরে এলেন ভেতরে আসুনদিলীপবাবুকে বললাম দুবছর হল অবসর নিয়েছেন দুবছরেই মনে হচ্ছে বয়স অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু হাসিটি তেমনই আছে  
----- 'ভালো আছি স্যার পেনসনের কী একটা কাগজ এসেছে বুঝতে পারছি না অবশ্য বোঝার কথাও নাবলে একমুখ হাসলেন
----- 'বসুন'
----- 'তাই আপনার কাছে একবার এলুমবলে দিলীপবাবু দাঁড়িয়েই থাকলেন বসার কোনো লক্ষণ দেখালেন না প্রসঙ্গত বলি দিলীপবাবু ছিলেন স্কুলের চতুর্থশ্রেণির কর্মচারী নিজেও চতুর্থশ্রেণি পাশ স্কুলের সব ঘর খোলা এবং বন্ধ করাশিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফাইফরমাশ শোনা ছিল তার কাজ হাতে থাকত প্রচুর চাবির একটি গোছা ধুতি  পাঞ্জাবিসহ নগ্ন পদযুগল এখন আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক দিলীপবাবুর পেনসনের কাগজটা হাতে নিলাম তেমনকিছু নয় লাইফ সার্টিফিকেটের সাথে আধার কার্ড এবং আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে দিলীপবাবুর পায়ের দিকে তাকালাম স্যান্ডেল জোড়া ঘরের বাইরে খুলে রেখে এসেছেন বললাম, 'জুতো তাহলে পরলেন?' দিলীপবাবু বললেন, 'কী করব স্যারমারা যাওয়ার আগে বউটা জুতো পরার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিল'

হা করে তাকিয়ে থাকলাম যতদূর জানি জুতো না পরা নিয়ে বউয়ের সাথে তার বিস্তর ঝামেলা হত দুপক্ষই ছিলেন সমান জেদি এবং একগুঁয়ে


দিলীপবাবুর পায়ের পাশ দিয়ে চৌকাঠের কাছে একজোড়া স্যান্ডেল দেখা যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে একজোড়া ভালোবাসা




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much