৩০ ডিসেম্বর ২০২১

রাবেয়া পারভীন/





দুরের বাঁশি 
(৪র্থ পর্ব)  
রাবেয়া পারভীন



-ম্যাম বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন? 
 সিস্টারের ডাকে  সম্বিৎ ফিরে  আসে লাবন্যর। শুভর ভাবনায় একদম ডুবে গিয়েছিল সে,  কখন যে ভোরের উদীয়মান সূর্যটা  ডুবে গিয়ে আকাশ মেঘলা হয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে  শুরু করেছে টেরই পায়নি। সিস্টারের দিকে তাকিয়ে  অপরাধীর মত একটু হাসে লাবন্য।
তারাতারি  বারান্দা  থেকে  সড়ে এসে কেবিনে ঢুকল। সিস্টার  তোয়ালে দিয়ে ওর চুল মুছে দিতে দিতে বলল
-মেডাম আপনার কিন্তু ঠান্ডার অসুখ । যান ভিজা জামাটা বদলে আসুন  ওষুধ  খেতে হবে। সকালের নাস্তাও তো পড়ে রয়েছে দেখছি।
লজ্জা পেয়ে  লাবন্য  ওয়াশরুমে গেল । কাপড় বদলে এসে  বিছানায় বসল। সিস্টার নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিল  তারপর  ঔষধ। মিষ্টি করে হেসে বলল 
-  আপনাকে আজকে অনেক ফ্রেস লাগছে  মেডাম,  একদম ভালো হয়ে গেছেন। ডাক্তার সাহেব  এলে হয়ত আজকে রিলিজ করে দিবে আপনাকে।
নার্স মেয়েটাকে  বেশ ভালো লেগেছে লাবন্যর। ওর সাথে আলাপ করতে ভালো লাগছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন  করল
 - আচ্ছা সিস্টার  আপনার নাম  কি ?  
- আমার নাম  গায়ত্রী। 
নামটা শুনে  লাবন্য চকিতে একবার মেয়েটির সিঁথির দিকে তাকালো।   সেখানে সিঁদুরের। কোন চিন্হ নেই। মেয়েটির বয়সও কম মনে হচ্ছেনা।  তবে কি বিধবা?   কৌতুহল চেপে রাখতে পারলোনা সে। জিজ্ঞেস করলো  
- সিস্টার। আপনি  এখনো বিয়ে  করেন  নি ?  
মৃদু হেসে  সিস্টার বলল
- না মেডাম। এখনো করিনি।
- কিছু না মনে করলে জানতে পারি কেন।?  
- সে অনেক কথা।
- একটু বলুন না প্লিজ !
সিস্টার হেসে বলল
- আসলে  একজন কে আমি ভালোবাসি । ছোটবেলা থেকেই প্রেম। সে  আমার পিসির  দেবরের  ছেলে।
- তো  আপনাকে উনি ভালোবাসেনা ?  
- হ্যাঁ হ্যাঁ  বাসে তো। বল্লাম না  ছেলেবেলার প্রেম  
- তাহলে  বিয়ে করছেন না কেন ?
- ও তো কলকাতায় থাকে।  আগে ঢাকায় থাকতো আট বছর আগে পিসিরা কলকাতায় চলে গেছে।  তারপর ওখানে যাওয়ার পর  অসিমের মা মারা গেছেন। সংসার চলছিল না তাই  অসিম বিয়ে করে কলকাতারই মেয়ে। এটুকু বলে মাথা নীচুকরে নিজের চোখের জল লুকাতে চেষ্টা করল  গায়ত্রী ।  এপ্রোনের পকেট থেকে  টিস্যু পেপার নিয়ে নিজের চোখ মুছল। তারপর। ক্রস্ত হয়ে বলল
- মেডাম। দশটা বেজে গেছে এখনি ডাক্তার  চলে আসবেন। আমি গেলাম। 
এগিয়ে যচ্ছিলো গায়ত্রী , খপ করে  ওর  ডান হাতটা চেপে ধরল  লাবন্য , ততক্ষনে  ওর চোখও চিক চিক করছিলো। বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলল
 - সরি সিস্টার !  আমি বুঝতে পারিনি। মাফ করবেন।
একটু হাসতে চেষ্টা করল  গায়ত্রী।
- আরে না,  কিযে বলেন  মেডাম।
সিস্টার বেরিয়ে যাবার পরে  কেন  যেন শব্দ  করে কেঁদে ফেলল লাবন্য ।  ওর কানে বাজতে লাগলো  "সেতো কলকাতায় থাকে "। অসীম নামের ছেলেটি কলকাতায় গিয়ে ভুলে গিয়েছে  গায়ত্রী কে  আর গায়ত্রী  এখানে মনপ্রান  ঢেলে দিয়েছে  রুগ্ন মানুষের সেবায়। কিন্তু ভালোবাসার  প্রদ্বীপটি  ঠিক জ্বালিয়ে রেখেছে বুকের ভিতরে। আপন মনে  নিজেকেই শুধায় লাবন্য  শুভও  কি দুরে কোথাও গেলে তাঁকে ভুলে যাবে?  প্লিজ শুভ কখনো এমন কোরোনা  তাহলে ঠিক মরে যাবো আমি। ঠিক তখনি কেবিনের দরোজায়  টোকা পড়ে
- ভেতরে  আসবো ?


চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much